▌‘উসমানী আজান : কতিপয় বহুল প্রচলিত সংশয়ের অপনোদন [১ম পর্ব]
·নিবন্ধক: মুহাদ্দিসুল মাদীনাহ ইমাম রাবী‘ বিন হাদী আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ)
·❏ অনুবাদকের কথা:
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা সমগ্র বিশ্বজগতের প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি অবতীর্ণ হোক আল্লাহর বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবীগণের ওপর। অতঃপর:
‘উসমানী আজান নিয়ে ইতঃপূূর্বে লেখার ইচ্ছা হয়েছিল। কিন্তু নানা ব্যস্ততায় তা আর হয়ে ওঠেনি। তাই চলমান পরিস্থিতিতে এ বিষয়ক লিখন-খেদমতে নিজেকেও সামান্য খাদেম হিসেবে পেশ করতে পেরে ভালো লাগছে। সেই সাথে এমন কাজের তৌফিকপ্রাপ্তির জন্য আল্লাহর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আলহামদুলিল্লাহ, সুম্মা আলহামদুলিল্লাহ।
বলা বাহুল্য, নিজের গণ্ডির বাইরে গিয়ে পণ্ডিতি ফলানো কোনো কাজের কাজ নয়, সম্মানার্হ বিষয়ও নয়। একথা আমরা বিভিন্ন ইস্যুতে প্রায়শই বলি। কিন্তু আমরা অনেক সালাফী ভাই ও দা‘ঈকে দেখি, তাঁরা ঠিক এ কাজটিই করে বসেন। অনেক ভাই হয়তো ভাবছেন, এই লোক ‘আলিমদের দুর্নাম করছে। আমি তাঁদেরকে বলব, ভাই, দয়া করে আগে ‘আলিমের সংজ্ঞা জেনে আসুন, ত্বালিবুল ‘ইলম আর ‘আম্মী কাকে বলে সেটাও জেনে আসুন।
এটা দ্বীন। সবাই দ্বীনী ‘ইলমের ব্যাপারে কথা বলতে পারে না। আর কথা বলার অনুমতি থাকলেও সবার বলার পরিধি সমান নয়। উম্মতের দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে নব্য ইস্যু নিয়ে স্বয়ং ‘উলামারাও কথা বলেন না, বরং সে বিষয়কে তাঁরা কিবার ‘উলামাদের কাছে সোপর্দ করেন। সুতরাং সুস্থ মস্তিষ্কে চিন্তা করুন, আমাদের আশেপাশে আসলে কী চলছে। ওয়াল্লাহুল মুস্তা‘আন।
এসব কথা আগেও বলা হয়েছে। কিন্তু আবারও স্মরণ করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন মনে করে বিষয়গুলোর দিকে ইঙ্গিত করলাম মাত্র। এরপর আসি ‘উসমানী আজান প্রসঙ্গে। এই আজানকে বিদ‘আত আখ্যা দিয়ে একটি প্রবন্ধ লিখেছিল জনৈক আরব দা‘ঈ। শুধু বিদ‘আত বলেই ক্ষান্ত হয়নি, সালাফী দা‘ঈদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেছে এবং ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় কিবার ‘উলামাদের প্রতি মিথ্যারোপ করেছে। সাহাবীদের শানে ও ‘উলামাদের শানে কথা বলার আদব রক্ষা করেনি।
বিধায় তাকে ‘ইলম ও আদবের অভিনব দারস দিয়ে চমৎকার একটি ‘ইলমী ব্যবচ্ছেদ লিখেছেন মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদীস বিভাগের সাবেক প্রধান, বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, আল-‘আল্লামাহ, আল-ফাক্বীহ, ইমাম রাবী‘ বিন হাদী বিন ‘উমাইর আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫১ হি./১৯৩২ খ্রি.]। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিবন্ধটি গুরুত্বপূর্ণ ও তথ্যসমৃদ্ধ মনে হওয়ায় আমরা তা অনুবাদ বাঙালি মুসলিম পাঠকবর্গের করকমলে পেশ করার প্রয়াস পেয়েছি। ওয়া লিল্লাহিল হামদু ওয়াল মিন্নাহ।
সুপ্রিয় পাঠক, আমাদের দেশীয় পরিমণ্ডলেও একটি প্রবণতা অনেক আগে থেকেই লক্ষ করে আসছি যে, কিবার ‘উলামাদের শানে খুব সহজেই আদবের বেড়া ডিঙিয়ে কথা বলা হয়। আমজনতার কথা আর কী বলব, এমন মানুষও আছে, যারা দেশের মাঠ গরম বক্তাকে যে দৃষ্টিতে, সে দৃষ্টিতেই ইমাম ইবনু বায, ইমাম ‘উসাইমীন, ইমাম আলবানী প্রমুখকে দেখে। গতবছর ফিতনার সময় কিবার ‘উলামাদের দিকে ফিরে যাওয়ার আবশ্যকতা প্রসঙ্গে শাইখ সুলাইমান আর-রুহাইলীর একটি ভিডিয়ো অনুবাদ করেছিলাম, অনেকেই হয়তো তা দেখে থাকবেন।
শাইখ সেখানে বলেছিলেন, “আমরা দেখেছি, কিছু লোক বলে, “উত্তপ্ত ময়দানে গমন করা—যেটাকে বর্তমানে তারা জিহাদ বলছে, যদিও সকলের জন্য তা প্রকৃতার্থে জিহাদ নয়—এমন একটি মাসআলাহ, যে ব্যাপারে ‘উলামাগণ মতানৈক্য করেছেন, এবং আমি ‘উলামাদের একটি মত অনুসরণ করছি।” ভালো কথা; তা সেই ‘উলামা কারা, যাঁরা মতানৈক্য করেছেন? সে বলে, “আল্লাহ’র কসম, আমি শাইখ সালিহ আল-ফাওযানকে বলতে শুনেছি, ‘এগুলো ফিতনা, এসব কাজে গমন করা না-জায়েজ।’ এটি একটি মত। আর আমি অমুক মসজিদের ইমামকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছি। তিনি বলেছেন, ‘এটি মুসলিমদের জন্য সাহায্য, তাই এ থেকে পিছিয়ে থাকা এবং উম্মতকে লাঞ্ছিত করা জায়েজ নয়।’ এটিও একটি মত। আমি মসজিদের ইমামের মতকে প্রাধান্য (তারজীহ) দিয়েছি।” এটা হলো মহা মূর্খতা!” [দ্র.: https://tinyurl(ডট)com/sd52tkt.]
