▌তাবলিগ জামাত সম্পর্কে ইমামদ্বয়ের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন? [শেষ পর্ব]
·❏ তাবলিগিদের ডিফেন্সে মিনার সাহেবের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড ও অপকৌশল:
মিনার সাহেব সালাফিদের বিরুদ্ধে আপত্তি তুলেছেন, “আজকে
কেউ যদি তাবলিগ জামাতের মুখলিস ভাইদের প্রতি ইনসাফ করে কিছু কথা বলে, তাদের ব্যাপারে
ভালো কিছু বলা হয়েছে এমন ২/১টি ফতোয়া উল্লেখ করে, তবে তার "মানহাজ শুদ্ধ নেই"
বলে চিৎকার শুরু হয়।” (যদ্দৃষ্ট – সংকলক)
খেয়াল করে দেখুন, ন্যায়ের ধ্বজাধারী জনাব মিনার তাবলিগিদের
‘মুখলিস ভাই’ ডেকে সালাফিদের দুর্নাম করছেন। সালাফিদের দোষ কী? তাবলিগ জামাতের ব্যাপারে
ভালো কিছু বলা হয়েছে এমন ২/১টি ফতোয়া উল্লেখ করা হলে তারা ‘মানহাজ শুদ্ধ নেই’ বলে চিৎকার
শুরু করে। এটাই সালাফিদের দোষ। অথচ সালাফিরা কী করেছে? তারা তাবলিগ জামাতের ব্যাপারে
প্রাজ্ঞ সালাফি উলামাদের বক্তব্যগুলো প্রচার করেছে। এতেই সালাফি দাবিদার মিনার সাহেবের
বদহজম হয়ে গেছে। আর তাই তিনি সালাফিদের বিরুদ্ধে এসব ফালতু কথা বলা আরম্ভ করেছেন। এখান
থেকে আমরা তার কথায় ডাবল স্ট্যান্ডার্ড দেখতে পাই। তিনি নিজে উলামাদের দুএকটা ফতোয়া
এনেছেন, বিধায় তিনি নিজেকে নির্দোষ মনে করছেন। কিন্তু সেই তিনিই সালাফিদের নির্দোষ
ভাবতে পারছেন না, যারা কিনা তাদের সালাফি উলামাদের অনুসরণ করে দুএকটা নয় বরং সিনিয়র
উলামাগণের ডজনখানেক ফতোয়া এনেছে তাবলিগ জামাতের বিরুদ্ধে।
এসব ফতোয়া প্রচার করে সালাফিরা কী দোষ করেছে, সেটাই দেখুন,
ইনসাফওয়ালা জনাব মিনার সাহেবের বক্তব্য থেকে। মিনার সাহেব এ আলোচনার প্রসঙ্গেই লিখেছেন,
“বিন বায(র.), ইবনু উসাইমিন(র.) প্রমুখ মহান শায়খরা যেসব সমালোচনা করতেন, সেই সমালোচনাগুলো
ছিল ইলমী, গঠনমূলক ও সংশোধনমূলক। এর বিপরীতে বর্তমানে আমরা এমন অনেক কিছু দেখছি যা
মূলত রাজনৈতিক ও দমনমূলক এবং ইসলামী যত তৎপরতা আছে সেগুলোকে রুখে দেয়ার চেষ্টা।” (যদ্দৃষ্ট
– সংকলক)
আশ্চর্য! মিনার সাহেবের অপকৌশলের তারিফ করতে হয়। কৌশলে
তিনি নিজেকে ইবনু বায ও ইবনু উসাইমানের মতো মুত্তাকি সালাফি ইমামদ্বয়ের অনুসারী প্রমাণ
করে সালাফিদের বিরুদ্ধে লেগে গেছেন। যারা কিনা ইমাম ইবনু বায রাহিমাহুল্লাহর মতো মুত্তাকি
ইমামদের অনুসরণ করেই তাবলিগ জামাতকে বিদাতি বলে প্রচার করেছে। এর মাধ্যমে মিনার সাহেব
সুকৌশলে অতি ধূর্ততার সাথে ইমাম ইবনু বায ও ইমাম ইবনু উসাইমিনের যোগ্য ছাত্রবর্গ ও
উত্তরসূরীদের বিরুদ্ধে জনগণকে প্ররোচিত করছেন। ফাওযান, লুহাইদান, বর্তমান গ্র্যান্ড
মুফতি আব্দুল আযিয, আব্বাদ, আব্দুল আযিয আর-রাজিহি, রাবি আল-মাদখালি, উবাইদ আল-জাবিরি,
সালিহ আস-সুহাইমি, সালিহ আল-উসাইমি প্রমুখের মতো যুগশ্রেষ্ঠ আলিম বেঁচে রয়েছেন, যাঁদের
বাদ দিয়ে উম্মাহকে কল্পনা করা যায় না, তাঁরা প্রত্যেকেই তাবলিগ জামাতকে বিদাতি ফের্কা
বলেছেন। ইনারা প্রত্যেকেই মিনার সাহেবের মতো সালাফি দাবিদারদের কথা অনুযায়ী রাজনৈতিক
ও দমনমূলক কাজ করে যাচ্ছেন! লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ।
সুকৌশলে তাবলিগিদের মজলুম প্রমাণ করে কাঁদোকাঁদো আবেগী
বক্তব্য দিয়ে জনগণের সিম্প্যাথি আদায় করে নিচ্ছেন! নিজেকে ইনসাফকারী, মজলুমের পাশে
দাঁড়ানো মহানুভব মানুষ প্রমাণ করছেন। আর এদিকে তিনি নিজে যে সালাফিদের প্রতি মিথ্যা
অভিযোগে বিনা দোষে জুলুম করে চলেছেন, সে খেয়াল বহুজনেরই নেই। এ ধরনের ধূর্ততার ব্যাপারে
আমাদের ইমামগণ বহুপূর্বে বলে গিয়েছেন। কারণ ধূর্ত বিদাতিদের একটি অন্যতম অপকৌশল হলো—তারা
বড়ো বড়ো আলিমের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করে, আর তাঁদের ছাত্র ও অনুসারীদের প্রতি বিদ্বেষ
জাহির করে। অনুরূপভাবে তারা লোকদের কাছে দাবি করে যে, তারা অমুক অমুক বড়ো বড়ো আলিমের
সাথে রয়েছে। আর নিজেদের মনগড়া মতাদর্শ প্রচার করে তারা দাবি করে, এগুলো মূলত ওই বড়ো
বড়ো আলিমদেরই মতাদর্শ।
আল-ইমাম আল-মুহাদ্দিস আবু বাকার আব্দুল ওয়াহহাব আল-ওয়াররাক
রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ৩৭৮ হি.) কে বলা হলো, “যদি কেউ আবু তালিব এবং আল-মাররুযি সম্পর্কে
মন্দ বলে, তার থেকে দূরে থাকাই কি উত্তম নয়?” তিনি উত্তর দিলেন, “হ্যাঁ, যে কেউ ইমাম
আহমাদের ছাত্রদের বিরুদ্ধে কথা বলে, তাকে সন্দেহ করো এবং অভিযুক্ত করো, কেননা সে খারাপ
কিছু গোপন করছে। নিশ্চয় সে আহমাদকে উদ্দেশ্য করছে।” [সিয়ারু আলামিন নুবালা; খণ্ড:
১৩; পৃষ্ঠা: ১৭৪; মুআসসাতুর রিসালাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২২ হি./২০০১ খ্রি.]
