▌তাগুত বিষয়ে বিস্তারিত [২য় পর্ব]

তাগুত বিষয়ে বিস্তারিত [২য় পর্ব]

·রচয়িতা: আল্লামাহ সুলাইমান বিন সালীমুল্লাহ আর-রুহাইলী (হাফিযাহুল্লাহ)

·[দ্বিতীয় প্রধান তাগুত—যার ইবাদত করা হয়, আর সে এতে সম্মত থাকে]

মূলপাঠ: (২) যার ইবাদত করা হয়, আর সে এতে সম্মত থাকে।

ব্যাখ্যা: দ্বিতীয় প্রধান তাগুত—‘যার ইবাদত করা হয়, আর সে এতে সম্মত থাকে।’ অর্থাৎ সে বিষয়টি জানে এবং এতে সম্মত থাকে। এ বিষয়ক আলোচনা গত হয়েছে। যখন তার ইবাদত করা হয় এবং সে এতে সম্মত হয়, তখন সে যেন ব্যক্ত করে, সে ইলাহ (উপাস্য)। সে কিন্তু নিজের ইবাদতের দিকে মানুষকে ডাকেনি। ভালোভাবে খেয়াল করো। সে মানুষকে নিজের ইবাদত করতে বলেনি। কিন্তু যখন তার জন্য ইবাদত ধার্য করা হয়েছে, তখন সে তাতে সন্তুষ্ট হয়েছে। তার অবস্থা যেন বলছে, তোমরা আমার ইবাদত করো। সে তদীয় অবস্থার জবানে নিজের ইবাদতের দিকে মানুষকে আহ্বান করেছে (তার অবস্থা যেন বলছে, সে তার ইবাদত করতে ডাকছে)। কারণ যারা তাদের ইবাদত করতে ডাকে, তারা হয় অবস্থার মাধ্যমে ডাকে, কিংবা সরাসরি কথার মাধ্যমে ডাকে। এই দ্বিতীয় শ্রেণি—যে অবস্থার জবানে মানুষকে নিজের ইবাদতের দিকে ডাকে—তাগুতদের অন্তর্ভুক্ত।

পূর্বে উদ্ধৃত যত দলিলে ‘তাগুত’ শব্দের উল্লেখ আছে, তা আলোচ্য শ্রেণিকেও শামিল করে। বুখারি-মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেছেন, লোকেরা বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল, কেয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাব?’ একটি মহান জিজ্ঞাসা। রাসুলুল্লাহ বললেন, ‘পূর্ণিমার রাতে চাঁদ দেখতে কি তোমাদের কষ্ট হয়?’ তারা বলল, ‘হে আল্লাহর রসুল, না (কোনো কষ্ট হয় না)।’ তিনি বললেন, ‘মেঘবিহীন আকাশের সূর্য দেখতে কি তোমাদের কোনো কষ্ট হয়?’ তারা বলল, ‘হে আল্লাহর রসুল, না (কোনো কষ্ট হয় না)।’

তিনি বললেন, ‘তোমরা অনুরূপভাবে আল্লাহকে দেখতে পাবে। কেয়ামতের দিন আল্লাহ মানবজাতিকে একত্রিত করবেন। বলবেন, যে যার ইবাদত করত, সে তারই অনুসরণ করবে। যে সূর্যের ইবাদত করত, সে সূর্যের অনুসরণ করবে। যে চন্দ্রের ইবাদত করত, সে চন্দ্রের অনুসরণ করবে। যে তাগুতদের ইবাদত করত, সে তাগুতদের অনুসরণ করবে।’ অর্থাৎ আল্লাহকে বাদ দিয়ে যার ইবাদত করা হয়, আর সে এতে সম্মত থাকে। ‘এরপর এই উম্মত অবশিষ্ট থাকবে, যাদের মাঝে থাকবে উম্মতের মুনাফেক সম্প্রদায়।’ [সহিহ মুসলিম, ইমান অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: আল্লাহকে দর্শনের স্বরূপ, হা/১৮২]

এখানে (দ্বিতীয় শ্রেণির তাগুতের ব্যাপারে) দলিলগ্রহণের দিকটি হলো, নবি বলেছেন, ‘যে তাগুতদের ইবাদত করত, সে তাগুতদের অনুসরণ করবে।’ অর্থাৎ আল্লাহকে বাদ দিয়ে যার ইবাদত করা হয়, আর সে এতে সম্মত থাকে।

·[তৃতীয় প্রধান তাগুত—যে তার ইবাদত করতে মানুষকে আহ্বান করে]

মূলপাঠ: (৩) যে তার ইবাদত করতে মানুষকে আহ্বান করে।

ব্যাখ্যা: তৃতীয় প্রধান তাগুত—‘যে তার ইবাদত করতে মানুষকে আহ্বান করে।’ অর্থাৎ সরাসরি কথা বলে আহ্বান করে। হয় সে নিজে করে, কিংবা অনুসারীদের মাধ্যমে করে। কিছু মানুষ আছে, যারা তাদের ইবাদত করতে মানুষকে আহ্বান করে। সে এসে বলে, আমি রসুল কে স্বপ্নে দেখেছি। তিনি আমাকে বললেন, তুমি আমার উম্মতের ওলি। সুতরাং তুমি রুগ্ন ব্যক্তিকে সুস্থ করো, আর সন্তানহীনকে সন্তান দাও। ফলে মানুষেরা তার কাছে এসে এসব প্রার্থনা করে। এ জাতীয় লোক সরাসরি নিজে কথা বলে তার ইবাদত করতে আহ্বান করে।

আবার কেউ কেউ অনুসারী বানিয়ে নেয়। যেসব অনুসারীরা তার ইবাদত করতে মানুষকে আহ্বান করে। তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। বলে বেড়ায়, অমুক গ্রামে একজন ‘শাইখ’ আছে, যার কাছে এক মহিলা সন্তান চেয়ে দশজন সন্তান লাভ করেছে। তার কাছে অমুক এসেছে, আর তার এসব এসব হাসিল হয়েছে। তো এই লোক তার অনুসারীদের মাধ্যমে এরকম কথা প্রচার করে। এ সরাসরি কথা বলে তার ইবাদত করতে মানুষকে আহ্বান করে। এ লোক তাগুত; কারণ সে কথা বলে মানুষকে ডেকেছে তার ইবাদত করতে।

·[চতুর্থ প্রধান তাগুত—যে ইলমুল গায়েব জানার দাবি করে]

