বক্তার সংখ্যা বেড়ে যাওয়া আলেমের সংখ্যা কমে যাওয়া।
আলেমদের গুরুত্ব।
🔴বাস্তবেই আমরা এমন একটা
সময়ে বসবাস করছি, যখন বক্তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আলেমদের
সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এ সম্পর্কে সত্যবাদী বিশ্বস্ত মুহাম্মাদ (ছাঃ) যে ভবিষ্যদ্বাণী
করে গিয়েছেন, এটা তারই বাস্তবতা। কারণ বর্তমান যুগে আলেম কম
ও বক্তা বেশী। অথবা আলেম থাকলেও আলেমের মর্যদা দেওয়া হয় না। আর বর্তমান
যুগে স্যাটেলাইট চ্যানেল গুলোতে ঢু মারলেই আপনি অনায়াসে বক্তাদের
আধিক্য এবং আল্লাহওয়ালা মুত্তাক্বী আলেমদের স্বল্পতার প্রমাণ পাবেন।
🔴রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
العلماء هم ورثة الأنبياء
🔴অর্থ; নিশ্চয়ই
উলামায়ে কেরাম নবীগণের ওয়ারিস। ✔[সহীহ
বুখারী; হাদীস ৬৭]
যতদিন উলামায়ে কেরাম বা ইমানদার
ব্যাক্তি পৃথিবীতে থাকবেন, ততদিন পৃথিবী টিকে
থাকবে। যখন আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবী ধ্বংস করে কিয়ামত সংঘটিত
করার ইচ্ছা করবেন, তখন প্রথমে দুনিয়া থেকে ইলম উঠিয়ে
নেওয়া হবে। কাগজের কালো কালি সাদা করে কিংবা কুরআন এর গায়েব
করে দিয়ে ইলম উঠাবেন না। ধীরে ধীরে হক্কানী উলামায়ে কেরামকে উঠিয়ে নিবেন।
উলামাদের বিদায় মানে ইলমের বিদায়। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
إن الله لا يقبض العلم انتزاعا ينتزعه من العباد ولكن يقبض العلم بقبض العلماء حتى إذا لم يبق عالما اتخذ الناس رءوسا جهالا فسئلوا فأفتوا بغير علم فضلوا وأضلوا
🔴অর্থ; আল্লাহ তা‘আলা হঠাৎ করে এই ইলম বান্দাদের থেকে
ছিনিয়ে নেবেন না। বরং উলামাদেরকে উঠানোর দ্বারা ইলম উঠিয়ে নেবেন। এক পর্যায়ে
যখন কোনো আলেম থাকবে না, তখন মানুষ মুর্খ লোকদেরকে নেতা
বানিয়ে নিবে। তারা না জেনে ইসলামের বিধি বিধান বর্ণনা করবে।ফলে নিজেরাও গোমরাহ
হবে। অন্যদেরকেও গোমরাহ করবে।
✔[সহীহ
বুখারী; হাদীস ১০০]
তাই আসুন সঠিক ও সহীহ আলেমদের
কাছ থেকে ইল্ম সংগ্রহ করি, লেকচার শুনি।
এর দ্বারা পরিস্কার বুঝা যায় যে, উলামাদের
মৃত্যু কিয়ামতের আলামত। কিয়ামত যত নিকটবর্তী হবে, উলামাদের
মৃত্যু তত বাড়তে থাকবে। উলামাদের মৃত্যুর মাধ্যমেই পৃথিবী সংকুচিত হয়ে আসবে।
কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
أو لم يروا أنا نأتي الأرض ننقصها من أطرافها
🔴অর্থ; তারা
কি দেখে না যে, আমি যমীনকে চতুর্দিক দিয়ে সংকুচিত করে আনছি।
[সূরা রা’দ; আয়াত ৪১]
🔴আবু
হুরায়রা(রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(ছাঃ) বলেছেন,إِنَّكُمُ الْيَوْمَ فِي زَمَانٍ كَثِيْرٌ عُلَمَاؤُهُ قَلِيْلٌ خُطَبَاؤُهُ، مَنْ تَرَكَ عُشْرَ مَا يَعْرِفُ فَقَدْ هَوَى، وَيَأْتِيْ مِنْ بَعْدِ ذَلِكَ زَمَانٌ كَثِيْرٌ خُطَبَاؤُهُ، قَلِيْلٌ عُلَمَاؤُهُ مَنِ اسْتَمْسَكَ بِعُشْرِ مَا يَعْرِفُ فَقَدْ نَجَا- ‘তোমরা বর্তমানে এমন একটা যুগে আছ, যখন আলেমদের
