Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

বিদআতিদের থেকে ইলম গ্রহণ করা সম্পর্কেঃ

🔴 বিদআতিদের থেকে ইলম গ্রহণ করা সম্পর্কেঃ

বিদআত অনেক বড় এক ভ্রান্ততা। আজকাল বেড়েই চলছে বিদআতের প্রচার-প্রসার। বিদআত সম্পর্কে রাসুলের হাদিস.

إِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُوْرِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ وَكٌلَّ ضَلاَلَةٍ فِي النَّارِ

🔴ধর্মের নামে নতুন সৃষ্টি হতে সাবধান কেননা প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা। আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতাই জাহান্নামে নিয়ে যাবে। [আহমাদ হা/১৭২৭৪, ১৭২৭৫; আবূদাঊদ হা/৪৬০৭; তিরমিযী হা/২৬৭৬; ইবনু মাজাহ হা/৪২; হাকেম ১/৯৫]

🔴 বিদআতিদের নিকট থেকে, ‘ইলমগ্রহণ করার বিধান!

🔴বর্তমান জামানায় কথেকের(অনেকের) বক্তব্য হল! বিদআতিদের কাছ থেকে ইলম গ্রহণ করা জায়েজ। কারণ, আমরা তাদের থেকে হক কথা গ্রহণ করব আর বাতিলটা ছুড়ে ফেলে দেব।

আর তোমরা হককে বাতিলের সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে-বুঝে হককে গোপন করো না। [২/৪২]

🔴🔴আসুন! দেখি হাদিস কি বলে; হযরত আবূ হুরাইরা(রাযি.) থেকে বর্ণিত রাসুল(সা.) বলেছেন-

ﻳَﻜُﻮﻥُ ﻓِﻲ ﺁﺧِﺮِ ﺍﻟﺰَّﻣَﺎﻥِ ﺩَﺟَّﺎﻟُﻮﻥَ ﻛَﺬَّﺍﺑُﻮﻥَ ﻳَﺄْﺗُﻮﻧَﻜُﻢْ ﻣِﻦَ ﺍﻷَﺣَﺎﺩِﻳﺚِ ﺑِﻤَﺎ ﻟَﻢْ ﺗَﺴْﻤَﻌُﻮﺍ ﺃَﻧْﺘُﻢْ ﻭَﻻَ ﺁﺑَﺎﺅُﻛُﻢْ ﻓَﺈِﻳَّﺎﻛُﻢْ ﻭَﺇِﻳَّﺎﻫُﻢْ ﻻَ ﻳُﻀِﻠُّﻮﻧَﻜُﻢْ ﻭَﻻَ ﻳَﻔْﺘِﻨُﻮﻧَﻜُﻢْ

🔴শেষ যুগে কিছুসংখ্যক প্রতারক ও মিথ্যাবাদী লোকের আবির্ভাব ঘটবে। তারা তোমাদের কাছে এমন সব হাদীস বর্ণনা করবে যা কখনও তোমরা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরা শোনোনি। সুতরাং তাদের থেকে সাবধান থাকবে এবং তাদেরকে তোমাদের থেকে দূরে রাখবে। তারা যেন তোমাদের বিভ্রান্ত না করতে পারে এবং তোমাদেরকে ফিতনাহয় না ফেলতে পারে। [সহিহ মুসলিম, হা/৭; ‘ভূমিকা’; পরিচ্ছেদ- ৪]

ফিরছি এবার সালাফদের বক্তব্যের প্রতি!

