▌
#আবু_ত্বহা_আদনানের_রদ_৯
আবু ত্বহা আদনানের বয়ানকৃত জাল হাদিস— দাজ্জাল
জেরুজালেম থেকে বের হবে,,
·আবু
ত্বহা মুহাম্মাদ আদনান তার এক বক্তব্যে বলেছে, “চলুন হাদিসে ফিরে যাই। হাদিসে রসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী বলছেন? বলছেন, দাজ্জাল জেরুজালেম থেকে
আত্মপ্রকাশ করবে।” (১৭:২৭ থেকে ১৭:৩৩ মিনিট পর্যন্ত)
আদনান
সাহেব আরেকটি হাদিসে সরাসরি আল্লাহ ও তাঁর রসুলের ওপর মিথ্যাচার করে বলেছে,
“আল্লাহ এবং তাঁর রসুল আমাদেরকে যা বলেছেন। দেখুন, খেয়াল করে। যে, ইহুদিরা
দাজ্জালকে ফলো করবে। বি কেয়ারফুল। ইহুদিরা দাজ্জালকে ফলো করবে এবং দাজ্জাল
জেরুজালেম থেকে বের হয়ে বলবে, আমিই মাসিহ।” (শুরু থেকে ০:১৫ মিনিট পর্যন্ত)
এছাড়াও
আরও বিভিন্ন বক্তব্যে আবু ত্বহা আদনান এই মিথ্যা কথা বলেছে যে, দাজ্জাল জেরুজালেম
থেকে বের হবে। আমি এরকম কয়েকটি বক্তব্যের ইউটিউব লিংক শেয়ার করছি।
১. https://youtu.be/kzGWeaL-PhM
(০:০৯ মিনিট থেকে ০:২৫ মিনিট)
২. https://youtu.be/cILy9Valw6o
(৫:৪৬ মিনিট থেকে ৫:৪৮ মিনিট)
৩. https://youtu.be/LaoZHhtGhbM
(৫:২৬ মিনিট থেকে ৫:৫৩ মিনিট)
৪. https://youtu.be/JO4mR6i6iZ0
(১৮ মিনিট থেকে)। এই লিংক থেকে ভিডিয়োটি রিমুভ করা হয়েছে।
৫. https://youtu.be/TIK4NOsxN7w
(৮:৪৪ মিনিট থেকে ৯:০৯ মিনিট পর্যন্ত)।
·সুপ্রিয়
ভ্রাতৃবর্গ, আবু ত্বহা আদনান উদ্ধৃত বক্তব্যে দুটো গর্হিত অপরাধ এবং অসহনীয় ভুল
করেছে। এক. সে ইসলামি শরিয়ত নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে নবিজির সুস্পষ্ট হাদিসের বিরোধী
কথা বলেছে। দুই. সে হাদিসবিরোধী কথাটিকে নবিজির কথা বলে হাদিসের নামে জালিয়াতি
করেছে! বরং আল্লাহর প্রতিও আরোপ করেছে পরিষ্কার ও নির্জলা মিথ্যা! আসুন, আমাদের
দাবির পক্ষে সরাসরি বিশুদ্ধ হাদিস থেকে প্রমাণ দেখে নিই।
আবু বকর
সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, الدَّجَّالُ يَخْرُجُ مِنْ أَرْضٍ بِالْمَشْرِقِ يُقَالُ لَهَا خُرَاسَانُ يَتْبَعُهُ أَقْوَامٌ كَأَنَّ وُجُوهَهُمُ الْمَجَانُّ الْمُطْرَقَةُ “দাজ্জাল পশ্চিম দিকের ‘খোরাসান’ নামক ভূখণ্ড থেকে
আত্মপ্রকাশ করবে। এমন কতক জাতি তার অনুসরণ করবে, যাদের মুখমণ্ডল হবে চামড়া-মোড়ানো
ঢালের মতো।” [তিরমিজি, হা: ২২৩৭; ইবনু মাজাহ, হা: ৪০৭২; সনদ: সহিহ]
আনাস
রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, يَخْرُجُ الدَّجَّالُ مِنْ يَهُودِيَّةِ أَصْبَهَانَ ، مَعَهُ سَبْعُونَ أَلْفًا مِنْ الْيَهُودِ ، عَلَيْهِمْ السيجان “দাজ্জাল এসফাহনের ‘ইয়াহুদিয়া’ এলাকা থেকে বের হবে।
তার সাথে থাকবে লম্বা চাদরপরিহিত সত্তর হাজার ইহুদি।” [আহমাদ, হা: ১৩৩৪৪; মুসনাদুল
বাযযার, হা: ৬৪১৬; ফাতহুল বারি, খণ্ড: ১৩; পৃষ্ঠা: ৩২৮; সনদ: সহিহ (তাহকিক: ইবনু
হাজার), হাসান (তাহকিক: শুয়াইব আরনাউত)]
কাতারভিত্তিক
