▌তাগুত বিষয়ে বিস্তারিত [১ম পর্ব]

তাগুত বিষয়ে বিস্তারিত [১ম পর্ব]

·রচয়িতা: আল্লামাহ সুলাইমান বিন সালীমুল্লাহ আর-রুহাইলী (হাফিযাহুল্লাহ)

·অনুবাদকের কথা:

‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাগুতকে পরিহার করো’—একটি মহান নির্দেশ, সকল নবি-রসুলের দাওয়াত (সুরা নাহল: ৩৬)। এ থেকেই উপলব্ধ হয় এ নির্দেশের কী গাম্ভীর্য, কী মহত্ত্ব। উপরন্তু তাগুতকে পরিহার না করলে ব্যক্তির ইসলামই সাব্যস্ত হয় না (সুরা বাকারা: ২৫৬)। এ থেকে প্রতিভাত হয়, তাগুতকে পরিহার করা মুমিনের জীবনে কত গুরুত্ব রাখে। তাগুতকে বর্জন করা আমাদের প্রধান কর্তব্য। এজন্য তাগুতের পরিচয় জানাও অবশ্যপালনীয় ফরজ। কারণ তাগুত বলতে কী বোঝায়, তা না জানলে আমরা তাগুতকে পরিহার করব কীভাবে?

এ বিষয়ে যুগে যুগে তাওহিদপন্থি উলামারা আলোচনা করেছেন। আমরাও এ বিষয়ের গুরুত্ব বিবেচনায় লেখার সিদ্ধান্ত নিই। এরই ভিত্তিতে আমরা আল্লামাহ সুলাইমান আর-রুহাইলী বিরচিত ‘শারহু সালাসাতিল উসুল (তিনটি মূলনীতির ব্যাখ্যা)’ গ্রন্থ থেকে তাগুত বিষয়ক একটি চমৎকার আলোচনা অনুবাদ করেছি। সালাফী কমিউনিটিতে শাইখ খুবই পরিচিত আলিম। তবুও বলে রাখি, তিনি মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উসুলুল ফিকহ ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র প্রফেসর, মসজিদে নববীর মুদার্রিস এবং মসজিদে কুবার সম্মাননীয় ইমাম ও খতিব। আক্বীদাহ বিষয়েও তিনি যথেষ্ট অভিজ্ঞ এবং আক্বীদাহর ক্ষেত্রে তাঁর খেদমতও প্রশংসনীয়।

শাইখুল ইসলাম ইমাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর ‘সালাসাতুল উসুল (তিনটি মূলনীতি)’ গ্রন্থে তাগুত নিয়ে আলোচনা করেছেন। আমরা তাঁর কথাগুলো ‘মূলপাঠ’ উপশিরোনামে উল্লেখ করেছি। আর শাইখ রুহাইলীর কথাগুলো ‘ব্যাখ্যা’ উপশিরোনামে উল্লেখ করেছি। পাঠক মহোদয় কী বিষয়ের আলোচনা পড়তে যাচ্ছেন, তা যেন আগাম বুঝতে পারেন, সেজন্য আমরা তৃতীয় বন্ধনীযোগে আলোচনার বিষয়বস্তু শিরোনাম আকারে উল্লেখ করেছি।

আরেকটি কথা না বললেই নয়, শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ) মসজিদে নববীতে এই ব্যাখ্যা করেছেন। পুরো ব্যাখ্যা ট্রান্সক্রাইব করেছেন আরব সালাফী বোনদের একটি গ্রুপ, আল্লাহ তাঁদের উত্তম পারিতোষিক দিন। সবশেষে দোয়া করি, আল্লাহ যেন মূল রচয়িতা, ভাষ্যকার, অনুলেখক, অনুবাদক, প্রকাশক-সহ নিবন্ধ সংশ্লিষ্ট সবাইকে তাঁর রহমতের বারিধারায় সিঞ্চিত করেন এবং পাঠকদেরকেও এ নিবন্ধ থেকে উপকৃত করেন। আমীন, ইয়া রাব্বাল আলামীন।

·[সবচেয়ে বড়ো ফরজ—তাগুতকে অস্বীকার করা]

মূলপাঠ: শাইখুল ইসলাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “সকল জাতির কাছে নুহ থেকে নিয়ে মুহাম্মাদ অবধি যত রাসুলকে আল্লাহ পাঠিয়েছেন, তাদের সবাইকে এক আল্লাহর ইবাদত করার আদেশ দিয়েছেন এবং তাগুতের ইবাদত থেকে নিষেধ করেছেন। এর দলিল—মহান আল্লাহর বাণী, ‘আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের কাছেই রাসুল প্রেরণ করেছি (এই ঘোষণা দিয়ে যে), তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাগুতকে পরিহার করো (অথবা তা থেকে বেঁচে থাক)।’ (সুরা নাহল: ৩৬) আল্লাহ সকল বান্দার ওপর তাগুতকে অস্বীকার করা এবং আল্লাহর প্রতি ইমান আনা ফরজ করেছেন।”

ব্যাখ্যা: শাইখ সুলাইমান আর-রুহাইলী (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন, এ বিষয়ে নবিগণের মাঝে কোনো ভিন্নতা নেই, ভিন্নতা নেই বিভিন্ন শরিয়তেও। প্রত্যেক নবিকেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাগুতকে অস্বীকার করতে এবং মহান আল্লাহর প্রতি ইমান আনতে। ‘মহান আল্লাহ বান্দাদের ওপর ফরজ করেছেন।’ অর্থাৎ সকল বান্দার ওপর ফরজ করেছেন। এখানে ‘আল-ইবাদ (العباد)’ শব্দের ‘আলিফ-লাম (أل)’ জাতিবাচক অর্থ জ্ঞাপন করে, যা শামিল করে সকল বান্দাকে; মহান আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করার সময় থেকে নিয়ে আল্লাহ কর্তৃক পৃথিবী ও ভূপৃষ্ঠের ওপরে অবস্থিত সবকিছুর উত্তরাধিকারী হওয়া পর্যন্ত (অর্থাৎ কেয়ামত পর্যন্ত আসতে থাকা সকল বান্দা এই মহান নির্দেশের আওতাভুক্ত)। কোনো একজন বান্দাও এর বাইরে নয়। তিনি সকল বান্দার ওপর তাগুতকে অস্বীকার করা এবং মহান আল্লাহর প্রতি ইমান আনা ফরজ করেছেন।