বঙ্গদেশেও এমনটি হয়। কিছু লোক বলে বসবে, এটি একটি মতানৈক্যপূর্ণ বিষয়। আমি সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটির ফতোয়ায় দেখেছি, এ কাজ জায়েজ। আর আমাদের দেশের অমুক সংগঠনের আমীর সাহেব কিংবা অমুক প্রখ্যাত বক্তা সাহেবকে দেখেছি, তিনি বলেছেন এ কাজ না-জায়েজ। আমার কাছে আমীর সাহেবের কিংবা বক্তা সাহেবের মতটিই সঠিক মনে হয়। এই লোকগুলো ‘উলামাই চিনে না, শার‘ঈ দলিল থেকে মাসআলাহ উদ্ঘাটনকারীর যে কী শর্ত থাকা উচিত তাও জানে না। যার দরুন ‘উলামাদের শানে কথা বলার সময় তারা আদবের সীমা উল্লঙ্ঘন করে। বক্ষ্যমাণ নিবন্ধে এ ধরনের লোকদের জন্যও শিক্ষা রয়েছে। ‘উলামাদের শানে যে কথা বলতে চায়, তার জন্যও উত্তম পাঠ রয়েছে। এছাড়াও যারা নিজের গণ্ডির বাইরে গিয়ে বড়ো বড়ো ইস্যুতে কথা বলে, তাদেরকে ‘উলামাগণ কোন দৃষ্টিতে দেখেন, তারও যথার্থ উল্লেখ রয়েছে।
প্রিয় পাঠক, অত্র নিবন্ধের বাংলা নামের ব্যাপারে কিছু কথা বলি। ‘উসমানী আজানকে কেন্দ্র কিছু বহুল প্রচলিত সংশয় আছে। যেমন: ‘উলামাদের থেকে এ আজান সুন্নাত হওয়ার ব্যাপারে ইজমা‘ সংঘটনের প্রমাণ নেই, ইমাম আহমাদ শাকির, ইমাম আলবানী, ইমাম মুক্ববিল-সহ ভারতীয় উপমহাদেশের অনেক বিদ্বান এই আজানকে বিদ‘আত বলেছেন, সাহাবী ইবনু ‘উমার এ আজানকে বিদ‘আত বলেছেন, ইবনু ‘উমারের হাদীসটির বর্ণনাকারী হিশাম ইবনুল গায একজন সিক্বাহ (বিশ্বস্ত) রাবি, ‘আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এ আজান উঠিয়ে দিয়েছিলেন প্রভৃতি।
এ সংশয়গুলো বেশ প্রচলিত, বিধায় আমরা নিবন্ধের নাম দিয়েছি—“উসমানী আজান : কতিপয় বহুল প্রচলিত সংশয়ের অপনোদন”। যদিও এই নিবন্ধে কিছু অপ্রচলিত সংশয়ের জবাবও দেওয়া হয়েছে, তথাপি অধিকাংশের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের নীতি অনুসরণ করে নামকরণ করা হয়েছে। আর নিবন্ধটি সাজানোগোছানো ও সুখপাঠ্য করার জন্য আরব দা‘ঈর বক্তব্যকে আমরা ‘ভ্রান্ত বক্তব্য-১’ শিরোনামে, আর শাইখ রাবী‘র আলোচনাকে ‘পর্যালোচনা-১’ শিরোনামে ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করেছি। ওয়া বিল্লাহিত তাওফীক্ব।
পরিশেষে বলি, মহান আল্লাহ মুসলিম পাঠকবর্গকে আগ্রহ ও উদ্যমতার সাথে সম্পূর্ণ নিবন্ধ পড়ার তৌফিক দান করুন এবং সত্য উপলব্ধি করে তা সাদরে গ্রহণ করার জন্য তাদের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করুন। একইভাবে লেখার মধ্যে সংঘটিত আমাদের স্খলনকে মার্জনা করুন এবং সঠিকতায় পৌঁছার জন্য উত্তম পারিতোষিক দান করুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।
·❏ মূল নিবন্ধের সরল বঙ্গানুবাদ:
পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। সমুদয় প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য। দয়া ও শান্তি অবতীর্ণ হোক আল্লাহর রাসূল, তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবীগণের ওপর এবং তাঁর আদর্শের মহান অনুসারীবৃন্দের ওপর। অতঃপর:
কথিত ‘আলী বিন রশীদ আল-‘আফারী প্রণীত একটি নিবন্ধ পড়লাম। যার শিরোনাম হলো—আল-ইমতিনা‘ বি আন্না আযানা ‘উসমানা লাইসা ফী সুন্নিয়্যাতিহি ইজমা‘ : রাদ্দান ‘আলাল বারমাকী ‘আরাফাত (উসমানের আজান সুন্নাত হওয়ার ব্যাপারে ইজমা‘ থাকার অসম্ভাব্যতা : বারমাকী আরাফাতের খণ্ডন)। এই নিবন্ধে ষোলোজনেরও অধিক ‘আলিমকে খণ্ডন করা হয়েছে, যাঁরা সুপথপ্রাপ্ত খলিফা ‘উসমানের আজান সুন্নাত হওয়ার ব্যাপারে ইজমা‘ বর্ণনা করেছেন এবং এটাকে বিদ‘আত বলার (ভুল) দাবিকে প্রতিহত করেছেন। তাঁরা বলেছেন, এটা এমন একটি বিষয়, যে ব্যাপারে সাহাবীবর্গ এবং উত্তমরূপে তাঁদের অনুসরণকারী তাবি‘ঈগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন। সেসব ‘আলিমদের অন্যতম হলেন—‘আল্লামাহ ইবনু বায, ‘আল্লামাহ আবা বুত্বাইন, আল-লাজনাতুদ দা’ইমাহ লিল ইফতা (সৌদি ফতোয়া বোর্ড)।
এই ‘আফারী কিছুসংখ্যক সম্মাননীয় ‘আলিমের নাম উল্লেখ করেছে। সে দাবি করছে, ইনারা সেসব গুণীজনের অন্তর্ভুক্ত, যাঁরা এই আজানের বিরোধিতা করেছেন এবং এটাকে বিদ‘আত মনে করেছেন। আর তাঁদের শীর্ষে রয়েছেন ‘আব্দুল্লাহ বিন ‘উমার, ‘আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুম) এর মতো দুজন মহান সাহাবী এবং ইবনু ‘উমারের মুক্তদাস নাফি‘ ও ‘আত্বা বিন আবী রাবাহের মতো মহান দুই তাবি‘ঈ। যদিও এই লেখক তাঁদের দিকে যে বিষয়টি সম্পৃক্ত করেছে, তা তাঁদের নিকট থেকে প্রমাণিত নয়।
এরপর সে কতিপয় সম্মাননীয় ‘আলিমের নাম উল্লেখ করেছে। যাঁরা হলেন শাফি‘ঈ, ইবনু হাবীব, ইবনুল আমীর আস-সান‘আনী, আল-মাওয়ারদী, শাইখ মুক্ববিল আল-ওয়াদি‘ঈ প্রমুখ। সে যেসব ‘উলামার নাম উল্লেখ করেছে, তাঁদের কারও বক্তব্যে ‘উসমানী আজানকে বিদ‘আত সাব্যস্ত করা হয়নি। যেমনটি পাঠক তাঁদের বক্তব্যে এবং সেসব বক্তব্যের ব্যাপারে আমার কৃত মন্তব্যে শীঘ্রই দেখতে পাবেন। কেবল তিনজনের কথা ভিন্ন। তাঁরা হলেন ইবনুল আমীর আস-সান‘আনী, মুবারকপুরী, আর শাইখ মুক্ববিল (রাহিমাহুমুল্লাহ)।
তাঁরা আহলুস সুন্নাহ ও আহলুল হাদীসদের অন্তর্ভুক্ত এবং তাঁরা ওই সমস্ত ব্যক্তিবর্গের অন্তর্ভুক্ত, যাঁদেরকে আমরা আল্লাহর ওয়াস্তে ভালোবাসি। কিন্তু তা (তথা তাঁদের আহলুল হাদীস হওয়া ও তাঁদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা) আমাদেরকে তাঁদের বক্তব্যের সমালোচনা করতে এবং বক্তব্যের ভুল প্রকাশ করে দিতে বাধা দেয় না। কেননা সত্য আমাদের কাছে তাঁদের চেয়েও বেশি প্রিয়। তদনুরূপ মাননীয় সাহাবীবর্গও—যাদের একজন হলেন ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)—আমাদের কাছে তাঁদের চেয়ে বেশি প্রিয়।
‘আফারীর বক্তব্যের পর্যালোচনা করার আগে এবং সে যেসব ‘উলামাকে দিয়ে দলিল গ্রহণ করেছে, তাঁদের বক্তব্যের ব্যাপারে মন্তব্য পেশ করার পূর্বে, আমি মাননীয় সাহাবীদের সাথে (মানুষের) আচরণবিধি প্রসঙ্গে আহলুস সুন্নাহর মানহাজ কী, তা সম্মাননীয় পাঠকবর্গকে অবগত করতে চাইছি। আহলুস সুন্নাহ সাহাবীদের মর্যাদা ও ভালো গুণ ছাড়া অন্যকিছু উল্লেখ করে না। আর তাঁদের যেসব দোষ উল্লেখ করা হয়, সেসব দোষ যারা বর্ণনা করে, আহলুস সুন্নাহ তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করে থাকে।
