(১) আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “সমস্ত প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য, যিনি আসমান ও যমীনের স্রষ্টা এবং ফেরেশতাগণকে করেছেন বার্তা বাহক। সেই ফেরেশতারা দুই দুই, তিন তিন ও চার চার ডানা বিশিষ্ট হয়ে থাকে। তিনি সৃষ্টির মধ্যে যা ইচ্ছা তা যোগ করেন। আর নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সক্ষম।” সুরা ফাতিরঃ ১।
আল্লাহ তাআ’লা তাঁর নিজের ও নবী-রাসুলদের মাঝে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ফেরেশতাদেরকে বার্তাবাহক বা ‘দূত’ বানিয়েছেন। ফেরেশতাদের ডানা রয়েছে, যার সাহায্যে তাঁরা উড়তে পারেন, যাতে তাঁরা দ্রুত আল্লাহর বাণী নবী-রাসুলদের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন। তাঁদের মাঝে কারো দুই দুই চারটি ডানা রয়েছে, কারো তিন তিনটি, কারো চার চারটি করে ডানা রয়েছে। কারো কারো এর চাইতে অধিক ডানা রয়েছে। যেমন মেরাজের রাতে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম জিব্রাঈল আ’লাইহিস সালামকে দেখেছিলেন, এ সময় তাঁর ছয়শত ডানা ছিলো। তাঁর ডানাগুলো এতো বড় ছিলো যে, দুইটি ডানার মাঝখানে পূর্ব দিক ও পশ্চিম দিকের সমান দূরত্ব ছিলো। সুরা ফাতির, আয়াত ১-এর তাফসীর দ্রষ্টব্য।
(২) কোন ব্যক্তি ‘বিসমিল্লাহ’ বলে কাপড় খুললে শয়তান আর তার লজ্জাস্থানের মাঝে আল্লাহ তাআ’লা একটা পর্দা সৃষ্টি করে দেন, যে কারণে শয়তান তার লজ্জাস্থানের দিকে দৃষ্টিপাত করতে পারেনা। সুনানে তিরমিযীঃ ২/৫০৫, ইরওয়াউল গালীলঃ ৪৯, সহীহ আল-জামিঃ ৩/২০৩।
(৩) নারীদের সম্পূর্ণ শরীর হচ্ছে ‘আওড়াহ’। আওড়াহ অর্থ হচ্ছেঃ গোপনীয় জিনিস, যা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা ওয়াজিব। এ কারণে, নারীরা ঘর থেকে বের হলে শয়তান তাদের দিকে চোখ তুলে তাকায়। তিরমিযীঃ ১১৭৩, সহীহ, শায়খ আলবানী, সহীহ আত-তিরমিযীঃ ৯৩৬।
(৪) প্রতিটা মানুষের সাথে আল্লাহ তাআ’লার পক্ষ থেকে একজন ‘হাফিজ’ (হিফাজতকারী ফেরেশতা) নিযুক্ত রয়েছেন। তিনি তাকে বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করে থাকেন, তবে আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন, তা ছাড়া। যেইভাবে দেহরক্ষীরা রাজা-বাদশাহদেরকে সর্বদা পাহারা দিয়ে রাখে, তারা ঠিক সেইভাবে আমাদেরকে হেফাজত করেন। আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “তার সামনে ও পেছনে পালাক্রমে আগমনকারী ফেরেশতা নিযুক্ত রয়েছে, তারা আল্লাহর আদেশক্রমে তার হিফাজত করে থাকে।” সুরা র’দঃ ১১, সুরা আত-ত্বারিক্বঃ ৪।