তোমরা দেখেছ, লেখক ‘আল্লাহর প্রতি ইমান আনা’ কথাটির পূর্বে ‘তাগুতকে অস্বীকার করা’—দিয়ে শুরু করেছেন। তিনি এটা করেছেন শরিয়তের দলিল ও প্রজ্ঞার সাথে সামঞ্জস্য রাখার জন্য। দলিল: মহান আল্লাহ বলেছেন, لَا إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ ۖ قَدْ تَبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَيِّ ۚ فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِنْ بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَىٰ لَا انْفِصَامَ لَهَا ۗ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ “দ্বীনের মধ্যে জোরজবরদস্তি নেই। নিশ্চয় হেদায়েত সুস্পষ্ট হয়ে গেছে গোমরাহি হতে। সুতরাং যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করল এবং আল্লাহর প্রতি ইমান আনল, সে অবশ্যই দৃঢ়তর রজ্জু ধারণ করল, যা ছিন্ন হওয়ার নয়। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” [সুরা বাকারা: ২৫৬]

মহান আল্লাহ বলছেন, ‘সুতরাং যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করল।’ তিনি ‘তাগুতকে অস্বীকার করা’ দিয়ে শুরু করলেন। এরপর বললেন, ‘এবং আল্লাহর প্রতি ইমান আনল।’ শাইখও অনুরূপ কাজ করেছেন। তিনি ‘আল্লাহর প্রতি ইমান’ কথাটির আগে ‘তাগুতকে অস্বীকার করা’ দিয়ে শুরু করেছেন।

প্রজ্ঞা: তাগুতকে অস্বীকার করলে অন্তরকে খালি করা হয়, যাবতীয় মন্দ বিষয়ের কালিমা (কলঙ্ক) থেকে নিষ্কলুষ করা হয়। আর আল্লাহর প্রতি ইমান আনলে অন্তরকে সজ্জিত করা হয়। শাইখ সজ্জিতকরণের পূর্বে (অন্তরকে) মুক্তকরণ দিয়ে আরম্ভ করেছেন। আর এ বিষয়টি সুবিদিত যে, তাগুতকে অস্বীকার না করলে আল্লাহর প্রতি আনিত ইমান সঠিক হয় না। যখন যাবতীয় শির্কের কালিমা থেকে অন্তর পরিষ্কার ও নিষ্কলুষ হবে, তখন তাওহীদ সঠিক হবে।

সুতরাং শাইখ এই মহান বিষয়ে শরিয়তের দলিল ও প্রজ্ঞার সাথে সামঞ্জস্য রেখেই ‘আল্লাহর প্রতি ইমান আনার’ পূর্বে ‘তাগুতকে অস্বীকার করা’—দিয়ে শুরু করেছেন। সকল শরিয়ত যে বিষয়ের ওপর অভিন্ন ছিল, সে বিবরণ দেওয়ার জন্য শাইখ এই আলোচনা উল্লেখ করেছেন। এরপর শাইখ তাগুতের অর্থ বর্ণনা করেছেন, যাকে অস্বীকার করা ওয়াজিব।

·[তাগুত বলতে কী বোঝায়?]

মূলপাঠ: ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘যে উপাস্য, বা অনুসৃত নেতা, বা মান্যবর কারও মাধ্যমে বান্দা নিজের সীমানা লঙ্ঘন করে, তাকেই তাগুত বলা হয়।’

ব্যাখ্যা: যেন শাইখ জিজ্ঞাসিত হয়েছেন, “বুঝলাম, আমার ওপর তাগুতকে অস্বীকার করা ফরজ। কিন্তু তাগুত বলতে কী বোঝায়?” তখন শাইখ (রাহিমাহুল্লাহ) উক্ত বক্তব্য দিয়ে তাগুতের অর্থ উল্লেখ করেছেন, যা ইমাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম বর্ণনা করেছেন তদীয় ই‘লামুল মুওয়াক্বক্বি‘ঈন গ্রন্থে।

আরবি ভাষায় তাগুত শব্দটি ‘তুগইয়ান’ থেকে গৃহীত হয়েছে। তুগইয়ান মানে সীমা অতিক্রম করা। যখন কোনোকিছু তদীয় সীমা অতিক্রম করে, তখন বলা হয়, ‘ত্বাগা, অর্থাৎ সে বেশি বা অতিরিক্ত করেছে (طغى أي: زاد)।’ তাগুতের মৌলিক অর্থ হলো—কতিপয় উলামা তাগুতকে দুটি ‘ওয়া’ দিয়ে তাগূত পড়েছেন—কথকের এমন বলা যে, ‘অমুক ব্যক্তি তুগইয়ান করেছে,’ যখন কোনো ব্যক্তি তদীয় ক্ষমতা অতিক্রম করে সীমালঙ্ঘন করে, তখন এরূপ বলা হয় (طغى فلان يطغوا إذا عدا قدره فتجاوز حده)। এ বিষয়টি ইমাম ইবনু জারীর আত-তাবারী তদীয় তাফসীরে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং আভিধানিক অর্থে তাগুত শব্দটি ‘তুগইয়ান’ থেকে এসেছে, যার অর্থ সীমালঙ্ঘন করা।

পক্ষান্তরে শরয়ী অর্থে, তাগুত বলতে কী বোঝায়? তাগুত বলতে আসলে কী বোঝায়, সে ব্যাপারে আমাদের উলামা তথা আহলুস সুন্নাহর উলামাদের বক্তব্যে বিভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। সমস্ত বক্তব্যকে ধারণ করে, এমন সংজ্ঞা অনুযায়ী—‘যেকোনো ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ ব্যতীত যারই ইবাদত করা হয়, সে-ই তাগুত।’ ইমাম মুজাহিদ ইবনু জাবর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “তাগুত মানে মানুষের সুরতে বিদ্যমান শয়তান, যার কাছে লোকেরা বিচার-ফায়সালা করার জন্য যায়, আর সে হয় তাদের নেতা।” মুজাহিদ বলছেন, শয়তান মানুষের কাছে আসে মানবীয় আকৃতিতে, এসে হিকমাহ (প্রজ্ঞাপূর্ণ কথা বা কাজ) প্রকাশ করে; তখন মানুষ মহান আল্লাহর শরিয়ত বাদ দিয়ে তার কাছে যায় বিচার-ফায়সালার জন্য।

ইবনুল আরাবী আল-মালিকী তদীয় ‘আহকামুল কুরআন’ গ্রন্থে বলেছেন, “মালিক—অর্থাৎ ইমাম চতুষ্টয়ের একজন, ইমামু দারিল হিজরাহ তথা মদিনার ইমাম—বলেছেন, মূর্তি, বা গণক, বা জাদুকর প্রভৃতি যারই ইবাদত করা হয় আল্লাহ ব্যতীত, সেটাই তাগুত; কিংবা যে অবস্থাতেই হোক, যার মাঝে শির্ক কাজ করে সেটাই তাগুত।” [ইবনুল আরাবী কৃত আহকামুল কুরআন, ১/৫৭৮] ইমাম মালিকের বক্তব্যটি গভীরভাবে লক্ষ করুন। তিনি বলেছেন, ‘যারই ইবাদত করা হয় আল্লাহ ব্যতীত।’ এটা জাতিবাচক (ব্যাপক) অর্থ প্রকাশ করে। তিনি মূর্তির উদাহরণ দিয়েছেন। মূর্তির ইবাদত করা হয় এবং তার কাছে নৈকট্য কামনা করা হয়।

