▌ফিকহুল ফিতান : ফিতনায় অনুসরণীয় নীতিমালা [২য় পর্ব]

ফিকহুল ফিতান : ফিতনায় অনুসরণীয় নীতিমালা [২য় পর্ব]
·রচয়িতা: আল্লামাহ সুলাইমান বিন সালিমুল্লাহ আর-রুহাইলি হাফিযাহুল্লাহ
·[৪র্থ মূলনীতি: উলামাদের সাথে থাকা এবং তাঁদের থেকে ইলম গ্রহণ করা]

উলামাদের সাথে থাকা, তাঁদের থেকে ইলম নেওয়া এবং তাঁদের আদবে সজ্জিত হওয়া ফিতনার একটি অন্যতম ফিকহ। মানুষ ততদিন পর্যন্ত কল্যাণের মধ্যে থাকবে, যতদিন নিজেদের উলামাদের অধিকার তাদের অবগতিতে থাকবে এবং তারা উলামাদের সংসর্গে থাকবে। তারা ততদিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে, যতদিন উলামারা তাদের মাঝে অবশিষ্ট থাকবেন। উলামাদের অনুপস্থিতি এক বিরাট আপদ এবং এ এমন এক দ্বার, যার প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছে শয়তান; যাতে সে ফিতনার প্রসার ঘটাতে পারে। ‘তাবাকাতুল হানাবিলাহ’ গ্রন্থে এসেছে, আসরাম রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “উলামাদের কাছে প্রতিভাত হয়েছে, আমাদের শাইখ আবু আব্দুল্লাহ আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন হাম্বাল রাদিয়াল্লাহু আনহুর তিরোধানের দরুন যে মুসিবত নেমে এসেছে, তার বিশালতা কতটুকু। যিনি ছিলেন ষাট বছর যাবৎ আমাদের ইমাম, আমাদের শিক্ষক এবং আমাদের পূর্ববর্তীদের শিক্ষক। আলিমের মৃত্যু এমন এক মুসিবত, যা সংশোধনের নয়, এমন ত্রুটি যা শোধরানোর নয়।

আমার মনে হয়েছে, আল্লাহ ও মুসলিমদের শত্রু ইবলিস তার সৈন্যদল নিয়ে ফিতনার উপকরণ প্রস্তুত রেখেছিল এবং সেসব মাধ্যম ও উপকরণ নিয়ে তারা অপেক্ষা করছিল তাঁর মৃত্যুর। কারণ তিনি ওদের বাতিলকে করেছিলেন নির্বাপিত, ওদের দলবলকে করেছিলেন অবলুপ্ত। আমি সর্বপ্রথম এক বিদআতকে ছড়িয়ে পড়তে দেখেছি, যা ছিল ভ্রষ্টকারী ফিতনার অন্তর্গত, হেদায়েতের পর ভ্রান্তির আওতাভুক্ত। আবু আব্দুল্লাহর জীবদ্দশায় আমি একটি সম্প্রদায়কে দেখেছি, যারা কিছু ইবাদতের উপকরণ আর স্বল্প ইলম নিয়ে গৃহে অবস্থান করত। কল্যাণের প্রতি তাদের ভালোবাসা দেখে লোকেরা তাদের সম্মান দেখাল। ফলে নিজেদের স্বল্প ইলম সত্ত্বেও তাদের মধ্যে অহমিকা প্রবেশ করল।

তাদের সবাই অদ্ভুত কথা বলে বেড়াত। আল্লাহ তাদের ব্যাপারটি প্রতিহত করেছেন শাইখের বক্তব্য দিয়ে। আমরা যাদের থেকে ইলম নিয়েছি, তাঁদের মধ্যে সর্বোত্তম পারিতোষিক আল্লাহ তাঁকে (ইমাম আহমাদকে) দান করুন। ওই সম্প্রদায়ের যারই এমন বক্তব্য ছিল, তারই পূর্বে কৃত গুপ্ত অপরাধ ফাঁসের এবং লাঞ্ছনার কারণ ছিলেন তিনি (ইমাম আহমাদ)। আমি সেসবের অনেক বিষয় মুখস্থ রেখেছি। আসলে তাদের ব্যাপারটি ইবলিস ও তার সাঙ্গপাঙ্গের ষড়যন্ত্র ছিল। তিনি তাদের একজনকে বলেন, ‘তুমি, হ্যাঁ, তুমি, এবং তোমার সমমনা যারা আছে, তোমরা বল। ইতঃপূর্বে তোমরা ছাড়াও অন্যরা বলেছে। অনন্তর তাদের অন্তরে কিছু প্রক্ষিপ্ত করা হয়, যেখানে খুব বেশি ইলম নেই। তার কাছে সুশোভিত করে তোলা হয়, সে যেন বিষয়টি শুরু করে, যাতে সে লোকদের খুশি করতে সক্ষম হয়। নিশ্চয় প্রত্যেক নবউদ্ভাবিত কর্মই বিদআত, আর প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা, আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতার অবস্থান হবে জাহান্নামে।’

আমি (আসরাম রাহিমাহুল্লাহ) মনে করি, ওই সম্প্রদায়ের অন্যরা খ্যাতি অনুসন্ধান করত। চাইত, তাদের কথা মানুষ বলুক। ইতঃপূর্বে আরেক সম্প্রদায় বিভিন্ন বিদআত প্রকাশ করে লাঞ্ছিত হয়েছে। অনিষ্ট ও অকল্যাণের মধ্যে কোনো ব্যক্তির প্রধান হওয়ার চেয়ে কল্যাণের মধ্যে অনুসারী-অনুগামী হওয়াই অধিক উত্তম।” [তাবাকাতুল হানাবিলাহ, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৬৯]

·
[৫ম মূলনীতি: মুসলিমদের দল ও তাদের নেতাকে আঁকড়ে ধরা]

ফিতনার একটি অন্যতম ফিকহ—মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ দল ও তাদের নেতাকে আঁকড়ে ধরা। (*) ঐক্যবদ্ধ দল কল্যাণের মূল। আর নেতা ছাড়া ঐক্যবদ্ধ দল হয় না। পক্ষান্তরে বিচ্ছিন্নতা অকল্যাণের মূল।

[(*) অনুবাদকের টীকা: ‘মুসলিমদের জামাত কারা’ এমন প্রশ্নের উত্তরে ইমাম ইবনু বায রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “যারা ইসলামকে আঁকড়ে রয়েছে এবং নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কর্মপন্থা অবলম্বন করে চলেছে, তারা পৃথিবীর যে ভূখণ্ডে বা যে প্রান্তেই থাকুক না কেন, তারাই মুসলিমদের জামাত; যদিও তারা সংখ্যায় কম হয়। আমেরিকার যে মুসলিম জনগোষ্ঠী ইসলামকে আঁকড়ে রয়েছে, তারা মুসলিমদের জামাত। লন্ডনে যে মুসলিম জনগোষ্ঠী ইসলামকে আঁকড়ে রয়েছে, তারা মুসলিমদের জামাত। তদ্রুপ ফ্রান্স বা হল্যান্ড প্রভৃতি রাষ্ট্রে যে মুসলিম জনগোষ্ঠী ইসলামকে আঁকড়ে রয়েছে, তারা মুসলিমদের জামাত। অনুরূপভাবে যে কোনো স্থানে, তা সে আরব জাজিরায় হোক, কিংবা মিশর, সিরিয়া, ইন্দোনেশিয়াতেই হোক, সেখানকার যে মুসলিম জনগোষ্ঠী ইসলামকে আঁকড়ে রয়েছে, তারাই মুসলিমদের জামাত।” (ইমাম ইবনু বাযের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে “মা মা‘না জামাআতিল মুসলিমিনা ফিল হাদিস”– শীর্ষক নিবন্ধ দ্রষ্টব্য)

এমনকি হকের ওপর অবিচল থাকা একজন ব্যক্তিও মুসলিমদের জামাত বিবেচিত হবে। সাইয়্যিদুনা ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, “হকের অনুসারী ব্যক্তিই (মুসলিমদের) জামাত, যদিও তুমি একজন হয়ে থাক।” (লালাকাঈ কৃত শারহু উসুলি ইতিকাদ, বর্ণনা নং: ১৬০; আলবানি কৃত মিশকাতের টীকা, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৬; সনদ: সহিহ) টীকা সমাপ্ত]

হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “লোকজন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কল্যাণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করত, আর আমি তাঁকে অকল্যাণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতাম; এই ভয়ে যেন আমি সেসবের মধ্যে পতিত না হই।” আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসুল, আমরা জাহেলি যুগে অকল্যাণকর অবস্থায় জীবনযাপন করতাম, অতঃপর আল্লাহ আমাদের এ কল্যাণ দান করেছেন। এ কল্যাণকর অবস্থার পর আবার কোনো অকল্যাণ আসবে কি?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ।’ আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘ঐ অকল্যাণের পর কোনো কল্যাণ আসবে কি?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ। তবে তা মন্দ মিশ্রিত।’ আমি বললাম, ‘সেই মন্দ কী?’ তিনি বললেন, ‘এমন একদল লোকের উদ্ভব হবে, যারা আমার সুন্নাত ত্যাগ করে অন্যপথে পরিচালিত হবে। তাদের কাজে ভালো-মন্দ সবই থাকবে।’

আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, ‘এরপর কি আরো অকল্যাণ আসবে?’ তিনি জবাব দিলেন, ‘হ্যাঁ, তখন জাহান্নামের দিকে আহ্বানকারী দাঈদের আবির্ভাব হবে। যে-ই তাদের ডাকে সাড়া দিবে তাকেই তারা জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে।’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসুল, এদের পরিচয় বর্ণনা করুন।’ তিনি প্রত্যুত্তর করলেন, ‘তারা আমাদেরই সম্প্রদায়ভুক্ত এবং কথা বলবে আমাদেরই ভাষায়।’ আমি বললাম, ‘আমি যদি এ অবস্থায় পড়ে যাই তাহলে আপনি আমাকে কী করার নির্দেশ দেন?’ তিনি বললেন, ‘মুসলিমদের দল ও তাঁদের নেতাকে অাঁকড়ে ধরবে।’ আমি শুধোলাম, ‘যদি মুসলিমদের এমন দল ও নেতা না থাকে?’ তিনি বলেন, ‘তখন তুমি তাদের সকল দল-উপদলের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করবে এবং মৃত্যু না আসা অবধি বৃক্ষমূল দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে হলেও তোমার দ্বীনের ওপর অটল থাকবে।’ [সহিহ বুখারি, হা/৩৬০৬; সহিহ মুসলিম, হা/১৮৪৭]

ইবনু উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছেন, মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বক্তৃতা করে বললেন, ‘এ ব্যাপারে (খেলাফতের ব্যাপারে) কারও কিছু বলার ইচ্ছে হলে সে আমাদের সামনে মাথা তুলুক। নিশ্চয় এ ব্যাপারে আমরাই তাঁর ও তাঁর পিতার চেয়ে অধিক হকদার।’ তখন হাবিব বিন মাসলামা রাহিমাহুল্লাহ তাঁকে বললেন, ‘আপনি এ কথার জবাব দেননি কেন?’ তখন আব্দুল্লাহ ইবনু উমার বললেন, ‘আমি তখন আমার গায়ের চাদর ঠিক করলাম এবং এ কথা বলার ইচ্ছে করলাম যে, এ বিষয়ে ওই ব্যক্তিই অধিক হকদার, যিনি ইসলামের জন্য আপনার ও আপনার পিতার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন।’ কিন্তু আশঙ্কা করলাম, আমার এ কথায় ঐক্যে ফাটল ধরবে, রক্তপাত ঘটবে এবং আমার এ কথার অন্য রকম অর্থ করা হবে। আর আল্লাহ জান্নাতে যে নেয়ামত তৈরি করে রেখেছেন তা স্মরণ করে কথা বলা থেকে বিরত থাকলাম।’ তখন হাবিব রাহিমাহুল্লাহ বললেন, ‘আপনি (ফিতনা থেকে) রক্ষা পেয়েছেন এবং বেঁচে গেছেন।’ [সহিহ বুখারি, হা/৪১০৮]

আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর খুতবায় বলেছেন, “হে লোকসকল, শাসকের আনুগত্য ও ঐক্যবদ্ধ দলকে আঁকড়ে ধরা তোমাদের কর্তব্য। কেননা এটা আল্লাহর রজ্জু, যা আঁকড়ে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। নিশ্চয় বিচ্ছিন্নতার মাঝে তোমাদের ভালোলাগার বিষয়গুলো সেসবের চেয়ে উত্তম, যেগুলোকে তোমরা ঐক্যবদ্ধ থাকার মাঝে অপছন্দ করছ।” [ইবনু আব্দিল বার্র কৃত তামহিদ, খণ্ড: ২১; পৃষ্ঠা: ২৭৪; তাবারানি কৃত মুজামুল কাবির, খণ্ড: ৯; পৃষ্ঠা: ১৯৮; সনদ: দুর্বল (আলবানি)]

শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “ঐক্য ও সংহতির ফলাফল আল্লাহর রহমত, আল্লাহর সন্তোষ এবং বান্দার প্রতি তাঁর প্রশংসা। এছাড়াও আছে দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা এবং মহাসংকটের দিন চেহারার ঔজ্জ্বল্য। অপরদিকে বিচ্ছিন্নতার ফলাফল—আল্লাহর আজাবে পতিত হওয়া, তাঁর রহমত থেকে বিতাড়িত হওয়া এবং মহাসংকটের দিন চেহারার মলিনতা; এছাড়াও আছে ফের্কাবাজদের সাথে রসুলের সম্পর্কচ্ছেদ সাধন।” [মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৭]

তিনি আরও বলেছেন, “এজন্য আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের একটি অন্যতম মূলনীতি—মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ দলকে আঁকড়ে ধরা, শাসকদের সাথে যুদ্ধ না করা এবং ফিতনার সময় যুদ্ধ থেকে বিরত থাকা। পক্ষান্তরে বিদআতিরা—যেমন মুতাজিলি ফের্কার লোকেরা—শাসকদের সাথে যুদ্ধ করাকে তাদের দ্বীনের মূলনীতি গণ্য করে থাকে।” [মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ২৮; পৃষ্ঠা: ১২৮]

·
[৬ষ্ঠ মূলনীতি: বড়োদের আঁকড়ে ধরা এবং ছোটোদের একক বক্তব্য থেকে দূরে থাকা]

বড়োদের আঁকড়ে ধরা এবং ছোটোদের একক ও বিচ্ছিন্ন বক্তব্য থেকে বেঁচে থাকা ফিতনার একটি ফিকহ। মতানৈক্য সংঘটিত হলে, বিশেষত ফিতনা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মতানৈক্য হলে, বয়সে ও ইলমে যাঁরা বড়ো তাঁদেরকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করবেন এবং ছোটোদের একক ও বিচ্ছিন্ন বক্তব্য থেকে দূরে থাকবেন। কেননা যুবকদের এমন ঝাঁঝ আছে, যা ব্যক্তিকে সত্বর ফিতনার দিকে নিয়ে যায়। পক্ষান্তরে বয়োজ্যেষ্ঠ উলামারা ইলমের ক্ষেত্রেও বড়ো, আবার বয়সেও বড়ো। তাঁরা ইলমের সাথে সাথে জীবনের অভিজ্ঞতাও সঞ্চয় করেছেন। তাঁদের মাঝে যৌবন ও তারুণ্যের ঝাঁঝ নিষ্প্রাণ হয়ে গেছে, আর প্রভাব লাভ করেছে ধীরস্থিরতা। ফলে তাঁরা ইলম ও প্রজ্ঞা ব্যতিরেকে কোনো মন্তব্য করেন না। তাঁরা ইলমের ভিত্তিতে মন্তব্য করেন এবং বাস্তবতালব্ধ প্রজ্ঞা অনুযায়ী উপলব্ধি করেন। তাঁদের সাথেই আছে বরকত। ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
الْبَرَكَةُ مَعَ أَكَابِرِكُمْ “বরকত আছে তোমাদের বয়োজ্যেষ্ঠদের সাথে।” [ইবনু হিব্বান, হা/৫৫৯; মুস্তাদরাকুল হাকিম, হা/২১০; সনদ: সহিহ]

তাবে তাবেয়ি ইমাম সুফইয়ান ইবনু উয়াইনা রাহিমাহুল্লাহর উপস্থিতিতে ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক রাহিমাহুল্লাহকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমাদের বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছে কথা বলতে আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে।” [যাহাবি কৃত সিয়ারু আলামিন নুবালা, খণ্ড: ৮; পৃষ্ঠা: ৪২০]

