·[রহিম রহমান আল্লাহর নামে আরম্ভ
করছি। অত্র নিবন্ধটি মূলত সৌদি আরবের সব্যসাচী বিদ্বান আল্লামা সালিহ বিন আব্দুল
আযিয আলুশ শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ)’র একটি আরবি লেকচার। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শাইখের
আলোচনা খুবই সারগর্ভ ও ফায়দাবহ হওয়ায় আমরা তা বঙ্গীকরণ করে বাঙালি মুসলিম
পাঠকবর্গের করকমলে পেশ করছি। উল্লেখ্য যে, নিবন্ধের পরিচ্ছেদগুলো আমাদের
নিজেদের সংযোজিত, যা তৃতীয় বন্ধনীযোগে লেখা হয়েছে। – অনুবাদক]
·
[পরিচ্ছেদ: তাকদির বিশ্বাস
ইমানের ছয়টি মূলনীতির অন্যতম]
সংক্ষিপ্ত হামদ-সানা ও দরুদ
পাঠের পর:
একবার জিবরাইল আলাইহিস সালাম
প্রিয় নবি মুহাম্মদ ﷺ এর কাছে এসেছিলেন—এক
ব্যক্তির সুরতে। আর নবি ﷺ সাহাবিদের মাঝে বসে ছিলেন। তাঁকে হযরত
জিবরিল কয়েকটি প্রশ্ন করলেন। পরকালে বিশ্বাসী উপস্থিত-অনুপস্থিত সকল মুমিনকে
শিক্ষা দেওয়াই ছিল তাঁর অভিপ্রায়।
হযরত জিবরিল ইসলামের পরিচয় জানতে চাইলেন, আর প্রিয় নবি ﷺ উত্তর
করলেন। জিবরিল বললেন, আপনি সঠিক বলেছেন। আবার প্রশ্ন করলেন। এবারের প্রশ্ন
ইমান সম্পর্কে। ‘আপনি আমাকে ইমান সম্পর্কে কিছু বলুন।’ তিনি প্রত্যুত্তর করলেন, ‘আপনার
বিশ্বাস স্থির থাকবে—আল্লাহ ও ফেরেশতার প্রতি; কিতাব
ও রসুলের প্রতি; পরকাল ও ভাগ্যের ভালোমন্দের প্রতি।’
এ ছয়টি বিশ্বাসই ইমানের মূল।
এসবের প্রতি বিশ্বাসে রয়েছে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি, রয়েছে
মহান রবের কল্যাণের প্রতিশ্রুতি। তাকদির তথা ভাগ্যের ভালোমন্দের প্রতি বিশ্বাস করা
ওই ছয়টির অন্যতম।
·
[পরিচ্ছেদ: তাকদিরের প্রয়োজনীয়তা
ও মানবজীবনে এর প্রভাব]
তাকদির মূলত আল্লাহ সৃষ্ট
মহাজগতের গোপন রহস্য। যেহেতু আদেশ-নিষেধ করার মালিক তিনি এবং সবকিছুর সৃষ্টকারী
তিনি; সেহেতু তাঁর সৃষ্টিতে এমন কিছু থাকতেই পারে, যার
রহস্য সৃষ্টিজগতের অজানা।আল্লাহ কেন এতকিছু সৃষ্টি করেছেন, তা
যদি সৃষ্টিকুল জেনেই যেতো, তাহলে তারা রুবুবিয়্যাতে তাঁর সমকক্ষ হয়ে যেতো। তাই
তাকদির আল্লাহর সৃষ্টির গোপন রহস্য, যে রহস্যের ভেদ কেউ বের করতে
পারবে না।
তাকদির সম্পর্কে ইমাম আহমাদকে
জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জবাব দেন, ‘তাকদির আল্লাহর সৃষ্টির গোপন রহস্য।’ মুসলিম হিসেবে
আমাদের ইমান হবে—আল্লাহ যা ইচ্ছা নির্ধারণ করেছেন, আর
যা কিছু সংঘটিত হচ্ছে তার সবই আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। এ বিষয়ে ইমান রাখা ফরজ।
আরও বিশ্বাস থাকবে, তিনি পূতপবিত্র, মহান, ও
প্রতাপশালী। এ রাজত্ব তাঁরই হাতে রয়েছে, তিনি যেভাবে ইচ্ছা পরিচালনা
করেন। তাকে জিজ্ঞাসা করার কেউ নেই, বরং তাঁর বান্দারাই জিজ্ঞাসিত
হবে।
মানুষের আত্মিক ও সামাজিক
সংস্কারসাধনে তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস অতিব জরুরি। তাই তাদের বিশ্বাস করতে হবে, আল্লাহই
সবকিছুর নির্ধারক, তারা যা পেয়েছে তা কখনো না পাওয়ার ছিল না, আর
যা পায়নি তা কখনো পাওয়ার ছিল না। মানবহৃদয়ে এর প্রভাব যেন ঠান্ডা সুপেয় জলের মতো
প্রশান্তিদায়ক। অদৃষ্টের প্রতি যে ইমান এনেছে, সে আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত সকল
বিষয়ের প্রতি সন্তোষ থাকে। সুখের সময় সে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে, আবার
দুঃখ-দুর্দশায় ধৈর্য ধরে। সে জানে, এগুলোর সবই মহান আল্লাহর পক্ষ
থেকে এসেছে।
আল্লাহ তাঁর বান্দাদের
স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর কাছে সবকিছু নির্ধারিত রয়েছে, সবকিছু
তাঁর নিকট সুনির্ধারিতভাবে (লিখিত) রয়েছে। তিনি বলেছেন, إِنَّا كُلَّ شَىْءٍ خَلَقْنَٰهُ بِقَدَرٍ “আমি প্রত্যেক বস্তুকে
পরিমিতরূপে সৃষ্টি করেছি।” [সুরা কামার: ৪৯] আল্লাহ সব কিছু পরিমিতরূপে সৃষ্টি
করেছেন’– এর অর্থ: তাঁর সৃষ্টি পূর্বনির্ধারিত। আর তাঁর পূর্বনির্ধারণ ভিন্ন কিছুই
সৃষ্টি হয়নি।
তদনুরূপ আরও বলেন, سُنَّةَ ٱللَّهِ فِى ٱلَّذِينَ خَلَوْا۟ مِن قَبْلُۚ وَكَانَ أَمْرُ ٱللَّهِ قَدَرًا مَّقْدُورًا “তাঁর কোনো বাধা নেই পূর্ববর্তী
নবিগণের ক্ষেত্রে, এটাই ছিল আল্লাহর চিরাচরিত বিধান। আল্লাহর আদেশ নির্ধারিত, অবধারিত।”
[সুরা আহযাব: ৩৮]আরও বছেলেন, ثُمَّ
جِئْتَ
عَلَىٰ
قَدَرٍ
يَٰمُوسَىٰ “হে মুসা, তুমি
নির্ধারিত সময়ে এসেছ।” [সুরা তাহা: ৪০] এর অর্থ হচ্ছে—তোমার
আগমন আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল। এভাবে তোমার আগমনে আর (আল্লাহর সাথে) সাক্ষাতে
রয়েছে মহান আল্লাহর হিকমাহ ও অফুরন্ত কল্যাণ। (নবি মুসার) সুবিস্তৃত ও সুবিদিত
ঘটনাটি সুরা কাসাস-সহ অন্যান্য সুরাতে আলোচিত হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা আত্মপ্রসংশা করে
বলেছেন, تَبَارَكَ ٱلَّذِى
نَزَّلَ
ٱلْفُرْقَانَ
عَلَىٰ
عَبْدِهِۦ
لِيَكُونَ
لِلْعَٰلَمِينَ
نَذِيرًا-
ٱلَّذِى
لَهُ
مُلۡكُ
ٱلسَّمَٰوَٰتِ
وَٱلۡأَرۡضِ
وَلَمۡ
يَتَّخِذۡ
وَلَدًا
وَلَمۡ
يَكُن
لَّهُ
شَرِيكٌ
فِى
ٱلۡمُلۡكِ
وَخَلَقَ
كُلَّ
شَىۡءٍ
فَقَدَّرَهُۥ
تَقۡدِيرًا “তিনি কত মহান, যিনি
তাঁর বান্দার ওপর বিশ্ববাসীর পথনির্দেশস্বরূপ ফুরকান (কুরআন) নাজিল করেছেন। আসমান
জমিনের রাজত্ব তো তাঁরই, তিনি কোনো সন্তান গ্রহণ করেননি, আর
তার রাজত্বেও কোনো অংশী নেই। তিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন এবং তা পরিমিত করেছেন।”
[আল ফুরকান: ১-২]
কুরঅানে মহান আল্লাহ যে সংবাদ
দিয়েছেন, তা সত্যায়ন করা এবং তাতে স্থির বিশ্বাস রাখা আমাদের জন্য
অত্যাবশ্যক। কেননা তা সম্পর্কে কেবল তিনিই সম্যক অবগত আছেন। এ বিশ্বাস অন্তরে
স্থাপন করা আমাদের জন্য অবধারিত। নিয়তির ওপর স্থির বিশ্বাস, আমাদেরকে
ধাবিত করবে আল্লাহর বিশ্বাসের দিকে। এখানে একটি সুবিদিত বিষয় হচ্ছে, তাকদিরের
ওপর ইমান আনা ওয়াজিব—এ মর্মে কুরআনে সুস্পষ্ট আয়াত বর্ণিত হয়নি। মূলত তা এসেছে
হাদীসে। কিন্তু এ ব্যাপারে কুরআনের আয়াত রয়েছে।
কুরআনে তা ইমানের রুকনসমূহের
মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, ءَامَنَ
ٱلرَّسُولُ
بِمَآ
أُنزِلَ
إِلَيۡهِ
مِن
رَّبِّهِۦ
وَٱلۡمُؤۡمِنُونَۚ
كُلٌّ
ءَامَنَ
بِٱللَّهِ
وَمَلَٰٓئِكَتِهِۦ
وَكُتُبِهِۦ
وَرُسُلِهِ “রসুলের ওপর তাঁর রবের পক্ষ হতে
যা নাজিল হয়েছে, তার ওপর তিনি বিশ্বাস রাখেন, আর
মুমিনরাও বিশ্বাস রাখেন। সকলেই বিশ্বাস রাখেন, আল্লাহ, তাঁর
ফেরেশতাবর্গ, কিতাবসমূহ ও রসুলগণের প্রতি।” [সুরা
বাকারা: ২৮৫]
অতএব ভাগ্যের বিশ্বাস আমাদের
আল্লাহর বিশ্বাসের দিকে ধাবিত করে। কেননা মহান আল্লাহই সবকিছু পরিচালনা করেন, সমস্ত
কিছুর ক্ষমতা তাঁর হাতে, পুরো সৃষ্টিজগতের স্রষ্টা তিনি, আর
তাতে তিনি যা চান তাই হয়, তিনি না চাইলে কিছুই হয় না। এ ধরনের বিশ্বাস আল্লাহ
প্রতি ইমানের অন্তর্ভুক্ত। আর এটাই ইমান বিল কদরের প্রকৃতত্ব। একারণে নবি
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসে তাকদিরের বিশ্বাসকে ইমানের মাঝে শামিল
করা হয়েছে। বলা বাহুল্য, হাদিস কুরঅানের ব্যাখ্যাস্বরূপ। যে কুরঅানের
বর্ণনানুযায়ী ইমান রাখতে হবে, আল্লাহ সব কিছু সুনির্ধারিতভাবে এবং পরিমিতরূপে
সৃষ্টি করেছেন।
·
[পরিচ্ছেদ: তাকদিরের প্রতি ইমান
আনয়নের পদ্ধতি]
তাকদির বা নিয়তির ওপর বিশ্বাস
বলতে আমরা আসলে কী বুঝাই? আমরা—আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত—যখন
বলি, আল্লাহর নির্ধারিত তাকদিরের প্রতি আমরা বিশ্বাস করি, এ
কথার দ্বারা আমাদের উদ্দেশ্য কী?