‘অথবা গণক’: গণক অদৃশ্যের যে জ্ঞান দাবি করে, সেক্ষেত্রে মানুষ তাকে সত্যায়ন করে। যদিও তারা তার ইবাদত করে না, যেমনভাবে তারা প্রতিমার ইবাদত করে থাকে। কিন্তু তারা অদৃশ্যের জ্ঞান দাবিকরণের ক্ষেত্রে তাকে সত্যায়ন করে। যারা (সরাসরি) তার ইবাদত করে, তারা এক্ষেত্রে এদের মতোই। ‘কিংবা জাদুকর’: জাদুকর কাফির। তার কুফরির দরুন জিনেরা তার কাছে সাহায্যপ্রার্থনা করে, কতিপয় মানুষও তার কাছে সাহায্যপ্রার্থনা করে।

তিনি বলেছেন, ‘কিংবা যে অবস্থাতেই হোক, যার মাঝে শির্ক কাজ করে সেটাই তাগুত।’ ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লাহ) এটা বলেছেন এ বিষয় জানানোর জন্য যে, শির্ক স্রেফ এ তিনটি ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয়। ইমাম ইবনু জারীর আত-তাবারী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “মুফাসসিরগণ তাগুতের অর্থ নিয়ে মতভিন্নতা করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, তাগুত মানে শয়তান। কেউ বলেছেন, জাদুকরই তাগুত।” [তাফসীরে তাবারী, ৪/৫৫৫]

শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) তাগুতের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন, “তাগুত একটি জাতিবাচক বিশেষ্য। আল্লাহকে বাদ দিয়ে যতকিছুর ইবাদত করা হয়, তারা সবাই তাগুত। শয়তান, প্রতিমা, গণক, দিরহাম, দিনার—সবকিছুই তাগুতের আওতাভুক্ত হবে।” [মাজমূ‘উ ফাতাওয়া, ১৬/৫৬৬] তোমরা জান, বিভিন্ন ধরনের ইবাদতের হুকুম বিভিন্ন রকম হবে; যেমনটি শাইখুল ইসলাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব (রাহিমাহুল্লাহ) বিরচিত মহান ফলপ্রসূ গ্রন্থ ‘কিতাবুত তাওহীদে’ সাব্যস্ত করা হয়েছে।

ইমাম আব্দুল্লাহ আবা বুতাইন বলেছেন, “আল্লাহ ব্যতীত যতকিছুর ইবাদত করা হয়, সবই তাগুত। ভ্রষ্টতার যত নেতা আছে, যারা বাতিলের দিকে মানুষকে আহ্বান করে এবং বাতিলকে সুশোভিত করে, তারা সবাই তাগুত। (*) তদ্রুপ মানুষ নিজেদের মধ্যে আল্লাহ ও তদীয় রসুলের বিধান-বিরোধী যেসব জাহেলি বিধিবিধান স্থাপন করে, সেগুলোর সবই তাগুত। অনুরূপভাবে গণক, জাদুকর এবং মূর্তির রক্ষীবাহিনীর সবাই তাগুত।” [মাজমূ‘আতুত তাওহীদ, পৃষ্ঠা: ৫০০]

[(*) অনুবাদকের টীকা: যুগশ্রেষ্ঠ নাজদী বিদ্বান ইমাম আবা বুতাইনের বক্তব্য ভালো করে লক্ষ করুন। বাতিলের দিকে আহ্বানকারী যত দাঈ বা লেখক বা বক্তা আছে, তারা সবাই তাগুত হিসেবে বিবেচিত হবে, যখন মানুষ বাতিলের ক্ষেত্রে তাদের অনুসরণ করবে। সুতরাং যুগে যুগে বাতিলের আহ্বায়ক এবং কুফর ও বিদ‘আতের ইমামরাও তাগুত। যদিও তাদের অধিকাংশকেই তাগুত মনে করা হয় না। আল্লাহ আমাদেরকে যাবতীয় তাগুতের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে তাদেরকে ও তাদের অনুসারীদেরকে যথাযথ ঘৃণা করার তৌফিক দিন (আমীন)। টীকা সমাপ্ত।]

সুতরাং আল্লাহ ব্যতীত যতকিছুর ইবাদত করা হয়, তার সবই তাগুত। আর যে বক্তব্য উক্ত বিষয়কে সবচেয়ে ভালোভাবে বর্ণনা করেছে, তা শাইখুল ইসলাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ)’র বক্তব্য; যা শাইখ উল্লেখ করেছেন। ‘যার মাধ্যমে বান্দা নিজের সীমানা লঙ্ঘন করে।’ এ কথা কোথা থেকে গৃহীত হয়েছে? আভিধানিক অর্থ থেকে।

‘যে উপাস্য, বা অনুসৃত নেতা, বা মান্যবর কারও মাধ্যমে বান্দা নিজের সীমানা লঙ্ঘন করে, তাকেই তাগুত বলা হয়।’ সংজ্ঞায় উল্লিখিত ‘যার মাধ্যমে বান্দা নিজের সীমানা লঙ্ঘন করে’– এর মানে, শরিয়ত কারও জন্য যে সীমা নির্ধারণ করেছে এবং তাকে যে মর্যাদা দিয়েছে, সেক্ষেত্রে বান্দা সীমালঙ্ঘন করে (অর্থাৎ যার ক্ষেত্রে এরূপ সীমালঙ্ঘন হয় সে তাগুত)। মহান আল্লাহ বান্দাদের জন্য অবস্থান বা মর্যাদা নির্ধারণ করেছেন, তাদের জন্য সীমানা নির্ধারিত করেছেন। যে ব্যক্তি উক্ত সীমা অতিক্রম ও লঙ্ঘন করেছে, সে তাগুত। যেমন আল্লাহ সবাইকে বান্দা বানিয়েছেন, মাবুদ বা উপাস্য বানাননি। সকল মাখলুককে বান্দা বানিয়েছেন, উপাস্য বানাননি। সুতরাং যে ব্যক্তি উক্ত সীমানা লঙ্ঘন করে নিজেকে মাবুদ বানিয়ে নেয়, সে তাগুত।