আল্লাহ আপনাকে তৌফিক দিন, আপনি গভীরভাবে লক্ষ করুন, সাহাবিদের অন্তরের অস্থিরতার সময় তাঁদের কী অবস্থা হয়েছিল; যখন তাঁদের কাছে পৌঁছেছিল নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তিরোধানের সংবাদ। ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছেন, “আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বের হলেন। তখন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু লোকজনের সাথে বাক্যালাপে লিপ্ত ছিলেন। আবু বকর তাঁকে বললেন, ‘বসে পড়ুন।’ তিনি মানলেন না। আবু বকর পুনরায় বললেন, ‘বসে পড়ুন।’ তিনি আবারও মানলেন না। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু শাহাদাতের বাক্য দ্বারা বক্তব্য আরম্ভ করলেন। তখন লোকেরা উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ছেড়ে তাঁর দিকে আকৃষ্ট হলো।

আবু বকর বললেন, আম্মা-বা‘দ (অতঃপর) তোমাদের মাঝে যারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইবাদত করতে, তারা জেনে রেখ, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্যিই মারা গেছেন। আর যারা মহান আল্লাহর ইবাদত করতে, তারা জেনে রেখ, নিশ্চয় আল্লাহ চিরঞ্জীব, তাঁর কখনোই মৃত্যু হবে না। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘মুহাম্মাদ একজন রসুল মাত্র। তাঁর পূর্বেও অনেক রসুল চলে গেছেন। অতএব যদি তিনি মারা যান অথবা নিহত হন, তাহলে কি তোমরা (কাফেরদের মতো) পায়ের গোড়ালিতে ভর করে পেছনে ফিরে যাবে? আর যদি কেউ সেরূপ পেছনে ফিরেও যায়, তবে সে কখনোই আল্লাহর সামান্য ক্ষতিও করতে পারবে না। অচিরেই আল্লাহ কৃতজ্ঞদের পুরস্কৃত করবেন।’ (আলে ইমরান: ১১৪) আল্লাহর কসম, মনে হচ্ছিল, যেন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর তেলাওয়াত করার পূর্বে লোকদের জানাই ছিল না, আল্লাহ এ আয়াত নাজিল করেছেন। এখনই যেন লোকেরা আয়াতটি তাঁর কাছ থেকে পেলেন। প্রতিটি মানুষকেই তখন ওই আয়াত তেলাওয়াত করতে শোনা যাচ্ছিল।” [সহিহ বুখারি, হা/১২৪১]

আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন কথা বললেন, আর তিনি ছিলেন বয়োজ্যেষ্ঠ, তখন সবাই উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর বক্তব্যের প্রতি আবেগের আকর্ষণ থাকা সত্ত্বেও আবু বকরের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন।

·
[৭ম মূলনীতি: কল্যাণকামী ও বুদ্ধিমান জ্ঞানী মুমিনদের সংসর্গে থাকা]

ফিতনার একটি ফিকহ হলো—কল্যাণকামী লোকদের সাথে থাকা, যাঁরা কল্যাণের ক্ষেত্রে বুদ্ধিমান এবং ইমান ও জাগ্রত জ্ঞানের অধিকারী। প্রকৃতপক্ষে বিবেক-বুদ্ধি অকল্যাণ থেকে বিরত রাখে। আসলে যার বুদ্ধি কম, তার প্রবলভাবে ফিতনায় পতিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবু মুসা আল-আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “কেয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে ‘হারজ’ হবে।” লোকেরা বলল, “হে আল্লাহর রসুল, হারজ কী?” তিনি বললেন, ‘হত্যা।’ কতিপয় সাহাবি বলে ওঠলেন, “হে আল্লাহর রসুল, এখন তো অনেক লোককে হত্যা করা হচ্ছে। আমরা নিকট অতীতে এত এত মুশরিককে হত্যা করেছি!”

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “বিষয়টি মুশরিকদের হত্যা করা নয়, বরং তোমরা পরস্পরকে হত্যা করবে।” তাঁরা বললেন, “হে আল্লাহর রসুল, আমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব থাকবে?” তিনি প্রত্যুত্তর করলেন, “তোমাদের মাঝে মহান আল্লাহর কিতাব থাকবে।” তাঁরা জিজ্ঞেস করলেন, “হে আল্লাহর রসুল, তখন কি আমাদের বিবেক-বুদ্ধি অবশিষ্ট থাকবে?” রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “সে যুগের অধিকাংশ লোকের বিবেক-বুদ্ধি ছিনিয়ে নেওয়া হবে এবং তদস্থলে থাকবে নির্বোধ লোকজন। তারা মনে করবেন, তারা নিজেরা কিছু একটার ওপর রয়েছে। বাস্তবে তারা কোনো ভিত্তির ওপরেই নেই।” [আহমাদ, হা/১৯৫১০; ইবনু মাজাহ, হা/৩৯৫৯; হাকিম, হা/৮৩৯২; সনদ: সহিহ]

শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “অন্তরকে তাকওয়া দিয়ে আবাদ করা হলে সকল বিষয় স্পষ্ট ও উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। তমসাচ্ছন্ন ধ্বংসপ্রাপ্ত অন্তর ঠিক এর বিপরীত। হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান বলেছেন, ‘নিশ্চয় মুমিনের অন্তরে একটি দেদীপ্যমান প্রদীপ রয়েছে।’ সহিহ হাদিসে এসেছে, ‘দাজ্জালের চক্ষুদ্বয়ের মাঝে লেখা থাকবে—কাফির, যা সাক্ষর-নিরক্ষর সকল মুমিনই পড়তে পারবে।’ (সহিহ মুসলিম, হা/২৯৩৪; ফিতনা অধ্যায়; অধ্যায় নং: ৫৪; পরিচ্ছেদ: ২০)

এ থেকে প্রতীয়মান হয়, মুমিনের কাছে এমন অনেক বিষয় স্পষ্ট হবে, যা অন্যের কাছে স্পষ্টরূপে প্রতিভাত হয় না; বিশেষ করে ফিতনার সময়। মুমিনের কাছে আল্লাহ ও তদীয় রসুলের প্রতি মিথ্যারোপকারী জালিয়াতদের প্রকৃত অবস্থা প্রকটিত হয়ে যাবে। কেননা দাজ্জাল আল্লাহর সবচেয়ে বড়ো মিথ্যুক মাখলুক। আল্লাহ তার হাতে নানাবিধ ভীতিকর বিষয় এবং কম্পন আনয়নকারী বিভিন্ন প্রতারণার অবতারণা করবেন। এমনকি তাকে যে-ই দেখবে, সে-ই তার ফিতনায় পড়ে যাবে। এ সত্ত্বেও আল্লাহ মুমিনের কাছে তাকে উন্মোচিত করে দেবেন। এমনকি মুমিন ব্যক্তি তাকে মিথ্যুক ও ভ্রান্ত বলে দৃঢ় বিশ্বাস করে ফেলবে। অন্তরে ইমান যখন বলদৃপ্ত হয়, তখন ব্যক্তির কাছে সকল বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায় এবং সে সেসবের অপ্রকাশ্য হালহকিকত জেনে ফেলে। পক্ষান্তরে ইমান দুর্বল হলে এসব বিষয় প্রতিভাত হওয়ার ব্যাপারটিও দুর্বল হয়ে যায়। এ বিষয়ের উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত অন্ধকার গৃহে দেদীপ্যমান প্রদীপ ও ম্রিয়মাণ চেরাগের মতো।” [মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ২০; পৃষ্ঠা: ৪৫]

·[৮ম মূলনীতি: ফিতনার সময় পরিবর্তন ও দ্রুত বদলে যাওয়া থেকে সাবধান হওয়া]

