▌তাবলিগ জামাতের ব্যাপারে ইমাম আমান আল-জামির ফতোয়া পরিবর্তন এবং তাবলিগকে ‘ভ্রষ্টকারী দল’ আখ্যান


▌তাবলিগ জামাতের ব্যাপারে ইমাম আমান আল-জামির ফতোয়া পরিবর্তন এবং তাবলিগকে ‘ভ্রষ্টকারী দল’ আখ্যান
·দয়াবান করুণানিধি আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। তাবলিগ জামাতের ব্যাপারে সৌদি আরবের বড়ো আলিমগণ থেকে প্রশংসা আনার চেষ্টা আমাদের অনেকেরই নজরে পড়েছে। আমরা ইতোমধ্যে ইমাম ইবনু বায ও ইমাম উসাইমিনের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কিছু আলোচনা করে ফেলেছি। সৌদি আরবের আরেক বয়োজ্যেষ্ঠ বিদ্বান, মদিনার মুহাদ্দিস, মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদিস অনুষদের প্রাক্তন ডিন এবং আকিদা ডিপার্টমেন্টের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ইমাম মুহাম্মাদ আমান আল-জামি রাহিমাহুল্লাহর (মৃত: ১৪১৬ হি.) ব্যাপারে ছড়ানো হয়েছে, তিনি তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমায় এসে এদের প্রশংসা করেছেন।
কিন্তু তাবলিগ-ডিফেন্ডারের জন্য তিক্ত বাস্তবতা হলো, ইমাম জামি রাহিমাহুল্লাহ তাবলিগ জামাতকে প্রথমে ভালো মনে করে থাকলেও এদের স্বরূপ জানতে পেরে তিনি নিজের মত পরিবর্তন করে নিয়েছিলেন। আমাদের এই নিবন্ধের সাথে যুক্ত ভিডিয়োতে ইমাম জামি রাহিমাহুল্লাহ তাবলিগ জামাতের ব্যাপারে তাঁর মত পরিবর্তনের কথা ব্যক্ত করেছেন। পোস্ট সংলগ্ন ভিডিয়োর কিয়দংশ আমরা অনুবাদ করে দিচ্ছি।
·
ইমাম আমান আল-জামি রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “যদিও আমি ইতঃপূর্বে কতিপয় দেশে তাবলিগ জামাতের প্রশংসা করেছি। কারণ আমি তাদের মাঝে কল্যাণমূলক কাজ দেখেছিলাম। যেমন: মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণ, নিজেদের সম্পদ থেকে অভাবীদের দান-সদকা করা, মানুষের মালিকানাধীন সামগ্রীর প্রতি অনাগ্রহী থাকা প্রভৃতি। তারা নিজেদের সম্পদ থেকে দান-সদকা করত। এই দলকে আমি (সেসময়) জেনেছিলাম এবং আমি যা জানতাম সে অনুযায়ী উক্ত সাক্ষ্য দিয়েছিলাম। আমি একাধিক দেশে তাদেরকে এমনই জেনেছিলাম। কিন্তু পরিশেষে আমি নিশ্চিত হয়েছি, প্রত্যেক দেশে তাদের একটি কর্মপন্থা ও তরিকা রয়েছে।
এই উত্তম ভূখণ্ডে আমাদের কাছে এখন যে বিষয়টি আপতিত হয়েছে, তা হলো—তাবলিগ জামাত যুবকদেরকে পেয়ে বসেছে, অনেক যুবককে ইলম অর্জন করা থেকে সরিয়ে নিচ্ছে, ইলম ও উলামাদের প্রতি তাদের অনাগ্রহী করছে, এমনকি তারা ইলম ও উলামাগণকে যুবকদের কাছে অপছন্দনীয় করে তুলেছে! এহেন চৌর্যবৃত্তি আসলেই নিন্দনীয় চৌর্যবৃত্তি। এদেরকে এসবের অনুমোদন দেওয়া উচিত নয়। বরং এদের বাধা দেওয়া বাঞ্ছনীয়। যারাই এদের ব্যাপারটি জেনেছে, তাদের জন্য এদেরকে অনুমোদন দেওয়া উচিত নয়। আমাদের যুবকদের আমি নসিহত করছি, তারা যেন এদের মাধ্যমে ধোঁকাগ্রস্ত না হয়।” [অনূদিত অংশ: পোস্ট সংলগ্ন ভিডিয়োর ০ মিনিট ৪৯ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ৫৮ সেকেন্ড পর্যন্ত]
·