সাহাবীদের মাহাত্ম্যের ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহর ‘উলামারা বিভিন্ন গ্রন্থ প্রণয়ন করতে সচেষ্ট হয়েছেন। যেমন ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) বিরচিত ফাদ্বাইলুস সাহাবাহ, আবূ নু‘আইম আল-আসবাহানী প্রণীত ফাদ্বাইলুল খুলাফাইল আরবা‘আহ, আবূ বাকার বিন আবূ ‘আসিম বিরচিত ফাদ্বাইলুস সাহাবাহ, খাইসামাহ বিন সুলাইমান প্রণীত ফাদ্বাইলুস সাহাবাহ, ইবনু সাসারী বিরচিত ফাদ্বাইলুস সাহাবাহ, ইবনু ফাত্বীস প্রণীত ফাদ্বাইলুস সাহাবাহ, আবুল মুত্বরাফ বিন ফাত্বীস আল-আন্দালুসী বিরচিত ফাদ্বাইলুস সাহাবাহ প্রভৃতি। আবার আহলুস সুন্নাহর ‘উলামাদের কেউ কেউ তাঁদের গ্রন্থে সাহাবীদের মর্যাদা ও মাহাত্ম্যের ব্যাপারে স্বতন্ত্র অধ্যায় রচনা করেছেন। যেমন ইমাম মালিক তাঁর ‘মুওয়াত্বত্বা’ গ্রন্থে, ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম তাঁদের দুই ‘সাহীহ’ গ্রন্থে, ইমাম তিরমিযী তাঁর ‘জামি‘’ গ্রন্থে এবং ইবনু মাজাহ তাঁর (সুনান গ্রন্থের) ভূমিকার মধ্যে।
আল-বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর ‘সাহীহ’ গ্রন্থের ‘কিতাবু ফাদ্বাইলিস সাহাবাহ (সাহাবীদের মর্যাদা)’ শীর্ষক অধ্যায় শুরু করেছেন ৩৬৪৯ নং হাদীস দিয়ে। যে হাদীসটি তিনি ‘আলী বিন ‘আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমাদের কাছে সুফইয়ান হাদীস বর্ণনা করেছেন ‘আমর থেকে। তিনি বলেছেন, আমি জাবির বিন ‘আব্দুল্লাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) কে বলতে শুনেছি, আমাদের কাছে আবূ সা‘ঈদ খুদরী হাদীস বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “লোকদের ওপর এমন এক সময় আসবে, যখন তাদের বিরাট সৈনাবাহিনী জিহাদের জন্য বের হবে। তখন তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছেন কি, যিনি আল্লাহর রাসূল ﷺ এর সাহচর্য লাভ করেছেন? তাঁরা বলবেন, হ্যাঁ, আছেন। তখন তাদেরকে জয়ী করা হবে। অতঃপর জনগণের ওপর পুনরায় এমন এক সময় আসবে যখন তাদের বিরাট বাহিনী যুদ্ধে লিপ্ত থাকবে। তখন তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছেন কি, যিনি আল্লাহর রাসূল ﷺ এর সাহচর্য প্রাপ্ত কোন ব্যক্তির সাহচর্য লাভ করেছেন? তখন তারা বলবেন, হ্যাঁ, আছেন। তখন তাদেরকে জয়ী করা হবে। অতঃপর লোকদের ওপর এমন এক সময় আসবে, যখন তাদের বিরাট বাহিনী জিহাদে অংশগ্রহণ করবে। তখন তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছেন কি, যিনি আল্লাহর রাসূল ﷺ এর সাহাবীগণের সাহচর্যপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তির সাহচর্য প্রাপ্ত হয়েছেন? বলা হবে, হ্যাঁ, আছেন। তখন তাদেরকে জয়ী করা হবে।”
এই মহান হাদীসে মাননীয় সাহাবীগণের (রিদ্বওয়ানুল্লাহি ‘আলাইহিম) মর্যাদার বর্ণনা রয়েছে। আল্লাহ মুসলিম সেনাবাহিনীকে সাহায্য করেন, যে বাহিনীর মধ্যে এমন ব্যক্তি থাকেন, যিনি আল্লাহর রাসূলের ﷺ সাহচর্য লাভ করেছেন। এটা সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল ﷺ এর সাহচর্যের মাহাত্ম্যে। বরং এই মর্যাদা আরও এক ধাপ এগিয়ে তাঁর জন্যও নির্ধারিত হয়েছে, যিনি মুহাম্মাদ ﷺ এর কোনো একজন সাহাবীর সাহচর্য লাভ করেছেন। এখানেই শেষ নয়, এই মর্যাদা আরও এক ধাপ এগিয়ে তাঁর জন্যও নির্ধারিত হয়েছে, যিনি মুহাম্মাদ ﷺ এর সাহাবীদের সহচরের সাহচর্য লাভ করেছেন। এখান থেকেই আহলুস সুন্নাহ সম্মাননীয় সাহাবীবর্গ, তাবি‘ঈগণ এবং উত্তমরূপে তাঁদের অনুসরণকারী ব্যক্তিবর্গের মর্যাদা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়া যায়।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: কেউ বলতে পারে, এই ‘আফারীর সাথে তোমাদের বিতর্ক না করাই ভালো হবে। কেননা সে ‘উলামাদের মাঝে যশস্বী কোনো ব্যক্তি নয়। সেক্ষেত্রে আমি বলব, এই লোক যদিও প্রসিদ্ধ কেউ নয়, তথাপি সে এমন এক ভয়াবহ বিষয়ে কথা বলেছে, যা তার (‘ইলমী) অবস্থানের চেয়েও ওপর পর্যায়ের। সে মহান দুই সাহাবীর দিকে এমন বিষয়কে সম্পর্কযুক্ত করেছে, যা তাঁদের দুজন থেকে প্রমাণিত নয়। তদনুরূপ সে শ্রদ্ধেয় ‘উলামাদের দিকে এমন বিষয়কে সম্পর্কযুক্ত করেছে, যা তাঁরা বিশ্বাস করেন না এবং যা সাহাবী, তাবি‘ঈ ও ইসলামের ইমামগণের ইজমা‘র সাথে সাংঘর্ষিক।
একারণে আমি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিদানের আশায় সত্যের পৃষ্ঠপোষকতা করা এবং মিথ্যাকে খণ্ডন করা বাঞ্ছনীয় মনে করছি। যাতে করে সম্মাননীয় সাহাবীবর্গ—বিশেষত উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুম জামী‘আ)—এর সাথে সংশ্লিষ্ট এবং মহান ‘উলামায়ে সুন্নাহর সাথে সম্পর্কিত বড়ো বড়ো বিষয়ে যারা অনধিকার চর্চা করে, তারা এমন কর্ম থেকে বিরত থাকে।
·❏ ভ্রান্ত বক্তব্য ও তার পর্যালোচনা:
ভ্রান্ত বক্তব্য-১:
‘আলী আল-‘আফারী তার নিবন্ধের ১ম পৃষ্ঠায় বলেছে, “উসমানের আজান সুন্নাত হওয়ার ব্যাপারে ইজমা‘ থাকার অসম্ভাব্যতা : বারমাকী আরাফাতের খণ্ডন। যেই (সুন্নাহ) বিদ্বেষী লোক দাবি করেছে, ‘উলামাগণ (এ ব্যাপারে) ইজমা‘ বর্ণনা করেছেন, তার কথা আপনার সামনে পেশ করা হলো। সে দাবি করেছে, আবা বুত্বাইন জুমু‘আহর প্রথম আজান সুন্নাত হওয়ার ব্যাপারে ইজমা‘ বর্ণনা করেছেন। নির্বোধ লোকটির কথা হুবহু নিম্নে উল্লিখিত হলো: আদ-দুরারুস সানিয়্যাহ ফিল আজউয়িবাতিন নাজদিয়্যাহ গ্রন্থে (৮/১০৩) উল্লিখিত হয়েছে, সাহাবীগণ, ইমামগণ ও তাবি‘ঈগণের যে কর্মকে বিদ‘আত বলা হয়, তা হলো আভিধানিক অর্থে বিদ‘আত। যেমন ‘উমার বলেছেন, এটি কতই না উত্তম বিদ‘আত; অর্থাৎ, তারাবির নামাজ। অনুরূপভাবে ‘উসমান ও সাহাবীবর্গ কর্তৃক জুমু‘আহর দিন প্রথম আজান সংযোজন। এটা নাবী ﷺ এর এই কথার আওতাভুক্ত হবে না যে, “প্রত্যেক বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা।” কেননা শরিয়তে এর মৌলিক ভিত্তি রয়েছে। আবার এটি সুপথপ্রাপ্ত খলিফাদের প্রণীত সুন্নাত। আর তাঁদের সুন্নাতের অনুসরণ করা আবশ্যক। যেহেতু নাবী ﷺ বলেছেন, “তোমরা আমার সুন্নাহর ওপর প্রতিষ্ঠিত থাক এবং আমার পরে সুপথপ্রাপ্ত ন্যায়নিষ্ঠ খলিফাদের সুন্নাহর ওপর প্রতিষ্ঠিত থাক।” (আবূ দাঊদ, হা/৪৬০৭; সনদ: সাহীহ)”
এই ইমামের বক্তব্যে কি এ আজান সুন্নাত হওয়ার ব্যাপারে ইজমা‘র বর্ণনা রয়েছে? নাকি এই বক্তব্যের উদ্দেশ্য কেবল নাবীর ﷺ হাদীস—“সুপথপ্রাপ্ত ন্যায়নিষ্ঠ খলিফাদের সুন্নাহ”– এর ব্যাখ্যা করা, আর ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)’র কথার উদ্দেশ্য বর্ণনা করা? এই অযোগ্য লোকের মিথ্যা কি এ পর্যন্ত এসেই শেষ হবে, নাকি আরও বেশি হবে, তা আমাদের দেখা দরকার।”
·
❏ পর্যালোচনা-১:
এখানে বলা যায়:
ক. সুবহানাল্লাহ! যে ব্যক্তি সুপথপ্রাপ্ত খলিফা ‘উসমানকে ডিফেন্ড করছে এবং এ ব্যাপারে সাহাবী, তাবি‘ঈ ও ইসলামের ইমামগণের অবস্থান দ্বারা দলিল পেশ করছে, সে কিনা এই লোকের নিকটে মিথ্যুক, বিদ্বেষী, আর নির্বোধ!