ফিতনার সময় দ্রুত বদলে যাওয়া থেকে এবং ভোল পালটানো থেকে সাবধান থাকা ফিতনার ফিকহের অন্তর্গত। সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরলে এ থেকে বেঁচে থাকা যায়। সালাফগণ বলেছেন, “যে সুন্নাহ পরিত্যাগ করে, তার পরিবর্তন ঘটে অত
্যাধিক।” বর্ণিত হয়েছে, আবু মাসউদ আল-আনসারি রাদিয়াল্লাহু আনহু একবার হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট প্রবেশ করে বললেন, “হে আব্দুল্লাহর পিতা, আমাদের সদুপদেশ দিন।” হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু বললেন, “আপনার কাছে কি দৃঢ় প্রত্যয় (ইয়াকিন) আসেনি?” তিনি জবাব দিলেন, “আমার রবের শপথ, অবশ্যই এসেছে।” এবার হুযাইফা বললেন, “নিশ্চয় সত্যিকারের পথভ্রষ্টতা হচ্ছে—গতকাল যেটাকে আপনি খারাপ বলতেন, আজ সেটাকে ভালো বলছেন, গতদিন যেটাকে ভালো বলতেন, আজ সেটাকে খারাপ বলছেন। ভোল পালটানো থেকে সাবধান! কারণ আল্লাহর দ্বীন একটাই।” [মুসান্নাফ আব্দির রাযযাক, হা/২০৪৫৪; মুস্তাদরাকুল হাকিম, হা/৮৫৪৫]

হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, “তোমাদের কেউ যদি জানতে চায়, সে ফিতনাগ্রস্ত হয়েছে কিনা, তাহলে সে যেন এ বিষয়ের প্রতি লক্ষ করে। যদি সে কোনো বিষয়কে হালাল মনে করে, যেটাকে আগে হারাম মনে করত, তাহলে সে ফিতনাগ্রস্ত হয়েছে। যদি সে কোনো বিষয়কে হারাম মনে করে, যেটাকে আগে হালাল মনে করত, তাহলে সে ফিতনাগ্রস্ত হয়েছে।” [মুসান্নাফ ইবনি আবি শাইবা, হা/৩৭৩৪৩; মুস্তাদরাকুল হাকিম, হা/৮৪৪৩; বর্ণনাটিকে হাকিম বিশুদ্ধ বলেছেন]

·
[৯ম মূলনীতি: দলাদলি না করা এবং ওহি-বিরোধী বিষয়ের অথবা আল্লাহর অবাধ্যতা হয় না এমন ক্ষেত্রে শাসকের কর্মপন্থা-বিরোধী বিষয়ের পৃষ্ঠপোষকতা না করা]

ফিতনার একটি অন্যতম ফিকহ—দলাদলি না করা, আল্লাহর কিতাব ও রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহয় যা বর্ণিত হয়েছে তার বিরোধী বিষয়ের পৃষ্ঠপোষকতা না করা এবং আল্লাহর অবাধ্যতা হয় না এমন ক্ষেত্রে শাসকের কর্মপন্থা-বিরোধী বিষয়কে সহয়তা না করা। কেননা এটাই শরিয়তসম্মত বিষয়। এটাই জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ রাখে। মহান আল্লাহ বলেছেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ ۖ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۚ ذَٰلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا “হে মুমিনগণ, তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর, আনুগত্য করো রসুলের এবং তোমাদের মধ্যকার কর্তৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের। আর কোনো বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ করো, তাহলে সেই বিষয়কে আল্লাহ ও রসুলের দিকে প্রত্যার্পণ করো, যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ইমান রেখে থাক। এটাই উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর।” [সুরা নিসা: ৫৯]

এর বাইরে অন্য কিছুর প্রতি গোঁড়ামি রাখা এবং তা নিয়ে দলাদলি করাই অকল্যাণ, বিভেদ ও ফিতনার ভিত্তিপ্রস্তর। মহান আল্লাহ বলেছেন,
إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا لَسْتَ مِنْهُمْ فِي شَيْءٍ ۚ إِنَّمَا أَمْرُهُمْ إِلَى اللَّهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُمْ بِمَا كَانُوا يَفْعَلُونَ “নিশ্চয় যারা তাদের দ্বীনকে বিচ্ছিন্ন করেছে এবং দলে-দলে বিভক্ত হয়েছে, তাদের কোনো ব্যাপারে তোমার দায়িত্ব নেই। তাদের বিষয়টি স্রেফ আল্লাহর নিকট। তারপর তারা যা করত, তিনি তাদেরকে সে বিষয়ে অবগত করবেন।” [সুরা আনআম: ১৫৯]

আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ خَرَجَ مِنَ الطَّاعَةِ وَفَارَقَ الْجَمَاعَةَ فَمَاتَ مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً وَمَنْ قَاتَلَ تَحْتَ رَايَةٍ عُمِّيَّةٍ يَغْضَبُ لِعَصَبَةٍ أَوْ يَدْعُو إِلَى عَصَبَةٍ أَوْ يَنْصُرُ عَصَبَةً فَقُتِلَ فَقِتْلَةٌ جَاهِلِيَّةٌ وَمَنْ خَرَجَ عَلَى أُمَّتِي يَضْرِبُ بَرَّهَا وَفَاجِرَهَا وَلاَ يَتَحَاشَ مِنْ مُؤْمِنِهَا وَلاَ يَفِي لِذِي عَهْدٍ عَهْدَهُ فَلَيْسَ مِنِّي وَلَسْتُ مِنْهُ “যে ব্যক্তি (শাসকের) আনুগত্য থেকে বেরিয়ে গেল এবং জামাআত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করল। আর যে ব্যক্তি লক্ষ্যহীন নেতার পতাকাতলে যুদ্ধ করে (জানে না, কেন যুদ্ধ করছে, জানে না, যুদ্ধের কারণ ন্যায়নিষ্ঠ কিনা), গোত্ৰপ্রীতির জন্য ক্রুদ্ধ হয় অথবা গোত্রপ্রীতির দিকে আহ্বান করে অথবা গোত্রের সাহায্যার্থে যুদ্ধ করে, আর তাতে নিহত হয়, সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করে। যে ব্যক্তি আমার উম্মতের ওপর আক্রমণ করে, আমার উম্মতের ভালোমন্দ সকলকেই হত্যা করে, মুমিনকেও রেহাই দেয় না এবং যার সাথে সে ওয়াদাবদ্ধ হয় তার ওয়াদাও রক্ষা করে না, সে আমার কেউ নয়, আমিও তার কেউ নই।” [সহিহ মুসলিম, হা/১৮৪৮; প্রশাসন ও নেতৃত্ব অধ্যায় (৩৪); পরিচ্ছেদ: ১৩]

জুনদুব বিন আব্দুল্লাহ আল-বাজালি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ قُتِلَ تَحْتَ رَايَةٍ عُمِّيَّةٍ يَدْعُو عَصَبِيَّةً أَوْ يَنْصُرُ عَصَبِيَّةً فَقِتْلَةٌ جَاهِلِيَّةٌ “যে ব্যক্তি লক্ষ্যহীন নেতার পতাকাতলে যুদ্ধ করে, গোত্রপ্রীতির দিকে আহ্বান জানায় এবং গোত্রপ্রীতির কারণেই সাহায্য করে, তার মৃত্যু জাহেলিয়াতের মৃত্যু।” [সহিহ মুসলিম, হা/১৮৫০; প্রশাসন ও নেতৃত্ব অধ্যায় (৩৪); পরিচ্ছেদ: ১৩]

হাসান রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর ব্যাপার নিয়ে পরস্পরের প্রতি কঙ্করনিক্ষেপের দিবসে আমি তাদের লক্ষ করেছি। এমনকি আমি তাকিয়ে দেখছিলাম, কিন্তু দাঙ্গাহাঙ্গামার প্রচণ্ডতায় আমি দুনিয়ার আকাশ দেখতে পাচ্ছিলাম না! এমনসময় একটি প্রস্তরের পার্শ্ব থেকে আমি এক মহিলার কথা শুনতে পেলাম। আমাকে বলা হলো, ‘ইনি উম্মুল মুমিনিন (তিনি ছিলেন আম্মিজান উম্মু সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা)।’ আমি তাঁকে বলতে শুনলাম, ‘নিশ্চয় তোমাদের নবি তার থেকে মুক্ত, যে নিজের দ্বীনকে বিচ্ছিন্ন করেছে এবং দলাদলিতে লিপ্ত হয়েছে’।” [আহমাদ কৃত আল-ইলাল ওয়া মারিফাতুর রিজাল, বর্ণনা নং: ৩৫৯৭]

·
[১০ম মূলনীতি: ফিতনা আনয়ন না করা, বরং ফিতনা এড়িয়ে চলা]

