▌তাগুত বিষয়ে বিস্তারিত [শেষ পর্ব]

তাগুত বিষয়ে বিস্তারিত [শেষ পর্ব]

·রচয়িতা: আল্লামাহ সুলাইমান বিন সালীমুল্লাহ আর-রুহাইলী (হাফিযাহুল্লাহ)

·[মানবরচিত সকল বিধানই কি তাগুতী আইন?]

এখানে আমাদের একটি বিষয় জেনে রাখা জরুরি মানবরচিত সকল আইনের কাছে বিচারপ্রার্থনা করা—‘তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থনাহিসেবে বিবেচিত হবে না বরং মানুষ যেসব আইন প্রণয়ন করে, তা দু ধরনের:

() এক ধরনের আইন মানুষের কল্যাণ বাস্তবায়ন করে তা কোনো শরয়ী বিধানকে উঠিয়ে দেয় না, আবার কিতাব-সুন্নাহর পরিপন্থিও হয় না এটা ভালো বিষয় কাজ শাসকবর্গের কর্তব্য যেমন বর্তমান সময়ে রাস্তা পারাপারের আইন, সিগন্যাল বিষয়ক আইনআপনি রেড সিগন্যাল দেখলে থেমে যাবেন, গ্রিন সিগন্যাল দেখে চলতে শুরু করবেন প্রভৃতি এসব আইন মানুষ তৈরি করেছে, কিন্তু তা কিতাব সুন্নাহর বিরোধী নয় সুতরাং আইনের কাছে বিচারপ্রার্থী হওয়া এবং আইন অনুযায়ী আমল করা কোনোভাবেইতাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থনাহিসেবে বিবেচিত হবে না

() দ্বিতীয় ধরনের আইন সেটা, যা আল্লাহর শরিয়ত পরিপন্থি যেমন তারা বলে, ‘মহিলা ব্যভিচারে সম্মত থাকলে, তার ব্যভিচার সাব্যস্ত হলেও আমরা তার ওপর ব্যভিচারের দণ্ডবিধি কায়েম করব না কেননা সে এতে সম্মত এটা ব্যক্তি-স্বাধীনতা যে পর্যন্ত না সে রাস্তাঘাটে কাজ করছে (সে পর্যন্ত তাকে দণ্ডবিধির শাস্তি দেব না) কিংবা বলে, ‘যে চুরি করেআর তাকে দণ্ডবিধি অনুযায়ী শাস্তি দেওয়ার শর্তাবলি পূরণ হয়েছেআমরা তার হাত কাটব না হাত কাটা তো বর্বরতা, নৃশংসতা বরং আমরা তার জন্য আইন করব, তাকে একমাস বা দুমাস কারাগারে বন্দী রাখা হবেএটাই গাইরুল্লাহর আইন দিয়ে কৃত ফায়সালা, তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থনা

·[গাইরুল্লাহর আইন দিয়ে ফায়সালাকারী ব্যক্তির হুকুম কী?]

আমরা জানলাম, কর্মের দিক থেকে গাইরুল্লাহর বিধান দিয়ে ফায়সালা করা—‘তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থনা কিন্তু কর্তার বিধান কী হবে? শাসক হোক, বা সাধারণ মানুষসে যখন গাইরুল্লাহর আইন দিয়ে ফায়সালা করবে, তার বিধান কী হবে? যে লোক সেক্যুলার আইনের কাছে বিচারপ্রার্থী হয়, কিংবা সেক্যুলার আইন দিয়ে ফায়সালা করে, তার হুকুম কী?

আমি বলি, উলামাদের বক্তব্য অনুসন্ধান করলে প্রতীয়মান হয়, গাইরুল্লাহর বিধান দিয়ে ফায়সালা করার বিধান অবস্থাভেদে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে এর বিধান স্রেফ একটি নয় যেমন মহান আল্লাহ বলেছেন, وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ “আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান দিয়ে যারা বিচার-ফায়সালা করে না, তারা কাফির” [সুরা মাইদাহ: ৪৪] তিনি আরও বলেছেন, وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ “আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান দিয়ে যারা বিচার-ফায়সালা করে না, তারাই জালেম” [সুরা মাইদাহ: ৪৫] তিনি আরও বলেছেন, وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ “আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান দিয়ে যারা বিচার-ফায়সালা করে না, তারাই ফাসেক” [সুরা মাইদাহ: ৪৭]

শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “ইবনু আব্বাস তাঁর ছাত্ররা বলেছেন, ‘কুফর দুনা কুফর (ছোটো কুফর), যুলম দুনা যুলম (ছোটো জুলুম), ফিসক দুনা ফিসক (ছোটো ফাসেকি)আহলুস সুন্নাহর লোকেরা এরূপই বলে থাকে যেমন আহমাদ বিন হাম্বাল প্রমুখ” [মাজমূ ফাতাওয়া, /৬৭]

তিনি আরও বলেছেন, “মহান আল্লাহর বাণী, আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান দিয়ে যারা বিচার-ফায়সালা করে না, তারা কাফির, তারা জালিম, তারা ফাসিক (সুরা মাইদাহ: ৪৪, ৪৫ ৪৭) এর ব্যাখ্যায় ইবনু আব্বাস একাধিক সালাফ বলেছেন, ‘কুফর দুনা কুফর (ছোটো কুফর), যুলম দুনা যুলম (ছোটো জুলুম), ফিসক দুনা ফিসক (ছোটো ফাসেকি)আহমাদ, বুখারি অন্যান্যরা বক্তব্য উল্লেখ করেছেন সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর নাজিলকৃত বিধানকে অস্বীকার করে গাইরুল্লাহর আইন দিয়ে ফায়সালা দেয়, সে কাফির আবার যে ব্যক্তি আল্লাহর নাজিলকৃত বিধানকে অস্বীকার করে আল্লাহর নাজিলকৃত আইন দিয়ে ফায়সালা দেয়, সেও কাফির” [মাজমূ ফাতাওয়া, /৫২২]

