Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

তাবলীগ জামাত থেকে সালাফী উলামাদের সতর্কীকরণ

তাবলীগ জামাত থেকে সালাফী উলামাদের সতর্কীকরণ

[গতকাল ৬ই জুমাদাল উলা ১৪৪৩ হিজরি মোতাবেক ১০ই ডিসেম্বর ২০২১ খ্রিষ্টাব্দ তারিখে সৌদি আরবের মসজিদগুলোতে পথভ্রষ্ট ফের্কা তাবলিগ জামাত থেকে সতর্ক করে খুতবা দেওয়া হয়। তাবলিগ জামাত প্রসঙ্গে আমাদের উলামায়ে সুন্নাহ অনেক খুতবা দিয়েছেন। সেসবের মধ্য থেকে আমরা সৌদি আরবের প্রখ্যাত বিদ্বান শাইখ আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আন-নাজমি হাফিযাহুল্লাহর একটি তথ্যবহুল খুতবা অনুবাদ করে মুসলিম বাঙালি পাঠকবর্গের সমীপে পেশ করছি। আল্লাহ আমাদের এ থেকে উপকৃত করুন। আমিন। – অনুবাদক]

·প্রথম খুতবা:

পূর্ণতার বিশেষণে বিশেষিত মহান আল্লাহর জন্যই যাবতীয় প্রশংসা নিবেদিত। আমি মহান আল্লাহর প্রশংসা করছি, যিনি সুমহান, সমুন্নত। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি অদ্বিতীয়, তাঁর কোনো শরিক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রসুল, যিনি ছিলেন অতি মহানুভব স্বভাব ও দয়ালু প্রকৃতির মানুষ। আল্লাহ তাঁর প্রতি এবং তাঁর অনুসারীবৃন্দ ও সাহাবিবর্গের প্রতি বর্ষণ করুন অজস্র সালাত ও সালাম।

অনন্তর জ্ঞাপন করছি, ওহে আল্লাহর বান্দারা, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। মহান আল্লাহ বলেছেন, وَاتَّقُوا يَوْمًا تُرْجَعُونَ فِيهِ إِلَى اللَّهِ ۖ ثُمَّ تُوَفَّىٰ كُلُّ نَفْسٍ مَا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ “আর তোমরা সেই দিনের ভয় করো, যেদিন তোমরা আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে, তখন যে যা অর্জন করেছে তাকে তা পূর্ণরূপে দেওয়া হবে এবং তারা নিপীড়িত হবে না।” [সুরা বাকারা: ২৮১]

তোমরা জেনে রেখ, আল্লাহর বান্দারা, সবচেয়ে সত্যবচন আল্লাহর কিতাব, আর সর্বোৎকৃষ্ট পথ-নির্দেশিকা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পথ-নির্দেশিকা। নবউদ্ভাবিত বিষয় হচ্ছে সর্বনিকৃষ্ট বিষয়। প্রত্যেক নবউদ্ভাবিত বিষয়ই বিদাত, প্রত্যেক বিদাতই ভ্রষ্টতা, আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতার স্থান হবে জাহান্নামে।

·আল্লাহর বান্দাসকল, তোমরা ইসলামপ্রাপ্তির এ নেয়ামতের জন্য আল্লাহর প্রতি প্রশংসা নিবেদন করো, কুরআন-সুন্নাহর নেয়ামতপ্রাপ্তির জন্য তাঁর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো। “আর তোমরা সেই দিনের ভয় করো, যেদিন তোমরা আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে, তখন যে যা অর্জন করেছে তাকে তা পূর্ণরূপে দেওয়া হবে এবং তারা নিপীড়িত হবে না।” [সুরা বাকারা: ২৮১] এতে করে তোমরা সর্বোচ্চ জান্নাত পেয়ে ধন্য ও ঋদ্ধ হয়ে যাবে।