ফিতনার একটি ফিকহ—ফিতনাকে পরিহার করা, ফিতনা আনয়ন না করা। ফিতনা সংঘটনের সময় এবং সংঘটনের পূর্বেও ফিতনা থেকে দূরে থাকতে হবে। পাশাপাশি ফিতনাবাজ লোকদের থেকে দূরে থাকতে হবে; তাদের কাছে উপস্থিত থাকা যাবে না, তাদের কথাও শোনা যাবে না। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
سَتَكُونُ فِتَنٌ الْقَاعِدُ فِيهَا خَيْرٌ مِنْ الْقَائِمِ وَالْقَائِمُ فِيهَا خَيْرٌ مِنْ الْمَاشِي وَالْمَاشِي فِيهَا خَيْرٌ مِنْ السَّاعِي مَنْ تَشَرَّفَ لَهَا تَسْتَشْرِفْهُ فَمَنْ وَجَدَ مِنْهَا مَلْجَأً أَوْ مَعَاذًا فَلْيَعُذْ بِه “অচিরেই অনেক ফিতনা দেখা দেবে। তখন উপবিষ্ট ব্যক্তি দাঁড়ানো ব্যক্তির চেয়ে উত্তম হবে। দাঁড়ানো ব্যক্তি চলমান ব্যক্তির চেয়ে উত্তম হবে। আর চলমান ব্যক্তি ধাবমান (দৌড়ে চলা) ব্যক্তির চেয়ে উত্তম হবে। যে ব্যক্তি ফিতনার দিকে তাকাবে ফিতনা তাকে ঘিরে ধরবে। তখন কেউ যদি কোনো আশ্রয়স্থল কিংবা নিরাপদ জায়গা পায়, তাহলে সে যেন সেখানে আত্মরক্ষা করে।” [সহিহ বুখারি, হা/৭০৮১; সহিহ মুসলিম, হা/২৮৮৬]

মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
تَكُونُ فِتْنَةٌ النَّائِمُ فِيهَا خَيْرٌ مِنَ الْيَقْظَانِ وَالْيَقْظَانُ فِيهَا خَيْرٌ مِنَ الْقَائِمِ وَالْقَائِمُ فِيهَا خَيْرٌ مِنَ السَّاعِي فَمَنْ وَجَدَ مَلْجَأً أَوْ مَعَاذًا فَلْيَسْتَعِذ “অচিরেই ফিতনা দেখা দেবে। তখন ঘুমন্ত লোক জাগ্রত লোক থেকে উত্তম হবে। আর জাগ্রত ব্যক্তি উত্তম হবে দাঁড়ানো ব্যক্তি থেকে এবং দণ্ডায়মান লোক উত্তম হবে ধাবমান লোক থেকে। তখন যদি কোনো লোক আশ্রয়ের জায়গা কিংবা নিরাপদ জায়গা পায়, তবে সে যেন তাতে আশ্রয় গ্রহণ করে।” [সহিহ মুসলিম, হা/২৮৮৬; ফিতনা অধ্যায় (৫৪); পরিচ্ছেদ: ৩]

আবু বাকরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِنَّهَا سَتَكُونُ فِتَنٌ أَلاَ ثُمَّ تَكُونُ فِتْنَةٌ الْقَاعِدُ فِيهَا خَيْرٌ مِنَ الْمَاشِي فِيهَا وَالْمَاشِي فِيهَا خَيْرٌ مِنَ السَّاعِي إِلَيْهَا أَلاَ فَإِذَا نَزَلَتْ أَوْ وَقَعَتْ فَمَنْ كَانَ لَهُ إِبِلٌ فَلْيَلْحَقْ بِإِبِلِهِ وَمَنْ كَانَتْ لَهُ غَنَمٌ فَلْيَلْحَقْ بِغَنَمِهِ وَمَنْ كَانَتْ لَهُ أَرْضٌ فَلْيَلْحَقْ بِأَرْضِهِ‏. قَالَ فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ مَنْ لَمْ يَكُنْ لَهُ إِبِلٌ وَلاَ غَنَمٌ وَلاَ أَرْضٌ قَالَ : يَعْمِدُ إِلَى سَيْفِهِ فَيَدُقُّ عَلَى حَدِّهِ بِحَجَرٍ ثُمَّ لْيَنْجُ إِنِ اسْتَطَاعَ النَّجَاءَ اللَّهُمَّ هَلْ بَلَّغْتُ اللَّهُمَّ هَلْ بَلَّغْتُ اللَّهُمَّ هَلْ بَلَّغْتُ “অচিরেই ফিতনা দেখা দেবে। সাবধান! যখন ফিতনা দেখা দেবে, তখন বসে থাকা লোক চলমান লোক থেকে উত্তম হবে। আর চলমান লোক উত্তম হবে ধাবমান লোক থেকে। সাবধান! যখন ফিতনা আপতিত হবে কিংবা সংঘটিত হবে, তখন যে ব্যক্তি উটের মালিক থাকবে সে যেন নিজের উট নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আর যার বকরি আছে সে যেন নিজের বকরি নিয়ে ব্যস্ত থাকে এবং যার জমিজমা আছে সে যেন নিজের জমিজমা নিয়ে ব্যস্ত থাকে।”

এ কথা শুনে জনৈক লোক বলল, “হে আল্লাহর রসুল, যার উট, বকরি ও জমিজমা কিছুই নেই, সে কী করবে?” তিনি জবাবে বললেন, “সে তার তরবারি হাতে নিয়ে প্রস্তরাঘাতে সেটার ধারালো অংশ চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলবে। এরপর তার পক্ষে নিরাপদে থাকা সম্ভব হলে সে নিরাপদে থাকুক।” তারপর তিনি বললেন, “হে আল্লাহ, আমি কি পৌঁছে দিয়েছি? হে আল্লাহ, আমি কি পৌঁছে দিয়েছি? হে আল্লাহ, আমি কি পৌঁছে দিয়েছি?” [সহিহ মুসলিম, হা/২৮৮৭; ফিতনা অধ্যায় (৫৪); পরিচ্ছেদ: ৩]

বান্দা যতদিন ফিতনা থেকে দূরে থাকবে, ততদিন সে কল্যাণের মধ্যে থাকবে। ফিতনার সন্নিকটে গেলেও সম্ভাবনা থাকে, এতে ব্যক্তির বিবেক-বুদ্ধি চলে যাবে এবং একপর্যায়ে সে ফিতনায় নিপাতিত হবে। হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “মাদকদ্রব্যও মানুষের বিবেক-বুদ্ধি ছিনিয়ে নিতে ফিতনার চেয়ে কার্যকরী হতে পারে না।” [মুসান্নাফ ইবনি আবি শাইবা, হা/৩৭৩৪৫]

ফিতনা থেকে দূরে থাকলে অন্তরে ফিতনা জেঁকে বসাকে প্রতিহত করা যায়। আর ফিতনা দূরীভূত করার চেয়ে ফিতনাকে প্রতিহত করা সহজ। যেমন দেশে ফিতনা আনয়ন না করলে ফিতনার সংঘটনকে প্রতিহত করা যায়, ফিতনাকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। আর প্রতিবিধানের চেয়ে প্রতিরোধ করা সহজ। কারণ ফিতনা সংঘটিত হয়ে গেলে, বিজ্ঞদের জন্যও একে নির্বাপিত করা কঠিন হয়ে পড়ে।

·
[১১শ মূলনীতি: ফিতনা প্রসঙ্গে তাঁকে জিজ্ঞেস করতে হবে, যিনি এসব বিষয়ে ভালো বলতে পারেন এবং যিনি সুন্নাহপন্থি ও ধীরস্থির হিসেবে সুপরিচিত]

ফিতনার একটি অন্যতম ফিকহ—ফিতনা প্রসঙ্গে তাঁকে জিজ্ঞেস করতে হবে, যিনি এসব বিষয়ে ভালো বলতে পারেন; পাশাপাশি তাঁকে সুন্নাহপন্থি ও ধীরস্থির হিসেবে সুপরিচিত হতে হবে এবং এমন হতে হবে যে, বিশ্বস্ত ও যোগ্য লোকেরা তাঁর নির্ভরযোগ্যতার ব্যাপারে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এই নীতিটি যেন পূর্বোদ্ধৃত নীতিকে শর্তযুক্ত করছে (অর্থাৎ ফিতনা পরিহারের পাশাপাশি ফিতনার সময় প্রাজ্ঞ উলামাদের কাছ থেকে সমাধান নিতে হবে)। হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “লোকজন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কল্যাণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করত, আর আমি তাঁকে অকল্যাণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতাম; এই আশঙ্কায় যেন আমি সেসবে আক্রান্ত না হই।” [সহিহ বুখারি, হা/৩৬০৬; সহিহ মুসলিম, হা/১৮৪৭]

