▌দাওয়াতী সংগঠন তৈরির হুকুম

দাওয়াতী সংগঠন তৈরির হুকুম

·আলজেরিয়ার প্রখ্যাত মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলী, আশ-শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, ড. মুহাম্মাদ ‘আলী ফারকূস (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৭৪ হি./১৯৫৪ খ্রি.] প্রদত্ত ফতোয়া—

.السؤال: ما حكمُ إنشاءِ جمعيةٍ هدفُها الدعوةُ إلى الكتاب والسُّنَّة على فهمِ سَلَفِ الأُمَّةِ والحفاظُ على العقيدة الصحيحة، مع العلمِ أنَّنا ـ في بلدنا المُجاوِر لبلدكم ـ لا يُسْمَحُ لنا بالاجتماع في الدُّور للدعوة أو طَلَبِ العلم؟ أَفْتونا بارك الله فيكم.

الجواب: الحمد لله ربِّ العالمين، والصلاةُ والسلام على مَنْ أرسله الله رحمةً للعالمين، وعلى آله وصحبِه وإخوانِه إلى يوم الدِّين، أمَّا بعد:

فعمومُ الجمعياتِ مهما كانَتْ صفتُها إذا عُقِدَ عليها الولاءُ والبراءُ والحبُّ والعداءُ، أو اتَّخذَتْ أقوالَ قادتِها ومُسَيِّرِيهَا أصولًا بلا دليلٍ، أو كان مِنْ مَبادِئِها التسليمُ بآراءِ الجماعةِ وجَعْلُها قطعيَّةَ الثبوتِ غيرَ قابلةٍ للنقاش أو النقد، ونحو هذه المعاني؛ فهي ـ بهذا الاعتبارِ ـ جمعيةٌ حزبيةٌ ولو وُسِمَتْ باسْمِ الإسلام؛ فهي مُشاقَّةٌ ومُحادَّةٌ لله ولرسوله صلَّى الله عليه وسلَّم؛ لأنَّ محورَ الولاءِ والبراءِ هو الإيمانُ بالله ورسوله صلَّى الله عليه وسلَّم، قال تعالى: ﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تُقَدِّمُواْ بَيۡنَ يَدَيِ ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦۖ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۚ إِنَّ ٱللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٞ ١﴾ [الحُجُرات]، وقال تعالى: ﴿لَّا تَجِدُ قَوۡمٗا يُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ يُوَآدُّونَ مَنۡ حَآدَّ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَلَوۡ كَانُوٓاْ ءَابَآءَهُمۡ أَوۡ أَبۡنَآءَهُمۡ أَوۡ إِخۡوَٰنَهُمۡ أَوۡ عَشِيرَتَهُمۡۚ أُوْلَٰٓئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ ٱلۡإِيمَٰنَ وَأَيَّدَهُم بِرُوحٖ مِّنۡهُۖ وَيُدۡخِلُهُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَاۚ رَضِيَ ٱللَّهُ عَنۡهُمۡ وَرَضُواْ عَنۡهُۚ أُوْلَٰٓئِكَ حِزۡبُ ٱللَّهِۚ أَلَآ إِنَّ حِزۡبَ ٱللَّهِ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ٢٢﴾ [المجادلة]؛ فالتجمُّعُ الحزبيُّ مَقيتٌ فَرَّقَ الأمَّةَ شِيَعًا وأحزابًا، وما زادها إلَّا خبالًا على مَرِّ العصورِ وَكَرِّ الدُّهور؛ فإنَّ الدِّين أَمَرَنا بالاجتماعِ على عقيدةِ التوحيد وعلى مُتابَعةِ الرسول صلَّى الله عليه وسلَّم، قال تعالى: ﴿وَٱعۡتَصِمُواْ بِحَبۡلِ ٱللَّهِ جَمِيعٗا وَلَا تَفَرَّقُواْ﴾ [آل عمران: ١٠٣]، وقال تعالى: ﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ فَرَّقُواْ دِينَهُمۡ وَكَانُواْ شِيَعٗا لَّسۡتَ مِنۡهُمۡ فِي شَيۡءٍ﴾ [الأنعام: ١٥٩].