শাইখুস সুন্নাহ হাফিয ইমাম আবু নাসর আস-সিজযি রাহিমাহুল্লাহ
(মৃত: ৪৪৪ হি.) বলেন, “এখানে মক্কায় আমাদের সাথে এক লোক আছে যে হাদিস নিয়ে ব্যস্ত
থাকে, সে তার বেশিরভাগ সময় এই বলে চিল্লাচিল্লি করে যে, সে আশারি নয়। অতঃপর সে বলে,
‘আমি তাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তিবর্গ দেখেছি, এবং আমি (এমন আশারিকেও) দেখেছি যার পায়ের
নীচের ধুলা সৃষ্টি থেকে উত্তম।’ আশারিদের মধ্য থেকে কোনো লোক যখন শহরে আসত, তখন সে
তাকে অনুসরণ করত এবং কাছে টেনে নিত। আর আমাদের সঙ্গীদের মধ্য থেকে কোনো লোক যখন তার
নিকট গমন করত, তখন সে তার থেকে দূরে থাকত এবং তার থেকে সতর্ক করত। আর যখনই হাম্বালিদের
(আহলুস সুন্নাহ/আহলুল হাদিস/সালাফি) উলামাদের মধ্য থেকে কোনো একজন আলিমের কথা উল্লেখ
করা হতো, সে তার দোষ খুঁজত। এবং সে বলত, ‘আহমাদ উত্তম ব্যক্তি, কিন্তু তিনি তাদের দ্বারা
পরিবেষ্টিত রয়েছেন যারা মিথ্যা বলে।’ এটি ছিল তার একটি অপকৌশল, যা কেবল তাকেই পরিবেষ্টিত
করবে।” [যাবিদের অধিবাসীদের কাছে ‘আল-হারফ’ এবং ‘আস-সাওত’ অস্বীকারকারীদের রদস্বরূপ
ইমাম সিজযি রাহিমাহুল্লাহর পাঠানো চিঠি; পৃষ্ঠা: ২৩২; গৃহীত: http://aldhafiri(ডট)net/?p=767.]
ধূর্ত বিদাতিরা বড়ো বড়ো আলিমের নাম ফলাও করে প্রচার করে
এবং মানুষের সামনে নিজেদেরকে সেসব আলিমের ভক্ত দাবি করে। অথচ সে ওই আলিমদের আদর্শবিরোধী
বিদাতি মতাদর্শের দাওয়াত দিয়ে বেড়ায়, কিংবা এরকম বিদাতিদের গুণকীর্তন করে। আমরা দেখছি,
আমাদের মিনার ভাইও ওইসব ধূর্ত লোকদের রাস্তাতেই হাঁটছেন। তাই বলে কেউ ভাববেন না, মিনার
সাহেবকে আমি ‘বিদাতি’ বলেছি। আমরা বিনা দলিলে, বিনা উসুলে কাউকে তাবদি (বিদাতি আখ্যান)
করি না, যদিও বহু মানুষ আমাদেরকে এমনটিই মনে করে থাকে। আল্লাহর পানা, মাআযাল্লাহ।
·
❏ ইমাম ইবনু
বায ও ইমাম উসাইমিনের মানহাজ বনাম জনাব মিনারের মানহাজ:
আমরা আগেই দেখেছি, মিনার সাহেব লিখেছেন, “বিন বায(র.),
ইবনু উসাইমিন(র.) প্রমুখ মহান শায়খরা যেসব সমালোচনা করতেন, সেই সমালোচনাগুলো ছিল ইলমী,
গঠনমূলক ও সংশোধনমূলক। এর বিপরীতে বর্তমানে আমরা এমন অনেক কিছু দেখছি যা মূলত রাজনৈতিক
ও দমনমূলক এবং ইসলামী যত তৎপরতা আছে সেগুলোকে রুখে দেয়ার চেষ্টা।” (যদ্দৃষ্ট – সংকলক)
মিনার সাহেব সালাফিদের বিরুদ্ধে খড়্গ উত্তোলনপূর্বক
বিষবাক্যের তুবড়ি ছুটিয়েছেন তাঁর এক মন্তব্যে, “আমার সালাফিয়্যাহর সাথে '৯০ এর দশকে গড়ে ওঠা ভাতৃঘাতী
কট্টরপন্থার কোনো সম্পর্ক নেই। আমার ইমাম হচ্ছেন ইবন তাইমিয়া(র), ইবনুল কাইয়িম(র),
ইবন বায(র), ইবন উসাইমিন(র) প্রমুখ এবং পূর্বের অনেকে...। যারা ঈমানের জন্য অন্য একজন
মুসলিম ভাইকে ভালোবাসতে পারেনি, তাদের মতো দুর্ভাগা, কপালপোড়া আর কেউ নেই। আফসোসের
বিষয় হলো '৯০র দশক থেকে সালাফিয়্যাহর নাম করে এমন এক খালাফদের মতাদর্শ প্রচার শুরু
হয়েছে যা মূলত মুসলিম ভাইদেরকে ঘৃণা করে দূর দূর করে তাড়ানো শেখাচ্ছে, সাধারণ মানুষের
নিকট মুবারক সালাফী মানহাজকে এক বিকৃত দানবীয় চেহারা দিচ্ছে যেই চেহারা অন্য মুসলিম
ভাইকে সহ্য করতে পারে না, অথচ শাসকের শত হারাম কর্মকেও জাস্টিফাই করে দেয়। যেই বিকৃত
চেহারা প্রায় প্রতিটি ইস্যুতে জালিমের পক্ষ নেয় আর মাজলুম মুসলিম ভাইকে নির্মম বাক্যবাণে
ছিড়েখুড়ে ফেলে।... "জারহ-তাদিলের ইমাম" (!) কথাটা আপনার উদ্যেশ্যে না। যারা
ফেসবুকে রেফারেন্সের তুবড়ি ছুটিয়ে লাগাতার মাজলুম উলামাদের নামে কুৎসা রটায়, শাসকের
হারাম কাজকে হালকা করে উল্টো হারাম কর্মের সমালোচকদেরকে Outcast বানায়, মুসলিম আলেম
ও দাঈদের সামান্য কথাকে তিল থেকে তাল বানিয়ে নানা বাজে ট্যাগ দেয় -- ঐসব জ্ঞানী ভাইয়ের
জন্য যারা তাদের মূল্যবান জ্ঞানকে সঠিক জায়গায় কাজে লাগাতে পারেনি।” (যদ্দৃষ্ট – সংকলক)
মিনার সাহেব বহুক্ষণ থেকেই নিজেকে ইমাম ইবনু বায ও ইমাম
উসাইমিনের মানহাজের অনুসারী দাবি করে যাচ্ছেন, আর সালাফিদের মানহাজকে উক্ত ইমামদ্বয়ের
মানহাজ-পরিপন্থি বলে চলেছেন। কিন্তু আমাদের কাছে স্পষ্টরূপে প্রতিভাত হয়েছে, জনাব মিনার
নিজেই ইমামদ্বয়ের মানহাজ অনুসরণ করেন না। কবি বলেছেন, “কুল্লুই ইয়াদ্দাঈ ওয়াসলান লি
লাইলা, ওয়া লাইলা লা তুকির্রুহুম বি যাক; লাইলার সাথে মিলনের দাবি করে যায় সবাই, কিন্তু
লাইলামণি তাদের কথায় দেয় না যে সায়!”