[চলতি পরিচ্ছেদের ১ম ধাপ: আল্লাহ
অতীত ও ভবিষ্যতের সকল বিষয়ই জানেন]
এর দ্বারা আমরা বোঝাই, আল্লাহ
সমস্ত বিষয় সম্পর্কে সম্যক অবগত আছেন। সৃষ্টি করার এবং (যে কোনো কিছু) সংঘটিত
হওয়ার আগে থেকেই তিনি সবকিছু জানেন। তাঁর জ্ঞান চিরন্তন। অর্থাৎ আদি। তিনি
পূর্বাপরের সবকিছুই জানেন। যা হয়নি তা জানেন। তা যদি হতোই তাহলে কীভাবে হতো সেটাও
জানেন। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেছেন, وَلَوْ
عَلِمَ
ٱللَّهُ
فِيهِمْ
خَيْرًا
لَّأَسْمَعَهُمْۖ
وَلَوْ
أَسْمَعَهُمْ
لَتَوَلَّوا۟
وَّهُم
مُّعْرِضُونَ “বস্তুত আল্লাহ যদি তাদের মধ্যে
কিছুমাত্র শুভ চিন্তা জানতেন, তবে তাদেরকে শুনিয়ে দিতেন। আর এখনই যদি তাদের শুনিয়ে
দেন, তবে তারা মুখ ঘুরিয়ে পালিয়ে যাবে।” [সুরা আনফাল: ২৩] সুতরাং
যা হয়নি তাও তিনি জানেন। আর যদি হতো, যদি তিনি তাদের শুনিয়ে দিতেন, তাহলে
কেমন হতো তখনকার অবস্থা? তারা সবাই পৃষ্ঠপ্রদর্শন করত।
অতএব ভাগ্যের প্রতি বিশ্বাসের
মানে হচ্ছে, আপনি বিশ্বাস করবেন, আসমান জমিন সৃষ্টির পূর্ব থেকে
আল্লাহ সবকিছু জানেন, আপনার সামনে যা হচ্ছে তাও তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞান আদি
ও চিরন্তন, যার কোনো শুরু বা আরম্ভ নেই। কেননা আল্লাহর সত্ত্বাগত গুণ
হচ্ছে তিনি সবকিছু জানেন। এ কারণে তিনি নিজের প্রশংসা করে বলেছেন,وَٱللَّهَ بِكُلِّ شَىْءٍ عَلِيمً “আল্লাহ সবকিছু সম্পর্কে অবগত।”
তিনি আরও বলেন, إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ
بِكُلِّ
شَىْءٍ
عَلِيمًا “নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু সম্পর্কে অবগত রয়েছেন।” [সূরা
নিসা-৩২]
এখানে ‘সবকিছু (بِكُلِّ
شَىْء)’ কথাটির
মানে, সব তথ্যের জ্ঞান তাঁর আছে। বর্তমানে যে তথ্যাবলি রয়েছে ও
ভবিষ্যতে যা হবে, তার সবই তিনি জানেন এবং তা কীভাবে হবে তাও জানেন। এগুলো তার
জ্ঞানের পূর্ণতা এবং তাঁর নাম ও গুণাবলির মাহাত্ম্য ও সৌন্দর্য।
আল্লাহ তায়ালা সবকিছু সম্পর্কে
অবগত, যে ব্যাপারে তিনি স্বীয় গুণ বর্ণনা করে বলেন, “আল্লাহ
সবকিছু সম্পর্কে জ্ঞাত রয়েছেন।” ‘সবকিছু’ কথাটি আম তথা ব্যাপক। তাই কোনো জ্ঞান এ
পরিব্যাপ্তির বাইরে নয়। আল্লাহ মূখ্য এবং গৌণ উভয়ই জানেন। তাঁর কাছে কোনো কিছু
গোপনীয় নয়। তিনি বলেন, وَمَا
تَكُونُ
فِى
شَأْنٍ
وَمَا
تَتْلُوا۟
مِنْهُ
مِن
قُرْءَانٍ
وَلَا
تَعْمَلُونَ
مِنْ
عَمَلٍ
إِلَّا
كُنَّا
عَلَيْكُمْ
شُهُودًا
إِذْ
تُفِيضُونَ
فِيهِ “বস্তুত যে কোনো অবস্থাতেই তুমি থাক এবং কুরআনের যে
কোনো অংশ থেকেই পাঠ কর কিংবা যে কোনো কাজই তোমরা করো, আমি
তোমাদের নিকটে উপস্থিত থাকি, যখন তোমরা তাতে আত্ননিয়োগ করো।” [সুরা ইউনুস: ৬১]
সবকিছু সম্পর্কে তিনি জ্ঞাত, এ জ্ঞান সৃষ্টি-পূর্ব থেকেই তাঁর আছে।
আল্লাহ তায়ালা আসমান-জমিন এবং
তামাম বিশ্বজগত সৃষ্টি করতে চাইলেন, তখন তার পূর্বজ্ঞান অনুসারে
কলমকে লিখতে আদেশ দিলেন। তাই কলম আসমান-জমিন সৃষ্টির পূর্বেই তামাম সৃষ্টিকুলের
ভাগ্য লিখে ফেলল। ভাগ্য লেখার পর আল্লাহ তায়ালা তা বাস্তবায়ন করতে চাইলেন। তিনি
সৃষ্টি করলেন এবং তাঁর ইচ্ছামতো সবকিছু বাস্তবায়ন করলেন। এরই সর্বপ্রথম বাস্তবতা
হচ্ছে আসমান-জমিন সৃষ্টি, যা আমরা প্রত্যক্ষ করি এবং জানি। তাছাড়া আল্লাহর
কাজের কোনো সীমানা ও সূচনা নেই।
সৃষ্টিকুল যা করে আল্লাহ তা
জানেন। আর তিনি তা কিতাবে লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি কুরঅানে উল্লেখ করেছেন, وَإِنَّهُۥ فِىٓ أُمِّ ٱلْكِتَٰبِ لَدَيْنَا لَعَلِىٌّ حَكِيمٌ “নিশ্চয় এ কুরআন আমার কাছে
সমুন্নত এবং প্রতিষ্ঠিত রয়েছে।” [সুরা যুখরুফ: ৪] এর মানে তা লাওহে মাহফুজে
লিপিবদ্ধ আছে। তিনি আরও বলেন, يَمْحُوا۟
ٱللَّهُ
مَا
يَشَآءُ
وَيُثْبِتُۖ
وَعِندَهُۥٓ
أُمُّ
ٱلْكِتَٰبِ “আল্লাহ যা ইচ্ছা মিটিয়ে দেন এবং
বহাল রাখেন। আর মূলগ্রন্থ তাঁর কাছেই রয়েছে।” [সুরা রাদ: ৩৯] এরও অর্থ, তাঁর
নিকটেই রয়েছে লাওহে মাহফুজে।
তিনি আরও বলেন, أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ ٱللَّهَ يَعْلَمُ مَا فِى ٱلسَّمَآءِ وَٱلْأَرْضِۗ إِنَّ ذَٰلِكَ فِى كِتَٰبٍۚ“তুমি কি জান না যে, আল্লাহ
জানেন, যা কিছু আকাশে ও জমিনে আছে, এগুলোর
সবই কিতাবে লিখিত রয়েছে?” [সূরা হাজ: ৭০] এর মানে আগামীতে আসমান-জমিনে যা কিছু হবে
তা আল্লাহ জানেন। এ দুয়ের মধ্যে যা রয়েছে তাও কিতাবে লিখিত রয়েছে। বলা হয়েছে, إِنَّ ذَٰلِكَ فِى كِتَٰبٍۚ “নিশ্চয় তা কিতাবে রয়েছে।” এই
লেখা এবং জানা আল্লাহর পক্ষে অতীব সহজ। তিনি বলেছেন, إِنَّ ذَٰلِكَ فِى كِتَٰبٍۚ إِنَّ ذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرٌ “নিশ্চয় তা কিতাবে রয়েছে, আর
এটা আল্লাহর নিকটে অতি সহজ।” [সুরা হাজ: ৭০]
মূলত কিতাব লেখা হয়ে গেছে, পৃষ্ঠা
শুকিয়ে গেছে এবং কলম উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। আল্লাহ সৃষ্টিকুলের সব কর্মাবলি লিপিবদ্ধ
করেছেন। তিনি যা লিপিবদ্ধ করেছেন তা তাঁর পূর্ব থেকে জানা ছিল। তাঁর লেখাও সৃষ্টির
পূর্বেকার। এটা তাকদিরে বিশ্বাসের প্রথম স্তর।
·
[২য় ধাপ: আল্লাহ পুরো
সৃষ্টিজগতের ভাগ্য লিখে রেখেছেন]