🔴 কথেকের বক্তব্য সালাফদের মানহাজ বিরোধী। কেননা তাঁরা এই মূলনীতি অনুসরণ করেইলম গ্রহণ করেননি। বরং তাঁদের মূলনীতি ছিলযার কাছ থেকেইলমগ্রহণ করা হবে, তার ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া এবং সে বিশ্বস্ত ও যোগ্য প্রমাণিত হওয়ার পর তার কাছ থেকেইলমগ্রহণ করা।

🔴প্রখ্যাত তাবিঈ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সীরীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১১০ হি.] বলেছেন;

ﺇِﻥَّ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﻌِﻠْﻢَ ﺩِﻳﻦٌ ﻓَﺎﻧْﻈُﺮُﻭﺍ ﻋَﻤَّﻦْ ﺗَﺄْﺧُﺬُﻭﻥَ ﺩِﻳﻨَﻜُﻢْ

🔴🔴নিশ্চয় এইলমহলো দ্বীন। কাজেই কার কাছ থেকে তোমরা দ্বীন গ্রহণ করছ তা যাচাই করে নাও! [সহিহ মুসলিম, ‘ভূমিকা’; পরিচ্ছেদ- ৫]

🔴শাইখুল ইসলাম হুজ্জাতুল উম্মাহ ইমাম মালিক বিন আনাস (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৭৯ হি.] বলেছেন;

لا يؤخذ العلم عن أربعةٍ: سفيهٍ يُعلن السفهَ وإن كان أروى الناس، وصاحب بدعةٍ يدعو إلى هواه، ومن يكذب في حديث الناس وإن كنتُ لا أتَّهمه في الحديث، وصالحٌ عابدٌ فاضلٌ إذا كان لا يحفظ ما يحدِّث به

🔴 চার ধরনের লোক থেকেইলম গ্রহণ করা যাবে না: (১) সেই নির্বোধ লোক, যে প্রকাশ্যে মূর্খতাপূর্ণ আচরণ করে; যদিও সে লোকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হাদীস বর্ণনাকারী হয়। (২) সেই বিদআতী, যে তার প্রবৃত্তির দিকে মানুষকে আহ্বান করে। (৩) যে ব্যক্তি মানুষের সাথে কথাবার্তায় মিথ্যা বলে, যদিও আমি তাকে হাদীসের ক্ষেত্রে মিথ্যাবাদী বলে অভিযুক্ত করি না। (৪) সেই সৎকর্মপরায়ণ ইবাদতগুজার মহৎ বান্দা, যে নিজের বর্ণিত হাদীস স্মরণে রাখতে পারে না [ইমাম যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ), সিয়ারু আলা মিন নুবালা; খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ১৬২; মুআসসাতুর রিসালাহ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২২ হি./২০০১ খ্রি.]

🔴সুতরাং সত্যবাদী, দ্বীনদার এবং নির্ভরযোগ্য ব্যক্তির কাছ থেকেইলমে দ্বীন শিক্ষা করা আবশ্যক, বিদআতীর কাছ থেকে নয়।

🔴এই সংশয়ের ব্যাপারে তাই বলব, যা বলেছেন ফাদ্বীলাতুশ শাইখ খালিদ বিন দ্বাহউয়ী আয-যাফীরী (হাফিযাহুল্লাহ)। তিনি বলেছেন;

হ্যাঁ, যে ব্যক্তিই হক বলবে, তার কাছ থেকে তা গ্রহণ করতে হবে। ন্যায়নিষ্ঠ সালাফগণ হক গ্রহণ করা থেকে বিরত হতেন না। এতৎসত্ত্বেও তাঁরা কখনো বলেননি যে, তোমরা বিদআতিদের বইপুস্তক থেকে হকটা গ্রহণ করো, আর বাতিলটা বর্জন করো। বরং তাঁরা উচ্চৈঃস্বরে বিদআতিদের বইপুস্তক পুরোপুরি বর্জনের আহ্বান করেছেন।