ইবনু জারীর আত-তাবারী (রাহিমাহুল্লাহ) আয়াত প্রসঙ্গে বলেছেন, “নিশ্চয় আল্লাহ সেই সম্প্রদায় সম্পর্কে ব্যাপক সংবাদ দিয়েছেন, যারা আল্লাহর কিতাবের ফায়সালাকে অস্বীকারকারী তিনি তাদের সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছেনতারা ফায়সালা পরিত্যাগ করেছে, তাদের পরিত্যাগ করার পথেতারা যে পথে পরিত্যাগ করেছে, সেটা কী? অস্বীকারের পথ আত-তাবারী বলছেন, “তিনি তাদের সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছেনতারা ফায়সালা পরিত্যাগ করেছে, তাদের পরিত্যাগ করার পথে; যার দরুন তারা কাফির” [তাফসিরে তাবারি, ১০/৩৫৮]

তিনি আরও বলেছেন, “যারা অন্তরে অস্বীকার করে আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান দিয়ে ফায়সালা দেয় না, তাদের সবার ব্যাপারে কথা প্রযোজ্য যে, তারা কাফির যেমনটি বলেছেন ইবনু আব্বাস কেননা আল্লাহ স্বীয় কিতাবে বিধান নাজিল করেছেন, তা জানার পরেও যে তাঁর বিধানকে অস্বীকার করে, সে ওই ব্যক্তির মতো, যে আল্লাহর নবিকে চেনার পরেও তাঁর নবুওতকে অস্বীকার করে” [প্রাগুক্ত]

সুতরাং আল্লাহর বিধান জানার পরে যে তা অস্বীকার করে এবং গাইরুল্লাহর আইন দিয়ে ফায়সালা করে, সে কাফির আমরা যে বলছি, সে কাফির, এর দ্বারা উদ্দেশ্যযে বিষয়ে শাইখ ইবনু উসাইমিন সতর্ক করেছেনউক্ত ব্যক্তি কুফরের হকদার হয়েছে পক্ষান্তরে নির্দিষ্টভাবে তার ব্যাপারে হুকুম দেওয়া প্রসঙ্গে আমরাকাফির বলার নীতিমালায়আলোচনা করব, ইনশাআল্লাহ

আরেক শ্রেণি আছে, যারা আল্লাহর বিধানকে স্বীকৃতি দেয় এবং বিধানকে অস্বীকার না করে গাইরুল্লাহর আইন দিয়ে ফায়সালা করে, কিন্তু তারা মনে করে, গাইরুল্লাহর আইন ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবে, আল্লাহর আইন যথার্থ নয় এর মধ্যে আর প্রথমটির মধ্যে পার্থক্য আল্লাহর আইনে বিশ্বাস করে, কিন্তু মনে করে, তা (বর্তমানে) উপযুক্ত নয় ব্যক্তিও কাফির এমনকি স্রেফ বিশ্বাসের ফলেই সে কাফির হয়ে যাবে যদিও সে গাইরুল্লাহর আইন দিয়ে ফায়সালা না করে, কিন্তু বিশ্বাস করে, গাইরুল্লাহর আইন উপযুক্ত, ন্যায়নিষ্ঠ; তাহলেই সে কুফরের হকদার হয়ে যাবে

যেমন কোনো ব্যক্তি আমাদের সাথে দেশে বাস করে আলহামদুলিল্লাহ, দেশে আল্লাহর আইন দিয়ে ফায়সালা করা হয় কিন্তু সে ব্যক্তি অন্তরে বিশ্বাস করে, ফরাসি আইন এই আইনের (আল্লাহর আইনের) চেয়ে ভালো, সেক্যুলার আইন আইনের চেয়ে ভালো, আইনের চেয়ে ন্যায়নিষ্ঠ লোক এখানে গাইরুল্লাহর আইন দিয়ে ফায়সালা করছে না কিন্তু সে বিশ্বাস রাখে, গাইরুল্লাহর আইন আল্লাহর আইনের চেয়ে উপযুক্ত (যদ্দৃষ্টঅনুবাদক) এই লোক কুফরের হকদার

তৃতীয় অবস্থা: কোনো ব্যক্তি গাইরুল্লাহর আইন দিয়ে ফায়সালা করে আর সে মনে করে, আইন আল্লাহর আইনের চেয়ে উত্তম উপযুক্ত লোকও কাফির এর সাথে আগেরটার পার্থক্য কী? আগেরজন মনে করে, আল্লাহর বিধান উপযুক্ত নয় সে আল্লাহর বিধানকে বিশ্বাস করে, কিন্তু সেটাকে উপযুক্ত মনে করে না আর এই লোক মনে করে, আল্লাহর আইন উপযুক্ত, তবে গাইরুল্লাহর আইন আরও বেশি উপযুক্ত উলামাদের সর্বসম্মতিক্রমে ব্যক্তিও কাফির

চতুর্থ অবস্থা: কোনো ব্যক্তি গাইরুল্লাহর আইন দিয়ে ফায়সালা করে; কারণ (তার কাছে) আইন আল্লাহর আইনের সমপর্যায়ভুক্ত সে বলে, আল্লাহর আইন উপযুক্ত, এই আইনও উপযুক্ত উভয়ই সমান উভয় বিধানই ন্যায় বাস্তবায়ন করে আমরা যদি বিধান দিয়ে ফায়সালা করে, তাহলে এটা ন্যায় বাস্তবায়ন করবে আবার এই বিধান দিয়ে ফায়সালা করলেও তা ন্যায় বাস্তবায়ন করবে লোকও কাফির, তথা কুফরের হকদার পর্যন্ত যেসব বিধান আলোচিত হলো, সবগুলো সর্ববাদিসম্মত, এসব নিয়ে উলামাদের কোনো মতভেদ নেই

