সুন্দরী মেয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মানুষকে আল্লাহর পথে
নিয়ে আসার কী সুন্দর অভিনব কৌশল..! 
 শায়খ আব্দুল ওয়াহিদ (রহঃ) ছিলেন বিখ্যাত বুযুর্গের একজন।
তিনি বলেন, আমার একবার খুব ঘুমের চাপ হল। ফলে রাত্রের নিয়মিত তাসবীহগুলো পড়তে ছুটে
গেল। তখন স্বপ্নে আমি সবুজ রেশমী পোশাক পরিহিতা এক অপূর্ব সুন্দরী যুবতীকে দেখলাম।
তার পায়ের জুতাগুলো পর্যন্ত তাসবীহ পাঠ করছে। সে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলছে, তুমি আমাকে
পাওয়ার চেষ্টা কর, আমি তোমাকে পাওয়ার চেষ্টা করছি। অতঃপর সে কয়েকটি প্রেমমূলক কবিতা
পাঠ করল। এই স্বপ্ন দেখে আমি প্রতিজ্ঞা করলাম, রাত্রে আর কখনো ঘুমাব না। অতঃপর তিনি
দীর্ঘ চল্লিশ বছর পর্যন্ত এশার ওযূ দিয়ে ফজরের ছালাত আদায় করেন।[01] 
 [01]. ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৫২, (উর্দূ), পৃঃ
৬২।
জনৈক বুযুর্গ বলেন, এক রাত্রিতে গভীর ঘুমের কারণে আমি
জেগে থাকতে পারলাম না। ঘুমিয়ে পড়লাম। স্বপ্নে এক অপূর্ব সুন্দরী মেয়েকে দেখলাম। এমন
মেয়ে আমি কখনো জীবনে দেখিনি। তার দেহ থেকে তীব্র সুগন্ধি ছড়াচ্ছে। এমন সুগন্ধি আমি
কখনো অনুভব করিনি। সে আমাকে একটি কাগজের টুকরা দিল। তাতে কবিতার তিনটি চরণ লেখা ছিল।
যেমন- তুমি নিদ্রার স্বাদে বিভোর হয়ে জান্নাতের বালাখানা সমূহ ভুলে গেছ, যেখানে তোমাকে
চির জীবন থাকতে হবে, যেখানে কখনো মৃত্যু আসবে না। তুমি ঘুম হতে উঠ, কুরআন তেলাওয়াত
কর, তাহাজ্জুদ ছালাতে কুরআন তেলাওয়াত করা ঘুম হতে অনেক উত্তম। তিনি বলেন, এই ঘটনার
পর হতে আমার কখনো ঘুম আসে না। কবিতাগুলো স্মরণ হয় আর ঘুম দূরিভূত হয়ে যায়।[02] 
[02]. ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৫৩, (উর্দূ), পৃঃ ৬৩
পর্যালোচনা : কী চমৎকার
রোমাঞ্চকর উপন্যাস! সুন্দরী মেয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মানুষকে আল্লাহর পথে নিয়ে আসার কী
সুন্দর অভিনব কৌশল! আল্লাহর ভয় ও ইসলামী বিধানের আনুগত্যের কোনই প্রয়োজন নেই। শুধু
সুন্দরী নর্তকীকে পাওয়ার জন্য সে ইবাদত করবে। এটা কি কোন ইসলামী সভ্যতা?