ফতোয়াপ্রদানের ওয়েবসাইট ইসলামওয়েবের ২৭৫৭৯ নং ফতোয়ায় বলা হয়েছে, ولا تعارض بينه وبين الأول، إذ أن خراسان إقليم واسع يشتمل على عدة بلدان منها أصبهان “প্রথমোক্ত হাদিসের সাথে এই
হাদিসের কোনো বৈপরীত্য নেই। কেননা খোরাসান একটি প্রশস্ত অঞ্চল, যা অনেকগুলো
ভূখণ্ডকে
ধারন করে। এসবের মধ্যে এসফাহন (Isfahan) অন্যতম।” [দ্রষ্টব্য:
www.islamweb(ডট)net/amp/ar/fatwa/9715]
বর্তমান
যুগের বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ও ফিলিস্তিনি মুহাক্কিক, আল্লামা মাশহুর হাসান আলে
সালামান হাফিযাহুল্লাহ (জন্ম: ১৯৬০ হি.) বলেছেন, دلت أحاديث وآثار كثيرة صحيحة على خروج الدجال من (خُراسان) و (أصبهان)، وهبوطه (خوز) و(كرمان) -وهي جميعًا الآن في (إيران) “অসংখ্য বিশুদ্ধ হাদিস ও বর্ণনা
থেকে প্রতীয়মান হয়েছে, দাজ্জাল খোরাসান ও এসফাহন থেকে বের হবে এবং অবতরণ করবে
খুজেস্তান ও কারমান এলাকাদ্বয়ে। উল্লিখিত সবগুলো এলাকাই বর্তমানে ইরানে অবস্থিত।”
[শাইখ মাশহুর কৃত আল-ইরাক ফি আহাদিসি ওয়া আসারিল ফিতান, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৬৯;
মাকতাবাতুল ফুরকান (দুবাই) কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৪২৫ হি./২০০৪ খ্রি. (১ম
প্রকাশ)]
হাদিসের
দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য অনুযায়ী দাজ্জাল বের হবে খোরাসান থেকে। যেটা বর্তমানে ইরানে
অবস্থিত। কিন্তু আবু ত্বহা আদনানের বক্তব্য অনুযায়ী দাজ্জাল বের হবে জেরুজালেম
থেকে, যেটা বর্তমান ইসরাইলের রাজধানী। আবু ত্বহা আদনান বিনা দলিলে এরকম গায়েবি
একটি বিষয়ে হাদিসবিরোধী কথা বলেছে।
·
দ্বিতীয়ত, আবু ত্বহা আদনান একাধিক বক্তব্যে
দাবি করেছে, স্বয়ং নবিজিই নাকি বলেছেন, দাজ্জাল জেরুজালেম থেকে! এটা ডাহা মিথ্যা
কথা এবং হাদিসের নামে জালিয়াতি। উপরন্তু আবু ত্বহা আদনান আগবাড়িয়ে বলেছে, দাজ্জাল
জেরুজালেম থেকে বের হওয়ার ব্যাপারটি আল্লাহও বলেছেন! নাউজুবিল্লাহি মিন জালিক। সে
কি জানে না, মহান আল্লাহ বলেছেন, وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ كَذِبًا ۚ أُولَٰئِكَ يُعْرَضُونَ عَلَىٰ رَبِّهِمْ وَيَقُولُ الْأَشْهَادُ هَٰؤُلَاءِ الَّذِينَ كَذَبُوا عَلَىٰ رَبِّهِمْ ۚ أَلَا لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الظَّالِمِينَ “আর ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক জালিম আর কে হবে, যে
আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে? এরূপ লোকদেরকে তাদের রবের সামনে পেশ করা হবে এবং সাক্ষীবর্গ
(ফেরেশতাগণ) বলবেন, এরা ওই সকল লোক, যারা নিজেদের রবের প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল।
সাবধান! এমন জালিমদের জন্যই রয়েছে আল্লাহর লানত।” [সুরা হুদ: ১৮]
আল্লাহর
নামে মিথ্যাচার করার অপরাধ এতই ভয়াবহ যে, মহান আল্লাহ তাঁর শ্রেষ্ঠ নবির ব্যাপারে
বলেছেন, وَلَوْ تَقَوَّلَ عَلَيْنَا بَعْضَ الْأَقَاوِيلِ * لَأَخَذْنَا مِنْهُ بِالْيَمِينِ * ثُمَّ لَقَطَعْنَا مِنْهُ الْوَتِينَ * فَمَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ عَنْهُ حَاجِزِينَ “সে যদি
