▌বিশ্ব ভালোবাসা দিবস : শরয়ি দৃষ্টিভঙ্গি
·পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহর নামে শুরু করছি।
যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য। যিনি বলেছেন, “প্রকাশ্য বা
গোপন কোনো অশ্লীলতার কাছেও যেও না।” [সুরা আনআম: ১৫১]
·
প্রাক্কথন:
সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে তথা ভালোবাসা দিবস একটি খ্রিষ্টীয় বার্ষিক উৎসবের নাম, যা প্রতি বছর ১৪ ফ্রেব্রুয়ারিতে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও নির্লজ্জতার মাধ্যমে উদযাপিত হয়। এই দিন মানুষ তার ভালোবাসার মানুষকে চিঠি, কার্ড, ফুল, গহনা-সহ নানাবিধ উপহার সামগ্রী গিফট করে পাশ্চাত্য উচ্ছৃংখলতা, নোংরামি, বেলেল্লাপনা ও বেহায়াপনার নোংরা স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়। বিভিন্ন মুসলিম ও অমুসলিম দেশে তথাকথিত মুসলিমরাও এই নোংরা খ্রিষ্টীয় উৎসবে নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে প্রেম ও প্রণয়লীলার অবৈধ সরোবরে ডুব দেয়। তারাও উদ্যাপন করে কথিত ভালোবাসা দিবস নামের এই হারাম খ্রিষ্টীয় উৎসবটি। আল-ইয়াযু বিল্লাহ।
এই দিনে ভালোবাসা প্রদানের নামে বহু নারী নিজের সতীত্ব বিসর্জন দেয়। নিজের আদর্শকে ভুলে, স্বীয় ভূষণকে বর্জন করে বহু মুসলিম এই দিন বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুকরণে অবাধ ও উন্মত্ত ভালোবাসায় মেতে উঠে। আমাদের দেশও এর ব্যতিক্রম নয়। তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের হাত ধরে আসা এই দিবসটি ১৯৯৩ সাল থেকে এদেশেও উদযাপিত হয়। কথিত সুশীল সমাজের মোড়লরা দেশের উঠতি বয়সী কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী ও যুবক-যুবতীদেরকে নোংরামি ও অশ্লীলতায় উসকে দেয়। কিন্তু এ থেকে উত্তরণ প্রয়োজন, প্রয়োজন মুক্তির।
প্রিয় পাঠক, বক্ষ্যমাণ নিবন্ধটিতে আমরা এই দিবসটির উৎপত্তি এবং এ ব্যাপারে শরিয়তের দৃষ্টিভঙ্গি দলিলপ্রমাণ সহকারে আলোচনা করেছি। ফালিল্লাহিল হামদ। তাহলে আসুন, জেনে নেই এই উৎসবের ব্যাপারে ইসলামী বিধিবিধান। ওয়াল্লাহুল মুওয়াফফিকু ওয়াল মুয়িন।
·
ইতিহাস:
ভ্যালেন্টাইনস ডে তথা ভালোবাসা দিবসের উৎপত্তিগত ইতিহাস নিয়ে বেশ কিছু কিংবদন্তী প্রচলিত আছে। [বিস্তারিত দ্রষ্টব্য: দৈনিক সংগ্রাম; সম্পাদকীয় পাতা; রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ; (অনলাইন ভার্শন)]
তার মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ঘটনাটি আমরা উল্লেখ করছি। ২৬৯ সালে ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেইটাইন নামে একজন খ্রিষ্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ছিলেন। ধর্মপ্রচারের অভিযোগে তৎকালীন রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস তাঁকে বন্দী করেন। কারণ তখন রোমান সাম্রাজ্যে খ্রিষ্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। বন্দী অবস্থায় তিনি জনৈক কারারক্ষীর দৃষ্টিহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন।
এতে সেন্ট ভ্যালেইটাইনের জনপ্রিয়তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। সেই দিন ১৪ই ফেব্রুয়ারি ছিল। কথিত আছে, ওই দিনই এক চিঠিতে তিনি মেয়েটিকে তাঁর ভালোবাসার কথা জানান। চিঠির নিচে লেখেন, ‘ইতি, তোমারই ভ্যালেন্টাইন’ (Your Valentine)। বলা হয়ে থাকে, এটাই সর্বপ্রথম ভ্যালেন্টাইন কার্ড, যা স্বয়ং সেন্ট ভ্যালেন্টাইন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মেয়েটিকে প্রদান করেছিলেন। বর্তমানে প্রচলিত আধুনিক ভ্যালেন্টাইন কার্ডগুলোতে “ফ্রম ইওর ভ্যালেন্টাইন” কথাটি লেখা থাকে। [দ্র.: en(ডট)m(ডট)wikipedia(ডট)org/wiki/Valentine's_Day]
তারপর ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস ভ্যালেইটাইন এর স্মরণে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন দিবস ঘোষণা করেন। খ্রিষ্টান জগতে পাদ্রী ও সাধুদের স্মরণে এ ধরনের অনেক দিবস তৈরি হয়েছে। যেমন: ২৩শে এপ্রিল সেন্ট জর্জ ডে, ১১ই নভেম্বর সেন্ট মার্টিন ডে, ২৪শে আগস্ট সেন্ট বার্থোলোমিজম ডে, ১লা নভেম্বর আল সেইন্টম ডে, ৩০শে নভেম্বর সেন্ট এন্ড্রু ডে, ১৭ই মার্চ সেন্ট প্যাট্রিক ডে।
পাশ্চাত্য সমাজে জন্মদিনের উৎসব, ধর্মোৎসব সবক্ষেত্রেই ভোগের বিষয়টি মুখ্য। তাই গির্জার অভ্যন্তরেও মদ্যপানে তারা কসুর করে না। এই ভ্যালেন্টাইন দিবসের কারণে খ্রিষ্টীয় চেতনা বিনষ্ট হওয়ায় ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ভ্যালেইটাইন উৎসব নিষিদ্ধ করা হয়। ইংল্যান্ডে ক্ষমতাসীন পিউরিটানরাও একসময় প্রশাসনিকভাবে এ দিবস উদ্যাপন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এছাড়া অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানিতে বিভিন্ন সময়ে এ দিবস প্রত্যাখ্যাত হয়। সম্প্রতি পাকিস্তানেও ২০১৭ সালে ইসলাম-বিরোধী হওয়ায় ভ্যালেন্টাইন উৎসব নিষিদ্ধ করে সেদেশের আদালত।
বর্তমান সময়ে পাশ্চাত্যে এ উৎসব মহাসমারোহে উদ্যাপন করা হয়। যুক্তরাজ্যে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক লোক প্রায় ১০০ কোটি পাউন্ড ব্যয় করে এই ভালোবাসা দিবসের জন্য কার্ড, ফুল, চকলেট, অন্যান্য উপহার ও শুভেচ্ছা সামগ্রী ক্রয় করতে। আর তারা আনুমানিক প্রায় ২.৫ কোটি শুভেচ্ছা কার্ড আদান-প্রদান করে। [দ্র.: bn(ডট)m(ডট)wikipedia(ডট)org/wiki/ভালোবাসা_দিবস.]