মুসলিম
বিশ্বের বরেণ্য মনীষীদের ইবাদতী জীবন সম্পর্কে উদ্ভট আজগুবি কাহিনিঃ
 ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) ত্রিশ বছর কিংবা চল্লিশ বছর কিংবা
পঞ্চাশ বছর এশা ও ফজর ছালাত একই ওযূতে পড়েছেন।[01] [01]. ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৬০, (ঊর্দূ),
পৃঃ ৬৮। 
তাঁর সম্পর্কে আরো বলা হয়েছে, ওযূর পানি ঝরার সময় তিনি
বুঝতে পারতেন এর সাথে কোন্ পাপ ঝরে যাচ্ছে।[02]
[02]. ফাযায়েলে আমল (বাংলা), পৃঃ ৭৮।
 সাঈদ ইবনু মুসাইয়িব (রহঃ) পঞ্চাশ বছর পর্যন্ত এশা ও
ফজরের ছালাত একই ওযূ দ্বারা পড়েছেন।[03] 
[03]. ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৬০; (উর্দূ), পৃঃ ৬৮।
 চল্লিশ জন তাবেঈ সম্পর্কে অসংখ্য সূত্রে বর্ণিত হয়েছে
যে, তারা এশা ও ফজর একই ওযূতে পড়তেন।[04] 
[04]. ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৬০, (উর্দূ), পৃঃ ৬৮।
ইমাম শাফেঈ (রহঃ) রামাযান মাসে ছালাতের মধ্যে পবিত্র
কুরআন ৬০ বার খতম করতেন।[05] 
[05]. ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৬১, (উর্দূ), পৃঃ ৬৮।
 ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) দৈনিক ৩০০ রাক‘আত ছালাত
আদায় করতেন। ৮০ বছর বয়সে তিনি দৈনিক ১৫০ রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন।[06] 
[06]. ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৬১, ১৫৮, (উর্দূ), পৃঃ ৬৬
ও ৬৮।
 সাঈদ ইবনু যুবাইর (রহঃ) এক রাক‘আতে পুরা কুরআন খতম করতেন।[07] 
[07]. ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৫৮, (উর্দূ), পৃঃ ৬৬।
আবু আত্তার সুলামী (রহঃ) চল্লিশ বছর পর্যন্ত সারা রাত
ক্রন্দন করে কাটাতেন এবং দিনে সর্বদা ছিয়াম পালন করতেন।[08] 
[08]. ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৬১, (উর্দূ), পৃঃ ৬৮।
 বাকী ইবনু মুখাল্লাদ (রহঃ) দৈনিক তাহাজ্জুদ ও বিতর ছালাতের
তের রাক‘আতে কুরআন খতম করতেন।[09] 
[09]. ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৬০, (উর্দূ), পৃঃ ৬৭।
 মুহাম্মাদ ইবনু সালামা ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ
(রহঃ)-এর ছাত্র ছিলেন । তিনি ১০৩ বছর বয়সে মারা যান। ঐ বয়সে তিনি প্রতিদিন ২০০ রাক‘আত
করে ছালাত আদায় করতেন। দীর্ঘ চল্লিশ বছর তার একটানা তাকবীরে তাহরীমা ছুটেনি। মায়ের
মৃত্যুর কারণে মাত্র একবার ছুটে গিয়েছিল। জামা‘আতে না পড়ার জন্য তিনি ঐ ছালাত ২৫ বার
পড়েন।[10][10]. ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১২৫-১২৬, (উর্দূ), পৃঃ ৪৬।
 পর্যালোচনা : সুধী পাঠক! উক্ত কাহিনীগুলো মুসলিম বিশ্বের বরেণ্য
মনীষীদের সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রশ্ন হল, তারা কি আদৌ এভাবে তাদের ইবাদতী জীবন