খ. এটি হলো (তার) জিদ। আবা বুত্বাইনের কথা ‘উসমানী আজানের ব্যাপারে দাবিকৃত ইজমা‘ প্রসঙ্গে সুস্পষ্ট বক্তব্য। বরং আবা বুত্বাইন এটাকে মহান সাহাবীদের দিকে সম্পৃক্ত করেছেন। নিশ্চয় ইমাম আবা বুত্বাইন বলেছেন, “সাহাবীগণ, ইমামগণ ও তাবি‘ঈগণের যে কর্মকে বিদ‘আত বলা হয়, তা হলো আভিধানিক অর্থে বিদ‘আত (وما يطلق عليه اسم البدعة مما فعله الصحابة، والأئمة والتابعون، فهو بدعة لغوية)।” তিনি আরও বলেছেন, “অনুরূপভাবে ‘উসমান ও সাহাবীবর্গ কর্তৃক জুমু‘আহর দিন প্রথম আজান সংযোজন (وكزيادة عثمان والصحابة، الأذان الأول يوم الجمعة)।”
গ. তাঁর কথা ‘সাহাবীবর্গ (الصحابة)’– এ উল্লিখিত আলিফ-লাম হলো মা‘রিফাহর আলিফ-লাম। যা ইস্তিগরাক্বিয়্যাহ তথা সবকিছুকে শামিল করার অর্থজ্ঞাপক। সুতরাং জ্ঞানী ব্যক্তির নিকট এর অর্থ হলো, এই আলিফ-লাম সকল সাহাবীকে শামিল করে। অনুরূপভাবে তিনি বলেছেন, ইমাম ও তাবি‘ঈগণ (والأئمة والتابعون)। এ দুই শব্দের আলিফ-লামও ইস্তিগরাক্বিয়্যাহ। সুতরাং তা সকল ইমাম ও তাবি‘ঈকে অন্তর্ভুক্ত করে।
ঘ. তিনি এটাকে আভিধানিক অর্থে বিদ‘আত বলতে গিয়ে ন্যায়নিষ্ঠ খলিফা ‘উমার বিন খাত্বত্বাবের এই উক্তি দিয়ে স্বীয় বক্তব্যকে জোরদার করেছেন। ‘উমার বলেছেন, এটা কতই না উত্তম বিদ‘আত; অর্থাৎ, তারাবির নামাজ।
ঙ. আলোচ্য আজানকে বিদ‘আত আখ্যা দেওয়াকে নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেছেন, “এটা নাবী ﷺ এর এই কথার আওতাভুক্ত হবে না যে, প্রত্যেক বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা। কেননা শরিয়তে এর মৌলিক ভিত্তি রয়েছে।”
চ. এরপর তিনি স্বীয় দাবিকে জোরদার করে বলেছেন, “আবার এটি সুপথপ্রাপ্ত খলিফাদের প্রণীত সুন্নাত। আর তাঁদের সুন্নাতের অনুসরণ করা আবশ্যক। যেহেতু নাবী ﷺ বলেছেন, “তোমরা আমার সুন্নাহর ওপর প্রতিষ্ঠিত থাক এবং আমার পরে সুপথপ্রাপ্ত ন্যায়নিষ্ঠ খলিফাদের সুন্নাহর ওপর প্রতিষ্ঠিত থাক।” (আবূ দাঊদ, হা/৪৬০৭; সনদ: সাহীহ)”
ছ. এই মিসকীন বলেছে, “এই ইমামের বক্তব্যে কি এ আজান সুন্নাত হওয়ার ব্যাপারে ইজমা‘র বর্ণনা রয়েছে? নাকি এই বক্তব্যের উদ্দেশ্য কেবল নাবীর ﷺ হাদীস—“সুপথপ্রাপ্ত ন্যায়নিষ্ঠ খলিফাদের সুন্নাহ”– এর ব্যাখ্যা করা, আর ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)’র কথার উদ্দেশ্য বর্ণনা করা?” তার এই কথায় হঠকারিতা ও জিদ রয়েছে। একথা কোনো কূটতার্কিক কিংবা আরব জনগণ ও ‘উলামাদের ভাষা সম্পর্কে নিতান্তই অজ্ঞ ছাড়া আর কারও নিকট থেকে প্রকাশিত হতে পারে না। সে হেদায়াত ও ন্যায়নিষ্ঠতা থেকে বহুদূরে রয়েছে, যে দুটি বিশেষণে রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর সুপথপ্রাপ্ত ন্যায়নিষ্ঠ খলিফাদের বিশেষিত করেছেন। যাঁদের একজন হলেন ন্যায়নিষ্ঠ খলিফা ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুম আজমা‘ঈন)।
ইমাম আবা বুত্বাইনের বক্তব্য প্রসঙ্গে এই লোক বলেছে, “নাকি এই বক্তব্যের উদ্দেশ্য কেবল নাবীর ﷺ হাদীস—“সুপথপ্রাপ্ত ন্যায়নিষ্ঠ খলিফাদের সুন্নাহ”– এর ব্যাখ্যা করা?” একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তির নিকট এটা স্পষ্ট যে, এই কথা কূটতর্ক এবং সুস্পষ্ট মূর্খতা। যেমনটি পাঠকের নিকট স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয়েছে।
·❏ ভ্রান্ত বক্তব্য-২:
‘আলী ‘আফারী ২য় ও ৩য় পৃষ্ঠায় বলেছে, “অনুরূপভাবে সে ইমাম ইবনু বাযের কথা উল্লেখ করেছে এবং বলেছে যে, তিনি এই আজান সুন্নাত হওয়ার ব্যাপারে ইজমা‘ বর্ণনা করেছেন। ইমাম ইবনু বাযের বক্তব্যটি আমাদের দেখা দরকার, যাতে করে আমরা এই পশ্চাদ্পসারণকারী লোকের মিথ্যা ও অপবাদের ব্যাপ্তি সম্পর্কে অবগত হতে পারি। ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “এই কাজের ব্যাপারে তাঁর (‘উসমানের) অনুসরণ করেছেন তাঁর যুগে বিদ্যমান সাহাবীগণ। তাঁর যুগে ছিলেন ‘আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু), ‘আব্দুর রহমান বিন ‘আওফ, যুবাইর ইবনুল ‘আওয়্যাম, ত্বালহাহ বিন ‘উবাইদুল্লাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুম)-সহ নেতৃস্থানীয় ও বয়োজ্যেষ্ঠ সাহাবীবর্গ। তদনুরূপ অধিকাংশ দেশ ও অঞ্চলের মুসলিমরা এর ওপরই চলেছে, ন্যায়নিষ্ঠ খলিফার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুম) কর্মের অনুসরণ করে। একাজে তাঁর অনুসরণ করেছেন চতুর্থ ন্যায়নিষ্ঠ খলিফা ‘আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু), এবং অনুরূপভাবে অবশিষ্ট সাহাবীবৃন্দ।”
শাইখ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “তদনুরূপ অধিকাংশ দেশ ও অঞ্চলের মুসলিমরা এর ওপরই চলেছে।” তিনি যে বলেছেন, ‘অধিকাংশ দেশ ও অঞ্চলের মুসলিমরা...’, এটাই একথার প্রতিনিধিত্ব করে যে, এই মাসআলাহয় ইজমা‘ সংঘটিত হয়নি। বরং অধিকাংশ এলাকায় এই আমল চালু রয়েছে। এই বারমাক গোত্রীয় লোক কি ইমামদের কথা বোঝে, নাকি সে মন্দ উদ্দেশ্যের রোগে আক্রান্ত?! আমরা আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা কামনা করছি।”
·❏ পর্যালোচনা-২:
ক. এই লোক স্বীয় প্রতিপক্ষকে—যে কিনা সত্যভাষী ও পুণ্যবান—মিথ্যা ও অপবাদের মতো নিন্দনীয় বিশেষণে বিশেষিত করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। এটা বিতর্কের মধ্যে পাপাচারিতা চর্চার আওতাভুক্ত। যে কাজের কাজিকে নিন্দা করা হয়। এই লোকের ব্যাপারে এই হাদীসটি বড়োই মানানসই—“যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের ব্যাপারে এমন কথা আরোপ করল, যা তার মধ্যে নেই, সে ব্যক্তি যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের ব্যক্তীকৃত বিষয় থেকে (তওবা করে) মুক্ত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তাকে জাহান্নামীদের দূষিত রক্ত ও পুঁজের মধ্যে রাখবেন।” [আবূ দাঊদ, হা/৩৫৯৭; সনদ: সাহীহ]
খ. ইমাম ইবনু বাযের বক্তব্য প্রমাণ করে, তিনি মনে করেন, সাহাবীগণ ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র যুগে এই আজানের ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেছেন। তিনি তাঁর এই কথার মাধ্যমে উক্ত ইজমা‘র মত ব্যক্ত করেছেন যে, “এই কাজের ব্যাপারে তাঁর (‘উসমানের) অনুসরণ করেছেন তাঁর যুগে বিদ্যমান সাহাবীগণ।” তিনি বলেননি, কতিপয় সাহাবী এমনটি করেছেন। তাহলে কেন তুমি এই বাক্যাংশটি না জানার ভণিতা করলে, যে অংশ প্রমাণ করে, সাহাবীগণ এ ব্যাপারে একমত ছিলেন, এবং তাঁদের মধ্যে কেউ তাঁর বিরোধিতা করেননি?