আপনি যখন স্থিরভাবে জানবেন, আল্লাহ
মৌল ও গৌননসহ নভোমণ্ডল এবং ভূমণ্ডলে উপস্থিত সামগ্রিক বিষয়ে পরিজ্ঞাত, তখন
আপনার অন্তর প্রশান্তি লাভ করবে। নবি ﷺ আসমান-জমিন
সৃষ্টির পূর্বের অবস্থা বয়ান করেছেন—যার পরে ভাগ্য লেখা হয়। অতঃপর আসমান
জমিন সৃষ্টি করা হয়। আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস কর্তৃক বর্ণিত, নবি
ﷺ বলেন, كتب الله مقادير الخلائق قبل أن يخلق السمٰوات و الأرض بخمسين ألف سنة “আল্লাহ আসমান-জমিন সৃষ্টির
পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে তামাম সৃষ্টিকুলের ভাগ্য লিপিবদ্ধ করেন।” [সহিহ মুসলিম, হা/২৬৫৩; তাকদির
অধ্যায় (৪৭); পরিচ্ছেদ- ২]
আসমান জমিন সৃষ্টির পূর্ব থেকে
আল্লাহ তায়ালা তাদের বর্তমান ও ভবিষ্যতের সমুদয় কার্যকলাপ সম্বন্ধে অবগত আছেন। আর
সবই তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন, যেগুলো তাঁর নিকটে কিতাবে সংরক্ষিত রয়েছে। এ কথার
প্রমাণ আছে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জাতের কালামে, وَلَا
تَعۡمَلُونَ
مِنۡ
عَمَلٍ
إِلَّا
كُنَّا
عَلَيۡكُمۡ
شُهُودًا
إِذۡ
تُفِيضُونَ
فِيهِۚ
وَمَا
يَعۡزُبُ
عَن
رَّبِّكَ
مِن
مِّثۡقَالِ
ذَرَّةٍ
فِى
ٱلۡأَرۡضِ
وَلَا
فِى
ٱلسَّمَآءِ
وَلَآ
أَصۡغَرَ
مِن
ذَٰلِكَ
وَلَآ
أَكۡبَرَ
إِلَّا
فِى
كِتَٰبٍ
مُّبِينٍ “তোমরা যে কাজই করো, আমার
কাছে সব কিছুরই খবর থাকে, যখন তোমরা সেই কাজ করতে শুরু করো। অণু পরিমাণ কোনো
বস্তুও তোমার প্রতিপালকের (জ্ঞানের) অগোচর নয়, না জমিনে, আর
না আসমানে। তার চেয়ে ক্ষুদ্রতর কিংবা বৃহত্তর, সমস্তই সুস্পষ্ট কিতাবে
লিপিবদ্ধ রয়েছে।” [সুরা ইউনুস: ৬১] সব কিছু লেখা আছে। আল্লাহ তায়ালা কলম তৈরি করে
তাকে এসব লিখতে আদেশ করেছেন।
·
[৩য় ধাপ: পুরো বিশ্বজগতে আল্লাহর
ইচ্ছার বাইরে সামান্য নড়াচড়াও হয় না]
আপনি যখন বিশ্বাস করছেন, আল্লাহ
সব জানেন এবং সব কিছু লিপিবদ্ধ করেছেন, তখন এ ব্যাপারে আপনার আরও
বিশ্বাস হবে—আল্লাহর ইচ্ছার কোনো কূলকিনারা নেই, তিনি
রাজার রাজা, তিনি প্রতিপালক, তাঁর কর্মাবলি অসীম, তাতে
কোনো কমতি নেই। তাঁর নির্দেশ ও ইচ্ছা বাস্তবায়িত হবেই। আপনি আরও জেনে রাখবেন যে, তিনি
যা চান তা-ই হয়, তিনি যা চান না তা কখনো হয় না। এ বিশ্বাসের ফলে, আপনার
অন্তর গাইরুল্লাহর (তথা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কিছুর) দিকে ঝুঁকে পড়বে না এবং তাদের
কাছে আশাও রাখবে না। কেননা আল্লাহ যা চান তা হবেই এবং তিনি যা না চান তা কখনো হবে
না। এ বিশ্বাসে আপনার অন্তর আল্লাহর দিকে ঝুঁকে যাবে।
তাঁর হুকুমের ক্ষেত্রে তাঁর কি
কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী আছে? তাঁর রাজত্ব কি কেউ পরাভূত করতে পারে? অবশ্যই
তাকে কেউ পরাভূত করতে পারে না। তিনি যা চান তাই হয়, তিনি
যা চান না তা হয় না। আল্লাহ নিজেকে যে গুণ থেকে মুক্ত করেছেন এবং যে গুণে
গুণান্বিত করেছেন, আপনি তাই বিশ্বাস করুন। আল্লাহ বলেন, وَمَا تَشَآءُونَ إِلَّآ أَن يَشَآءَ ٱللَّهُۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا “তোমরা আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে
কোনো ইচ্ছা করতে পার না। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।” [সুরা ইনসান: ৩০]
তিনি আরও বলেন, وَمَا تَشَآءُونَ إِلَّآ
أَن
يَشَآءَ
ٱللَّهُ
رَبُّ
ٱلۡعَٰلَمِينَ “তোমরা জগতসমূহের প্রতিপালক
আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে কোনো ইচ্ছা করতে পারবে না।” [সুরা তাকবির: ২৯] আল্লাহর ইচ্ছা
হয় বাস্তবায়িত এবং তা অপরাভূত।
আল্লাহ বলেছেন, وَلَا تَقُولَنَّ لِشَا۟ىۡءٍ إِنِّى فَاعِلٌ ذَٰلِكَ غَدًا - إِلَّآ أَن
يَشَآءَ
ٱللَّهُۚ
وَٱذۡكُر
رَّبَّكَ
إِذَا
نَسِيتَ“আপনি কোনো কাজের বিষয়ে বলবেন না যে, সেটি
আমি আগামী কাল করব, ‘আল্লাহ ইচ্ছা করলে’ বলে বলতে পারেন। আর যখন ভুলে যান, তখন
আপনার পালনকর্তাকে স্মরণ করুন।” [সুরা কাহাফ: ২৩-২৪]আল্লাহর ইচ্ছার ব্যাপারে আপনার
অন্তরকে প্রশান্ত রাখুন। তাঁর ইচ্ছা বাস্তবায়িত হবেই হবে। আপনি যে কাজই করেন না
কেন, আল্লাহ না চাইলে তা ফলপ্রসূ না। এ সত্ত্বেও আপনার উচিত কাজ
করে যাওয়া। কেননা ভবিষ্যতে মহান আল্লাহর ইচ্ছা কী, সে
ব্যাপারে আপনি পুরোদস্তর অজ্ঞ। তাই আপনার উচিত কাজ সম্পাদন করা এবং আল্লাহর নিকটে
তৌফিক কামনা করা। অনন্তর আল্লাহ চাইলে তা হবেই। কেননা তাঁর কর্তৃত্বকে পরাভূত করার
সাধ্য কারও নেই।
·
[৪র্থ ধাপ: আল্লাহ সবকিছুর মহান
স্রষ্টা, বান্দার কর্মাবলিও তাঁর সৃষ্টির বাইরে নয়]
আপনি আরও স্থিরভাবে জানবেন যে, আপনি
যত মাখলুক দেখছেন, সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ। তিনি বলেছেন, هَلۡ مِنۡ خَٰلِقٍ غَيۡرُ ٱللَّهِ “আল্লাহ ব্যতীত এমন কোনো
স্রষ্টা আছে কি?” [সুরা ফাতির: ৩] নেই, কারণ সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা
তিনিই। আল্লাহ আরও বলেন, ٱللَّهُ
خَٰلِقُ
كُلِّ
شَىۡءٍۖ
وَهُوَ
عَلَىٰ
كُلِّ
شَىۡءٍ
وَكِيلٌ“আল্লাহ সবকিছুর স্রষ্টা এবং তিনি সবকিছুর দায়িত্ব
গ্রহণ করেন।” [সুরা যুমার: ৬২] ‘আল্লাহ সবকিছু সৃষ্টি করেছেন’– এর মানে—তিনি