অতিবাহিত করেছেন? তাদের দ্বারা কি এ ধরনের বাড়াবাড়ি সম্ভব? যেমন- (ক) দীর্ঘ ৪০/৫০ বছর
যাবৎ এশার ছালাতের ওযূ দ্বারা ফজরের ছালাত আদায় করা। বছরের পর বছর একটানা ছিয়াম পালন
করা ইত্যাদি। মানবীয় কারণ উল্লেখ না করে যদি প্রশ্ন করা হয়- শরী‘আতে এভাবে সারা রাত
ধরে ইবাদত করার অনুমোদন আছে কি? রাসূল (ছাঃ) ও তার ছাহাবীদের পক্ষ থেকে এরূপ কি কোন
নযীর আছে? আল্লাহ তা‘আলা রাসূল (ছাঃ)-কে রাত্রের কিছু অংশ বাদ দিয়ে ইবাদত করতে বলেছেন
(মুয্যাম্মিল ২-৪)। রাসূল (ছাঃ) ছাহাবী আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনু আছ (রাঃ)-কে লক্ষ্য
করে বলেন, صُمْ وَأَفْطِرْ وَقُمْ وَنَمْ فَإِنَّ لِجَسَدِكَ عَلَيْكَ حَقًّا وَإِنَّ لِعَيْنِكَ عَلَيْكَ حَقًّا وَإِنَّ لِزَوْجِكَ عَلَيْكَ حَقًّا ‘তুমি ছিয়াম পালন কর আবার ছিয়াম ছেড়ে দাও, তুমি রাত্রে
ইবাদত কর আবার ঘুমাও। কারণ তোমার উপর তোমার শরীরের হক আছে, তোমার উপর তোমার দুই চোখের
হক আছে, অনুরূপ তোমার উপর তোমার স্ত্রীর হক আছে’।[11] 
[11]. ছহীহ বুখারী হা/৫১৯৯, ২/৭৮৩ পৃঃ, (ইফাবা হা/৪৮২৪,
৮/৪৭৪ পৃঃ), ‘বিবাহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ ৮৮; মিশকাত হা/২০৫৪, পৃঃ ১৭৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত
হা/১৯৫৬, ৪/২৫৩ পৃঃ, ‘ছিয়াম’ অধ্যায়, ‘নফল ছিয়াম’ অনুচ্ছেদ।
 রাসূল (ছাঃ)
অন্য হাদীছে বলেন, ‘যে ব্যক্তি সর্বদা ছিয়াম পালন করে তার ছিয়ামের কোন মূল্য নেই। একথা
তিনি দুইবার কিংবা তিনবার বলেন’।[12]
[12]. ছহীহ বুখারী হা/১৯৭৭, ১/২৬৫ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৮৫৩,
৩/২৭৭ পৃঃ), ‘ছিয়াম’ অধ্যায়, ‘ছিয়ামের ক্ষেত্রে পরিবারের হক’ অনুচ্ছেদ-৫৬- فَقَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ صَامَ مَنْ صَامَ الأَبَدَ لاَ صَامَ مَنْ صَامَ الأَبَدَ لاَ صَامَ مَنْ صَامَ الأَبَدَ.।
(খ) প্রতিদিন ৩০০, ২৫০ কিংবা ২০০ রাক‘আত ছালাত আদায় করা।
রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম এ ধরনের কোন ইবাদত করেছেন মর্মে প্রমাণ নেই। জানা আবশ্যক
যে, রাসূল (ছাঃ)-এর তরীক্বা ব্যতীত যেকোন ইবাদত প্রত্যাখ্যাত।[13]
[13]. ছহীহ মুসলিম হা/৪৫৯০, ২/৭৭, (ইফাবা হা/৪৩৪৪),
‘বিচার’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৮।
বরং শরী‘আতের বিধিবদ্ধ নিয়মকে অবজ্ঞা করে যে বেশী বেশী
ইবাদত করবে নিঃসন্দেহে সে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর উম্মত থেকে বহিষ্কৃত হবে। কারণ রাসূল
(ছাঃ) ইবাদতের কথা জেনে তিন ব্যক্তি খুব কম মনে করেছিল এবং তারা বেশী বেশী ইবাদত করতে
চেয়েছিল। এদের ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ) বলে দিলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত থেকে মুখ
ফিরিয়ে নিল, সে আমার অন্তর্ভুক্ত নয়’।[14]