🔴এমনকি তাঁরা সেই বইপুস্তক ধ্বংস করা ওয়াজিব ঘোষণা করেছেন। এটা একারণে যে, বিদআতীদের বইপুস্তকে বিদ্যমান হক মূলত কিতাব ও সুন্নাহ থেকে গৃহীত। সুতরাং আমাদের জন্য হকের প্রকৃত উৎস থেকেই হক গ্রহণ করা ওয়াজিব, যে উৎসগুলোতে কোনো পঙ্কিলতা ও বিদআত সংমিশ্রিত হয়নি। যেহেতু এটাই হলো নির্মল ঝরনা এবং সুপেয় পানি [শাইখ খালিদ বিন দ্বাহউয়ী আয-যাফীরী (হাফিযাহুল্লাহ), ইজমাউলউলামাআলাল হাজরি ওয়াত তাহযীরি মিন আহলিল আহওয়া; পৃষ্ঠা: ৬৪; মাকতাবাতুল আসালাতিল আসারিয়্যাহ, জেদ্দা কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৩ হি./২০০২ খ্রি. (৩য় প্রকাশ)]

🔴বিদআতিদের পেশকৃত দলিলের খণ্ডন!

সূরাহ যুমারের ১৮ নং আয়াতে নাকি বিদআতীদের নিকট থেকেইলম গ্রহণ সিদ্ধ হওয়ার দলিল রয়েছে?

কতিপয় বিদআতী সূরাহ যুমারের ১৮ নং আয়াতকে দলিল হিসেবে পেশ করে বলে, বিদআতিদের নিকট থেকেইলম গ্রহণ করা জায়েজ। কারণ মহান আল্লাহ বলেছেন; فَبَشِّرْ عِبَادِ * الَّذِينَ يَسْتَمِعُونَ الْقَوْلَ فَيَتَّبِعُونَ أَحْسَنَهُ ۚ أُولَٰئِكَ الَّذِينَ هَدَاهُمُ اللَّهُ ۖ وَأُولَٰئِكَ هُمْ أُولُو الْأَلْبَابِ

অতএব, আমার বান্দাদেরকে সুসংবাদ দাও। যারা মনোযোগ সহকারে কথা শোনে, তারপর তার মধ্যে যা উত্তম তা অনুসরণ করে, তাদেরকেই আল্লাহ হিদায়াত দান করেন, আর তারাই বুদ্ধিমান। [সূরাহ যুমার: ১৭-১৮] সুতরাং, আমরা সবার কথা শুনব! কিন্তু তার মধ্য থেকে কেবল হকটাই গ্রহণ করব।

সংশয়ের জবাব

🔴প্রথমত, বিদআতিদের নিকট থেকেইলমগ্রহণ করার বিধান আমরা উম্মাহর শ্রেষ্ঠ বিদ্বানদের বাণী থেকে জেনেছি। বলাই বাহুল্য যে, বিদআতিদের নিকট থেকেইলম গ্রহণ করা হারাম।

🔴দ্বিতীয়ত, এই সংশয়ের জবাব হিসেবে বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, জারাহ ও তাদীলের ঝাণ্ডাবাহী মুজাহিদ, আশ-শাইখুলআল্লামাহ, ইমাম রাবীবিন হাদী আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ)র ফাতওয়াই যথেষ্ট মনে করছি। ফাতওয়াটি নিম্নরূপ

🔴প্রশ্ন:মহান আল্লাহর এই বাণীর দিকনির্দেশনা কী, যেখানে আল্লাহ বলেছেন, “অতএব আমার বান্দাদেরকে সুসংবাদ দাও। যারা মনোযোগ সহকারে কথা শোনে, তারপর তার মধ্যে যা উত্তম তা অনুসরণ করে।” (সূরাহ যুমার: ১৭-১৮)

🔴কতিপয় লোক বলছে, এই আয়াতের উদ্দিষ্ট অর্থ হলোআমরা প্রত্যেক ব্যক্তির কথা শুনব, আর তার মধ্যে যা উত্তম তা অনুসরণ করব।

🔴🔴উত্তর: তুমি ইহুদি, খ্রিষ্টান ও কমিউনিস্টদের কথা শুনবে, অথচ তুমি জাহিল তথা অজ্ঞ! তুমি কুসংস্কারাচ্ছন্ন লোকদের এবং বিদআতিদের কথা শুনবে অথচ তুমি অজ্ঞ! তোমাকে হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য করতে জানতে হবে, অথচ তুমি জানো না কোনটা ভালো, আর কোনটা অধিক ভালো, কোনটা বাতিল, আর কোনটা ভ্রষ্টতা!