দাবি করলে তার প্রমাণ লাগে। বিনা দলিলে দাবি মানা যায়
না। তাই আমরা ইমাম ইবনু বায ও ইমাম উসাইমিনের মানহাজ থেকে জনাব মিনারের মানহাজের যোজন-যোজন
দূরত্ব দেখাব এবং তৎসঙ্গে তার ভুয়ো দাবির অসারতাও প্রমাণ করব, ইনশাআল্লাহ। আর বিদাতিদের
ব্যাপারে ইমাম ইবনু বায ও ইবনু উসাইমিন রাহিমাহুমাল্লাহর মানহাজ কী ছিল তা বর্ণনার
পাশাপাশি সালাফিরা যে ইমামদ্বয়ের মানহাজের খেলাপ কাজ করেনি, তা আমরা প্রমাণ করে দিব,
ইনশাআল্লাহ।
·
এক. ইবনু বায ও ইবনু উসাইমিনের মানহাজ—বিদাতিদের ব্যাপারে
চুপ না থাকা এবং তাদের প্রকৃত অবস্থা বর্ণনা করে দেওয়া।
বিদাতিদের ব্যাপারে চুপ থাকা নিষিদ্ধ এবং তাদের প্রকৃত
অবস্থা বর্ণনা করা ওয়াজিব আখ্যা দিয়েছেন ইমাম ইবনু বায রাহিমাহুল্লাহ। ইমাম ইবনু বায
রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “মুসলিমদের আলিমদের ওপর প্রকৃত বিষয় বর্ণনা করা, প্রত্যেক দল
বা সংগঠনের সাথে (শরয়ি) বিতর্ক সম্পন্ন করা এবং সবাইকে ওই পথের ওপর চলতে নসিহত করা
ওয়াজিব, যে পথ স্বয়ং আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য চিত্রায়িত করেছেন, আর যে পথের দিকে
আমাদের নবি মুহাম্মাদ ﷺ আমাদেরকে আহ্বান করেছেন। যে ব্যক্তি এই পথের ব্যাপারে
সীমালঙ্ঘন করে, কিংবা ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে বা কেবল আল্লাহ জানেন এমন কোনো (গুপ্ত)
উদ্দেশ্যের কারণে নিজের জিদ ও হঠকারিতায় অটল থাকে, তাহলে যারা প্রকৃত বিষয়টি জানে তাদের
জন্য ওই ব্যক্তির সমালোচনা করা এবং তার থেকে সতর্ক করা ওয়াজিব। যাতে করে মানুষ এই ব্যক্তিদের
পথ বর্জন করে, আর যে ব্যক্তি প্রকৃত বিষয় জানে না সে তাদের দলে প্রবেশ না করে। নতুবা
তারা ওই অজ্ঞ ব্যক্তিকে পথভ্রষ্ট করবে এবং সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করে ফেলবে। যেই সঠিক
পথ অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ দিয়েছেন।” [ইমাম ইবনু বায রাহিমাহুল্লাহ,
মাজমুউ ফাতাওয়া ওয়া মাকালাতুম মুতানাওয়্যাআ; খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ২০৩; দারুল কাসিম, রিয়াদ
কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২০ হিজরি (১ম প্রকাশ)]
ইমাম ইবনু বায রাহিমাহুল্লাহ আরও বলেছেন, “পাপাচারী,
মূর্খ ও বিদাতির বিরুদ্ধে কথা বলা বর্জন করা এবং নীরব থাকা আলিমদের জন্য বৈধ নয়। কেননা
এটি একটি মারাত্মক গলদ। এটি অকল্যাণ ও বিদাত প্রসারিত হওয়ার অন্যতম কারণ। এটি কল্যাণ
কমে যাওয়া, কল্যাণ দূরীভূত হওয়া এবং সুন্নাহ অপসৃত হওয়ারও অন্যতম কারণ। সুতরাং আলিমদের
জন্য হক বলা, এর দিকে লোকদের আহ্বান করা, বাতিলকে রদ করা এবং এ থেকে লোকদেরকে সতর্ক
করা ওয়াজিব। তবে অবশ্যই তা হতে হবে শরয়ি ইলম ও জাগ্রত জ্ঞান সহকারে।” [প্রাগুক্ত; খণ্ড:
৬; পৃষ্ঠা: ৫৩]
তদ্রুপ ইমাম ইবনু উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “বিদাতিদের
সমালোচনা করা এবং তাদের ভুল মতাদর্শ বা বেঠিক মানহাজের সমালোচনা করা নসিহতের অন্তর্ভুক্ত,
গিবতের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং এটি আল্লাহ, তাঁর কিতাব, তাঁর রাসূল ও মুসলিমদের জন্য নসিহত
করার অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং আমরা যখন কোনো বিদাতিকে তার বিদাত প্রচার করতে দেখব, তখন
আমাদের জন্য আবশ্যক হলো এটা স্পষ্ট করে দেওয়া যে, সে বিদাতি। যাতে করে মানুষ তার অনিষ্ট
থেকে বেঁচে থাকতে পারে। আমরা যখন কোনো ব্যক্তিকে দেখব যে, তার সালাফদের আদর্শ বিরোধী
মতাদর্শ আছে, তখন আমাদের জন্য তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা আবশ্যক।
আমরা যখন কোনো মানুষকে দেখব যে, তার একটি স্পষ্ট মানহাজ
রয়েছে, যে মানহাজের মন্দ পরিণতি রয়েছে, তখন আমাদের জন্য তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা আবশ্যক।
যাতে করে মানুষ তার অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকতে পারে। এটা আল্লাহ, তাঁর কিতাব, তাঁর রাসূল
এবং মুসলিম জনসাধারণ ও তাদের শাসকবর্গের জন্য নসিহত করার অন্তর্ভুক্ত। হোক ওই বিদাতিদের
সমালোচনা ছাত্রদের মধ্যে, কিংবা অন্যান্য মজলিসে, তা গিবত নয়। আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত
এই বিদাত বা মতবাদ বা সালাফদের মানহাজ বিরোধী মানহাজ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা
করব, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের জন্য তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা ওয়াজিব থাকবে। যাতে করে
মানুষ তার মাধ্যমে ধোঁকাগ্রস্ত না হয়।” [ইমাম ইবনু উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ, লিকাআতুল
বাবিল মাফতুহ; লিকা নং: ১২০; গৃহীত: sahab(ডট)net]
আর তাইতো ইমাম ইবনু বায ও ইমাম ইবনু উসাইমিন রাহিমাহুমাল্লাহ
তাবলিগ জামাত ও মুসলিম ব্রাদারহুডকে বিদাতি আখ্যা দিয়ে তাঁদের ওয়াজিব দায়িত্ব পালন
করেছেন, যা আমরা পূর্বে দলিলপ্রমাণ সহকারে আলোকপাত করেছি। আর তাঁদের মতো প্রাজ্ঞ মুত্তাকি
আলিমগণের এরকম ফতোয়া প্রচার করে সালাফিরাও এই ওয়াজিব বিধান পালনে নিজেদের শামিল করে
নিয়েছে। কিন্তু ইমামদ্বয় ইবনু বায ও ইবনু উসাইমিনের মানহাজ অনুসরণের দাবিদার সুকৌশলী
মিনার সাহেব এই মানহাজের বিরোধিতা করেই এতকিছু লিখে চলেছেন এবং নিজেকে মজলুম জাহির
করে পাবলিকের সিম্প্যাথি নিয়ে সালাফিদের বিরুদ্ধে হামলে পড়েছেন!