তদ্রুপ আল্লাহ সকল মানুষকে আল্লাহর দ্বীনের অনুসারী বানিয়েছেন। কিন্তু যে ব্যক্তি নিজেকে আল্লাহর দ্বীনের অনুসারী থেকে আল্লাহর দ্বীনকেই তার অনুগামী বানিয়ে নেয়, সে আসলে নিজেকে তাগুত বানিয়ে নেয়। অর্থাৎ যে দ্বীনের অনুসারী থাকে, তার ব্যাপারে আল্লাহর দ্বীন দিয়ে ফায়সালা করা হয়। কিন্তু যে ব্যক্তি এ অবস্থান থেকে নিজেকে এমন অবস্থানে পরিবর্তন করে নেয় যে, আল্লাহর দ্বীনই তার অনুগামী হবে, তাহলে সে তাগুত। কেননা সে তদীয় সীমা অতিক্রম করেছে।

সংজ্ঞায় উল্লিখিত মাবুদ মানে, “যার জন্য কোনো একটি ইবাদত ধার্য করা হয়েছে, আর সে ব্যাপারটি জেনেছে এবং এতে সম্মত হয়েছে; যদি আসলেই জানা ও সম্মত হওয়ার সামর্থ্য তার থাকে তবেই।”

আমি বিষয়টি ব্যাখ্যা করছি। তোমরা ভালোভাবে খেয়াল করো। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিঃশর্তভাবে আল্লাহ ব্যতীত যার ইবাদত করা হয়, সে-ই তাগুত নয়। বরং তাগুত সে, আল্লাহ ব্যতীত যার ইবাদত করা হয়, আর সে ব্যাপারটি জানে এবং এতে সম্মত হয়; যদি আসলেই জানা ও সম্মত হওয়ার সামর্থ্য তার থাকে তবেই। অর্থাৎ সে যদি জানা ও সন্তোষ প্রকাশের ক্ষমতাসম্পন্ন হয় তবেই। সুতরাং যার জন্য কোনো একটি ইবাদত ধার্য করা হয়। উদাহরণস্বরূপ কারও কাছে প্রার্থনা করা হলো, কিংবা কারও উদ্দেশ্যে জবেহ করা হলো, আর সে বিষয়টি জানে, এতে সন্তুষ্টও থাকে, এবং তার পক্ষে সন্তুষ্ট হওয়া সম্ভব, তাহলে সে তাগুত বিবেচিত হবে। সুতরাং মুসলিম দেশগুলোতে যেসব ‘শাইখ’ বিস্তার লাভ করেছে, যাদের উদ্দেশ্যে জবেহ করা হয়, যাদের মাধ্যমে বরকত লাভ করা হয়, যাদের কাছে কুরবানি পেশ করা হয়, আর এতে তারা খুশি হয়; অনুরূপভাবে তাদের কাছে ফরিয়াদ করা হয়, আর তারা এতে উৎসাহ দেয়, তারা সবাই তাগুত। কেননা তাদের জ্ঞাতসারে ও সন্তোষে আল্লাহকে ব্যতীত তাদের ইবাদত করা হয়েছে।

আমরা বলেছি, ‘আর সে ব্যাপারটি জেনেছে।’ যাতে করে সেই ব্যক্তিকে তাগুতের সংজ্ঞা থেকে বাদ দেওয়া যায়, যার জন্য কোনো একটি ইবাদত ধার্য করা হয়েছে, অথচ সে তা জানে না। যেমন আল্লাহর নবি ঈসা (আলাইহিস সালাম)। ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর তিরোধানের পর খ্রিষ্টানরা তার জন্য নানা ধরনের ইবাদত সাব্যস্ত করেছিল এবং তাঁকে ‘আল্লাহর পুত্র’ আখ্যা দিয়েছিল। তারা যা বলে, তা থেকে আল্লাহ বহু ঊর্ধ্বে রয়েছেন। ঈসা (আলাইহিস সালাম) জানতে পারেননি। তিনি যখন তাদের সাথে ছিলেন, তখন তিনি তাদেরকে তাওহীদের দিকে আহ্বান করতেন এবং শির্ক থেকে নিষেধ করতেন। যখন আল্লাহ তাঁকে উঠিয়ে নিলেন, খ্রিষ্টানরা তাঁকে উপাস্য নির্ধারণ করল। তাঁর জন্য ধার্য করল ইবাদত। শেষযুগে তিনি যখন (দুনিয়ায়) অবতরণ করবেন, তখন তিনি এতে সন্তুষ্ট হবেন না। তিনি এ বিষয়ে জানতে পারেননি, এবং (পরবর্তীতে) এতে সন্তুষ্টও হবেন না। এজন্য তিনি যখন অবতরণ করবেন, তখন ক্রুশ ভেঙে ফেলবেন এবং মুহাম্মাদ এর শরিয়ত দিয়ে ফায়সালা করবেন।

তাহলে কিছু তালিবুল ইলম যেমন বুঝেছে, তদনুযায়ী ঈসা (আলাইহিস সালাম) কে কি তাগুত বলা শুদ্ধ হবে? আমরা বলব, না; ঈসা (আলাইহিস সালাম) আল্লাহর নবি। হ্যাঁ, তাঁর জন্য কিছু ইবাদত ধার্য করা হয়েছে বটে। কিন্তু এ বিষয়টি তিনি জানতে পারেননি এবং তিনি এতে সন্তুষ্টও নন।

আমরা বলেছি, ‘এবং এতে সম্মত হয়েছে।’ যাতে করে সেই ব্যক্তিকে তাগুতের সংজ্ঞা থেকে বাদ দেওয়া যায়, যে বিষয়টি জেনেছে, কিন্তু তাতে সম্মত হয়নি। সে মানুষের মাধ্যমে পরীক্ষায় পতিত হয়েছে। মানুষ তার ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করেছে, বিভিন্ন ইবাদত তার জন্য ধার্য করেছে, কিন্তু সে এতে সম্মত বা সন্তুষ্ট হয়নি। এ ব্যক্তিকে তাগুত বলা হবে না। যেমন একটি সম্প্রদায় আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু)’র যুগে তাঁর ব্যাপারে বাড়াবাড়িতে লিপ্ত হয়েছিল, তাঁকে রব নির্ধারণ করেছিল এবং তাঁর জন্য ইবাদত ধার্য করেছিল। আল্লাহ তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হোন, তাঁকে সন্তুষ্ট করুন এবং জান্নাতে তাঁর মর্যাদা উন্নত করুন। তিনি যখন বিষয়টি জানতে পারেন, এতে সন্তুষ্ট হননি। বরং তিনি ক্রোধান্বিত হয়েছেন এবং তাদের বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘যখন আমি এহেন অন্যায় কাজ দেখলাম, তখন আগুন প্রজ্বলিত করলাম এবং কুনবুরকে ডাকলাম।’ [যাহাবী কৃত আল-আরশ, ১/১২৩]