বাংলাদেশে এ দিবস উদ্যাপন শুরু হয় ১৯৯৩ সালে। প্রগতিশীল মুক্তমনা সাংবাদিক ব্যক্তিত্ব শফিক রেহমান সর্বপ্রথম বাংলাদেশে দিবসটি প্রবর্তন করেন। বিলেত ফেরত এই মুক্তমনা সাংবাদিক পাশ্চাত্যের তথাকথিত প্রগতিশীল (আসলে দুর্গতিশীল) রীতিনীতিতে অভ্যস্ত ছিলেন। দেশে ফিরেই তিনি এই বেহায়া দিবস পালন করা শুরু করেন। এ নিয়ে অনেক মতানৈক্য ও মতবিরোধ হলেও শেষ পর্যন্ত শফিক রেহমানের দুর্গতিশীল চিন্তাধারা নতুন প্রজন্মকে আকর্ষণ করে। সেই থেকে আমাদের দেশে এই দিনটির বেহায়াপনা শুরু হয়। [দৈনিক ইত্তেফাক, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দ; ‘কবে থেকে ভালোবাসা দিবসের শুরু’ শীর্ষক কলাম (অনলাইন ভার্শন); দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দ; ‘বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবসের সূচনা শফিক রেহমানের’ শীর্ষক কলাম; (অনলাইন ভার্শন)]
·
ভালোবাসা দিবস বিধর্মীদের ঔরসজাত উৎসব:
মহান আল্লাহ আমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনীত
করেছেন। তিনি বলেছেন, إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ “নিশ্চয়ই আল্লাহর
নিকট একমাত্র দ্বীন হল ইসলাম।” [সুরা আলে ইমরান: ১৯]
এই দ্বীন ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন আল্লাহ কারও কাছ থেকে
গ্রহণ করবেন না। তিনি বলেছেন, وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ “আর যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন গ্রহণ করতে চাইবে কক্ষনো
তার সেই দ্বীন কবুল করা হবে না এবং আখিরাতে সে ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত
হবে।” [সুরা আলে ইমরান: ৮৫]
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ
ﷺ বলেন, وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لاَ يَسْمَعُ بِي أَحَدٌ مِنْ هَذِهِ الأُمَّةِ يَهُودِيٌّ وَلاَ نَصْرَانِيٌّ ثُمَّ يَمُوتُ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِالَّذِي أُرْسِلْتُ بِهِ إِلاَّ كَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ “সে সত্তার
কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! ইহুদি হোক আর খ্রিষ্টান হোক, যে ব্যক্তিই আমার এ
রিসালাতের খবর শুনেছে অথচ আমার রিসালাতের উপর ঈমান না এনে মৃত্যুবরণ করবে, সে অবশ্যই
জাহান্নামী হবে।” [সাহীহ মুসলিম, হা/১৫৩]
নবি ﷺ সংবাদ দিয়েছেন যে, তাঁর উম্মাহর একটি দল আল্লাহর শত্রু ইহুদি-খ্রিষ্টানের
অনুসরণ করবে। যেমন আবু সায়িদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু নবি ﷺ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, لَتَتْبَعُنَّ سَنَنَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ شِبْرًا شِبْرًا وَذِرَاعًا بِذِرَاعٍ حَتَّى لَوْ دَخَلُوا جُحْرَ ضَبٍّ تَبِعْتُمُوهُمْ قُلْنَا يَا رَسُولَ اللهِ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى قَالَ فَمَنْ “অবশ্য অবশ্যই তোমরা তোমাদের আগের লোকেদের রীতিনীতি বিঘতে বিঘতে,
হাতে হাতে অনুকরণ করবে। এমনকি তারা যদি সাণ্ডার গর্তে ঢুকে, তাহলে তোমরাও তাদের অনুকরণ
করবে। আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রসুল, এরা কি ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা?’ তিনি বললেন, তবে
আর কারা?” [সাহীহ বুখারী, হা/৭৩২০; সাহীহ মুসলিম, হা/২৬৬৯]
আব্দুল্লাহ বিন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, لَيَأْتِيَنَّ عَلَى أُمَّتِي مَا أَتَى عَلَى بَنِي إِسْرَائِيلَ حَذْوَ النَّعْلِ بِالنَّعْلِ حَتَّى إِنْ كَانَ مِنْهُمْ مَنْ أَتَى أُمَّهُ عَلاَنِيَةً لَكَانَ فِي أُمَّتِي مَنْ يَصْنَعُ ذَلِكَ “বনি ইসরাইল
সম্প্রদায় যে অবস্থায় পতিত হয়েছিল, নিঃসন্দেহে আমার উম্মাহও সেই অবস্থার সম্মুখীন
হবে, যেমন একজোড়া জুতোর একটি অপরটি মতো হয়ে থাকে। এমনকি তাদের মধ্যে কেউ যদি প্রকাশ্যে
তার মায়ের সাথে ব্যভিচার করে থাকে, তবে আমার উম্মাহর মধ্যেও কেউ তাই করবে।” [তিরমিযি,
হা/২৬৪১; সনদ: হাসান]
·
শরয়ি মানদণ্ডে ভালোবাসা দিবস:
প্রথমত, ইসলামি শরিয়ত মুসলিমদের জন্য স্রেফ দুটি ইদ
(উৎসব) নির্ধারণ করেছে। তাই এই দুই উৎসব ব্যতীত অন্য কোন উৎসব পালন করা মুসলিমের জন্য
বৈধ নয়। আনাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেছেন, قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْمَدِينَةَ وَلَهُمْ يَوْمَانِ يَلْعَبُونَ فِيهِمَا فَقَالَ مَا هَذَانِ الْيَوْمَانِ. قَالُوا كُنَّا نَلْعَبُ فِيهِمَا فِي الْجَاهِلِيَّةِ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَبْدَلَكُمْ بِهِمَا خَيْرًا مِنْهُمَا يَوْمَ الأَضْحَى وَيَوْمَ الْفِطْرِ “রসুলুল্লাহ ﷺ মদিনায় পৌঁছে দেখতে পান যে, সেখানকার অধিবাসীরা দুইটি
দিন (নওরোজ ও মেহেরজান) খেলাধুলো ও আনন্দ-উৎসব করে থাকে। তিনি জিজ্ঞেস করেন, এই দুটি
দিন কিসের? তারা বলে, জাহেলি যুগে আমরা এই দুই দিন খেলাধূলা ও উৎসব করতাম। রসুলুল্লাহ
ﷺ বলেন, আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে
এই দুই দিনের পরিবর্তে অন্য দুটি উত্তম দিন দান করেছেন। আর তা হলো, ইদুল আদহা (কুরবানির
ইদ) এবং ইদুল ফিতর (রোজার ইদ)।” [আবু দাউদ, হা/১১৩৪; সনদ: সহিহ]
আল্লাহ তাআলা মুসলিমদেরকে দুটি দিবস নির্ধারণ করে দিয়েছেন,
যে দুটি দিবসে তারা উৎসব পালন করবে। রসুল ﷺ তো বলতে পারতেন, তোমাদের দুই দিন থাক। সাথে এই দুটিও নাও। কিন্তু
তিনি তা বলেননি। কারণ ইসলাম এসেছে জাহেলিয়াতকে অপসৃত করতে। ইসলাম চায় জাহেলিয়াতের অপনোদন।
ইসলাম আর জাহেলিয়াত কখনও এক হতে পারে না। এ হাদিস থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়ে গেল
যে, মুসলিমদের জীবনে এই দুটি দিবস ছাড়া অন্য কোন দিবস থাকতে পারে না। সুতরাং ভালোবাসা
দিবস শরিয়তের দৃষ্টিতে অবৈধ। [আশ-শাইখুল আল্লামাহ মুহাম্মাদ বিন আলী বিন আদাম আল-ইতিয়োবি
রাহিমাহুল্লাহ, শারহু সুনানিন নাসায়ি (যাখিরাতুল উকবা ফি শারহিল মুজতাবা); খণ্ড: ১৭;
পৃষ্ঠা: ১৫৩-১৫৪; দারু আলি বারুম, মক্কা কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৩ হি./২০০৩ খ্রি.