সংখ্যা বেশী এবং বক্তাদের সংখ্যা কম। এক্ষণে যে ব্যক্তি তার জানা বিষয়ের এক দশমাংশ
ত্যাগ করবে, সে ধ্বংস হবে। এরপর এমন একটা যুগ আসবে যখন
বক্তাদের সংখ্যা বেশী হবে এবং আলেমদের সংখ্যা কমে যাবে। তখন যে ব্যক্তি তার জানা
বিষয়ের এক দশমাংশ আকড়ে ধরবে সে নাজাত পাবে’।
✔[তিরমিযী
হা/২২৬৭ ‘ফিতান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭৮; আহমাদ হা/২১৪০৯; সিলসিলা
ছহীহাহ হা/২৫১০]
🔴হাদীছটি
সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে, পরবর্তী যুগ পূর্ববর্তী যুগ থেকে মন্দ
হবে। রাসূলুল্লাহ(ছাঃ) ও তাঁর ছাহাবীদের যুগে মুসলিম উম্মাহর মাঝে অনেক আলেম
ছিলেন। যখন আলেমদের সংখ্যা বেশী হয়, তখন বক্তাদের সংখ্যা কমে
যায়। কারণ আলেমরা হলেন জাতির মাঝে কল্যাণ, নিরাপত্তা ও সঠিক
সিদ্ধান্ত প্রদানের প্রতীক। আর যে যুগে আলেমদের সংখ্যা বেশী হয়, তাতে কল্যাণ বেড়ে যায়, অকল্যাণ হ্রাস পায় এবং
ফিতনা-ফাসাদের কবর রচিত হয়।
নবুঅতের যুগ যেখানে ছাহাবীগণ
সঠিক পথের দিশারী রাসূল(ছাঃ)-এর সামনে ছিলেন, সেটা
ছিল মানুষের হৃদয়ে দ্বীন প্রোথিত হওয়ার, পৃথিবীতে ইসলামী
খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার এবং ইসলাম প্রসার লাভের যুগ। সুতরাং নিকটবর্তী বা
দূরবর্তী শত্রুর আশংকা ব্যতীত দ্বীনের প্রতিটি বিধানকে যে অাঁকড়ে ধরবে না, তার কোন অজুহাত থাকবে না। আর যে ব্যক্তি ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ইসলামের কোন
একটি ওয়াজিব ত্যাগ করল, সে গোনাহগার হ’ল।
নবী করীম (ছাঃ) ছাহাবীদেরকে সম্বোধন করে বলেন যে, তারা এমন
একটি যুগে বাস করছে, যেটি শান্তি, নিরাপত্তা
ও ইসলামের মর্যাদার বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। সুতরাং যে ব্যক্তি সৎ কাজের আদেশ,
অসৎ কাজের নিষেধ এবং আল্লাহর দ্বীনের নির্দেশিত বিষয়ের এক দশমাংশ
ত্যাগ করল, সে ধ্বংসে নিপতিত হল। কারণ ত্যাগ করাটাই অপরাধ
এবং এর কোন ওযর নেই।
🔴এরপর এমন
এক যুগ আসে,
যখন ইসলাম দুর্বল হয়ে পড়ে, অত্যাচার-অনাচার ও
পাপাচার বেড়ে যায়, ইসলামের সাহায্যকারীদের সংখ্যা হ্রাস পায়
এবং ইসলাম বিদ্বেষীদের সংখ্যা বেড়ে যায়। এমতাবস্থায় উম্মতের জন্য রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ)-এর অছিয়ত ছিল, দ্বীনের অধিকাংশ বিধি-বিধানের প্রতি আমল
করা কষ্টসাধ্য হওয়ার কারণে জানা বিষয় সমূহের এক দশমাংশ আঁকড়ে
ধরা। কারণ উম্মতের অবস্থা ও তাকে ধ্বংস করার জন্য বিভিন্ন জাতির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার
বিষয়টি পাত্রের এক লোকমা খাবারের মতো। এমতাবস্থায় কল্যাণকর কাজসমূহকে অকল্যাণকর
কাজের উপর প্রাধান্য দেয়াই এ জাতির স্থিতিশীলতা ও ভারসাম্য আনয়ন করবে। সংস্কারের