গ. তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “তদনুরূপ অধিকাংশ দেশ ও অঞ্চলের মুসলিমরা এর ওপরই চলেছে।” তিনি বলেননি, “সকল অঞ্চলের লোকেরা (এর ওপরই চলেছে)।” কেননা তিনি জানতেন, সেসব জায়গায় রাফিদ্বী ও শি‘আরাও আছে, যারা ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র আজান গ্রহণ করেনি। আর তাদের বিরোধিতা সেই ইজমা‘র মধ্যে কোনো কালিমা লেপন করে না, যে ইজমা‘ তিনি প্রথমেই সম্মাননীয় সাহাবীদের থেকে বর্ণনা করেছেন।
·❏ ভ্রান্ত বক্তব্য-৩:
‘আফারী তার নিবন্ধের ২য় পৃষ্ঠায় আরও বলেছে, “আর ‘আল্লামাহ ইবনু বায বলেছেন, “একাজে তাঁর অনুসরণ করেছেন চতুর্থ ন্যায়নিষ্ঠ খলিফা ‘আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু), এবং অনুরূপভাবে অবশিষ্ট সাহাবীবৃন্দ।” এটা তিনি স্বীয় জ্ঞান অনুযায়ী বলেছেন। নচেৎ এ ব্যাপারে ‘উসমানের বিরোধিতা করেছেন ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) এবং তিনি এটাকে বিদ‘আত আখ্যা দিয়েছেন। একইভাবে ‘আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)’র সামনেও কেবল সেভাবেই আজান দেওয়া হতো, যেভাবে নাবী ﷺ এর যুগে আজানের প্রচলন ছিল।”
·❏ পর্যালোচনা-৩:
বিশিষ্ট ‘উলামাদেরকে অজ্ঞ ঠাওরানো তোমার কাছে কতই না সহজ। আমি মনে করি, ‘আল্লামাহ ইবনু বাযের কাছে সে বিষয়টি অজানা ছিল না, যে বিষয়টি ইবনু ‘উমার ও ইবনু যুবাইরের দিকে সম্পৃক্ত করা হয়। কিন্তু তিনি তা বিবেচনায় নিয়ে আসেননি। কারণ তা তাঁর নিকটে প্রমাণিত নয়। আমি মনে করি, ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)’র দিকে যা সম্পৃক্ত করা হয় যে, তিনি প্রথম আজানকে বিদ‘আত বলেছেন, তা তাঁর নিকট থেকে (বিশুদ্ধ সূত্রে) প্রমাণিত নয়। এ বিষয়ে বিশদ বিবরণ শীঘ্রই আসবে (ইনশাআল্লাহ)। আর ইবনু যুবাইর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) এটাকে বিদ‘আত বলেননি। এছাড়া ইবনু যুবাইরের বর্ণনার সনদই বা কোথায়? আসলে ইবনু ‘উমারের দিকে সম্পৃক্ত বিষয়টি প্রমাণিত হয়নি, এবং ইবনু যুবাইরের দিকে সম্পৃক্ত বিষয়টিও প্রমাণিত হয়নি। তারপরও আমরা যদি এটাকে প্রমাণিত ধরেও নিই, তথাপি তার মধ্যে ‘উসমানী আজানকে বিদ‘আত বলার প্রমাণ নেই। কাজেই তাঁদের দুজনের দিকে যা জুড়ে দেওয়া হয়, সেটাকে ইমাম ইবনু বায আমলেই নেননি। এজন্য নেননি যে, তিনি সে সম্পর্কে অবগত নন, যেমনটি এই মিসকীন দাবি করছে।
·❏ ভ্রান্ত বক্তব্য-৪:
‘আলী ‘আফারী ২য় পৃষ্ঠায় আরও বলেছে, “এরপর সে লাজনাহ দা’ইমাহর (সৌদি ফতোয়া বোর্ডের) বক্তব্য পেশ করেছে। সেখানে (তাদের বক্তব্যে) বলা হয়েছে, “জুমু‘আর দিন প্রথম আজান দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ‘উসমান বিন ‘আফফান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)। তিনি হলেন ন্যায়নিষ্ঠ খলিফাদের তৃতীয়তম। সাহাবীগণের (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুম) কেউ তাঁর বিরোধিতা করেননি। আর এ ব্যাপারে অধিকাংশ মুসলিম তাঁর অনুসরণ করেছে। আর আল্লাহই তৌফিকদাতা। হে আল্লাহ, আমাদের নাবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার পরিজন ও সাহাবীগণের ওপর আপনি দয়া ও শান্তি বর্ষণ করুন।”
এরপর ‘আফারী নিজের সম্পর্কে বলছে, “আবূ ‘ঈসা (আল্লাহ তাকে তৌফিক দিন) [অর্থাৎ, আফারী নিজে] বলছে, উক্ত বক্তব্য প্রমাণ করছে, তাঁরা ইবনু ‘উমারের বিরোধিতা এবং ইবনু যুবাইরের কর্ম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন না। আর তাঁদের কথায় ইজমা‘ সংঘটনের দাবির ছিটেফোঁটাও নেই। এটা স্পষ্টরূপে প্রমাণ করে, এ ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে। যদিও তাঁদের বক্তব্যে একথা রয়েছে যে, সাহাবীদের কেউ তাঁর বিরোধিতা করেননি; যেই কথা তোমার মতো লোকদের আঁকড়ে ধরার অবলম্বন। প্রকৃতপক্ষে একথা তাঁরা তাঁদের জ্ঞান অনুযায়ী বলেছেন। আর যিনি জানেন, তিনি না-জানা ব্যক্তির ওপর হুজ্জাহ বা দলিলস্বরূপ। কিন্তু এই লেজসদৃশ ব্যক্তি কি তা বোঝবে?”