[14]. ছহীহ বুখারী হা/৫০৬৩, ২/৭৫৭ পৃঃ, (ইফাবা হা/৪৬৯৭,
৮/৩৮১ পৃঃ), ‘বিবাহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১; ছহীহ মুসলিম হা/৩৪৬৯, ‘বিবাহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১
এবং হা/২৫০০; মিশকাত হা/১৪৫, পৃঃ ২৭; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৩৭, ১/১০৯ পৃঃ - أَمَا وَاللهِ إِنِّيْ لَأَخْشَاكُمْ لِلَّهِ وَأَتْقَاكُمْ لَهُ لَكِنِّيْ أَصُوْمُ وَأُفْطِرُ وَأُصَلِّيْ وَأَرْقُدُ وَأَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِيْ فَلَيْسَ مِنِّي।
(গ) ছালাতে কুরআন খতম করা। এক রাক‘আতে পুরো কুরআন খতম করা এবং রামাযান
মাসে শুধু তারাবীহর ছালাতে ৬০ বার খতম করা। এ হিসাবে প্রত্যেক রাতে দুইবার করে খতম
করতে হয়েছে। এটা সম্ভব কি-না তা যাচাই করবেন পাঠকবৃন্দ। তবে স্বয়ং রাসূল (ছাঃ)ও এভাবে
কুরআন তেলাওয়াত করে রাতের ছালাত আদায় করেননি। তিনি একবার এক রাক‘আতে সর্বোচ্চ সূরা
বাক্বারাহ, নিসা ও আলে ইমরান পড়েছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।[15]
[15]. ছহীহ মুসলিম হা/১৮৫০, ১/২৬৪ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৬৮৪),
‘মুসাফিরদের ছালাত’ অধ্যায়, ‘রাত্রির ছালাতে ক্বিরাআত লম্বা করা মুস্তাহাব’ অনুচ্ছেদ-২৭।
 জনৈক ছাহাবী
সাত দিনের কমে কুরআন খতম করতে চাইলে রাসূল (ছাঃ) তাকে অনুমতি দেননি।[16]
[16]. ইবনু মাজাহ হা/১৩৪৬, পৃঃ ৯৫ ও ৯৬, ‘ছালাত’ অধ্যায়,
‘কয় দিনে কুরআন খতম করা ভাল’ অনুচ্ছেদ-১৭৮।
তিনি তিন দিনের কমে কুরআন খতম করতে নিষেধ করেছেন।[17]
[17]. তিরমিযী হা/২৯৪৯, ২/১২৩ পৃঃ, ‘ক্বিরাআত’ অধ্যায়ের
শেষ হাদীছ; ইবনু মাজাহ হা/১৩৪৭; মিশকাত হা/২২০১, পৃঃ ১৯১, ‘ফাযায়েলুল কুরআন’ অধ্যায়,
‘কুরআন পাঠের আদব’ অনুচ্ছেদ; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২০৯৭, ৫/৩৬ পৃঃ।
তাছাড়া আয়েশা (রাঃ) বলেন,
وَلاَ أَعْلَمُ نَبِىَّ اللهِ r قَرَأَ الْقُرْآنَ كُلَّهُ فِى لَيْلَةٍ وَلاَ صَلَّى لَيْلَةً إِلَى الصُّبْحِ وَلاَ صَامَ شَهْرًا كَامِلاً غَيْرَ رَمَضَانَ.
রাসূল (ছাঃ) কোন এক রাত্রিতে পুরো কুরআন খতম করেছেন,
কোন রাত্রে পুরো রাত ছালাত আদায় করেছেন এবং রামাযান মাস ছাড়া অন্য কোন মাসে সম্পূর্ণ
মাস ছিয়াম পালন করেছেন মর্মে আমি জানি না’।[18] [18]. ছহীহ মুসলিম হা/১৭৭৩, ১/২৫৬ পৃঃ,
(ইফাবা হা/১৬০৯), ‘মুসাফিরদের ছালাত’ অধ্যায়, ‘রাত্রির ছালাত ও যে ছালাত না পড়ে ঘুমে
যায়’ অনুচ্ছেদ-১৮; মিশকাত হা/১৫২৭, পৃঃ ১১১, ‘বিতর’ অনুচ্ছেদ; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১১১৮,
৩/১৩১ পৃঃ।
এই নিয়মতান্ত্রিক নির্ধারিত ইবাদত করার মাধ্যমেই তিনি
হয়েছেন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ তাক্বওয়াশীল।[19]
[19]. ছহীহ বুখারী হা/৫০৬৩, ২/৭৫৭ পৃঃ, (ইফাবা হা/৪৬৯৭,