·
[১২শ মূলনীতি: ফিতনার লড়াই পরিহার করা]

ফিতনার লড়াই পরিত্যাগ করা ফিতনার ফিকহের অন্তর্গত। সুতরাং ফিতনার লড়াই সংঘটিত হওয়ার সময় এবং সংঘটিত হওয়ার পরেও তা এড়িয়ে চলতে হবে। চাই এ লড়াই সশস্ত্র হোক, কিংবা জবানের—তা পরিহার করতে হবে। শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “ফিতনার লড়াই পরিত্যাগ করাই শরিয়তসম্মত। যেমন অনেক প্রসিদ্ধ শরয়ি দলিলে বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে। আর যেমনটি করেছেন ফিতনার লড়াইয়ে অংশ না নেওয়া ব্যক্তিবর্গ। কারণ নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানিয়েছেন, ফিতনার লড়াই পরিত্যাগ করাই উত্তম। ফিতনা থেকে পলায়ন করে ছাগল নিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় চলে যাওয়াই উত্তম—ফিতনার লড়াইয়ে অংশ নেওয়ার চেয়ে। এতদ্ব্যতীত তিনি কাউকে কাউকে নিষেধ করেছেন ফিতনার লড়াইয়ে অংশ নেওয়া থেকে এবং নির্দেশ দিয়েছেন কাঠের তরবারি ধারণ করতে।” [মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ৪৪১]

তাবেয়ি ইবনু সিরিন রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “ফিতনা যখন উদ্বেলিত হয়, তখন দশ হাজার সাহাবি জীবিত ছিলেন। তাঁদের একশজনও ওই ফিতনায় উপস্থিত হননি। বরং বলতে হয়, ফিতনায় হাজির হওয়া সাহাবিদের সংখ্যা ত্রিশও হবে না!” [খাল্লাল কৃত আস-সুন্নাহ, বর্ণনা নং: ৭২৮; গ্রন্থটির মুহাক্কিক ড. আতিয়্যা আয-যাহরানি বলেছেন, বর্ণনাটির সনদ বিশুদ্ধ]

এ বিষয়টি ভালোভাবে সংজ্ঞায়িত করা জরুরি। কেননা এক্ষেত্রে কেউ কেউ তালগোল পাকায়, কিংবা তার কাছে তালগোল পাকানো হয়। ফলে সে শরিয়তে অনুমোদিত লড়াইকেও ফিতনার লড়াইয়ের অন্তর্ভুক্ত করে ফেলে। যেমন খারেজিদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র ও জবানের লড়াইকে বলে, এটা ফিতনার লড়াই! যখন আমাদের দেশে বোমা বিস্ফোরণের মতো দুর্যোগ আপতিত হলো, তখন একদল লোক নীরব থাকার অবস্থান গ্রহণ করল! তারা বলল, এগুলো ফিতনা, আমরা এ নিয়ে বেহুদা আলাপ করব না! আবার একদল লোক ওই সকল সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাকে ‘বর্জনীয় ফিতনার লড়াই’ আখ্যা দিল।

তাই আমরা বলি, ফিতনার লড়াই বলতে সেই যুদ্ধ উদ্দেশ্য, যা সংঘটিত হয় মুসলিমদের দুটো দলের মধ্যে; আর তাদের উভয়েরই সংশয় (শুবহাত) থাকে এবং ভিত্তিযোগ্য একটা ব্যাখ্যা থাকে। শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “সুতরাং ফিতনার দৃষ্টান্ত হলো মুসলিম রাজাদের মাঝে ও মুসলিম দলগুলোর মাঝে সংঘটিত যুদ্ধসমূহ। অথচ যুদ্ধরত দু দলের প্রত্যেক দলই ইসলামের বিধিবিধান পালনকারী (বা নিজেদের ওপর সেসব বিধান আবশ্যক বলে বিশ্বাসকারী)। যেমন জঙ্গে জামাল ও সিফফিনের যুদ্ধে অংশ নেওয়া ব্যক্তিবর্গ। তাঁরা যুদ্ধ করেছেন স্রেফ কতিপয় সংশয়ের কারণে এবং এমন কতিপয় বিষয়ের জন্য, যা তাঁদের কাছে উত্থাপিত হয়েছিল। পক্ষান্তরে খারেজি সম্প্রদায়, জাকাত দিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারী লোকেরা এবং সুদকে হারাম বলতে অস্বীকারকারী তায়েফের অধিবাসী প্রমুখের সাথে যুদ্ধ করা এর আওতাভুক্ত নয়। বরং তাদের সাথে যুদ্ধ করতে হবে, যাতে তারা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সুসাব্যস্ত বিধিবিধানে প্রবেশ করে।” [মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ৩৫৭]

জবান দিয়ে ফিতনার লড়াইয়ের একটি নমুনা—হকপন্থিদের মাঝে এমন বিষয়ে মতানৈক্য হওয়া, যে বিষয়ে উভয় মতদ্বৈধতাকারীর একটি করে সিদ্ধ ব্যাখ্যা রয়েছে, পাশাপাশি উভয়ের মূলনীতিও (উসুল) ত্রুটিমুক্ত। এক্ষেত্রে দলিল সহকারে হককেই সাব্যস্ত করতে হবে, হকের পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে এবং এ বিষয়ে মতানৈক্যকারী ব্যক্তিদের ওজর দেওয়া হবে। এটাই পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বয়োজ্যেষ্ঠ উলামাদের কর্মপন্থা।

·
[১৩শ মূলনীতি: ফিতনার সময় জবানকে সংযত রাখা]

ফিতনার সময় রসনার হেফাজত করা ফিতনার একটি অন্যতম ফিকহ। একজন মুমিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্রেফ কল্যাণকর কথা বলতে, অন্যথায় নীরবতা অবলম্বন করতে উদগ্রীব থাকবে। তবে ফিতনার সময় বিষয়টি আরও গুরুত্ববহ হয়ে ওঠে। কেননা ফেতনার সময় জবান চালনা করা সুদূরবিস্তৃত অনিষ্টকর্মের ভিত্তিপ্রস্তর এবং বড়ো বড়ো পাপের একটি মাধ্যম। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে, অথবা চুপ থাকে।” [সহিহ বুখারি, হা/৬০১৮; সহিহ মুসলিম, হা/৪৭]

নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ صَمَتَ نَجَا “যে লোক নীরব থাকল, সে নাজাত পেল (ইহ-পরকালের আপদ থেকে নিস্তার পেল)।” [তিরমিযি, হা/২৫০১; সনদ: সহিহ] উকবা বিন আমির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا النَّجَاةُ قَالَ أَمْسِكْ عَلَيْكَ لِسَانَكَ وَلْيَسَعْكَ بَيْتُكَ وَابْكِ عَلَى خَطِيئَتِك আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসুল, মুক্তি রয়েছে কীসে?’ তিনি বললেন, “তুমি তোমার রসনা সংযত রাখ, তোমার বাসগৃহে অবস্থান করো এবং তোমার গুনাহর জন্য রোদন করো।” [তিরমিজি, হা/২৪০৬; সনদ: সহিহ]

ফিতনার সময় জবানের ভয়াবহতা সালাফগণ উপলব্ধি করেছিলেন। এজন্য ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছেন, “নিশ্চয় ফিতনা জবানের মাধ্যমে সংঘটিত হয়, হাতের মাধ্যমে নয়।” [দানি কৃত আস-সুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান, বর্ণনা নং: ১৭১; গ্রন্থের মুহাক্কিক বর্ণনাটিকে দুর্বল বলেছেন] তাবেয়ি ইবরাহিম আন-নাখঈ রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “মানুষ দুটো বৈশিষ্ট্যের দরুন ধ্বংস হয়: (১) অতিরিক্ত বাক্যালাপ, (২) অতিরিক্ত সম্পদ।” [ইবনু আবিদ দুনইয়া, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৯০]