وإذا كان التجمُّعُ الحزبيُّ لا يجوز فإنه لا يُمْنَعُ مِنَ التعاون الشرعيِّ الأخويِّ المبنيِّ على البرِّ والتقوى والمُنْضَبِطِ بالكتاب والسُّنَّة؛ لقوله تعالى: ﴿وَتَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡبِرِّ وَٱلتَّقۡوَىٰۖ وَلَا تَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡإِثۡمِ وَٱلۡعُدۡوَٰنِ﴾[المائدة: ٢]، ويدخل تحت عمومِ التعاون الشرعيِّ ما يقوم به الحاكمُ مِنْ تنظيمِ المسلمين في شكلِ هيئاتٍ رسميةٍ كالوزارات والمؤسَّسات والجمعيات التي لا تحمل الطابعَ الحزبيَّ أو العصبيَّ، على اختلافِ مَهَامِّها وأعمالِهَا المشروعةِ ممَّا يخصُّ الحياةَ الدينية والدنيوية، كالمؤسَّسات والجمعيات ذاتِ الطابع المهنيِّ أو الخيريِّ، ونحوِ ذلك ممَّا لا يُنافي شريعةَ الإسلامِ وأخلاقَها وآدابَها، ولا يَتعارَضُ مع مَقاصِدِها ومَراميها؛ فهذا كُلُّه لا تَتناوَلُه النصوصُ التي تَذُمُّ الخروجَ عن وَحْدَةِ الأُمَّةِ التي أُمِرَتْ أَنْ تكون واحدةً، قال تعالى: ﴿وَإِنَّ هَٰذِهِۦٓ أُمَّتُكُمۡ أُمَّةٗ وَٰحِدَةٗ وَأَنَا۠ رَبُّكُمۡ فَٱتَّقُونِ ٥٢﴾ [المؤمنون]. وعليه، فإنَّ مَجالَ التعاونِ الأخويِّ المُنْضَبِطِ بالشرع المبنيِّ على البرِّ والتقوى مشروعٌ ومطلوبٌ، وما عداهُ فمذمومٌ ومردودٌ. والعلم عند الله تعالى، وآخِرُ دعوانا أنِ الحمدُ لله ربِّ العالمين، وصلَّى الله على نبيِّنا محمَّدٍ وعلى آله وصحبِه وإخوانِه إلى يوم الدِّين، وسلَّم تسليمًا.

.প্রশ্ন: “সংগঠন তৈরির হুকুম কী, যে সংগঠনের উদ্দেশ্য উম্মাহর সালাফগণের সমঝ অনুযায়ী কিতাব ও সুন্নাহর দাওয়াত দেওয়া এবং বিশুদ্ধ ‘আক্বীদাহর হেফাজত করা। জ্ঞাতব্য যে, আপনার পার্শ্ববর্তী দেশের—অর্থাৎ আমাদের দেশ—প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমাদেরকে দাওয়াত বা ইলম অর্জনের জন্য জমায়েত হওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় না। আমাদের বিষয়টি অবহিত করুন। বারাকাল্লাহু ফীকুম।”

.উত্তর: যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক তাঁর ওপর, যাঁকে আল্লাহ প্রেরণ করেছেন বিশ্বজগতের জন্য রহমতস্বরূপ, এবং দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক তাঁর পরিবার পরিজন, সঙ্গিবর্গ ও কেয়ামত অবধি আগত ভ্রাতৃমণ্ডলীর ওপর। অতঃপর:

.যাবতীয় সংগঠনের ব্যাপারে কথা হলো, সংগঠনের বৈশিষ্ট্য যেমনই হোক না কেন, যখন সংগঠনকে কেন্দ্র করে বৈরিতা-মিত্রতা ও ভালোবাসা-শত্রুতা নির্ধারিত হবে, কিংবা সংগঠন যখন তার নেতা ও পরিচালকদের বক্তব্যকে বিনা দলিলে মূলনীতি হিসেবে ধারণ করবে, কিংবা সংগঠনের কোনো মূলনীতিতে বলা থাকবে, দলের মতামত পুরোপুরি মেনে নিতে হবে এবং দলের মতকে ‘সমালোচনা ও পর্যালোচনার অতীত অকাট্য প্রমাণ’ হিসেবে নির্ধারণ করতে হবে; তখন উক্ত সংগঠন—উল্লিখিত বিষয়গুলোর বিবেচনায়—দলবাজ (হিযবী) সংগঠন হিসেবে পরিগণিত হবে, যদিও তার নামকরণ করা হয় ইসলামের নামে। উক্ত সংগঠন আল্লাহ ও তাঁর রাসুল এর বিরোধী, বিরুদ্ধাচারী।

.কারণ বৈরিতা ও মিত্রতার কেন্দ্র (বা নিক্তি) আল্লাহ ও তদীয় রাসুল এর প্রতি ইমান। মহান আল্লাহ বলেছেন, “ওহে যারা ইমান এনেছ, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সামনে অগ্রগমন কোরো না, আর আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ।” [সুরা হুজুরাত: ১] মহান আল্লাহ আরও বলেন, “তুমি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী কোনো জাতিকে এরূপ পাবে না, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে এমন ব্যক্তিদের সাথে বন্ধুত্ব করে, যদিও তারা তাদের পিতা, বা পুত্র, কিংবা ভাই, বা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয়। এরাই তারা, যাদের অন্তরে আল্লাহ ইমান লিখে দিয়েছেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে রূহ (জিবরাইল) দ্বারা তাদের শক্তিশালী করেছেন। তিনি তাদেরকে প্রবেশ করাবেন এমনসব উদ্যানে, যেগুলোর তলদেশে প্রবাহিত হয় ঝরনাধারা। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। এরাই আল্লাহর দল। জেনে রেখ, নিশ্চয় আল্লাহর দলই সফলকাম।” [সুরা মুজাদালাহ: ২২]

