অপনোদন [২য় পর্ব]
·নিবন্ধক: মুহাদ্দিসুল মাদীনাহ ইমাম রাবী‘ বিন হাদী আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ)
·❏ ভ্রান্ত বক্তব্য-৬:
‘আফারী তার নিবন্ধের ৩য় পৃষ্ঠায় বলেছে, “তাঁদের (এ আজান বিরোধীদের) একজন হলেন ‘আত্বা, যা বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হয়েছে।”
❏ পর্যালোচনা-৬:
ক. তুমি কেন এর সনদ উল্লেখ করলে না, যেটাকে তুমি সাহীহ বলে দাবি করছ?
খ. আমি তোমার কাছে দুটি সনদ-সহ ‘আত্বা (রাহিমাহুল্লাহ)’র বক্তব্য উল্লেখ করছি। ‘আব্দুর রাযযাক্ব (বিন হুমাম) থেকে হাদীস বর্ণনাকারী ইসহাক্ব বিন ইবরাহীম আদ-দাবারী বলেছেন, যেমনটি মুসান্নাফে ‘আব্দুর রাযযাক্বে (৩/২০৫) এসেছে, “৫৩৩৯ – ‘আব্দুর রাযযাক্ব সম্ভবত ইবনু জুরাইজ—কিংবা ইবনুল আ‘রাবী [*]; রাবি সংশয়ে পতিত হয়েছেন—থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আত্বা আমাদেরকে অবহিত করেছেন। তিনি (‘আত্বা) বলেছেন, জুমু‘আর দিনে অতীতে একটি আজানই ছিল। এরপর ইকামত দেওয়া হতো। ইমামকে যখন দেখা যেত, তখন এই আজান দেওয়া হতো। মুয়াজ্জিন আজান শেষ না করার আগে ইমাম খুতবা দেওয়ার জন্য দাঁড়াতেন না। এ সময়েই ক্রয়বিক্রয় হারাম হয়ে যায়। আর এটা তখনকার কথা, যখন প্রথম আজান দেওয়া হয়। পক্ষান্তরে ইমাম বের হওয়ার এবং মিম্বারে উপবেশন করার আগেই এখন যে আজান দেওয়া হয়, তা বাতিল। সর্বপ্রথম এই বিদ‘আত উদ্ভাবন করেছে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ।”
[(*) শাইখ রাবী‘ এখানে টীকায় লিখেছেন, এতেও গবেষণার ব্যাপার আছে। ইবনুল ‘আরাবীর নাম হলো আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন যিয়াদ। ইনি ‘আব্দুর রাযযাক্ব থেকে বর্ণনাকারী রাবিদের অন্তর্ভুক্ত নন। কেননা তিনি ২৪৬ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেছেন, আর ৩৪০ হিজরিতে মারা গেছেন। অপরদিকে ‘আব্দুর রাযযাক্বের মৃত্যুসন ২১১ হিজরি। মুসান্নাফে ‘আব্দুর রাযযাক্বের রিওয়াইয়াতে মশহুর হলেন ইসহাক্ব বিন ইবরাহীম আদ-দাবারী]
‘আত্বা পর্যন্ত এ হাদীসের সনদ দ্ব‘ঈফ। কেননা এতে সংশয় রয়েছে যে, ইবনু জুরাইজ এটি ‘আত্বা থেকে বর্ণনা করেছেন কিনা। চাই এ সংশয় ‘আব্দুর রাযযাক্বের (বিন হুমাম) হোক কিংবা অন্য কারও। তাছাড়া ‘আত্বা এ আজানকে হাজ্জাজের দিকে সম্পৃক্ত করেছেন। একারণে তিনি এটাকে বাতিল আখ্যা দিয়েছেন। এতদ্ব্যতীত পূর্বোদ্ধৃত কারণে ‘আত্বা পর্যন্ত এ হাদীসের সনদ দ্ব‘ঈফ।
‘আব্দুর রাযযাক্ব (বিন হুমাম) থেকে হাদীস বর্ণনাকারী ইসহাক্ব বিন ইবরাহীম আদ-দাবারী বলেছেন, যেমনটি মুসান্নাফে ‘আব্দুর রাযযাক্বে (৩/২০৬) এসেছে, “৫৩৪০ – ‘আব্দুর রাযযাক্ব হাদীস বর্ণনা করেছেন ইবনু জুরাইজ থেকে, তিনি বলেন, একবার সুলাইমান বিন মূসা বলেছিলেন, মদিনায় সর্বপ্রথম আজান বৃদ্ধি করেছেন ‘উসমান। এ শুনে ‘আত্বা বলেন, কক্ষনো নয়। বরং তিনি মানুষদের ডাকতেন মাত্র, তিনি একটির বেশি আজান দিতেন না।”
পর্যালোচনা: এই সনদে ইবনু জুরাইজ আছে, যে একজন মুদাল্লিস রাবি। আর এখানে সে ‘বলেছেন (قال)’—শব্দ ব্যবহার করে হাদীস বর্ণনা করেছে। এই শব্দ (নিজে হাদীস) শোনার প্রমাণস্বরূপ (ব্যক্তীকৃত) সুস্পষ্ট শব্দাবলির অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং এটা সেসব শব্দের একটি, যা মুদাল্লিস রাবিরা ব্যবহার করে। তারপরও এই সনদকে যদি সাহীহ ধরেও নেওয়া হয়, তথাপি এখানে কেবল ‘আত্বার এই অবস্থানই বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি সুলাইমান বিন মূসার কথার বিরোধিতা করেছিলেন। সুলাইমান বলেছিলেন, মদিনায় সর্বপ্রথম আজান বৃদ্ধি করেছেন ‘উসমান। এ শুনে ‘আত্বা বলেন, বরং ‘উসমান মানুষদের ডাকতেন মাত্র, তিনি একটির বেশি আজান দিতেন না।
সুতরাং তুমি যে বলেছ, “তাঁদের (এ আজান বিরোধীদের) একজন হলেন ‘আত্বা, যা বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হয়েছে”, এর দ্বারা তুমি উদ্দেশ্য করেছ, ‘আত্বা কর্তৃক ‘উসমানের আজানের বিরোধিতা বিশুদ্ধ সনদে প্রমাণিত। বস্তুত তুমি এমন কিছুর দাবি করেছ, যা তুমি প্রাপ্ত হওনি।
·
❏ ভ্রান্ত বক্তব্য-৭:
‘আফারী ৩য় পৃষ্ঠায় আরও বলেছে, “আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর থেকে বর্ণিত হয়েছে, তাঁর সামনে কেবল সেই আজানই দেওয়া হতো, যে আজান নাবী ﷺ এর যুগে প্রচলিত ছিল।”
❏ পর্যালোচনা-৭:
ক. ‘আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)’র কর্মে এ বিষয়ের প্রমাণ নেই যে, ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র কর্ম বিদ‘আত।
খ. ইবনু যুবাইরের সনদে ইবনু জুরাইজ রয়েছে। যে ব্যক্তি এ হাদীস ‘আন শব্দে বর্ণনা করেছে। বিধায় এ হাদীসের সনদ দুর্বল (মুহাদ্দিসগণের উসূল অনুযায়ী মুদাল্লিস রাবির ‘আন শব্দযোগে বর্ণিত হাদীস দুর্বল – অনুবাদক)। আর এ হাদীসের কোনো মুতাবি‘ (সাক্ষ্যমূলক) হাদীসও নেই। [মুসান্নাফে ‘আব্দুর রাযযাক্ব, খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ২০৬; হা/৫৩৪৪] সুতরাং ইবনু যুবাইর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)’র আমলের সাথে তোমার (বিষয়ের) সংশ্লিষ্টতা বাতিল সাব্যস্ত হলো।
·
❏ ভ্রান্ত বক্তব্য-৮:
‘আফারী তার নিবন্ধের ৩য় পৃষ্ঠায় বলেছে, “ইমাম শাফি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, যেমনটি আল-ইস্তিযকার গ্রন্থে (২/২৭) রয়েছে, “জুমু‘আহর দিন ইমাম যখন মিম্বারের ওপর বসবেন, তখন তাঁর সম্মুখে আজান দেওয়া হলো আমার কাছে পছন্দনীয় আমল। তিনি যখন বসবেন, তখন মুয়াজ্জিন আজান দেওয়া শুরু করবে। মুয়াজ্জিন আজান শেষ করলে ইমাম দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিবেন। ইবনু ‘আব্দিল হাকামের বর্ণনা অনুযায়ী মুয়াজ্জিন শব্দটি একবচনের শব্দে উল্লিখিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, দ্বিতীয় আজান ‘উসমান নবউদ্ভাবন করেছেন, এমনটা বলা ‘আত্বা (রাহিমাহুল্লাহ) অপছন্দ করতেন। তিনি বলতেন, এটাকে মু‘আউয়িয়াহ নবউদ্ভাবন করেছেন। শাফি‘ঈ বলেছেন, তাঁদের যেই তা করে থাকুন না কেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে যে আজান চালু ছিল সেটাই আমার কাছে অধিক প্রিয়। এটা সেই আজান, যে আজানের সময় থেকে ক্রয়বিক্রয় করতে নিষেধ করা হয়েছে।”
·❏ পর্যালোচনা-৮:
ইমাম শাফি‘ঈর বক্তব্যে ‘উসমানের আজানকে বিদ‘আত আখ্যা দেওয়ার মতো কোনো কথা নেই। বরং তিনি যে বলেছেন, ‘এটা আমার কাছে অধিক প্রিয়’, সেটাই জানিয়ে দেয়, ‘উসমানের আমলও তাঁর কাছে প্রিয়। তিনি এটাকে বিদ‘আত মনে করতেন না, যেমনটি এই লেখক ভ্রমাত্মক ধারণা করে সেটাকে বিদ‘আত ভেবে বসেছে।
·❏ ভ্রান্ত বক্তব্য-৯:
‘আফারী ৩য় পৃষ্ঠায় আরও বলেছে, “ইবনু হাবীব (রাহিমাহুল্লাহ)’র বক্তব্য, যেমনটি আবুল ওয়ালীদ বর্ণনা করেছেন—“এটা তাঁর একটি অভিমত। লোকজনের সংখ্যা যখন বৃদ্ধি পেল, ‘উসমান তখন সূর্য ঢলে যাওয়ার সময় ‘যাওরা’ নামক বাজারে আজান দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। যাতে করে লোকেরা বাজার থেকে উঠে যায় (জুমু‘আহর প্রস্তুতির জন্য)। এরপর তিনি যখন বের হয়ে মিম্বারে উপবেশন করবেন, তখন মুয়াজ্জিনরা মিনারের ওপর আজান দিবে। তারপর হিশাম বিন ‘আব্দুল মালিক তাঁর শাসনামলে যাওরা বাজারের আজানকে স্থানান্তরিত করেন। একজন মুয়াজ্জিন নির্ধারণ করে দেন, যে সূর্য ঢলে যাওয়ার সময় মিনারের ওপর আজান দিবে। আর হিশাম যখন (বাড়ি থেকে) বের হয়ে মিম্বারে উপবেশন করবেন, তখন মুয়াজ্জিন তাঁর সম্মুখে আজান দিবে। মুয়াজ্জিন যখন আজান শেষ করবে, তখন তিনি খুতবা দিবেন। ইবনু হাবীব বলেছেন, নাবী ﷺ এর আমলই অনুসৃত হওয়ার সবচেয়ে বড়ো হকদার।” (আল-মুনতাক্বা, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৩৪)”
·
❏ পর্যালোচনা-৯:
ইবনু হাবীবের বক্তব্যে ‘উসমানের আমলের কোনো বিরোধিতা নেই। তিনি কেবল হিশামের কর্মের বিরোধিতা করেছেন। যার কর্মে ‘উসমানের আজানকে যাওরা বাজার থেকে স্থানান্তর করার বর্ণনা রয়েছে। সুতরাং এই কথা দিয়ে এবং শাফি‘ঈর কথা দিয়ে তোমার দলিল প্রদান বাতিল সাব্যস্ত হলো।
·
❏ ভ্রান্ত বক্তব্য-১০:
‘আলী ‘আফারী ৩য় পৃষ্ঠায় আরও বলেছে, “ইবনুল আমীর আস-সান‘আনী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “গ্রন্থকার এখানে এবং ‘বাহর’ গ্রন্থে যে আজানকে উদ্দেশ্য করেছেন, সেটা সুবিদিত শরিয়তের খেলাপ এবং এমন বিদ‘আতী কর্ম, যা ‘উসমান নবউদ্ভাবন করেছেন।” (হাশিয়াতু দুইন নাহার লিল জালাল, খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ১০৩)”
·
❏ পর্যালোচনা-১০:
সান‘আনীর এই কথা গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা তাঁর কথার ভিত্তি হলো হিশাম ইবনুল গাযের বর্ণনা। অথবা তিনি যাইদী শিয়াদের বর্ণনাগুলোর ওপর নির্ভর করেছেন, যারা মনে করে, তারাবির নামাজ বিদ‘আত। আর তারা সাহাবীদের নিন্দা করে।
·❏ ভ্রান্ত বক্তব্য-১১:
‘আফারী বলেছে, “তুহফাতুল আহওয়াযী (তিরমিযীর ভাষ্যগ্রন্থ) কিতাবের লেখক (‘আব্দুর রহমান) মুবারকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ) ন্যায়নিষ্ঠ খলিফাদের সুন্নাতের মর্ম বর্ণনা করার পর বলেছেন, “যেহেতু তুমি জানলে যে, ন্যায়নিষ্ঠ খলিফাদের সুন্নাত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কেবল সেই পন্থা, যা নাবী ﷺ এর আদর্শের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, সেহেতু তোমার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, (ইকামতকে একটি আজান ধরে) তৃতীয় আজানকে—যা ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র ইজতিহাদের অন্তর্ভুক্ত—সুন্নাত বলার ইস্তিদলাল (দলিলগ্রহণ) যথার্থ নয়। তুমি কি দেখ না যে, ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেছেন, জুমু‘আহর দিনে প্রথম আজান দেওয়া বিদ‘আত? এরূপ দলিলগ্রহণ যদি যথার্থ হতো, আর তৃতীয় আজান যদি সুন্নাতই হতো, তাহলে তিনি এক্ষেত্রে বিরোধিতা করা বা বিরোধিতা না করা—কোনো দিক থেকেই বিদ‘আত শব্দ ব্যবহার করতেন না। কেননা একটি সিদ্ধ বিষয়কে কোনো অর্থেই বিদ‘আত বলা জায়েজ নয়। সুতরাং বিষয়টি ভেবে দেখুন।” (তুহফাতুল আহওয়াযী, খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৬৯)”
·❏ পর্যালোচনা-১১:
ক. মুবারকপুরীর এই কথা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি ও অন্যরা আবূ বকর ও ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)’র বাড়তি কর্মগুলোর ব্যাপারে কী বলবেন? এগুলো সেসব কর্ম, যেগুলোকে সাহাবীবর্গ ও সমগ্র উম্মত সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছে, নাবী ﷺ এর এই কথার আলোকে যে, “তোমরা আমার সুন্নাহর ওপর প্রতিষ্ঠিত থাক এবং আমার পরে সুপথপ্রাপ্ত ন্যায়নিষ্ঠ খলিফাদের সুন্নাহর ওপর প্রতিষ্ঠিত থাক।” [আবূ দাঊদ, হা/৪৬০৭; সনদ: সাহীহ]
খ. এরপর তাঁর বক্তব্য হিশাম ইবনুল গাযের মুনকার বর্ণনার ওপর নির্ভরশীল।
গ. এছাড়া সাহাবীবর্গ, তাবি‘ঈবৃন্দ ও তাঁদের পরবর্তীরা ‘উসমানের সাথে যে একমত ছিলেন, সেটার মাধ্যমেই সান‘আনী, মুবারকপুরী ও তাঁদের মতাবলম্বীদের দাবির অসারতা প্রতীয়মান হয়।
❏ ভ্রান্ত বক্তব্য-১২:
‘আফারী ৪র্থ পৃষ্ঠায় বলেছে, “আল্লামাহ আহমাদ শাকির (রাহিমাহুল্লাহ) তিরমিযীর টীকায় (খ. ২; পৃ. ৩৯৩) বলেছেন, “আবূ দাঊদে এই হাদীসের বর্ণনায় একটি ‘ইলমী অবগতি আছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন জুমু‘আহর দিন মিম্বারের ওপর উপবেশন করতেন, তখন তাঁর সম্মুখে মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে আজান দেওয়া হতো। তখন জনসাধারণ, এমনকি অনেক ‘আলিম ধারণা করেন, এই আজান খতিবের সামনে মুখোমুখি হয়ে দিতে হবে। ফলে তারা মুয়াজ্জিনের দাঁড়ানোর জায়গাকে খতিবের সামনে নির্ধারণ করে। মিম্বারের নিকটে : অর্থাৎ, চেয়ার বা অন্যকিছুর ওপরে। ফলে এই আজান অবিমিশ্র তাক্বলীদে পরিণত হয়েছে, যার কোনোই ফায়দা নেই লোকদেরকে নামাজে আহ্বানের ক্ষেত্রে এবং নামাজের সময় হয়ে গেছে মর্মে সতর্ক করার ক্ষেত্রে। যেমনটি আজানের মূল ও প্রকৃত বিষয়। তারা এরকম করতে উদ্যমী হয়েছে। ফলে যারা অন্যরকম করে, তারা তাদের বিরোধিতা করে। প্রকৃতপ্রস্তাবে মসজিদের দরজার নিকটে মিনারের ওপর আজান দেওয়াই সুন্নাতের অনুসরণ, যাতে করে এর মাধ্যমে অনুপস্থিত ব্যক্তিদের জানানো যায়।
তারা (বাড়ি থেকে) ইমাম বের হওয়ার পূর্বেই আজানকে বহাল রাখতে আগ্রহী হয়েছে। অথচ এর প্রয়োজন অপসৃত হয়ে গেছে। কেননা মদিনায় মাসজিদে নাবাউয়ী ছাড়া আর কোনো জামে মসজিদ ছিল না। লোকেরা সবাই ওই মসজিদে জমায়েত হতো। মসজিদের দরজার নিকটে দেওয়া আজান শোনার মতো অবস্থা তাঁদের ছিল না জনসংখ্যার আধিক্যের কারণে। ফলে ‘উসমান প্রথম আজান বৃদ্ধি করেন। যাতে করে তিনি বাজার ও আশেপাশের লোকদেরকে নামাজের সময় উপস্থিত হয়েছে বলে জানাতে পারেন। কিন্তু এখন মসজিদের সংখ্যা বেড়েছে এবং সেসবে মিনারও নির্মিত হয়েছে। মিনারের ওপর মুয়াজ্জিনের আজান শুনে লোকেরা নামাজের সময় জানতে পারছে। তাই আমরা মনে করি, এই আজানই যথেষ্ট। আর এই (একটি) আজানই দেওয়া হবে ইমাম বের হওয়ার সময়, সুন্নাতের অনুসরণ করে।”
·
❏ পর্যালোচনা-১২:
ক. আহমাদ শাকির (রাহিমাহুল্লাহ)’র কথায় ‘উসমানের আজানের ব্যাপারে কোনো আপত্তি নেই। বরং জনসাধারণ ও কিছু ‘আলিম জুমু‘আহর আজানের ব্যাপারে যা বলে ও করে, কেবল সে ব্যাপারেই আপত্তি আছে।
খ. আহমাদ শাকিরের কথা থেকে উপলব্ধ হয়, তিনি ‘উসমানের আজান হক হওয়ার ব্যাপারটি সমর্থন করেন। কেননা প্রয়োজন সেটাই দাবি করছিল। তাঁর এই কথাটি প্রণিধান করুন, “ফলে ‘উসমান প্রথম আজান বৃদ্ধি করেন। যাতে করে তিনি বাজার ও আশেপাশের লোকদেরকে নামাজের সময় উপস্থিত হয়েছে বলে জানাতে পারেন। কিন্তু এখন মসজিদের সংখ্যা বেড়েছে এবং সেসবে মিনারও নির্মিত হয়েছে। মিনারের ওপর মুয়াজ্জিনের আজান শুনে লোকেরা নামাজের সময় জানতে পারছে। তাই আমরা মনে করি, এই আজানই যথেষ্ট। আর এই (একটি) আজানই দেওয়া হবে ইমাম বের হওয়ার সময়, সুন্নাতের অনুসরণ করে।”
তাঁর কথার ফলাফল হলো, ‘উসমানের আজানের ব্যাপারে তিনি আপত্তি পেশ করেননি। কেননা প্রয়োজনই এই আজানের বিদ্যমানতা দাবি করছিল। যদি প্রয়োজন না থাকে, তাহলে তিনি সেই আজানকেই যথেষ্ট মনে করেছেন, যে আজান রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে ছিল।
·
❏ ভ্রান্ত বক্তব্য-১৩:
‘আফারী ৪র্থ ও ৫ম পৃষ্ঠায় বলেছে, “আল্লামাহ আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, কুরতুবী স্বীয় তাফসীরে (১৮/১০০) মাওয়ারদী থেকে বর্ণনা করেছেন, প্রথম আজান হলো নবউদ্ভাবিত। ‘উসমান এটা করেছেন, যাতে লোকেরা খুতবায় উপস্থিত হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়। আর এটা তখনকার কথা, যখন মদিনা অনেক বিস্তৃত হয়েছে এবং মদিনাবাসীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিষয়টি যখন এমন হবে, তখন ‘উসমানের আজান গ্রহণ করা বিতর্কের ঊর্ধ্বে চলে যাবে। আর এটা বৈধ হবে না, বিশেষ করে এ জাতীয় ক্ষেত্রে, যাতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর শরিয়তের ওপর কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়া বৃদ্ধি সাধন করা হয়। একারণেই ‘আলী বিন আবূ ত্বালিব (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কুফায় কেবল সুন্নাতের ওপরই সীমাবদ্ধ ছিলেন।
তিনি ‘উসমানের বৃদ্ধিকৃত অংশ গ্রহণ করেননি। যেমনটি কুরতুবীতে রয়েছে। ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেছেন, নাবী ﷺ যখন মিম্বারে আরোহণ করতেন, তখন বিলাল আজান দিতেন। নাবী ﷺ খুতবা শেষ করলে বিলাল ইক্বামত দিতেন। প্রথম আজান হলো বিদ‘আত। আবূ ত্বাহির আল-মুখলিস তাঁর ‘ফাওয়াইদ’ গ্রন্থে (২২৯/১-২) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। সারকথা হলো, আমরা মনে করি, মুহাম্মাদী আজানই যথেষ্ট। আর ইমাম বের হওয়ার সময় এবং মিম্বারে আরোহণ করার সময় এই আজান দিতে হবে। যেহেতু ‘উসমানের বৃদ্ধিকরণের যৌক্তিক কারণ বিলীন হয়ে গেছে, আর এতেই নাবী ﷺ এর সুন্নাতের অনুসরণ হয়। আর তিনি ﷺ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত থেকে বিমুখ হয়, সে আমার দলভুক্ত নয়’।” (আল-আজউয়িবাতুন নাফি‘আহ, পৃষ্ঠা: ১১-১২; মাশহূর হাসান ও তাঁর সঙ্গী প্রণীত ক্বামূসুল বিদা‘, পৃষ্ঠা: ৪৭৫-৪৭৬)”
·
❏ পর্যালোচনা-১৩:
এভাবে আল-আলবানী থেকে বর্ণনা করার মধ্যে অস্পষ্টতা ও ধোঁকা রয়েছে। আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) কে ‘উসমানী আজান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি সেই প্রশ্নের বিস্তারিত ‘ইলমী জবাব দেন। জবাব দীর্ঘ হওয়ার কারণে আমরা সেখান থেকে কিছু অংশ বা অনুচ্ছেদ নির্বাচন করে তুলে ধরছি।
প্রথম অনুচ্ছেদ: তিনি বলেছেন, ‘উসমানী আজান যখন শুরু হয়। এরপর তিনি তা বর্ণনা করে বলেছেন, “সুতরাং তাঁর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) অনুসরণ তখনই ঠিক হবে, যখন সেই কারণ বাস্তবায়িত হবে, যেকারণে ‘উসমান প্রথম আজান বৃদ্ধি করেছিলেন। আর সে কারণটি হলো লোকসংখ্যার আধিক্য এবং মসজিদে থেকে তাঁদের বাড়ির দূরত্ব, যেমনটি পূর্বে উল্লিখিত হয়েছে।” [আল-আজউয়িবাতুন নাফি‘আহ, পৃষ্ঠা: ১০]
তিনি (ইমাম আলবানী) ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র অনুসরণ বৈধ মনে করেন, যখন কারণ বাস্তবায়িত হবে।
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ: তিনি আল-মাওয়ারদীর বক্তব্য বর্ণনা করেছেন, যেমনটি লেখকের প্রবন্ধে এসেছে।
তৃতীয় অনুচ্ছেদ: তিনি পূর্বোক্ত বক্তব্যের পর বলেছেন, “সারকথা হলো, আমরা মনে করি, মুহাম্মাদী আজানই যথেষ্ট। আর ইমাম বের হওয়ার সময় এবং মিম্বারে আরোহণ করার সময় এই আজান দিতে হবে। যেহেতু ‘উসমানের বৃদ্ধিকরণের যৌক্তিক কারণ বিলীন হয়ে গেছে, আর এতেই নাবী ﷺ এর সুন্নাতের অনুসরণ হয়। আর তিনি ﷺ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত থেকে বিমুখ হয়, সে আমার দলভুক্ত নয়’।” [আল-আজউয়িবাতুন নাফি‘আহ, পৃষ্ঠা: ১১-১২]
এখানে তাঁর কথার মর্মার্থ হলো, ‘উসমানের বৃদ্ধিকরণের যৌক্তিক কারণ বিলীন হয়ে গেলে নাবী ﷺ এর সুন্নাত গ্রহণ করতে হবে, আর কারণ বিদ্যমান হলে ‘উসমানী আজান গ্রহণ করায় কোনো বাধা নেই।
চতুর্থ অনুচ্ছেদ: আল-আলবানী বলেছেন, “আমরা এই ‘উসমানী আজানে কোনো প্রতিবন্ধকতা আছে বলে মনে করি না, যদি তা ব্যারাকের বহির্দ্বারে দেওয়া হয়। কেননা এ আজান সড়কের লোকেরাও শুনতে পাবে এবং তারা জানতে পারবে যে, ব্যারাকে একটি মসজিদ আছে, যেখানে সালাত প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে তারা সেখানে গমন করবে এবং তাতে নামাজ পড়বে। তদনুরূপ রাস্তার নিকটবর্তী বাড়ির লোকেরাও তা শুনতে পাবে।” [আল-আজউয়িবাতুন নাফি‘আহ, পৃষ্ঠা: ১৩]
এরপর তিনি নাবী ﷺ এর যুগের আজান প্রসঙ্গে সা’ইব বিন ইয়াযীদ থেকে যুহরীর হাদীস উল্লেখ করেছেন, ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কর্তৃক বৃদ্ধিকরণের উল্লেখ-সহ। তিনি সাহীহ বুখারী থেকে এই হাদীস বাড়তি অংশ-সহ উল্লেখ করেছেন। বাড়তি অংশগুলোকে তিনি সুন্নাহর অন্যান্য উৎস গ্রন্থের দিকে সম্পৃক্ত করেছেন।
সেই অতিরিক্ত বা বাড়তি অংশগুলোর একটি হলো রাবির এই কথা যে, “লোকেরা তাঁকে (‘উসমানকে) তাঁর উক্ত কাজের জন্য দোষারোপ করেনি। কিন্তু যখন তিনি মিনায় (কসর না করে) সম্পূর্ণ সালাত পড়লেন, তখন লোকেরা তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করল।”
অর্থাৎ, কোনো সাহাবী এবং ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র যুগের কোনো তাবি‘ঈ তাঁর বিরোধিতা করেননি।
সারকথা হলো, আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) উপযুক্ত কারণ বিদ্যমান থাকলে ‘উসমানী আজান প্রয়োগ করায় কোনো প্রতিবন্ধকতা আছে বলে মনে করেন না। বিষয়টি সেরকম নয়, যেমনটি (নিবন্ধের) লেখক ভুল ধারণা করেছে যে, আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) নিঃশর্তভাবে ‘উসমানের আজানের বিরোধী।
এই লেখকের নিন্দা করা যায় এ দিক থেকে যে, সে এই অনুচ্ছেদগুলো গোপন করেছে, যেখানে আল-আলবানী ‘উসমানী আজানের ব্যাপারে তাঁর পরিপক্ব ‘ইলমী অবস্থান স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছেন। এমনকি লেখক নিজেই আলবানী থেকে যা বর্ণনা করেছে, তার মর্মার্থ এটা নয় যে, উপযুক্ত কারণ বিদ্যমান থাকলেও এই আজান প্রয়োগ করা যাবে না। আর আলবানী কুরতুবীর রেফারেন্সে মাওয়ারদী থেকে যা বর্ণনা করেছেন এ মর্মে যে, ‘আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কুফায় স্রেফ সুন্নাহর ওপর নিজেকে সীমাবদ্ধ করেছিলেন, তিনি ‘উসমানের বৃদ্ধিকৃত আজান গ্রহণ করেননি, সে ব্যাপারে আমরা বলি, এই দাবির ব্যাপারে দলিল পেশ করো। নিশ্চয় তা বড়োই কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
এছাড়া ‘আফারীকে নিম্নোক্ত দলিল দিয়ে খণ্ডন করা যায়। ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “মুহাম্মাদ বিন মুক্বাতিল আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমাদেরকে ‘আব্দুল্লাহ অবহিত করেছেন, তিনি বলেন, আমাদেরকে ইউনুস অবহিত করেছেন, যুহরী থেকে। তিনি বলেছেন, আমি সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কে বলতে শুনেছি, আল্লাহর রাসূল ﷺ, আবূ বাকর ও ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)’র যুগে জুমু‘আহর দিন ইমাম যখন মিম্বারের ওপর বসতেন, তখন প্রথম আজান দেয়া হত। অতঃপর যখন ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)’র খেলাফতের সময় এল এবং লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পেল, তখন তিনি জুমু‘আহর দিন তৃতীয় আজানের (ইকামতকে এক আজান ধরে) নির্দেশ দেন। ‘যাওরা’ নামক স্থান হতে এ আজান দেওয়া হয়, পরে এ আজানের ব্যাপারটি স্থায়ী রূপ পরিগ্রহণ করে (অর্থাৎ, এ আজানের ধারাবাহিকতা চলতে থাকে)।” (*) [সাহীহ বুখারী, হা/৯১৬]
[(*) এখানে শাইখ রাবী‘ টীকায় লিখেছেন, এই কথার কথক হলেন সাহাবী সা’ইব বিন ইয়াযীদ, যিনি ৯১ হিজরিতে কিংবা তার কিছুপূর্বে মারা যান। তিনি তাঁর সুদীর্ঘ জীবনের সমাপ্তি পর্যন্ত কারও নিকট থেকে এ আজানের ব্যাপারে ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র বিরোধিতা করতে শোনেননি।]
হাফিয ইবনু রজব তদীয় ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে (৮/২৩১) এই হাদীসের ওপর টীকা লিখেছেন। তিনি তাঁর টীকায় বলেছেন, “বুখারী এখানে যে রিওয়াইয়াত বর্ণনা করেছেন, সেখানে তাঁর (সাহাবীর) এ কথা রয়েছে যে, ‘পরে এ আজানের ব্যাপারটি স্থায়ী রূপ পরিগ্রহণ করে (فثبت الأمر على ذلك)।’ এই কথা প্রমাণ করে, ‘উসমান যখন উক্ত আজান প্রণয়ন করেন, তখন থেকে তা চলমান রয়েছে, তাঁর পরে তা পরিত্যাগ করা হয়নি। এটা প্রমাণ করছে যে, ‘আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এই আজানকে সমর্থন করেছেন, তিনি এটাকে বাতিল করেননি। সুতরাং উক্ত কর্মের ওপর খোলাফায়ে রাশেদিনের (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুম আজমা‘ঈন) দুইজন খলিফা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন।”
এই কথাটি প্রণিধান করো, হে ‘আফারী, এবং এ থেকে ফায়দা গ্রহণ করো।
ইবনু রজব (রাহিমাহুল্লাহ) “জামি‘উল ‘উলূমি ওয়াল হিকাম” গ্রন্থে (২/১২৮-১২৯) বলেছেন, “রাসূল ﷺ বলেছেন, সকল বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা। এই কথা ব্যাপকার্থবোধক কথার অন্তর্ভুক্ত, যা থেকে কোনো কিছুই বাদ পড়ে না। এটা দ্বীনের একটি মহান মূলনীতি। এটা নাবী ﷺ এর এই কথার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ যে, “যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু উদ্ভাবন করে, যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।” সুতরাং যেই নতুন কিছু উদ্ভাবন করে, সেটাকে দ্বীনের দিকে সম্পৃক্ত করে, অথচ দ্বীনের মধ্যে তার কোনো মৌলিক ভিত্তি নেই, সেটাই ভ্রষ্টতা। দ্বীন তার উক্ত কর্ম থেকে মুক্ত। চাই তা ‘আক্বীদাহগত মাসায়েলে হোক, কিংবা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য কথা ও কাজে হোক।
পক্ষান্তরে সালাফদের কথায় কিছু বিদ‘আতকে উত্তম গণ্য করার ব্যাপারে যা বর্ণিত হয়েছে, তা শাব্দিক বিদ‘আতের ব্যাপারে বলা হয়েছে, শার‘ঈ বিদ‘আতের ব্যাপারে নয়। এরই অন্তর্ভুক্ত হলো ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র কথাটি। তিনি যখন লোকদেরকে রমজান মাসে ক্বিয়াম (তারাবির নামাজ) করার জন্য লোকদেরকে একজন ইমামের পিছনে মসজিদে জমায়েত করলেন, এরপর (বাড়ি থেকে) বের হয়ে এভাবে নামাজ পড়তে দেখে বললেন, এটা কতইনা উত্তম বিদ‘আত!