চেয়ে ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টির জন্য প্রত্যেক খতীব ও বক্তা মিম্বরে বা মঞ্চে উঠে
ইচ্ছামত ইলমহীন কথাবার্তা বলবে, সেটা নয়।
🔴ইলম ও আলেমদের সংখ্যা কম হ’লে বড় বড় বুলি আওড়ানো বিভ্রান্তকারী বক্তারা তাদের ভ্রষ্টতার বিষ ছড়ানোর
সুযোগ পায়। আর এমন সব বিষয়ে লেখনী ও বই-পুস্তক বৃদ্ধি পায়, যা
দেখলে দুর্ভাবনায় কপাল ঘর্মাক্ত হয়ে যায়। সেসব লেখনীতে ইসলামের বিধি-বিধান ও
দন্ডবিধিসমূহ বিনষ্ট হয় এবং তার সাথে মানুষের প্রবৃত্তি ও তাদের ফিতনা অনুপাতে
বিভিন্ন মনগড়া মতবাদ, বিদ‘আত ও
ভ্রষ্টতা বিস্তৃত হয়ে পড়ে।
শেষ যামানায় আলেমদের সংখ্যা কমে যাবে, মূর্খতা
বেড়ে যাবে এবং ফিতনা-ফাসাদ ব্যাপকতা লাভ করবে। এ সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) সংবাদ
দিয়েছেন যে, যখন আলেমদের মৃত্যু হবে, তখন
ইলম উঠে যাবে এবং মূর্খতা ধেয়ে আসবে।
🔴আনাস(রাঃ)
বলেন,
রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলেছেন,إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يُرْفَعَ الْعِلْمُ، وَيَكْثُرَ الْجَهْلُ، وَيُشْرَبَ الْخَمْرُ، وَيَظْهَرَ الزِّنَا ‘ক্বিয়ামতের অন্যতম নিদর্শন হ’ল (১) ইলম উঠিয়ে নেয়া
হবে (২) মূর্খতা
বেড়ে যাবে (৩) মদ্যপান
করা হবে এবং (৪) ব্যভিচার
ছড়িয়ে পড়বে’।
✔[বুখারী হা/৮০; মুসলিম
হা/২৬৭১; মিশকাত হা/৫৪৩৭]
🔴আব্দুল্লাহ ইবনে
আমর(রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ(সাঃ)বলেন,
إِنَّ اللهَ لاَ يَقْبِضُ الْعِلْمَ انْتِزَاعًا يَنْتَزِعُهُ مِنَ الْعِبَادِ، وَلَكِنْ يَقْبِضُ الْعِلْمَ بِقَبْضِ الْعُلَمَاءِ، حَتَّى إِذَا لَمْ يُبْقِ عَالِمًا، اتَّخَذَ النَّاسُ رُءُوسًا جُهَّالاً فَسُئِلُوا، فَأَفْتَوْا بِغَيْرِ عِلْمٍ، فَضَلُّوا وَأَضَلُّوا-
‘নিশ্চয় আল্লাহ বান্দাদের
কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়ার মাধ্যমে ইলম তুলে নিবেন না। বরং আলেমদেরকে উঠিয়ে নেয়ার
মাধ্যমে ইলম উঠিয়ে নিবেন। অবশেষে যখন একজন আলেমকেও তিনি জীবিত রাখবেন না, তখন লোকেরা মূর্খ নেতাদের গ্রহণ করবে। অতঃপর তারা জিজ্ঞাসিত হবে। তখন না
জেনেই ফৎওয়া দিবে। এভাবে তারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হবে এবং অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করবে’।
✔ [বুখারী হা/১০০; মুসলিম
হা/২৬৭৩; মিশকাত হা/২০৬]
عن عبد الله بن عمرو بن العاص رضي الله عنهما ، قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: «إنَّ اللهَ لاَ يَقْبِضُ العِلْمَ انْتِزَاعاً يَنْتَزعهُ مِنَ النَّاسِ، وَلكِنْ يَقْبِضُ العِلْمَ بِقَبْضِ العُلَمَاءِ، حَتَّى إِذَا لَمْ يُبْقِ عَالِماً، اتَّخَذَ النَّاسُ رُؤُوساً جُهَّالاً، فَسُئِلُوا فَأفْتوا بِغَيْرِ عِلْمٍ، فَضَلُّوا وَأضَلُّوا».