(৫) ফেরেশতাদের মাঝে সবচাইতে সম্মানিত, আল্লাহর নৈকট্যশীল ও বিশ্বস্ত হচ্ছেন হযরত জিব্রাঈল আ’লাইহিস সালাম। ইহুদীরা আল্লাহর সম্মানিত দূত জিব্রাঈলের সাথে শত্রুতা পোষণ করে। এর কারণ হচ্ছে, একবার আল্লাহ তাআ’লা জিব্রাঈল আ’লাইহিস সালামকে দিয়ে ইহুদীদেরকে শাস্তি দিয়েছিলেন। সুরা তাকভীরঃ ২০-২১, সুরা নজমঃ ৫, সুরা বাক্বারাহঃ ৯৮।
(৬) ‘আজরাঈল’ বলতে কোন ফেরেশতার নাম নেই। মৃত্যুর ফেরেশতাদের আসল নাম হচ্ছে ‘মালাকুল মাউত’ বা মৃত্যুর ফেরেশতা। মৃত্যুর ফেরেশতা একজন নয়, একাধিক ফেরেশতা সম্মিলিতভাবে একজন বান্দার জান কবজ করে থাকেন।
(৭) ‘কিরামান কাতিবিন’ অর্থ হচ্ছে সম্মানিত লেখকবৃন্দ। এটা কোন একজন ফেরেশতার নাম নয়, প্রতিটা বান্দার ডান দিকে ও বাম দিকে যেই ফেরেশতারা তার আমল লিপিবদ্ধ করেন সেই ফেরেশতাদের সাধারণ নাম হচ্ছে কিরামান কাতিবিন। সুরা ইনফিতারঃ ১১।
(৮) দুনিয়াবাসী মানুষের ইবাদতের জন্যে, সালাতের দিক নির্ধারণ ও তাওয়াফ করার জন্য যেমন মর্যাদাপূর্ণ ঘর ‘কাবা’ (যার আরেক নাম হচ্ছে ‘বায়তুল্লাহ’) রয়েছে, ঠিক তেমনি আকাশবাসী ফেরেশতাদের জন্যে সমান মর্যাদাসম্পন্ন একটা মসজিদ রয়েছে, যাকে ‘বায়তুল মামুর’ বলা হয়। বায়তুল মামুরের অবস্থান হচ্ছে একেবারে আমাদের কাবা বরাবর সোজা সাত আসমানের উপরে। প্রতিদিন সত্তর হাজার ফেরেশতা এই বায়তুল মামুরে একসাথে সালাত আদায় করার জন্য প্রবেশ করেন। ফেরেশতাদের সংখ্যা এতো বেশি যে, একদিন যেই সত্তর হাজার ফেরেশতা বায়তুল মামুরে প্রবেশ করেন কেয়ামত পর্যন্ত তাদের কারো সেখানে পুনরায় প্রবেশ করার সুযোগ হবেনা। সুবহা’নাল্লাহ! মহান আল্লাহর সৃষ্টি জগত কত বিশাল। আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম মেরাজের রাত্রিতে নিজ চোখে বায়তুল মামুর দেখেছেন। সুরা আত-ত্বুরঃ আয়াত ৪-এর তাফসীর, ইবনে কাষীর রহি’মাহুল্লাহ।
(৯) নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যখন আল্লাহ কোন বান্দাকে ভালবাসেন তখন তিনি জিব্রাঈলকে ডেকে বলেন, আমি (আল্লাহ) অমুক বান্দাকে ভালবাসি, সুতরাং তুমিও তাকে ভালবাসো। তখন জিব্রাঈল আ’লাইহিস সালাম তাকে ভালবাসেন। অতঃপর জিব্রাঈল আ’লাইহিস সালাম আসমানে এই ঘোষণা করে দেন যে, আল্লাহ অমুক বান্দাকে ভালবাসেন, সুতরাং (হে ফেরেশতাগণ!) তোমরাও তাকে ভালবাসো। তখন আসমানবাসীরাও তাকে ভালবাসে এবং যমীনবাসীদের মাঝেও তাকে ‘মকবুল’ অর্থাৎ তাঁর প্রতি সকলের অন্তরে তার জন্য ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেওয়া হয়।” সহীহ আল-বুখারীঃ ৭৪৮৫।
0 Comments