স্বভাবতই সালাফগণ এই আয়াতের তাফসীর করার ক্ষেত্রে এই মানহাজ সম্পর্কে আমাদের চেয়ে অধিক সমঝদার ছিলেন। তন্মধ্যে আমি তোমাদেরকে বলছি, একদা রাসূলুল্লাহ মহান আল্লাহর এই বাণী তেলাওয়াত করলেন—“তিনিই তোমার উপর কিতাব নাযিল করেছেন, তার মধ্যে আছে দ্ব্যর্থহীন আয়াতসমূহ। সেগুলো কিতাবের মূল, আর অন্যগুলো দ্ব্যর্থবোধক। ফলে যাদের অন্তরে রয়েছে সত্যবিমুখ প্রবণতা, তারা ফিতনার উদ্দেশ্যে এবং ভুল ব্যাখ্যার অনুসন্ধানে দ্ব্যর্থবোধক আয়াতগুলোর পেছনে লেগে থাকে। অথচ আল্লাহ ছাড়া কেউ এর ব্যাখ্যা জানে না। আর যারা জ্ঞানে পরিপক্ব, তারা বলে, আমরা এগুলোর প্রতি ঈমান আনলাম, সবগুলো আমাদের রবের পক্ষ থেকে। আর বিবেকসম্পন্নরাই উপদেশ গ্রহণ করে।(সূরাহ আলেইমরান: ৭)

তিনি এই আয়াত পাঠ করার পর বললেন, “যারা মুতাশাবাহাত (দ্ব্যর্থবোধক) আয়াতের পেছনে ছুটে তাদের যখন তুমি দেখবে, তখন মনে করবে যে, তাদের কথাই আল্লাহ তাআলা ক্বুরআনে বলেছেন। সুতরাং তাদের ব্যাপারে সাবধান থাকবে।(সাহীহ বুখারী, হা/৪৫৪৭; সাহীহ মুসলিম, হা/২৬৬৫)

🔴সালাফগণসালাফদের মধ্যে বড়-বড় ইমামগণএই হাদীস থেকে এই বুঝ গ্রহণ করেছেন যে, বিদআতীরা দুষ্কর্মকারী এবং মন্দ অভিলাষ পোষণকারী। সুতরাং তুমি তাদের কথা শুনো না। এমনকি ইবনু সীরীনযিনি ইসলামের একজন অন্যতম ইমামবিদআতির নিকট থেকে কোরআন পর্যন্ত শুনতেন না। কোরআন! কেন? কেননা সে (বিদআতী) দ্ব্যর্থবোধক আয়াত বর্ণনা করবে, তোমাকে বিপথগামী করার জন্য। মানে সে ফিতনাহ প্রবিষ্ট করবে এবং তোমাকে হক গ্রহণ করা থেকে বিরত রাখতে চাইবে।

এটা বিদআতিদের ঘটনা ও চক্রান্ত থেকে জানা গেছে। আর কোরআন ও নাবাউয়ী নির্দেশনা যে বিষয়টি অবহিত করে, তা হচ্ছেতুমি বাতিলপন্থিদের শ্রবণ করো না এবং বাতিলকেও শ্রবণ করো না। এটাই সালাফদের বুঝ, যে ব্যাপারে তাঁরা একমত হয়েছেন। বিদআতিদের থেকে সতর্ক করার ব্যাপারে এবং বিদআতিদের বর্জন ও তাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করার ব্যাপারে তাঁরা একমত হয়েছেন। অনুরূপভাবে তাদের বইপুস্তক পড়া থেকে সতর্ক করার ব্যাপারেও একমত হয়েছেন।