মূলপাঠ: (৪) যে ইলমুল গায়েব (অদৃশ্যের জ্ঞান) জানার দাবি করে।

ব্যাখ্যা: আমাদের অদৃশ্যে যা আছে, সেটাই ইলমুল গায়েব। উলামাদের নিকট গায়েবি ইলম দু প্রকার। যথা: ১ম প্রকার: নিরঙ্কুশ গায়েব, ২য় প্রকার: আপেক্ষিক গায়েব।

১ম প্রকার তথা নিরঙ্কুশ গায়েব সেটা, যে বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহ একান্তই নিজের করে রেখেছেন, ফলে তা না জানতে পারে কোনো প্রেরিত রসুল, আর না জানতে পারে কোনো নৈকট্যশীল ফেরেশতা। আল্লাহ এ বিষয়ের জ্ঞান নিজের করে নিয়েছেন। গায়েবের পাঁচ চাবিকাঠিতে এ গায়েবের সন্নিবেশ ঘটেছে। মহান আল্লাহ বলেছেন, إِنَّ اللَّهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْأَرْحَامِ ۖ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَاذَا تَكْسِبُ غَدًا ۖ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ “কেয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহর কাছেই আছে, তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন, মাতৃজঠরে কী আছে তা তিনিই জানেন। কেউ জানে না আগামীকাল সে কী অর্জন করবে, কেউ জানে না কোন জায়গায় সে মারা যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবিশেষ অবহিত।” [সুরা লুকমান: ৩৪]

এগুলো গায়েবের চাবিকাঠি, যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। যে তা জানার দাবি করে, সে তাগুত। এ পাঁচ চাবিকাঠির জ্ঞান যে জানার দাবি করে, সে তাগুত। তদ্রুপ যা মাখলুকের অদৃশ্যে রয়েছে, আর আল্লাহ তা নিজের করে রেখেছেন, এবং তা জানার কোনো নির্দেশক দলিলও আল্লাহ নির্ধারণ করেননি। অর্থাৎ কোনো শরয়ী বা সৃষ্টিগত দলিল নির্ধারণ করেননি। এ ধরনের জ্ঞানও নিরঙ্কুশ গায়েবের অন্তর্ভুক্ত। যে ব্যক্তি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত দলিল ব্যতিরেকে কোনো ঘটিতব্য বিষয় জানার দাবি করে, সে তাগুত। যেমন গণকরা গায়েব জানার দাবি করে। গণক কোনো নির্দেশক দলিল ব্যতিরেকেই বলে, তুমি সন্তানপ্রাপ্ত হবে, তুমি সন্তানপ্রাপ্ত হবে না, তোমার এই হবে, ওই হবে। কিংবা বলে, অমুক জায়গায় তোমার যে উট হারিয়ে গেছে, অথবা তোমার যে সম্পদ হারিয়েছে, তা অমুক জায়গায় আছে।

এগুলো সবই গায়েবের অন্তর্ভুক্ত, যার জ্ঞান মহান আল্লাহ নিজের করে রেখেছেন। হয় তা গায়েবের চাবিকাঠির অন্তর্গত হবে, অন্যথায় তা ওই জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত হবে—যা মাখলুকের অদৃশ্যে রয়েছে এবং তা জানার কোনো নির্দেশক দলিল আল্লাহ নির্ধারণ করেননি। শাইখ এ ধরনের গায়েব সম্পর্কেই আলোচনা করেছেন।

২য় প্রকার: আপেক্ষিক গায়েব। এ বিষয়টি বুঝে নেওয়া জরুরি। আপেক্ষিক গায়েব দু ধরনের:

এক. যা আমাদের অদৃশ্যে রয়েছে। কিন্তু আল্লাহ তা জানার দলিল ও মাধ্যম নির্ধারণ করেছেন। যে ব্যক্তি মাধ্যমগুলো জানতে পেরেছে, সে জেনেছে, এটা সংঘটিত হবে। এটা গায়েব জানার দাবি নয়। তথাপি কখনো কখনো এর ফলাফল সঠিক নাও হতে পারে। যেমন বর্তমান সময়ে এক বা দুই বছর আগেই আমাদেরকে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, অমুক দিন সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগহণ হবে। এটা গায়েবি জ্ঞান জানার দাবি নয়। কেননা আল্লাহ সৃষ্টিগত দলিল ও নিদর্শন স্থাপন করেছেন, যার মাধ্যমে বান্দা এরকম বিষয় জানতে পারে। যে ব্যক্তি নিদর্শনের মাধ্যমে এ জাতীয় কথা বলে, সে গায়েব জানার দাবি করেনি। কিন্তু আমরা জানি, এর ফলাফল কখনো কখনো মাধ্যমমাফিক নাও হতে পারে।

দুই. যা দুর্বলতার কারণে মাখলুকের অদৃশ্যে থাকে। এটা আপেক্ষিক। হয়তো বিষয়টি আমি জানি না, কিন্তু জায়েদ ঠিকই জানে। যেমন খালেদ নামের কোনো ব্যক্তির অসুখ করেছে। আমি তা জানি না। কেননা আমার দুর্বলতার কারণে বিষয়টি আমি অবগত হতে পারিনি। কিন্তু খালেদের প্রতিবেশী জানে, সে অসুস্থ। এটা আমার কাছে গায়েব (কিন্তু ওই প্রতিবেশীর কাছে তা গায়েব নয়)।

সুতরাং আপেক্ষিক গায়েব দু ধরনের। তন্মধ্যে এক ধরনের গায়েব মাখলুকের অদৃশ্যে থাকে। তথাপি আল্লাহ তা জানার জ্ঞাতব্য মাধ্যম নির্ধারণ করেছেন। যে সেসব মাধ্যম জানতে পারে এবং বলে, এসব সুবিদিত মাধ্যম অনুযায়ী অমুক বিষয় সংঘটিত হবে, সে গায়েব জানার দাবি করেনি। পক্ষান্তরে মাধ্যম না জেনেই যে বিভিন্ন বিষয় ঘটার দাবি করে, সে মূলত গায়েব জানার দাবি করে।

যে দাবি করে, সে গায়েব জানে, সে তাগুত। মানুষ যা জানতে পারে না, এমনকিছু জানার দাবি যে করে, সে তাগুত। কেননা সে অবাধ্য হয়েছে এবং সীমালঙ্ঘন করেছে। মহান আল্লাহ বলেছেন, يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ “তারা তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়।” [সুরা নিসা: ৬০] কতিপয় সালাফ আয়াতে উদ্ধৃত ‘তাগুতের’ ব্যাখ্যা করেছেন—গণক, জ্যোতিষী।