·দুই. ইবনু বায ও ইবনু উসাইমিনের মানহাজ—বিদাতিদের সাথে
ওঠাবসা করাকে না-জায়েজ মনে করা।
বিদাতিদের সাথে ওঠাবসার করাকে ইমাম ইবনু বায রাহিমাহুল্লাহ
না-জায়েজ ফতোয়া দিয়েছেন। ইমাম ইবনু বাযকে প্রশ্ন করা হয়, “বিদাতিদের দারসগুলোতে তাদের
সাথে ওঠাবসা করা এবং তাদের সাথে অংশগ্রহণ করা কি জায়েজ?” তিনি উত্তরে বলেন, “তাদের
সাথে ওঠাবসা করা এবং তাদেরকে সঙ্গী বানানো জায়েজ নয়। বরং তাদের বিরোধিতা করা এবং তাদেরকে
বিদাত থেকে সতর্ক করা ওয়াজিব।” [মাজমুউ ফাতাওয়া ওয়া মাকালাতুম মুতানাওয়্যাআ, খণ্ড:
২৮; পৃষ্ঠা: ২৬৭]
অনুরূপভাবে ইমাম ইবনু উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন,
“বিদাতিদের বর্জন করা ওয়াজিব। কারণ আল্লাহ বলেছেন, ‘তুমি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী
কোনো জাতিকে এরূপ পাবে না, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে এমন ব্যক্তিদের
সাথে বন্ধুত্ব করে।’ (সুরা মুজাদিলা: ২২) কেননা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
সাহাবি কাব বিন মালিক ও তাঁর সঙ্গীদ্বয়কে বয়কট করেছিলেন, যখন তাঁরা তাবুক যুদ্ধে অংশ
না নিয়ে পেছনে থেকে গিয়েছিলেন। কিন্তু বিদাতিদের সাথে ওঠাবসা করায় যদি কোনো কল্যাণ
নিহিত থাকে, যেমন তাদের কাছে হক স্পষ্ট করা, তাদেরকে বিদাত থেকে সতর্ক করা প্রভৃতি,
তাহলে এতে কোনো সমস্যা নেই। বরং কখনো কখনো তা কাঙ্ক্ষিতও হতে পারে।” [ইমাম ইবনু উসাইমিন
রাহিমাহুল্লাহ, শারহু লুমআতুল ইতিকাদ; পৃষ্ঠা: ১১০-১১১; মুআসসাসাতুর রিসালা কর্তৃক
প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৪০৪ হি./১৯৮৪ খ্রি. (২য় প্রকাশ)]
সালাফিরা উক্ত ইমামদ্বয়ের মতো মুত্তাকি ইমামগণের ফতোয়া
আমল ও প্রচার করে থাকে। ইমামদ্বয়ের ফতোয়া অনুযায়ী তাবলিগ জামাতের সাথেও ওঠাবসা করা
নিষিদ্ধ হবে, যেই তাবলিগ জামাতকে ইমামদ্বয় বিদাতি ফের্কা হিসেবে অভিহিত করেছেন। কিন্তু
মিনার সাহেব ইমামদ্বয়ের মানহাজের বিরুদ্ধে গিয়ে তাবলিগ জামাতকে বর্জন করার চরম বিরোধিতা
করেছেন। প্রকারান্তরে তিনি এদের সাথে ওঠাবসা করতে উৎসাহিত করেছেন, যা জনসাধারণের জন্য
অতিশয় বিপজ্জনক। এ সত্ত্বেও সালাফিরা ইমাম ইবনু বায ও ইমাম উসাইমিনের মানহাজ অনুসরণকারী
নয়, বরং মিনার সাহেব নিজেই খাঁটি অনুসারী!
·
তিন. ইমাম ইবনু বাযের মানহাজ—বিদাতির প্রশংসাকারীও বিদাতি
হিসেবে বিবেচিত হবে।
ইমাম ইবনু বায রাহিমাহুল্লাহ বিদাতিদের প্রশংসাকারীকেও
বিদাতি বলে দিয়েছেন। এই ফতোয়া মিনার ভাইয়ের মতো সালাফি দাবিদারদের বদহজম হয়ে যাবে।
অথচ সালাফিরা ইমাম ইবনু বাযের এমন ফতোয়া অনুসরণ করে এরকম কথা বললে পরিগণিত হয় ন্যায়চ্যুত
আর দমনমূলক কাজে জড়িত মানুষে। ইমাম ইবনু বায রাহিমাহুল্লাহকে ‘ফাদলুল ইসলাম’ শীর্ষক
গ্রন্থের ব্যাখ্যার দারসে জিজ্ঞেস করা হয়, “যে ব্যক্তি বিদাতিদের প্রশংসা করে এবং তাদের
গুণকীর্তন করে, তার ব্যাপারে কি তাদের (বিদাতিদের) বিধানই গৃহীত হবে?” তিনি রাহিমাহুল্লাহ
জবাবে বলেন, “হ্যাঁ, এতে কোনো সন্দেহ নেই। যে-ই তাদের (বিদাতিদের) প্রশংসা ও গুণকীর্তন
করে, সে তাদের দিকে আহ্বানকারী দাঈ। সে তাদের দিকেই মানুষকে আহ্বান করে। এই ব্যক্তি
তাদের দাঈদেরই অন্তর্ভুক্ত। আমরা (তার থেকে) আল্লাহর হেফাজত কামনা করি।” [দ্র.: www.youtube.com/watch?v=RW09MuyUp6E]
এই মাসআলায় তাফসিলি বিধানের অবকাশ রয়েছে, যা আমরা ইতঃপূর্বে
অন্যত্র আলোচনা করেছি। এক্ষেত্রেও মিনার সাহেবের দাবির সাথে তাঁর কর্মের মিল পাওয়া
যায় না। তিনি ইমাম ইবনু বাযের মানহাজের অনুসারী হয়েও তাবলিগ জামাতের প্রশংসা করতে অতি
উদগ্রীব, যেই তাবলিগ জামাত ইমাম ইবনু বাযের মতে বিদাতি! এমনকি তাবলিগের প্রশংসা নিয়ে
মিনার সাহেব ছোটোখাটো ঝড়ও তুলে ফেলেছেন ফেসবুকে। সেই তিনি কিনা ইমাম ইবনু বাযের অনুসরণ
করে তাবলিগকে বিদাতি বলছেন না, আবার ইমাম ইবনু বাযের অনুসরণ করে নিজেকেও ‘বিদাতিদের
পথের পথিক’ আখ্যা দিচ্ছেন না! আমি আবারও বলছি, আমার কথার যেন ভুল ব্যাখ্যা না হয়। জনাব
মিনারকে আমি বিদাতি বলছি না।
