Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

▌বিদ'আতীদের চিনবেন কী করে?

বিদ'আতীদের চিনবেন কী করে?

_______________________________
আসসালামু আলাইকুম
বিদ‘আতীদের চেনার জন্য কিছু আলামত রয়েছে, যেমন
,
১- সাধারণ মুসলিমদের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার মানসিকতা কাজ করা:
কুরআন ও সুন্নাহর নির্দশনা মোতাবেক ঈমানদার ব্যক্তির কাজ হচ্ছে, সে সর্বদা মুসলিমদের সাথে থাকবে, তাদেরকে ইসলাহ করবে, তাদের ভুল ধরিয়ে দিবে, তাদেরকে সঠিক পথে নিয়ে আসার জন্য হক কথা বলবে, তবে দল, উপদল গঠন করবে না। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “নিশ্চয় যারা তাদের দীনকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়েছে আর দলে বিভক্ত হয়েছে, আপনি তাদের কোনো কিছুতে নেই”। [সূরা আল-আন‘আম: ১৫৯] সুতরাং তারা আলাদা আকীদাগত দল বানায় না। তাদের পরিচয় কোথাও আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত, কোথাও আসহাবুল হাদীস, কোথাও ফিরকাতুন নাজিয়াহ, কিন্তু তারা উম্মতকে দলীয়ভাবে ভাগ করে না। এর বিপরীতে শিয়া, রাফেযী, খারেজী, মু‘তাযিলা, কাদারী, জাবরী ইত্যাদি দলে বিভক্ত হওয়া নিন্দনীয় এবং বিদআতী হওয়ার প্রমাণ।

২- প্রবৃত্তির অনুসরণ: কুরআন ও সুন্নাহর শত দলীলও তাদেরকে প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বের করতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “আপনি কি তাকে দেখেননি, যে তার প্রবৃত্তিকে তার ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে আর আল্লাহ তাকে জানার পরে পথভ্রষ্টতায় নিপতিত করেছেন।” [সূরা আল-জাসিয়াহ: ২৩] সুতরাং প্রবৃত্তির সন্তুষ্টির জন্য সে চরমভাবে হককে উপেক্ষা করে। প্রবৃত্তির মোতাবেক হলে নাহককেও সে হক বলতে দ্বিধা করে না, যদিও সে ভালো করেই জানে যে এটা সঠিক পথ নয়। তা না হলে কা‘ব ইবন আশরাফ ইয়াহূদী ধর্মের মত আহলে কিতাবদের অুনসারী হওয়ার দাবী করার পর কীভাবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার অনুসারীদের বিপরীতে মক্কার কাফেরদেরকে বেশি হিদায়াতপ্রাপ্ত বলতে পারে? [সূরা আন-নিসা: ৫১] আজও আমরা দেখি, কেউ কেউ ভালো করেই জানে যে, অমুক ব্যক্তির আকীদা-খারাপ, তাওহীদের পরিপন্থী, তারপরও শুধুমাত্র দলীয় স্বার্থ বিবেচনায় তার আকীদা শুদ্ধ বলতে দ্বিধা করে না।

৩- পথভ্রষ্টতার আরেক নিদর্শন, সহীহ হাদীসের সাথে কুরআনের বিরোধ তুলে ধরা।
অথচ কখনও কুরআন ও সহীহ হাদীসের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হালাল ও হারাম ঘোষণার ক্ষমতা রাখেন। আল্লাহ তা‘আলা তাকে কুরআনের ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি শরী‘আত প্রবর্তনের জন্য তিলাওয়াতবিহীন ওহী প্রদান করেছেন, যার নাম সুন্নাহ। তার সাথে কুরআনের বিরোধ নেই। কিন্তু যারা তাদের কর্মকাণ্ডের বিপরীতে সহীহ সুন্নাহর আমল দেখতে পায় তখনি তা নিয়ে কুরআন বিরোধী প্রমাণের চেষ্টায় লিপ্ত হয়ে যায়।