বর্তমানে দেখা যায়, চুরি-জাতীয় কোনো বিষয় নিয়ে কিছু মানুষ মতবিরোধ করে। বলে, ‘তুমি আমার সম্পদ চুরি করেছ।’ অভিযুক্ত ব্যক্তি বলে, ‘না, আমি চুরি করিনি।’ তখন বাদী বলে, ‘তাহলে চলো, আমরা অমুক শাইখের কাছে যাব, কিংবা অমুক ওলির কাছে যাব।’ তারা ওদেরকে জ্যোতিষী বলে না, জাদুকর বা ভেলকিবাজও বলে না। তারা ওদেরকে ‘শাইখ’ বলে ডাকে। হয়তো ওদের শাইখের কাছে থাকে বিরাট লম্বা তসবিমালা, যা দিয়ে সে খেলা করে। কিংবা সে কুরআনের কোনো অংশবিশেষ পাঠ করে। তো তারা বলে, ‘আমরা শাইখের কাছে যাব, তিনি আমাদের মাঝে ফায়সালা করবেন।’ ‘শাইখ, এ কি আমার সম্পদ চুরি করেছে?’ সে যদি বলে, ‘হ্যাঁ, চুরি করেছে,’ তাহলে তারা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে চোর সাব্যস্ত করে। সে যদি বলে, ‘না, চুরি করেনি,’ তাহলে তারা চুরির অভিযোগ তুলে নেয়।

এটা তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হওয়ার অন্তর্ভুক্ত, গণকের কাছে গমন করার অন্তর্গত। যে ব্যক্তি ভবিষ্যতের গায়েবি বিষয় সম্পর্কে সংবাদ দেয়, সে গণক বা জ্যোতিষী। সুতরাং সুবিদিত মাধ্যম ব্যতিরেকে যে ব্যক্তিই ভবিষ্যতের গায়েবি বিষয় সম্বন্ধে সংবাদ দেয়, সে-ই তাগুত। সুতরাং শাইখের—ইমাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব—কথার মর্ম হচ্ছে, যে ব্যক্তি এমন গায়েব জানার দাবি করে, যা কেবল আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানে না, কিংবা যে গায়েবি ইলম আল্লাহর ইচ্ছায় কোনো রসুল কেবল নির্দিষ্ট কোনো ক্ষেত্রে জানতে পারেন; যে লোকই তা জানার দাবি করে, সে আল্লাহকে মিথ্যা প্রতিপন্নকারী তাগুত।

·[আলট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে মাতৃগর্ভস্থ সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ করা কি গায়েব জানার অন্তর্ভুক্ত?]

বর্তমানে একটি বিষয় মানুষের কাছে সংঘটিত হয়েছে। ডাক্তাররা গর্ভস্থ সন্তানের লিঙ্গ বলে দিচ্ছে। বলে দিচ্ছে, গর্ভস্থ সন্তান ছেলে, না মেয়ে। আমরা বলব, তারা ভ্রুণে রূপান্তরিত হওয়ার পরে এ সংবাদ দেয়। ভ্রুণ গঠিত হওয়ার আগে এ সংবাদ দেওয়ার কোনো পথ নেই। তারা মাধ্যমের সাহায্যে এরকম বলতে পারে। এমন কোনো ডাক্তার নেই, যে কিনা বর্তমানে বিদ্যমান যন্ত্রের মাধ্যমে না দেখেই তা বলে দিতে পারে। আল্লাহ যেসব নিদর্শন নির্ধারণ করেছেন, সেসবের মাধ্যমে কোনো কিছু সংবাদ দেওয়া গায়েব জানার দাবি নয়।

কিছু মুসলিম বিষয়টিকে খারাপ মনে করে। বলে, ‘আমি ডাক্তারকে বলব, আমাকে সন্তানের লিঙ্গ কী—তা বলবেন না। কারণ এটা গায়েবি ইলম (অদৃশ্যের জ্ঞান)।’ আমরা বলব, না, এটা অদৃশ্যের জ্ঞান নয়, যে জ্ঞান আল্লাহ একান্তই নিজের করে রেখেছেন। বরং আল্লাহ বান্দাদের জন্য এ বিষয়টি জানার মাধ্যম নির্ধারণ করেছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য তা জানার মাধ্যম অবশিষ্ট রেখেছেন, ততক্ষণ অবধি তারা তা অনুসরণ করলে সেটা গায়েব জানার আওতাভুক্ত হবে না।

·[আগাম মৃত্যুসংবাদ দিলে কি গায়েব জানার দাবি করা হয়?]

আগাম মৃত্যুসংবাদের ব্যাপারটি কী হবে, যেখানে বলা হয়, অমুক ব্যক্তি অমুক দিন মারা যাবে? কিছু মানুষ বলে, তুমি দু মাস পর মারা যাবে, তুমি মারা যাবে এক বছর পরে, ইত্যাদি। এরকম দাবি যদি দৃঢ়তাসূচক হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে তা গায়েব জানার দাবি। পক্ষান্তরে ধারণাভিত্তিক হলে তার দুটি অবস্থা রয়েছে: [শাইখ সুলাইমান আর-রুহাইলী (হাফিযাহুল্লাহ) দ্বিতীয় অবস্থা উল্লেখ করেননি – অনুবাদক]

১ম অবস্থা: ধারণাভিত্তিক দাবি করা হয় মাধ্যমের সাহায্য নিয়ে। অর্থাৎ মানুষ নিজেদের জ্ঞান অনুযায়ী যা জানে, তার সাহায্য নিয়ে। যেমন ডাক্তাররা বলে, আমাদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী এ ধরনের রোগী অধিকাংশ ক্ষেত্রে দু বছর বাঁচে। আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন। এ রোগী দু বছর পূর্ণ করতে পারে, দু বছর নাও পূর্ণ করতে পারে, আবার দু বছরের পরেও অনেকদিন বাঁচতে পারে। কিন্তু মাধ্যমের সাহায্যে ডাক্তাররা জানে, এ ধরনের রোগী এতদিন পর্যন্ত বাঁচে। এটা অদৃশ্যের জ্ঞান নয়।

কিন্তু হাল আমলে একটি নতুন বিষয়ের উদ্ভব হয়েছে। এটা স্বপ্নের বিষয়। কিছু স্বপ্নের ব্যাখ্যাকারী আছে, যারা কিনা স্বপ্নের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে গায়েবি জ্ঞানের মধ্যে প্রবেশ করে। এ থেকেই প্রতীয়মান হয়, তারা আসলে স্বপ্নের ব্যাখ্যা-জানা লোক নয়। কোনো কোনো স্বপ্নের ব্যাখ্যাকারী আছে, যাকে কেউ প্রশ্ন করলে সে বলে, ‘তুমি দাজ্জালকে দেখতে পাবে।’ এটা গায়েবি জ্ঞান। আবার তাদের কেউ বলে, ‘তুমি বিশ বছর পর মারা যাবে, তুমি মারা যাবে চল্লিশ বছর পর, তুমি মারা যাবে জিলহজ মাসের পর।’ তারা এসব বলে স্বপ্নের মাধ্যমে। প্রকৃতপ্রস্তাবে এ ধরনের কথা বলা না-জায়েজ। কিন্তু তারা কি তাগুত?