পঞ্চম বিধান: কোনো ব্যক্তি গাইরুল্লাহর আইন দিয়ে ফায়সালা করে আর সে বিশ্বাস রাখে, আল্লাহর আইন দিয়ে ফায়সালা করা অত্যাবশ্যক, এবং আল্লাহর আইনই উপযুক্ত ফলদায়ক তথাপি সে পার্থিব স্বার্থেযে স্বার্থ তাকে পরাভূত করেছেমসনদের জন্য গাইরুল্লাহর আইন দিয়ে ফায়সালা করে দুনিয়াবি স্বার্থ না থাকলে সে আল্লাহর নাজিলকৃত আইন দিয়েই ফায়সালা করত কিন্তু সে ধারণা করে, আল্লাহর আইন দিয়ে ফায়সালা করলে দুনিয়া তার হাতছাড়া হয়ে যাবে, পাশাপাশি সে বিশ্বাসও রাখে যে, আল্লাহর আইনই উপযুক্ত, তাহলে লোক চরম ভয়াবহতাসম্পন্ন, মহা অপরাধী তবে সে বড়ো কুফর সংঘটনকারী কাফির নয়, যা সম্পাদন করলে ব্যক্তি ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে যায়

যে পর্যন্ত সে বিশ্বাস রাখে, আল্লাহর আইন দিয়ে ফায়সালা করা আবশ্যক, আল্লাহর আইনই উপযুক্ত ফলদায়ক; কিন্তু সে কেবল দুনিয়াবি স্বার্থে গাইরুল্লাহর আইন দিয়ে ফায়সালা করে, সে পর্যন্ত সে কাফির হবে না ধরনের ব্যক্তি উলামাদের নিকট দু ধরনের:

এক. যে সাময়িক সময়ের জন্য গাইরুল্লাহর আইন দিয়ে ফায়সালা করে সর্বদা নয়, বরং সাময়িক সময়ের জন্য ব্যাপারটি যেন এমনতাকে ঘুষ দেওয়ার দরুন সে কোনো একটি ক্ষেত্রে গাইরুল্লাহর আইন দিয়ে ফায়সালা করেছে লোক ফাসেক, বড়ো গুনাহগার

দুই. যে নিরবচ্ছিন্নভাবে (অবিরামভাবে) গাইরুল্লাহর আইন দিয়ে ফায়সালা করে সাময়িক সময়ের জন্য দু একটি ক্ষেত্রে নয় বরং সকল ফায়সালায় অব্যাহতরূপে গাইরুল্লাহর আইন দিয়ে ফায়সালা করে শাসকের ভয়ে, কিংবা মানুষের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য কাজ করে সে বিশ্বাস রাখে, আল্লাহর আইন সর্বোত্তম, কিন্তু ফায়সালা করে গাইরুল্লাহর আইন দিয়ে লোক কাফির হবে না, কিন্তু প্রথমজনের চেয়ে গুরুতর অপরাধী, চরম নিকৃষ্ট, বিপজ্জনক পর্যায়ের পাপী, নিজের প্রতি জুলুমকারী এবং অপরের প্রতিও জুলুমকারী মহান আল্লাহ বলেছেন, “আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান দিয়ে যারা বিচার-ফায়সালা করে না, তারাই জালেম” [সুরা মাইদাহ: ৪৫] হলো জালেম তবে জুলুমের বিভিন্ন পর্যায় আছে জুলুমের ক্ষেত্রে জালেমরা বিভিন্ন স্তরের হয়ে থাকে

আমাদের জানামতে এই ব্যাখ্যাপূর্ণ বিবরণই উম্মতের সালাফদের থেকে বর্ণিত হয়েছে এই ব্যাখ্যাপূর্ণ বক্তব্যই প্রদান করেছেন শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ), শাইখুল ইসলাম ইবনুল ক্বাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ), আমাদের সামসময়িক উলামাদের মধ্যে শাইখ আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ), শাইখ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) ব্যাপারে সালাফদের বক্তব্য অনুসন্ধান করা হয়েছে হুকুম প্রদানে এরকম শ্রেণিবিভাগ এবং ব্যাখ্যাপূর্ণ বক্তব্য আহলুস সুন্নাহর পঞ্চাশোর্ধ্ব আলিম থেকে সুসাব্যস্ত হয়েছে আমি নিজে আমার সাধ্য অনুযায়ী পূর্ববর্তী উলামাদের এমন বক্তব্য অনুসন্ধান করেছি, যাতে ব্যাখ্যাপূর্ণ বক্তব্য নেই কিন্তু এরকম বক্তব্য আমি পাইনি আমি পূর্ববর্তী উলামাদের বক্তব্যে যা দেখেছি, তা কেবল ব্যাখ্যাপূর্ণ বক্তব্য, যা আমরা আলোচনা করেছি

ইবনুল আরাবী আল-মালিকী বলেছেন, “তাঊস প্রমুখ বলেন, এটা ইসলাম থেকে খারিজকারী কুফর নয়, বরং তা ছোটো কুফর” [আল-জুমূউল বাহিয়্যাহ লিলআক্বীদাতিস সালাফিয়্যাহ, /৩৮৯] ইবনুল আরাবী আরও বলেছেন, “এর বিধান বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে সে নিজের কোনো বিধান দিয়ে ফায়সালা করে যদি আল্লাহর বিধান বলে চালিয়ে দেয়, তাহলে তা আল্লাহর আইনকেতাবদীলকরার অন্তর্ভুক্ত হবে, যা কুফরকে অপরিহার্য করে (অর্থাৎ কাজের কাজি কাফির হয়ে যাবে) কিন্তু সে যদি প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়ে, অবাধ্যতাবশত গাইরুল্লাহর আইন দিয়ে ফায়সালা করে, তাহলে তা হবে পাপ পাপীদের ক্ষমার ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহর মূলনীতি অনুযায়ী উক্ত পাপ ক্ষমার আওতাভুক্ত হবে