ব্যতীত সবকিছুই মাখলুক তথা সৃষ্ট। আপনি যত মাখলুক দেখছেন, সবকিছুর
মহান স্রষ্টা তিনিই। তিনি ছাড়া কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই। স্বয়ং বান্দা, কিংবা
বান্দার কর্মাবলি, উদ্ভাবন ও অনুভূতি প্রভৃতির সবই আল্লাহর সৃষ্টি। কারণ তিনি
সমুদয় বিষয় সৃজন করেছেন।
আপনি যখন নিশ্চিত জানবেন, আল্লাহই
সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা; সবকিছু তাঁরই নির্দেশে হয়েছে, সৃষ্টি
ও নির্দেশ তাঁরই, অন্য কারও নয়, তখন আপনার অন্তরের বিশ্বাস হবে
বিশুদ্ধ-নির্মল। এমতাবস্থায় আপনার হৃদয়পট থেকে গাইরুল্লাহ-প্রীতি নিশ্চিহ্ন হয়ে
যাবে। ফলে আপনার প্রীতি ও ভালোবাসা স্থির হবে স্রেফ আল্লাহর জন্য।
·
[পরিচ্ছেদ: আহলুস সুন্নাহর
তাকদির বিশ্বাসের সারাংশ বা একনজরে তাকদির বিশ্বাসের স্তরবিন্যাস]
তাকদিরের প্রতি আহলুস সুন্নাহ
ওয়াল জাম‘আতের আকিদা-বিশ্বাসের সারসংক্ষেপ হচ্ছে, আল্লাহ
সবকিছু জানেন, তিনি আসমান-জমিন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে সবকিছুর
ভাগ্য লিপিবদ্ধ করেছেন, তাঁর সমস্ত ইচ্ছা বাস্তবায়িত হবে এবং তিনি সবকিছুর
সৃষ্টিকারী। এমনকি আপনি যে কাজকর্ম করছেন তারও সৃষ্টিকর্তা তিনি। এভাবে সকল
মানুষের সব কাজকর্মের একমাত্র স্রষ্টা তিনি। কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন,ٱللَّهُ خَٰلِقُ كُلِّ شَىۡءٍ “আল্লাহ সবকিছুর স্রষ্টা।” [সুরা
যুমার: ৬২]
[অনুবাদকের টীকা: মাআলিশ শাইখ
আল্লামা সালিহ আলুশ শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ) সহজবোধ্য করে এতক্ষণ যে নাতিদীর্ঘ আলোচনা
করেছেন, তার সারসংক্ষেপও সরল ও সুন্দর ভঙ্গিতে আলোকপাত করেছেন। পাঠক
মহোদয় যাতে উক্ত আলোচনা সহজে মনে রাখতে পারেন, সেজন্য আমরা এখানে ইমাম সালিহ
আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ)’র একটি সংক্ষিপ্ত উক্তি উল্লেখ করছি। ইমাম ফাওযান
বলেছেন, “আমরা তাকদিরের ভালো-মন্দের প্রতি বিশ্বাস করি। আর তাকদিরের
প্রতি বিশ্বাস চারটি স্তরকে শামিল করে। যথা:
১ম স্তর: এই বিশ্বাস পোষণ করা
যে, পূর্বে যা হয়েছে এবং আগামীতে যা হবে, আল্লাহ
তা জানেন। আসমান ও জমিনের কোন কিছুই তাঁর কাছে গোপনীয় নয়। অতীতের ও ভবিষ্যতের যে
অদৃশ্য বিষয়াবলি রয়েছে, তারও কোন কিছু তাঁর কাছে গোপনীয় নয়। এগুলোর সবকিছুই
মহান আল্লাহর জ্ঞানে সমান স্তরের।
২য় স্তর: এ বিশ্বাস পোষণ করা যে, মহান
আল্লাহ তা লাওহে মাহফুজে লিখে রেখেছেন। লাওহে মাহফুজে তিনি সবকিছুর তাকদির লিখে
রেখেছেন। যেমন হাদীসে এসেছে, ‘আল্লাহ সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করে তাকে আদেশ করেন:
লিখ। কলম বলল, কী লিখব? তিনি বললেন: তাকদির লিখ, যা
হয়েছে এবং অনন্তকাল পর্যন্ত যা হবে সবকিছুই।’ (আবু দাউদ, হা/৪৭০০; তিরমিযি, হা/২১৫৫; সনদ:
সহিহ; শব্দ তিরমিযির)
সুতরাং আমরা বিশ্বাস পোষণ করব, যা
কিছু চলছে এবং যা কিছু ঘটছে তার সবকিছুই আল্লাহ জানেন। আর আল্লাহ তা লাওহে মাহফুজে
লিখে রেখেছেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, ‘জমিনে এবং তোমাদের নিজেদের
মধ্যে এমন কোনো আপদ আপতিত হয় না, যা আমি সংঘটিত করার পূর্বে কিতাবে লিপিবদ্ধ করিনি।
নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজ।’ (সুরা হাদিদ: ২২)
সবকিছুই লাওহে মাহফুজে লিখিত
আছে। কোনো কিছুই এর বিপরীত হয়নি। সৃষ্টিজগতের ভাগ্য এবং লাওহে মাহফুজে ভাগ্যের
লিখন আসমান-জমিন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বেই সম্পন্ন হয়েছে। যেমনটি নবি ﷺ থেকে
বিশুদ্ধ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। এমন কিছুর অস্তিত্ব নেই, যা
লাওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ হয়নি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অবশ্যই
আমি জানি, মাটি তাদের থেকে যতটুকু ক্ষয় করে। আর আমার কাছে আছে অধিক
সংরক্ষণকারী কিতাব।’ (সুরা কাফ: ৪)
৩য় স্তর: এ বিশ্বাস পোষণ করা যে, সবকিছুর
ব্যাপারেই মহান আল্লাহর ইরাদাহ এবং ব্যাপক ইচ্ছা রয়েছে। আল্লাহ যখন তাঁর সৃষ্টিগত
ইচ্ছার মাধ্যমে কোনো কিছুর ইচ্ছা করবেন, তখন অবশ্যই তা সংঘটিত হবে। আর
সৃষ্টিজগতে কোনো কিছুই মহান আল্লাহর ইচ্ছা ও নিয়ন্ত্রণ ছাড়া ঘটে না।
৪র্থ স্তর: সর্বশেষ স্তর—এ বিশ্বাস
পোষণ করা যে, সবকিছুই মহান আল্লাহর মাখলুক তথা সৃষ্টি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ
সবকিছুর স্রষ্টা এবং তিনি সবকিছুর তত্ত্বাবধায়ক।’ (সুরা যুমার: ৬২) সৃষ্টিজগতে যা
কিছু হয়েছে এবং আগামীতে যা হবে, তার সবই মহান আল্লাহর সৃষ্টি ও উদ্ভাবনের
অন্তর্ভুক্ত। কেউই সৃষ্টিজগতের কোনো কিছু উদ্ভাবন করতে পারে না। আর কেউই
সৃষ্টিজগতের কোনো কিছু সৃষ্টি করতে পারে না, কেবল আল্লাহ ছাড়া।” দ্রষ্টব্য:
মুজমালু আকিদাতিস সালাফিস সালিহ; পৃষ্ঠা: ২৯-৩১; দারুল মিরাসিন নাবাউয়ি, আলজিয়ার্স
কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪৩৩ হি./২০১২ খ্রি. (২য় প্রকাশ)। টীকা সমাপ্ত]
·
[পরিচ্ছেদ: ক্বাদা (ফায়সালা) ও
কদরের (ভাগ্যের) মধ্যকার পার্থক্য]
এখন আমাদের জানতে হবে, قَضَاء (ফায়সালা) ও قَدَر (তাকদির)
এর মধ্যে পার্থক্য কী?