কুনবুর ছিল তাঁর গোলাম; কুনবুর বা কানবার—দুভাবেই পড়া যায়। তিনি বলেছেন, ‘যখন আমি এরূপ অন্যায় কর্ম দেখলাম।’ কারণ তারা তাঁর জন্য ইবাদত ধার্য করেছিল। তিনি বলেছেন, ‘আমি আগুন প্রজ্বলিত করলাম।’ যাতে করে তিনি তাদেরকে আগুনে পুড়িয়ে ফেলতে পারেন। ‘এবং কুনবুরকে ডাকলাম।’ যাতে সে আগুন প্রজ্বলিত করে এবং ওইসব ভ্রষ্টদের ধরে নিয়ে আসে। কিন্তু তিনি (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এ কাজ করেননি। কারণ আগুনের রব ব্যতীত অন্য কেউ আগুন দিয়ে শাস্তি দিতে পারে না। (*) আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এতে সম্মত হননি।

[(*) অনুবাদকের টীকা: বিশুদ্ধ মতানুসারে আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) তাদেরকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছিলেন। যেমন সহিহ বুখারির বর্ণনায় এসেছে, ইকরিমাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বর্ণনা করেছেন, আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) একটি সম্প্রদায়কে পুড়িয়েছেন। ইবনু আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা)’র কাছে এ সংবাদ পৌঁছলে তিনি বলেন, আমি হলে তাদেরকে পুড়াতাম না। কারণ নবি বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর শাস্তি দিয়ে শাস্তি প্রদান কোরো না।’ তবে অবশ্যই আমি তাদেরকে হত্যা করতাম। যেহেতু নবি বলেছেন, ‘যে তার দ্বীন বদলে ফেলে, তোমরা তাকে হত্যা করো।’ (সহিহ বুখারি, হা/২৮৫৪) টীকা সমাপ্ত]

অনুরূপভাবে বর্তমান সময়েও কতিপয় ভ্রষ্ট আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ও তাঁর সম্মাননীয় পরিবারের জন্য ইবাদত ধার্য করে। কিন্তু আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ও তাঁর পরিবার তা জানেন না। তাহলে আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) কে কি তাগুত বলা যাবে? কক্ষনো না, বরং তিনি আল্লাহর রসুল এর একজন মহান সাহাবী, জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবীদের অন্যতম। সুতরাং আমরা বলব, ‘যে বিষয়টি জেনেছে এবং তাতে সম্মত হয়েছে।’

আমরা বলেছি, ‘যদি আসলেই জানা ও সম্মত হওয়ার সামর্থ্য তার থাকে তবেই।’ এর মানে কী? এর মানে, তার পক্ষে জানা ও সম্মত হওয়া সম্ভবপর হতে হবে। এটা একটা শর্ত। যদি কারও জানা ও সম্মত হওয়ার মতো সামর্থ্য না থাকে (তাহলে তাকে তাগুত বলা হবে), যেমন মূর্তি বা প্রতিমা। মূর্তির জন্য জানা ও তাতে সম্মত হওয়া সম্ভব নয়। তাহলে আমরা কি বলব, মূর্তি তাগুত নয়, কারণ সে জানে না? উত্তর: না; বরং মূর্তিও তাগুত।

সুতরাং আমরা যখন বলব, ‘সে বিষয়টি জানে এবং এতে সম্মত হয়,’ তখন সেটাকে এ কথার সাথে সীমাবদ্ধ করে দিতে হবে যে, আল্লাহকে বাদ দিয়ে যার ইবাদত করা হয়, এবং তার পক্ষে বিষয়টি জানা ও সম্মত হওয়া সম্ভব থাকে। পক্ষান্তরে যার পক্ষে বিষয়টি জানা সম্ভব নয়—যেমন মূর্তি বা প্রতিমা—এবং সন্তুষ্ট হওয়াও সম্ভব নয়, সে তাগুত। এরকম শর্ত আরোপ করা হবে না যে, অবশ্যই জানতে হবে এবং এতে সম্মত হতে হবে। যেমন কেউ অগ্নির উপাসনা করল। আগুন তার উপাসকদের উপাসনা সম্পর্কে কিছুই জানে না, আবার সে এতে সম্মতও নয়। এক্ষেত্রে আমরা কি বলব, আগুনকে তাগুত বলা যাবে না? আমরা বলব, না; বরং আগুনকে তাগুত বলা হবে। কেননা আমাদের জানামতে আগুনের পক্ষে জানা এবং সম্মত হওয়া সম্ভব নয়।

তদ্রুপ কিছু মানুষ গাছের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ইবাদত ধার্য করে। কিছু মুসলিম দেশে মুসলিমরা কতিপয় গাছকে পবিত্র মনে করে। বলে, এটা বরকতময় গাছ। তারা এসব গাছে ফিতা, বস্ত্র ইত্যাদি বেঁধে রাখে। কোনো মহিলার যদি সন্তানলাভের ইচ্ছা করে, তাহলে সে এরকম গাছের নিচে এসে ঘুমিয়ে নেয়, কিংবা গাছের নিচে কোনোকিছু সম্পাদন করে। এ জাতীয় কাজ সেসব গাছের উদ্দেশ্যে ইবাদত ধার্য করার নামান্তর। তাহলে আমরা কি বলব, এসব গাছকে তাগুত বলা যাবে না, কারণ এরা জানে না? আমরা বলব, না; বরং এগুলোকে তাগুত বলা হবে। সুতরাং আমরা এটা বুঝব এবং এভাবে অর্থ করব।

শাইখুল ইসলাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) তাগুতের সংজ্ঞায় বলেছেন, ‘কিংবা অনুসৃত নেতা।’ অর্থাৎ কুফর ও ভ্রষ্টতার ক্ষেত্রে যার অনুসরণ করা হয়। যেমন মন্দ উলামা, যারা মানুষকে কুফরের দিকে আহ্বান করে, শির্কি কর্মকাণ্ডের দিকে ডাকে। মানুষকে বলে, ‘তোমরা ওলি-আউলিয়াদের উদ্দেশ্যে জবেহ করো, এটা তোমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করবে। ওয়াহাবীদের বর্জন করো, এরা ওলি-আউলিয়াদের ঘৃণা করে।’ তারা জুম্মার খুতবা দেয়, আর লোকদেরকে আল্লাহর প্রতি কুফর করতে উৎসাহিত করে। তারা একটি মহান সালাত—সালাতুল জুমু‘আহ—আদায় করে, আর এর মধ্যে সন্নিবেশিত করে শির্ক-কুফরের নির্দেশনা। যারা তাওহীদের আদেশ দেয়, তাদের নিন্দা-সমালোচনা করে। এরা তাগুত, জনমানুষ তাদের নির্দেশনা অনুসরণ করে। মহান আল্লাহ বলেছেন, “তারা আল্লাহকে ছেড়ে নিজেদের পণ্ডিত ও সন্ন্যাসীদের রব বানিয়ে নিয়েছে।” [সুরা তাওবাহ: ৩১]