মাইমুন বিন মিহরান রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “ফিতনার সময়—ইবনু যুবাইরের ফিতনার সময়—তাবেয়ি শুরাইহ নয় বছর অবস্থান করেছেন, (ফিতনা বিষয়ে) কোনো বাক্যালাপ না করে।” [যাহাবি কৃত সিয়ারু আলামিন নুবালা, খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ১০৬]

জবান চালনার দরুন হকের ওপর ঐক্যবদ্ধ কত লোকই না বিচ্ছিন্ন হয়েছে, আর উম্মতের মধ্যে কত দুর্যোগই না আপতিত হয়েছে! তাই অহেতুক বাক্যালাপে লিপ্ত হওয়া মুমিনের জন্য শোভনীয় নয়; যে পর্যন্ত না সে জেনে নিচ্ছে, তার কথা ভিত্তির দিক থেকে সঠিক, সত্তাগতভাবে সঠিক এবং প্রভাবের দিক থেকেও সঠিক। ভিত্তির দিক থেকে সঠিক মানে কথকের নিয়ত মহান আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ হতে হবে। সত্তাগতভাবে সঠিক মানে কথাটি (শরিয়তে) সাব্যস্ত থাকতে হবে। আর প্রভাবের দিক থেকে সঠিক মানে কথাটি বললে এমন অনিষ্ট আসা যাবে না, যা নীরব থাকার অনিষ্টের চেয়েও ব্যাপক। মহান আল্লাহ বলেন,
وَلَا تَسُبُّوا الَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ فَيَسُبُّوا اللَّهَ عَدْوًا بِغَيْرِ عِلْمٍ “আর আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে তারা ডাকে, তোমরা তাদের গালি দিয়ো না, ফলে তারা শত্রুতা পোষণ করে অজ্ঞতাবশত গালি দিয়ে বসবে আল্লাহকে।” [সুরা আনআম: ১০৮]

সালাফগণ ফিতনার সময় এই মহান মূলনীতি প্রয়োগ করেছেন। ইবনু উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছেন, মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বক্তৃতা করে বললেন, ‘এ ব্যাপারে (খেলাফতের ব্যাপারে) কারও কিছু বলার ইচ্ছে হলে সে আমাদের সামনে মাথা তুলুক। নিশ্চয় এ ব্যাপারে আমরাই তাঁর ও তাঁর পিতার চেয়ে অধিক হকদার।’ তখন হাবিব বিন মাসলামা রাহিমাহুল্লাহ তাঁকে বললেন, ‘আপনি এ কথার জবাব দেননি কেন?’ তখন আব্দুল্লাহ ইবনু উমার বললেন, ‘আমি তখন আমার গায়ের চাদর ঠিক করলাম এবং এ কথা বলার ইচ্ছে করলাম যে, এ বিষয়ে ওই ব্যক্তিই অধিক হকদার, যিনি ইসলামের জন্য আপনার ও আপনার পিতার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন।’ কিন্তু আশঙ্কা করলাম, আমার এ কথায় ঐক্যে ফাটল ধরবে, রক্তপাত ঘটবে এবং আমার এ কথার অন্য রকম অর্থ করা হবে। আর আল্লাহ জান্নাতে যে নেয়ামত তৈরি করে রেখেছেন তা স্মরণ করে কথা বলা থেকে বিরত থাকলাম।’ তখন হাবিব রাহিমাহুল্লাহ বললেন, ‘আপনি (ফিতনা থেকে) রক্ষা পেয়েছেন এবং বেঁচে গেছেন।’ [সহিহ বুখারি, হা/৪১০৮]

ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, “আমি কতিপয় মুহাজির সাহাবিকে পড়াতাম। তাঁদের মধ্যে আব্দুর রহমান বিন আওফ রাদিয়াল্লাহু আনহু অন্যতম ছিলেন। একবার আমি তাঁর মিনার বাড়িতে ছিলাম। তখন তিনি উমার বিন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুর সঙ্গে তাঁর সর্বশেষ হজে রয়েছেন। এমন সময় আব্দুর রহমান রাদিয়াল্লাহু আনহু আমার কাছে ফিরে এসে বললেন, যদি আপনি ওই লোকটিকে দেখতেন, যে লোকটি আজ আমিরুল মুমিনিনের কাছে এসে বলেছিল, ‘আমিরুল মুমিনিন, অমুক লোকের ব্যাপারে আপনার কিছু করার আছে কি, যে লোকটি বলে থাকে, যদি উমার মারা যান, তাহলে অবশ্যই অমুকের হাতে বায়াত (আনুগত্যের অঙ্গীকার) করব?’ আল্লাহর কসম, আবু বকরের বায়াত আকস্মিক ব্যাপারই ছিল, যা ওভাবেই সম্পন্ন হয়ে গেছে।’ এ কথা শুনে তিনি ভীষণ রেগে গেলেন। তারপর বললেন, ‘ইনশাআল্লাহ, আজ সন্ধ্যায় আমি অবশ্যই লোকদের মধ্যে দাঁড়াব, আর তাদেরকে ওইসব লোক থেকে সতর্ক করে দিব, যারা তাদের কর্তৃত্ব আত্মসাৎ করতে চায়।’

আব্দুর রহমান বলেন, তখন আমি বললাম, ‘আমিরুল মুমিনিন, আপনি এমনটা করবেন না। কারণ হজের মৌসুম নিম্নস্তরের ও নির্বোধ লোকদেরকে একত্রিত করে। আর যখন আপনি লোকদের মধ্যে দাঁড়াবেন, তখন এরাই আপনার নিকটবর্তিতায় অন্যদের ওপর প্রভাব বিস্তার করবে। আমার ভয় হচ্ছে, আপনি যখন দাঁড়িয়ে কোনো কথা বলবেন, তখন তা সব জায়গায় তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়বে। তারা তা ঠিকভাবে বুঝতে পারবে না, আর সঠিক জায়গায় রাখতেও পারবে না। সুতরাং মদিনা পৌঁছা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। আর তা হিজরত ও সুন্নাতের কেন্দ্রস্থল। ফলে সেখানে জ্ঞানী ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গের সাথে মিলিত হবেন। আর যা বলার তা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারবেন। জ্ঞানী ব্যক্তিরা আপনার কথা সঠিকভাবে বুঝতে পারবে এবং সঠিক জায়গায় প্রয়োগ করবে।’ তখন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘জেনে রেখ, আল্লাহর কসম, ইনশাআল্লাহ আমি মদিনা পৌঁছার পর সর্বপ্রথম এ বিষয় নিয়েই ভাষণের জন্য দাঁড়াব’।” [সহিহ বুখারি, হা/৬৮৩০]

·
[১৪শ মূলনীতি: বিশ্বাসের ভিত্তি জ্ঞান এবং বক্তব্য ও মন্তব্যের ভিত্তি কল্যাণের উপস্থিতি]

ফিতনার একটি অন্যতম ফিকহ—জ্ঞানের ওপর বিশ্বাস প্রতিষ্ঠিত, আর কল্যাণের উপস্থিতির ওপর বক্তব্য ও মন্তব্য প্রতিষ্ঠিত। সুতরাং মুসলিম সেটাই বিশ্বাস করবে, যা সে দলিলপ্রমাণ ও উলামাদের সিদ্ধান্ত থেকে জেনেছে। আর বক্তব্য ও মন্তব্য শরয়ি কল্যাণের ওপর ভিত্তিশীল। তাই যা জানা আছে তার সবই বলে বেড়ানো মুসলিমের জন্য সমীচীন নয়। বরং তার যে বক্তব্যে শরয়ী কল্যাণ (মাসলাহা) রয়েছে, সে কেবল সেটাই বলবে। শরয়ি কল্যাণ যদি কোনো বক্তব্যের ক্ষেত্রে দাবি করে, বিষয়টি বিলম্বে বলা হোক, তাহলে মুসলিম বান্দা তা বিলম্বেই বলবে। এই মহান মূলনীতির দলিল—নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দিষ্টভাবে জানতেন, মুনাফেক কারা, তথাপি তিনি হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু ছাড়া আর কাউকে তাদের নাম জানাননি; তিনি হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে এই জ্ঞানকে আমানত দিয়েছিলেন। আর হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহুও কাউকে তাদের নাম বলেননি।