আমরা বলি, এটা
আল্লাহর ফায়সালা। আবার বলি, এটা আল্লাহর নির্ধারণ (তাকদির)। এ দুটির মধ্যে
পার্থক্য কী? এদের পার্থক্য আমাদের জানতে হবে। পার্থক্য না জানলে কুরআন
হাদিসের অনেক ক্ষেত্রে এ দুটোর মাঝে সংমিশ্রণ তৈরি হতে পারে।
এ ব্যাপারে আলেমগণ অনেক মত পেশ
করেছেন। তন্মধ্যে বিশুদ্ধ মত হচ্ছে, তাকদির হচ্ছে (সবকিছুর)
অগ্রগামী ও ভিত্তি। আর ফায়সালা ওই তাকদিরেরই বাস্তবায়িত রূপ। অর্থাৎ আল্লাহর
তাকদির অগ্রগামী, এবং তার যে বাস্তবায়ন হবে তা-ই ফায়সালা। আল্লাহর ফায়সালা বা
বাস্তবায়নের স্বরূপ তাঁর বাণীতে উল্লিখিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, فَلَمَّا قَضَيۡنَا عَلَيۡهِ ٱلۡمَوۡتَ“যখন আমি সোলায়মানের মৃত্যু
ঘটালাম (ফায়সালা করলাম)।” [সুরা সাবা: ১৪] কাজটি সম্পাদন করা (ফায়সালা করা) মানে
শেষ হয়ে যাওয়া। সেক্ষেত্রে কাজটি সম্পাদনের পূর্বে থাকে তাকদির, আর
সম্পাদন হয়ে গেলেই সেটা হয়ে যায় ফায়সালা (ক্বাদা)।
ক্বাদা (قضاء) শব্দটি
কুরআনে কয়েকটি অর্থে এসেছে। যেমন, ক্বাদা মানে ওহি। আল্লাহ বলেছেন, وَقَضَيۡنَآ إِلَيۡهِ ذَٰلِكَ ٱلۡأَمۡرَ أَنَّ دَابِرَ هَٰٓؤُلَآءِ مَقۡطُوعٌ مُّصۡبِحِينَ “আমি লুতকে এ বিষয় জানিয়ে দেই যে, সকাল
হলেই তাদেরকে সমূলে বিনাশ করে দেওয়া হবে।” [সুরা হিজর: ৬৬] এখানে ‘ক্বাদায়না
ইলাইহি’র মানে আমি তার নিকটে ওহি করি বা তাকে সংবাদ দিই। আবার قضاء শব্দটি إلى প্রসর্গ
(preposition) যোগে সকর্মক ক্রিয়া (transitive verb) হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। যার অর্থও ওহি করা বা সংবাদ দেওয়া।
যেমন আল্লাহ বলেছেন, وَقَضَيۡنَآ إِلَىٰ بَنِىٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ فِى ٱلۡكِتَٰبِ لَتُفۡسِدُنَّ فِى ٱلۡأَرۡضِ مَرَّتَيۡنِ وَلَتَعۡلُنَّ عُلُوًّا كَبِيرًا “আমি কিতাবের মধ্যে বনি ইসরাইলকে
জানিয়ে দিয়েছি যে, তোমরা পৃথিবীর বুকে দুবার ফাসাদ সৃষ্টি করবে এবং অত্যন্ত
বড়ো ধরনের অবাধ্যতায় লিপ্ত হবে।” [সুরা বনি ইসরাইল: ৪] এখানে ‘ক্বাদাইনা ইলা’র
মানে ভবিষ্যতে যা হবে সে সম্পর্কে সংবাদ দেওয়া। এ অর্থও পূর্বোদ্ধৃত ‘ক্বাদা’র
সমার্থবোধক। কেননা ফায়সালাকৃত বিষয়ের সংবাদপ্রদান মূলত ঘটিতব্য বিষয়ের সংবাদ
দেওয়ার নামান্তর।
আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আমি
কিতাবের মধ্যে বনি ইসরাইলকে জানিয়ে দিয়েছি যে, তোমরা পৃথিবীর বুকে দুবার
ফাসাদ সৃষ্টি করবে।’ অর্থাৎ ফাসাদ সৃষ্টি হবে। কিন্তু ঘটিতব্য ফায়সালা। সেজন্য
মহান আল্লাহ এ সংবাদ দিয়েছেন। ফলে শুধু ‘জানানো (إخبار)’ শব্দ
ব্যবহারের চেয়ে ‘ক্বাদা’ শব্দ ব্যবহার করে সংবাদ দেওয়া অধিক অর্থবহ হয়; যেভাবে
উক্ত আয়াতটিতে ব্যবহৃত হয়েছে। কেননা এটা এমন সংবাদ, যা
অচিরেই সংঘটিত হবে। আর আল্লাহ বলেছেন, لَا
مُعَقِّبَ
لِحُكۡمِهِ “তাঁর আদেশ রদ করার কেউ নেই।”
[সুরা রাদ: ৪১] এটি একটি প্রকার। কিন্তু এটা ওই ক্বাদা শব্দের অর্থজ্ঞাপক নয়, যেটা
তাকদির শব্দের সাথে জড়িত থাকে।
উক্ত আলোচনাতে ক্বাদা ও
তাকদিরের পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে গেল। তাকদির হলো পূর্বরূপ, আর
ক্বাদা সেই তাকদিরেই বাস্তবায়ন। এখানে উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, আপনি
জানেন না, আল্লাহ আপনার জন্য কী নির্ধারণ করেছেন এবং আগামীকাল আপনি কী
করবেন? তবুও আগামীকাল আপনি আপনার কাজে যাবেন, অথবা
কলেজে যাবেন, কিংবা বিদ্যালয়ে যাবেন। আপনার এই যাওয়ার কাজটি ক্বাদা তথা
বাস্তবায়ন। উক্ত কাজের মাধ্যমে তা (ভাগ্য) আপনার ওপর বাস্তবায়িত হয়েছে। আর কাজটি
বাস্তবায়িত হওয়ার পূর্বে সেটা আল্লাহর তাকদির বা নিয়তি। বাস্তবায়িত হওয়ার পর সেটার
নাম ক্বাদা। তবে কখনো কখনো ক্বাদাকেও তাকদির বলা হয়।
এ কারণে ওমর বিন খাত্তাব
(রাদিয়াল্লাহু আনহু) যখন উমওয়াস নামক প্লেগরোগে আক্রান্ত এলাকায় যেয়ে ফিরে আসতে
চাইলেন, তখন আবু ওবাইদা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, আমিরুল
মুমিনিন, আপনি আল্লাহর তাকদির থেকে পালাচ্ছেন? এর
মানে, যেহেতু আল্লাহর পক্ষ থেকে ফায়সালা হয়ে গেছে—আপনি
এই প্লেগ রোগের কারণে অসুস্থ হবেন অথবা মারা যাবেন, তাহলে
সেটা থেকে পালাচ্ছেন কেন? কুশলী মুহাদ্দিস ও দক্ষ ফকিহ ওমর তখন জবাবে দিলেন, আবু
ওবাইদা, আমরা আল্লাহর এক তাকদির থেকে আরেক তাকদিরের দিকেই তো
পালাচ্ছি। অর্থাৎ তাকদির থেকে আমাদের পলায়নও তাকদিরের অন্তর্ভুক্ত। সবই আল্লাহর
তাকদিরের নির্ধারণ।
·
[পরিচ্ছেদ: নিয়তির ওপর বিশ্বাস
করে কিংবা আল্লাহর ওপর ভরসা করে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা আহলুস সুন্নাহর কাজ নয়]
তাই মানুষকে আদেশ দেওয়া হয়েছে, সে
ক্ষতিকর বস্তু থেকে নিজেকে বাঁচাবে। এখান থেকে উপলব্ধ হয়, তাকদিরের
প্রতি আহলুস সুন্নাহ ওয়াহ জামাআতের আকিদার অর্থ—মুসলিমকে
কার্যকারণ বা উপায়-উপকরণ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। এখন আমরা এ কথা বলব না যে, ‘উপায়
অবলম্বনের কোনো প্রভাব নেই, আল্লাহ যদি আমার জন্য জাহান্নাম নির্ধারণ করেন; যা
আমাকে পোড়াবে, তাহলে আমি পুড়ব, আর নির্ধারণ না করলে পুড়ব না।’
আমরা এসব বলব না। এসব কথা
অজ্ঞতা ও নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক। কেননা মহান আল্লাহ জাহান্নামের জন্য (নির্দিষ্ট)
রীতি নির্ধারণ করে দিয়েছেন, তা পোড়াবে। এটা তাঁর অন্যতম সৃষ্টি জাহান্নামের জন্য
তাঁর নির্ধারণ করা তাকদির। তিনি বলেছেন, نَحۡنُ
جَعَلۡنَٰهَا
تَذۡكِرَةً
وَمَتَٰعًا
لِّلۡمُقۡوِينَ“আমি একে (আগুনকে) করেছি স্মারক
(যা জাহান্নামের ভয়াবহ আগুনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়) এবং মরুবাসীদের জন্য সামগ্রী।”
[সুরা ওয়াকিয়া: ৭৩]
আপনি জাহান্নামে প্রবেশ করবেন
আর বলবেন, আমি জাহান্নামে প্রবেশ করব, আগুনে
ভষ্মীভূত হওয়া যদি আমার ভাগ্যে থাকে, তাহলে আমি ভষ্মীভূত হব। কিন্তু
আপনি তো ইবরাহিম (আলাইহিস সালাম) নন; যার ব্যাপারে আল্লাহ বলেছিলেন, قُلۡنَا يَٰنَارُ كُونِى بَرۡدًا وَسَلَٰمًا عَلَىٰٓ إِبۡرَٰهِيمَ “আমি বললাম, হে
অগ্নি, তুমি ইবরাহিমের জন্য শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও।” [সুরা
আম্বিয়া: ৬৯]
তাই আপনি যদি এমন কাজের
নিকটবর্তী হোন, যার ক্ষতিকর দিক আপনার জানা আছে, তাহলে