৮/৩৮১ পৃঃ), ‘বিবাহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১; মিশকাত হা/১৪৫, পৃঃ ২৭; বঙ্গানুবাদ মিশকাত
হা/১৩৭, ১/১০৯ পৃঃ।
প্রশ্ন হল- যে সমস্ত মহা মনীষী সম্পর্কে উক্ত অলীক কাহিনী
রচনা করা হয়েছে, তারা কি শরী‘আতের এই বিধানগুলো জানতেন না? তারা কি রাসূল (ছাঃ) ও জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ছাহাবীদের
চেয়ে বেশী পরহেযগার হতে চেয়েছিলেন? (নাঊযুবিল্লাহ)। বিশেষ করে ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)
সম্পর্কে যে বাড়াবাড়ি করা হয়েছে তা আসলেই দুঃখজনক। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমের
অন্তর্ভুক্ত বইয়ে কিভাবে তা সম্পৃক্ত হতে পারে? বলা যায় তাদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করার
জন্যই একশ্রেণীর স্বার্থান্বেষী মহল এ সমস্ত অলীক কাহিনী আবিষ্কার করেছে।
 জনৈক বুযুর্গ
ব্যক্তির পায়ে ফোঁড়া হয়েছিল। ডাক্তারগণ পরামর্শ দিলেন, পা না কাটা হলে জীবনের হুমকি
রয়েছে। তখন তার মা বললেন, যখন ছালাতে দাঁড়াবে, তখন কেটে নিতে হবে। অতঃপর তিনি যখন ছালাতে
দাঁড়ালেন তখন তারা তার পা কেটে ফেললে তিনি মোটেও টের পেলেন না।[ ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ১৫৬, (উর্দূ), পৃঃ ৬৫।]
 উল্লেখ্য যে, আলী (রাঃ) সম্পর্কে এধরনের একটি কাহিনী
প্রচার করা হয় যে, যুদ্ধে তার পায়ে তীর বিদ্ধ হয়েছিল। সেই তীর বের করা যাচ্ছিল না।
অবশেষে তিনি ছালাতে দাঁড়ালে তার পা থেকে তীর বের করা হল, অথচ তিনি টের পেলেন না। এই
কাহিনীও মিথ্যা।
 “ক্ষুধার্থ এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহর আলাইহি
ওয়া সাল্লাম এর কবরের পার্শ্বে গিয়ে খাদ্যের আবেদন করে ঘুমিয়ে পড়লেন। সেই অবস্থায় তার
নিকট রুটি আসল, ঘুমন্ত অবস্থায় ঐ ব্যক্তি অর্ধেক রুটি খাওয়ার পর জাগ্রত হয়ে বাকী অর্ধেক
রুটি খেলেন।”[ ফাযায়েলে হ্জ্জ, পৃষ্ঠাঃ ১৫৫- ১৫৬।]
 পর্যালোচনাঃ হাদিস গ্রন্থ পড়েন, জীবিত রাসুল (সাঃ) স্বয়ং ক্ষুধার তাড়নায় কষ্ট
পেয়েছেন। বহু সাহাবী ক্ষুধায় পেটে পাথর চাপা দিয়ে রাখতেন। উপরের ঘটনা যে পুরা হাদিস
বিরোধী! জীবিত রাসুল (সাঃ) কাওকে রুটি দিতে পারলেন না , কবর থেকে তিনি কিনা রুটি দিলেন?
রিজিকের মালিক আল্লাহ রুটি দেয়ার মালিক আল্লাহ; তারা আল্লাহর কাছে না চেয়ে চাইলো রাসুল
(সাঃ) এর কাছে যিনি কিনা কবরে!সমগ্র দুনিয়ায় এই ঘটনা দ্বিতীয় আর ঘটল না? কেন ঘটল না?
 কোন ব্যক্তি হুজুরের রওজায় আরজ করায় রওজা হতে হুজুরের
হস্ত মোবারক বের হয়ে আসলে উহা চুম্বন করে সে ধন্য হল। নব্বই হাজার লোক উহা দেখতে পেল।
আবদুল কাদের জিলানীও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।[ ফাযায়েলে হজ্জ, পৃষ্ঠাঃ ১৫৯ ]
৯০ হাজার লোক নাকি দেখেছে! মদিনায় সেই সময় ৯০ হাজার লোক দেখেছে?