‘কিংবা মান্যবর কেউ’: মান্যবর বলতে তাকে বোঝায়, ইচ্ছাকৃতভাবে হারামকে হালাল করা কিংবা হারামকে হালাল করার ক্ষেত্রে, যার আনুগত্য করা হয়। তোমরা ভালোভাবে খেয়াল করো। যারা হারামকে হালাল করে, আর হালালকে হারাম করে, তারা দু ধরনের হয়ে থাকে। যথা:

এক. সে জানে, এটা হারাম। কিন্তু সে এটাকে হালাল করে। জানে, এটা হারাম। কিন্তু মানুষকে বলে, এটা হালাল। যেমন কিছু লোক আছে, যারা জানে, মীলাদ পালন করা বিদ‘আত, হারাম। কিন্তু তারা মানুষকে বলে, এটা হালাল। কেননা তারা (কথকেরা) মীলাদের পরিবেশেই বসবাস করে। থাকে ধনী-ফকিরদের মাঝে, যারা কিনা মুসলিম দরিদ্রদের সম্পদের ওপর নির্ভরশীল। মীলাদের দিন তারা শাইখের উদ্দেশ্যে সম্পদ পেশ করে, আর সে লোকদের বলে, এটা হালাল। অথচ সে বিশ্বাস করে এবং জানে, এটা হারাম।

দুই. হালালকে হারাম করে এবং বলে, এটা হারাম। অথচ সে জানে এবং বিশ্বাস করে, এটা হালাল। এ ব্যক্তি তাগুত।

কিন্তু সাবধান! উলামাগণ বলেন, তাগুত মানেই কেউ কাফির নয়। কাউকে তাগুত বলার মানেও এ নয় যে, সে কাফির। বরং তার অবস্থাভেদে যুক্ত হবে তার হুকুম। এ বিষয়ে ভালোভাবে খেয়াল রাখা আবশ্যক। তার অবস্থা অনুসারে তাকে হুকুম দেওয়া হবে।

·[কীভাবে সম্পন্ন হবে তাগুতের প্রতি অস্বীকার? (এ আলোচনা অনুবাদক কর্তৃক সংযোজিত)]

আমরা তাগুতের পরিচয় জানলাম। এখন আমাদের জানা দরকার, তাগুতকে অস্বীকার করার পদ্ধতি কী। আমরা ঠিক কীভাবে তাগুতকে অস্বীকার করব? শাইখুল ইসলাম ইমাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব (রাহিমাহুল্লাহ) এ বিষয়ে বলেছেন, “তাগুতকে অস্বীকারের স্বরূপ হলো—তুমি গাইরুল্লাহর (আল্লাহ ব্যতীত অন্যের) ইবাদত করাকে বাতিল হিসেবে বিশ্বাস করবে, গাইরুল্লাহর ইবাদতকে বর্জন ও ঘৃণা করবে, গাইরুল্লাহর ইবাদতকারী মুশরিকদের কাফির বলবে এবং তাদের সাথে বৈরিতা রাখবে (অর্থাৎ তাদেরকে শত্রু গণ্য করবে)।

পক্ষান্তরে আল্লাহর প্রতি ইমান আনয়নের অর্থ—তুমি বিশ্বাস রাখবে, কেবল এক আল্লাহই সত্য উপাস্য। সকল ইবাদতকে আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ করবে এবং আল্লাহ ব্যতীত সমুদয় উপাস্যের ইবাদতকে নাকচ করবে (অর্থাৎ গাইরুল্লাহর ইবাদত করবে না)। একনিষ্ঠ তাওহিদবাদীদের ভালোবাসবে এবং তাদের সাথে মিত্রতা রাখবে। আর মুশরিকদের ঘৃণা করবে এবং তাদের সাথে বৈরিতা রাখবে।” [শাইখ সালিহ আল-ফাওযান কৃত শারহু মা‘নাত তাগুত, পৃষ্ঠা: ১৬-২০; দারুল ইমাম আহমাদ (কায়রো) কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৭ হি./২০০৬ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]

ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন, “অবশ্যই এ বিষয়গুলো থাকতে হবে। প্রথমত, তুমি জেনে নিবে, তাগুত বলতে কী বোঝায়। কারণ এটা তোমার জানা না থাকলে তাগুতকে বর্জন করা তোমার পক্ষে সম্ভব হবে না। একটি অজ্ঞাত-অজানা বিষয়কে তুমি কীভাবে বর্জন করবে?! দ্বিতীয়ত, তুমি যখন তাগুতের পরিচয় জেনে নিবে, তখন তাগুতকে বর্জন করা তোমার জন্য সহজ হয়ে যাবে (অর্থাৎ এ পর্যায়ে তাগুতকে বর্জন করতে হবে)। তৃতীয়ত, তুমি যখন তাকে বর্জন করবে, তখন অবশ্যই তার সাথে তোমাকে বৈরিতা রাখতে হবে, তাকে ও তার অনুসারীদেরকে ঘৃণা করতে হবে এবং আল্লাহর জন্য তাদের সাথে শত্রুতা রাখতে হবে।” [শারহু মা‘নাত তাগুত, পৃষ্ঠা: ১৭]

ইমাম ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) আরও বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহকে এক বলে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং তাগুতকে অস্বীকার করেছে, তাকে অবশ্যই আল্লাহর মিত্রদের প্রতি তথা তাওহিদবাদীদের প্রতি ভালোবাসা রাখতে হবে এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে। অপরপক্ষে মুশরিকদের ঘৃণা করতে হবে এবং তাদের সাথে বৈরিতা রাখতে হবে। কেননা আল্লাহ তাদের ঘৃণা করেন। আল্লাহ যাকে ঘৃণা করেন, তুমিও তাদের ঘৃণা করবে। কিন্তু যে বলে, আমার কেবল নিজের ওপরই অধিকার আছে। আমি কোনো মানুষের সাথে বৈরিতা রাখব না, কাউকে ঘৃণা করব না, কাউকে কাফিরও বলব না। আমরা তাকে বলব, তুমি তাগুতকে অস্বীকার করোনি। কারণ তাগুতকে অস্বীকার করলে আল্লাহর শত্রুদের ঘৃণা করা এবং তাদের সাথে বৈরিতা রাখা অপরিহার্য। (সুরা মুজাদালাহ: ২২)... সুতরাং যার কাছে সকল মানুষ সমান, সে তাগুতকে অস্বীকার করেনি। তাগুতকে কেবল সে-ই অস্বীকার করেছে, যে বৈরিতা ও মিত্রতা করেছে আল্লাহর জন্য, আবার ভালোবাসা ও ঘৃণাও করেছে আল্লাহর জন্য।” [প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা: ২০-২১]