আল্লাহর বান্দাসকল, আহমাদ ও বাইহাকি বিশুদ্ধ সনদে নুমান বিন বাশির রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদিস বর্ণনা করেছেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, اَلْجَمَاعَةُ رَحْمَةٌ وَالْفُرْقَةُ عَذَابٌ “ঐক্য হলো রহমত, আর দলাদলি হলো আজাব।” [সহিহুল জামি, হা: ৩১০৯] সুতরাং তোমরা ঐক্যবদ্ধ থাকার নেয়ামতপ্রাপ্তির জন্য আল্লাহর প্রশংসা জ্ঞাপন করো। আর দলাদলি ও অন্যায় বিভেদ থেকে নিজেরা সতর্ক থাক এবং অন্যদেরও সতর্ক করো। কেননা দলাদলি ও অন্যায় বিভেদ বড়োই অনিষ্টকর বিষয় এবং ইসলাম ও মুসলিমদের জন্য দুর্যোগ।

·

আল্লাহর বান্দারা, নিষিদ্ধ পথভ্রষ্ট দলসমূহ আর ভয়ানক বিপথগামী ফের্কাগুলোর অন্যতম ‘তাবলিগ জামাত’ বা ‘আহবাব’ (*) নামক ফের্কা। উম্মতের প্রতি কল্যাণকামিতা বজায় রাখা এবং নিজের দায়িত্ব পালন করে দায়মুক্ত হওয়ার জন্য এই বিপথগামী ফের্কা থেকে সতর্ক থাকা এবং মানুষদের সতর্ক করা মুসলিমদের অবশ্যপালনীয় কর্তব্য।

[(*) আরব দেশগুলোতে তাবলিগ জামাত ‘আহবাব’ নামেও পরিচিত। এর মানে দোস্ত বা প্রিয়জন। – অনুবাদক।]

আল্লাহর বান্দারা, কেউ প্রশ্ন করতে পারে, ‘এই দলের লক্ষ্য কী?’ তোমাদেরকে এ প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন মহৎ শাইখ আল্লামা সালিহ আল-ফাওযান হাফিযাহুল্লাহ, “এ দলের লক্ষ্য একটাই—তাওহিদের দাওয়াতকে সরিয়ে দিয়ে তদস্থলে নিজের জায়গা করে নেওয়া।”

আল্লাহর বান্দারা, ‘আহবাব’ নামক এই তাবলিগ জামাত কি পথভ্রান্ত বাহাত্তর ফের্কার অন্তর্ভুক্ত? তোমাকে এ প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন মহান শাইখ আল-আল্লামাতুল ইমাম আব্দুল আজিজ বিন বাজ রাহিমাহুল্লাহ। তিনি বলেছেন, “হ্যাঁ, (তাবলিগ জামাত এবং মুসলিম ব্রাদারহুড) বাহাত্তর ফের্কার অন্তর্ভুক্ত।”

·বরং শাইখ আল্লামা মুহাম্মাদ বিন উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ তাবলিগ জামাত এবং মুসলিম ব্রাদারহুডের ব্যাপারে বলেছেন, “তারা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অন্তর্ভুক্ত নয়।” এমনকি প্রথম গ্র্যান্ড মুফতি সম্মাননীয় শাইখ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহিম আলুশ শাইখ রাহিমাহুল্লাহ তাবলিগ জামাতের ব্যাপারে বলেছেন, “এই সংঘের মাঝে কোনো কল্যাণ নেই। বরং এটা একটা বিদাত ও ভ্রষ্টতাময় সংগঠন।”

যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস শাইখ আলবানি রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “নিশ্চয় তাবলিগ জামাতের দাওয়াত নব্য (বিদাতি) সুফিবাদের দাওয়াত।”

শাইখ আল্লামা আব্দুর রাজ্জাক আফিফি রাহিমাহুল্লাহ তাবলিগ জামাত প্রসঙ্গে বলেছেন, “প্রকৃতপক্ষে এরা বিপথগামী বিদাতি।”

·সম্মাননীয় শাইখ সালিহ আল-লুহাইদান হাফিযাহুল্লাহ বলেছেন, “মুসলিম ব্রাদারহুড বলেন, আর তাবলিগ জামাতই বলেন, এরা কেউই বিশুদ্ধ মানহাজের বাহক নয়।”

সম্মাননীয় শাইখ হামুদ আত-তুওয়াইজিরি রাহিমাহুল্লাহ তাবলিগ জামাত প্রসঙ্গে বলেছেন, “অবশ্যই এরা বিদাত ও ভ্রষ্টতাময় জামাত।”