তাঁর থাকে (এরকমও) বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন, এটা যদি বিদ‘আত হয়, তবে তা উত্তম বিদ‘আত। উবাই বিন কা‘ব (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি তাঁকে বলেন, ‘এটা আগে ছিল না।’ তখন ‘উমার বলেন, ‘আমি তো জানি, কিন্তু এটা ভালো।’ তাঁর কথার উদ্দেশ্য ছিল—এই কাজ উক্ত পদ্ধতিতে আগে ছিল না। কিন্তু শরিয়তে উক্ত কাজের এমন মৌলিক ভিত্তি আছে, যেদিকে ফিরে যাওয়া যায়।
সেসব মৌলিক ভিত্তির আওতাভুক্ত হলো, নাবী ﷺ রমজানের ক্বিয়াম করতে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করতেন। লোকেরা তাঁর যুগে বিভিন্ন আলদা জামা‘আতে ও একাকী মসজিদে ক্বিয়াম করেছে। নাবী ﷺ রমজানে তাঁর সাহাবীদের নিয়ে একাধিক রাতে ক্বিয়াম করেছেন। পরে তিনি তা একারণে ছেড়ে দিয়েছিলেন যে, তিনি লোকদের ওপর তা (তারাবি/ক্বিয়াম) ফরজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছিলেন। ফলে তাঁরা উক্ত ক্বিয়াম ছেড়ে দেন। কিন্তু নাবী ﷺ এর মৃত্যুর পর এথেকে নিরাপদ হওয়া গেছে (ফরজ হওয়ার আশঙ্কা এখন আর নেই)। নাবী ﷺ থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে স্বীয় সাহাবীদের নিয়ে ক্বিয়াম করেছেন।
এমন আরও একটি মৌলিক ভিত্তি হলো, নাবী ﷺ খোলাফায়ে রাশেদিনের সুন্নাত অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন। আর এটা তাঁর খোলাফায়ে রাশেদিনের সুন্নাতেই পরিণত হয়েছে। কেননা লোকেরা ‘উমার, ‘উসমান ও ‘আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুম) এর যুগে এর ওপরেই একত্রিত ছিল।
এ ধরনের (শাব্দিক) বিদ‘আতের একটি হলো জুমু‘আহর প্রথম আজান। ‘উসমান এই আজান বৃদ্ধি করেছিলেন লোকদের প্রয়োজনের কারণে। ‘আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এটাকে সমর্থন করেছিলেন। এর ওপরই মুসলিমদের আমল চলমান হয়েছে। ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন, এটা বিদ‘আত। সম্ভবত তিনি একথার দ্বারা সেটাই উদ্দেশ্য নিয়েছেন, যে উদ্দেশ্য নিয়েছিলেন তাঁর পিতা রমজানের ক্বিয়ামের ক্ষেত্রে।
এরকম আরেকটি বিষয় হলো মুসহাফকে একটি কিতাবে জমা করা। যাইদ বিন সাবিত এ ব্যাপারে তাওয়াক্বকুফ অবলম্বন করেন (ক্ষান্ত হন) এবং আবূ বকর ও ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) কে বলেন, ‘আপনারা কীভাবে এ কাজ করবেন, যে কাজ নাবী ﷺ করেননি?!’ পরক্ষণেই তিনি উপলব্ধি করেন, এর মধ্যে কল্যাণ আছে। ফলে তিনি তা জমা করতে সম্মত হন। নাবী ﷺ তাঁকে ওহি লেখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আলাদাভাবে লেখা কিংবা একত্র করে লেখার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। বরং সেটা জমা করাই বেশি কল্যাণময়।
তদনুরূপ ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) উম্মতকে একটি মুসহাফের ওপর জমায়েত করেন এবং বাকিগুলো ধ্বংস করে দেন, এই আশঙ্কা করে যে, উম্মত হয়তো এর ফলে বিভক্ত হয়ে যাবে। ‘আলী ও অধিকাংশ সাহাবী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুম) এটাকে ভালো মনে করেছেন। বস্তুত এটা ছিল খুবই কল্যাণকর। একইভাবে জাকাত (আদায় করতে) অস্বীকারকারীদের সাথে যুদ্ধের ব্যাপারটিতে ‘উমার ও অন্যান্যরা তাওয়াক্বকুফ অবলম্বন করেছিলেন। এক পর্যায়ে আবূ বকর শরিয়তে এই কাজের যে মৌলিক ভিত্তি রয়েছে, তা বর্ণনা করেন। ফলে লোকেরা তাঁর সাথে এ ব্যাপারে একমত পোষণ করে।” এখানে ইবনু রজবের বক্তব্য সমাপ্ত হয়েছে।
এই ইমামের ফিক্বহ ও ইনসাফের দিকে লক্ষ করো।
ক. তাঁর নিকটে প্রকৃত বিদ‘আত—যা মূলত ভ্রষ্টতার বিদ‘আত—সেগুলো, দ্বীনের মধ্যে যেগুলোর কোনো মৌলিক ভিত্তি নেই। দ্বীন এ ধরনের বিদ‘আত থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।
খ. জামা‘আতবদ্ধভাবে তারাবির নামাজ পড়ার ব্যাপারে ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র নির্দেশের প্রতি তাঁর সম্মান। তিনি এই নির্দেশের ব্যাপারে বলেছেন, “শরিয়তে এই নির্দেশের এমন কিছু ভিত্তি আছে, যেসবের দিকে ফিরে যাওয়া হয়।”
গ. তিনি বলেছেন, “এ ধরনের (শাব্দিক) বিদ‘আতের অন্তর্ভুক্ত হলো জুমু‘আহর প্রথম আজান। ‘উসমান এই আজান বৃদ্ধি করেছিলেন লোকদের প্রয়োজনের কারণে। ‘আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এটাকে সমর্থন করেছিলেন। এর ওপরই মুসলিমদের আমল চলমান হয়েছে।” তিনি বলেছেন, “এর অন্তর্ভুক্ত হলো”; অর্থাৎ, সুপথপ্রাপ্ত খলিফা ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) যা করেছেন, দ্বীনের মধ্যে তার কিছু মৌলিক ভিত্তি আছে, যেসবের দিকে ফিরে যাওয়া হয়। এরপর তিনি একথা বলেছেন যে, “এর অন্তর্ভুক্ত হলো—অর্থাৎ, দ্বীনের মধ্যে যেসব কাজের মৌলিক ভিত্তি আছে তার অন্তর্ভুক্ত হলো—মুসহাফকে একটি কিতাবে জমা করা”, সুপথপ্রাপ্ত খলিফা আবূ বকরের নির্দেশে। “তদনুরূপ ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) উম্মতকে একটি মুসহাফের ওপর জমায়েত করেন এবং বাকিগুলো ধ্বংস করে দেন, এই আশঙ্কা করে যে, উম্মত হয়তো এর ফলে বিভক্ত হয়ে যাবে। ‘আলী ও অধিকাংশ সাহাবী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুম) এটাকে ভালো মনে করেছেন। বস্তুত এটা ছিল খুবই কল্যাণকর।”
সুতরাং যে ব্যক্তি ‘উসমানী আজানের নিন্দা করে এবং সেটাকে বিদ‘আত মনে করে, সে এখন কী বলবে? সে কি আবূ বকর, ‘উমার ও ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুম) এর মতো সুপথপ্রাপ্ত খলিফাদের কর্মের ব্যাপারে এই হুকুম দিবে যে, সেগুলো প্রকৃত বিদ‘আতের অন্তর্ভুক্ত?