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তাদের সম্পর্কে জানে না, তাকে জানিয়ে দেওয়া জরুরি যে, তাবলিগিরা বিদাতি, পথভ্রষ্ট এবং মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত। এরপরেও তাদের প্রশংসা করা এবং তাদের পক্ষ নিয়ে বিতর্ক করা যদি সে পরিত্যাগ না করে, তবে তাকে তাদেরই মতাবলম্বী গণ্য করতে হবে। আর তার সাথে ওই আচরণই করা হবে, যে আচরণ তাদের সাথে করা হয়।” [ইমাম হামুদ আত-তুওয়াইজিরি রাহিমাহুল্লাহ, আল-কাওলুল বালিগ ফিত তাহযিরি মিন জামাআতিত তাবলিগ; পৃষ্ঠা: ২৩০-২৩১; দারুস সামিঈ, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১৪ হি./১৯৯৩ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]
এখানেও কি বিষাক্ত তির প্রক্ষেপক মিনার সাহেব বলে বসবেন, নব্বইয়ের দশকে সৃষ্টি হওয়া ভ্রাতৃঘাতী কট্টরপন্থা, আর মজলুমের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা?! ইমাম হামুদের মতো নাজদি বিদ্বানের বিরুদ্ধে এমন জঘন্য কথা তিনি বলবেন না বলেই মনে করি। কারণ তিনি যে ‘নব্বইয়ের দশক’ বলে নিজেকে তথাকথিত ‘জামি-মাদখালি’ ফের্কার নির্বাপক প্রমাণ করতে চেয়েছেন, তা বলাই বাহুল্য। এ বিষয়ে পরে আলাপ হবে, ইনশাআল্লাহ।
·
চার. ইমাম ইবনু উসাইমিনের মানহাজ—অনিষ্টের আশঙ্কা হলে বিদাতিদেরকে মজলিস থেকে তাড়িয়ে দিতে হবে।
মিনার সাহেব তাবলিগ জামাত থেকে সতর্কীকরণ প্রসঙ্গে বলেছেন, “মুসলিম ভাইদেরকে দূর দূর না করে তাঁদেরকে নিজ ভাইয়ের মতো মহব্বত করা উচিত।” (যদ্দৃষ্ট – সংকলক)
জনাব মিনার অন্যত্র বলেছেন, “বিন বায(র.), ইবনু উসাইমিন(র.) প্রমুখ মহান শায়খরা যেসব সমালোচনা করতেন, সেই সমালোচনাগুলো ছিল ইলমী, গঠনমূলক ও সংশোধনমূলক। এর বিপরীতে বর্তমানে আমরা এমন অনেক কিছু দেখছি যা মূলত রাজনৈতিক ও দমনমূলক এবং ইসলামী যত তৎপরতা আছে সেগুলোকে রুখে দেয়ার চেষ্টা।” (যদ্দৃষ্ট – সংকলক)
কিন্তু তাবলিগ জামাতকে পথভ্রষ্ট ৭২ ফের্কার অন্তর্ভুক্ত করে ইমাম ইবনু বায এই কাজটিই করে বসেছেন, যে ব্যাপারে এত নিন্দা করে চলেছেন জনাব মিনার। আবার তিনিই নাকি ইমাম ইবনু বাযের মানহাজের অনুসারী! সে যাকগে, তাবলিগ জামাতকে বিদাতি ফতোয়াদাতা ইমাম উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ ইমাম মালিক কর্তৃক জনৈক বিদাতিকে মজলিস থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা উল্লেখ করেন। এরপর বলেন, “এভাবেই আলিমগণের উচিত হবে, তাঁদের কাতারে কোনো বিদাতিকে দেখলে তাকে তাঁদের মাঝ থেকে বিতাড়ন করা। কারণ আহলুস সুন্নাহর মাঝে বিদাতির উপস্থিতি মানেই অকল্যাণ। কেননা বিদাত ক্যান্সার ব্যাধির মতো, যা ভালো হওয়ার আশা করা যায় না; তবে আল্লাহ চাইলে সে কথা ভিন্ন।... এ থেকে প্রমাণিত হয়, ছাত্রদের কাতার থেকে বিদাতিদের তাড়িয়ে দেওয়া সালাফগণের মানহাজ ছিল। তদ্রুপ তাদেরকে পুরো সমাজ থেকে বিতাড়িত করতে হবে। তাদের পরিধিকে সংকীর্ণ করে ফেলতে হবে, যাতে করে তাদের বিদাত না ছড়ায়।” [ইমাম ইবনু উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ কৃত শারহুল আকিদাতিস সাফফারিনিয়্যা, পৃষ্ঠা: ২২৭-২২৮]
·
পাঁচ. ইমাম ইবনু বায ও ইবনু উসাইমিনের মানহাজ—হকপন্থি উলামাগণের ডিফেন্স করা এবং তাঁদের প্রশংসা করে জনগণকে তাঁদের থেকে ইলম নিতে উৎসাহিত করা।
ইমামদ্বয় হকপন্থি সালাফি উলামাগণের ডিফেন্স করতেন, তাঁদের প্রশংসা করতেন, বিদাতিদের বিরুদ্ধে তাঁদের লেখা বইপুস্তকের ভূমিকাও লিখে দিতেন। সর্বোপরি তাঁদেরকে দাওয়াতের কাজে সহযোগিতা ও অনুপ্রাণিত করতেন। ইমামদ্বয়ের প্রশংসাভাজন আলিমগণের একজন হলেন ইমাম রাবি আল-মাদখালি হাফিযাহুল্লাহ। যিনি একজন মজলুম সালাফি আলিম। তাঁর ব্যাপারে ইমাম ইবনু বায ও ইমাম উসাইমিনের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা আছে। কিন্তু উক্ত ইমামদ্বয়ের অনুসরণের দাবিদার ও মজলুমের ডিফেন্ডার হিসেবে নিজেকে জাহিরকারী মিনার ভাই এক্ষেত্রে তাঁদের অনুসরণকে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করেছেন। বরং তাঁকে দেখা যায়, ইমাম রাবি আল-মাদখালির বিরুদ্ধে একজন বাঙালি সালাফি দাঈর যাচাইবাছাইবিহীন সর্বৈব মিথ্যা বক্তব্য প্রচার করতে! দেখা যায়, শাইখ রাবির বিরুদ্ধে ইংরেজিভাষী দাঈ আসিম আল-হাকিমের বক্তব্য প্রচার করতে! কী চমৎকার ডাবল স্ট্যান্ডার্ড!