উত্তর: না। কারণ স্বপ্ন বাস্তবিক মাধ্যমের মতো। বাস্তবিক মাধ্যমের সাথে স্বপ্নের মিল রয়েছে। এজন্য তাদেরকে তাগুত বলা হবে না। এগুলো সূক্ষ্ম জ্ঞানগর্ভ ফিকহি বিষয়, যা ভালোভাবে বুঝে নেওয়া জরুরি। যাতে কেউ মানুষকে হুকুম দিতে ভুল না করে। সুতরাং আমরা বলি, মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানে না, এমন অদৃশ্যের জ্ঞান যে জানার দাবি করে, সে তাগুত।

সত্যিকারার্থে বিনা দলিলে গায়েবি বিষয়ের কথা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে বেড়ানো থেকে আমরা চরম সতর্ক করি। কেননা এতে করে মানুষকে (এসব বলতে) উৎসাহিত করা হয় এবং তাদেরকে নিপাতিত করা হয় হারাম বিষয়ে। যদিও তা স্বপ্নের মাধ্যমে বলা হয়। অধুনা আমরা দেখি, নানাবিধ ক্যাসেট বিতরণ করা হচ্ছে, ইন্টারনেটেও এসব ছড়ানো হচ্ছে, যাতে আছে স্বপ্নের ব্যাখ্যা। এতে বলা হচ্ছে, পৃথিবীতে এটা ঘটতে যাচ্ছে, ওটা ঘটতে যাচ্ছে, ইত্যাদি। এসব বিষয় বর্জন করা বাঞ্ছনীয়।

·[পঞ্চম প্রধান তাগুত—যে আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান ব্যতিরেকে অন্য বিধান দিয়ে ফায়সালা করে]

মূলপাঠ: (৫) যে আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান ব্যতিরেকে অন্য বিধান দিয়ে ফায়সালা করে।

ব্যাখ্যা: আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান দিয়ে ফায়সালা করা মুসলিমদের ওপর সুস্পষ্ট ফরজ। সুতরাং মহান আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান দিয়ে ফায়সালা করা ওয়াজিব—এ মর্মে দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করা মুসলিমের জন্য আবশ্যক। মুসলিমের এ বিশ্বাস রাখাও কর্তব্য যে, আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান দিয়ে কৃত ফায়সালাই ন্যায় বাস্তবায়ন করে, এছাড়া এমন কোনো বিধান নেই, যা তার সমপর্যায়ে আসা তো দূরের কথা, তার ধারেকাছেও আসতে পারে। এটা শরিয়তের সুস্পষ্ট দ্ব্যর্থহীন বিষয়, দ্বীনের অতীব জরুরি জ্ঞাতব্য বিষয় (যা জানতে গবেষণার প্রয়োজন হয় না)।

এ বিষয়ে সত্যিকারের আল্লামাহ, ফাক্বীহ, ইমাম, শাইখ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ)’র মহান উপদেশ রয়েছে। যেখানে তিনি উম্মতকে চমৎকার নসিহত করেছেন। ভাইদের কাছে আমি উক্ত উপদেশ বর্ণনা করতে চাইছি। কেননা এ উপদেশ সেসব মণিমুক্তার অন্তর্গত, যেগুলো মুসলিমদের মাঝে প্রচার করা জরুরি, তালিবুল ইলমদের জন্য যেগুলোর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে মনোযোগী হওয়া বাঞ্ছনীয় (অর্থাৎ তালিবুল ইলমরা যেন এ উপদেশ জনসাধারণের কাছে ব্যাখ্যা করে)।

শাইখ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “আল্লাহর শরিয়তের কাছে বিচারপ্রার্থী হওয়া এবং অন্য বিধানের কাছে বিচারপ্রার্থী হওয়া থেকে সতর্ক থাকা আবশ্যক—মর্মে এটি একটি সংক্ষিপ্ত বার্তা, অপরিহার্য নসিহত। আমি এ বার্তা লিখেছি। কারণ আমি দেখছি, বর্তমান যুগে কিছু মানুষ গাইরুল্লাহর (আল্লাহ ব্যতীত অন্যের) বিধানকে বিচারক নির্ধারণ করছে, আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রসুলের সুন্নাত ব্যতিরেকে অন্যের নিকট বিচারপ্রার্থী হচ্ছে। বিচারপ্রার্থী হচ্ছে গণক, জ্যোতিষী, মরুদেশের গোত্রনেতা, সেক্যুলার আইনের নেতা প্রমুখের নিকট। তাদের মধ্যে কিছু লোক নিজেদের কর্মের বিধান সম্পর্কে না জেনে এমনটি করে। আর অন্যরা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের বিরোধিতা ও বিরুদ্ধাচারণ করে এ কাজে লিপ্ত হয়। আমি আশা করছি, আমার এ উপদেশ অজ্ঞদের জন্য জানার উপায় হবে এবং গাফেলদের জন্য হবে স্মরণিকা। আর হবে সরল পথের ওপর আল্লাহর বান্দাদের অটল থাকার একটি মাধ্যম।” [মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, ১/৭২]

শাইখ বলছেন, “ওহে মুসলিম জনতা, আল্লাহ জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত করার জন্য। আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি কেবল আমার ইবাদত করার জন্য।’ (সুরা যারিয়াত: ৫৬) তিনি আরও বলেছেন, ‘তোমার রব ফায়সালা করেছেন, তোমরা কেবল তাঁরই ইবাদত করবে এবং পিতামাতার সাথে সদাচারণ করবে।’ (সুরা ইসরা: ২৩) তিনি আরও বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তাঁর সাথে কোনো কিছুকেই শরিক কোরো না, আর পিতামাতার সাথে সদাচারণ করো।’ (সুরা নিসা: ৩৬)

