ভালোকে ভালো এবং খারাপকে খারাপ হিসেবে চিহ্নিত না করলে কি সমস্যা?

ভালোকে ভালো এবং খারাপকে খারাপ হিসেবে চিহ্নিত না করলে কি সমস্যা?

শেখ হাসিনার আক্বীদাহ

সাধারণ মুসলমান, যারা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেননি, এমন ব্যক্তিরা সাধারণত দ্বীনের ব্যাপারে আলেম এবং দ্বীন প্রচারকারী ব্যক্তিদের কথার উপর নির্ভর করে। মসজিদের ইমাম বা খতিব সাহেব, মাঠে ময়দানে বা রেডিও টিভিতে যারা ওয়াজ লেকচার করে, ইসলাম নিয়ে বই পুস্তক লিখে বা ফেইসবুক, ইন্টারনেটে ইসলাম প্রচার করে….মুসলমানেরা সাধারণত এমন ব্যক্তিদের কথার দ্বারাই প্রভাবিত হয়। সুতরাং, যারা ইসলাম প্রচার করে এমন ব্যক্তিরা যদি ভালোকে ভালো এবং খারাপকে খারাপ বলে চিহ্নিত না করে, তাহলে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানের অভাবে সাধারণ মুসলমানেরা কোন ভালো বিষয় সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করে কিংবা, কোন খারাপ বিষয়কে গ্রহণযোগ্য বা জায়েজ বলে মনে করে। এইভাবে আস্তে আস্তে মানুষ বিভ্রান্ত বা গোমরাহ হয়। এ কারণে, যারা আলেম এবং ইসলাম প্রচারকারী তাদের উপর ফরয দায়িত্ব হচ্ছে, ক্বুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা ঘটনাবলীর বিষয়ে কেমন ধারণা রাখা উচিত, তা সাধারণ মানুষের কাছে স্পষ্ট করে তুলে ধরা।

বিংশ শতাব্দীর প্রখ্যাত আলেমে-দ্বীন, ইমাম আব্দুল আ’জিজ বিন বাজ রহি’মাহুল্লাহ বলেছেন, “হক্কপন্থী লোকেরা যদি কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা সেই কথা বর্ণনা না করতো তাহলে ভ্রষ্টতার শিকার হয়েছে এমন লোকেরা তাদের ভুলের উপরেই থেকে যেত। সাধারণ লোকেরা অন্ধভাবে সেই ভ্রষ্টতার অনুসরণ করতো। তখন যারা সত্য জেনেও চুপ করে ছিলো, লোকদের পথভ্রষ্ট হওয়ার পাপ তাদের উপরেও পড়বে।” মাজমু ফাতাওয়াঃ ৩/৭২।

একটি বাস্তব উদাহরণঃ

বিগত ১২ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সাল থেকে প্রায় ৮ বছর ধরে হিন্দুদের দুর্গা পূজা দেখতে গিয়ে একটা কথা প্রায়শই বলে থাকেন, “ধর্ম যার যার, উতসব  সবার।” ধর্ম নিরপেক্ষতার এই কুফুরী বাক্য উচ্চারণ করে শেখ হাসিনা মুসলমানদের শিরকী পূজা পার্বণ উপলক্ষ্যে আনন্দ ফূর্তি করা, এই ধরণের উৎসব দেখতে যাওয়া বা তাদের সাথে শরীক হতে উৎসাহিত করছে। তাওহীদ সম্পর্কে নূন্যতম জ্ঞান আছে, এমন একজন সাধারণ মুসলমানও বুঝতে পারে যে, এই ধরণের কথাবার্তা কি পরিমাণ গোমরাহী। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রীর মতো একজন ক্ষমতাধর ব্যক্তির পক্ষ থেকে দিনের পর দিন এ ধরণের কুফুরী দাওয়াতে প্রভাবিত হয়ে আজকাল অনেক নামধারী মুসলমানেরাও শেখ হাসিনার সাথে তাল মিলিয়ে এই কথা বলা আরম্ভ করেছে।

যেমন,

(১) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, তৎকালীন চাঁদপুর-৩ আসনের সাংসদ, বর্তমান শিক্ষা মন্ত্রী, ড.দীপু মনি ২০১৮ সালের ১৮-ই অক্টোবর চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন পূজা মণ্ডপ পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি তার এক বক্তৃতায় বলেন, “ধর্ম যার যার, আর উৎসবতো আমাদের সকলের।”

(২) আওয়ামী লীগের একজন বিশিষ্ট নেতা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিটিকিউটর ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। ব্যারিস্টার সুমন সাহেব ২০১৯ সালের ০৬-ই অক্টোবর হিন্দুদের দুর্গা পূজা উপলক্ষ্যে সিলেটের একটি মন্দির পরিদর্শনে যান এবং সেখান থেকে ফেইসবুক লাইভে এসে বলেন, “ধর্ম যার যার, আনন্দ সবার।”

অনুধাবনঃ

চিন্তা করে দেখুন, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিত্ব এবং কথার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ডক্টরেট ডিগ্রীপ্রাপ্ত একজন উচ্চ শিক্ষিত মন্ত্রী কিংবা, ব্যারিস্টারী পাশ করা একজন প্রতিভাবান হাইকোর্টের উকিল ইসলামের মূল শিক্ষা তাওহীদ ভুলে গিয়ে “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার” এমন কুফুরী মন্ত্র জপতে আরম্ভ করেছে। দীপু মনি কিন্তু হজ্জ করে এসেছেন, আর সুমন সাহেব নিজেকে মুসলমান বলে দাবী করেন। নিজেকে মুসলমান দাবী করার পরেও এমন শিক্ষিত লোকেরাই যদি এইভাবে পথভ্রষ্ট হয় তাহলে, যেই সমস্ত অশিক্ষিত বা কম শিক্ষিত লোকেরা দুনিয়ার লোভে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ বা শ্রমিক লীগে যোগ দিচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর কথা-বার্তা দ্বারা যে তারা আরো বেশি গোমরাহ হচ্ছে সেটা খুব সহজেই অনুমেয়।

copy back2 alla

Post a Comment

0 Comments