কিছুদূর এগিয়ে ইমাম আমান আল-জামি রাহিমাহুল্লাহ আরও বলেছেন, “শেষে গিয়ে প্রশ্নকারী বলেছেন, ‘আপনি কি আমাকে তাদের অনুসরণ করার উপদেশ দেবেন?’ কক্ষনো না। আমি তোমাকে তাদের থেকে দূরে থাকার নসিহত করব। তাদের বৈশিষ্ট্য যখন এমনই, তখন তাদের অনুসরণ করা জায়েজ নয়, তাদের মতাদর্শের প্রতি সম্মতি জানানো জায়েজ নয়। বরং তাদের থেকে দূরে থাকা এবং লোকদেরকে তাদের থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া ওয়াজিব, যাতে করে তারা লোকদের মাঝে প্রভাব বিস্তার না করে, আর যুবকদের মাঝে বিভেদ ঘটাতে না পারে।
আমাদের যুবকদের থেকে আমাদের প্রত্যাশা— তারা তাদের একমাত্র মানহাজের ওপর ধৈর্যধারণ করবে, যে মানহাজ জানা ও মানার তৌফিকপ্রাপ্ত হয়েছে তারা, যে মানহাজ হলো সালাফি মানহাজ। তোমরা এ মানহাজের ওপর ধৈর্যধারণ করো, এ মানহাজকে আঁকড়ে ধর এবং বিভিন্ন দল ও সংগঠনে যোগ দেওয়ার মতো বিষয়াদিকে তোমরা নিজেদের থেকে দূর করে দাও। তোমরা যে মতাদর্শের ওপর রয়েছে, তার ওপরই যদি তোমরা অবিচল রয়ে যাও, তবে ইনশাআল্লাহ তোমরা কল্যাণের ওপরই থাকবে। কিন্তু তোমরা যদি বালাগি-গজনফরি প্রভৃতির মতো নানা সম্বন্ধের প্রতি নিজেদের জুড়ে বিচ্ছিন্ন হও, তাহলে তোমাদের অবস্থান হবে অকল্যাণের ওপর।” [অনূদিত অংশ: পোস্ট সংলগ্ন ভিডিয়োর ৩ মিনিট ৩৮ সেকেন্ড থেকে ৪ মিনিট ৪২ সেকেন্ড পর্যন্ত]
·
এতদ্ব্যতীত ইমাম আমান আল-জামি রাহিমাহুল্লাহ অন্যত্র বলেছেন, “মূলত তাবলিগ জামাত ভারতের একটা দল। এটা একটা সুফিবাদি দল। এদের রয়েছে সুফিবাদ এবং বিদাতি বিষয়াদি। বরং তাদের শাইখদের মাঝে আল্লাহর সাথে শির্ক করার মতো বিষয়ও বিদ্যমান রয়েছে। কেননা তারা কবরের সাথে সংযুক্ত থাকে এবং কবরকে পবিত্রজ্ঞান করে। এই হলো তাবলিগ জামাতের মূল দলের ব্যাপার।” [দ্রষ্টব্য: https://youtu.be/CZ3te3zIqzM.]
এছাড়াও ইমাম আমান আল-জামি রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “তাবলিগ জামাত, মুসলিম ব্রাদারহুড, সুরূরিয়্যাহ, হিযবুত তাহরির এবং অনুরূপ দলগুলোর সবই ফিতনা, যা তোমাদের ওপর আরোপিত হয়েছে। এগুলো পরীক্ষা। তোমরা পরীক্ষার সম্মুখে রয়েছ। তোমরা সঠিক রেখার (সোজা রাস্তার) ওপর রয়েছে। আর এই দলগুলো তোমাদেরকে সোজা রাস্তা থেকে বিচ্যুত করে শাখা রাস্তাগুলোতে নিয়ে যেতে চায়। যে ব্যক্তিই সোজা রাস্তা থেকে বিচ্যুত হয়ে শাখা রাস্তাগুলোতে যায়, সেই পথভ্রষ্ট হয়।” [দ্র.: http://ar(ডট)alnahj(ডট)net/audio/2658]
·
এ থেকে স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হলো, আরও অনেক আলিমের মতো ইমাম আমান আল-জামি রাহিমাহুল্লাহও তাবলিগ জামাতের প্রকৃত কর্মপন্থা ও আকিদা সম্পর্কে না জানার দরুন তাদের কিছু ভালো কাজ দেখে তাদের প্রশংসা করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তাবলিগ জামাতের প্রকৃত স্বরূপ জানার পর তিনি এদের থেকে সতর্ক করেন এবং এই দলকে ‘ভ্রষ্টকারী সুফি দল’ আখ্যা দেন। যারা ইমাম আমান আল-জামির প্রথম অবস্থানকে প্রচার করে তাবলিগ জামাতকে ডিফেন্ড করার অপচেষ্টায় আত্মনিয়োগ করেছেন, তাদের উচিত অনতিবিলম্বে এ থেকে বিরত হওয়া এবং সালাফি উলামাগণের প্রামাণিক বক্তব্য মেনে নিয়ে তাবলিগ জামাত থেকে নিজে সতর্ক হওয়া, পাশাপাশি অন্যদেরও সতর্ক করা। আল্লাহ আমাদের সুমতি দিন। আমিন।
·
সুপথপ্রাপ্তির অভিলাষী
এক গুনাহগার বান্দা—
·
রচনাকাল—
দুপুর ২টা ১৯ মিনিট।
শুক্রবার।
১২ই জুমাদাল উলা, ১৪৪৩ হিজরি।
২রা পৌষ, ১৪২৮ বঙ্গাব্দ।
১৭ই ডিসেম্বর, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দ।

Post a Comment

0 Comments