মুআয বিন জাবাল (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেছেন, আমি নবি এর পেছনে গাধার পিঠে সওয়ার হয়েছিলাম। তিনি বললেন, ‘মুআয, তুমি কি জান, বান্দার ওপর আল্লাহর অধিকার কী, আর আল্লাহর ওপর কী বান্দার অধিকার?’ আমি জবাব দিলাম, ‘আল্লাহ ও তাঁর রসুলই ভালো জানেন।’ তিনি বললেন, ‘বান্দার ওপর আল্লাহর অধিকার—বান্দা কেবল আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে অন্যকিছুকে শরিক করবে না। আর আল্লাহর ওপর বান্দার অধিকার—যে বান্দা তাঁর সাথে শরিক করে না, তাকে তিনি শাস্তি দেবেন না।’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসুল, আমি কি মানুষকে এ সুসংবাদ দেব না?’ তিনি বললেন, ‘তুমি তাদেরকে সুসংবাদ দিয়ো না, তাহলে তারা এর ওপর নির্ভর করে বসবে (নির্ভর করে আমল ছেড়ে দেবে)।’ বুখারি ও মুসলিম এ হাদিস বর্ণনা করেছেন।

উলামাগণ (রাহিমাহুমুল্লাহ) কাছাকাছি অর্থে ইবাদতের বেশকিছু ব্যাখ্যা করেছেন। এর মধ্যে সর্বমর্মী ব্যাখ্যা শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ)’র। তিনি বলেছেন, আল্লাহ ভালোবাসেন ও পছন্দ করেন, এমন যাবতীয় প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কথা ও কাজই ইবাদত।” [মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, ১/৭৩] এখানে উল্লিখিত সব কথা আলোচ্য পুস্তিকার ভাষ্যে বলা হয়েছে।

শাইখ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলছেন, “এ থেকে প্রতীয়মান হয়, আদেশ, নিষেধ, বিশ্বাস, কথা ও কাজ—সবক্ষেত্রে মহান আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য করা ইবাদতের দাবি। আল্লাহর প্রতি ইবাদত আরও দাবি করে, মানুষের জীবন আল্লাহর শরিয়তের ওপর প্রতিষ্ঠিত হবে। আল্লাহ যা হালাল করেছেন, সেও তা হালাল করবে। আল্লাহ যা হারাম করেছেন, সেও তা হারাম করবে। সে তার যাবতীয় আচার-আচরণ ও কাজকর্মে আল্লাহর শরিয়তের প্রতি অনুগত হবে। মুক্ত থাকবে অন্তরের খেয়ালখুশি ও প্রবৃত্তির স্বেচ্ছাচারিতা থেকে। এক্ষেত্রে যেন ব্যক্তি-সমাজ এবং নারী-পুরুষ সবাই সমান হয়। যে ব্যক্তি কিছু ক্ষেত্রে তার রবের প্রতি অনুগত হয়, আর বাকি ক্ষেত্রে মাখলুকের অনুগত হয়, সে আল্লাহর ইবাদতকারী বান্দা হতে পারেনি।

আমাদের উল্লিখিত এ অর্থকে আরও জোরদার করে মহান আল্লাহর এ বাণী, ‘অতএব তোমার রবের কসম, তারা ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফায়সালা দেবে সে ব্যাপারে তাদের অন্তরে কোনো দ্বিধা অনুভব না করে এবং সর্বান্তকরণে তা মেনে নেয়।’ (সুরা নিসা: ৬৫) সুতরাং যে বান্দা আল্লাহর প্রতি ইমান এনে ছোটোবড়ো সবক্ষেত্রে তাঁর হুকুমের প্রতি সন্তুষ্ট হয়নি, সকল ক্ষেত্রে—জান, মাল, সম্ভ্রম সবক্ষেত্রে—কেবল তাঁর শরিয়তের কাছে বিচারপ্রার্থী হয়নি, তার ইমান পরিপূর্ণ হয়নি। এ কাজ না করলে সে সাব্যস্ত হবে অন্যের বান্দা। যেমন আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের কাছেই রাসুল প্রেরণ করেছি (এই ঘোষণা দিয়ে যে), তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাগুতকে পরিহার করো।’ (সুরা নাহল: ৩৬)

এক আল্লাহর ইবাদত সম্পাদন, তাগুতের ইবাদত থেকে সম্পর্ক ছিন্নকরণ এবং আল্লাহর কাছে বিচারপ্রার্থী হওয়া—দু সাক্ষ্যের দাবি। এ মর্মে সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, তিনি এক ও অদ্বিতীয়, আর মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রসুল। মহান আল্লাহ মানুষের রব (প্রভু) ও ইলাহ (উপাস্য)। তিনিই তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। তিনিই তাদের নির্দেশ দেন, নিষেধ করেন, জীবন দেন, মৃত্যু দেন। তিনিই তাদের হিসাব নেবেন এবং প্রতিদান দেবেন। কেবল তিনিই ইবাদতের হকদার, অন্য কেউ নয়। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘জেনে রেখ, সৃষ্টি তাঁর, হুকুমও (চলবে) তাঁর।’ (সুরা আরাফ: ৫৪)

আল্লাহ ইহুদি-খ্রিষ্টানদের কর্ম বর্ণনা করেছেন। তারা আল্লাহকে ব্যতিরেকে তাদের ধর্মীয় পণ্ডিত ও জাযকদের নিজেদের রব বানিয়ে নিয়েছিল, যখন তারা হালালকে হারামকরণ ও হারামকে হালালকরণের ক্ষেত্রে তাদের অনুসরণ করেছিল। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তারা আল্লাহকে ছেড়ে তাদের পণ্ডিত ও সংসারবিরাগীদের রব হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং মারইয়াম তনয় মাসীহকেও। অথচ তারা এক উপাস্যের ইবাদত করার জন্যই আদিষ্ট হয়েছে, তিনি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই। তারা যে শরিক স্থাপন করে, তিনি তা থেকে মহাপবিত্র।’ (সুরা তওবা: ৩১)

আদী বিন হাতিম (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি মনে করেছিলেন, পণ্ডিত ও সন্ন্যাসীদের ইবাদত বলতে কেবল তাদের উদ্দেশ্যে জবেহ, নজর-নেওয়াজ, রুকু-সেজদা প্রভৃতি বোঝানো হয়েছে। এটা তখনকার ঘটনা, যখন তিনি মুসলিম হিসেবে নবি এর কাছে আগমন করেছিলেন এবং তাঁকে এ আয়াত পাঠ করতে শুনেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহর রসুল, আমরা তো তাদের ইবাদত করি না।’ তিনি খ্রিষ্টানদের ব্যাপারে বলেছেন, যেহেতু তিনি ইসলামগ্রহণের পূর্বে খ্রিষ্টান ছিলেন। নবি বলেছিলেন, ‘আচ্ছা আল্লাহর হালাল ঘোষিত জিনিসকে তারা হারাম বললে, তোমরা কি তা হারাম হিসেবে গ্রহণ করো না? আবার আল্লাহর হারাম ঘোষিত জিনিসকে তারা হালাল বললে, তোমরা কি তা হালাল হিসেবে গ্রহণ করো না?’ তিনি বললেন, জি। তখন তিনি বললেন, ‘এটাই তাদের ইবাদত।’ (তিরমিজি, হা/৩০৯৫; সনদ: হাসান) আহমাদ ও তিরমিজি এ হাদিস বর্ণনা করেছেন এবং তিরমিজি হাদিসটিকে হাসান বলেছেন।...