আমার নামে মিথ্যা রচনা করত, আমি অবশ্যই তাকে ডান হাত দিয়ে পাকড়াও করতাম এবং কেটে
দিতাম তার জীবন-ধমনী (artery)। এরপর তোমাদের মধ্যে এমন কেউ থাকত না, যে তাকে রক্ষা
করতে পারে।” [সুরা হাক্কাহ: ৪৪-৪৭]
নবি
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ব্যাপারে মিথ্যাচার থেকে সতর্ক করে বলেছেন, مَنْ كَذَبَ عَلَىَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ “যে ইচ্ছা করে আমার নামে মিথ্যা বলে, সে যেন
জাহান্নামে তার আসন (বাসস্থান) বানিয়ে নেয়।” [সহিহুল বুখারি, হা: ১১০; সহিহ
মুসলিম, হা: ৪]
আর আবু
ত্বহা আদনানের মতো যেসব বক্তা জাল হাদিস রচনা করে এবং বানোয়াট হাদিস দিয়ে বক্তব্য
দেয়, এদের বক্তব্য শোনা হারাম। এসব বক্তা থেকে দূরে থাকা আবশ্যক। কারণ নবি কারিম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, يَكُونُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ يَأْتُونَكُمْ مِنَ الأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوا أَنْتُمْ وَلاَ آبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لاَ يُضِلُّونَكُمْ وَلاَ يَفْتِنُونَكُمْ “শেষ জামানায় কিছুসংখ্যক মিথ্যুক ও দাজ্জাল
(প্রতারক) লোকের আবির্ভাব ঘটবে। তারা তোমাদের কাছে এমনসব হাদিস নিয়ে আসবে, যা কখনো
তোমরাও শোননি এবং তোমাদের বাপদাদারাও শোনেনি। সুতরাং নিজেরা তাদের থেকে সাবধান
থাকবে এবং তাদেরকেও তোমাদের থেকে দূরে রাখবে। তারা যেন তোমাদের পথভ্রষ্ট করতে না
পারে এবং তোমাদেরকে ফিতনায় ফেলতে না পারে।” [সহিহ মুসলিম, হা: ৭; সহিহ মুসলিমের
ভূমিকা দ্রষ্টব্য]
ইমাম
মালিক রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ৯৩ হি.) বলেছেন, لاَ يُؤْخَذُ العِلْمُ عَنْ أرْبَعَةٍ: سَفِيهٍ يُعلِنُ السَّفَهَ، وإنْ كانَ أرْوى النّاسِ، وصاحِبِ بِدْعَةٍ يَدعُو إلى هَواهُ، ومَن يَكْذِبُ فِي حَدِيثِ النّاسِ، وإنْ كُنْتُ لاَ أتهمه في الحَدِيثِ، وصالِحٍ عابِدٍ فاضِلٍ، إذا كانَ لاَ يَحْفَظُ ما يُحَدِّثُ بِهِ “চার শ্রেণির লোক থেকে ইলম নেওয়া
যাবে না। (১) মানুষদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হাদিস-বর্ণনাকারী হলেও মূর্খ ব্যক্তির
নিকট থেকে ইলম নেওয়া যাবে না, যে স্বীয় মূর্খতাকে প্রকাশ করে দিয়েছে। (২) বিদাতির
নিকট থেকে, যে স্বীয় বিদাতের প্রতি মানুষদের আহ্বান করে। (৩) যদিও সে হাদিসের
ক্ষেত্রে মিথ্যার অভিযোগে অভিযুক্ত না হলেও যে মানুষের সাথে কথাবার্তায় মিথ্যা
বলে। (৪) মর্যাদাভাজন ইবাদতগুজার সৎ বান্দা থেকে, যখন সে নিজের বর্ণিত হাদিস
সংরক্ষণ করতে পারে না।” [ইমাম যাহাবি কৃত সিয়ারু আলামিন নুবালা, খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা:
১৬২; দারুল হাদিস (কায়রো) কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৪২৭ হি./২০০৬ খ্রি.]