অবশ্যই সেটা আপনার জন্য ক্ষতিকর (সেখান থেকে বাঁচার উপায় অবলম্বন করতে হবে)। এটা
আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। অতএব আহলুস সুন্নাহর নিকটে উপায়ের ওপর বিশ্বাস করা ইমান
বিল কদরের তথা অদৃষ্ট-বিশ্বাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি রুকন (স্তম্ভ)।
উপায় অবলম্বনের অস্তিত্ব আছে।
কেননা কাজের পরিণতি কার্যকারণ তথা উপায়-উপকরণের সাথেই সংযুক্ত থাকে। আমরা
ব্যাপারটা অনুভব করতে পারি এবং প্রত্যক্ষও করি। যেমন আপনি লিখলেন, তাতে
পাতা ভরে গেল। আপনি না লিখলে তা খালি থাকত। তদনুরূপ আপনি মসজিদে গেলেন, তাতে
আপনার পুণ্য অর্জন হলো। পক্ষান্তরে আপনি জামাআত ত্যাগ করে বাসায় বসে থাকলেন, তাতে
আপনার কোনোকিছু (সওয়াব) অর্জন হলো না। এটাই আল্লাহর তাকদির।
এজন্য অবশ্যই উপায় অবলম্বন করতে
হবে। যেমনটি করেছেন মুমিনদের সর্বোত্তম নেতা এবং বনু আদমের সর্দার। তিনি মদিনায়
হিজরতের সময় কী করেছিলেন? তিনি কি ভরসাকারীদের সর্দার নন? অবশ্যই।
তাকদিরের ব্যাপারে তিনি কি সর্বোত্তম মুমিন নন? অবশ্যই। তিনি তো তাঁর শয্যা
ত্যাগ করেছিলেন। সেখানে রেখেছিলেন আলি বিন আবু তালিবকে। তাঁর এ কাজের যদি কোনো
প্রভাবই না থাকে এবং সবকিছু আল্লাহর পক্ষ থেকে অগ্রিম নির্ধারিত থাকে, তাহলে
তিনি এমনটা করলেন কেন? তিনি কাজ করেছেন, সেটা একটা কার্যকারণ বা উপায়
ছিল। তিনি উপায় অবলম্বন করতে আদিষ্ট হয়েছেন।
যেমন আল্লাহ বলেছেন, ثُمَّ أَتۡبَعَ سَبَبًا “অতঃপর তিনি এক উপায় অবলম্বন
করলেন।” [সুরা কাহফ: ৮৯] আলি (রাদিয়াল্লাহু আনহু) কে নিজের বিছানায় রাখাটাই ছিল
তাঁর সর্বপ্রথম উপায় অবলম্বন। শত্রুপক্ষ দরজার ছিদ্র দিয়ে দেখল, সে
এখনও ঘুমিয়ে আছে। নবি ﷺ বলেছেন, “যুদ্ধ হচ্ছে ছলচাতুরি।” [সহিহ
বুখারি, হা/৩০৩০; সহিহ মুসলিম, হা/১৭৩৯]
এরপর তিনি শত্রুপক্ষের পাশ দিয়ে
যাওয়ার সময় তাদের চোখে ধুলোবালি ছিটিয়ে দিলেন। কাজটি না করলেও আল্লাহ তাদের দৃষ্টি
ছিনিয়ে নিতে পারতেন। কিন্তু এটি একটি উপায় ছিল। এর মাধ্যমে তিনি আমাদের শিক্ষা
দিয়েছেন, উপায় অবলম্বন করা তাকদিরের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং আপনার উপায়
অবলম্বন করা আল্লাহর ওপর ভরসা করার অন্তর্ভুক্ত। বিষয়টি এমন না যে, আপনি
ভরসা করলেন, অথচ উপায় অবলম্বন না করে বসে থাকলেন। এর নাম বিশ্বাস না, এর
নাম বিশুদ্ধ তাওয়াক্কুল (ভরসা) না।
একবার হজের মৌসুমে ইয়েমেন থেকে
এক প্রতিনিধিদল নবি ﷺ এর নিকটে আসল। তাদের সাথে না ছিল খাবার, আর
না ছিল জীবনধারণের উপকরণ। তারা পাহাড়পর্বত অতিক্রম করছে, অথচ
তারা ছিল রিক্তহস্ত। এ দেখে নবি ﷺ বললেন, ‘তোমরা
সঙ্গে কিছু নিয়ে আসনি কেন?’ তারা বলল, ‘আমরা তাওয়াক্কুলকারী।’ নবি ﷺ বললেন, ‘না, বরং
তোমরা পরমুখাপেক্ষী।’
প্রকৃতপক্ষে এটা এক ধরনের
পরনির্ভরশীলতা। আপনি পাথেয় সঙ্গে নিন, উপায় অবলম্বন করুন, বাকি
আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল। আপনি বিষয়টি আল্লাহর নিকট সোপর্দ করবেন। আপনি উক্ত
কার্যকারণের মাধ্যমে উপকৃত হোন—তা যদি তিনি না চান, তাহলে
আপনি উপকৃত হবেন না। কিন্তু আপনি উপায় অবলম্বন করতে আদিষ্ট হয়েছেন।
দেখুন, নবি
ﷺ ও তাঁর
সাথী আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) একসাথে হিজরত করলেন। তাঁরা একজন দক্ষ গাইড ভাড়া
করলেন, যে তাঁদেরকে পথ দেখাবে। এটাই হচ্ছে উপায়। এটা অবলম্বন করতেই
হবে। সেখানে তাঁদের পদচিহ্ন আর ট্র্যাক খুব স্পষ্ট ছিল। তাতে মুশরিকরা তাদের জায়গা
চিনতে পারত। কিন্তু তাঁরা একজন রাখাল নিযুক্ত করেছিলেন। সে তার ছাগলে সওয়ারি হয়ে
তাঁদের পদচিহ্নগুলো মুছে দিয়েছিল। তাঁরা মক্কা-মদিনার মাঝে একটা পাহাড়ে গিয়েছিলেন।
উঁচুতে একটা গুহা ছিল। তাতেই তাঁরা আশ্রয় নিয়েছিলেন।
তাঁরা সকল উপায়ই অবলম্বন
করেছিলেন, যাতে মুশরিকরা তাঁদের নিকট পৌঁছতে না পারে। এই উপায়
অবলম্বনের নির্দেশ আল্লাহ দিয়েছেন। আর এটাই আল্লাহর তাকদির।
সুতরাং উপায়-উপকরণ অবলম্বন করা আল্লাহর তাকদিরের অন্তর্ভুক্ত। তাইতো সর্বশ্রেষ্ঠ
তাকদির-বিশ্বাসী তাওয়াক্কুলকারীদের নেতা নবি ﷺ উপায় অবলম্বন
করেছেন।
এরপর কী ঘটল? তাঁদের
অবলম্বিত কার্যকারণের সবগুলো ফলপ্রসূ হয়েছিল না। মুশরিকরা কাছে চলে এসেছিল এবং
গুহার ওপরে অবস্থান নিয়েছিল। গুহা ছিল ঠিক তাদের নিচেই। আল্লাহর রাসুল ﷺ এবং আবু
বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) মুশরিকদের পা দেখতে পাচ্ছিলেন।
আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু)
নবি ﷺ কে বললেন, ‘আল্লাহর
রসুল, তাদের কেউ যদি নিজের পায়ের দিকেও তাকায়, তাহলেই
আমাদের দেখে ফেলবে।’ এতসব উপায়াবলম্বন নবি ﷺ এর কোনো কাজে
আসেনি। মুশরিকরা গুহার ওপরে অবস্থান করছিল। তখন নবি ﷺ আবু বকরকে জবাব
দিলেন, ‘আবু বকর, ওই দুজনের ব্যাপারে তোমার কী ধারণা, যাদের
তৃতীয় হিসেবে আছেন স্বয়ং আল্লাহ?’ আল্লাহ তায়ালা তাঁদের ইমানদীপ্ত বাক্যালাপ কুরঅানে
উল্লেখ করেছেন, إِذۡ يَقُولُ لِصَٰحِبِهِۦ
لَا
تَحۡزَنۡ
إِنَّ
ٱللَّهَ
مَعَنَا “স্মরণ করো, যখন তিনি আপন সঙ্গীকে বললেন, চিন্তিত
হয়ো না, আল্লাহ তো আমাদের সাথেই আছেন।” [সুরা তাওবা: ৪০]
এ থেকে বোঝা যায়, তিনি
উপায় অবলম্বন করেছিলেন। সে ব্যাপারে তিনি আদিষ্ট ছিলেন, আর
বাকিটুকু তো আল্লাহর ওপর। অতএব আমরা বুঝতে পারলাম, (হাত
গুটিয়ে বসে না থেকে) অবশ্যই উপায় অবলম্বন করতে হবে। ভাগ্যের প্রতি বিশ্বাসী
বিশ্বাস করবে—আল্লাহই সবকিছুর নির্ধারক, তিনি
সবকিছু লিখে রেখেছেন, তাই তাকে উপায় অবলম্বন করতে হবে, যাতে
তার উদ্দিষ্ট বিষয় হাসিল হয়। আলোচনার শেষে উক্ত বিষয়ে আলোকপাত করা হবে ইনশাআল্লাহ।
সুতরাং মুমিনরা পূর্ণ উদ্যমতার সাথে কাজ করবে। কাজকর্মে সে স্বাধীন। এটা তাকদিরের
ওপর বিশ্বাসের ফল।
·
[পরিচ্ছেদ: আল্লাহর তৌফিক
ব্যতিরেকে কেউ সুপথ পেতে পারে না]
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের
নিকট তাকদির হচ্ছে, আপনার বিশ্বাস থাকবে—আপনি
একজন দুর্বল লোক এবং আল্লাহর মুখাপেক্ষী। তাঁর তৌফিক ব্যতিরেকে আপনি সঠিক পথ পাবেন
না। তিনি আপনাকে ত্যাগ করলে আপনি সুপথ পাবেন না। কেননা শয়তানের সংখ্যা এবং আল্লাহর
পথ থেকে বিমুখকারী বস্তুর সংখ্যা অনেক। তিনি যদি আপনাকে ছেড়ে দেন, তাহলে
ভ্রষ্টদের সাথে আপনাকেও ভ্রষ্ট করে দিবেন।