যখন জানা গেল, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রসুল—এ সাক্ষ্যদ্বয়ের দাবি মোতাবেক কেবল আল্লাহর শরিয়তের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে হবে। সেহেতু তাগুত, নেতা ও জ্যোতিষীর কাছে বিচারপ্রার্থী হওয়া মহান আল্লাহর প্রতি আনিত ইমানের পরিপন্থি। এটা কুফর, জুলুম ও ফাসেকি কাজ। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান দিয়ে যারা বিচার-ফায়সালা করে না, তারা কাফির।’ (সুরা মাইদাহ: ৪৪) মহান আল্লাহ বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান ব্যতিরেকে অন্য বিধান দিয়ে কৃত ফায়সালা—জাহেলি যুগের লোকদের ফায়সালা। আর তাঁর ফায়সালা থেকে বিমুখ হওয়া তাঁর শাস্তি ও আজাব নেমে আসার একটি মাধ্যম; যে শাস্তি জালেম সম্প্রদায়ের নিকট থেকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে না।

মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আর তুমি তাদের মাঝে আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান দিয়ে ফায়সালা করো। তুমি তাদের খেয়ালখুশির অনুসরণ করবে না। আর তাদের থেকে সতর্ক থাকবে; তারা যেন আল্লাহ তোমার প্রতি যা নাজিল করেছেন, তার কোনো কিছু থেকে তোমাকে বিচ্যুত করতে না পারে। যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে জেনে রেখ, আল্লাহ তাদের কিছু পাপের কারণে তাদেরকে শাস্তি দিতে চান। প্রকৃতপক্ষে মানুষদের অধিকাংশই পাপাচারী। তারা কি জাহেলি যুগের বিচার-ফায়সালা কামনা করে? আল্লাহ অপেক্ষা দৃঢ় প্রত্যয়ীদের জন্য উত্তম বিচারক আর কে?’ (সুরা মাইদাহ: ৪৯-৫০)

এ আয়াতটি যিনি পাঠ করবেন এবং তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করবেন, তার কাছে স্পষ্টরূপে প্রতিভাত হবে, আল্লাহর বিধানের কাছে বিচারপ্রার্থী হওয়ার বিষয়টি আটটি নির্দেশনার মাধ্যমে জোরদার করা হয়েছে। এক. আল্লাহ তাঁর নাজিলকৃত বিধান দিয়ে ফায়সালার নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন, ‘আর তুমি তাদের মাঝে আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান দিয়ে ফায়সালা করো।’ দুই. কোনো অবস্থাতেই মানুষের খেয়ালখুশি ও চাহিদা যেন তোমাকে এ বিধান দিয়ে ফায়সালা করা থেকে বিরত না রাখে। বলেছেন, ‘তুমি তাদের খেয়ালখুশির অনুসরণ করবে না।’ তিন. কমবেশি, ছোটোবড়ো সকল ক্ষেত্রে গাইরুল্লাহর (আল্লাহ ব্যতীত অন্যের) বিধানকে বিচারক নির্ধারণ করা থেকে সতর্ক করেছেন। বলেছেন, ‘আর তাদের থেকে সতর্ক থাকবে; তারা যেন আল্লাহ তোমার প্রতি যা নাজিল করেছেন, তার কোনো কিছু থেকে তোমাকে বিচ্যুত করতে না পারে।’

চার. আল্লাহর ফায়সালা থেকে বিমুখ হওয়া এবং তাঁর ফায়সালার কোনো অংশ গ্রহণ না করা—বড়ো গুনাহ, যা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তিকে অপরিহার্য করে। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে জেনে রেখ, আল্লাহ তাদের কিছু পাপের কারণে তাদেরকে শাস্তি দিতে চান।’ পাঁচ. আল্লাহর বিধান থেকে বিমুখ লোকদের সংখ্যাধিক্য দেখে ধোঁকা খাওয়া থেকে সতর্ক করা হয়েছে। কারণ আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দার সংখ্যা অল্পই। আল্লাহ বলেছেন, ‘প্রকৃতপক্ষে মানুষদের অধিকাংশই পাপাচারী।’ ছয়. আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান ব্যতিরেকে অন্য বিধান দিয়ে কৃত ফায়সালা—জাহেলি যুগের ফায়সালা। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তারা কি জাহেলি যুগের বিচার-ফায়সালা কামনা করে?’

সাত. সাব্যস্ত করা হয়েছে মহান কথা—আল্লাহর ফায়সালাই সবচেয়ে ভালো ও ন্যায়নিষ্ঠ ফায়সালা। তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহ অপেক্ষা উত্তম বিচারক আর কে?’ আট. ইয়াক্বীন তথা দৃঢ় প্রত্যয়ের দাবি—এটা জেনে রাখা যে, আল্লাহর ফায়সালা সর্বোৎকৃষ্ট, সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ, পূর্ণতর ও সবচেয়ে ন্যায়নিষ্ঠ; এবং সন্তোষ ও পূর্ণ-স্বীকৃতির সাথে এ ফায়সালার প্রতি অনুগত হওয়া ওয়াজিব। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আল্লাহ অপেক্ষা দৃঢ় প্রত্যয়ীদের জন্য উত্তম বিচারক আর কে?’