শাইখ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) গাইরুল্লাহর আইন দিয়ে কৃত ফায়সালা প্রসঙ্গে বলেছেন, “ ব্যাপারে ব্যাখ্যাপূর্ণ আলোচনার অবকাশ রয়েছে বিষয়ে বলা হবে, যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহর আইন দিয়ে ফায়সালা করে, অথচ সে জানে, আল্লাহর আইন দিয়ে ফায়সালা করা ওয়াজিব, এবং সে নিজে শরিয়তবিরোধী কাজ করেছে; কিন্তু সে বিষয়কে বৈধ মনে করে, সে মনে করে, এতে কোনো সমস্যা নেই, গাইরুল্লাহর আইন দিয়ে ফায়সালা করা তার জন্য বৈধ, তাহলে সে সকল উলামার নিকটে বড়ো কুফর সংঘটনকারী কাফিরএরপর তিনি আমার উল্লিখিত ব্যাখ্যাপূর্ণ বক্তব্য পেশ করেছেন তারপর তিনি বলেছেন, “ বক্তব্যই উলামাদের কাছে সুবিদিত” [মাজমূ ফাতাওয়া লিবনি বায, /৩৫৫]

·

[ব্যাখ্যাপূর্ণ বক্তব্য না দিলে যখন ব্যক্তিকেতাকফীরীবলা হবে]

যদি আমরা এমন কোনো আলিম কিংবা তালিবুল ইলমকে পাই, যে বিষয়ে ব্যাখ্যাপূর্ণ বক্তব্য দেয় না (ব্যাখ্যাবিহীন এজমালি হুকুম দেয়), তাকে কি আমরাতাকফীরী (অন্যায়ভাবে কাফির আখ্যাদাতা)’ বলব? আমরা কি বলব, এই ব্যক্তি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মত থেকে খারিজ?

উত্তর: না বিষয়টি নিঃশর্ত নয় ধরনের লোককে হুকুম দেওয়ার ক্ষেত্রেও (তাকফীরী বলার ক্ষেত্রে) ব্যাখ্যাপূর্ণ বক্তব্যের অবকাশ রয়েছে কথক যদি তাদের একজন হয়, যারা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আদর্শ অনুযায়ী কথা বলে, আহলুস সুন্নাহর দলিলগ্রহণের মতোই দলিলগ্রহণ করে এবং নিঃশর্তভাবে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের কাফির বলতে মত প্রয়োগ না করে, তাহলে সে আহলুস সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত বিবেচিত হবে যদিও আমরা বিশ্বাস করি, বিষয়ে ব্যাখ্যাপূর্ণ বক্তব্য না দিয়ে সে ভুল করেছে, এবং ব্যাখ্যাপূর্ণ বক্তব্যই আহলুস সুন্নাহর পূর্ববর্তী উলামাদের বক্তব্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ অভিমত (এজমালি মন্তব্য নয়)

পক্ষান্তরে কথক যদি তাদের কেউ হয়, যারা আহলুস সুন্নাহর মানহাজ অনুসরণের ব্যাপারে পরিচিত নয় এবং সে নিঃশর্তভাবে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের কাফির বলার জন্য ব্যাখ্যাবিহীন (এজমালি) বক্তব্য দেয়, তাহলে সে আহলুস সুন্নাহর বিরোধী তাকফীরীদের একজন হিসেবেই বিবেচিত হবে পাথরকুচির স্থলে খেজুর রাখা উচিত নয় তালিবুল ইলমের উচিত নয়, নুড়িপাথরের জায়গায় খেজুর রেখে দেওয়া বরং প্রতিটি বস্তু তার উপযুক্ত জায়গাতেই রাখতে হবে

আমি এরকম বলছি কেন? কারণ আমি কিছু তালিবুল ইলমকে দেখেছি, তারা যখন লক্ষ করে, হক-পরিপন্থি তাকফীরীরা ব্যাখ্যাপূর্ণ বক্তব্য দেয় না, তখন তারা ব্যাখ্যাপূর্ণ বক্তব্য দেয় নাএমন সবার ওপর জবানদরাজি করে (সবাইকে ঢালাও তাকফীরী আখ্যা দেয়) যদিও সে আহলুস সুন্নাহর পরিচিত ব্যক্তিদের একজন হয়, এমনকি যদিও তিনি আহলুস সুন্নাহর পরিচিত উলামাদের একজন হন অপরপক্ষে আমি এমন কিছু তালিবুল ইলমকে দেখেছি, তারা যখন লক্ষ করে, আমাদের সামসময়িক কিছু সুন্নাহপন্থি আলিম ব্যাখ্যাহীন অভিমত পোষণ করেন, তখন তারা এমন কাউকেই আর তাকফীরী বলে নাযারা ব্যাখ্যাবিহীন (এজমালি) বক্তব্য দেয় তারা বলে, লোক কিছু গ্রহণযোগ্য উলামার অভিমত অনুযায়ী মত ব্যক্ত করেছে এটাও ভুল বরং প্রতিটি বস্তু রাখতে হবে তার উপযুক্ত জায়গাতে