ইমাম বায রাহিমাহুল্লাহ শাইখ রাবির উদ্দেশে বলেছেন, “হে শাইখ রাবি, যারা ভুল করে আপনি তাদের প্রত্যেককে রদ করুন। ইবনু বায যদি ভুল করে, তাঁকে রদ করুন। স্বয়ং ইবনু ইবরাহিম (১ম গ্র্যান্ড মুফতি) যদি ভুল করেন, তবে তাঁকেও রদ করুন।” [শাইখ খালিদ বিন দাহউয়ি আয-যাফিরি হাফিযাহুল্লাহ, আস-সানাউল বাদি মিনাল উলামাই আলাশ শাইখ রাবি; পৃষ্ঠা: ১১; ২য় প্রকাশ (ছাপা ও সন বিহীন)]
শাইখ রাবি আল-মাদখালির ব্যাপারে ইমাম ইবনু বাযের প্রশংসা প্রসঙ্গে শাইখ আব্দুর রহমান আল-আহমারি হাফিযাহুল্লাহ বলেন, “আমি ১৪ বছর আগে আমাদের সম্মানিত শাইখ ইবনু বায রাহিমাহুল্লাহকে (অভিযোগ করে) বলেছিলাম, হে আমাদের শাইখ, শাইখ রাবি তো দাঈদের নিন্দা-সমালোচনা করছেন। তখন শাইখ বললেন, ‘আল্লাহকে ভয় করো! এই ব্যক্তি সুন্নাহর ইমাম’।” [শাইখ আব্দুর রহমান আল-আহমারি হাফিযাহুল্লাহ, আন-নুকুলাতুস সালাফিয়্যাহ ফির রাদ্দি আলাত তাইফাতিল হাদ্দাদিয়্যাহ; পৃষ্ঠা: ৬০; আদ-দারুল আসারিয়্যাহ, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪৩১ হি./২০১০ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]
আর ইমাম উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহকে শাইখ রাবি সম্পর্কে
জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, “প্রকৃতপক্ষে এই প্রশ্নের কোনো প্রয়োজন নেই। যেমনভাবে ইমাম
আহমাদকে (তাঁর উস্তায) ইমাম ইসহাক বিন রাহওয়াইহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তখন তিনি
বলেছিলেন, আমার মতো ব্যক্তিত্ব ইসহাক সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে?! বরং ইসহাককেই আমার সম্পর্কে
জিজ্ঞেস করতে হবে।” [‘ইতহাফুল কিরাম’– শীর্ষক অডিয়ো ক্লিপ থেকে সংগৃহীত; গৃহীত: আস-সানাউল
বাদি মিনাল উলামাই আলাশ শাইখ রাবি, পৃষ্ঠা: ১৫; ইউটিউব লিংক: https://m.youtube.com/watch?v=K8ay0hdX24g (অডিয়ো ক্লিপ)]
·
❏ মজলুম ভাবব্যঞ্জক
মিনার সাহেব যখন নিজেই জালেম:
কবি বলেছেন, “রক্ষক যদি ভক্ষক হয়, কে করিবে রক্ষা? ধার্মিক
যদি চুরি করে, কে দিবে তারে শিক্ষা?” মিনার সাহেব নিজেকে জুলুমবিরোধী মানুষ হিসেবে
জাহির করেছেন এবং মজলুমের পাশে দাঁড়ানো আরেক মজলুম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। সেই তিনিই
যখন জালেম কিংবা জালেমের সহযোগী হিসেবে আবির্ভূত হন, তখন আশ্চর্য হতে হয়। মানুষ পারেও
বটে! সালাফিদের প্রতি মিনার সাহেবের কিছু জুলুমের নমুনা দিই।
·
নমুনা-১:
জনাব মিনার সালাফিদের বিরুদ্ধে আপত্তি তুলেছেন, “আজকে
কেউ যদি তাবলিগ জামাতের মুখলিস ভাইদের প্রতি ইনসাফ করে কিছু কথা বলে, তাদের ব্যাপারে
ভালো কিছু বলা হয়েছে এমন ২/১টি ফতোয়া উল্লেখ করে, তবে তার "মানহাজ শুদ্ধ নেই"
বলে চিৎকার শুরু হয়।” (যদ্দৃষ্ট – সংকলক)
অথচ সালাফিরা সালাফি উলামাগণের ডজনখানেক ফতোয়া উল্লেখপূর্বক
তাবলিগ জামাতের বিরুদ্ধে বলা ছাড়া আর কিছুই করেনি। তিনি নিজে দুএকটি ফতোয়া উল্লেখ করে
নিজেকে নির্দোষ ভাবতে পারলেও সালাফিদের নির্দোষ ভাবতে পারছেন না। বরং তাদের বিরুদ্ধে
হামলে পড়ে জোরের সাথে ইনসাফ তলব করছেন। যদিও তিনি নিজে তাদের উলামাদের সাথে ইনসাফ করেন
না! এ বিষয়ে আমরা বিস্তারিত বলেছি পূর্বের আলোচনাগুলোতে।
·
নমুনা-২:
নিজেকে মজলুমের পক্ষে দেখানো মিনার সাহেব লিখেছেন, “বিন
বায(র.), ইবনু উসাইমিন(র.) প্রমুখ মহান শায়খরা যেসব সমালোচনা করতেন, সেই সমালোচনাগুলো
ছিল ইলমী, গঠনমূলক ও সংশোধনমূলক। এর বিপরীতে বর্তমানে আমরা এমন অনেক কিছু দেখছি যা
মূলত রাজনৈতিক ও দমনমূলক এবং ইসলামী যত তৎপরতা আছে সেগুলোকে রুখে দেয়ার চেষ্টা।” (যদ্দৃষ্ট
– সংকলক)
অথচ সালাফিরা খোদ ইমাম ইবনু বাযের ফতোয়া প্রচার করে তাবলিগ
জামাতকে বিদাতি বলেছে। কিন্তু সালাফিদের এসব কাজ মিনার সাহেবের কাছে রাজনৈতিক, দমনমূলক
এবং ইসলামি তৎপরতাকে রুখে দেওয়ার চেষ্টা! এ কথা বলে মিনার সাহেব ইমাম ইবনু বাযের মহান
ছাত্রবর্গ ও যোগ্য উত্তরসূরিগণের—যাঁরা আজকের যুগের শ্রেষ্ঠ আলিম এবং তাবলিগ জামাতকে
ভ্রষ্ট আখ্যাদাতা—প্রতি জুলুম করেছেন। তাঁদেরকে নির্মম বাক্যবাণে জর্জরিত করেছেন। তাঁদের
সংখ্যা অনেক, যা আমরা ইতোমধ্যে আলোচনা করেছি।
·
নমুনা-৩:
জনাব মিনার নিজেকে ইমাম ইবনু বায ও ইমাম উসাইমিনের অনুসারী
দাবি করে নিজেকে সঠিক প্রমাণ করতে এবং সালাফিদের ভ্রান্ত প্রমাণ করতে সচেষ্ট হয়েছেন।
কিন্তু তিনি নিজেই উক্ত ইমামদ্বয়ের বিরোধিতা করে বেড়ান, বরং সালাফিরাই ইমামদ্বয়ের মানহাজ
মেনে চলে। এ বিষয়টি আমরা জ্বলজ্যান্ত প্রমাণের আলোকে বর্ণনা করেছি। সুতরাং তিনি এক্ষেত্রেও
সালাফিদের বিরুদ্ধে কটূক্তি ও মিথ্যা অপবাদ দিয়ে জুলুম করে নিজেই মজলুম ভাব ধরেছেন!
·
নমুনা-৪:
জনাব মিনার লিখেছেন, “আমার সালাফিয়্যাহর সাথে '৯০ এর
দশকে গড়ে ওঠা ভাতৃঘাতী কট্টরপন্থার কোনো সম্পর্ক নেই।... যারা ঈমানের জন্য অন্য একজন
মুসলিম ভাইকে ভালোবাসতে পারেনি, তাদের মতো দুর্ভাগা, কপালপোড়া আর কেউ নেই।” আমরা আগেই
বলেছি, নব্বই দশক বলতে মিনার সাহেব তথাকথিত ‘জামি-মাদখালি’ ফের্কা উদ্দেশ্য করেছেন।
তা তিনি যে নিজেকে ইমাম ইবনু বায ও ইমাম ইবনু উসাইমিনের অনুসারী দাবি করেন, তিনি কেন
কথিত জামি-মাদখালিদের প্রধান ইমাম আমান আল-জামি ও ইমাম রাবি আল-মাদখালির ব্যাপারে ইমাম
ইবনু বায ও ইমাম উসাইমিনের বক্তব্য অনুসরণ করেন না?!