.দলবাজ জমায়েত (হিযবী সংগঠন) খুবই ঘৃণিত বিষয়। এটা উম্মাহকে দলে-উপদলে বিভক্ত করেছে। যুগ ও কালের পরিক্রমায় এটা কেবল উম্মাহর ক্ষতিই বৃদ্ধি করেছে। কারণ দ্বীন আমাদেরকে তাওহীদী ‘আক্বীদাহ ও রাসুল এর অনুসরণের ওপর ভিত্তি করে একত্রিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। মহান আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধর এবং (দলে-উপদলে) বিভক্ত হয়ো না।” [সুরা আলে ইমরান: ১০৩] তিনি আরও বলেছেন, “যারা তাদের দ্বীনকে বিভক্ত করে নিজেরা ভাগ ভাগ হয়ে গেছে, (ওহে আল্লাহর নবি) তাদের সাথে আপনার কোনো সম্পর্ক নেই।” [সুরা আনআম: ১৫৯]

.যদিও দলবাজ জমায়েত (হিযবী সংগঠন) জায়েজ নয়, তথাপি কিতাব ও সুন্নাহর মাধ্যমে সুশৃঙ্খল এবং কল্যাণ ও আল্লাহভীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত শরয়ী ও ইমানী ভ্রাতৃত্বজাত সাহায্য-সহযোগিতা করতে কোনো নিষেধ নেই। কেননা আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা কল্যাণ ও আল্লাহভীতির ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা করো, পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ক্ষেত্রে একে অপরকে সহযোগিতা কোরো না।” [সুরা মাইদাহ: ২]

.সার্বজনিক শরয়ী সহযোগিতার আওতাভুক্ত হচ্ছে—শাসক কর্তৃক সরকারি সংস্থার আদলে মুসলিমদের সংগঠিত করা, যেমন মন্ত্রণালয়, প্রতিষ্ঠান, সংগঠন প্রভৃতি; যেগুলো দলবাজ বা পক্ষপাতদুষ্ট বৈশিষ্ট্য ধারণ করে না। যেসব প্রতিষ্ঠানের আছে ধর্মীয় ও দুনিয়াবি জীবনসংশ্লিষ্ট শরিয়তসিদ্ধ কাজকর্ম এবং সেগুলো বিভিন্ন ধরনের। যেমন পেশামূলক বা দাতব্য বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান। যেসব বৈশিষ্ট্য ইসলামী শরিয়ত এবং তদীয় শিষ্টাচার, আদবকায়দা ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। একতাবদ্ধ থাকতে আদিষ্ট উম্মাহর ঐক্য থেকে বের হয়ে যাওয়াকে তিরস্কার করেছে যেসব শরয়ী দলিল, সেসব দলিল এগুলোকে ধারণ করে না। মহান আল্লাহ বলেছেন, “নিশ্চয় তোমাদের এ উম্মাহ (ধর্ম) তো একটিই উম্মাহ (ধর্ম), আর আমি তোমাদের রব। অতএব তোমরা আমাকে ভয় করো।” [সুরা মুমিনুন: ৫২]

.সুতরাং শরিয়তের মাধ্যমে সুশৃঙ্খল এবং কল্যাণ ও আল্লাহভীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত ইমানি ভ্রাতৃত্বজাত সহযোগিতার ক্ষেত্রটি শরিয়তসম্মত, কাংঙ্ক্ষিত। এর বাইরে যা আছে তার সবই নিন্দিত ও প্রত্যাখ্যাত।

.বস্তুত প্রকৃত ইলম রয়েছে আল্লাহর নিকটে। সর্বোপরি যাবতীয় প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রতিপালকের জন্য। হে আল্লাহ, আমাদের নাবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার পরিজন, সাহাবীবর্গ ও কেয়ামত অবধি আগত ভ্রাতৃবর্গের ওপর আপনি দয়া ও শান্তি বর্ষণ করুন।

·উৎস: http://ferkous(ডট)com/home/?q=fatwa-744।

.অনুবাদক: মুহাম্মাদ 'আবদুল্লাহ মৃধা

fb.com/SunniSalafiAthari

 আমাদের ওয়েব সাইটঃ- https://rasikulindiaa.blogspot.com/

আমাদের ওয়েব সাইটঃ-   https://salafi-pdfbooks.blogspot.com/

আমাদের ওয়েব সাইটঃ  https://salafimp3web.blogspot.com/

Post a Comment

0 Comments