আমি এই আলোচনা সমাপ্ত করব, এরকম ক্ষেত্রে শাইখ ইবনু বায প্রদত্ত মহান উপদেশ দিয়ে তিনি বলেছেন, “প্রত্যেক মুসলিমের, বিশেষ করে উলামাদের কর্তব্য হচ্ছেবিভিন্ন বিষয়ে এবং নানাবিধ ক্ষেত্রে হুকুম দেওয়ার সময় কিতাব, সুন্নাহ সালাফদের মানহাজ অনুযায়ী সুনিশ্চিত হওয়া আর সেই ক্ষতিকর পথ থেকে সতর্ক থাকা, যে পথে চলেছেন অসংখ্য মানুষহুকুম লাগানো এবং এজমালি (ব্যাখ্যাহীন) বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে ব্যাখ্যাপূর্ণ বিবরণ পেশ করে এবং কিতাব-সুন্নাহর দলিল দিয়ে মানুষের কাছে ইসলামকে স্পষ্ট করে মহান আল্লাহর পথে মানুষকে দাওয়াত দিতে সচেষ্ট হওয়া উলামাদের কর্তব্য ইসলামের ওপর অবিচল থাকতে উৎসাহপ্রদান, পারস্পরিক উপদেশ-নসিহত দেওয়ার পাশাপাশি ইসলামী বিধিবিধানপরিপন্থি সকল বিষয় থেকে সতর্ক করাও তাঁদের কর্তব্য” [মাজমূ ফাতাওয়া লিবনি বায, /৩৫৭]

এটি একটি মহান উপদেশ প্রত্যেক মুসলিমের উচিত মহান আল্লাহকে ভয় করা, ন্যায়নিষ্ঠ সালাফদের পথ অবলম্বন করা, উলামাদের ব্যক্তীকৃত ব্যাখ্যাপূর্ণ বিবরণ জেনে নেওয়া এবং সেই পথে নিপাতিত না হওয়া, ব্যাখ্যাপূর্ণ কথা বাদ দিয়ে যে পথ অবলম্বন করেছে কতিপয় মানুষ; অথচ সে বিষয়ে ব্যাখ্যাপূর্ণ বিবরণ দেওয়া জরুরি এটাই ছিল এই মাসআলাহ

আমাদের সবার অন্তরে একটি প্রশ্নের উদ্রেক হয় এতসব সম্ভাবনা যদি অবশিষ্ট থাকে, তাহলে আমরা কাজের কাজিকে হুকুম দিব কীভাবে? মানে আপনারা তো বলছেন, ‘সে যদি বিশ্বাস রেখে ফায়সালা করে,’ ‘সে যদি এই বিশ্বাস রেখে ফায়সালা করে,’ ‘সে যদি এরকম বিশ্বাস রেখে ফায়সালা করে’—সবই তো সম্ভাবনা তাহলে কাজের কর্তাকে হুকুম দিব কীভাবে? (*) এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আগামীকালের মজলিসে আমরা বিষয়ে মৌলিক আলোচনা করব, যে মজলিসে আমরা খাস করে শুধু কাফির বলার মূলনীতি নিয়েই আলোচনা করব, ইনশাআল্লাহ যাতে করে জাতীয় বিষয়ে একজন মুসলিমের সঠিক অবস্থান কী হবে, তা আমরা জেনে নিতে পারি সে যাহোক, শাইখ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব মাসআলাহয় যা বলেছেন, তা আমরা সম্পূর্ণ করে নিই

[(*) আমরা বিষয়ে অনেক আগেইস্তিহলালের (হারামকে হালাল করা) সংজ্ঞা এবং তাকফীরীদের জাহালাত”– শীর্ষক দীর্ঘ প্রবন্ধে আলোচনা করেছি ওয়ালিল্লাহিল হামদঅনুবাদক]

·[তাগুতী কোর্টে বিচারপ্রার্থী হওয়ার বিধান ( আলোচনা অনুবাদক কর্তৃক সংযোজিত)]

আল্লাহর শরিয়তবিরোধী আইনই তাগুত তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হওয়া কুফর কারণ মহান আল্লাহ বলেছেন, “তুমি কি তাদের প্রতি লক্ষ করনি, যারা দাবি করে, তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং তোমার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছিল, তার প্রতি তারা ইমান রাখে? অথচ তারা তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়, যদিও তাদেরকে আদেশ করা হয়েছিল, তারা যেন তাগুতকে অস্বীকার করে” [সুরা নিসা: ৬০] আয়াতে তাদের ইমানকে নাকচ করা হয়েছে, যারা গাইরুল্লাহর কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়, যদিও তারা নিজেদের মুমিন বলে ধারণা করে

শাইখুল ইসলাম ইমাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাবের পৌত্র ইমাম সুলাইমান বিন আব্দুল্লাহ আলুশ শাইখ (রাহিমাহুল্লাহ) উক্ত আয়াত প্রসঙ্গে বলেছেন, “এই আয়াতে বিষয়ের দলিল রয়েছে যে, তাগুতের কাছেতথা কিতাব সুন্নাহ ব্যতীত অন্যকিছুর কাছেবিচারপ্রার্থনা না করা ফরজ বিধানগুলোর অন্যতম তাগুতের কাছে বিচার প্রার্থনাকারী ব্যক্তি মুমিন নয়, এমনকি মুসলিমও নয়” [তাইসীরুল আযীযিল হামীদ (তাহকিক: . উসামাহ আল-উতাইবী), পৃষ্ঠা: ৯৬৩] ইমাম সুলাইমানের বক্তব্যে ব্যাখ্যার অবকাশ রয়েছে

কোনো ব্যক্তি যদি আল্লাহর আইনকে অহংকারবশত প্রত্যাখ্যান করে, কিংবা আল্লাহর আইনকে অপছন্দ করে, কিংবা ব্যবসাবাণিজ্য, রাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি প্রভৃতিতে আল্লাহর আইনের প্রবেশকে অপছন্দ করে এবং বিশ্বাস নিয়ে তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হয়, তাহলে সে ব্যক্তি কাফির হয়ে যাবে কোনো ব্যক্তি যদি আল্লাহর আইনের চেয়ে অন্য আইনকে ভালো মনে করে, কিংবা সমপর্যায়ের মনে করে, কিংবা আল্লাহর আইনের বিপরীত আইন দিয়ে ফায়সালা করা বৈধ মনে করে এবং এসব বিশ্বাসের কোনো একটি নিয়ে তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হয়, তাহলেও সে ব্যক্তি কাফির হয়ে যাবে এগুলো সবই ব্যক্তির বিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত এবং এগুলোর প্রত্যেকটি সর্ববাদিসম্মত অভিমত, বিষয়ে উলামাদের কোনো মতানৈক্য নেই