আল্লাহর বান্দাসকল, এই দলের ভ্রষ্টতা অনেক বড়ো বড়ো, এদের বিপথগামিতাও অত্যন্ত বিপজ্জনক। এদের একটি অন্যতম বিপথগামিতা হচ্ছে, এরা মহান আল্লাহর জন্য নিবেদিত নির্ভেজাল তাওহিদি আকিদার প্রতি গুরুত্বারোপ করে না এবং শির্ক থেকেও সতর্ক করে না। সম্মাননীয় শাইখ আব্দুল আজিজ বিন বাজ রাহিমাহুল্লাহ তাবলিগ জামাতের ব্যাপারে বলেছেন, “এদের নিকটে রয়েছে অনেক কুসংস্কার, বিদাত ও শির্কি কর্মকাণ্ড।” তিনি রাহিমাহুল্লাহ আরও বলেছেন, “আকিদা বিষয়ে তাবলিগ জামাতের জাগ্রত জ্ঞান নেই।”

·শাইখ আল্লামা আহমাদ আন-নাজমি রাহিমাহুল্লাহ তাবলিগ জামাত সম্পর্কে বলেছেন, “এরা তাওহিদুল উলুহিয়্যাহকে অবহেলা করে, এই তাওহিদকে এরা মূল্যায়ন করে না। আর তাওহিদুল আসমা ওয়াস সিফাতে এরা (বিদাতি) আশারি-মাতুরিদি ফের্কার অনুসারী। অর্থাৎ এরা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের পন্থা বাদ দিয়ে ভিন্ন মতাদর্শের ওপরে রয়েছে।”

আল্লামা যাইদ আল-মাদখালি রাহিমাহুল্লাহ তাবলিগ জামাত প্রসঙ্গে বলেছেন, “আকিদা বিষয়ে মূর্খ হিসেবে এরা সুপরিচিত।”

আল্লাহর বান্দারা, তাবলিগ জামাত আকিদা বিষয়ে মূর্খ। এদের নিকটে রয়েছে অনেক কুসংস্কার, বিদাত ও শির্কি কর্মকাণ্ড। তাহলে এরা মানুষকে দাওয়াত দেয় কীসের দিকে?!

·আল্লাহর বান্দারা, এই দলের আরেকটি গুরুতর ত্রুটি—এরা সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরতে এবং বিদাত থেকে সতর্ক করতে মানুষদের আহ্বান করে না। অধিকন্তু এরা নিজেরাই অসংখ্য বিদাতে ডুবে রয়েছে। যেমন: নির্দিষ্টভাবে তিনদিনের জন্য দাওয়াত দিতে বের হওয়া কিংবা চিল্লাপ্রথা মানা তথা চল্লিশদিনের জন্য দাওয়াতে বের হওয়ার মতো বিদাত, সুফিদের তরিকা অনুযায়ী বিদাতি জিকিরে লিপ্ত হওয়া। এছাড়া স্বপ্ন, কেচ্ছা ও কুসংস্কারে বিশ্বাস রাখাও এদের একটি অন্যতম সুন্নাহবিরোধিতা।

আল্লাহর বান্দারা, এই দলের বইপুস্তক তথা তাবলিগি নেসাব ওরফে ফাজায়েলে আমলের গ্রন্থাবলি প্রসঙ্গে বলতে গেলে মাননীয় প্রথম গ্র্যান্ড মুফতি শাইখ মুহাম্মাদ বিন ইবরাহিম আলুশ শাইখ রাহিমাহুল্লাহর বক্তব্য উল্লেখ করাই যথেষ্ট হবে। তিনি বলেছেন, “আমরা এদের বইগুলোকে পেয়েছি, এসব বই ভ্রষ্টতা ও বিদাতে ভরপুর এবং এসব বইয়ে কবরপূজা ও শির্কের দিকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে।”