কিন্তু আপনার ওপর তাঁর খাস
অনুগ্রহ আছে (তাই আপনি হেদায়েত পেয়েছেন)। সেজন্য আপনার উচিত আল্লাহর শুকরিয়া আদায়
করা। যিনি আপনাকে মুসল্লিদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং এই আলোচনা সভায় সমুপস্থিত
করেছেন। আর এ ধরনের আলোচনা সভায় আগত লোকদের ফেরেশতারা রহমত দিয়ে ঢেকে রাখেন, প্রশান্তি
দিয়ে আবৃত করেন এবং আল্লাহ তাঁর নিকটস্থ ফেরেশতাদের কাছে তাদের কথা উল্লেখ করেন।
এসব আল্লারই অনুগ্রহ।
অতএব আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে, আল্লাহই
মানবচিত্তে ইমানকে প্রীত করে তোলেন এবং তাকে হেদায়েত দান করেন। মুমিন বান্দাদের
প্রতি তাঁর বিশেষ রহমত আছে; সে রহমতেই তারা হেদায়াত ও ইস্তিকামাত (দীনের ওপর
অবিচলতা) লাভ করে। তাই এই নিয়ামতের জন্য তারা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবে এবং আরও
বেশি অনুগ্রহ, ইহসান ও দীনের প্রতি অবিচলতার কামনা করে দোয়া করবে। নবি ﷺ ভাগ্যের
প্রতি সর্বোত্তম ইমানদার হয়েও দোআ করতেন, يا مقلب
القلوب
ثبت
قلبي
على
دينك،
يا مصرف
القلوب
صرف
قلوبنا
إلى
طاعتك “অন্তরসমূহের পরিবর্তক মাবুদ, আপনি
আমার অন্তরকে আপনার দীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখুন। অন্তর পরিবর্তনকারী মাবুদ, আমাদের
অন্তরকে আপনার আনুগত্যে অবিচল রাখুন।” [সংমিলিত দলিল: তিরমিযি, হা/২১৪০; সনদ:
সহিহ; মুসলিম, হা/২৬৫৪; তাকদির অধ্যায় (৪৭); পরিচ্ছেদ-
৩]
নবি ﷺ জানতেন, সমস্ত
কর্তৃত্ব তাঁরই হাতে, অন্তরসমূহ দয়াময় আল্লাহর আঙুলসমূহের দুই আঙুলের মধ্যে
রয়েছে। তাই আপনি যদি আপনার কাজ যথাযথ আদায় করেন, তাহলে
আল্লাহর হেদায়েতের উপযুক্ত হবেন। কেননা তার রহমত সর্বত্র ব্যাপ্ত। এটাকে (অনুগ্রহ
প্রদানকে) তৌফিক বলা হয়। আপনার প্রতি তাঁর বিশেষ অনুগ্রহ হচ্ছে, তিনি
আপনাকে হেদায়েতপ্রাপ্তদের মধ্যে শামিল করেছেন। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে (আপনার
প্রতি) ভালোবাসা ও তৌফিক। আল্লাহ বলেছেন, وَلَٰكِنَّ
ٱللَّهَ
حَبَّبَ
إِلَيۡكُمُ
ٱلۡإِيمَٰنَ
وَزَيَّنَهُۥ
فِى
قُلُوبِكُمۡ
وَكَرَّهَ
إِلَيۡكُمُ
ٱلۡكُفۡرَ
وَٱلۡفُسُوقَ
وَٱلۡعِصۡيَانَ“কিন্তু আল্লাহ তোমাদের অন্তরে
ইমানের প্রতি মহব্বত সৃষ্টি করেছেন এবং তা হৃদয়গ্রাহী করে দিয়েছেন। পক্ষান্তরে
কুফর, পাপাচার ও নাফরমানীর প্রতি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের ঘৃণা।”
[সুরা হুজুরাত: ৭]
আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ইমানের
প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করেছেন এবং পাপাচার ও নাফরমানির প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে
দিয়েছেন। কারণ আল্লাহই তৌফিকদাতা। এ কারণে শুয়াইব (আলাইহিস সালাম) স্বীয় প্রভুর
গুণকীর্তন করে বলেছেন,إِنْ
أُرِيدُ
إِلَّا
الْإِصْلَاحَ
مَا
اسْتَطَعْتُ
ۚ وَمَا
تَوْفِيقِي
إِلَّا
بِاللَّهِ
ۚ عَلَيْهِ
تَوَكَّلْتُ
وَإِلَيْهِ
أُنِيبُ “আমি যথাসাধ্য শোধরাতে চাই। তবে আল্লাহর তৌফিক
দ্বারাই কিন্তু কাজ হয়ে থাকে। তাই আমি তাঁর ওপর নির্ভর করি এবং তাঁরই দিকে ফিরে
যায়।” [সুরা হুদ: ৮৮]তৌফিক আল্লাহর হাতে। সুতরাং প্রতিটি কাজে তাঁরই তৌফিক কামনা
করুন।
·
[পরিচ্ছেদ: ‘তৌফিক আল্লাহর পক্ষ
থেকে’—এ কথার ব্যাখ্যা]
‘তৌফিক আল্লাহর পক্ষ থেকে’—এর
মানে কী? এর মানে তৌফিক দিয়ে আল্লাহ আপনার চলার পথ সুগম করে দিবেন।
মাখলুক নিজে নিজে একটি কাজ করতে পারে না। তার কাজ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা মুক্ত হতে
হয়।
ধরুন, আপনি
আপনার গাড়িখানা খুব ভালোভাবে প্রস্তুত করলেন। তাতে সব ধরনের উপকরণ ব্যবহার করলেন।
সাধ্যমত সবই করলেন। এরপর আপনি রাস্তায় বের হয়ে বললেন, ‘আমি
একজন দক্ষ ড্রাইভার, আর (আজ) খুব দ্রুত ড্রাইভ করব না, বরং
সাবধানে ড্রাইভ করব।’ এগুলো আপনার সাধ্যের মধ্যে। এরচেয়ে বেশি কিছু করার সাধ্য
আপনার নেই।
কিন্তু রাস্তায় একটি বড়ো পাথর
রাখতে পারে, যা আপনার গাড়ি উল্টিয়ে দিবে। এ ক্ষমতা কার হাতে? অবশ্যই
আল্লাহর হাতে। এজন্য সব কাজ করেও আল্লাহর কাছে তৌফিক ও সঠিকতা চাইবেন, যাতে
আল্লাহর সাহায্য পান। কেননা এমন কিছু বিষয় আছে, যা আপনার তাকদির হিসেবে
নির্ধারিত। আপনি তা-ই করবেন, যা আপনার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আবার এমন কিছু
বিষয়ও আছে যা আপনার জন্য নির্ধারণ করা হয়নি। অথচ তা আপনার কৃতকর্মের সঙ্গে
বিরোধপূর্ণ। (সেখান থেকে আপনি আল্লাহর রহমতে বেঁচে যাবেন)
যেমন, হতে
পারে গাড়ি চালানোর সময় একজন ঘুমন্ত ব্যক্তি (*) আপনার সামনাসামনি চলে আসল। আপনার
সামনে অন্য কোনো পথ নেই। হয় তার সাথে অ্যাক্সিডেন্ট করবেন, নয়
তো গাড়িসহ উল্টে যাবেন, অন্য কোনো পথ নাই। কিন্তু সবকিছু আল্লাহর হাতে, তিনি
ঘুমন্ত ব্যক্তিটিকে সজাগ করতে সক্ষম।
[(*) অনুবাদকের টীকা: ঘুমন্ত অবস্থায়
চলাফেরা করাকে স্লিপওয়াকিং ডিজঅর্ডার বলা হয়ে থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায়
এটাকে সোমনামবুলিজম বলা হয়। স্লিপওয়াকিংয়ে ভোগা ব্যক্তি অবচেতন মনে চলাফেরা থেকে
শুরু করে গাড়িচালনা ও মানবহত্যা পর্যন্ত করতে পারে। টীকা সমাপ্ত।]
এমনও এতে পারে, ব্যক্তিটির
সাথে আপনার মুখোমুখি হতেই আল্লাহ তাকে সজাগ করে দিলেন। আর সজাগ ব্যক্তিকে আল্লাহ
রক্ষা করলেন। তৌফিক দেওয়ার মালিক যে আল্লাহ। প্রত্যেক ভালো কাজে তিনি আপনাকে
সঠিকতা দিবেন। আপনার ওপর তার অনুগ্রহ আছে। সে কারণে আপনি তাঁর শুকরিয়া আদায় করবেন।
পক্ষান্তরে আপনি যদি কাজ করা ছেড়ে দেন, তাহলে আপনি আপনার উদ্দেশ্য
হাসিল করতে পারবেন না। কেননা (মানুষের) প্রতিকূল বিষয় অনেক।
সবচেয়ে বড়ো ব্যাপার হচ্ছে, আল্লাহর
প্রতি ঈমান। তাতে বিশ্বাস থাকবে, আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে আপনাকে সঠিকতা এবং সিরাতে
মুস্তাকিমের ওপর অবিচলতা দান করেছেন। এখন ধরুন, যদি একজন আপনার কাছে
প্রলুব্ধকারী জিনিস নিয়ে হাজির হয়, ‘এই, আমার
কাছে এসো।’ সে আপনাকে নেশাদার দ্রব্য দিল, যেগুলো আপনাকে বিপথে নিয়ে যাবে।
তখন আপনাকে সেখান থেকে রক্ষা করবে কে? অবশ্যই রক্ষা করবেন আল্লাহ।
আবার এমনও হতে পারে, এক
লোক এসে আপনাকে অসৎপথ দেখাচ্ছে। সে বলল, ‘চল যাই।’ আর আপনি তার সাথে
এক-দুই-তিন করে রাত্রি জাগরণ করতেই থাকলেন, রাতে হারাম জিনিস দেখতে লাগলেন।