কিন্তু যে ব্যক্তি আল্লাহর বিধানের প্রতি সন্তোষ নিয়ে এবং স্বীয় কৃতকর্মের দরুন নিজেকে পাপী হিসেবে বিশ্বাস রেখে তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হয়, সে ব্যক্তি ফাসেক, বড়ো গুনাহগার, তবে কাফির নয় শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) ধরনের ব্যক্তিদের ব্যাপারে বলেছেন, “হালালকে হারাম করা হারামকে হালাল করার ক্ষেত্রে তাদের ইমান আক্বীদাহ সুসাব্যস্ত থাকে কিন্তু তারা আল্লাহর অবাধ্যতায় তাদের (তাগুতদের) অনুসরণ করে যেমন একজন মুসলিম এমন পাপকর্ম সম্পাদন করে, যেগুলোকে সে পাপ বলে বিশ্বাস রাখে সুতরাং এদের বিধান হবে তাদের অনুরূপ গুনাহগারদের মতোই” [মাজমূ ফাতাওয়া, /৭০]

কিন্তু যে ব্যক্তি তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে বাধ্য হয়, তার কোনো গুনাহ নেই কারণ সে নিরুপায় বিষয়ে আল্লামাহ সুলাইমান আর-রুহাইলী চমৎকার আলোচনা করেছেন তিনি বলেছেন, “একটি বিষয় অবশিষ্ট রয়ে গেছে যে বিষয়ে উলামারা আলোচনা করেছেন, আর মানুষদেরও এরূপ আলোচনার প্রয়োজন আছে বিষয়টি বিশদভাবে ব্যাখ্যা করাও জরুরি সেটা হলোবাধ্য বা নিরুপায় হলে আল্লাহর শরিয়তবিরোধী আইনের কাছে বিচারপ্রার্থী হওয়ার বিধান মানুষ যখন নিরুপায় হয়; যেমন কোনো মুসলিম ব্যবসায়ী কোনো একজন কাফির ব্যবসায়ীর সাথে ওই কাফিরের দেশে বাণিজ্যিক লেনদেনে লিপ্ত হয়েছে পরবর্তীতে তাদের মাঝে বিবাদ দেখা দিয়েছে

এখন কোনো মুসলিম দেশের শরয়ী কোর্টের কাছে বিচারপ্রার্থী হওয়া সেই ব্যবসায়ীর পক্ষে সম্ভব নয় কেননা ঘটনা ঘটেছে কাফির রাষ্ট্রে এখন সেই মুসলিমের সামনে দুটো পথহয় সে কাফির রাষ্ট্রের কোর্টে বিচারপ্রার্থী হবে, যেসব কোর্ট আল্লাহর শরিয়তবিরোধী আইন দিয়ে ফায়সালা করবে, আর নাহয় সে নিজের হক জলাঞ্জলি দিবে তার সামনে দু পথের যেকোনো একটি খোলা রয়েছে কেউ এর চেয়েও নিরুপায় হতে পারে যদি সেই কাফির ব্যবসায়ী তার দেশের কোর্টে মামলা দায়ের করে, তাহলে এক্ষেত্রে মুসলিম ব্যবসায়ীর কোনো এক্তিয়ার থাকে নাসে মামলা দায়ের করবে, কি করবে না মামলা দায়ের হয়ে গেছে, সে এখন (কোর্টে যেতে) বাধ্য

নিরুপায় হওয়ার আরও একটি দৃষ্টান্ত, যা ইউরোপে বসবাসরত মুসলিমদের মাঝে পাওয়া যায় যেমন কোনো ব্যক্তি স্বীয় স্ত্রীকে পরিত্যাগ করল এবং তাকে তালাক দিতেও অস্বীকার করল এখন মহিলা হয় দীর্ঘজীবন কাটিয়ে দেবে ঝুলন্ত অবস্থায়, যে না বিবাহিত, আর না তালাকপ্রাপ্ত; থাকবে ফিতনা মুসিবত নিয়ে অন্যথায় সে ওই সকল রাষ্ট্রের কোর্টে বিচার দায়ের করবে, যেসব কোর্ট তার পক্ষে ফায়সালা দেবে সে আছে নিরুপায় অবস্থায়

এক্ষেত্রে কিছু উলামা বলেন, মুসলিম ব্যক্তি তার হক বিসর্জন দেবে, যে পর্যন্ত না তার নিরুপায় অবস্থা প্রবল আকার ধারণ করছে তাঁরা বলেন, তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হওয়ার ব্যাপারটি বিপজ্জনক, বিধায় ওই সকল কোর্টে মামলা উত্থাপন করা না-জায়েজ; যে পর্যন্ত না তার নিরুপায় অবস্থা চরমে পৌঁছে, যখন বিলকুল তার আর কোনো এক্তিয়ার থাকে না যেমনটি আমি দ্বিতীয় উদাহরণে উল্লেখ করেছি কাফিরের তরফ থেকে মামলা উঠানো হয়ে গেছে, মামলায় না এসে কোনো উপায় নেই অন্যথায় সে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে হয়তো তার সমুদয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে অথবা আমরা যে মহিলার উদাহরণ দিলাম, সে যদি তরুণী হয় এবং এরকম অবস্থা চলতে থাকলে নিজের দ্বীন ইজ্জতের ব্যাপারে সে ক্ষতির আশঙ্কা করে, তাহলে তখন জায়েজ আছে (তাগুতী কোর্টে মামলা দায়ের করা)