·
❏ ইবনু সাইয়্যাদের
ব্যাপারে উত্থাপিত সংশয়ের জবাব:
গতবছর এ
ব্যাপারটিকে কেন্দ্র করে আবু ত্বহা আদনানের সমালোচনা করেছিলেন কতিপয় সম্মাননীয়
দায়ি। তাদের সমালোচনার কাউন্টার দিয়ে আদনান সাহেব বলেছে, “পোস্ট লিখছে, ঘণ্টার পর
ঘণ্টা সময় ব্যয় করে। তার কি মনে হয় না, আমরা হাদিসটা জানি? মাসিহুদ দাজ্জাল
সম্পর্কে কতগুলো ইউনিভার্সিটিতে পড়ানো হয়, বলেন তো আমাকে। স্কুলে, বা কলেজে, বা
বিশ্ববিদ্যালয়ে। মাসিহুদ দাজ্জাল সম্পর্কে কতগুলো সাবজেক্ট আছে বাংলাদেশে?
মাদরাসার দিকে আসেন। মাদরাসার ইবতেদায়ি, আপনার তার ওপরের লেভেলে, তারপর এই যে,
আপনার দাখিল, আপনার আলিম, আপনার কামিল, আপনার তাকমিল — এই যে পুরো সিলেবাস আমরা
পড়াশোনা করি প্রায় পড়াশোনা করি। আমাকে একটা সাবজেক্ট দেখান যে, মাদরাসায় মাসিহুদ
দাজ্জাল সম্পর্কে পড়ানো হচ্ছে।
আলাদা বই,
আলাদা কোনো টিচার, আলাদা কোনো ফ্যাকাল্টি, আলাদা কোনো ডিপার্টমেন্ট, যারা শুধু
দাজ্জালকে নিয়ে গবেষণা করবে। আছে? তারপর আমরা দাবি করি কথা বলার সময়, সমালোচনা
করার সময়, লিখার সময়, ভাবখানা এমন যে, দাজ্জাল সম্পর্কে আমি সব জেনে গেছি। দুই
চারটা হাদিস বিচ্ছিন্ন করে তুলে নিয়ে এসে উপস্থাপন করা হচ্ছে যে, না! আদনান সাহেব
ভুল বলেছেন। দাজ্জালের সাথে জেরুজালেমের কোনো সম্পর্ক নাই, দাজ্জাল খোরাসান থেকে
বের হবে। আমি যদি প্রশ্ন করি, দাজ্জাল খোরাসান থেকে বের হবে, তোমার চেয়ে কি এটা
নবিজি ভালো জানতেন না? তাহলে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় ইবনু
সাইয়্যাদকে
কেন
দাজ্জাল মনে করছেন? এবং তিনি তাকে ইনভেস্টিগেট করেছেন।” [দেখুন: https://youtu.be/JsAORAb6hZs
(0:54 মিনিট থেকে 2:16 মিনিট পর্যন্ত)]
আমি কয়েকটি পয়েন্টে
কথাগুলোর জবাব দিচ্ছি। যথা:
১.
দাজ্জাল যে ইরানের খোরাসান এলাকা থেকে বের হবে, এটা সহিহ হাদিসে এসেছে। সুতরাং এটা
সুনিশ্চিত বিষয়। এটা হাদিসের কথা জেনেও আবু ত্বহা আদনান নবিজির নামে মিথ্যাচার করে
বলেছে, হাদিসে আছে, দাজ্জাল ইসরাইলের জেরুজালেম থেকে বের হবে! আল্লাহ এসব
জ্বলজ্যান্ত মিথ্যুক থেকে আমাদের রক্ষা করুন।
২.