🔴আর এটাই (বইপুস্তক পড়া) তাদের চক্রান্তের মূলে ফিরে যায়, যে চক্রান্তের কথা আমি ইতিপূর্বে তোমাদের কাছে বর্ণনা করেছি। তারা বলে, পড়ো, হকটা গ্রহণ করো, আর বাতিলটা বর্জন করো। অথচ তুমি হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য করতে জানো না। ফলে তুমি ভ্রষ্টতার গর্তে পতিত হও।

তুমি যদি হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী এবং সালাফী মানহাজের উপর অবিচলআলিমহও, আর তুমি নিজের ব্যাপারে আস্থাবান হও যে, তুমি দলিল দিয়ে দলিলকে আঘাত করতে পারবে এবং কিছু সংশয় বিশদভাবে বর্ণনা করতে পারবে, তাহলে তুমি বিদআতিদের লেখা পড়ো। তাদের লেখা থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য নয়। বরং তুমি তাদের বাতিল বিষয় জানার জন্য তাদের লেখা পড়বে, যাতে করে তুমি তাদের বাতিল কর্ম থেকে মানুষকে সতর্ক করতে পার। আর যখন তুমি জানো যে, তোমার মধ্যে দুর্বলতা আছেযদিও তুমি একজনআলিমতাহলে তোমার জন্য বিদআতিদের সাথে উঠা-বসা থেকে এবং তাদের বইপুস্তক পড়া থেকে দূরে থাকা আবশ্যক।

আমি তোমাদের কাছে কয়েকজন বড়-বড় ব্যক্তিত্বের দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছি, যারা কোনো কোনো বিষয়েযদিও তা অল্প কিছু ক্ষেত্রেবিদআতিদের প্রতি নির্ভর করার কারণে ভ্রষ্টতা ও বিদআতে পতিত হয়েছেন। আল্লাহ তোমাদের মধ্যে বরকত দিন। আয়াতের উদ্দেশ্য এটা নয় যে, তুমি হক-বাতিল উভয়ই শুনবে আর কেবল হকটাই গ্রহণ করবে। বরং তুমি বাতিল থেকে দূরে থাকবে। বিশেষ করে যখন তুমি (ইলমে) দুর্বল হও। আল্লাহ তোমাদের মধ্যে বরকত দিন।

তাদের উত্থাপিত আরেকটি সংশয়ের নিরসন!

মুহাদ্দিসগণ বিদআতিদের বর্ণিত হাদীস গ্রহণ করেছেন, সুতরাং বিদআতিদের নিকট থেকেইলমনেওয়া যাবে।

🔴 কতিপয় বিদআতী ও ধোঁকাগ্রস্ত সালাফী এই সংশয় উত্থাপন করে যে, মুহাদ্দিসগণ যেহেতু বিদআতিদের বর্ণিত হাদীস গ্রহণ করেছেন, সুতরাং তাদের নিকট থেকেইলম নেওয়া যাবে।

🔴সংশয়ের জবাব: দশ দিক থেকে এই সংশয়ের জবাব দেওয়া যায়। যথাপ্রথমত, সালাফদের নিকট গৃহীত মূলনীতি হলো বিদআতীর বর্ণনা (রিওয়াইয়াত) গ্রহণ না করা। পক্ষান্তরে বিদআতীদের নিকট থেকে যেসব হাদীস বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর কথা স্বতন্ত্র। যেমন প্রখ্যাত তাবিঈ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সীরীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১১০ হি.] বলেছেন, “এমন এক সময় ছিল যখন লোকেরা সনদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করত না। কিন্তু পরে যখন ফিতনাহ (হাদীসের নামে মিথ্যা কথার আমদানী) দেখা দিলো, তখন লোকেরা হাদীস বর্ণনাকারীদেরকে বলল, ‘তোমরা যাদের নিকট থেকে হাদীস গ্রহণ করেছ, আমাদের কাছে তাদের নাম বল।ফলে দেখা হতো তারা আহলুস সুন্নাহ কি না? যদি তারা আহলুস সুন্নাহ হতো, তাহলে তাদের হাদীস গ্রহণযোগ্য হতো। আর যদি দেখা যেত তারা বিদআতী, তাহলে তাদের হাদীস গ্রহণ করা হতো না।[সাহীহ মুসলিম, ‘ভূমিকা’; পরিচ্ছেদ- ৫]