আপনার প্রবৃত্তি আপনাকে বশীভূত করে ফেলল। কিন্তু সেখান থেকে মহান আল্লাহ আপনাকে
তৌফিক দিয়ে রক্ষা করলেন। কারণ আপনার ওপর আল্লাহর অনুগ্রহ রয়েছে। এটাকেই আমরা
‘তৌফিক’ বলছি।
পক্ষান্তরে আপনি প্রবৃত্তির
দিকে ঝুঁকে পড়লেন। আল্লাহ আপনাকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করলেন। এর মানে তিনি আপনাকে
ত্যাগ করছেন, ‘তুমি যা ইচ্ছা করো।’ এমন হলে আপনি কি নিজেকে বাঁচাতে পারবেন? কখনোই
না। তিনি পরিত্যাগ করলে আপনি বরং নিজেকে নিয়ে বড়াই করবেন। যেমন তারা নিজেদের নিয়ে
বড়াই করেছিল। তাদের কী হয়েছিল? তাদের নৌযান আকাশে বিস্ফোরিত হয়েছিল। আল্লাহ তো বলেই
দিয়েছেন,وَمَا لَهُم مِّن دُونِهِۦ مِن
وَالٍ “তিনি ব্যতীত তাদের কোনো সাহায্যকারী নেই।” [সুরা
রাদ: ১১]
সুতরাং আপনাকে যদি পরিত্যাগ করা
হয়, তাহলে আপনি সঠিকতায় পৌঁছতে পারবেন না। তাই আপনি
পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর মুখাপেক্ষী।
·
[পরিচ্ছেদ: আপনি যা পেয়েছেন, তা
কখনো না পাওয়ার ছিল না, আর যা পাননি, তা কখনো পাওয়ার ছিল না]
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের
নিকট ইমান বিল কদরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি বিষয় হচ্ছে, আপনাকে
সবসময় মনে রাখতে হবে, আপনি যা পেয়েছেন তা কখনো না পাওয়ার ছিল না, আর
যা পাননি তা কখনো পাবার ছিল না।
আপনি আল্লাহর রাজত্বে তাঁর এক
নগণ্য প্রজা। তাঁর রাজত্বে আপনার কোনো কর্তৃত্ব নেই। আপনি পালিত, পরাভূত, অসহায়
ও নিঃস্ব। আল্লাহই আপনাকে পরিচালিত করেন। তিনি আপনাকে কাজ করার তৌফিক এনায়েত
করেছেন, বিধায় আপনি তা করতে পারেন। পক্ষান্তরে তিনি আপনাকে পরিত্যাগ
করলে, আপনি অন্য কিছু করেন, আপনার কাজের ভার আপনার ওপরই
ন্যস্ত করেন (ফলে আপনি ধ্বংসে নিপাতিত হন)। তিনি আপনাকে কল্যাণ দেন, আবার
তিনিই আপনার ওপর বালা-মুসিবত নাজিল করেন।
ধরুন, আপনার
ভাই মারা গেছে, আপনি তার জন্য কী করতে পেরেছেন? তার
রুহ আল্লাহর হাতে। যদি আপনার ভাই সৌভাগ্যবান হয়ে থাকে, তাহলে
সেই রুহ তার মহান স্রষ্টা আল্লাহর কাছে পৌঁছে গেছে। আপনি তার মৃত্যু ঠেকাতে পারতেন? না, পারতেন
না।
সুতরাং আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে, আল্লাহ
সর্বত্র কর্তৃত্বকারী এবং সমস্ত রাজত্বের মালিক। তার হুকুম খণ্ডন করার ক্ষমতা কারও
নাই। সৃষ্টি করা ও হুকুম দেওয়ার ক্ষমতা তারই হাতে। তিনি আপনার অন্তরকে এভাবে
প্রশান্ত করেছেন যে, আপনি যা পেয়েছেন তা কখনো না পাওয়ার ছিল না। কেননা
আল্লাহ সবকিছু সম্পর্কে সম্যক অবগত আছেন এবং তিনি আপনার তাকদির নির্ধারণ করেছেন।
তাঁর মালিকানায় তিনি কখনো ভুল করেন না। আর তাঁর রাজত্ব—প্রজ্ঞা
ও ইনসাফের ওপর প্রতিষ্ঠিত।
তাই আপনি বিশ্বাস রাখবেন, আল্লাহর
মহান রুবুবিয়্যাতের (সৃষ্টি, রাজত্ব ও পরিচালনায় আল্লাহর একত্ববাদ) প্রতি এবং
আল্লাহর নান্দনিক নামসমূহ ও সমুন্নত গুণাবলির প্রতি। এখানে সুষ্পষ্টভাবে তাকদিরের
প্রতি ইমানের কথা আসেনি। কেননা আল্লাহর সুন্দর নাম ও সুউচ্চ গুণাবলির প্রতি
বিশ্বাসের মাঝে তাকদিরের বিশ্বাসও অন্তর্নিহিত আছে।
অতএব আপনি যা পেয়েছেন, তা
কখনো না পাওয়ার ছিল না। আর আপনি যা পাননি, তা কখনো পাওয়ার ছিল না। নবি ﷺ ইবনু
আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) কে অছিয়ত করে বলেছেন, يا غلام إنى أعلمك كلمات، احفظ الله يحفظك احفظ الله تجده تجاهك، اذا سألت فاسأل الله وإذا استعنت فاستعن بالله، واعلم أن الأمة لو اجتمعوا على أن ينفعوك بشيء لم ينفعوك بشيء إلا قد كتبه الله لك، و إن اجتمعوا على أن يضروك بشيء لم يضروك بشيء إلا قد كتبه الله عليك، رفعت الأقلام وجفت الصحف “বেটা, আমি
তোমাকে কয়েকটি কথা শেখাই। তুমি আল্লাহর (আদেশ-নিষেধের) হেফাজত করো, আল্লাহ
তোমার (দ্বীন-দুনিয়ার) হেফাজত করবেন। আল্লাহর (আদেশ-নিষেধ) হেফাজত করে চলবে, তুমি
তাঁকে তোমার সামনেই পাবে। যখন তুমি চাইবে, তখন আল্লাহর কাছেই চাও। আর যখন
তুমি সাহায্যপ্রার্থনা করবে, তখন আল্লাহর কাছেই সাহায্যপ্রার্থনা করবে। জেনে রেখ, সমস্ত
উম্মত যদি তোমার কল্যাণ করার জন্য একত্রিত হয়, তবুও তোমার জন্য স্রেফ ততটুকুই
কল্যাণ করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। তারা সকলে যদি তোমার
ক্ষতির জন্য একত্রিত হয়, তাহলে তারা স্রেফ ততটুকু ক্ষতিই করতে পারবে, যতটুকু
আল্লাহ তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। কলম উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে, আর
(লিখিত) পৃষ্ঠাগুলো শুকিয়ে গেছে।” [তিরমিযি, হা/২৫১৬; সনদ:
সহিহ]
এ হাদীসটি আপনার অন্তরকে করবে, আল্লাহর
প্রতি প্রশান্ত ও পরিতৃপ্ত।
·
[আগামী পর্বে সমাপ্য, ইনশাআল্লাহ]
·ভাষান্তর: আব্দুর রহমান মৃধা
পরিমার্জনা: মুহাম্মাদ
আব্দুল্লাহ মৃধা
www.facebook.com/SunniSalafiAthari
📲আপনি চাইলে -Whatapps-Facebook-Twitter-ব্লগ- আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking-ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন-মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]ওয়েব পরিচালায় rasikul islam নিয়মিত আপডেট পেতে ভিজিটকরুন
🌎 আমাদের ওয়েবসাইট https://sarolpoth.blogspot.com/সকল অডিও অ্যান্ড আর্টিকল ইত্যাদি rasikulindia.blogspot.com (ইসলামিক বিশুদ্ধ শুধু বই পেতে📚 এখানে পাবেন🎶প্রচুর অডিও সিরিজ🎶100 এর বেশী শায়খ ভিত্তিক অডিও 90 এর উপর 🎶বিষয় ভিত্তিক অডিও🌎অডিও কুরআন এবং অনলাইনে অডিও শুনুন🎶এছাড়াও বিষয় ভিত্তিক ভিডিও,♂সহীহ-সুন্নাহ-ভিত্তিক ইউটিউব চ্যানেল,ইসলামিক পত্রিকা 📚 and অনেক জানা-অজানা-আর্টিকল 📚 বিষয় ভিত্তিক সিরিজ আকারে https://sathikpatherdishari.weebly.com ইসলামিক গালারি
👇বিশেষ দ্রস্টব্যঃ-👇 🎤এখানেবিভিন্ন ধরনের Software যেমন,School Management Software, Billing Software,🌍Website Software, Hardware (Computer) Repair/Format ও📲 Mobile Software সুলভ মূল্যে পাওয়া যায়🌎📲আমাদের যোগাযোগ নং-📞9775094205📞8317851731⬅আমাদের ওয়েবসাইট www.sarolpoth.blogspot.com/ ইসলামিক সমস্থ প্রগ্রাম একসাথে পেতে ↩Comming soon_Main Website- 🌍esoislamerpothe.in🌍🏢ঠিকানা-গোধনপাড়া চৌরাস্তা মোড়-থেকে ডোমকল রোডে দূরত্ব ১০০মিটার↔রাইট সাইড⤵🖥R-Enterprise💻⬅
0 Comments