[অনুবাদকের টীকা: তাবলিগ জামাতের ব্যাপারে উলামাগণের বিশদ বক্তব্য জানতে আপনারা নিম্নোক্ত গ্রন্থগুলো পড়তে পারেন। (১) শাইখ রাবি আল-মাদখালি বিরচিত আকওয়ালু উলামাইস সুন্নাহ ফি জামাআতিত তাবলিগ, (২) আত-তালিকুল বালিগ আলা রদ্দিশ শাইখ আহমাদ আন-নাজমি আলা মাদিহিত তাবলিগ, (৩) শাইখ হামুদ আত-তুওয়াইজিরি বিরচিত আল-কাওলুল বালিগ ফিত তাহজিরি মিন জামাআতিত তাবলিগ, (৪) শাইখ আব্দুল আজিজ আর-রইস কৃত ফাতাওয়া আইম্মাতি আহলিস সুন্নাতিস সালাফিয়্যিন ফি জামাআতিত তাবলিগি ওয়াল ইখওয়ানিল মুসলিমিন। টীকা সমাপ্ত]

·পক্ষান্তরে এই দলের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মাদ ইলিয়াসের ব্যাপারটা হলো, এই লোক সুফি মতবাদের ওপরেই বেড়ে উঠেছে। সে আব্দুল কুদ্দুস নামক জনৈক চরমপন্থি সুফির কবরের পাশে প্রহরায় থাকত। আর যে মসজিদ থেকে তাবলিগ জামাতের দাওয়াত যাত্রা আরম্ভ করেছে, তার মধ্যে চারটি কবর আছে। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মাদ ইলিয়াসও এই মসজিদে সমাধিস্থ রয়েছে; সে (শায়িত) রয়েছে এবং তার সাথে রয়েছে আরেকদল লোক।

আল্লাহর বান্দাসকল, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। তোমাদের আকিদা ও তাওহিদকে হেফাজত করো। আকিদা সম্পর্কেই কবরে ও কেয়ামতের মাঠে তোমাদেরকে সর্বপ্রথম প্রশ্ন করা হবে। তোমরা এই ভ্রষ্টকারী দল এবং বিপথগামী-ভ্রান্ত ফের্কা থেকে সাবধান থাক।

আল্লাহর বান্দারা, তোমরা যা শুনছ আমি তা-ই বলি। আমি মহান প্রতাপান্বিত আল্লাহর কাছেই ক্ষমাপ্রার্থনা করি। তোমরাও তাঁর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করো। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, কৃপানিধান।

·দ্বিতীয় খুতবা:

যাবতীয় প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্যই নিবেদিত। রসুলগণের নেতা মুহাম্মাদের জন্য ধার্য হোক সালাত ও সালাম। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, পুণ্যবান বান্দাদের পৃষ্ঠপোষক আল্লাহ ব্যতীত কোনো প্রকৃত উপাস্য নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রসুল। তাঁর অনুসারীবৃন্দ, সাহাবিবর্গ, তাবেয়িগণ এবং কেয়ামত অবধি উত্তমরূপে তাঁদের অনুসরণকারী ব্যক্তিবর্গের জন্য ধার্য হোক সালাত ও সালাম।

অতঃপর: আল্লাহর বান্দারা, নিশ্চয় ‘আহবাব’ নামক এই তাবলিগ জামাত সন্ত্রাসবাদের একটি বড়ো প্রবেশদ্বার। বরং এই তাবলিগ জামাত সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থা চর্চা করে। আমাদের এ দাবির পক্ষে অজস্র প্রমাণ ও পর্যাপ্ত দলিল রয়েছে।

যেমন সম্মাননীয় সাবেক ক্রাউন প্রিন্স আমির নায়িফ বিন আব্দুল আজিজ রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে আমার কার্যদায়িত্বের সময় সবচেয়ে কঠিন বিষয়গুলোর একটি ছিল হারামের হামলাজনিত দুর্ঘটনা, যার সাথে এমন অনেক লোক জড়িত ছিল, যারা নিজেদেরকে তাবলিগ জামাত এবং মুসলিম ব্রাদারহুডের লোক বলে অভিহিত করত।”