তবে অধিকাংশ উলামার মতেআর মতটিই প্রাধান্যযোগ্যসেসব আইনের কাছে বিচারপ্রার্থী হওয়া কয়েকটি শর্তসাপেক্ষে বৈধ আছে যথা:

১ম শর্ত: সে এসব আইনকে অপছন্দ করবে, এসবের প্রতি সন্তুষ্ট হবে না বরং তার অন্তর বিষয়ের প্রতি প্রশান্ত থাকবে যে, কেবল আল্লাহর শরিয়তই হক কিন্তু সে নিরুপায় সে বাধ্য হয়ে ঘৃণা নিয়ে সেসব আইনের কাছে গমন করছে

২য় শর্ত: ক্ষতির ব্যাপারটা সুনিশ্চিত হতে হবে, কল্পিত বা সম্ভাব্য হওয়া যাবে না বরং সুনিশ্চিত বাস্তবিক হতে হবে

৩য় শর্ত: ক্ষতিটা বড়ো ধরনের হতে হবে ১০ হাজার বা ২০ হাজারের মামলা হলে চলবে না; যার ফলে এরকম অর্থকড়ি হারানোর যে অনিষ্ট, তারচেয়ে ওই সকল আইনের কাছে বিচারপ্রার্থী হওয়ার অনিষ্টই বড়ো হয়ে যায় বরং ক্ষতি হতে হবে বড়ো ধরনের, যার অনিষ্ট ভয়াবহ

৪র্থ শর্ত: ওই সমস্ত কোর্ট ছাড়া অন্য কোনো পথ না থাকা যেমন আমরা যে মহিলার উদাহরণ দিলাম, তার ক্ষেত্রে যদি এমন হয়, সেখানে একটি ইসলামী মারকায আছে, যা শরিয়ত অনুযায়ী বিচার-বিশ্লেষণ করবে এবং তার জন্য এমন ফায়সালা দিবে, যা থেকে পালানোর কোনো উপায় নেই; তাহলে সেই মহিলার জন্য ওইসব কোর্টে যাওয়া জায়েজ নয় (বরং সে ওই মারকাযে যাবে)

৫ম শর্ত: বিচারপ্রার্থী তার শরয়ী অধিকারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, এরচেয়ে বেশি নিবে না অর্থাৎ শরয়ী কোর্টে বিচারপ্রার্থী হলে তারা যে ফায়সালা দিত, তদনুযায়ী সে তার প্রাপ্য শরয়ী অধিকারটুকুই গ্রহণ করবে, এরচেয়ে বেশি নিবে না তার শরয়ী অধিকারের চেয়ে যা অতিরিক্ত থাকে, তা গ্রহণ করা তার জন্য জায়েজ নয়, যদিও সেই কোর্ট তাকে অতিরিক্ত প্রাপ্যের ফায়সালা দিয়েছে বরং সে তার শরয়ী অধিকারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে” [আল্লামাহ সুলাইমান আর-রুহাইলী কৃত শারহু কিতাবিত তাওহীদ, পৃষ্ঠা: ১২৯৬-১২৯৮]

নিরুপায় হলে নিজের অধিকার গ্রহণের জন্য এরূপ কোর্টে বিচারপ্রার্থী হওয়া জায়েজ আছে মর্মে মত ব্যক্ত করেছেন ইমাম ইবনু বায এবং ইমাম ইবনু উসাইমীন (রাহিমাহুমাল্লাহ) [মাজমূ ফাতাওয়া লিবনি বায, ২৩/২১৪; আশ-শারহুল মুমতি‘, /২৪৪]

এখানে আরেকটি বিষয় রয়েছে গাইরুল্লাহর আইন অনুযায়ী ফায়সালা দেয়, এমন কোর্টের কোনো আইন যদি শরিয়তের আইনের সাথে মিলে যায়, তখন এটা জেনে উক্ত কোর্টে বিচারপ্রার্থী হওয়া জায়েজ অর্থাৎ শুধু ওই আইনের ক্ষেত্রে বিচারপ্রার্থী হওয়া জায়েজ আছে আল্লামাহ সালিহ বিন আব্দুল আযীয আলুশ শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ) ব্যাপারে বলেছেন, “সে যদি জানে, বিষয়ে শরিয়তে তার হক আছে, তারপর এটা জেনে সে শরিয়তবিরোধী আইনের বিচারপতির কাছে মামলা দায়ের করে; কারণ সে জানে, শরয়ী আইনের সাথে উক্ত আইনের মিল রয়েছে সুতরাং যে ব্যক্তি শরিয়তবিরোধী আইনের বিচারপতির কাছে তার বিবাদীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে, যেহেতু সে জানে, শরিয়ত তাকে এক্ষেত্রে প্রাপ্য অধিকার দেবে, আবার শরয়ী আইনের সাথে এই আইনের মিলও রয়েছে; তাহলে আমার মতে বিশুদ্ধ অভিমত হলো কাজ বৈধ

কতিপয় উলামা বলেন, ‘সে কাজ করবে না, যদিও মামলায় তার অধিকার রয়েছেমহান আল্লাহ মুনাফেকদের ব্যাপারে বলেছেন, ‘হক তাদের পক্ষে হলে তারা বিনীতভাবে রসুলের কাছে ছুটে আসে’ (সুরা নুর: ৪৯) অতএব যে মনে করে, শরিয়তে তার জন্য অধিকার নিশ্চিত হয়েছে সে নিজের জন্য শরিয়ত ব্যতীত অন্যের কাছে বিচারপ্রার্থী হওয়া বৈধ মনে করে না কিন্তু আল্লাহ তার জন্য যা বিধিসম্মত করেছেন, সেরকম কিছু তার কাছে উপনীত হলে সেকথা স্বতন্ত্র এটা তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চাওয়ার আওতাভুক্ত হবে না” [আল্লামাহ সালিহ আলুশ শাইখ কৃত শারহু ফাতহিল মাজীদ, /২৯] অনুবাদক কর্তৃক সংযোজিত আলোচনা এখানেই সমাপ্ত