আপনি মদিনায় গিয়ে একটু গবেষণা দেন তো। বা কোনো আত্মীয়
মদিনায় থাকলে খোজ পাঠান তো আদৌ এই ঘটনা ঘটেছে কিনা।
 জনৈক মহিলা তিন জন খাদেম কর্তৃক মার খাওয়ার পর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবরের পার্শ্বে গিয়ে বিচার প্রার্থনা করলে, আওয়াজ
আসল ধৈর্য ধর, ফল পাবে। এর পরেই অত্যাচারী খাদেমগণ মারা গেল।[ ফাযায়েলে হজ্জ, পৃ: ১৫৯। ]
 পর্যালোচনাঃ সাহায্য চাইতে হবে আল্লাহর কাছে। অন্তত দুনিয়ায় জীবিত মানুষ যাদের
সাহায্য করার ক্ষমতা আছে তাদের কাছে সাহায্য চাওয়া যায়। কিন্তু কিতাবের ঘটনায় সাহায্য
চাওয়া হলো কবরে রাসুল (সাঃ) এর কাছে। 
রাসুল সঃ এর নামে মিথ্যাচারঃ
 নবী (সঃ) বলেন, যদি কোন ব্যক্তি এক ওয়াক্ত ছালাত ছেড়ে
দেয় আর ইতিমধ্যে ঐ ছালাতের ওয়াক্ত পার হয়ে যায় এবং ছালাত আদায় করে নেয়, তবুও তাকে এক
হুকবা জাহান্নামে শাস্তি দেওয়া হবে। এক হুকবা হল, ৮০ বছর। আর প্রত্যেক বছর ৩৬০ তিন।
আর প্রত্যেক দিন এক হাযার বছরের সমান, যেভাবে তোমরা গণনা কর। উল্লেখ্য, উক্ত হিসাব
অনুযায়ী সর্বমোট দুই কোটি অষ্টাশি লক্ষ বছর হয়।[1] 
[1]. ফাযায়েলে
আমল (উর্দূ), পৃঃ ৩৯; বাংলা, পৃঃ ১১৬।
 তাহক্বীক : বর্ণনাটি
মিথ্যা ও বানোয়াট। উক্ত বক্তব্য তাবলীগ জামা‘আতের অনুসরণীয় গ্রন্থ ফাযায়েলে আমল-এর
ফাযায়েলে নামায অংশে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে কোন প্রমাণ পেশ করা হয়নি। বরং
বলা হয়েছে, كَذَا فِىْ مَجَالِسِ الْأَبْرَارِ قُلْتُ لَمْ أَجِدْهُ فِيْمَا عِنْدِىْ مِنْ كُتُبِ الْحَدِيْثِ ‘এভাবেই ‘মাজালিসুল আবরারে’ উল্লেখ করা হয়েছে। তবে
আমার নিকটে হাদীছের যে সমস্ত গ্রন্থ রয়েছে, তার মধ্যে আমি উহা পাইনি’।[2] লেখক নিজেই
যেহেতু স্বীকার করেছেন, সেহেতু আর মন্তব্যের প্রয়োজন নেই। তবে দুঃখজনক হল, স্পষ্ট হওয়ার
পর কেন তা রাসূল (ছাঃ)-এর নামে বর্ণনা করতে হবে? এটা নিঃসন্দেহে তাঁর নামে মিথ্যাচারের
শামিল।[2]. ফাযায়েলে
আমল (উর্দূ), পৃঃ ৩৯; বাংলা, পৃঃ ১১৬।
 জ্ঞাতব্য
: ছহীহ হাদীছের দৃষ্টিকোণ থেকেও কথাটি সঠিক নয়। কারণ রাসূল
(ছাঃ) বলেন, ঘুম বা ভুলের কারণে যে ব্যক্তির ছালাত ছুটে যাবে, তার কাফ্ফারা হল যখন
স্মরণ হবে তখন তা পড়ে নেয়া’।[3] এছাড়া রাসূল (ছাঃ) এবং ছাহাবায়ে কেরাম খন্দকের যুদ্ধের
দিন সূর্য ডুবার পর আছরের ছালাত আদায় করেন। অতঃপর মাগরিবের ছালাত আদায় করেন।[4] তাছাড়া
ফজর ছালাতও একদিন তাঁরা সূর্যের তাপ বাড়ার পরে পড়েছেন।[5] তাহলে তাঁদের শাস্তি কত বছর
হবে? (নাঊযুবিল্লাহ)। 
Ref..