·আলি আশমাউয়ি তার বিখ্যাত ‘আত-তারিখুস সির্রি লি জামাআতিল ইখওয়ানিল মুসলিমিন (মুসলিম ব্রাদারহুডের গুপ্ত ইতিহাস)’ গ্রন্থে বলেছে, “আমরা (ব্রাদারহুডের কর্মীরা) তাবলিগ জামাতের সাথে লিয়াজোঁ করে চলতাম। যাতে করে আমরা উপযুক্ত কর্মী চয়ন করে নিতে পারি, যেই কর্মী আমাদের সাথে যুক্ত হবে।”

পরন্তু কোনো এক দেশের তাবলিগ-প্রধান ইবরাহিম ইজ্জত উল্লেখ করেছে, জামাআতুত তাকফিরি ওয়াল হিজরাহ (একটি আতঙ্কবাদী খারেজি সংগঠন) এবং মুসলিম ব্রাদারহুডের একটি প্রতিনিধিদল তার কাছে এসে তাকে তাদের দলে যোগ দিতে বলে। সে এতে অসম্মতি জানিয়ে বলে, ‘আমি তোমাদের দলে যোগ দিতে পারব না। কিন্তু কফিশপগুলো থেকে আমি (দাওয়াত দিয়ে) যুবকদের নিয়ে আসতে পারব। বাকিটা তোমরা দেখে নেবে।’ এ ঘটনাটিও তাকফিরি সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলোর সাথে তাবলিগ জামাতের সংযোগের বিষয়টিকে আরও জোরদার করে।

·এমনকি বোমা বিস্ফোরণের সাথে জড়িতদের কেউ কেউ তাদের জবানবন্দিতে ব্যক্ত করেছে, তারা তাবলিগ জামাতের সাথে রয়েছে। স্থানীয় কিছু সংবাদপত্রে প্রচারিত হয়েছে, তাবলিগ জামাতের সাথে জড়িত কতিপয় ব্যক্তিকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে সন্ত্রাসী সংগঠন আইসিসের পক্ষে সমর্থন ও শক্তি যোগানোর কারণে। এছাড়াও আতঙ্কবাদী সংগঠনগুলোর অসংখ্য নেতার শুরুটা হয়েছিল তাবলিগ জামাত থেকেই।

[অনুবাদকের টীকা: বাংলাদেশেও আমরা একই চিত্র দেখতে পাই। তাবলিগ জামাতের বহুলোক সন্ত্রাসবাদী খারেজি সংগঠন আল-কায়েদাকে সমর্থন করে। এমনকি এদের দাঈ পর্যায়ের অনেক লোকদের এবং তাবলিগিদের ফেসবুক সেলিব্রেটিদেরও দেখতে পাবেন, চরমভাবে এরা আল-কায়েদাকে ডিফেন্স করে থাকে। আল-কায়েদার লিডারদের বইপুস্তকও অনুবাদ করে, প্রকাশ ও প্রচার করে। গোপনে যেসব লোক বহির্বিশ্বে তথাকথিত জিহাদ করতে যায়, তাদের অনেকেই তাবলিগ জামাতের কাভারে বাইরে যায়। এদের ভ্রষ্টতা ও আপদ থেকে আল্লাহ মুসলিম উম্মতকে হেফাজত করুন। আমিন। টীকা সমাপ্ত]

·আমি এর সাথে আরও যুক্ত করব, তাবলিগ জামাতের একটি সংগঠন আছে এবং এতে রয়েছে চারটি সুফি তরিকার বায়াত (অঙ্গীকার)। এছাড়াও এদের শাখাগত নেতাবর্গ রয়েছে। যেই নেতারা তাদের অধীন বিষয়াদি (জায়গামতো) জানিয়ে দেয়। এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মাদ ইলিয়াস তার এক খুতবায় তদীয় অনুসারীদের উদ্দেশে বলেছে, “তোমরা যদি আপন গৃহই শাসন বা পরিচালনা করতে না পার, তাহলে কীভাবে তোমরা ইসলামি রাষ্ট্র শাসন করার অভিলাষ পোষণ করো?” (দোয়া করি) এদের অনিষ্ট প্রতিরোধে মুসলিমদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট হয়ে যান।