৪- বিদ‘আতীদের আরেক নিদর্শন হচ্ছে, তারা কুরআনের মুহকাম আয়াতকে মুতাশাাবিহ বানিয়ে ছাড়বে। যা পূর্ববর্তী কোনো আলেম কখনও করেনি, তারা তাদের মত অনুরূপ পথভ্রষ্টদের বক্তব্য নিয়ে সুস্পষ্ট আয়াতসমূহকে অস্পষ্ট আয়াত বানিয়ে দিবে। অথচ তাদেরকে বলা হয়েছিল অস্পষ্ট আয়াতসমূহকে সুস্পষ্ট আয়াতের আলোকে বুঝতে। তারা তার উল্টোটাই করে থাকে। যেমন আল্লাহর নাম ও গুণবাচক আয়াতসমূহকে তারা অস্পষ্ট বলে সেগুলোর হিদায়াত নেওয়া থেকে মাহরূম হয়ে যায়। পূর্ববর্তী কোনো গ্রহণযোগ্য আলেম আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর আয়াতসমূহকে মুতাশাবিহ বা অস্পষ্ট বলেননি।
৫- পথভ্রষ্টতার আরেক নিদর্শন হচ্ছে, কুরআন ও সুন্নাহর অনুসারীদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা, তাদের বিরুদ্ধে লেগে যাওয়া:
আহমাদ ইবন সিনান আল-কাত্তান বলেন, দুনিয়ার সকল বিদ‘আতীরাই হাদীসের অনুসারীদের অপছন্দ করে। আবু হাতেম আর রাযী বলেন, বিদআতীদের আলামত হচ্ছে যারা ‘আসার’ বা কুরআন, হাদীস ও সালাফদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তাদের বিরুদ্ধে লেগে যাওয়া। বর্তমান সময়ে আপনি দেখতে পাবেন এমন লোকদেরকে যারা উম্মতের প্রথম সারির লোকদের সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করে, তাদের ধারণা অনুযায়ী সাহাবায়ে কিরাম, তাবে‘ঈন ও ইমামগণ আল্লাহ সংক্রান্ত আকীদা জানতো না। নাউযুবিল্যাহ। এটিই হচ্ছে, চরম ভ্রষ্টতা। যদি ইয়াহূদীদের জিজ্ঞাসা করেন কারা দীনের বেশি জ্ঞানী, তারা নির্দ্বিধায় বলবে, মূসার সাথীগণ, আর যদি আপনি নাসারাদের জিজ্ঞাসা করেন কারা দীনের বেশি জ্ঞানী, তারা নির্দ্বিধায় বলবে, ঈসার হাওয়ারীগণ, কিন্তু এসব বিদ‘আতীদেরকে আপনি যদি প্রশ্ন করেন এ উম্মতের কারা দীনের বেশি জ্ঞানী, আপনি দেখবেন তারা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথীদের জন্য তা কখনও সাব্যস্ত করবে না। তারা সেটার জন্য গ্রীক দর্শন কিংবা ভারতীয় দর্শনের মত বস্তাপঁচা জিনিসের ধারক-বাহকদেরকে নির্ধারণ করবে।

তাদের অনেকেই সাহাবায়ে কিরামের শানে এমনসব শব্দ ব্যবহার করে যা একজন সত্যিকারের ঈমানদার কখনো মুখে উচ্চারণও করতে পারে না। তাদের কাউকে দেখা যায় মক্কা-মদীনার ইলমে বিশ্বাসী নয়, ভারত কিংবা পাকিস্তানের ইলম তাদের কাছে অগ্রগণ্য। অথচ তারা দুনিয়া লাভের আশায় ঠিকই সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ণচোরার মত ডুব দিয়ে বসে থাকে, সুযোগের অসদ্ব্যবহার করে যায়। সেখানকার আলেমগণের কাছ থেকে তারা আকীাদ গ্রহণ করে না। যদি তারা সত্যবাদি হয় তাবে তারা যেসব কথা বাংলা ভাষায় লিখে যাচ্ছে বলে যাচ্ছে তা তাদের কোনো শাইখকে অবহিত করে সত্যটা খোলাসা করতে পারে। কিন্তু তারা সেটা করবে না; কারণ তারা সকল জ্ঞান নিয়ে মক্কা-মদীনা গিয়েছে সেখানকার বদান্যতার অপচয় করার জন্য। তারা কখনো মাথা তুলে বলার অধিকার রাখে না যে, তারা সেখানকার জ্ঞান অর্জন করেছে। তারা মুনাফিকদের চরিত্র গ্রহণ করে সেখানে অবস্থান করে, আগে যেমন ছিল সেরকম জাহেল হিসেবেই ফিরে আসে।

৬- পথভ্রষ্টদের আরেক নিদর্শন হচ্ছে, তারা আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আকীদাধারীদের বিভিন্ন খারাপ উপাধী দিতে পারদর্শী। আবু হাতেম আর রাযী বলেন, ‘জাহমিয়া হওয়ার আলামত হচ্ছে তারা আহলুস সুন্নাত এর লোকদেরকে মুশাব্বিহা বা দেহবাদী বলবে, তাকদীর অস্বীকারকারীদের আলামত হচ্ছে তারা আহলুস সুন্নাতের লোকদেরকে জাবরিয়া বলবে, মুরজিয়াদের আলামত হচ্ছে তারা আহলুস সুন্নাতের লোকদেরকে বিরোধকারী বলবে, রাফেদ্বী-শিয়াদের আলামত হচ্ছে তারা আহলুস সুন্নাতের লোকদেরকে নাসেবী বলবে, অথচ আহলুস সুন্নাত এর নাম একটিই। এসব নাম তাদের বিপক্ষের লোকদের দেওয়া। আহলুস সুন্নাহ মানেই হাদীস ও সুন্নাহর অনুসারী।’