[আগামী পর্বে সমাপ্য, ইনশাআল্লাহ]
·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
www.facebook.com/ SunniSalafiAthari
·নিবন্ধক: মুহাদ্দিসুল মাদীনাহ ইমাম রাবী‘ বিন হাদী আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ)
·❏ ভ্রান্ত বক্তব্য-৬:
‘আফারী তার নিবন্ধের ৩য় পৃষ্ঠায় বলেছে, “তাঁদের (এ আজান বিরোধীদের) একজন হলেন ‘আত্বা, যা বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হয়েছে।”
❏ পর্যালোচনা-৬:
ক. তুমি কেন এর সনদ উল্লেখ করলে না, যেটাকে তুমি সাহীহ বলে দাবি করছ?
খ. আমি তোমার কাছে দুটি সনদ-সহ ‘আত্বা (রাহিমাহুল্লাহ)’র বক্তব্য উল্লেখ করছি। ‘আব্দুর রাযযাক্ব (বিন হুমাম) থেকে হাদীস বর্ণনাকারী ইসহাক্ব বিন ইবরাহীম আদ-দাবারী বলেছেন, যেমনটি মুসান্নাফে ‘আব্দুর রাযযাক্বে (৩/২০৫) এসেছে, “৫৩৩৯ – ‘আব্দুর রাযযাক্ব সম্ভবত ইবনু জুরাইজ—কিংবা ইবনুল আ‘রাবী [*]; রাবি সংশয়ে পতিত হয়েছেন—থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আত্বা আমাদেরকে অবহিত করেছেন। তিনি (‘আত্বা) বলেছেন, জুমু‘আর দিনে অতীতে একটি আজানই ছিল। এরপর ইকামত দেওয়া হতো। ইমামকে যখন দেখা যেত, তখন এই আজান দেওয়া হতো। মুয়াজ্জিন আজান শেষ না করার আগে ইমাম খুতবা দেওয়ার জন্য দাঁড়াতেন না। এ সময়েই ক্রয়বিক্রয় হারাম হয়ে যায়। আর এটা তখনকার কথা, যখন প্রথম আজান দেওয়া হয়। পক্ষান্তরে ইমাম বের হওয়ার এবং মিম্বারে উপবেশন করার আগেই এখন যে আজান দেওয়া হয়, তা বাতিল। সর্বপ্রথম এই বিদ‘আত উদ্ভাবন করেছে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ।”
[(*) শাইখ রাবী‘ এখানে টীকায় লিখেছেন, এতেও গবেষণার ব্যাপার আছে। ইবনুল ‘আরাবীর নাম হলো আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন যিয়াদ। ইনি ‘আব্দুর রাযযাক্ব থেকে বর্ণনাকারী রাবিদের অন্তর্ভুক্ত নন। কেননা তিনি ২৪৬ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেছেন, আর ৩৪০ হিজরিতে মারা গেছেন। অপরদিকে ‘আব্দুর রাযযাক্বের মৃত্যুসন ২১১ হিজরি। মুসান্নাফে ‘আব্দুর রাযযাক্বের রিওয়াইয়াতে মশহুর হলেন ইসহাক্ব বিন ইবরাহীম আদ-দাবারী]
‘আত্বা পর্যন্ত এ হাদীসের সনদ দ্ব‘ঈফ। কেননা এতে সংশয় রয়েছে যে, ইবনু জুরাইজ এটি ‘আত্বা থেকে বর্ণনা করেছেন কিনা। চাই এ সংশয় ‘আব্দুর রাযযাক্বের (বিন হুমাম) হোক কিংবা অন্য কারও। তাছাড়া ‘আত্বা এ আজানকে হাজ্জাজের দিকে সম্পৃক্ত করেছেন। একারণে তিনি এটাকে বাতিল আখ্যা দিয়েছেন। এতদ্ব্যতীত পূর্বোদ্ধৃত কারণে ‘আত্বা পর্যন্ত এ হাদীসের সনদ দ্ব‘ঈফ।
‘আব্দুর রাযযাক্ব (বিন হুমাম) থেকে হাদীস বর্ণনাকারী ইসহাক্ব বিন ইবরাহীম আদ-দাবারী বলেছেন, যেমনটি মুসান্নাফে ‘আব্দুর রাযযাক্বে (৩/২০৬) এসেছে, “৫৩৪০ – ‘আব্দুর রাযযাক্ব হাদীস বর্ণনা করেছেন ইবনু জুরাইজ থেকে, তিনি বলেন, একবার সুলাইমান বিন মূসা বলেছিলেন, মদিনায় সর্বপ্রথম আজান বৃদ্ধি করেছেন ‘উসমান। এ শুনে ‘আত্বা বলেন, কক্ষনো নয়। বরং তিনি মানুষদের ডাকতেন মাত্র, তিনি একটির বেশি আজান দিতেন না।”
পর্যালোচনা: এই সনদে ইবনু জুরাইজ আছে, যে একজন মুদাল্লিস রাবি। আর এখানে সে ‘বলেছেন (قال)’—শব্দ ব্যবহার করে হাদীস বর্ণনা করেছে। এই শব্দ (নিজে হাদীস) শোনার প্রমাণস্বরূপ (ব্যক্তীকৃত) সুস্পষ্ট শব্দাবলির অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং এটা সেসব শব্দের একটি, যা মুদাল্লিস রাবিরা ব্যবহার করে। তারপরও এই সনদকে যদি সাহীহ ধরেও নেওয়া হয়, তথাপি এখানে কেবল ‘আত্বার এই অবস্থানই বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি সুলাইমান বিন মূসার কথার বিরোধিতা করেছিলেন। সুলাইমান বলেছিলেন, মদিনায় সর্বপ্রথম আজান বৃদ্ধি করেছেন ‘উসমান। এ শুনে ‘আত্বা বলেন, বরং ‘উসমান মানুষদের ডাকতেন মাত্র, তিনি একটির বেশি আজান দিতেন না।
সুতরাং তুমি যে বলেছ, “তাঁদের (এ আজান বিরোধীদের) একজন হলেন ‘আত্বা, যা বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হয়েছে”, এর দ্বারা তুমি উদ্দেশ্য করেছ, ‘আত্বা কর্তৃক ‘উসমানের আজানের বিরোধিতা বিশুদ্ধ সনদে প্রমাণিত। বস্তুত তুমি এমন কিছুর দাবি করেছ, যা তুমি প্রাপ্ত হওনি।
·
❏ ভ্রান্ত বক্তব্য-৭:
‘আফারী ৩য় পৃষ্ঠায় আরও বলেছে, “আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর থেকে বর্ণিত হয়েছে, তাঁর সামনে কেবল সেই আজানই দেওয়া হতো, যে আজান নাবী ﷺ এর যুগে প্রচলিত ছিল।”
❏ পর্যালোচনা-৭:
ক. ‘আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)’র কর্মে এ বিষয়ের প্রমাণ নেই যে, ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র কর্ম বিদ‘আত।
খ. ইবনু যুবাইরের সনদে ইবনু জুরাইজ রয়েছে। যে ব্যক্তি এ হাদীস ‘আন শব্দে বর্ণনা করেছে। বিধায় এ হাদীসের সনদ দুর্বল (মুহাদ্দিসগণের উসূল অনুযায়ী মুদাল্লিস রাবির ‘আন শব্দযোগে বর্ণিত হাদীস দুর্বল – অনুবাদক)। আর এ হাদীসের কোনো মুতাবি‘ (সাক্ষ্যমূলক) হাদীসও নেই। [মুসান্নাফে ‘আব্দুর রাযযাক্ব, খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ২০৬; হা/৫৩৪৪] সুতরাং ইবনু যুবাইর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)’র আমলের সাথে তোমার (বিষয়ের) সংশ্লিষ্টতা বাতিল সাব্যস্ত হলো।
·
❏ ভ্রান্ত বক্তব্য-৮:
‘আফারী তার নিবন্ধের ৩য় পৃষ্ঠায় বলেছে, “ইমাম শাফি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, যেমনটি আল-ইস্তিযকার গ্রন্থে (২/২৭) রয়েছে, “জুমু‘আহর দিন ইমাম যখন মিম্বারের ওপর বসবেন, তখন তাঁর সম্মুখে আজান দেওয়া হলো আমার কাছে পছন্দনীয় আমল। তিনি যখন বসবেন, তখন মুয়াজ্জিন আজান দেওয়া শুরু করবে। মুয়াজ্জিন আজান শেষ করলে ইমাম দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিবেন। ইবনু ‘আব্দিল হাকামের বর্ণনা অনুযায়ী মুয়াজ্জিন শব্দটি একবচনের শব্দে উল্লিখিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, দ্বিতীয় আজান ‘উসমান নবউদ্ভাবন করেছেন, এমনটা বলা ‘আত্বা (রাহিমাহুল্লাহ) অপছন্দ করতেন। তিনি বলতেন, এটাকে মু‘আউয়িয়াহ নবউদ্ভাবন করেছেন। শাফি‘ঈ বলেছেন, তাঁদের যেই তা করে থাকুন না কেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে যে আজান চালু ছিল সেটাই আমার কাছে অধিক প্রিয়। এটা সেই আজান, যে আজানের সময় থেকে ক্রয়বিক্রয় করতে নিষেধ করা হয়েছে।”
·❏ পর্যালোচনা-৮:
ইমাম শাফি‘ঈর বক্তব্যে ‘উসমানের আজানকে বিদ‘আত আখ্যা দেওয়ার মতো কোনো কথা নেই। বরং তিনি যে বলেছেন, ‘এটা আমার কাছে অধিক প্রিয়’, সেটাই জানিয়ে দেয়, ‘উসমানের আমলও তাঁর কাছে প্রিয়। তিনি এটাকে বিদ‘আত মনে করতেন না, যেমনটি এই লেখক ভ্রমাত্মক ধারণা করে সেটাকে বিদ‘আত ভেবে বসেছে।
·❏ ভ্রান্ত বক্তব্য-৯:
‘আফারী ৩য় পৃষ্ঠায় আরও বলেছে, “ইবনু হাবীব (রাহিমাহুল্লাহ)’র বক্তব্য, যেমনটি আবুল ওয়ালীদ বর্ণনা করেছেন—“এটা তাঁর একটি অভিমত। লোকজনের সংখ্যা যখন বৃদ্ধি পেল, ‘উসমান তখন সূর্য ঢলে যাওয়ার সময় ‘যাওরা’ নামক বাজারে আজান দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। যাতে করে লোকেরা বাজার থেকে উঠে যায় (জুমু‘আহর প্রস্তুতির জন্য)। এরপর তিনি যখন বের হয়ে মিম্বারে উপবেশন করবেন, তখন মুয়াজ্জিনরা মিনারের ওপর আজান দিবে। তারপর হিশাম বিন ‘আব্দুল মালিক তাঁর শাসনামলে যাওরা বাজারের আজানকে স্থানান্তরিত করেন। একজন মুয়াজ্জিন নির্ধারণ করে দেন, যে সূর্য ঢলে যাওয়ার সময় মিনারের ওপর আজান দিবে। আর হিশাম যখন (বাড়ি থেকে) বের হয়ে মিম্বারে উপবেশন করবেন, তখন মুয়াজ্জিন তাঁর সম্মুখে আজান দিবে। মুয়াজ্জিন যখন আজান শেষ করবে, তখন তিনি খুতবা দিবেন। ইবনু হাবীব বলেছেন, নাবী ﷺ এর আমলই অনুসৃত হওয়ার সবচেয়ে বড়ো হকদার।” (আল-মুনতাক্বা, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৩৪)”
·
❏ পর্যালোচনা-৯:
ইবনু হাবীবের বক্তব্যে ‘উসমানের আমলের কোনো বিরোধিতা নেই। তিনি কেবল হিশামের কর্মের বিরোধিতা করেছেন। যার কর্মে ‘উসমানের আজানকে যাওরা বাজার থেকে স্থানান্তর করার বর্ণনা রয়েছে। সুতরাং এই কথা দিয়ে এবং শাফি‘ঈর কথা দিয়ে তোমার দলিল প্রদান বাতিল সাব্যস্ত হলো।
·
❏ ভ্রান্ত বক্তব্য-১০:
‘আলী ‘আফারী ৩য় পৃষ্ঠায় আরও বলেছে, “ইবনুল আমীর আস-সান‘আনী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “গ্রন্থকার এখানে এবং ‘বাহর’ গ্রন্থে যে আজানকে উদ্দেশ্য করেছেন, সেটা সুবিদিত শরিয়তের খেলাপ এবং এমন বিদ‘আতী কর্ম, যা ‘উসমান নবউদ্ভাবন করেছেন।” (হাশিয়াতু দুইন নাহার লিল জালাল, খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ১০৩)”
·
❏ পর্যালোচনা-১০:
সান‘আনীর এই কথা গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা তাঁর কথার ভিত্তি হলো হিশাম ইবনুল গাযের বর্ণনা। অথবা তিনি যাইদী শিয়াদের বর্ণনাগুলোর ওপর নির্ভর করেছেন, যারা মনে করে, তারাবির নামাজ বিদ‘আত। আর তারা সাহাবীদের নিন্দা করে।
·❏ ভ্রান্ত বক্তব্য-১১:
‘আফারী বলেছে, “তুহফাতুল আহওয়াযী (তিরমিযীর ভাষ্যগ্রন্থ) কিতাবের লেখক (‘আব্দুর রহমান) মুবারকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ) ন্যায়নিষ্ঠ খলিফাদের সুন্নাতের মর্ম বর্ণনা করার পর বলেছেন, “যেহেতু তুমি জানলে যে, ন্যায়নিষ্ঠ খলিফাদের সুন্নাত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কেবল সেই পন্থা, যা নাবী ﷺ এর আদর্শের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, সেহেতু তোমার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, (ইকামতকে একটি আজান ধরে) তৃতীয় আজানকে—যা ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র ইজতিহাদের অন্তর্ভুক্ত—সুন্নাত বলার ইস্তিদলাল (দলিলগ্রহণ) যথার্থ নয়। তুমি কি দেখ না যে, ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেছেন, জুমু‘আহর দিনে প্রথম আজান দেওয়া বিদ‘আত? এরূপ দলিলগ্রহণ যদি যথার্থ হতো, আর তৃতীয় আজান যদি সুন্নাতই হতো, তাহলে তিনি এক্ষেত্রে বিরোধিতা করা বা বিরোধিতা না করা—কোনো দিক থেকেই বিদ‘আত শব্দ ব্যবহার করতেন না। কেননা একটি সিদ্ধ বিষয়কে কোনো অর্থেই বিদ‘আত বলা জায়েজ নয়। সুতরাং বিষয়টি ভেবে দেখুন।” (তুহফাতুল আহওয়াযী, খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৬৯)”
·❏ পর্যালোচনা-১১:
ক. মুবারকপুরীর এই কথা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি ও অন্যরা আবূ বকর ও ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)’র বাড়তি কর্মগুলোর ব্যাপারে কী বলবেন? এগুলো সেসব কর্ম, যেগুলোকে সাহাবীবর্গ ও সমগ্র উম্মত সাদরে গ্রহণ করে নিয়েছে, নাবী ﷺ এর এই কথার আলোকে যে, “তোমরা আমার সুন্নাহর ওপর প্রতিষ্ঠিত থাক এবং আমার পরে সুপথপ্রাপ্ত ন্যায়নিষ্ঠ খলিফাদের সুন্নাহর ওপর প্রতিষ্ঠিত থাক।” [আবূ দাঊদ, হা/৪৬০৭; সনদ: সাহীহ]
খ. এরপর তাঁর বক্তব্য হিশাম ইবনুল গাযের মুনকার বর্ণনার ওপর নির্ভরশীল।
গ. এছাড়া সাহাবীবর্গ, তাবি‘ঈবৃন্দ ও তাঁদের পরবর্তীরা ‘উসমানের সাথে যে একমত ছিলেন, সেটার মাধ্যমেই সান‘আনী, মুবারকপুরী ও তাঁদের মতাবলম্বীদের দাবির অসারতা প্রতীয়মান হয়।
❏ ভ্রান্ত বক্তব্য-১২:
‘আফারী ৪র্থ পৃষ্ঠায় বলেছে, “আল্লামাহ আহমাদ শাকির (রাহিমাহুল্লাহ) তিরমিযীর টীকায় (খ. ২; পৃ. ৩৯৩) বলেছেন, “আবূ দাঊদে এই হাদীসের বর্ণনায় একটি ‘ইলমী অবগতি আছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন জুমু‘আহর দিন মিম্বারের ওপর উপবেশন করতেন, তখন তাঁর সম্মুখে মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে আজান দেওয়া হতো। তখন জনসাধারণ, এমনকি অনেক ‘আলিম ধারণা করেন, এই আজান খতিবের সামনে মুখোমুখি হয়ে দিতে হবে। ফলে তারা মুয়াজ্জিনের দাঁড়ানোর জায়গাকে খতিবের সামনে নির্ধারণ করে। মিম্বারের নিকটে : অর্থাৎ, চেয়ার বা অন্যকিছুর ওপরে। ফলে এই আজান অবিমিশ্র তাক্বলীদে পরিণত হয়েছে, যার কোনোই ফায়দা নেই লোকদেরকে নামাজে আহ্বানের ক্ষেত্রে এবং নামাজের সময় হয়ে গেছে মর্মে সতর্ক করার ক্ষেত্রে। যেমনটি আজানের মূল ও প্রকৃত বিষয়। তারা এরকম করতে উদ্যমী হয়েছে। ফলে যারা অন্যরকম করে, তারা তাদের বিরোধিতা করে। প্রকৃতপ্রস্তাবে মসজিদের দরজার নিকটে মিনারের ওপর আজান দেওয়াই সুন্নাতের অনুসরণ, যাতে করে এর মাধ্যমে অনুপস্থিত ব্যক্তিদের জানানো যায়।
তারা (বাড়ি থেকে) ইমাম বের হওয়ার পূর্বেই আজানকে বহাল রাখতে আগ্রহী হয়েছে। অথচ এর প্রয়োজন অপসৃত হয়ে গেছে। কেননা মদিনায় মাসজিদে নাবাউয়ী ছাড়া আর কোনো জামে মসজিদ ছিল না। লোকেরা সবাই ওই মসজিদে জমায়েত হতো। মসজিদের দরজার নিকটে দেওয়া আজান শোনার মতো অবস্থা তাঁদের ছিল না জনসংখ্যার আধিক্যের কারণে। ফলে ‘উসমান প্রথম আজান বৃদ্ধি করেন। যাতে করে তিনি বাজার ও আশেপাশের লোকদেরকে নামাজের সময় উপস্থিত হয়েছে বলে জানাতে পারেন। কিন্তু এখন মসজিদের সংখ্যা বেড়েছে এবং সেসবে মিনারও নির্মিত হয়েছে। মিনারের ওপর মুয়াজ্জিনের আজান শুনে লোকেরা নামাজের সময় জানতে পারছে। তাই আমরা মনে করি, এই আজানই যথেষ্ট। আর এই (একটি) আজানই দেওয়া হবে ইমাম বের হওয়ার সময়, সুন্নাতের অনুসরণ করে।”
·
❏ পর্যালোচনা-১২:
ক. আহমাদ শাকির (রাহিমাহুল্লাহ)’র কথায় ‘উসমানের আজানের ব্যাপারে কোনো আপত্তি নেই। বরং জনসাধারণ ও কিছু ‘আলিম জুমু‘আহর আজানের ব্যাপারে যা বলে ও করে, কেবল সে ব্যাপারেই আপত্তি আছে।
খ. আহমাদ শাকিরের কথা থেকে উপলব্ধ হয়, তিনি ‘উসমানের আজান হক হওয়ার ব্যাপারটি সমর্থন করেন। কেননা প্রয়োজন সেটাই দাবি করছিল। তাঁর এই কথাটি প্রণিধান করুন, “ফলে ‘উসমান প্রথম আজান বৃদ্ধি করেন। যাতে করে তিনি বাজার ও আশেপাশের লোকদেরকে নামাজের সময় উপস্থিত হয়েছে বলে জানাতে পারেন। কিন্তু এখন মসজিদের সংখ্যা বেড়েছে এবং সেসবে মিনারও নির্মিত হয়েছে। মিনারের ওপর মুয়াজ্জিনের আজান শুনে লোকেরা নামাজের সময় জানতে পারছে। তাই আমরা মনে করি, এই আজানই যথেষ্ট। আর এই (একটি) আজানই দেওয়া হবে ইমাম বের হওয়ার সময়, সুন্নাতের অনুসরণ করে।”
তাঁর কথার ফলাফল হলো, ‘উসমানের আজানের ব্যাপারে তিনি আপত্তি পেশ করেননি। কেননা প্রয়োজনই এই আজানের বিদ্যমানতা দাবি করছিল। যদি প্রয়োজন না থাকে, তাহলে তিনি সেই আজানকেই যথেষ্ট মনে করেছেন, যে আজান রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে ছিল।
·
❏ ভ্রান্ত বক্তব্য-১৩:
‘আফারী ৪র্থ ও ৫ম পৃষ্ঠায় বলেছে, “আল্লামাহ আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, কুরতুবী স্বীয় তাফসীরে (১৮/১০০) মাওয়ারদী থেকে বর্ণনা করেছেন, প্রথম আজান হলো নবউদ্ভাবিত। ‘উসমান এটা করেছেন, যাতে লোকেরা খুতবায় উপস্থিত হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়। আর এটা তখনকার কথা, যখন মদিনা অনেক বিস্তৃত হয়েছে এবং মদিনাবাসীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিষয়টি যখন এমন হবে, তখন ‘উসমানের আজান গ্রহণ করা বিতর্কের ঊর্ধ্বে চলে যাবে। আর এটা বৈধ হবে না, বিশেষ করে এ জাতীয় ক্ষেত্রে, যাতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর শরিয়তের ওপর কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়া বৃদ্ধি সাধন করা হয়। একারণেই ‘আলী বিন আবূ ত্বালিব (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কুফায় কেবল সুন্নাতের ওপরই সীমাবদ্ধ ছিলেন।
তিনি ‘উসমানের বৃদ্ধিকৃত অংশ গ্রহণ করেননি। যেমনটি কুরতুবীতে রয়েছে। ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেছেন, নাবী ﷺ যখন মিম্বারে আরোহণ করতেন, তখন বিলাল আজান দিতেন। নাবী ﷺ খুতবা শেষ করলে বিলাল ইক্বামত দিতেন। প্রথম আজান হলো বিদ‘আত। আবূ ত্বাহির আল-মুখলিস তাঁর ‘ফাওয়াইদ’ গ্রন্থে (২২৯/১-২) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। সারকথা হলো, আমরা মনে করি, মুহাম্মাদী আজানই যথেষ্ট। আর ইমাম বের হওয়ার সময় এবং মিম্বারে আরোহণ করার সময় এই আজান দিতে হবে। যেহেতু ‘উসমানের বৃদ্ধিকরণের যৌক্তিক কারণ বিলীন হয়ে গেছে, আর এতেই নাবী ﷺ এর সুন্নাতের অনুসরণ হয়। আর তিনি ﷺ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত থেকে বিমুখ হয়, সে আমার দলভুক্ত নয়’।” (আল-আজউয়িবাতুন নাফি‘আহ, পৃষ্ঠা: ১১-১২; মাশহূর হাসান ও তাঁর সঙ্গী প্রণীত ক্বামূসুল বিদা‘, পৃষ্ঠা: ৪৭৫-৪৭৬)”
·
❏ পর্যালোচনা-১৩:
এভাবে আল-আলবানী থেকে বর্ণনা করার মধ্যে অস্পষ্টতা ও ধোঁকা রয়েছে। আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) কে ‘উসমানী আজান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি সেই প্রশ্নের বিস্তারিত ‘ইলমী জবাব দেন। জবাব দীর্ঘ হওয়ার কারণে আমরা সেখান থেকে কিছু অংশ বা অনুচ্ছেদ নির্বাচন করে তুলে ধরছি।
প্রথম অনুচ্ছেদ: তিনি বলেছেন, ‘উসমানী আজান যখন শুরু হয়। এরপর তিনি তা বর্ণনা করে বলেছেন, “সুতরাং তাঁর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) অনুসরণ তখনই ঠিক হবে, যখন সেই কারণ বাস্তবায়িত হবে, যেকারণে ‘উসমান প্রথম আজান বৃদ্ধি করেছিলেন। আর সে কারণটি হলো লোকসংখ্যার আধিক্য এবং মসজিদে থেকে তাঁদের বাড়ির দূরত্ব, যেমনটি পূর্বে উল্লিখিত হয়েছে।” [আল-আজউয়িবাতুন নাফি‘আহ, পৃষ্ঠা: ১০]
তিনি (ইমাম আলবানী) ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র অনুসরণ বৈধ মনে করেন, যখন কারণ বাস্তবায়িত হবে।
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ: তিনি আল-মাওয়ারদীর বক্তব্য বর্ণনা করেছেন, যেমনটি লেখকের প্রবন্ধে এসেছে।
তৃতীয় অনুচ্ছেদ: তিনি পূর্বোক্ত বক্তব্যের পর বলেছেন, “সারকথা হলো, আমরা মনে করি, মুহাম্মাদী আজানই যথেষ্ট। আর ইমাম বের হওয়ার সময় এবং মিম্বারে আরোহণ করার সময় এই আজান দিতে হবে। যেহেতু ‘উসমানের বৃদ্ধিকরণের যৌক্তিক কারণ বিলীন হয়ে গেছে, আর এতেই নাবী ﷺ এর সুন্নাতের অনুসরণ হয়। আর তিনি ﷺ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত থেকে বিমুখ হয়, সে আমার দলভুক্ত নয়’।” [আল-আজউয়িবাতুন নাফি‘আহ, পৃষ্ঠা: ১১-১২]
এখানে তাঁর কথার মর্মার্থ হলো, ‘উসমানের বৃদ্ধিকরণের যৌক্তিক কারণ বিলীন হয়ে গেলে নাবী ﷺ এর সুন্নাত গ্রহণ করতে হবে, আর কারণ বিদ্যমান হলে ‘উসমানী আজান গ্রহণ করায় কোনো বাধা নেই।
চতুর্থ অনুচ্ছেদ: আল-আলবানী বলেছেন, “আমরা এই ‘উসমানী আজানে কোনো প্রতিবন্ধকতা আছে বলে মনে করি না, যদি তা ব্যারাকের বহির্দ্বারে দেওয়া হয়। কেননা এ আজান সড়কের লোকেরাও শুনতে পাবে এবং তারা জানতে পারবে যে, ব্যারাকে একটি মসজিদ আছে, যেখানে সালাত প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে তারা সেখানে গমন করবে এবং তাতে নামাজ পড়বে। তদনুরূপ রাস্তার নিকটবর্তী বাড়ির লোকেরাও তা শুনতে পাবে।” [আল-আজউয়িবাতুন নাফি‘আহ, পৃষ্ঠা: ১৩]
এরপর তিনি নাবী ﷺ এর যুগের আজান প্রসঙ্গে সা’ইব বিন ইয়াযীদ থেকে যুহরীর হাদীস উল্লেখ করেছেন, ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কর্তৃক বৃদ্ধিকরণের উল্লেখ-সহ। তিনি সাহীহ বুখারী থেকে এই হাদীস বাড়তি অংশ-সহ উল্লেখ করেছেন। বাড়তি অংশগুলোকে তিনি সুন্নাহর অন্যান্য উৎস গ্রন্থের দিকে সম্পৃক্ত করেছেন।
সেই অতিরিক্ত বা বাড়তি অংশগুলোর একটি হলো রাবির এই কথা যে, “লোকেরা তাঁকে (‘উসমানকে) তাঁর উক্ত কাজের জন্য দোষারোপ করেনি। কিন্তু যখন তিনি মিনায় (কসর না করে) সম্পূর্ণ সালাত পড়লেন, তখন লোকেরা তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করল।”
অর্থাৎ, কোনো সাহাবী এবং ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র যুগের কোনো তাবি‘ঈ তাঁর বিরোধিতা করেননি।
সারকথা হলো, আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) উপযুক্ত কারণ বিদ্যমান থাকলে ‘উসমানী আজান প্রয়োগ করায় কোনো প্রতিবন্ধকতা আছে বলে মনে করেন না। বিষয়টি সেরকম নয়, যেমনটি (নিবন্ধের) লেখক ভুল ধারণা করেছে যে, আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) নিঃশর্তভাবে ‘উসমানের আজানের বিরোধী।
এই লেখকের নিন্দা করা যায় এ দিক থেকে যে, সে এই অনুচ্ছেদগুলো গোপন করেছে, যেখানে আল-আলবানী ‘উসমানী আজানের ব্যাপারে তাঁর পরিপক্ব ‘ইলমী অবস্থান স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছেন। এমনকি লেখক নিজেই আলবানী থেকে যা বর্ণনা করেছে, তার মর্মার্থ এটা নয় যে, উপযুক্ত কারণ বিদ্যমান থাকলেও এই আজান প্রয়োগ করা যাবে না। আর আলবানী কুরতুবীর রেফারেন্সে মাওয়ারদী থেকে যা বর্ণনা করেছেন এ মর্মে যে, ‘আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কুফায় স্রেফ সুন্নাহর ওপর নিজেকে সীমাবদ্ধ করেছিলেন, তিনি ‘উসমানের বৃদ্ধিকৃত আজান গ্রহণ করেননি, সে ব্যাপারে আমরা বলি, এই দাবির ব্যাপারে দলিল পেশ করো। নিশ্চয় তা বড়োই কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
এছাড়া ‘আফারীকে নিম্নোক্ত দলিল দিয়ে খণ্ডন করা যায়। ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “মুহাম্মাদ বিন মুক্বাতিল আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমাদেরকে ‘আব্দুল্লাহ অবহিত করেছেন, তিনি বলেন, আমাদেরকে ইউনুস অবহিত করেছেন, যুহরী থেকে। তিনি বলেছেন, আমি সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কে বলতে শুনেছি, আল্লাহর রাসূল ﷺ, আবূ বাকর ও ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)’র যুগে জুমু‘আহর দিন ইমাম যখন মিম্বারের ওপর বসতেন, তখন প্রথম আজান দেয়া হত। অতঃপর যখন ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)’র খেলাফতের সময় এল এবং লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পেল, তখন তিনি জুমু‘আহর দিন তৃতীয় আজানের (ইকামতকে এক আজান ধরে) নির্দেশ দেন। ‘যাওরা’ নামক স্থান হতে এ আজান দেওয়া হয়, পরে এ আজানের ব্যাপারটি স্থায়ী রূপ পরিগ্রহণ করে (অর্থাৎ, এ আজানের ধারাবাহিকতা চলতে থাকে)।” (*) [সাহীহ বুখারী, হা/৯১৬]
[(*) এখানে শাইখ রাবী‘ টীকায় লিখেছেন, এই কথার কথক হলেন সাহাবী সা’ইব বিন ইয়াযীদ, যিনি ৯১ হিজরিতে কিংবা তার কিছুপূর্বে মারা যান। তিনি তাঁর সুদীর্ঘ জীবনের সমাপ্তি পর্যন্ত কারও নিকট থেকে এ আজানের ব্যাপারে ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র বিরোধিতা করতে শোনেননি।]
হাফিয ইবনু রজব তদীয় ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে (৮/২৩১) এই হাদীসের ওপর টীকা লিখেছেন। তিনি তাঁর টীকায় বলেছেন, “বুখারী এখানে যে রিওয়াইয়াত বর্ণনা করেছেন, সেখানে তাঁর (সাহাবীর) এ কথা রয়েছে যে, ‘পরে এ আজানের ব্যাপারটি স্থায়ী রূপ পরিগ্রহণ করে (فثبت الأمر على ذلك)।’ এই কথা প্রমাণ করে, ‘উসমান যখন উক্ত আজান প্রণয়ন করেন, তখন থেকে তা চলমান রয়েছে, তাঁর পরে তা পরিত্যাগ করা হয়নি। এটা প্রমাণ করছে যে, ‘আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এই আজানকে সমর্থন করেছেন, তিনি এটাকে বাতিল করেননি। সুতরাং উক্ত কর্মের ওপর খোলাফায়ে রাশেদিনের (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুম আজমা‘ঈন) দুইজন খলিফা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন।”
এই কথাটি প্রণিধান করো, হে ‘আফারী, এবং এ থেকে ফায়দা গ্রহণ করো।
ইবনু রজব (রাহিমাহুল্লাহ) “জামি‘উল ‘উলূমি ওয়াল হিকাম” গ্রন্থে (২/১২৮-১২৯) বলেছেন, “রাসূল ﷺ বলেছেন, সকল বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা। এই কথা ব্যাপকার্থবোধক কথার অন্তর্ভুক্ত, যা থেকে কোনো কিছুই বাদ পড়ে না। এটা দ্বীনের একটি মহান মূলনীতি। এটা নাবী ﷺ এর এই কথার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ যে, “যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু উদ্ভাবন করে, যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।” সুতরাং যেই নতুন কিছু উদ্ভাবন করে, সেটাকে দ্বীনের দিকে সম্পৃক্ত করে, অথচ দ্বীনের মধ্যে তার কোনো মৌলিক ভিত্তি নেই, সেটাই ভ্রষ্টতা। দ্বীন তার উক্ত কর্ম থেকে মুক্ত। চাই তা ‘আক্বীদাহগত মাসায়েলে হোক, কিংবা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য কথা ও কাজে হোক।
পক্ষান্তরে সালাফদের কথায় কিছু বিদ‘আতকে উত্তম গণ্য করার ব্যাপারে যা বর্ণিত হয়েছে, তা শাব্দিক বিদ‘আতের ব্যাপারে বলা হয়েছে, শার‘ঈ বিদ‘আতের ব্যাপারে নয়। এরই অন্তর্ভুক্ত হলো ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র কথাটি। তিনি যখন লোকদেরকে রমজান মাসে ক্বিয়াম (তারাবির নামাজ) করার জন্য লোকদেরকে একজন ইমামের পিছনে মসজিদে জমায়েত করলেন, এরপর (বাড়ি থেকে) বের হয়ে এভাবে নামাজ পড়তে দেখে বললেন, এটা কতইনা উত্তম বিদ‘আত!