প্রত্যেক চক্ষুষ্মান ব্যক্তির কাছে এ থেকে প্রতিভাত হয়, ‘আহবাব’ নামক এই তাবলিগ জামাত সন্ত্রাসবাদের বীজ; বরং এরা নিজেরাই সন্ত্রাসবাদের সাথে জড়িত।

[অনুবাদকের টীকা: আল-কায়েদার প্রতি এদের সমর্থন এবং আল-কায়েদায় যোগদানের বিষয়ে ইতঃপূর্বে আমরা বলেছি। এতদ্ব্যতীত এরা নিজেরাও যে চরমপন্থা অবলম্বন করে, তা এদের মধ্যকার দু গ্রুপের রক্তক্ষয়ী সংঘাত থেকে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বাংলাদেশে এদের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের একটি চলমান দৃশ্য দেখুন। লিংক: https://youtu.be/xTeTc3k42As। টীকা সমাপ্ত]

·হে আল্লাহ, আপনি ইসলাম ও মুসলিমদের সম্মানিত করুন, শির্ক ও মুশরিকদের লাঞ্ছিত করুন এবং দ্বীনসমৃদ্ধ ভূখণ্ডকে হেফাজত করুন। ইয়া আল্লাহ, আপনি আমাদের জন্মভূমিতে আমাদেরকে নিরাপদে রাখুন এবং আমাদের শাসকবর্গকে সংশোধন করুন। ইয়া আল্লাহ, সকল মুসলিম শাসককে আপনার কিতাব অনুযায়ী আমল করার, আপনার নবির সুন্নাহ অনুসরণ করার এবং আপনার আইন কার্যকর করার তৌফিক দান করুন। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের শাসক হারামাইনের খাদেমকে ইসলামের সম্মান আর মুসলিমদের কল্যাণ রয়েছে এমন বিষয় সম্পাদন করার তৌফিক দান করুন। ইয়া আল্লাহ, আপনি তাঁকে, তাঁর ক্রাউন প্রিন্সকে, তাঁর ভ্রাতৃবর্গ ও সহযোগীদেরকে এমন কাজের তৌফিক দান করুন, যেগুলো আপনি ভালোবাসেন এবং সেসবের প্রতি সন্তোষ থাকেন।

ইয়া আল্লাহ, আপনি আমাদের প্রহরী সৈন্যদল এবং আমাদের নিরাপত্তায় নিযুক্ত কর্মীদের হেফাজত করুন, আর তাদের প্রক্ষেপণকে সঠিকতায় পৌঁছে দিন, হে জগৎসমূহের প্রতিপালক। ইয়া আল্লাহ, আপনি নৈরাজ্যবাদী হুসি সম্প্রদায়, ধর্মত্যাগী খারেজি জনবল এবং দ্বীনের সমুদয় শত্রুকে পাকড়াও করুন। হে আল্লাহ, আমরা আপনার নেয়ামতের বিলীনতা, আপনার নিরাপত্তার পরিবর্তন, আপনার আকস্মিক শাস্তি এবং আপনার সকল অসন্তোষ থেকে আমরা আপনার কাছেই আশ্রয় প্রার্থনা করছি। ইয়া আল্লাহ, আমরা আপনার কাছে ধবল রোগ, কুষ্ঠরোগ, উন্মাদনা এবং সকল খারাপ ব্যাধি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

আল্লাহর বান্দারা, “নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয়স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন এবং তিনি নিষেধ করেন অশ্লীলতা, অসৎকাজ ও সীমালঙ্ঘন করতে। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন যাতে তোমরা শিক্ষাগ্রহণ করো।” [সুরা নাহল: ৯০] তোমরা মহান প্রতাপান্বিত আল্লাহকে স্মরণ করো, তিনিও তোমাদের স্মরণ করবেন। তোমরা তাঁর নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো, তিনি তোমাদের বাড়িয়ে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহর জিকির সর্বাপেক্ষা মহান। আর তোমাদের কর্মাবলি সম্পর্কে আল্লাহ অবহিত রয়েছেন।

·উৎস: www.islamancient(ডট)com/التحذير-من-جماعة-التبليغ/।

ভাষান্তর: মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ মৃধা

www.facebook.com/SunniSalafiAthari

Post a Comment

0 Comments