·❏ পর্যালোচনা-৪:
ক. যে ব্যক্তি ন্যায়নিষ্ঠ খলিফাকে এবং যে ব্যাপারে কমসে কম সাহাবীবর্গ একমত হয়েছে, সেটাকে ডিফেন্ড করে, সে ব্যক্তি এই লোকের কাছে লেজসদৃশ (বা চামচা টাইপের লোক)। আল্লাহর কাছে বাস্তবতার পরিবর্তন থেকে পানাহ চাইছি।
খ. লাজনাহ (ফতোয়া কমিটি) বলেছে, “সাহাবীগণের (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুম) কেউ তাঁর বিরোধিতা করেননি।” এটা প্রমাণ করে যে, তাঁরা মনে করেন, সাহাবীগণ এ ব্যাপারে একমত ছিলেন। প্রমাণ হলো তাঁদের এই কথা—“সাহাবীগণের (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুম) কেউ তাঁর বিরোধিতা করেননি।” ইবনু ‘উমার ও ইবনু যুবাইর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুম) ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র বিরোধিতা করেননি। নিশ্চয় তুমি যাকে রদ করছ, তাকে যে তুমি মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছ, এটা এ বিষয়কেও শামিল করে যে, তুমি ‘উসমানের আজান হক হওয়ার ব্যাপারে যাদের থেকে ইজমা‘ বর্ণনা করা হয়েছে, তাদের সবাইকে তুমি মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছ। আর তুমি যে ইমাম ইবনু বায, আর লাজনাহ দা’ইমাহকে (স্থায়ী ফতোয়া কমিটিকে) অজ্ঞ ঠাওরিয়েছ, এটা তোমার মূর্খতা এবং মন্দ চরিত্রের প্রমাণ বহন করে। এটা কি সম্ভব নয় যে, ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)’র দিকে সম্পৃক্ত বিষয় সম্পর্কে তাঁরা অবগত ছিলেন? কিন্তু তাঁরা সে বর্ণনা গ্রহণ করেননি, তা তাঁদের নিকটে দুর্বল ও অগ্রহণীয় হওয়ার কারণে। তদনুরূপ তাঁরা ইবনু যুবাইরের বিষয়টি সম্পর্কেও অবগত ছিলেন। কিন্তু ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র কর্মের সাথে সেই বর্ণনাকে বিরোধপূর্ণ মনে করেননি। এমনটা কি সম্ভব নয়? প্রকৃতপ্রস্তাবে ‘উলামাদের ব্যাপারে এমন মানানসই ধারণা করাই আদবওয়ালা-সচ্চরিত ব্যক্তিবর্গের কাজ।
·❏ ভ্রান্ত বক্তব্য-৫:
‘আফারী তার নিবন্ধের ৩য় পৃষ্ঠায় বলেছে, “ইবনু আবী শাইবাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, حدثنا شبابة قال حدثنا هشيم بن الغاز عن نافع عن ابن عمر قال : الأذان الأول يوم الجمعة بدعة . قال شيخنا ـ حفظه الله ـ : وهذا إسناد صحيح إلى ابن عمر ؛ فشبابة هو ابن سوار : ثقة حافظ وهشام بن الغز : ثقة ونافع مولى ابن عمر إمام مشهور اهـ “আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন, শাবাবাহ। তিনি বলেছেন, আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন হুশাইম ইবনুল গায, নাফি‘ থেকে, তিনি ইবনু ‘উমার থেকে, তিনি (ইবনু ‘উমার) বলেছেন, জুমু‘আহর দিন প্রথম আজান দেওয়া বিদ‘আত। আমাদের শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন, এটা ইবনু ‘উমার পর্যন্ত বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত। শাবাবাহ হলো ইবনু সিওয়ার, যিনি একজন বিশ্বস্ত হাফিয। হিশাম ইবনুল গায* হলো বিশ্বস্ত। আর ইবনু ‘উমারের মুক্তদাস নাফি‘ হলেন প্রখ্যাত ইমাম।”
[(*) শাইখ রাবী‘ (হাফিযাহুল্লাহ) টীকায় উল্লেখ করেছেন, মিসকীনের কাণ্ডটা দেখুন। একবার বলছে, হুশাইম ইবনুল গায, আরেকবার বলছে, হিশাম ইবনুল গায। সে এই দুই নামে দুজন ব্যক্তির অস্তিত্বে বিশ্বাসে করে না কি?! – অনুবাদক]
ইবনু আবী শাইবাহ (রাহিমাহুল্লাহ) আরও বলেছেন, “আমাদের কাছে ওয়াকী‘ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হিশাম ইবনুল গায হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘উমারের মুক্তদাসকে জিজ্ঞেস করলাম, জুমু‘আহর দিন প্রথম আজান দেওয়া কি বিদ‘আত? তিনি বললেন, ইবনু ‘উমার বলেছেন, বিদ‘আত।” এই বর্ণনার সনদ বিশুদ্ধ। এটা প্রমাণগত দিক থেকে প্রথম বর্ণনার চেয়েও বেশি স্পষ্ট। তুমি বলতে পার, ইতঃপূর্বে ইবনু রজব ও আবা বুত্বাইনের বক্তব্য উল্লিখিত হয়েছে, যাঁরা ইবনু ‘উমারের কথাকে এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আভিধানিক অর্থে বিদ‘আত। তাহলে এর জবাব কী হবে?
এক্ষেত্রে বলা হবে, ইবনু ‘উমারের মুক্তদাস নাফি‘ তাঁর শাইখের কথা থেকে এটা বুঝেছেন যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো পারিভাষিক অর্থে বিদ‘আত, যা শরিয়তের পরিপন্থি। এই দাবিকে জোরদার করে ওয়াকী‘ কর্তৃক স্বীয় কিতাবের সেই বর্ণনা, যা হাফিয ইবনু রজব তাঁর ফাতহুল বারী গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। হিশাম ইবনুল গায থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি জুমু‘আহর দিনের আজান প্রসঙ্গে নাফি‘কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, ইবনু ‘উমার বলেছেন, এটা বিদ‘আত। আর প্রত্যেক বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা। যদিও লোকেরা সেটাকে ভালো মনে করে।”
এথেকে জানা গেল, ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বিদ‘আত দ্বারা সেটাই উদ্দেশ্য করেছেন, যা তাঁর মুক্তদাস নাফি‘ বুঝেছেন। অনুরূপভাবে ‘আল্লামাহ ওয়াদি‘ঈ, ‘আল্লামাহ ইতয়ূবী, ‘আল্লামাহ হাজূরী প্রমুখ বুঝেছেন যে, এটা হলো নিন্দনীয় বিদ‘আত। পক্ষান্তরে ইবনু রজব ও আবা বুত্বাইন (রাহিমাহুমাল্লাহ) যা বলেছেন, তা তাঁদের ইজতিহাদ। ইবনু ‘উমারের মুক্তদাস ইমাম নাফি‘ হলেন মহান তাবি‘ঈ। তাই তাঁর ব্যক্তীকৃত কথা—“নিশ্চয় প্রত্যেক বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা” অগ্রগণ্য হবে। এখন কি বারমাক গোত্রীয় লোকেরা বলে বেড়াবে যে, এর মাধ্যমে ‘উসমান বিন ‘আফফান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র ওপর ভ্রষ্টতা ও বিদ‘আতের হুকুম লাগানো হলো?
·❏ পর্যালোচনা-৫:
প্রথমত, প্রথম আজান বিদ‘আত—মর্মের মন্তব্যগুলোর কেন্দ্র স্রেফ হিশাম ইবনুল গায। আর তার ব্যাপারে কথা হলো:
ক. সে হিফয ও স্মৃতিশক্তির বিশেষণে বিশেষিত হয়নি। যদিও মুহাদ্দিসদের কেউ কেউ তাকে সিক্বাহ (বিশ্বস্ত) বলেছেন। আর তাঁরা হলেন ইয়াহইয়া বিন মা‘ঈন, দুহাইম, মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ বিন আম্মার। তথাপি সঠিক কথা হলো, সে সালিহ (সিক্বাহর চেয়ে কয়েক স্তর নিচের পরিভাষা)। যেমনটি বলেছেন ইমাম আহমাদ। এতদ্ব্যতীত তার ব্যাপারে ইবনু মা‘ঈনের আরেকটি বক্তব্য রয়েছে। যেখানে তিনি বলেছেন, এর কোনো সমস্যা নেই। এখান থেকেই যাহাবী তার ব্যাপারে বলেছেন, সে সাদূক্ব (সিক্বাহর চেয়ে এক স্তর নিচের পরিভাষা)। হাফিয ইবনু হাজার তার ব্যাপারে বলেছেন, সে সিক্বাহ, তবে তার ব্যাপারে গবেষণার প্রয়োজন আছে। এ ধরনের ব্যক্তি যখন একাকী হাদীস বর্ণনা করে, তখন সে হাদীসকে সাহীহ বা হাসান—কোনোটাই বলা যায় না।