আজও দেখা যায়, জঙ্গীরা সহীহ আকীদার লোকদেরকে বিভিন্ন খারাপ গুণ প্রদান করে, কেউ বলবে, মুরজিয়া, কেউ বলবে দরবারী, কেউ বলবে তাগুতের দোসর, ইত্যাদি। এসব গুণ কখনও কুরআন, হাদীস ও সালাফে সালেহীনের অনুসারীদের জন্য প্রযোজ্য হবে না। এসব তাদের মিথ্যাচারই থেকে যাবে। তারা সুন্নাত বা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কিরাম, তাবে‘ঈন, ইমামগণের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে রাযী নয়। পূর্ববর্তীদের নীতির বিরোধিতা করে নিজেরা কুরআন ও সুন্নাহর অধিক বুঝার দাবী করে থাকে।

৭- বিদ‘আতীদের আরেক নিদর্শন হচ্ছে, বিদ‘আতপন্থীদের সাথে আপোষ, আর সহীহ আকীদার অনুসারীদের সাথে কঠিন শত্রুতা। কেউ তাদেরকে বলবে ‘হাশওয়িয়্যাহ’ বা সর্বসাধারণ অথবা বোকা বা মাথামোটা, কেউ বলবে মূর্খ, কেউ বলবে যাহেরী মতবাদের অনুসারী। কারণ তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রাপ্ত ইলমকে সত্যিকারের ইলম মনে করে না।
৮- বিদ‘আতীদের আরেক নিদর্শন হচ্ছে, সালাফে সালেহীনের দিকে সম্পর্কযুক্ত হতে নারায হওয়া।
৯- বিদ‘আতীদের আরেক নিদর্শন হচ্ছে, বিরোধী মতের লোকদের সরাসরি কাফের, ফাসেক বলা, গালি-গালাজ করা, ধমকি-হুমকির আশ্রয় নেওয়া।

১০- বিদ‘আতীদের আরেক নিদর্শন হচ্ছে, কথার দাবী দিয়ে মানুষদেরকে আক্রমণ করা। ফেরআউনী কায়দায় লোকদের লেলিয়ে দেওয়া। ফের‘আউন মূসা আলাইহিস সালামকে জিজ্ঞেস করেছিল,
قَالَ فَمَا بَالُ ٱلۡقُرُونِ ٱلۡأُولَىٰ “আগে যারা মরে কবরে চলে গেছে তাদের কী হবে, তারা কী জাহান্নামী?” ফিরআউনের উদ্দেশ্য লোকদেরকে মূসার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলা। আজও কিছু লোকের কুফরী ও শির্কী আকীদা তুলে ধরা হলে দূর অতীতের বিভিন্না বিখ্যাত আলেমগণের কী হবে তা জিজ্ঞাসা করে, যার মাধ্যমে তারা জনগণকে ক্ষেপিয়ে তুলতে চায়। তাদের জাওয়াবে আমরা মূসা আলাইহিস সালামের কথাই বলবো, তিনি বলেছিলেন, عِلۡمُهَا عِندَ رَبِّي فِي كِتَٰبٖۖ لَّا يَضِلُّ رَبِّي وَلَا يَنسَى ٥٢ ‘সেটার জ্ঞান (ইলম) তো আমার রবের কাছে কিতাবে সংরক্ষিত আছে, সেটা তাঁর কাছ থেকে হারিয়ে যাবে না, আর সেটা তিনি ভুলেও যান না।’

সুতরাং কোনো আলেমের ভুলের দোহাই দেওয়া কখনো সঠিক কাজ নয়, যারা বিদ‘আতী তাদের কাজই হচ্ছে সবসময় এ পদ্ধতির অনুসরণ করা। কখনও প্রকাশ্যে বলবে, আবার কখনও অন্তরের কন্দরে তা পোষণ করবে।
আল্লাহ আমাদের অন্তরকে শির্ক, বিদ‘আত ও নিফাক থেকে পবিত্র করুন। আমীন।
__________________________________
লেখক: শাইখ ড:
 Abubakar Muhammad Zakaria হাফিয্বাহুল্লাহ

Post a Comment

0 Comments