তাঁরা যে অসংখ্য বক্তব্যে এঁদের প্রশংসা করেছেন, সেসব
কেন প্রচার করেন না? বরং ইনসাফপ্রার্থী হয়েও একজন বাঙালি দাঈর বেইনসাফি ডাহামিথ্যে
কথা বিনা যাচাইয়ে অবলীলায় প্রচার করেন কেন?! কেন একজন সালাফি আলেমের মানহানি করেন মিথ্যেকথা
ছড়িয়ে দিয়ে?! সালাফি উলামাদের মুরজিয়া আখ্যাদাতা ভ্রষ্ট ফের্কা আল-কায়েদার সাপোর্টার
আসিফ আদনানের সাথে ফেসবুকে সুসম্পর্ক রাখেন কেন? তাঁর তখন আল্লাহভীতি, আর জুলুমের ভয়াবহতার
কথা কোথায় যায়? কোথায় যায় সেসব কথা, যেগুলো বলে তিনি নিজেই মজলুম সালাফিদের বিরুদ্ধে
নিজের দমনমূলক আচরণ প্রকাশ করে দেন?! হায়রে দুনিয়া! ডাবল স্ট্যান্ডার্ডকারী জুলুমের
বাহক যখন দাওয়াত দেয়, ‘তোমরা জুলুম কোরো না!’
·
নমুনা-৫:
মিনার সাহেব লিখেছেন, “যারা ঈমানের জন্য অন্য একজন মুসলিম
ভাইকে ভালোবাসতে পারেনি, তাদের মতো দুর্ভাগা, কপালপোড়া আর কেউ নেই।” সালাফিরা বিদাতি
মুসলিমের প্রতি কাফিরের মতো বিলকুল ঘৃণা রাখে, প্রকারান্তরে এমন দাবিই করে বসেছেন জনাব
মিনার। অথচ এটা ডাহামিথ্যে এবং সালাফি কমিউনিটির বিরুদ্ধে ভয়াবহ অপবাদ। বৈরিতা ও মিত্রতার
ক্ষেত্রে আমাদের উলামাগণের শেখানো কর্মপন্থা অনুযায়ী আমরা কাফিরদের ঘৃণা করি, কিন্তু
একজন বিদাতি মুসলিমকে আমরা কাফিরের মতো ঘৃণা করি না। আমাদের ঘৃণায় যেমন তারতম্য আছে,
তেমনি ভালোবাসাতেও তারতম্য আছে। এসব আকিদা সালাফিরা প্রচারও করে থাকে। আমরা নিজেরাও
প্রচার করেছি।
আমার সংকলিত ‘কষ্টিপাথরে ব্রাদারহুড’ থেকে একাংশ তুলে
দিচ্ছি—
একজন মুসলিম মানুষের সাথে কীভাবে বৈরিতা ও মিত্রতা পোষণ
করবে, তার বর্ণনা কুরআন সুন্নাহয় এসেছে। বৈরিতা ও মিত্রতার ক্ষেত্রে মানুষ তিনভাগে
বিভক্ত। যথা:
১ম ভাগ: যাদেরকে খাঁটি ও নিষ্কলুষভাবে ভালোবাসতে হবে,
যাদের প্রতি কোনো বিদ্বেষ রাখা যাবে না। তাঁরা হলেন খাঁটি মু’মিন সম্প্রদায়। যেমন:
নাবীগণ, সিদ্দীক্বগণ, শহীদগণ ও সৎকর্মপরায়ণ বান্দাগণ। আল্লাহ বলেছেন, “যারা তাদের পরে
এসেছে তারা বলে: ‘হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদেরকে ও আমাদের ভাই যারা ঈমান নিয়ে আমাদের
পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করুন; এবং যারা ঈমান এনেছিল তাদের জন্য আমাদের
অন্তরে কোনো বিদ্বেষ রাখবেন না; হে আমাদের প্রতিপালক, নিশ্চয় আপনি দয়াবান, পরম দয়ালু’।”
(সূরাহ হাশর: ১০)
২য় ভাগ: যাদের প্রতি খাঁটিভাবে ঘৃণা ও বিদ্বেষ পোষণ করতে
হবে, যাদের প্রতি কোনো ভালোবাসা ও মিত্রতা পোষণ করা যাবে না। তারা হলো খাঁটি কাফির
সম্প্রদায়। যেমন: কাফির, মুশরিক, মুনাফিক্ব, মুরতাদ, নাস্তিক ও বিধর্মী সম্প্রদায়।
মহান আল্লাহ বলেছেন, “তুমি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী কোনো জাতিকে এরূপ পাবে
না যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে এমন ব্যক্তিদের সাথে বন্ধুত্ব করে,
যদিও তারা তাদের পিতা, বা পুত্র, কিংবা ভাই, বা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয়। এরাই তারা, যাদের
অন্তরে আল্লাহ ঈমান লিখে দিয়েছেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে রূহ দ্বারা তাদের শক্তিশালী করেছেন।
তিনি তাদেরকে প্রবেশ করাবেন এমন জান্নাতসমূহে, যেগুলোর তলদেশে ঝরনাধারা প্রবাহিত হয়।
সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও আল্লাহ’র প্রতি
সন্তুষ্ট হয়েছে। এরাই আল্লাহ’র দল। জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহ’র দলই সফলকাম।” (সূরাহ
মুজাদালাহ: ২২)
৩য় ভাগ: যাদেরকে একদিক থেকে ভালোবাসতে হবে, আবার একদিক
থেকে ঘৃণা করতে হবে, যাদের ব্যাপারে অন্তরে ভালোবাসা-ঘৃণা দুটিই একত্রিত হবে। তারা
হল পাপাচারী মু’মিন ব্যক্তিবর্গ। তাদেরকে ভালোবাসতে হবে, তাদের ঈমানের কারণে। আর তাদেরকে
ঘৃণা করতে হবে, শির্ক-কুফরের চেয়ে নিম্নপর্যায়ের পাপাচারিতায় লিপ্ত হওয়ার কারণে। অধিকন্তু
তাদের প্রতি ভালোবাসার দাবি হচ্ছে তাদেরকে নসিহত করা এবং মন্দকর্মে তাদের বিরোধিতা
করা। বিধি মোতাবেক তাদের মন্দকর্মের বিরোধিতা করা ওয়াজিব। [ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ),
আল-ইরশাদ ইলা সাহীহিল ই‘তিক্বাদ; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ২৮৯-২৯০; আর-রিআসাতুল ‘আম্মাহ লি
ইদারাতিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১২ (২য় প্রকাশ)]
·
নমুনা-৬:
সালাফিদের মজলুম ইমামগণের কুৎসা রটিয়েছে তাবলিগি জামাতের
প্রধান নেতারা। সেসবের বিরুদ্ধে জনাব মিনারের অ্যাকশন কোথায়?! তাবলিগের বড়ো হুজুররা
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ, ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম, ইমাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব,
ইমাম শাহ ইসমাইলের মতো মহান সালাফি বিদ্বানদের নিন্দা-সমালোচনা করেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে
কুৎসা রটিয়েছে। আমি স্রেফ একটা দৃষ্টান্ত দেখাচ্ছি। যদিও এমন দৃষ্টান্ত অনেক আছে, আপনারা
এসব জানতে ইমাম হামুদ বিরচিত ‘আল-কাওলুল বালিগ ফিত তাহযিরি মিন জামাআতিত তাবলিগ’ বইটি