🔴আবদুল্লাহ
ইবন
‘আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে
বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা‘আলা মানুষদের
থেকে জোর করে ইলম ছিনিয়ে নেবেন না; বরং আলিমদের উঠিয়ে নেওয়ার
মাধ্যমেই ইলম উঠিয়ে নেবেন। অতঃপর যখন কোনো আলিম বাকী থাকবে না তখন লোকেরা
জাহিলদেরই নেতা হিসেবে গ্রহণ করবে। অতঃপর তাদের কাছে মাসআলা জিজ্ঞেস করা হবে,
তারা না জেনেই ফাতওয়া দিবে। ফলে তারা নিজেরাও গোমরাহ হবে, আর অপরকেও গোমরাহ করবে।✔সহীহ - মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি (বুখারী ও মুসলিম)।
🔴🔴ব্যাখ্যা
🔴আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবনুল
‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (إن الله لا يقبض العلم) আল্লাহ তা‘আলা মানুষদের
অন্তর থেকে ইলম উঠিয়ে নেবেন না। এখানে ইলম দ্বারা বুঝানো হয়েছে কুরআন ও সুন্নাহ
এবং এ দুটি সম্পর্কিত জ্ঞান। (انتزاعاً ينتزعه من الناس) অর্থাৎ আল্লাহ মানুষের অন্তর থেকে জোর করে
ছিনিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে ইলম উঠিয়ে নেবেন না। অর্থাৎ মানুুষের মধ্য থেকে ইলম আসমানে
উঠিয়ে নিবেন না। বরং তিনি ইলম উঠিয়ে নিবেন আলিমদের উঠিয়ে নেওয়ার মাধ্যমেই। অর্থাৎ
আলিমদের মৃত্যু ও তাদের আত্মা উঠিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে ইলম উঠিয়ে নিবেন। এমনকি যখন
কোন আলিমকে আল্লাহ অবশিষ্ট রাখবেন না, তখন লোকেরা
জাহিলদেরকেই নেতা, প্রতিনিধি, বিচারক,
মুফতি, ইমাম ও শাইখ হিসেবে গ্রহণ করবে। (جهالاً) শব্দটি (جاهل) এর বহুবচন। অতঃপর তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে,
তখন তারা না জেনেই ফাতওয়া দিবে ও বিচার কার্য পরিচালনা করবে। ফলে
তারা নিজেরা গোমরাহ হবে, অর্থাৎ তারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হবে।
আর অপরকেও গোমরাহ করবে। ফলে জাহিলকে লোকেরা আলিম মনে করবে। এ হাদীসে ঈঙ্গিত রয়েছে
যে, অচিরেই ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে এবং মানুষকে আল্লাহর দীনের
দিকে দাওয়াত দেওয়ার মতো যোগ্য আলিম জমিনে অবশিষ্ট থাকবে না। ফলে উম্মত ক্রমশ
অবনতির দিকে যাবে এবং পথভ্রষ্ট হবে।
✔দেখুন, মিরকাতুল মাফাতীহ, (১/৪৬০);
শরহে রিয়াদুস সালিহীন, (৫/৪৫২)।
🔴আলেমগণ
বক্তাদের আধিক্য ও ফক্বীহগণের স্বল্পতাকে ক্বিয়ামতের অন্যতম নিদর্শন হিসাবে গণ্য
করেছেন। ইমাম মালেক ‘মুওয়াত্ত্বা’য় ইয়াহইয়া
ইবনে সাঈদ থেকে বর্ণনা করেন, একদা আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ
(রাঃ) জনৈক ব্যক্তিকে বললেন,