(১ম প্রকাশ)]
দ্বিতীয়ত, ভালোবাসা দিবস ইসলামী সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত
নয়। বরং এটা বিজাতীয় অপসংস্কৃতি। কোন মুসলিমের জন্য বিজাতীয়দের অনুসরণ-অনুকরণ বৈধ নয়।
ইবনু উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ “যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত গণ্য
হবে।” [আবূ দাঊদ, হা/৪০৩১; সনদ: হাসান]
রাসুলুল্লাহ ﷺ আরও বলেছেন, لَيْسَ مِنَّا مَنْ تَشَبَّهَ بِغَيْرِنَا لاَ تَشَبَّهُوا بِالْيَهُودِ وَلاَ بِالنَّصَارَى “বিজাতির অনুকরণকারী ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়। তোমরা ইহুদিদের
অনুকরণ করো না, খ্রিষ্টানদেরও অনুকরণ করো না।” [তিরমিযি, হা/২৬৯৫; সনদ: হাসান]
তৃতীয়ত, ভালোবাসা দিবস অবৈধ প্রেম ও প্রণয় উসকে দেয়।
এ কারণে সমাজে বৃদ্ধি পায় জেনা, ব্যভিচার ও অবৈধ সম্পর্ক। অথচ মহান আল্লাহ বলেছেন,
وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا ۖ إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا “আর ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ, আর অতি জঘন্য
পথ।" [সূরাহ ইসরা: ৩২]
চতুর্থত, ভালোবাসা দিবস উদ্যাপনের ফলে সমাজে অশ্লীলতা
ও বেহায়াপনা বৃদ্ধি পায়। মুসলিম সমাজে যারা এ ধরণের অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার বিস্তার
ঘটায় তাদের জন্য রয়েছে, মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে কঠিন শাস্তি। মহান আল্লাহ বলেছেন, إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَنْ تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ ۚ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ “মুমিনদের মধ্যে যারা অশ্লীলতার প্রসার ঘটায়, তাদের জন্য ইহ ও পরকালে
রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। বস্তুত আল্লাহ জানেন, আর তোমরা জানো না।” [সূরাহ নূর: ১৯]
আলিমগণের ফতোয়া:
সৌদি ফাতাওয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য ফাকিহুয যামান আশ-শাইখুল আল্লামাহ ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান হাফিযাহুল্লাহর ফতোয়া—
ﺍﻟﺴﺆﺍﻝ: ﺃﺣﺴﻦ ﺍﻟﻠﻪ ﺇﻟﻴﻜﻢ ﺻﺎﺣﺐ ﺍﻟﻔﻀﻴﻠﺔ، ﻫﺬﻩ ﻋﺪﺓ ﺃﺳﺌﻠﺔ ﺣﻮﻝ ﻣﺎ ﻳﺴﻤﻰ ﺑﻌﻴﺪ ﺍﻟﺤﺐ ﻳﺄﻣﻠﻮﻥ ﻣﻨﻜﻢ ﺍﻟﺒﻴﺎﻥ ﻟﺨﻄﺮ ﻫﺬﺍ ﺍﻻﺣﺘﻔﺎﻝ ﻭﺇﺧﺮﺍﺝ ﻓﺘﻮﻯ ﻣﻦ ﺍﻟﻠﺠﻨﺔ ﺍﻟﺪﺍﺋﻤﺔ ﻓﻲ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻤﻮﺿﻮﻉ؟
ﺍﻟﺠﻮﺍﺏ: ﻭﺷﻪ ﻋﻴﺪ ﺍﻟﺤﺐ؟ ﻋﻴﺪ ﺍﻟﻨﺼﺎﺭﻯ ﻣﺎ ﻳﺠﻮﺯ ﻟﻠﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﻳﺸﺎﺭﻛﻮﻫﻢ، ﻭﻻ ﻳﺸﺠﻌﻮﻫﻢ ﻋﻠﻴﻪ، ﻭﻻ ﻳﺸﻬﺪﻭﻥ ﺍﻟﺰﻭﺭ، ﻫﺬﻩ ﺃﻋﻴﺎﺩ ﺍﻟﻜﻔﺎﺭ ﻻ ﻳﺸﺠﻌﻮﻧﻬﻢ، ﺣﺐ ﻟﻤﻦ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺤﺐ؟ ﺣﺒﺎً ﻹﺑﻠﻴﺲ؟ ﺃﻭ ﺣﺐ ﻟﻠﻤﺴﻴﺢ - ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﺍﻟﺴﻼﻡ - ؟ ﺃﻭ ﺣﺐ ﻟﻤﺎ ﺑﻴﻨﻬﻢ؟ ﻣﺎ ﺑﻴﻨﻬﻢ ﺣﺐ ﻭﻫﻢ ﻛﻔﺎﺭ : ( ﺗَﺤْﺴَﺒُﻬُﻢْ ﺟَﻤِﻴﻌًﺎ ﻭَﻗُﻠُﻮﺑُﻬُﻢْ ﺷَﺘَّﻰ )، ﻗﺎﻟﻮﺍ : ﺍﻟﺤﺐ ﻣﻊ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ؟ ﻫﺬﺍ ﻓﺎﺣﺸﺔ.