খ. আমার কাছে স্পষ্ট হয়েছে, নাফি‘ থেকে তার উক্ত বর্ণনা মুনকার হিসেবে বিবেচ্য হয়। কেননা সে নাফি‘র বিপুল সংখ্যক ছাত্রদের থেকে আলাদা হয়ে একাকী হাদীস বর্ণনা করেছে। আর সেসব ছাত্রদের মধ্যে মদিনার শ্রেষ্ঠ অধিবাসীগণ রয়েছে। তাঁর থেকে বর্ণনাকারীরা হলেন: “তাঁর কয়েক পুত্র আবূ ‘উমার, ‘উমার ও ‘আব্দুল্লাহ। অনুরূপভাবে ‘আব্দুল্লাহ বিন দীনার, সালিহ বিন কাইসান, সা‘ঈদ আল-আনসারীর দুই পুত্র ‘আব্দু রাব্বিহ ও ইয়াহইয়া। একইভাবে ইউনুস বিন ‘উবাইদ, ইয়াযীদ বিন আবূ হুবাইব, আবূ ইসহাক্ব আস-সাবী‘ঈ, যুহুরী, মূসা বিন ‘উক্ববাহ, মাইমূন বিন মিহরান, ইবনু ‘আজলান, আইয়ূব আস-সিখতিয়ানী, জারীর বিন হাযিম, হাকাম বিন ‘উতাইবাহ, সা‘দ বিন ইবরাহীম, ‘আব্দুল্লাহ বিন সা‘ঈদ বিন আবূ হিন্দ, ‘উবাইদুল্লাহ বিন ‘উমার আল-‘আমরী, তাঁর ভাই ‘আব্দুল্লাহ, ইবনু জুরাইজ, আওযা‘ঈ, ইবনু ইসহাক্ব, ‘আব্দুল কারীম আল-জাযারী, ‘আত্বা আল-খোরাসানী, লাইস বিন আবূ সুলাইম, মুহাম্মাদ বিন সাওয়াক্বাহ, হিশাম বিন সা‘দ, মাত্বার আল-ওয়াররাক্ব, মালিক বিন আনাস, ইসমা‘ঈল বিন উমাইয়্যাহ, উসামাহ বিন যাইদ আল-লাইসী, ইসমা‘ঈল, বিন ইবরাহীম বিন ‘উক্ববাহ, আইয়ূব বিন মূসা আল-ক্বারশী, বুকাইর বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন আশাজ্জ, ইয়া‘লা বিন হাকীম, জুওয়াইরিয়াহ বিন আসমা, আবূ সাখর হুমাইদ বিন যিয়াদ, হানযালাহ বিন আবূ সুফইয়ান, রাক্বাবাহ বিন মাসক্বালাহ, সা‘ঈদ বিন হিলাল, সাখর বিন জুওয়াইরিয়াহ, দ্বাহহাক বিন ‘উসমান, ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘উমার বিন ‘আব্দুল ‘আযীয, ‘উবাইদুল্লাহ বিন আবূ জা‘ফার, ‘উমার বিন যাইদ বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন ‘উমার, ‘ঈসা বিন হাফস বিন ‘আসিম বিন ‘উমার বিন খাত্বত্বাব, ইউনুস বিন ইয়াযীদ, ফুলাইহ বিন সুলাইমান, কাসীর বিন ফারক্বাদ, ওয়ালীদ বিন কাসীর, শু‘আইব বিন আবূ হামযাহ, লাইস বিন সা‘দ এবং আরও অনেকে।” [তাহযীবুত তাহযীব, খণ্ড: ১০; পৃষ্ঠা: ৪১৩]
হিশাম ইবনুল গায নাফি‘ থেকে বর্ণনা করার ক্ষেত্রে এই বিপুল সংখ্যক বর্ণনাকারী থেকে আলাদা হয়ে একাকী বর্ণনা করেছে। যে বিপুল সংখ্যক বর্ণনাকারীর মধ্যে রয়েছেন নাফি‘র কয়েকজন পুত্র এবং মদিনাবাসীদের মধ্যে বিশিষ্ট গুণীজন। অথচ তাঁদের কারও থেকে এরকম আশ্চর্য বক্তব্য বর্ণিত হয়নি। এতদ্ব্যতীত নাফি‘ থেকে বর্ণনাকারী হিশাম ইবনুল গায মদিনাবাসীদের কেউ নয়। বরং সে অপরিচিত (গারীব)। সে দেমাস্কের লোক। পরে সে বাগদাদের অধিবাসী হয়েছে। সে আবূ জা‘ফার আল-মানসূরের কোষাগারের দায়িত্বে ছিল। যার অবস্থা এই রকম, তার এমন হাদীস ‘মুনকার’ হিসেবে গণ্য হবে।
ইমাম মুসলিম তাঁর কিতাবের (সাহীহ মুসলিমের) ভূমিকায় (পৃ. ৭) বলেছেন, “একক রাবির (মুফরাদ) বর্ণনা সম্পর্কে হাদীস বিশারদগণ যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন এবং এ ব্যাপারে তাঁদের যে মাযহাব জানা গেছে, তা হলো—যে হাদীসটি মাত্র একজন রাবী বর্ণনা করেছেন, তিনি যদি হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে সিক্বাহ (বিশ্বস্ত) এবং হাফিযুল হাদীস রাবিদের সাথে পুরোপুরি অথবা আংশিকভাবে শরিক থাকেন এবং তাদের বর্ণনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষার প্রতি যত্নবান হন, আর তাঁর বর্ণিত হাদীসে যদি কিছু অতিরিক্ত অংশ থাকে যা তাদের বর্ণনায় নেই, তাহলে তাঁর বর্ণিত অতিরিক্ত অতিরিক্ত গ্রহণযোগ্য হবে।
হাদীস চর্চার ক্ষেত্রে ইমাম যুহরীর স্থান ও মর্যাদা অনেক ঊর্ধ্বে। তাঁর বহু ছাত্র হাফিযুল হাদীস এবং শক্তিশালী রাবি হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তাঁরা তাঁর ও অপরাপর মুহাদ্দিসের হাদীসসমূহ নিখুঁতভাবে বর্ণনা করেছেন। মুহাদ্দিসদের মধ্যে ইমাম যুহরী ও হিশাম ইবনু উরওয়ার বর্ণিত হাদীস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে আছে। এ দুজনের ছাত্রবর্গ অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে ঐক্যমত অনুসারে তাঁদের বর্ণিত হাদীস বর্ণনা করেছেন। এমতাবস্থায় যদি দেখা যায় যে, কোনো ব্যক্তি তাঁদের উভয়ের (যুহরী ও হিশাম) থেকে অথবা তাঁদের কোনো একজনের কাছ থেকে এমন কোনো হাদীস বর্ণনা করার দাবি করে, যে সম্পর্কে তাদের ছাত্রগণ অবহিত নন, তাছাড়া সে ব্যক্তি তাদের কারো সাথে কোনো সহীহ বর্ণনায় শরিকও নয়, এরূপ লোকের বর্ণিত হাদীস গ্রহণ করা না-জায়েজ। আর আল্লাহই সর্বাধিক অবগত।”
এই বিষয়টি ইবনুল গাযের মধ্যে অনুপস্থিত। সে খুব কম হাদীস বর্ণনাকারী রাবি। সে নাফি‘র ছাত্রবর্গ কর্তৃক বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদীসসমূহের কোনো বর্ণনাতে শরিকও হয়নি। আর তাঁদের বর্ণনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষার প্রতি যত্নবানও হয়নি। এজন্য ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম নাফি‘ থেকে ইবনুল গাযের সূত্রে একটি মুত্তাসিল (অবিচ্ছিন্ন) হাদীসও বর্ণনা করেননি। তবে বুখারী তার থেকে একটি হাদীস মু‘আল্লাক্ব (গ্রন্থকারের দিক থেকে যে হাদীসের সনদে এক বা একাধিক রাবি পড়ে যায়) সূত্রে মুতাবা‘আতের মধ্যে উল্লেখ করেছেন। ১৭৪২ নং হাদীস দেখুন।
কেবল ইবনু আবী শাইবাহ ব্যতীত ইমামগণের কেউ উক্ত আসার বর্ণনা করেননি। তিনি যা বর্ণনা করেন, তার মধ্যে বিশুদ্ধতাকে সবিশেষ গুরুত্ব দেন না। যা ইবনু ‘উমারের দিকে সম্বন্ধিত বর্ণনাটির মুনকার হওয়াকে জোরদার করে। ইমাম মুসলিমের উক্ত বক্তব্য প্রসঙ্গে হাফিয ইবনু রজব বলেছেন, “তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, সিক্বাহ রাবি যদি (অন্যান্য) সিক্বাহ রাবিদের বর্ণিত হাদীসের সাথে সামঞ্জস্য রক্ষার ব্যাপারে যত্নশীল হয়, এরপর কোনো একটি হাদীস একাকী বর্ণনা করে, তাহলে তার একক বর্ণনা গ্রহণযোগ্য হবে। তিনি এটা ‘আলিমদের থেকে বর্ণনা করেছেন।” [শারহু ‘ইলালিত তিরমিযী, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৪৫৬-৪৫৭]
হিশাম ইবনুল গায ওই শ্রেণির লোকদের একজন, যারা নাফি‘ ও যুহরীর মতো মুহাদ্দিসদের থেকে একাকী হাদীস বর্ণনা করলে, তাদের বর্ণিত হাদীস গ্রহণ করা না-জায়েজ হয়। যেহেতু উক্ত দুই মুহাদ্দিসের বিশ্বস্ত ছাত্রবর্গের কেউ তার বর্ণনার মধ্যে শরিক হয়নি।
[জ্ঞাতব্য যে, শাইখ রাবী‘ (হাফিযাহুল্লাহ) হিশাম ইবনুল গাযের হাদীসকে দুর্বল বলার কারণে ইউসুফ আল-‘আন্নাবী নামক এক দা‘ঈ শাইখের বিরুদ্ধে প্রবন্ধ লিখেছিল। আল্লাহর ইচ্ছায় শাইখ ওই প্রবন্ধকে খণ্ডন করে দুই পর্বে মোট ৮৪ পৃষ্ঠাব্যাপী একটি সুদীর্ঘ প্রবন্ধ লিখেছেন। ফালিল্লাহিল হামদ। পর্ব দুটির লিংক: (১) www.rabee(ডট)net/ar/articles.php?cat=8&id=238; (২) http://www.rabee(ডট)net/ar/articles.php?cat=8&id=239। – অনুবাদক]
গ. যদি ধরেও নেওয়া হয় যে, ‘আব্দুল্লাহ বিন ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে এটা প্রমাণিত, তথাপি এটাকে এভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আভিধানিক অর্থে বিদ‘আত, শার‘ঈ অর্থে নয়। যেমনটি কতিপয় ‘আলিম বলেছেন। আর যেমনভাবে ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) তারাবির নামাজের ক্ষেত্রেও বিদ‘আত শব্দ প্রয়োগ করেছেন।