إِنَّكَ فِي زَمَانٍ كَثِيرٌ فُقَهَاؤُهُ قَلِيلٌ قُرَّاؤُهُ تُحْفَظُ فِيهِ حُدُودُ الْقُرْآنِ وَتُضَيَّعُ حُرُوفُهُ قَلِيلٌ مَنْ يَسْأَلُ كَثِيرٌ مَنْ يُعْطِي يُطِيلُونَ فِيهِ الصَّلَاةَ وَيَقْصُرُونَ الْخُطْبَةَ يُبَدُّونَ أَعْمَالَهُمْ قَبْلَ أَهْوَائِهِمْ وَسَيَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ قَلِيلٌ فُقَهَاؤُهُ كَثِيرٌ قُرَّاؤُهُ تُحْفَظُ فِيهِ حُرُوفُ الْقُرْآنِ وَتُضَيَّعُ حُدُودُهُ كَثِيرٌ مَنْ يَسْأَلُ قَلِيلٌ مَنْ يُعْطِي يُطِيلُونَ فِيهِ الْخُطْبَةَ وَيَقْصُرُونَ الصَّلَاةَ يُبَدُّونَ فِيهِ أَهْوَاءَهُمْ قَبْلَ أَعْمَالِهِمْ-
‘তুমি এখন এমন এক যুগে বাস
করছ, যে যুগে ফক্বীহ তথা প্রাজ্ঞ আলেমের সংখ্যা বেশী এবং
ক্বারীর (সাধারণ আলেমের) সংখ্যা কম। এ যুগে কুরআনের সীমারেখা সমূহ সংরক্ষণ করা হয়
(অর্থাৎ কুরআনের বিধি-নিষেধ পালন করা হয়), শব্দের দিকে
মনোযোগ দেয়া হয় কম। এ যুগে প্রার্থীর সংখ্যা কম এবং দাতার সংখ্যা বেশী। এ যুগের
লোকেরা ছালাত দীর্ঘ করে এবং খুৎবাকে সংক্ষিপ্ত করে। তারা প্রবৃত্তির অনুসরণের
পূর্বেই আমলের দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে মানুষের উপর এমন এক যুগ আসবে,
যখন বিজ্ঞ আলেমদের সংখ্যা কম হবে এবং ক্বারী বা সাধারণ আলেমদের
সংখ্যা বেশী হবে। তখন কুরআনের শব্দ সমূহকে হেফাযত করা হবে (হাফেযের সংখ্যা বেড়ে
যাবে) এবং কুরআনের সীমারেখা সমূহ বিনষ্ট হবে। প্রার্থী বেশী হবে এবং দাতা কম হবে।
তখন লোকেরা খুৎবা দীর্ঘায়িত করবে এবং ছালাত সংক্ষিপ্ত করবে। আর তারা আমলের পূর্বে
নিজেদের খেয়ালখুশির দিকে এগিয়ে যাবে’। ✔[মুওয়াত্ত্বা
ইমাম মালেক হা/৫৯৭; ছহীহাহ হা/৩১৮৯]
🔴🔴আলেম কারা?
যারা কথার ফুলঝুরিতে প্রতারিত হয়েছেন এবং
বাগ্মিতাকে ইলমের মানদন্ড হিসাবে গণ্য করেছেন, তাদের প্রতিবাদে হাফেয
ইবনু রজব হাম্বলী (রহঃ) তাঁর মূল্যবান ও উপকারী গ্রন্থ ‘ফাযলু
ইলমিস সালাফ ‘আলা ইলমিল খালাফ’-এ
বলেছেন, ‘আমরা কিছু মূর্খ লোকদের মাধ্যমে পরীক্ষায় পড়েছি।
পরবর্তী আলেমদের মধ্যে যারা বেশী কথা বলেছেন, তাদের কারো
কারো ব্যাপারে তারা ধারণা করে যে, তিনি পূর্ববর্তীদের চেয়ে
বেশী জ্ঞানী। তাদের মধ্যে কেউ কেউ কোন ব্যক্তির বক্তব্য ও লেখনী বেশী হওয়ার কারণে
তার সম্পর্কে ধারণা করে যে, তিনি তার পূর্বের ছাহাবী ও
তাবেঈদের চেয়ে বেশী জ্ঞানী। তাদের মধ্যে আবার কেউ কেউ বলে যে, তিনি অনুসরণীয় প্রসিদ্ধ ফক্বীহগণের চেয়ে বেশী জ্ঞানী। অতঃপর ইবনু রজব
(রহঃ) সুফিয়ান ছাওরী, আওযাঈ, লায়েছ ও
ইবনুল মুবারক প্রমুখের নাম উল্লেখ করে বলেন, فإن هؤلاء كلهم أقل كلاما ممن جاء بعدهم- ‘এ সকল বিদ্বান পরবর্তীদের তুলনায় স্বল্পভাষী
ছিলেন’।
🔴এমন
ধারণা সালাফে ছালেহীনকে দারুণভাবে খাটো করা, তাদের সম্পর্কে হীন ধারণা
পোষণ করা এবং তাদেরকে অজ্ঞতা ও জ্ঞানের স্বল্পতার প্রতি সম্বন্ধ করার নামান্তর। লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।