উত্তর: “ভালোবাসা দিবস? এটা তো খ্রিষ্টানদের উৎসব। মুসলিমদের জন্য খ্রিষ্টানদের সাথে শরিক হওয়া বৈধ নয়। আর এ ব্যাপারে তাদেরকে উৎসাহিত করা এবং মিথ্যা উৎসবে উপস্থিত হওয়া প্রভৃতিও বৈধ নয়। এগুলো কাফিরদের উৎসব, মুসলিমরা তাদেরকে এ ব্যাপারে উৎসাহিত করবে না। ভালোবাসা, তা সেই ভালোবাসাটা কার জন্য? ইবলিসের জন্য? নাকি মাসীহ (ইসা আলাইহিস সালাম) এর জন্য? নাকি কাফিরদের জন্য? তাদের মধ্যে ভালোবাসা নেই, তারা তো কাফির। (যাদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,) “তুমি তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ মনে করছ, অথচ তাদের অন্তরসমূহ বিচ্ছিন্ন (অর্থাৎ, তাদের অন্তরের মিল নেই)”। (সুরা হাশর: ১৪) তারা বলে, নারীর সাথে ভালোবাসা? কিন্তু এটা তো অশ্লীলতা।” [দ্র.: www.alfawzan(ডট)af(ডট)org(ডট)sa/ar/node/3853]
·
বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠতম ফাকিহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসুলবিদ আশ-শাইখুল আল্লামাহ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন রাহিমাহুল্লাহর ফতোয়া—
ﺍﻟﺴﺆﺍﻝ: ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ، ﻓﻀﻴﻠﺔ ﺍﻟﺸﻴﺦ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺻﺎﻟﺢ ﺍﻟﻌﺜﻴﻤﻴﻦ –ﺣﻔﻈﻪ ﺍﻟﻠﻪ–، ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻋﻠﻴﻜﻢ ﻭﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺑﺮﻛﺎﺗﻪ، ﻭﺑﻌﺪ : ﻓﻘﺪ ﺍﻧﺘﺸﺮ ﻓﻲ ﺍﻵﻭﻧﺔ ﺍﻷﺧﻴﺮﺓ ﺍﻻﺣﺘﻔﺎﻝ ﺑﻌﻴﺪ ﺍﻟﺤﺐ –ﺧﺎﺻﺔ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﻄﺎﻟﺒﺎﺕ– ﻭﻫﻮ ﻋﻴﺪ ﻣﻦ ﺃﻋﻴﺎﺩ ﺍﻟﻨﺼﺎﺭﻯ، ﻭﻳﻜﻮﻥ ﺍﻟﺰﻱ ﻛﺎﻣﻼً ﺑﺎﻟﻠﻮﻥ ﺍﻷﺣﻤﺮ ﺍﻟﻤﻠﺒﺲ ﻭﺍﻟﺤﺬﺍﺀ، ﻭﻳﺘﺒﺎﺩﻟﻦ ﺍﻟﺰﻫﻮﺭ ﺍﻟﺤﻤﺮﺍﺀ. ﻧﺄﻣﻞ ﻣﻦ ﻓﻀﻴﻠﺘﻜﻢ ﺑﻴﺎﻥ ﺣﻜﻢ ﺍﻻﺣﺘﻔﺎﻝ ﺑﻤﺜﻞ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻌﻴﺪ، ﻭﻣﺎ ﺗﻮﺟﻴﻬﻜﻢ ﻟﻠﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﻓﻲ ﻣﺜﻞ ﻫﺬﻩ ﺍﻷﻣﻮﺭ، ﻭﺍﻟﻠﻪ ﻳﺤﻔﻈﻜﻢ ﻭﻳﺮﻋﺎﻛﻢ.
ﺍﻟﺠﻮﺍﺏ: ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ. ﻭﻋﻠﻴﻜﻢ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻭﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺑﺮﻛﺎﺗﻪ . ﺍﻻﺣﺘﻔﺎﻝ ﺑﻌﻴﺪ ﺍﻟﺤﺐ ﻻ ﻳﺠﻮﺯ ﻟﻮﺟﻮﻩ:
ﺍﻷﻭﻝ : ﺃﻧﻪ ﻋﻴﺪ ﺑﺪﻋﻲ ﻻ ﺃﺳﺎﺱ ﻟﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﺸﺮﻳﻌﺔ.
ﺍﻟﺜﺎﻧﻲ : ﺃﻧﻪ ﻳﺪﻋﻮ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻌﺸﻖ ﻭﺍﻟﻐﺮﺍﻡ.
ﺍﻟﺜﺎﻟﺚ : ﺃﻧﻪ ﻳﺪﻋﻮ ﺇﻟﻲ ﺍﺷﺘﻐﺎﻝ ﺍﻟﻘﻠﺐ ﺑﻤﺜﻞ ﻫﺬﻩ ﺍﻷﻣﻮﺭ ﺍﻟﺘﺎﻓﻬﺔ ﺍﻟﻤﺨﺎﻟﻔﺔ ﻟﻬﺪﻱ ﺍﻟﺴﻠﻒ ﺍﻟﺼﺎﻟﺢ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻢ.
ﻓـــــــﻼ ﻳــــﺤــــﻞ ﺃﻥ ﻳﺤﺪﺙ ﻓﻲ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻴﻮﻡ ﺷﻲﺀ ﻣﻦ ﺷﻌﺎﺋﺮ ﺍﻟﻌﻴﺪ ﺳﻮﺍﺀ ﻛﺎﻥ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺂﻛﻞ ﺃﻭ ﺍﻟﻤﺸﺎﺭﺏ ﺃﻭ ﺍﻟﻤﻼﺑﺲ ﺃﻭ ﺍﻟﺘﻬﺎﺩﻱ ﺃﻭ ﻏﻴﺮ ﺫﻟﻚ ، ﻭﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﺴﻠﻢ ﺃﻥ ﻳﻜﻮﻥ ﻋﺰﻳﺰﺍ ﺑﺪﻳﻨﻪ ، ﻭﻻ ﻳﻜﻮﻥ ﺇﻣَّــﻌَــﺔً ﻳﺘﺒﻊ ﻛﻞ ﻧﺎﻋﻖ . ﺃﺳﺄﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﺃﻥ ﻳﻌﻴﺬ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﻣﻦ ﻛﻞ ﺍﻟﻔﺘﻦ ﻣﺎ ﻇﻬﺮ ﻣﻨﻬﺎ ﻭﻣﺎ ﺑﻄﻦ ، ﻭﺃﻥ ﻳﺘﻮﻻﻧﺎ ﺑﺘﻮﻟﻴﻪ ﻭﺗﻮﻓﻴﻘﻪ.
ﻛﺘﺒﻪ: ﻣﺤﻤﺪ ﺍﻟﺼﺎﻟﺢ ﺍﻟﻌﺜﻴﻤﻴﻦ ﻓﻲ 5 / 11 / 1420 ﻫـ.