এসব অর্থ কুরআনের অসংখ্য আয়াতে বিদ্যমান রয়েছে।... এর মানে মহান আল্লাহ ও তদীয় রসুলের কথার প্রতি পুরোপুরি অনুগত হওয়া এবং তাঁদের কথাকে অন্য সকলের কথার ওপরে অগ্রাধিকার দেওয়া বান্দার জন্য ওয়াজিব। এটা দ্বীনের অতীব জরুরি জ্ঞাতব্য বিষয় (যা জানতে গবেষণার প্রয়োজন হয় না)। এজন্য আল্লাহর দয়া ও প্রজ্ঞার দাবি মোতাবেক বান্দাদের মাঝে বিচার-ফায়সালা হবে কেবল তাঁরই শরিয়ত ও ওহির মাধ্যমে। কারণ মানুষের যে দুর্বলতা, অপারগতা, খেয়ালখুশির অনুসরণ ও অজ্ঞতা থাকে, তা থেকে তিনি সম্পূর্ণ মুক্ত, পবিত্র। তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ, সূক্ষ্মদর্শী, সবিশেষ অবহিত।” [মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ, ১/৭৪-৭৮]

শাইখ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “হে মুসলিম, উপরিউক্ত আলোচনা থেকে তোমার কাছে প্রতীয়মান হয়েছে, আল্লাহর শরিয়তকে বিচারক নির্ধারণ করা এবং তাঁর শরিয়তের কাছে বিচারপ্রার্থী হওয়া আবশ্যক, যা আবশ্যক করেছেন আল্লাহ ও তদীয় রসুল । এটা আল্লাহর ইবাদতের দাবি এবং তাঁর নবি মুহাম্মাদ এর রিসালাতের প্রতি সাক্ষ্যপ্রদানের দাবি। এ থেকে বিমুখ হলে কিংবা এর কোনো অংশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে আল্লাহর শাস্তি ও আজাব অপরিহার্য হয়ে যায়। রাষ্ট্র তার নাগরিকদের প্রতি যে বিধান প্রয়োগ করে, কিংবা সকল যুগে ও স্থানে মুসলিমদের জন্য যা দ্বীন হিসেবে পালন করা জরুরি—এ দুয়ের প্রতিটি ক্ষেত্রেই এ নির্দেশনা সমান।” [মাজমূ‘উ ফাতাওয়া, ১/৭৯]

অর্থাৎ শরয়ী বিধানকে ফায়সালাকারী নির্ধারণ করা কেবল শাসকদের সাথে খাস নয়, যারা রাষ্ট্র শাসন করে। বরং এ বিধান শরিয়তের আজ্ঞাপ্রাপ্ত সকল ব্যক্তির জন্য ব্যাপক। শরিয়তের আজ্ঞাপ্রাপ্ত সকল ব্যক্তির ওপর আবশ্যক—আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান দিয়ে ফায়সালা করা।

শাইখ তাঁর নসিহত পেশ করে বলছেন, “সুতরাং মুসলিম জনসাধারণ, তাদের শাসকবর্গ, এবং তাদের মধ্যকার নেতৃস্থানীয় ও জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গের অবশ্য পালনীয় কর্তব্য হবে, মহান আল্লাহকে ভয় করা, তাদের দেশে ও প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর শরিয়তকে ফায়সালাকারী নির্ধারণ করা, দুনিয়া ও আখেরাতে আল্লাহর আজাব থেকে নিজেদের বাঁচানো এবং অধীন লোকদেরও বাঁচানো। আর যেসব রাষ্ট্র আল্লাহর বিধান থেকে বিমুখ হয়েছে এবং পশ্চিমাদের অনুকরণকারী ও তাদের আদর্শের অনুসারীদের বাহনে ভ্রমণ করেছে (তাদের পথে পথ চলেছে), সেসব দেশে সৃষ্টি হয়েছে মতোবিরোধ, বিভক্তি, ফিতনার বিস্তার, কল্যাণের স্বল্পতা, পারস্পরিক হত্যাকাণ্ড; এখনও যা চলছে প্রচণ্ডভাবে। এ থেকে যেন তারা শিক্ষা নেয়, উপদেশ গ্রহণ করে।

তাদের অবস্থার সংশোধন হবে না, তাদের বিরুদ্ধে শত্রুদের রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক আধিপত্যও তুলে নেওয়া হবে না, যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর পথে ফিরে আসে এবং তাঁর সরল পথের অনুসরণ করে; যে পথ তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য চয়ন করেছেন, সে পথে চলার নির্দেশ দিয়েছেন, আর এর বিনিময়ে তাদেরকে চিরসুখী জান্নাত প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মহান আল্লাহ সত্যই বলেছেন, ‘যে আমার স্মরণ (কুরআন) থেকে বিমুখ হয়, তার জীবন হবে সংকীর্ণময়, আর কেয়ামতের দিন আমি তাকে উত্থিত করব অন্ধ অবস্থায়। সে বলবে, হে প্রভু, আপনি আমাকে অন্ধ করে ওঠালেন কেন, অথচ আমি চক্ষুষ্মান ছিলাম? তিনি বলবেন, তোমার কাছে আমার আয়াতসমূহ এসেছিল, তুমি তা পরিত্যাগ করেছিলে, অনুরূপভাবে আজ তোমাকেও পরিত্যাগ করা হবে।’ (সুরা তহা: ১২৪-১২৬)” [মাজমূ‘উ ফাতাওয়া, ১/৭৯]

এরপর শাইখ এ কথা বলে তাঁর বক্তব্য শেষ করেছেন, “আমি আল্লাহর কাছে চাইছি, তিনি যেন আমার এ কথাকে মুসলিম জাতির জন্য উপদেশ এবং নিজেদের অবস্থা নিয়ে চিন্তা-ফিকির করার মাধ্যমে পরিণত করেন। আমি আশা করব, যার কাছে আমার এ উপদেশ পৌঁছবে, সে যেন (তওবা করে) আল্লাহর দিকে ধাবিত হয়।” যেসব শাসক, নেতা, মন্ত্রী, দলনেতা, বা সাধারণ মানুষ আল্লাহর বিধানের বিরোধিতা করে এবং ছোটোবড়ো বা সূক্ষ্ম-স্পষ্ট যে কোনো ক্ষেত্রে গাইরুল্লাহর (আল্লাহ ব্যতীত অন্যের) বিধান দিয়ে ফায়সালা করে, তাদের সবার জন্য এ উপদেশ।

শাইখ তাদের সবার প্রতি উপদেশ দিয়ে বলছেন, “আমি আশা করব, যার কাছে আমার এ উপদেশ পৌঁছবে, সে যেন (তওবা করে) আল্লাহর দিকে ধাবিত হয়, এসব হারাম কাজ থেকে বিরত হয়, আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে এবং নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়। আর সে যেন স্বীয় ভ্রাতৃবর্গ ও পাশের মুসলিমদের ‘সকল জাহেলি প্রথা, কিংবা আল্লাহর শরিয়তবিরোধী রীতি বাতিল সাব্যস্ত করার’—উপদেশ দেয়।”

যদিও সেই প্রথা গোত্র-সমাজের প্রথা হয়, যা মরুবাসীদের নিকট খুবই পরিচিত। তারা বলে, ‘এটা এমন মত বা প্রথা—যা ত্যাগ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’ অথচ তা আল্লাহর শরিয়তবিরোধী। কিংবা শাইখের কথায় রীতি বলতে উদ্দিষ্ট—প্রচলিত বিভিন্ন ইসলামী দলের রীতি। তুমি তাদের কোনো ব্যক্তির কাছে যেয়ে বলবে, ‘ভাই, এ কাজ করো। এটা কুরআনে এসেছে, সুন্নাহয় এসেছে।’ সে বলবে, ‘এটা আমাদের দলের রীতি নয়। দলের ইমাম বা নেতার বক্তব্য বলছে, এরকম করতে হবে। সুতরাং আমি এটা বাদ দিতে পারব না।’ মুসলিমদের জন্য এরকম সকল প্রথা ও রীতি বাতিল করা ওয়াজিব।