তাঁর থাকে (এরকমও) বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন, এটা যদি বিদ‘আত হয়, তবে তা উত্তম বিদ‘আত। উবাই বিন কা‘ব (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি তাঁকে বলেন, ‘এটা আগে ছিল না।’ তখন ‘উমার বলেন, ‘আমি তো জানি, কিন্তু এটা ভালো।’ তাঁর কথার উদ্দেশ্য ছিল—এই কাজ উক্ত পদ্ধতিতে আগে ছিল না। কিন্তু শরিয়তে উক্ত কাজের এমন মৌলিক ভিত্তি আছে, যেদিকে ফিরে যাওয়া যায়।
সেসব মৌলিক ভিত্তির আওতাভুক্ত হলো, নাবী ﷺ রমজানের ক্বিয়াম করতে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করতেন। লোকেরা তাঁর যুগে বিভিন্ন আলদা জামা‘আতে ও একাকী মসজিদে ক্বিয়াম করেছে। নাবী ﷺ রমজানে তাঁর সাহাবীদের নিয়ে একাধিক রাতে ক্বিয়াম করেছেন। পরে তিনি তা একারণে ছেড়ে দিয়েছিলেন যে, তিনি লোকদের ওপর তা (তারাবি/ক্বিয়াম) ফরজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছিলেন। ফলে তাঁরা উক্ত ক্বিয়াম ছেড়ে দেন। কিন্তু নাবী ﷺ এর মৃত্যুর পর এথেকে নিরাপদ হওয়া গেছে (ফরজ হওয়ার আশঙ্কা এখন আর নেই)। নাবী ﷺ থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে স্বীয় সাহাবীদের নিয়ে ক্বিয়াম করেছেন।
এমন আরও একটি মৌলিক ভিত্তি হলো, নাবী ﷺ খোলাফায়ে রাশেদিনের সুন্নাত অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন। আর এটা তাঁর খোলাফায়ে রাশেদিনের সুন্নাতেই পরিণত হয়েছে। কেননা লোকেরা ‘উমার, ‘উসমান ও ‘আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুম) এর যুগে এর ওপরেই একত্রিত ছিল।
এ ধরনের (শাব্দিক) বিদ‘আতের একটি হলো জুমু‘আহর প্রথম আজান। ‘উসমান এই আজান বৃদ্ধি করেছিলেন লোকদের প্রয়োজনের কারণে। ‘আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এটাকে সমর্থন করেছিলেন। এর ওপরই মুসলিমদের আমল চলমান হয়েছে। ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন, এটা বিদ‘আত। সম্ভবত তিনি একথার দ্বারা সেটাই উদ্দেশ্য নিয়েছেন, যে উদ্দেশ্য নিয়েছিলেন তাঁর পিতা রমজানের ক্বিয়ামের ক্ষেত্রে।
এরকম আরেকটি বিষয় হলো মুসহাফকে একটি কিতাবে জমা করা। যাইদ বিন সাবিত এ ব্যাপারে তাওয়াক্বকুফ অবলম্বন করেন (ক্ষান্ত হন) এবং আবূ বকর ও ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) কে বলেন, ‘আপনারা কীভাবে এ কাজ করবেন, যে কাজ নাবী ﷺ করেননি?!’ পরক্ষণেই তিনি উপলব্ধি করেন, এর মধ্যে কল্যাণ আছে। ফলে তিনি তা জমা করতে সম্মত হন। নাবী ﷺ তাঁকে ওহি লেখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আলাদাভাবে লেখা কিংবা একত্র করে লেখার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। বরং সেটা জমা করাই বেশি কল্যাণময়।
তদনুরূপ ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) উম্মতকে একটি মুসহাফের ওপর জমায়েত করেন এবং বাকিগুলো ধ্বংস করে দেন, এই আশঙ্কা করে যে, উম্মত হয়তো এর ফলে বিভক্ত হয়ে যাবে। ‘আলী ও অধিকাংশ সাহাবী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুম) এটাকে ভালো মনে করেছেন। বস্তুত এটা ছিল খুবই কল্যাণকর। একইভাবে জাকাত (আদায় করতে) অস্বীকারকারীদের সাথে যুদ্ধের ব্যাপারটিতে ‘উমার ও অন্যান্যরা তাওয়াক্বকুফ অবলম্বন করেছিলেন। এক পর্যায়ে আবূ বকর শরিয়তে এই কাজের যে মৌলিক ভিত্তি রয়েছে, তা বর্ণনা করেন। ফলে লোকেরা তাঁর সাথে এ ব্যাপারে একমত পোষণ করে।” এখানে ইবনু রজবের বক্তব্য সমাপ্ত হয়েছে।
এই ইমামের ফিক্বহ ও ইনসাফের দিকে লক্ষ করো।
ক. তাঁর নিকটে প্রকৃত বিদ‘আত—যা মূলত ভ্রষ্টতার বিদ‘আত—সেগুলো, দ্বীনের মধ্যে যেগুলোর কোনো মৌলিক ভিত্তি নেই। দ্বীন এ ধরনের বিদ‘আত থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।
খ. জামা‘আতবদ্ধভাবে তারাবির নামাজ পড়ার ব্যাপারে ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র নির্দেশের প্রতি তাঁর সম্মান। তিনি এই নির্দেশের ব্যাপারে বলেছেন, “শরিয়তে এই নির্দেশের এমন কিছু ভিত্তি আছে, যেসবের দিকে ফিরে যাওয়া হয়।”
গ. তিনি বলেছেন, “এ ধরনের (শাব্দিক) বিদ‘আতের অন্তর্ভুক্ত হলো জুমু‘আহর প্রথম আজান। ‘উসমান এই আজান বৃদ্ধি করেছিলেন লোকদের প্রয়োজনের কারণে। ‘আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এটাকে সমর্থন করেছিলেন। এর ওপরই মুসলিমদের আমল চলমান হয়েছে।” তিনি বলেছেন, “এর অন্তর্ভুক্ত হলো”; অর্থাৎ, সুপথপ্রাপ্ত খলিফা ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) যা করেছেন, দ্বীনের মধ্যে তার কিছু মৌলিক ভিত্তি আছে, যেসবের দিকে ফিরে যাওয়া হয়। এরপর তিনি একথা বলেছেন যে, “এর অন্তর্ভুক্ত হলো—অর্থাৎ, দ্বীনের মধ্যে যেসব কাজের মৌলিক ভিত্তি আছে তার অন্তর্ভুক্ত হলো—মুসহাফকে একটি কিতাবে জমা করা”, সুপথপ্রাপ্ত খলিফা আবূ বকরের নির্দেশে। “তদনুরূপ ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) উম্মতকে একটি মুসহাফের ওপর জমায়েত করেন এবং বাকিগুলো ধ্বংস করে দেন, এই আশঙ্কা করে যে, উম্মত হয়তো এর ফলে বিভক্ত হয়ে যাবে। ‘আলী ও অধিকাংশ সাহাবী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুম) এটাকে ভালো মনে করেছেন। বস্তুত এটা ছিল খুবই কল্যাণকর।”
সুতরাং যে ব্যক্তি ‘উসমানী আজানের নিন্দা করে এবং সেটাকে বিদ‘আত মনে করে, সে এখন কী বলবে? সে কি আবূ বকর, ‘উমার ও ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুম) এর মতো সুপথপ্রাপ্ত খলিফাদের কর্মের ব্যাপারে এই হুকুম দিবে যে, সেগুলো প্রকৃত বিদ‘আতের অন্তর্ভুক্ত?
[আগামী পর্বে সমাপ্য, ইনশাআল্লাহ]
·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
www.facebook.com/
0 Comments