[3]. ছহীহ বুখারী হা/৫৯৭, ১/৮৪ পৃঃ, (ইফাবা হা/৫৭০,
২/৩৫ পৃঃ), ‘ছালাতের ওয়াক্ত সমূহ’ অধ্যায়, ‘যে ব্যক্তি ছালাত ভুল করে’ অনুচ্ছেদ-৩৭;
ছহীহ মুসলিম হা/১৫৯২, ১৫৯৮, ১৬০০, ১/২৩৮, (ইফাবা হা/১৪৩১ ও ১৪৩৬), ‘মসজিদ সমূহ’ অধ্যায়,
অনুচ্ছেদ-৫৬; মিশকাত হা/৬০৩, পৃঃ ৬১ এবং হা/৬৮৪, পৃঃ ৬৬-৬৭; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৩৩,
২/২০৮ পৃঃ।
[4]. ছহীহ বুখারী হা/৫৯৬ ও ৫৯৮, ১/৮৪ পৃঃ, (ইফাবা হা/৫৬৯,
২/৩৫ পৃঃ), ‘ছালাতের সময়’ অধ্যায়, ‘ওয়াক্ত পার হয়ে যাওয়ার পর রাসূল (ছাঃ) জামা‘আতের
সাথে ছালাত আদায় করেছেন’ অনুচ্ছেদ-৩৬; ছহীহ মুসলিম হা/১৪৬২, ১/২২৭, (ইফাবা হা/১৩০৩),
‘মসজিদ সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩৭।
[5]. ছহীহ মুসলিম হা/১৫৯২, ১/২৩৮ পৃঃ, (ইফাবা হা/১৪৩১),
‘মসজিদ সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫৬; মিশকাত হা/৬৮৪, পৃঃ ৬৬-৬৭; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬৩৩,
২/২০৮ পৃঃ।
 অনেকেই যুক্তি দেখিয়ে ফাযায়েলে আমলের সাথে কুতুবুস
সিত্তাহের তুলনা করেন তাদের জন্য এন্টিভনামঃ-
 অনেকেই ফাযায়েলে আমল গ্রন্থের সাথে সিহাহ সিত্তাহের
হাদিস গ্রন্থের সাথে তুলনা করে এই যুক্তি দেখায় যে, সিহাহ সিত্তাহের (আমরা বলি কুতুবুস
সিত্তাহ) কিতাবেও তো জাল,জয়ীফ হাদিস আছে। তাই বলে কি কুতুবুস সিত্তাহ/ সিহাহ সিত্তাহের
কিতাবগুলোকে বাতিল বলবো, ফাযায়েলে আমলেও নাহয় কিছু ভূল ক্রুটি আছে তাই বলে ফাযায়েলে
আমল একেবারে বাতিল বলা কি ঠিক হবে..?? তাদেরকে বলবো ভাই যুক্তিতো মাশা-আল্লাহ ভালোই
দেখাইলেন কিন্তু এই যুক্তি দেয়ার আগে বিবেক দিয়ে একটু চিন্তা করে দেখেছেন কি..? কুতুবুস
সিত্তাহের কিতাব গুলোতে যে জাল,জয়ীফ হাদিস বর্নিত হইছে সেগুলোর নিচে তাহক্বীকে স্পষ্ট
করে বলা আছে যে উক্ত হাদীস জাল,উক্ত হাদীস জয়ীফ, উক্ত হাদিসের অমুক রাবির মধ্যে ভেজাল
আছে,উক্ত হাদিস বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত না এভাবে করে তাহক্বীক করা আছে। কিন্তু ফাযায়েলে
আমলের কোন ঘটনা,মাসয়ালার বর্ণনার নিচে কি তাহক্বীক করা আছে যে উক্ত ঘটনা সহিহ সনদে
বর্ণিত না,উক্ত ঘটনা সম্পর্কে বিশুদ্ধ প্রমান পাওয়া যায় না, উক্ত ঘটনা কুরআন ও হাদিসের
সাথে সাংঘর্ষিক,ফাযায়েলে আমলে এভাবে করে তো কোনো ব্যাখ্যা দেয়া নাই।তাহলে আপনি কিসের
সাথে কিসের তুলনা করেন...??
 
0 Comments