উত্তর: “পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহর নামে শুরু করছি। ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। কয়েকটি কারণে ভালোবাসা দিবস উদ্যাপন করা না-জায়েজ (অবৈধ)।
প্রথমত, এটা একটা নবউদ্ভাবিত উৎসব, (ইসলামি) শরিয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই।
দ্বিতীয়ত, এটা (অবৈধ) প্রেম ও (ধ্বংসাত্মক) প্রণয়ের দিকে আহ্বান করে।
তৃতীয়ত, এটা অন্তরকে ন্যায়নিষ্ঠ সালাফদের (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) আদর্শ পরিপন্থি অনর্থক কাজে ব্যতিব্যস্ত রাখার দিকে আহ্বান করে।
সুতরাং এই দিনে উৎসবটির কোনো নিদর্শন জাহির করা বৈধ হবে না। চাই তা খাদ্য ও পানীয়ের ক্ষেত্রে হোক, বা পোশাক পরিচ্ছদ, উপহার উপঢৌকন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে হোক (সকল ক্ষেত্রেই তা অবৈধ বলে গণ্য হবে)। মুসলিমের উচিত স্বীয় দ্বীনের ব্যাপারে বলিষ্ঠ অবস্থানে থাকা। মুসলিমের সেই সুবিধাবাদী হওয়া উচিত নয়, যে কিনা নিজের কাছে যা ভালো লাগে তারই অনুসরণ করে। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন মুসলিমদেরকে যাবতীয় প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ফিতনা থেকে রক্ষা করেন এবং স্বীয় তত্ত্বাবধান ও তৌফিকে আমাদের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
এটা লিখেছেন: মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমিন। তারিখ: ৫/১১/১৪২০ হি.।” [ইমাম ইবনু উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ, মাজমুউ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়িল; খণ্ড: ১৬; পৃষ্ঠা: ১৯৯-২০০; দারুস সুরাইয়্যা, রিয়াদ কর্তৃক; সন: ১৪২৩ হি./২০০২ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]
·
সৌদি আরবের ইলমি গবেষণা ও ফতোয়া প্রদানকারী স্থায়ী কমিটির ফতোয়া—
السؤال: ﻳﺤﺘﻔﻞ ﺑﻌﺾ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻓﻲ ﺍﻟﻴﻮﻡ ﺍﻟﺮﺍﺑﻊ ﻋﺸﺮ ﻣﻦ ﺷﻬﺮ ﻓﺒﺮﺍﻳﺮ 14\2 ﻣﻦ ﻛﻞ ﺳﻨﺔ ﻣﻴﻼﺩﻳﺔ ﺑﻴﻮﻡ ﺍﻟﺤﺐ (ﻓﺎﻟﻨﺘﻴﻦ ﺩﺍﻱ) (valentine day) ﻭﻳﺘﻬﺎﺩﻭﻥ ﺍﻟﻮﺭﻭﺩ ﺍﻟﺤﻤﺮﺍﺀ، ﻭﻳﻠﺒﺴﻮﻥ ﺍﻟﻠﻮﻥ ﺍﻷﺣﻤﺮ، ﻭﻳﻬﻨﺌﻮﻥ ﺑﻌﻀﻬﻢ، ﻭﺗﻘﻮﻡ ﺑﻌﺾ ﻣﺤﻼﺕ ﺍﻟﺤﻠﻮﻳﺎﺕ ﺑﺼﻨﻊ ﺣﻠﻮﻳﺎﺕ ﺑﺎﻟﻠﻮﻥ ﺍﻷﺣﻤﺮ، ﻭﻳﺮﺳﻢ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﻗﻠﻮﺏ، ﻭﺗﻌﻤﻞ ﺑﻌﺾ ﺍﻟﻤﺤﻼﺕ ﺇﻋﻼﻧﺎﺕ ﻋﻠﻰ ﺑﻀﺎﺋﻌﻬﺎ ﺍﻟﺘﻲ ﺗﺨﺺ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻴﻮﻡ . ﻓﻤﺎ ﻫﻮ ﺭﺃﻳﻜﻢ :
ﺃﻭﻻً : ﺍﻻﺣﺘﻔﺎﻝ ﺑﻬﺬﺍ ﺍﻟﻴﻮﻡ؟
ﺛﺎﻧﻴًﺎ : ﺍﻟﺸﺮﺍﺀ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺤﻼﺕ ﻓﻲ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻴﻮﻡ؟
ﺛﺎﻟﺜًﺎ : ﺑﻴﻊ ﺃﺻﺤﺎﺏ ﺍﻟﻤﺤﻼﺕ (ﻏﻴﺮ ﺍﻟﻤﺤﺘﻔﻠﺔ) ﻟﻤﻦ ﻳﺤﺘﻔﻞ ﺑﺒﻌﺾ ﻣﺎ ﻳﻬﺪﻯ ﻓﻲ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻴﻮﻡ؟
ﻭﺟﺰﺍﻛﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺧﻴﺮًﺍ.
الجواب: ﺩﻟﺖ ﺍﻷﺩﻟﺔ ﺍﻟﺼﺮﻳﺤﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﻭﺍﻟﺴﻨﺔ، ﻭﻋﻠﻰ ﺫﻟﻚ ﺃﺟﻤﻊ ﺳﻠﻒ ﺍﻷﻣﺔ ﺃﻥ ﺍﻷﻋﻴﺎﺩ ﻓﻲ ﺍﻹﺳﻼﻡ ﺍﺛﻨﺎﻥ ﻓﻘﻂ، ﻫﻤﺎ : ﻋﻴﺪ ﺍﻟﻔﻄﺮ ﻭﻋﻴﺪ ﺍﻷﺿﺤﻰ، ﻭﻣﺎ ﻋﺪﺍﻫﻤﺎ ﻣﻦ ﺍﻷﻋﻴﺎﺩ، ﺳﻮﺍﺀ ﻛﺎﻧﺖ ﻣﺘﻌﻠﻘﺔ ﺑﺸﺨﺺ ﺃﻭ ﺟﻤﺎﻋﺔ ﺃﻭ ﺣﺪﺙ ﺃﻭ ﺃﻱ ﻣﻌﻨﻰ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﻌﺎﻧﻲ ﻓﻬﻲ ﺃﻋﻴﺎﺩ ﻣﺒﺘﺪﻋﺔ ﻻ ﻳﺠﻮﺯ ﻷﻫﻞ ﺍﻹﺳﻼﻡ ﻓﻌﻠﻬﺎ ﻭﻻ ﺇﻗﺮﺍﺭﻫﺎ ﻭﻻ ﺇﻇﻬﺎﺭ ﺍﻟﻔﺮﺡ ﺑﻬﺎ ﻭﻻ ﺍﻹﻋﺎﻧﺔ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﺑﺸﻲﺀ؛ ﻷﻥ ﺫﻟﻚ ﻣﻦ ﺗﻌﺪﻱ ﺣﺪﻭﺩ ﺍﻟﻠﻪ، ﻭﻣﻦ ﻳﺘﻌﺪ ﺣﺪﻭﺩ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻘﺪ ﻇﻠﻢ ﻧﻔﺴﻪ، ﻭﺇﺫﺍ ﺍﻧﻀﺎﻑ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻌﻴﺪ ﺍﻟﻤﺨﺘﺮﻉ ﻛﻮﻧﻪ ﻣﻦ ﺃﻋﻴﺎﺩ ﺍﻟﻜﻔﺎﺭ ﻓﻬﺬﺍ ﺇﺛﻢ ﺇﻟﻰ ﺇﺛﻢ؛ ﻷﻥ ﻓﻲ ﺫﻟﻚ ﺗﺸﺒﻬًﺎ ﺑﻬﻢ ﻭﻧﻮﻉ ﻣﻮﺍﻻﺓ ﻟﻬﻢ، ﻭﻗﺪ ﻧﻬﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺳﺒﺤﺎﻧﻪ ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ ﻋﻦ ﺍﻟﺘﺸﺒﻪ ﺑﻬﻢ ﻭﻋﻦ ﻣﻮﺍﻻﺗﻬﻢ ﻓﻲ ﻛﺘﺎﺑﻪ ﺍﻟﻌﺰﻳﺰ، ﻭﺛﺒﺖ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃﻧﻪ ﻗﺎﻝ : ﻣﻦ ﺗﺸﺒﻪ ﺑﻘﻮﻡ ﻓﻬﻮ ﻣﻨﻬﻢ . ﻭﻋﻴﺪ ﺍﻟﺤﺐ ﻫﻮ ﻣﻦ ﺟﻨﺲ ﻣﺎ ﺫُﻛﺮ؛ ﻷﻧﻪ ﻣﻦ ﺍﻷﻋﻴﺎﺩ ﺍﻟﻮﺛﻨﻴﺔ ﺍﻟﻨﺼﺮﺍﻧﻴﺔ، ﻓﻼ ﻳﺤﻞ ﻟﻤﺴﻠﻢ ﻳﺆﻣﻦ ﺑﺎﻟﻠﻪ ﻭﺍﻟﻴﻮﻡ ﺍﻵﺧﺮ ﺃﻥ ﻳﻔﻌﻠﻪ ﺃﻭ ﺃﻥ ﻳﻘﺮﻩ ﺃﻭ ﺃﻥ ﻳﻬﻨﺊ ﺑﻪ، ﺑﻞ ﺍﻟﻮﺍﺟﺐ ﺗﺮﻛﻪ ﻭﺍﺟﺘﻨﺎﺑﻪ ﺍﺳﺘﺠﺎﺑﺔ ﻟﻠﻪ ﻭﻟﺮﺳﻮﻟﻪ ﻭﺑﻌﺪًﺍ ﻋﻦ ﺃﺳﺒﺎﺏ ﺳﺨﻂ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻋﻘﻮﺑﺘﻪ، ﻛﻤﺎ ﻳﺤﺮﻡ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﺴﻠﻢ ﺍﻹﻋﺎﻧﺔ ﻋﻠﻰ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻌﻴﺪ ﺃﻭ ﻏﻴﺮﻩ ﻣﻦ ﺍﻷﻋﻴﺎﺩ ﺍﻟﻤﺤﺮﻣﺔ ﺑﺄﻱ ﺷﻲﺀ ﻣﻦ ﺃﻛﻞ ﺃﻭ ﺷﺮﺏ ﺃﻭ ﺑﻴﻊ ﺃﻭ ﺷﺮﺍﺀ ﺃﻭ ﺻﻨﺎﻋﺔ ﺃﻭ ﻫﺪﻳﺔ ﺃﻭ ﻣﺮﺍﺳﻠﺔ ﺃﻭ ﺇﻋﻼﻥ ﺃﻭ ﻏﻴﺮ ﺫﻟﻚ؛ ﻷﻥ ﺫﻟﻚ ﻛﻠﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﺘﻌﺎﻭﻥ ﻋﻠﻰ ﺍﻹﺛﻢ ﻭﺍﻟﻌﺪﻭﺍﻥ ﻭﻣﻌﺼﻴﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ، ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺟﻞ ﻭﻋﻼ ﻳﻘﻮﻝ : َتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ. ﻭﻳﺠﺐ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﺴﻠﻢ ﺍﻻﻋﺘﺼﺎﻡ ﺑﺎﻟﻜﺘﺎﺏ ﻭﺍﻟﺴﻨﺔ ﻓﻲ ﺟﻤﻴﻊ ﺃﺣﻮﺍﻟﻪ ﻻ ﺳﻴﻤﺎ ﻓﻲ ﺃﻭﻗﺎﺕ ﺍﻟﻔﺘﻦ ﻭﻛﺜﺮﺓ ﺍﻟﻔﺴﺎﺩ، ﻭﻋﻠﻴﻪ ﺃﻥ ﻳﻜﻮﻥ ﻓﻄﻨًﺎ ﺣﺬﺭًﺍ ﻣﻦ ﺍﻟﻮﻗﻮﻉ ﻓﻲ ﺿﻼﻻﺕ ﺍﻟﻤﻐﻀﻮﺏ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﻭﺍﻟﻀﺎﻟﻴﻦ ﻭﺍﻟﻔﺎﺳﻘﻴﻦ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻻ ﻳﺮﺟﻮﻥ ﻟﻠﻪ ﻭﻗﺎﺭًﺍ، ﻭﻻ ﻳﺮﻓﻌﻮﻥ ﺑﺎﻹﺳﻼﻡ ﺭﺃﺳًﺎ، ﻭﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﺴﻠﻢ ﺃﻥ ﻳﻠﺠﺄ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﺑﻄﻠﺐ ﻫﺪﺍﻳﺘﻪ ﻭﺍﻟﺜﺒﺎﺕ ﻋﻠﻴﻬﺎ، ﻓﺈﻧﻪ ﻻ ﻫﺎﺩﻱ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻻ ﻣﺜﺒﺖ ﺇﻻ ﻫﻮ ﺳﺒﺤﺎﻧﻪ.
ﻭﺑﺎﻟﻠﻪ ﺍﻟﺘﻮﻓﻴﻖ، ﻭﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻰ ﻧﺒﻴﻨﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﻭﺁﻟﻪ ﻭﺻﺤﺒﻪ ﻭﺳﻠﻢ.
প্রথমত, এই দিন উদ্যাপন করার ব্যাপারে ?
দ্বিতীয়ত, এদিন এসব দোকান থেকে পণ্য ক্রয় সম্পর্কে?
তৃতীয়ত, কিছু দোকানদার আছে, যারা এই দিন উদ্যাপন করে না। কিন্তু যারা তা উদ্যাপন করে তাদের কাছে এদিনের উপহার সামগ্রী বিক্রয় করে। এই দোকান মালিকদের ব্যাপারে আপনাদের মতামত কী?