তো শাইখ বলছেন, “আর সে যেন স্বীয় ভ্রাতৃবর্গ ও পাশের মুসলিমদের ‘সকল জাহেলি প্রথা, কিংবা আল্লাহর শরিয়তবিরোধী রীতি বাতিল সাব্যস্ত করার’—উপদেশ দেয়। কারণ তওবা পূর্বের সকল গুনাহ নিশ্চিহ্ন করে দেয়। পাপ থেকে তওবাকারী নিষ্পাপ ব্যক্তির মতো। ওই সমস্ত মানুষ ও তাদের সমমনাদের ওপর যারা কর্তৃত্ব রাখে, তাদের উচিত হবে, তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া, সত্যের উপদেশ দেওয়া এবং তাদের কাছে সত্যকে প্রকাশ করা।” [মাজমূ‘উ ফাতাওয়া, ১/৮০]

এটি মানসকে প্রভাবিতকারী একটি মহান উপদেশ। আমাদের সকলের উচিত এ উপদেশের প্রতি বিশেষ মনোযোগী হওয়া। আমি, আপনি, ব্যক্তি আমর—আমরা সবাই আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান দিয়ে ফায়সালা করতে আদিষ্ট হয়েছি। অসংখ্য মুসলিম আছে, তারা যখন আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান দিয়ে ফায়সালার কথা শোনে, তখন তার চিন্তা প্রবাহিত হয় শাসকের দিকে। সে নিজের কথা চিন্তা করে না। অথচ দেখা যাবে, সে নিজের ক্ষেত্রে আল্লাহর নাজিলকৃত বিধানকে ফায়সালাকারী বানায়নি। সে নিজের কথা চিন্তা করে না। অথচ দেখা যাবে, সে নিজ পরিবারের মধ্যে আল্লাহর নাজিলকৃত বিধানকে ফায়সালাকারী বানায়নি। সে নিজের কথা চিন্তা করে না। অথচ দেখা যাবে, সে নিজ প্রতিবেশির মধ্যে আল্লাহর নাজিলকৃত বিধানকে ফায়সালাকারী বানায়নি।

সে মনে করে, এ নির্দেশনা কেবল শাসকদের জন্য। শাসকরা যে এ বিধান পালনে আদিষ্ট হয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আমি, আপনি, জায়েদ, আমর—আমরা সবাই আদিষ্ট হয়েছি আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান দিয়ে ফায়সালা করতে, কিতাব ও সুন্নাহর বিবরণ অনুযায়ী আল্লাহর ইবাদত করতে। আমরা সবাই আদিষ্ট হয়েছি, দলিল বিশুদ্ধ সূত্রে সাব্যস্ত ও প্রমাণিত হলে কোনো মানুষের—সে যে-ই হোক না কেন—কথায় তা প্রত্যাখ্যান না করতে। কিতাব ও সুন্নাহয় যা সাব্যস্ত হয়েছে, তার ওপর প্রথাগত বিধান কিংবা আমাদের বয়োজ্যেষ্ঠদের বক্তব্যকে প্রাধান্য না দিতেও আমরা সবাই আদিষ্ট হয়েছি।

নিঃসন্দেহে গাইরুল্লাহর (আল্লাহ ব্যতীত অন্যের) বিধান দিয়ে ফায়সালা করা একটা বিরাট বিপর্যয়। যে গাইরুল্লাহর বিধান দিয়ে ফায়সালা করে, সে তার কর্মের কারণে তাগুত। যেমন আল্লাহ বলেছেন, يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ “তারা তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়।” [সুরা নিসা: ৬০] মহান আল্লাহ এ আয়াতে গাইরুল্লাহর বিধানের কাছে ফায়সালা কামনা করাকে ‘তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থনা’ হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। এ আয়াত অবতীর্ণের একটি প্রেক্ষাপট রয়েছে।

মদিনার এক মুনাফেকের সাথে জনৈক ইহুদির বিবাদ সৃষ্টি হয়। ইহুদি বলে, ‘আমরা মুহাম্মাদের কাছে বিচারপ্রার্থী হব।’ সে মুহাম্মাদ এর প্রতি ইমান আনেনি। কিন্তু সে জানে, নবি ন্যায়পরায়ণ বিচারক। সে বলল, ‘আমরা মুহাম্মাদের কাছে বিচারপ্রার্থী হব।’ কেননা সে জানে, নবি ন্যায়পরায়ণ বিচারক, তিনি ঘুষ নেন না এবং কোনো পার্থিব স্বার্থে অন্যায় করেন না। কিন্তু মুনাফেক বলল, ‘না।’ মুনাফেক লোকটি ধারণা করে, মুহাম্মাদের প্রতি তার ইমান আছে। এ সত্ত্বেও সে বলল, ‘না, আমরা তোমার সম্প্রদায়ের ইহুদিদের কাছে বিচারপ্রার্থী হব।’ কারণ সে জানে, ইহুদিরা ঘুষ নেয় এবং বিচার-ফায়সালায় অন্যায় কাজ করে।

তখন আল্লাহ এ আয়াত অবতীর্ণ করেন, “তুমি কি তাদের প্রতি লক্ষ করনি, যারা দাবি করে, তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং তোমার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছিল তার প্রতি তারা ইমান রাখে? অথচ তারা তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়, যদিও তাদেরকে আদেশ করা হয়েছিল, তারা যেন তাগুতকে অস্বীকার করে।” [সুরা নিসা: ৬০] ইহুদিদের কাছে ফায়সালা কামনা করাকে মহান আল্লাহ ‘নবি এর বিধান থেকে বিমুখ হওয়া’ এবং ‘তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থনা’—গণ্য করেছেন।

·আগামী পর্বে সমাপ্য, ইনশাআল্লাহ।

·অনুবাদক: মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ মৃধা

www.facebook.com/SunniSalafiAthari

আমাদের ওয়েব সাইটঃ- https://rasikulindiaa.blogspot.com/

আমাদের ওয়েব সাইটঃ-   https://salafi-pdfbooks.blogspot.com/

আমাদের ওয়েব সাইটঃ  https://salafimp3web.blogspot.com/

Post a Comment

0 Comments