ঘ. বাস্তবিকপক্ষে ‘আব্দুল্লাহ বিন ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) সেসমস্ত ব্যক্তিবর্গের একজন, যাঁরা ন্যায়নিষ্ঠ খলিফা ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কে খুবই সম্মান করে এবং প্রবলভাবে তাঁর পক্ষাবলম্বন করে। সুতরাং হিশাম ইবনুল গায তাঁর দিকে যা সম্পৃক্ত করেছে, সেটাকে খুবই দূরবর্তী দাবি বলে মনে হয়। যে দাবিকৃত কথা ন্যায়নিষ্ঠ খলিফা ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র নিন্দা করার শামিল। ইমাম বুখারী তাঁর ‘সাহীহ’ গ্রন্থের বাবু মানাক্বিবি ‘উসমান (’উসমানের মর্যাদা) শীর্ষক অধ্যায়ে (হা/৩৬৯৮) বলেছেন, “মুহাম্মাদ বিন হাতিম বিন বাযী‘ আমার কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, শাযান আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আব্দুল ‘আযীয বিন আবূ সালামাহ আল-মাজিশূন আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন ‘উবাইদুল্লাহ থেকে, তিনি নাফি‘ থেকে, তিনি ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে। তিনি বলেন, আমরা নাবী ﷺ এর সময়ে আবূ বাকর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এর ন্যায় মর্যাদাবান কাউকে মনে করতাম না, অতঃপর ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কে, অতঃপর ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কে। অতঃপর সহাবাগণের মধ্যে কাউকে কারও ওপর মর্যাদা দিতাম না। ‘আব্দুল ‘আযীয হতে ‘আব্দুল্লাহ ইবনু সালিহ হাদীস বর্ণনায় শাযানের অনুসরণ করেছেন।”
ইমাম বুখারী আরও (হা/৩৬৯৯) বলেছেন, “মূসা বিন ইসমা‘ঈল আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আবূ ‘আওয়ানাহ আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘উসমান বিন মাওহাব আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, জনৈক মিশরীয় মক্কায় এসে হজ সম্পন্ন করার পর দেখতে পেল, কিছু লোক একত্রে বসে আছে। সে বলল, এ লোকজন কারা? তাকে জানানো হলো, এরা কুরাইশ বংশের লোকজন। সে বলল, তাদের মধ্যে শায়খ কে? তারা বলল, ইনি ‘আব্দুল্লাহ বিন ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)। সে ব্যক্তি (তাঁর নিকট এসে) বলল, হে ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার, আমি আপনাকে একটি বিষয়ে জিজ্ঞেস করব; আপনি আমাকে বলুন, আপনি কি এটা জানেন যে, ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) উহুদ যুদ্ধক্ষেত্র হতে পালিয়ে গিয়েছিলেন? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। এরপর সে বলল, আপনি কি জানেন, ‘উসমান বদর যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন? ইবনু ‘উমার উত্তরে বললেন, হ্যাঁ। তারপর সে বলল, আপনি কি জানেন, বাই‘আতে রিদ্বওয়ানেও তিনি অনুপস্থিত ছিলেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। লোকটি বলে উঠল, আল্লাহু আকবার। ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) তাকে বললেন, এস, তোমাকে আসল ঘটনা বলে দেই। ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এর উহুদ যুদ্ধ হতে পালিয়ে যাওয়া সম্পর্কে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাঁকে মাফ করে দিয়েছেন এবং ক্ষমা করেছেন। আর তিনি বদর যুদ্ধে এজন্য অনুপস্থিত ছিলেন যে, নাবী ﷺ এর কন্যা—যিনি হলেন তাঁর স্ত্রী—রোগাক্রান্ত ছিলেন। আল্লাহর রাসূল ﷺ তাঁকে বলেছেন, বদরে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তির সমপরিমাণ সওয়াব ও গনিমতের অংশ তোমার জন্য নির্ধারিত হবে। আর বাই‘আতে রিদ্বওয়ান হতে তাঁর অনুপস্থিতির কারণ হলো, মক্কার বুকে ‘উসমানের চেয়ে সম্ভ্রান্ত অন্য কেউ যদি থাকতো, তবে তাকেই তিনি ‘উসমানের বদলে পাঠাতেন। অতঃপর রাসূল ﷺ ‘উসমানকে মক্কায় পাঠান। আর তাঁর চলে যাবার পর বাই‘আতে রিদ্বওয়ান অনুষ্ঠিত হয়। তখন রাসূল ﷺ তাঁর ডান হাতের প্রতি ঈঙ্গিত করে বললেন, এটি ‘উসমানের হাত। অতঃপর ডান হাত বাম হাতে স্থাপন করে বললেন যে, এ হলো ‘উসমানের বাই‘আত। ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) ঐ লোকটিকে বললেন, তুমি এই জবাব তোমার সঙ্গে করে নিয়ে যাও।”
আমি বলছি, এই মহান সাহাবীর দিকে দেখুন, কীভাবে তিনি ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কে প্রতিরক্ষা করছেন, তারপর তাঁর প্রশংসা করছেন। আর ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র প্রতি হিংসা পোষণকারী লোকটির দিকে দেখুন। ‘উসমানের প্রতি তার বিদ্বেষ থাকা সত্ত্বেও সে ইবনু ‘উমারকে ‘উসমানের আজান প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করেনি। অথচ সে যেসব বিষয় প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করেছে, সেসবের চেয়ে এটাই বেশি স্পষ্ট ও প্রসিদ্ধ। এটা প্রমাণ করে, ওই ব্যক্তির নিকটে এবং উম্মতের নিকটে এ আজান অনুমোদিত বিষয়াদির অন্তর্ভুক্ত ছিল।
ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর ‘সাহীহ’ গ্রন্থে (হা/৩৭০৪) বলেছেন, “মুহাম্মাদ বিন রাফি‘ আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, হুসাইন আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন, যা’ইদাহ থেকে, তিনি আবূ হাসীন থেকে, তিনি সা‘দ বিন ‘উবাইদাহ থেকে। তিনি (সা‘দ) বলেছেন, এক লোক ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এর কাছে এসে ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। তিনি ‘উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এর কতিপয় ভালো গুণ বর্ণনা করলেন। এরপর ইবনু ‘উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) ঐ লোককে বললেন, মনে হয় এটা তোমার নিকট খারাপ লাগছে। সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আল্লাহ তোমাকে অপমানিত করুন! অতঃপর সে ব্যক্তি ‘আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। তিনি তাঁরও কতিপয় ভালো গুণ বর্ণনা করলেন এবং বললেন, ঐ দেখ, তাঁর ঘরটি নাবী ﷺ এর ঘরগুলির মধ্যে অবস্থিত। অতঃপর তিনি বললেন, মনে হয় এ সব কথা শুনতে তোমার খারাপ লাগছে। সে বলল, হ্যাঁ। ইবনু ‘উমার বললেন, আল্লাহ তোমাকে লাঞ্ছিত করুন। যাও, আমার বিরুদ্ধে যত পার করো।”
তোমার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে, ‘উসমান ও তাঁর মতো সম্মাননীয় সাহাবীদের ছিদ্রানুসন্ধানের ক্ষেত্রে তুমি ও তোমার সমমনা লোকগুলো এই দুই লোকের শ্রেণিভুক্ত, এবং তোমরা তাদের দুজনের নিকৃষ্ট মানহাজের ওপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছ। আর সে মানহাজ হলো সাহাবীদের মানমর্যাদার কারণে যেসব বিষয় থেকে দৃষ্টি অবনমিত করতে হয়, সেসব বিষয় অন্বেষণ করা এবং তা প্রচার করা; তাঁদের ভালো গুণ ও সুউচ্চ বৈশিষ্ট্য অনুসন্ধান না করা, যেসবের কারণে তাঁদের প্রশংসা করেছেন বিশ্বজগতের মহান প্রতিপালক এবং তাঁর বিশ্বস্ত সত্যবাদী রাসূল।
ইবনু ‘উমারের দিকে দেখ, কীভাবে তিনি ‘উসমান ও ‘আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)’র প্রশংসা করেছেন এবং তাঁদের বিরোধিতাকারীদের মুখে চপেটাঘাত করেছেন। এটাই হলো বিশুদ্ধ মানহাজ, যার ওপর ন্যায়নিষ্ঠ সালাফগণ (রিদ্বওয়ানুল্লাহি ‘আলাইহিম) চলেছেন। এটাই সেই মানহাজ, যে মানহাজের বিরোধিতাকারীদেরকে তাঁরা নিন্দা করেছেন।
[ক্রমশ চলবে, ইনশাআল্লাহ]
·অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
সালাফী: ‘আক্বীদাহ্ ও মানহাজে
0 Comments