জাযাকুমুল্লাহু খাইরান (আল্লাহ আপনাদের উত্তম প্রতিদান দিন)।”
উত্তর: “কুরআন সুন্নাহর সুস্পষ্ট দলিল এবং উম্মাহর সকল সালাফের সর্ববাদিসম্মত অভিমত থেকে প্রতীয়মান হয়েছে, ইসলামে কেবল দুটি ইদ (উৎসব, Festival) রয়েছে—ইদুল ফিতর এবং ইদুল আদহা। এই দুটি ব্যতীত যত ইদ রয়েছে, চাই তা ব্যক্তির সাথে সংশ্লিষ্ট হোক, বা কোন দলের সাথে সংশ্লিষ্ট হোক, আর চাই তা কোন ঘটনা উপলক্ষে হোক বা অন্য যে কোন উপলক্ষে হোক না কেন, তা বিদাতি ইদ বলে গণ্য হবে। মুসলিমদের জন্য এ ইদ উদ্যাপন করা জায়েজ নয়। আর তা সমর্থন করা, এই দিনে আনন্দ করা বা কোনোভাবে এতে সাহায্য সহযোগিতা করাও জায়েজ নয়। কেননা এটা আল্লাহর (আইনি) সীমারেখা লঙ্ঘনের অন্তর্ভুক্ত। যে এ বিধান উল্লঙ্ঘন করে, সে তো নিজের ওপর জুলুম করে।
যদি কেউ এই মনগড়া ইদের দিকে নিজেকে সম্পৃক্ত করে, অধিকন্তু
তা কাফিরদের ইদ, তবে তা হবে পাপের ওপরে পাপ। কেননা এতে তাদের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে এবং
এটা তাদের সাথে একপ্রকার মিত্রতা (ওয়ালা) স্থাপন। অথচ মহান আল্লাহ কুরআনে কাফিরদের
সাথে সাদৃশ্য ও মিত্রতা স্থাপন করতে মুমিনদেরকে নিষেধ করেছেন। আর নবি ﷺ থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন,
“যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত গণ্য হবে।” (আবু দাউদ,
হা/৪০৩১; সনদ: হাসান)
ভালোবাসা দিবস উল্লিখিত বিষয়েরই অন্তর্ভুক্ত। যেহেতু
এটা পরম ভক্তিপূর্ণ খ্রিষ্টীয় উৎসব। সুতরাং আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী কোনো মুসলিমের
জন্য এই উৎসব উদ্যাপন করা, বা তা সমর্থন করা, বা এ উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় করা জায়েয
নয়। বরং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ﷺ ডাকে সাড়া দিয়ে এবং আল্লাহর ক্রোধ ও শাস্তির উপকরণ থেকে দূরে থেকে
এই উৎসব প্রত্যাখ্যান ও বর্জন করা ওয়াজিব।
সকল পরিস্থিতিতে ক্বুরআন সুন্নাহ আঁকড়ে ধরা মুসলিমের উপর ওয়াজিব। বিশেষত ফিতনাহর সময় এবং ব্যাপক বিশৃঙ্খলার সময়। মুসলিমের ওপর আবশ্যক হল প্রজ্ঞাবান হওয়া এবং অভিশপ্ত, পথভ্রষ্ট ও পাপাচারী সম্প্রদায়ের বিপথগামিতায় পতিত হওয়া থেকে সতর্ক সাবধান থাকা; যারা কিনা স্বয়ং আল্লাহকে ভয় করে না এবং ইসলাম গ্রহণ করে গর্ববোধ করে না। মুসলিমের উচিত হিদায়াত ও তার ওপর অবিচলতা প্রার্থনার মাধ্যমে আল্লাহর শরণাপন্ন হওয়া। কেননা আল্লাহ ব্যতীত কোনো হিদায়াত দানকারী নেই, আর আল্লাহ ব্যতীত (সে হেদায়েত) সুপ্রতিষ্ঠিতকারীও কেউ নেই।
আর আল্লাহই তৌফিকদাতা। হে আল্লাহ, আমাদের নাবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবীদের প্রতি আপনি দয়া ও শান্তি বর্ষণ করুন।”
ফতোয়া প্রদান করেছেন—
চেয়ারম্যান: শাইখ আব্দুল আযিয বিন আব্দুল্লাহ আলুশ শাইখ হাফিযাহুল্লাহ
মেম্বার: শাইখ আব্দুল্লাহ বিন গুদাইয়্যান রাহিমাহুল্লাহ
মেম্বার: শাইখ সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান হাফিযাহুল্লাহ
মেম্বার: শাইখ বাকার আবু যাইদ রাহিমাহুল্লাহ।
[ফাতাওয়া লাজনা দায়িমা; ফতোয়া নং: ২১২০৩; গ্রুপ নং: ২; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ২৬৩-২৬৪; গৃহীত: আল-ইফতা (alifta) ডট নেট]
·
অভিভাবকদের জন্য:
সুপ্রিয় পাঠক (আল্লাহ আপনার ওপর রহম করুন), মনোযোগ সহকারে এই হাদিস দুটো পড়ুন, অনুধাবন করুন এবং বাস্তব জীবনে আমল করুন।
আব্দুল্লাহ বিন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত।
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, أَلاَ كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ فَالإِمَامُ الَّذِي عَلَى النَّاسِ رَاعٍ وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ عَلَى أَهْلِ بَيْتِ زَوْجِهَا وَوَلَدِهِ وَهِيَ مَسْئُولَةٌ عَنْهُمْ وَعَبْدُ الرَّجُلِ رَاعٍ عَلَى مَالِ سَيِّدِهِ وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْهُ أَلاَ فَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِه “জেনে রেখ, তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। আর তোমরা প্রত্যেকেই
স্বীয় দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব রাষ্ট্রপ্রধান, যিনি জনগণের দায়িত্বশীল,
তিনি (তাঁর অধীন লোকদের ব্যাপারে) স্বীয় দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন। পুরুষ গৃহকর্তা
তার পরিবারের দায়িত্বশীল; সে (তাঁর অধীনস্থদের ব্যাপারে) স্বীয় দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত
হবে। নারী তার স্বামীর পরিবার, সন্তান-সন্ততির ওপর দায়িত্বশীল, সে এসব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত
হবে। কোনো ব্যক্তির দাস স্বীয় মালিকের সম্পদের দায়িত্বশীল; সে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত
হবে। অতএব জেনে রাখ, প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্বাধীন
বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।” [সহিহ বুখারি, হা/৭০৩৮]
আব্দুল্লাহ বিন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা কর্তৃক বর্ণিত,
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ﺛَﻠَﺎﺛَﺔٌ ﻗَﺪْ ﺣَﺮَّﻡَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ ﻣُﺪْﻣِﻦُ ﺍﻟْﺨَﻤْﺮِ ﻭَﺍﻟْﻌَﺎﻕُّ ﻭَﺍﻟﺪَّﻳُّﻮﺙُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳُﻘِﺮُّ ﻓِﻲ ﺃَﻫْﻠِﻪِ ﺍﻟْﺨَﺒَﺚَ “তিন ব্যক্তির ওপর আল্লাহ
জান্নাতকে হারাম করেছেন। (১) মদ্যপানে আসক্ত ব্যক্তি, (২) পিতামাতার অবাধ্য সন্তান
এবং (৩) দাইয়্যুস, যে স্বীয় পরিবারে অশ্লীলতাকে প্রশ্রয় দেয়।” [সহিহুল জামি, হা/৩০৫২;
সনদ: সহিহ]
ﺃﻃﻠﻖ ﻛﻠﻤﺔ (ﺍﻟﺪﻳﻮﺙ) ﻋﻠﻰ ﻛﻞ ﻣﻦ ﺃﻗﺮ ﺍﻟﺨﺒﺚ ﻓﻲ ﻛﻞ ﻣﻦ ﻟﻪ ﻭﻻﻳﺔ ﻋﻠﻴﻪ؛ ﻣﻦ ﺯﻭﺟﺘﻪ ﻭﺑﻨﺘﻪ ﻭﺃﺧﺘﻪ ﻭﻧﺤﻮ ﺫﻟﻚ، ﺳﻮﺍﺀ ﻛﺎﻥ ﺍﻟﺨﺒﺚ ﺯﻧﺎ ، ﺃﻭ ﻭﺳﺎﺋﻞ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺰﻧﺎ، ﻣﻦ ﻛﺸﻒ ﻋﻮﺭﺓ ﺃﻣﺎﻡ ﺃﺟﻨﺒﻲ ﻭﺧﻠﻮﺓ ﺑﻪ ، ﻭﺗﻄﻴﺐ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﺨﺮﻭﺝ ﻭﻧﺤﻮ ﺫﻟﻚ ﻣﻤﺎ ﻳﺜﻴﺮ ﺍﻟﻔﺘﻨﺔ، ﻭﻳﻐﺮﻱ ﺑﺎﻟﻔﺎﺣﺸﺔ.