অথচ তাদের নাম বলায় এমন কল্যাণ ছিল, যা অবিদিত নয়। কিন্তু তাদের নাম বললে যেহেতু বড়ো ধরনের অকল্যাণ আসত, সেহেতু নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দিষ্টভাবে তাদের নাম জানাননি। বরং তিনি তাদের বৈশিষ্ট্য জানিয়েছেন এবং সেসব বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করেছেন। কারণ এটাই ছিল শরয়ি কল্যাণের দাবি। ইমাম শাতিবি রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “এর মানদণ্ড হচ্ছে, আপনি আপনার বিষয়কে শরিয়তের কাছে উপস্থাপন করবেন। শরিয়তের মাপকাঠিতে তা যদি বিশুদ্ধ হয়, তাহলে যুগের অবস্থা ও লোকদের পরিস্থিতির দিক থেকে এর পরিণামের প্রতি গভীর দৃষ্টি দেবেন। যদি ঈপ্সিত বিষয়টি বললে কোনো অকল্যাণ আসবে না বলে প্রতীয়মান হয়, তাহলে বিষয়টিকে আপনার অন্তরস্থ বিবেকের কাছে উপস্থাপন করুন। যদি বিবেক-বুদ্ধি বিষয়টি মেনে নেয়, তাহলে আপনি এ বিষয়ে কথা বলতে পারেন। হয় সার্বজনিকভাবে বলবেন, যদি বিবেক সার্বজনিকভাবে ব্যক্ত করতে সায় দেয়। অন্যথায় নির্দিষ্টভাবে (খাসভাবে) বলবেন, যদি তা সার্বজনিকভাবে বলার মতো বিষয় না হয়। আপনার কাংঙ্ক্ষিত বিষয়ের যদি উল্লিখিত অবকাশ বা অনুমোদন না থাকে, তাহলে এ বিষয়ে নীরব থাকাই হবে শরয়ি কল্যাণ ও বিবেকগত কল্যাণমাফিক কাজ।” [শাতিবি বিরচিত আল-মুওয়াফাকাত, খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ১৯১]

·
[১৫শ মূলনীতি: ফিতনার চাকচিক্যে ধোঁকাগ্রস্ত না হওয়া]

ফিতনার চাকচিক্যে ধোঁকাগ্রস্ত না হওয়া এবং মুমিনের জাগ্রত জ্ঞান সহযোগে ফিতনার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা ফিতনার ফিকহের অন্তর্গত। আসলে ফিতনা কাঁচাপাকা কেশবিশিষ্ট বুড়ির মতো, ফিতনাবাজরা একে সুশোভিত না করলে কেউ তার দিকে ধাবিত হবে না। এজন্য ফিতনাবাজরা একে সুশোভিত করে, এতে সুবর্ণরূপ চড়ায়। তারা দ্বীনের প্রতি নিজেদের আবেগ প্রদর্শন করে, বেশি বেশি কিচ্ছা-কাহিনী বলে এবং ফিতনাকেন্দ্রিক দর্শনের বিবরণ দিয়ে এসব সম্পাদন করে। যাতে ভালোজ্ঞানসম্পন্ন নয়, এমন ব্যক্তি এরূপ ফিতনা দেখেই মনে করে, সব কল্যাণ এর মধ্যেই আছে!

কিন্তু যে তৌফিকপ্রাপ্ত, সে ফিতনার দিকে মুমিনের জাগ্রত জ্ঞান নিয়ে গভীর দৃষ্টি দেয়। সে ফিতনার রঙচঙ দেখে প্রতারিত হয় না, বরং একে কিতাব ও সুন্নাহর মহান মাপকাঠিতে ওজন করে নেয়। শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “অন্তরকে তাকওয়া দিয়ে আবাদ করা হলে সকল বিষয় স্পষ্ট ও উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। তমসাচ্ছন্ন ধ্বংসপ্রাপ্ত অন্তর ঠিক এর বিপরীত। হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান বলেছেন, ‘নিশ্চয় মুমিনের অন্তরে একটি দেদীপ্যমান প্রদীপ রয়েছে।’ সহিহ হাদিসে এসেছে, ‘দাজ্জালের চক্ষুদ্বয়ের মাঝে লেখা থাকবে—কাফির, যা সাক্ষর-নিরক্ষর সকল মুমিনই পড়তে পারবে।’ (সহিহ মুসলিম, হা/২৯৩৪; ফিতনা অধ্যায়; অধ্যায় নং: ৫৪; পরিচ্ছেদ: ২০)

এ থেকে প্রতীয়মান হয়, মুমিনের কাছে এমন অনেক বিষয় স্পষ্ট হবে, যা অন্যের কাছে স্পষ্টরূপে প্রতিভাত হয় না। বিশেষ করে ফিতনার সময়। মুমিনের কাছে আল্লাহ ও তদীয় রসুলের প্রতি মিথ্যারোপকারী জালিয়াতদের অবস্থা প্রকটিত হয়ে যাবে। কেননা দাজ্জাল আল্লাহর সবচেয়ে বড়ো মিথ্যুক মাখলুক। আল্লাহ তার হাতে নানাবিধ ভীতিকর বিষয় এবং কম্পন আনয়নকারী বিভিন্ন প্রতারণার অবতারণা করবেন। এমনকি তাকে যে-ই দেখবে, সে-ই তার ফিতনায় পড়ে যাবে। এ সত্ত্বেও আল্লাহ মুমিনের কাছে তাকে উন্মোচিত করে দেবেন। এমনকি মুমিন ব্যক্তি তাকে মিথ্যুক ও ভ্রান্ত বলে দৃঢ় বিশ্বাস করে ফেলবে। অন্তরে ইমান যখন বলদৃপ্ত হয়, তখন ব্যক্তির কাছে সকল বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায় এবং সে সেসবের অপ্রকাশ্য হালহকিকত জেনে ফেলে। পক্ষান্তরে ইমান দুর্বল হলে এসব বিষয় প্রতিভাত হওয়ার ব্যাপারটিও দুর্বল হয়ে যায়। এ বিষয়ের উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত অন্ধকার গৃহে দেদীপ্যমান প্রদীপ ও ম্রিয়মাণ চেরাগের মতো।” [মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ২০; পৃষ্ঠা: ৪৫]

তিনি আরও বলেছেন, “প্রাজ্ঞ নীরিক্ষকগণ (বয়োজ্যেষ্ঠ উলামাগণ) সবাই একমত হয়েছেন, যদি কোনো ব্যক্তি শূন্যে উড্ডয়ন করে কিংবা পানির ওপর দিয়ে হেঁটে বেড়ায়, তবুও তার অনুসরণ করা যাবে না, যতক্ষণ না সে আল্লাহ ও তাঁর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশনার সাথে মিলে যাচ্ছে।” [মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ২৫; পৃষ্ঠা: ৩১৪]

বিজ্ঞ মুমিন কথা ও কাজের পরিণাম চিন্তা করে। সে স্বল্পদৃষ্টিসম্পন্ন লোকদের একজন হয় না, যারা কিনা নিজেদের সামনে যা আছে, তা ব্যতিরেকে কিছু দেখতে পায় না। শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ বলেছেন, “যে কোনো কাজের অগ্রাধিকার স্পষ্ট হয় তার পরিণামের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে (অর্থাৎ কাজের পরিণাম কল্যাণকর হলে কাজটিও কল্যাণকর, আর পরিণামে অকল্যাণ বেশি থাকলে কাজটিও অকল্যাণের)। কল্যাণ ও অকল্যাণের মাঝে বিরোধ দেখা দিলে উলামারা সেসময় যেসব সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, তার সবই এই গুরুত্ববহ আলোচনার অন্তর্গত।” [প্রাগুক্ত, খণ্ড: ৪; পৃষ্ঠা: ৪৪১]
·আগামী পর্বে সমাপ্য, ইনশাআল্লাহ।
·অনুবাদক: মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ মৃধা
www.facebook.com/SunniSalafiAthari

 আমাদের ওয়েব সাইটঃ- https://rasikulindiaa.blogspot.com/

আমাদের ওয়েব সাইটঃ-   https://salafi-pdfbooks.blogspot.com/

আমাদের ওয়েব সাইটঃ  https://salafimp3web.blogspot.com/

Post a Comment

0 Comments