পড়েন।
তাবলিগ জামাতের বড়ো হুজুর, দেওবন্দিদের ইমাম, মৌলবি আনওয়ার
শাহ কাশ্মিরি লিখেছেন, “আর মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব আন-নাজদি ছিল একজন সীমিত জ্ঞানের
নির্বোধ লোক। সে ‘কাফির’ হুকুম লাগাতে তাড়াহুড়া করতো। অথচ কুফরের প্রকৃতি ও কারণ সম্পর্কে
যিনি সজাগ ও সম্যক অবগত, তিনি ছাড়া আর কারও এই ফিল্ডে প্রবেশ করা উচিত নয়।” [আনওয়ার
শাহ কাশ্মিরি, ফাইদুল বারি আলা সহিহিল বুখারি; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ২৫২; হা/৭০-এর ব্যাখ্যা;
দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, বৈরুত ছাপা; সন: ১৪২৬ হি./২০০৫ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]
ভাইয়েরা আমার, তাবলিগ জামাতের বহুলোক তাদের চিল্লাগ্রুপের
আমির-সহ সালাফিদের ওপর জুলুম করেছে। বহু উদাহরণ আছে, বহু সাক্ষী আছে। তাওহিদের বই ফেলে
দিয়েছে, শির্কের বিরুদ্ধে বলতে বাধা দিয়েছে। ইমাম হামুদ এমন বহু ঘটনা সাক্ষ্যপ্রমাণ-সহ
জমা করেছেন তাঁর বইয়ে। কিন্তু মজলুম সালাফিরা কালের আবর্তনে আজ এই মিনার সাহেবদের কাছে
হাজ্জাজি পিষ্টক-নিপীড়কে পরিণত হয়েছে! নিজেদেরকে মজলুম হিসেবে দেখিয়ে জুলুমের করে বেড়ানো
নিকৃষ্ট ইহুদিদের স্বভাব। যেটা আমরা তাবলিগের পক্ষ নেওয়া মজলুম ভাবব্যঞ্জক জালেম জনাব
মিনারের মাঝে দেখতে পাচ্ছি। আল্লাহ তাঁর হেদায়েত নসিব করুন।
·
নমুনা-৭:
তাবলিগ জামাতের শীর্ষনেতারা সর্বেশ্বরবাদের আকিদা প্রচার
করেছে, সুফিদের নানা বিদাতি-কুফরি আকিদা জনমানুষের মাঝে ছড়িয়েছে। লাখোকোটি মুসলিমকে
ভ্রান্ত আকিদার দিকে আহ্বান করেছে। সালাফিরা ওই লাখোকোটি মুসলিমকে ভ্রান্ত আকিদা থেকে
রক্ষা করার নিমিত্তে তাঁদের উলামাদের পথ অনুসরণ করে তাবলিগ জামাতের ভ্রষ্টতা বর্ণনা
করেছে এবং এদের থেকে সতর্ক করেছে। এখানে জালেম আর মজলুম কে, বলুন দেখি?! সালাফিরা জালেম,
নাকি তাবলিগিরা জালেম, যারা কিনা লাখোকোটি মানুষকে বিপথগামিতার দিকে ডেকেছে?! সালাফিরা
তাদের ওয়াজিব কর্তব্য পালন করে মুজাহিদের ভূমিকা নিয়েছে। আর তাদের বিরুদ্ধে খড়্গ তুলে
হামলাকারী জনাব মিনার জালেমের পক্ষ নেওয়া নিপীড়কের ভূমিকা পালন করেছেন। এসব করতে গিয়ে
তিনি নিজেই সালাফিদের মজলুম করেছেন। আর ভাব ধরেছেন, তিনি মজলুমের পক্ষে, বরং তিনি নিজেই
মজলুম! আল্লাহ সালাফিদের বিরুদ্ধে এসব চক্রান্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত করুন।
·
❏ বক্ষ্যমাণ
আলোচনার ফলাফল:
১. তাবলিগ জামাত একটি ভ্রষ্ট বিদাতি ফের্কা। এই ফের্কার
ব্যাপারে সালাফি উলামাগণের সিদ্ধান্ত এমনই।
২. ইমাম ইবনু বায ও ইমাম উসাইমিন রাহিমাহুমাল্লাহর সর্বশেষ
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাবলিগ জামাত বিদাতি ফের্কা।
৩. নিজেদের সালাফি দাবি করে যারা তাবলিগ জামাত থেকে সতর্কীকরণের
বিরোধিতা করে, তারা ইমাম ইবনু বায ও ইমাম উসাইমিন-সহ অসংখ্য প্রাজ্ঞ সালাফি বিদ্বানের
কর্মপন্থা-বিরোধী।
৪. মজলুমের ভাব ধরলেই তাকে মজলুম ভাবা উচিত নয়। বরং ব্যাপারটি
খতিয়ে দেখা দরকার। কারণ অনেক মজলুম ভাবব্যঞ্জক মানুষ জালেম হয়ে থাকে কিংবা জালেমের
সহযোগী হয়ে থাকে। যেমনটি ঘটেছে জালেম তাবলিগ জামাতের ডিফেন্ডার জনাব মিনারের ক্ষেত্রে।
৫. তাবলিগ জামাতকে বিদাতি ফের্কা বলার কারণে যারা উক্ত
সমালোচকদের ‘ন্যায়চ্যুত-জালেম’ বলে, তারা মূলত ইমাম ইবনু বায ও ইমাম উসাইমিনের অসংখ্য
ছাত্র—যাঁরা বর্তমানে উম্মতের কিবার উলামা—এবং ইমামদ্বয়ের মানহাজের অসংখ্য আলিমগণকে
জুলুমের অভিযোগে অভিযুক্ত করে। যেমনটি ঘটেছে উক্ত অভিযোগদাতা জনাব মিনারের ক্ষেত্রে।
৬. সালাফিদের কর্মপন্থা-বিরোধী ধূর্তরা বড়ো উলামাদের
ক্যামোফ্লাজ হিসেবে ব্যবহার করে নিজেদেরকে সেইফ জোনে রাখে। অথচ তারা নিজেরাই সেসব বড়ো
উলামাদের মানে না। যেমনটি ঘটেছে মিনার সাহেবের ক্ষেত্রে।
৭. প্রকৃতপক্ষে সালাফিদের প্রতি, বরং পুরো উম্মতের প্রতি
জুলুম করেছে তাবলিগ জামাত, ভ্রষ্ট আকিদার দাওয়াত দিয়ে। আর সালাফিরা এসব থেকে সতর্ক
করে উম্মতের প্রতি কল্যাণকামিতার পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু উল্টো সালাফিরাই অভিযুক্ত হয়েছে
জুলুমের দায়ে!
পরিশেষে বলতে চাই, প্রকৃত সালাফি দাওয়াতের বিরুদ্ধে কিছু
লোক সবসময়ই প্রচারণা চালাবে। দাওয়াতের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ ঝঞ্ঝা আসবে, কিন্তু নবিজির
কথা অনুযায়ী এই মানহাজের অনুসারীরা রয়ে যাবে অবিচল। যারা এই মানহাজের অনুসরণ করবে,
তারাই হবে সফল, কৃতকার্য। আর শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে যারা জেনেশুনে এ মানহাজের বিরোধিতা
করবে, তাদের জন্যই তো বিফলতা। আল্লাহ আমাদের সুমতি দিন। আমিন।
·
সুপথপ্রাপ্তির অভিলাষী
এক গুনাহগার বান্দা—
·
রচনাকাল—
সকাল ১১টা ২৭ মিনিট।
বুধবার।
১০শে জুমাদাল উলা, ১৪৪৩ হিজরি।
৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪২৮ বঙ্গাব্দ।
১৫ই ডিসেম্বর, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দ।
0 Comments