“দাইয়্যুস শব্দটি প্রত্যেক ওই ব্যক্তির ওপর প্রযোজ্য
হবে, যে তার দায়িত্বাধীন স্ত্রী, কন্যা, বোন এবং অনুরূপ দায়িত্বাধীন ব্যক্তিদের মধ্যে
অশ্লীলতার অনুমোদন দেয়। হতে পারে সেই অশ্লীলতা সরাসরি ব্যভিচার, বা ব্যভিচারের কোন
মাধ্যম। যেমন বেগানা (যার সাথে বিবাহ হারাম এমন) পুরুষের সামনে আওরাত (শরীর যে অঙ্গগুলো
পাবলিকের মধ্যে ঢেকে রাখা আবশ্যক) খুলে রাখা, তার সাথে নির্জনতা অবলম্বন করা, সুগন্ধি
লাগিয়ে বাইরে বের হওয়া এবং অনুরূপ যে বিষয়গুলো ফিতনাহ আনয়ন করে ও অশ্লীলতার দিকে প্রলুব্ধ
করে।” [ফতোয়া লাজনা দায়িমা, ফতোয়া নং: ৩২৪৬; প্রশ্ন নং: ১; গ্রুপ নং: ১; খণ্ড: ১৭;
পৃষ্ঠা: ১৯৮; গৃহীত: আল-ইফতা (alifta) ডট নেট]
পরিশিষ্ট:
হে মুসলিম ভাই বা বোন, আমি আপনাকে বলছি। নিজের স্বকীয়তাকে বিসর্জন দিয়ে পরের লেজ আঁকড়ে ধরার মধ্যে কোনো সফলতা নেই। সুতরাং এসব নোংরামি, আর বেহায়াপনা বর্জন করুন। ভয় করুন সেই সত্তাকে, যিনি চক্ষুর চোরাচাহনি ও অন্তরের গুপ্ত বিষয় সম্পর্কেও অবগত। [সুরা মুমিন: ১৯] ভয় করুন সেই সত্তাকে, পাপাচারীকে শাস্তি দানে যিনি অত্যন্ত কঠোর। [সুরা মায়িদা: ৯৮]
ওই শুনুন, আপনার মহান প্রতিপালকের হুঁশিয়ারি—“যে দিন আল্লাহর দুশমনদেরকে জাহান্নামের দিকে সমবেত করা হবে, তাদেরকে বিভিন্ন দলে বিন্যস্ত করা হবে। শেষ পর্যন্ত যখন তারা জাহান্নামের নিকটে পৌঁছবে, তখন তারা যা করত সে সম্পর্কে তাদের বিরুদ্ধে তাদেরই কান, চোখ আর চামড়া সাক্ষ্য দেবে। তারা তাদের চামড়াকে বলবে, ‘আমাদের বিরুদ্ধে কেন সাক্ষ্য দিচ্ছ?’ তারা উত্তর দিবে, আল্লাহ আমাদেরকে কথা বলার শক্তি দিয়েছেন, যিনি সব কিছুকেই (আজ) কথা বলার শক্তি দিয়েছেন। তিনিই প্রথমবার তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, আর তাঁর কাছেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে। (দুনিয়ায় নিজেদের শরীরের অংশগুলোকে তোমরা) এই ভেবে গোপন করতে না যে, না তোমাদের কান, না তোমাদের চোখ, আর না তোমাদের চামড়া তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। উপরন্তু তোমরা মনে করতে যে, তোমরা যা করো তার অধিকাংশই আল্লাহ জানেন না। তোমাদের প্রতিপালক সম্বন্ধে এই ধারণাই তোমাদেরকে ধ্বংস করেছে। ফলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্তদের দলে শামিল হয়ে গেছ। এরপর তারা যদি ধৈর্যধারণ করে তবুও জাহান্নামই হবে তাদের আবাস, আর যদি তারা ক্ষমা প্রার্থনা করে তবুও তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে না।” [সুরা ফুসসিলাত: ১৯-২৪]
“সেদিন তাদের জিহ্বা, তাদের হাত, তাদের পা—তারা যা করত, সে ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। আল্লাহ সেদিন তাদেরকে তাদের ন্যায্য পাওনা পুরোপুরিই দেবেন। আর তারা জানতে পারবে যে, আল্লাহই ধ্রুবসত্য।” [সুরা নুর: ২৪-২৫]
পরিশেষে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, হে আমাদের প্রভু, প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সকল ফিতনা থেকে আপনি আমাদেরকে হেফাজত করুন এবং যথাযথভাবে আপনার দ্বীন পালন করার তৌফিক দান করুন। আমিন, ইয়া রব্বাল আলামিন।
·কৃতজ্ঞতা স্বীকার:
(১) www.ajurry(ডট)com/vb/showthread.php?t=11292
(২) ajurry(ডট)com/home/ملف-عيد-الحب/
·
অনুবাদ ও সংকলনে: মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ মৃধা
0 Comments