হাফেয ইবনু রজব আরো উল্লেখ করেছেন যে, ‘মোটকথা, এই ফিৎনা-ফাসাদের যুগে ব্যক্তিকে হয় আল্লাহর
নিকটে আলেম হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে অথবা জনগণের নিকটে আলেম হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে
হবে। যদি সে প্রথমটিতে সন্তুষ্ট হয় তাহলে তার ব্যাপারে আল্লাহর অবগতিকেই যেন সে
যথেষ্ট মনে করে। আর যার সাথে আল্লাহর পরিচয় ঘটে, সে এই
পরিচয়কেই যথেষ্ট মনে করে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি মানুষের নিকটে আলেম বিবেচিত না
হলে সন্তুষ্ট হয় না, সে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর এ বাণীর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। যেখানে তিনি বলেছেন, مَنْ طَلَبَ الْعِلْمَ لِيُمَارِىَ بِهِ السُّفَهَاءَ أَوْ لِيُبَاهِىَ بِهِ الْعُلَمَاءَ أَوْ لِيَصْرِفَ وُجُوهَ النَّاسِ إِلَيْهِ فَهُوَ فِى النَّارِ. ‘যে ব্যক্তি মূর্খদের সাথে তর্ক করার জন্য অথবা
আলেমদের সাথে গর্ব করার জন্য অথবা তার দিকে লোকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য জ্ঞান
অন্বেষণ করে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে’।
✔ [ইবনে মাজাহ হা/২৫৩, ২৬০; মিশকাত
হা/২২৫-২৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৬১৫৮]
🔴নিঃসন্দেহে
এই যুগে সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হচ্ছে দ্বীনকে অাঁকড়ে ধরা, তার
হেফাযত করা এবং দ্বীন থেকে দূরে সরে না যাওয়া। কাজেই অল্প হলেও নিয়মিত ভাল কাজ
করার মধ্যে মুসলমানদের জন্য নিরাপত্তা এবং পদস্খলন থেকে রক্ষা পাওয়ার নিশ্চয়তা
রয়েছে। সুতরাং প্রত্যেক মুসলমানের উচিৎ সাধ্যানুযায়ী এ বিষয়টাকে অাঁকড়ে ধরা যে,
‘আল্লাহ কারু উপর তার সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেন না’ (বাক্বারাহ ২/২৮৬)।
এইভাবে দ্বীন আঁকড়ে ধরাকে সে তার জীবন ধারা হিসাবে বেছে নিবে, যার
মাধ্যমে মুসলিম ব্যক্তি তার দ্বীন ও আক্বীদাকে হেফাযত করবে।
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, তিনি
যেন আমাদেরকে উপকারী জ্ঞান অর্জনের তাওফীক দেন এবং আমরা তাঁর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি
এমন জ্ঞান থেকে যা উপকার দেয় না, এমন অন্তর থেকে যা ভীত হয়
না, এমন অন্তর থেকে যা তৃপ্ত হয় না এবং এমন দো‘আ থেকে যা কবুল করা হয় না। যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি জগত সমূহের প্রতিপালক’
✔(সৌজন্যে : মাসিক ‘ছাওতুল উম্মাহ’, জামে‘আ
সালাফিইয়াহ, বেনারস, জুন ২০১৫, পৃঃ ২৪-২৬, গৃহীত : মাজাল্লাহ আল-ফুরক্বান, কুয়েত)।
🔴এডিটরঃ রাসিকুল ইসলাম(ভারত)
0 Comments