দাজ্জালের ওপর আলাদা স্বতন্ত্র সাবজেক্ট প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক পাঠ্যক্রমে ইতিহাসের
কোনো একজন ইমাম পড়িয়েছেন বলে আমাদের জানা নেই। কিন্তু যুগশ্রেষ্ঠ ইমামদের চেয়েও
বড়ো পণ্ডিত হয়েছেন আবু ত্বহা আদনান! বলা বাহুল্য প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক পড়াশোনার
ইতিহাস আজকের নয়। কয়েক শতাব্দী ধরে চলে আসছে প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক পড়াশোনা। ইমাম
ইবনুস সালাহ, হাফিয মিযযি, হাফিয ইবনু হাজার, ইবনু জামাআহর মতো জগদ্বিখ্যাত
মুহাদ্দিসগণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়িয়েছেন। অধুনা ইমাম ইবনু বায, ইমাম আলবানি, ইমাম
ইবনু উসাইমিন, ইমাম সালিহ আল-ফাওযান, ইমাম আব্দুল মুহসিন আল-আব্বাদ, ইমাম আমান
আল-জামি, ইমাম রাবি আল-মাদখালি প্রমুখের মতো বিশিষ্ট শাইখগণ ভার্সিটিতে পড়িয়েছেন।
তাঁরা কেউ প্রয়োজনবোধ করেননি, দাজ্জালের ওপর স্বতন্ত্র সাবজেক্ট, স্বতন্ত্র টিচার
ও স্বতন্ত্র ডিপার্টমেন্টের। কিন্তু তাঁদের চেয়ে বড়ো পণ্ডিত হয়েছেন আদনান সাহেব,
যেজন্য তিনি এসবের এতো প্রয়োজন অনুভব করেন। যদিও দাজ্জাল সম্পর্কে মাদরাসায় ও ইসলামিক
ভার্সিটিগুলোতে পড়ানো হয়। কেয়ামতের আলামত সম্পর্কিত আলোচনায় এবং আকিদা ও হাদিসের
সাবজেক্টে।
৩. ইবনু
সাইয়্যাদ বিষয়ক সংশয়। ইবনু সাইয়্যাদ ইহুদি বংশোদ্ভূত এক তরুণ ছিল নবিজির যুগে। সে
ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কথা বলত। নবিজি তার মধ্যে মাসিহুদ দাজ্জালের কিছু আলামত পেয়ে
তাকে পরীক্ষা করেছিলেন। একদল উলামার মতে নবিজির মৃত্যুর পর সে ইসলাম গ্রহণ করেছিল।
তার ব্যাপারে সঠিক কথা হলো, সে উম্মতের একজন ছোটো দাজ্জাল ছিল, কারণ সে মিথ্যা বলে
বেড়াত এবং ভবিষ্যদ্বাণী করত। কিন্তু কেয়ামতের প্রাক্কালে আসন্ন ইহুদিদের নেতা
মাসিহুদ দাজ্জাল সে ছিল না। [বিস্তারিত দেখুন: আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খণ্ড: ১৯;
পৃষ্ঠা: ১২৭; ইবনু হাজার কৃত ফাতহুল বারি, খণ্ড: ১৩; পৃষ্ঠা: ৩২৮; শাইখ ইউসুফ
আল-ওয়াবিল কৃত আশরাতুস সাআহ, পৃষ্ঠা: ২৮৯-৩০৪]
আবু ত্বহা
আদনানের পয়েন্ট হচ্ছে, দাজ্জাল খোরাসান থেকে বের হবে, জানার পরেও যেহেতু নবিজি
মদিনার মধ্যে ইবনু সাইয়্যাদকে দাজ্জাল মনে করে পরীক্ষা করেছেন, সে অনুযায়ী আমরাও
বলতে পারব, দাজ্জাল জেরুজালেম থেকে বের হবে! সংক্ষেপে এ কথার জবাব হচ্ছে, ইবনু
সাইয়্যাদকে দাজ্জাল মনে করার সময় নবিজির কাছে দাজ্জাল বিষয়ক সকল সংবাদ ওহি করা
হয়নি। পরবর্তীতে তাঁর কাছে ওহি করা হলে তিনি নিশ্চিত হয়ে যান, ইবনু সাইয়্যাদ
দাজ্জাল নয়। কারণ মাসিহুদ দাজ্জাল মক্কা-মদিনায় ঢুকতেই পারবে না (আহমাদ, হা:
২৩৬৮৪, সনদ: সহিহ)। ইমাম তাহাবি রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ৩২৩ হি.) বলেছেন—
إن رَسُولَ اللهِ ﷺ لَمّا رَأى مِنَ ابْنِ صَيّادٍ ما رَأى مِن عَيْنِهِ، ولَمّا سَمِعَ مِن هَمْهَمَتِهِ ما سَمِعَ، ولَمّا وقَفَ عَلَيْهِ مِن شَواهِدِهِ المَذْكُورَةِ عَنْهُ فِي هَذا الحَدِيثِ لَمْ يَأْمَن أنْ يَكُونَ هُوَ الدَّجّالَ الَّذِي قَدْ أعْلَمَهُ اللهُ خُرُوجَهُ فِي أُمَّتِهِ، فَقالَ فِيهِ ما قالَ: بِغَيْرِ تَحْقِيقٍ مِنهُ أنَّهُ هُوَ؛ إذْ لَمْ يَأْتِهِ بِذَلِكَ وحْيٌ؛ ولا أنَّهُ لَيْسَ هُوَ إذْ لَمْ يَأْتِهِ بِذَلِكَ وحْيٌ، ووَقَفَ عَنْ إطْلاقِ واحِدٍ مِن ذَيْنِكَ الأمْرَيْنِ فِيهِ.
“রসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইবনু সাইয়্যাদের যেসব বিষয় প্রত্যক্ষ করার তা
প্রত্যক্ষ করলেন, তার বিড়বিড় করে বলা কথা থেকে যা শোনার তা শুনলেন এবং এই হাদিসে
উল্লিখিত প্রমাণ সম্পর্কে অবগত হলেন, তখন তিনি নিশ্চিত হতে পারলেন না যে, সে-ই
দাজ্জাল কিনা, এই উম্মতের মধ্যে যেই দাজ্জালের আবির্ভাবের ব্যাপারে আল্লাহ তাঁকে
জানিয়েছেন। তিনি ইবনু সাইয়্যাদের ব্যাপারে যা কিছু বলেছিলেন, তা এ বিষয়ে নিশ্চিত
হয়ে বলেননি যে, সে দাজ্জাল। কারণ এ ব্যাপারে তাঁর কাছে ওহি আসেনি। আবার এ বিষয়েও
তিনি নিশ্চিত হয়ে বলেননি যে, সে দাজ্জাল নয়। কারণ এ ব্যাপারেও তাঁর কাছে ওহি
আসেনি। ফলে তিনি দুটো কথার কোনোটিই না বলে ক্ষান্ত থেকেছেন।” [ইমাম তাহাবি কৃত
শারহু মুশকিলিল আসার, খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ৩৮৩; তাহকিক: শুয়াইব আল-আরনাউত;
মুআসসাসাতুর রিসালা কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৪১৫ হি./১৯৯৪ খ্রি.]
শাইখুল
ইসলাম ইবনু তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ (মৃত: ৭২৮ হি.) ইবনু সাইয়্যাদ প্রসঙ্গে বলেছেন, وتَوَقَّفَ النَّبِيُّ ﷺ فِي أمْرِهِ حَتّى تَبَيَّنَ لَهُ فِيما بَعْدُ أنَّهُ لَيْسَ هُوَ الدَّجّالُ “নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম তার ব্যাপারে কোনো মত না দিয়ে ক্ষান্ত থেকেছিলেন। এক পর্যায়ে তাঁর কাছে
প্রতিভাত হয়ে যায়, সে (ইবনু সাইয়্যাদ) দাজ্জাল নয়।” [মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ১১;
পৃষ্ঠা: ২৮৩]
উপরন্তু
ইবনু সাইয়্যাদকে পরীক্ষা করার হাদিস দিয়ে জাল হাদিস রচনা করা এবং বানোয়াট হাদিস
প্রচার করার বৈধতা প্রমাণিত হয় না। সুতরাং এমন মিথ্যা হাদিস প্রচারের জন্য অবশ্যই
প্রকাশ্যে তওবা করা জরুরি। আল্লাহুল মুস্তাআন।
·সুপথপ্রাপ্তির
অভিলাষী
এক
গুনাহগার বান্দা—
·‘আবু
ত্বহা মুহাম্মাদ আদনান : বিপথগামিতার নয়া-আহ্বায়ক’ বইয়ের ৩য় অধ্যায়ের ১ম পরিচ্ছেদ
0 Comments