এ থেকে আমরা বুঝতে পারি, তাগুতকে অস্বীকার করতে হলে তাগুতের কর্মকে বাতিল বলে বিশ্বাস করতে হবে, তাগুতকে ঘৃণা করতে হবে এবং তাগুতের অনুসারীদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতে হবে। আর তাগুতের অনুসারীরা যদি কাফির হয়, তাহলে তাদেরকে কাফির বলতে হবে। পক্ষান্তরে যারা কাফির নয়, তাদেরকেও ঘৃণা করতে হবে, তাদের বিরোধিতা করতে হবে; যদিও ইমানি ভ্রাতৃত্বের দরুন তাদের প্রতি অবশিষ্ট থাকবে আমাদের ভালোবাসাও। স্মর্তব্য যে, সকল তাগুত কাফির নয়, তদ্রুপ তাগুতের অনুসারী মাত্রই সে কাফির নয়। এ সম্পর্কে তাগুতের পরিচিতি-বিষয়ক আলোচনায় আমরা কিঞ্চিৎ জেনেছি। সামনে শাইখ সুলাইমানের আলোচনায় আরও জানব, ইনশাআল্লাহ।

প্রয়োজনীয় বিবেচনায় মুসলিমের ভালোবাসা ও ঘৃণা বিষয়ে একটি মৌলিক আলোচনা এখানে তুলে ধরছি।

একজন মুসলিম মানুষের সাথে কীভাবে বৈরিতা ও মিত্রতা পোষণ করবে, তার বর্ণনা কুরআন সুন্নাহয় এসেছে। বৈরিতা ও মিত্রতার ক্ষেত্রে মানুষ তিনভাগে বিভক্ত। যথা:

১ম ভাগ: যাদেরকে খাঁটি ও নিষ্কলুষভাবে ভালোবাসতে হবে, যাদের প্রতি কোনো বিদ্বেষ রাখা যাবে না। তাঁরা হলেন খাঁটি মুমিন সম্প্রদায়। যেমন: নবিগণ, সিদ্দিকগণ, শহিদগণ ও সৎকর্মপরায়ণ বান্দাগণ। আল্লাহ বলেছেন, “যারা তাদের পরে এসেছে তারা বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদেরকে ও আমাদের যেসব ভাই ইমান নিয়ে আমাদের পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করুন; আর যারা ইমান এনেছিল তাদের প্রতি আমাদের অন্তরে কোনো বিদ্বেষ রাখবেন না; হে আমাদের প্রতিপালক, নিশ্চয় আপনি দয়াবান, পরম দয়ালু।” (সুরা হাশর: ১০)

২য় ভাগ: যাদের প্রতি খাঁটিভাবে ঘৃণা ও বিদ্বেষ পোষণ করতে হবে, যাদের প্রতি কোনো ভালোবাসা ও মিত্রতা পোষণ করা যাবে না। তারা হলো খাঁটি কাফির সম্প্রদায়। যেমন: কাফির, মুশরিক, মুনাফেক, মুরতাদ, নাস্তিক ও বিধর্মী সম্প্রদায়। মহান আল্লাহ বলেছেন, “তুমি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী কোনো জাতিকে এরূপ পাবে না যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের বিরোধিতা করে—এমন ব্যক্তিদের সাথে বন্ধুত্ব করে, যদিও তারা তাদের পিতা, বা পুত্র, কিংবা ভাই, বা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয়। এরাই তারা, যাদের অন্তরে আল্লাহ ইমান লিখে দিয়েছেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে রূহ (আল্লাহপ্রদত্ত সাহায্য) দ্বারা তাদের শক্তিশালী করেছেন। তিনি তাদেরকে প্রবেশ করাবেন এমন জান্নাতসমূহে, যেগুলোর তলদেশে ঝরনাধারা প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও সন্তুষ্ট হয়েছে আল্লাহর প্রতি। এরাই আল্লাহর দল। জেনে রেখ, নিশ্চয় আল্লাহর দলই সফলকাম।” (সুরা মুজাদালাহ: ২২)

৩য় ভাগ: যাদেরকে একদিক থেকে ভালোবাসতে হবে, আবার একদিক থেকে ঘৃণা করতে হবে, যাদের ব্যাপারে অন্তরে ভালোবাসা-ঘৃণা দুটিই একত্রিত হবে। তারা হলো পাপাচারী মুমিন ব্যক্তিবর্গ। তাদেরকে ভালোবাসতে হবে, তাদের ইমানের কারণে। আর তাদেরকে ঘৃণা করতে হবে, শির্ক-কুফরের চেয়ে নিম্নপর্যায়ের পাপাচারিতায় লিপ্ত হওয়ার কারণে। অধিকন্তু তাদের প্রতি ভালোবাসার দাবি হচ্ছে তাদেরকে নসিহত করা এবং মন্দকর্মে তাদের বিরোধিতা করা। বিধি মোতাবেক তাদের মন্দকর্মের বিরোধিতা করা ওয়াজিব। [ইমাম সালিহ আল-ফাওযান কৃত আল-ইরশাদ ইলা সাহীহিল ই‘তিক্বাদ; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ২৮৯-২৯০] অনুবাদক কর্তৃক সংযোজিত আলোচনা এখানেই সমাপ্ত।

·[তাগুতের প্রকারভেদ; সবচেয়ে বড়ো তাগুত ইবলিস]

মূলপাঠ: তাগুতের সংখ্যা অনেক। তন্মধ্যে প্রধান তাগুত পাঁচটি। যথা: (১) ইবলিস, আল্লাহ তাকে স্বীয় রহমত থেকে বিতাড়িত করুন।

ব্যাখ্যা: শাইখ বলেছেন, তাগুতের সংখ্যা অনেক। হ্যাঁ, অসংখ্য। আমরা তাগুতের পরিচিতিবিষয়ক আলোচনায় শুনেছি, যার জন্যই কোনো একটি ইবাদত ধার্য করা হয়, আর সে বিষয়টি জানে, এতে সম্মত থাকে এবং জানা ও সম্মত থাকা তার জন্য সম্ভব হয়, তাহলে সে তাগুত। কিন্তু তাগুতদের কয়েকটি মৌলিক ক্ষেত্র আছে। কতিপয় ইমাম বলেছেন, তাগুত তিন প্রকার: (১) ফায়সালার ক্ষেত্রে তাগুত (২) ইবাদতের ক্ষেত্রে তাগুত (৩) আনুগত্য ও অনুসরণের ক্ষেত্রে তাগুত। যত তাগুত আছে, সবগুলোই এ তিন শ্রেণির কোনো একটির আওতাভুক্ত হবে। হয় ফায়সালার ক্ষেত্রে তাগুত, কিংবা ইবাদতের ক্ষেত্রে তাগুত, অথবা আনুগত্য ও অনুসরণের ক্ষেত্রে তাগুত।

ইমাম ইবনু জারীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “মুফাসসিরগণ তাগুতের অর্থের ক্ষেত্রে মতভিন্নতা করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, তাগুত মানে শয়তান। কেউ বলেছেন, জাদুকরই তাগুত।” [তাফসীরে তাবারী, ৪/৫৫৫] এ উদ্ধৃতি কিছুপূর্বে আলোচিত হয়েছে।

তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “আমার কাছে তাগুতের সঠিক অর্থ—আল্লাহর ব্যাপারে যে বাড়াবাড়ি ধারণ করে, ফলে আল্লাহকে বাদ দিয়ে তার ইবাদত করা হয়; হতে পারে সে তাদের প্রতি জোর করে, যারা তার ইবাদত করে। অথবা যারা তার ইবাদত করে, তাদের পক্ষ থেকে সে আনুগত্য লাভ করে। এরূপ মাবুদ তথা উপাস্য মানুষ হোক, কিংবা শয়তান, বা মূর্তি, বা প্রতিমা, অথবা আর যা কিছুই হোক না কেন, সে-ই তাগুত।” [তাফসীরে তাবারী, ৫/৪১৯]

শাইখ বলেছেন, তন্মধ্যে প্রধান তাগুত পাঁচটি।... প্রধান ও শীর্ষস্থানীয় তাগুত পাঁচটি। অনুসন্ধান ও গবেষণার ফলে প্রতীয়মান হয়েছে, তাগুত পাঁচটির মধ্যে সীমাবদ্ধ। অর্থাৎ, কুরআন-সুন্নাহর এমন কোনো দলিল নেই, যা থেকে প্রতীয়মান হয়, তাগুত পাঁচটি। কিন্তু অনুসন্ধান ও গবেষণা থেকে প্রতিভাত হয়েছে, এদের সংখ্যা পাঁচ। পাঁচ তাগুতের প্রধান আবার ইবলিস। প্রধান তাগুত পাঁচটি। আর পাঁচ তাগুতের প্রধান, শীর্ষনেতা, তাগুতদের পতাকাধারী, সমস্ত তাগুতের অনুসৃত গুরু হলো ইবলিস। ইবলিস সকল তাগুতের ইমাম, নেতা। সকল তাগুত তার অনুসরণ করে। ইবলিস যাবতীয় অনিষ্টের মূল এবং সকল বিপর্যয়ের উৎস। সে অনিষ্টের দিক থেকে সবচেয়ে বড়ো তাগুত, বিপজ্জনকতার দিক থেকেও সবচেয়ে বড়ো তাগুত, এবং সীমালঙ্ঘনের দিক থেকেও সবচেয়ে ভয়াবহ তাগুত।

যখন সে আল্লাহর নির্দেশ পালন করল না, তখন আল্লাহর কাছে অবকাশ চাইল। এজন্য নয় যে, সে তওবা করবে এবং দুনিয়াতে তার সর্বশেষ অবস্থান হবে আল্লাহর আনুগত্য। বরং সে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য অবকাশ চেয়েছে। কুরআনে এসেছে, قَالَ أَنْظِرْنِي إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ قَالَ إِنَّكَ مِنَ الْمُنْظَرِينَ “সে বলল, ‘তাহলে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত আমাকে সময় দিন।’ তিনি বললেন, অবশ্যই তুই অবকাশপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত (তোকে অবকাশ দেওয়া হলো)।” [সুরা আরাফ: ১৪-১৫] আল্লাহ তাকে অবকাশ দিলেন।

তখন সে বলল (যা কুরআনে এসেছে), قَالَ فَبِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأَقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَاطَكَ الْمُسْتَقِيمَ ثُمَّ لَآتِيَنَّهُمْ مِنْ بَيْنِ أَيْدِيهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ وَعَنْ أَيْمَانِهِمْ وَعَنْ شَمَائِلِهِمْ ۖ وَلَا تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شَاكِرِينَ “সে বলল, যেহেতু আপনি আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন, সেহেতু আমি অবশ্যই আপনার সরল পথে মানুষদের জন্য বসে থাকব। তারপর আমি তাদের সামনে দিয়ে, তাদের পেছন দিয়ে, তাদের ডান দিয়ে, তাদের বাম দিয়ে, অবশ্যই আসব তাদের কাছে, আপনি তাদের অধিকাংশকেই কৃতজ্ঞ পাবেন না।” [সুরা আরাফ: ১৬-১৭]

এই ইবলিস তাগুত মহান আল্লাহর সামনে বলেছে, আপনি পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত যতদিন অবকাশ দিয়েছেন, আমি অবশ্যই বনু আদমের জন্য আপনার সরল পথে বসে থাকব, তাদেরকে এ পথ থেকে বিচ্যুত করব। এরপর আমি তাদের সামনে দিয়ে, তাদের পেছন দিয়ে, তাদের ডান দিয়ে, তাদের বাম দিয়ে, তাদের কাছে অবশ্যই আসব। ছোটোবড়ো যে কাজই আমি করতে সক্ষম, তা আমি ছেড়ে দিব না। আপনি তাদের অধিকাংশকেই কৃতজ্ঞ পাবেন না। সে তাগুতদের প্রধান। তাকে তাগুত বলার দলিল—মহান আল্লাহর এ বাণী, فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِنْ بِاللَّهِ “সুতরাং যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করল এবং আল্লাহর প্রতি ইমান আনল।” [সুরা বাকারা: ২৫৬]

সাহাবী-সহ অন্যান্য মুফাসসিরগণের কতিপয় বলেছেন, তাগুত মানে শয়তান। তদ্রুপ আল্লাহ বলেছেন, أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ أُوتُوا نَصِيبًا مِنَ الْكِتَابِ يُؤْمِنُونَ بِالْجِبْتِ وَالطَّاغُوتِ “যারা কিতাবের জ্ঞানের একাংশ প্রদত্ত হয়েছে, সেই লোকদের প্রতি তুমি কি লক্ষ করনি, তারা জাদু ও তাগুতের প্রতি বিশ্বাস করে?” [সুরা নিসা: ৫১] একদল মুফাসসিরের মতে আয়াতে উল্লিখিত তাগুত হলো শয়তান। মহান আল্লাহ আরও বলেছেন, وَالَّذِينَ كَفَرُوا يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ الطَّاغُوتِ “আর যারা কাফির, তারা তাগুতের পথে যুদ্ধ করে।” [সুরা নিসা: ৭৬] একদল উলামার মতে এখানে উদ্ধৃত তাগুত হলো শয়তান।

·[ক্রমশ চলবে, ইনশাআল্লাহ]

·অনুবাদক: মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ মৃধা

facebook.com/SunniSalafiAthari

আমাদের ওয়েব সাইটঃ- https://rasikulindiaa.blogspot.com/

আমাদের ওয়েব সাইটঃ-   https://salafi-pdfbooks.blogspot.com/

আমাদের ওয়েব সাইটঃ  https://salafimp3web.blogspot.com/

Post a Comment

0 Comments