▌বুল‘আম বিন বা‘উরার পরিণতি থেকে শিক্ষা

▌বুল‘আম বিন বা‘উরার পরিণতি থেকে শিক্ষা
.
ছাত্র: আল্লাহর বক্তব্য, “আর তুমি তাদের উপর সে ব্যক্তির সংবাদ পাঠ কর, যাকে আমি আমার আয়াতসমূহ দিয়েছিলাম। অতঃপর সে তা হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল এবং শয়তান তার পেছনে লেগেছিল। ফলে সে বিপথগামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছিল।” (সূরা আ’রাফ-৭:১৭৫)
.
আয়াতটির ব্যাখ্যায় সৌদি আরবের সর্বোচ্চ 'উলামা পরিষদ ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির সম্মানিত সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখ, আল-'আল্লামাহ, আল-ইমাম ড. সালিহ বিন ফাওযান বিন 'আবদিল্লাহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন:
.
“হ্যা, এই ব্যাক্তি বনী ইসরাঈলের একজন আলিম ছিল। (যার ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন,) ‘যাকে আমি আমার আয়াতসমূহ দিয়েছিলাম’, বনী ইসরাঈলের একজন ‘আলিম। তার সকল দু'আর জবাব দেওয়া হতো কারণ সে আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নাম (ইসমে আজম) জানতো, যা দ্বারা তুমি আল্লাহকে আহ্বান করলে তিনি সাড়া দিবেন। সে ছিল একজন ‘আবিদ (ইবাদাতকারী) ও ‘আলিম এবং তার দু'আর জবাব দেওয়া হতো। তাকে বুল‘আম বিন বা‘উরা ডাকা হতো। যখন মূসা (‘আলাইহিস সালাম) ও বনী ইসরাঈল বাইতুল মাক্বদিস জয় করতে চেয়েছিলেন, এটি জয় করা এবং কান‘আনিঈন ও আমালীক মুশরিকদের হাত থেকে পুনরুদ্ধার করা উদ্দেশ্যে, তারা (মুশরিকরা) বুল‘আমের নিকট আসলো। শত্রুপক্ষ — যাদের মূসা (আ:) আক্রমণ করছিলেন — তারা এই 'আলিম বুল‘আমের নিকট আসলো। তারা মুসলিমদের ব্যাপারে ভীত ছিল, তারা মূসা (‘আলাইহিস সালাম) এর ব্যাপারে ভীত ছিল। তারা বুল‘আমের নিকট আসলো এবং তাকে আল্লাহর নিকট মূসা এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে দু'আ করতে অনুরোধ করলো। তারা তাকে অনুরোধ করেছিল কারণ তার দু'আর জবাব দেয়া হতো। সে প্রথমে নাকচ করে দিলো। সে বিরত থাকলো ও নাকচ করলো। কিন্তু তারা জোরাজুরি করলো ও তাকে বলতে থাকলো, অথবা তাকে তারা কিছু অর্থ দিয়েছিল। ঐসময় সে মূসার বিরুদ্ধে দু'আ করলো। সুতরাং আল্লাহ তাকে অপমানিত করলেন ও তার কাছ থেকে সেই নিআমত কেড়ে নিলেন।
.
‘আর তুমি তাদের উপর সে ব্যক্তির সংবাদ পাঠ কর, যাকে আমি আমার আয়াতসমূহ দিয়েছিলাম। অতঃপর সে তা হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল এবং শয়তান তার পেছনে লেগেছিল। ফলে সে বিপথগামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছিল। আর আমরা ইচ্ছে করলে এর দ্বারা তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করতাম।’ (সূরা আ’রাফ, আয়াত নংঃ ১৭৫ ও ১৭৬)।
অর্থাৎ আয়াতের মাধ্যমে (আমরা তাকে সমুন্নত করতাম)।
‘কিন্তু সে যমীনের প্রতি ঝুঁকে (দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে) পড়ে।’ সূরা আ’রাফ, আয়াত নংঃ ১৭৬)।
সে উন্নীত ও মর্যাদাবান হতে চায়নি।
‘সে যমীনের প্রতি ঝুঁকে পড়ে এবং তার প্রবৃত্তির অনুসরণ করে।সুতরাং তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে কুকুরের মত; তার উপর বোঝা চাপালে সে জিহবা বের করে হাঁপাতে থাকে এবং বোঝা না চাপালেও জিহবা বের করে হাঁপায়।’ (সূরা আ’রাফ, আয়াত নংঃ ১৭৬)
.
কুকুর সর্বদা তার জিহবা বের করে রাখে, সে ছায়াতে থাকুক অথবা রোদে, দৌড়ানো অবস্থায় কিংবা দাড়িয়ে থাকা অবস্থায় -সে সর্বদা তার জিহবা বের করে রাখে। তাই আল্লাহ তার ও কুকুরদের মধ্যে একটি সাদৃশ্য স্থাপন করেছেন। ওয়াল ইয়াযু বিল্লাহ। প্রাণীর মধ্যে সবথেকে নিকৃষ্ট, যদিও সে আলিম ইত্যাদি ছিলো, কিন্তু যখন সে নিজেকে আল্লাহর আয়াত থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিলো, আল্লাহ তাকে বিচ্ছিন্ন করে দিলেন। সে নিজেকে আল্লাহর আয়াত থেকে বিচ্ছিন্ন করেছিল এবং মুশরিকদের আনুগত্য করেছিল এবং আল্লাহর ওলীদের বিরুদ্ধে দু'আ করেছিল। সুতরাং আল্লাহ তাকে শাস্তি দিয়েছিলেন। অতএব, এটা দলিল যে, যে কেউ কাফিরদের আনুগত্য করবে এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাদের সাহায্য সহযোগিতা করবে, সে বুল‘আমের ন্যায়। বুল‘আম বিন বাউরার মতো। সে নিজেকে আল্লাহর আয়াত থেকে বিছিন্ন করে ফেলেছে। না‘আম।”
.
অনুবাদক: আশরাফুল নিশাদ

Post a Comment

0 Comments