·[তাগুতকে অস্বীকার করা ওয়াজিব হওয়ার দলিল]

মূলপাঠ: এর দলিলমহান আল্লাহর বাণী, ‘দ্বীনের মধ্যে কোনো জোরজবরদস্তি নেই নিশ্চয় হেদায়েত সুস্পষ্ট হয়ে গেছে গোমরাহি হতে সুতরাং যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করল এবং আল্লাহর প্রতি ইমান আনল, সে অবশ্যই দৃঢ়তর রজ্জু (ইসলাম) ধারণ করল, যা ছিন্ন হওয়ার নয় আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ’ (সুরা বাকারা: ২৫৬)

ব্যাখ্যা: তাগুতকে অস্বীকার করা, তাগুতের সকল প্রকার শ্রেণিকে অস্বীকার করা এবং আল্লাহর প্রতি ইমান আনা যে ওয়াজিব, তার দলিলমহান আল্লাহর এই বাণী, ‘দ্বীনের মধ্যে কোনো জোরজবরদস্তি নেইএই বাক্য ভালোভাবে বুঝে নেওয়া জরুরিদ্বীনের মধ্যে কোনো জোরজবরদস্তি নেইএর মানেএই দ্বীন জবরদস্তির প্রয়োজনমুক্ত কারণ এর নিদর্শনগুলো প্রকাশ্য, সুস্পষ্ট বিধায় দ্বীনে বাধ্যবাধকতার প্রয়োজন পড়ে না এর মানে এই নয় যে, মানুষেরা তাদের নিজ নিজ ধর্মে স্বাধীন যেমনটি বুঝেছে কিছু অজ্ঞ লোক তারা বলে, ‘দ্বীনের মধ্যে কোনো জোরজবরদস্তি নেইএর মানেপ্রত্যেকেই নিজ নিজ ধর্মে স্বাধীন

আয়াতের অর্থ এটা নয় বরং আয়াতের মানে, এই দ্বীন বাধ্যবাধকতার প্রয়োজনমুক্ত কেন? কারণ এর নিদর্শনাবলি সুস্পষ্ট যার কাছে এই দ্বীন পৌঁছেছে, তার কাছে নিদর্শনাবলি স্পষ্ট হয়ে গেছে বাধ্যবাধকতার কোনো প্রয়োজন নেই কিন্তু এই দ্বীনের প্রতি আত্মসমর্পণ করা, এই দ্বীনকে মেনে নেওয়া তার জন্য ওয়াজিব কেননা যে মানুষের কাছেই দ্বীন পৌঁছার পর তা পরিত্যাক্ত হয়েছে, তা কেবল তার বিমুখতার দরুনই হয়েছে ইসলাম যার কাছে পৌঁছার পর বর্জিত হয়েছে, তা কেবল বিমুখ হওয়ার দরুনই হয়েছেদ্বীনের মধ্যে কোনো জোরজবরদস্তি নেই’— কথার অর্থ এটাই

নিশ্চয় হেদায়েত সুস্পষ্ট হয়ে গেছে গোমরাহি থেকে’— কথাটি পূর্বের বাক্যকে ব্যাখ্যা করছে এই বাক্যটি যেন কারণ বর্ণনা করছেদ্বীনের মধ্যে কোনো জোরজবরদস্তি নেইকারণ কী? কারণহেদায়েত সুস্পষ্ট হয়ে গেছে গোমরাহি থেকে দ্বীনের সরল পথ সুস্পষ্ট, এর বিপরীতে যা কিছু আছে, তার সবই ভ্রষ্টতা তাই সবার ওপর দ্বীনের অনুসরণ করা ওয়াজিব এটা সুস্পষ্ট দৃঢ়মূল দ্বীনসুতরাং যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করল এবং আল্লাহর প্রতি ইমান আনল

এখানে দুটি শর্তের কথা বলা হয়েছে; আয়াতে উদ্ধৃত ‘مَنْ’ শব্দটি শর্তবাচক তাহলে শর্ত মোট দুটিযে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করল এবং আল্লাহর প্রতি ইমান আনল, সে অবশ্যই দৃঢ়তর রজ্জু ধারণ করলএর মানে যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করেনি, সে দৃঢ়তর রজ্জু ধারণ করেনি যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ইমান আনেনি, সে দৃঢ়তর রজ্জু ধারণ করেনি এটাই লা ইলাহা ইল্লাল্লার অর্থনেতিবাচক ইতিবাচক দিক, যে বিষয়ে ইতঃপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে [(*) তাওহীদী কালিমার দুটি অংশ রয়েছে একটি নেতিবাচককোনো সত্য ইলাহ নেই (লা ইলাহা), আরেকটি ইতিবাচককেবল আল্লাহই সত্য ইলাহ (ইল্লাল্লাহ) সুরা বাকারার ২৫৬ নং আয়াতেও দুটি দিকের উল্লেখ রয়েছে তাগুতকে অস্বীকার করা নেতিবাচক দিক, আর আল্লাহর প্রতি ইমান আনা ইতিবাচক দিকঅনুবাদক]

·সমাপ্ত, আলহামদুলিল্লাহ

·অনুবাদক: মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ মৃধা

www.facebook.com/SunniSalafiAthari

আমাদের ওয়েব সাইটঃ- https://rasikulindiaa.blogspot.com/

আমাদের ওয়েব সাইটঃ-   https://salafi-pdfbooks.blogspot.com/

আমাদের ওয়েব সাইটঃ  https://salafimp3web.blogspot.com/


Post a Comment

0 Comments