🔴দ্বিতীয়ত, অধিকাংশআলিমযাঁদের মধ্যে আছেন ইমাম আহমাদএ দিকে গিয়েছেন যে, বিদআতীর কাছ থেকে কেবল তখনই রিওয়াইয়াত করা হবে, যখন সে গাইরে দাইয়াহ (বিদআতের দিকে আহ্বানকারী নয় এমন) হবে। তাহলে কীভাবে এই বিষয়কে আমভাবে বৈধ বলে দাবি করা যায়?

🔴তৃতীয়ত, একটি বিষয় সালাফদেরকে বিদআতীদের নিকট থেকে রিওয়াইয়াত করতে বাধ্য করেছিল। সেটা হলোরাসূল এর হাদীসের সংরক্ষণ। কেননা ঢালাওভাবে রিওয়াইয়াত বর্জন করলে সুন্নাহর একটি বড়ো অংশ বাদ পড়ে যাবে, যা নিঃসন্দেহে ক্ষতির কারণ।

🔴চতুর্থত, কিছু সালাফ বিদআতীদের জীবিতাবস্থায় তাদের নিকট থেকে রিওয়াইয়াত করেননি, তাদেরকে হেয় করার জন্য এবং সাধারণ মানুষ যাতে তাদের দ্বারা ফিতনাহগ্রস্ত না হয় সেজন্য। বরং তাঁরা তাদের মৃত্যুর পর এবং তাদের ফিতনাহ অপসৃত হওয়ার পর তাদের বর্ণিত হাদীস বর্ণনা করেছেন, ফলে তাদের দ্বারা ধোঁকাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দূরীভূত হয়েছে।

🔴পঞ্চমত, বিদআতীদের নিকট থেকে হাদীস বর্ণনার বিষয়টি রিওয়াইয়াতের যুগেই সীমাবদ্ধ। তাহলে রাসূল এর হাদীস বর্ণিত হয়ে যাওয়ার পর এবং রিওয়াইয়াতের যুগ শেষ হয়ে যাওয়ার পর এই যুগে এসে তাদের নিকট হাদীস গ্রহণ করার প্রয়োজন আছে কি?! তাহলে আমরা এখন আসল বা মূলের দিকে ফিরে যাব। আর তা হচ্ছে বিদআতীদের নিকট থেকেইলম গ্রহণ করা নিষিদ্ধ, যেমনটি ইমাম ইবনু সীরীন (রাহিমাহুল্লাহ)র কথায় বর্ণিত হয়েছে।

🔴ষষ্ঠত, হাদীস বর্ণনা করার বিষয়টিইলম গ্রহণ করার বিষয় থেকে ভিন্নতর। এরকম কোনো শর্ত নেই যে, আমরা কারও বর্ণিত হাদীস গ্রহণ করলে আমাদেরকে তার নিকট থেকে সাধারণইলমও গ্রহণ করতে হবে। সুতরাং আমরা বিদআতীদের বর্ণিত হাদীস গ্রহণ করেছি মাত্র, কিন্তু হাদীসের সমঝ আমরা আহলুস সুন্নাহআলিমদের নিকট থেকেই গ্রহণ করি।

🔴 সপ্তমত, কতিপয় সালাফের মতে, বিদআতীর নিকট থেকে কেবল তখনই রিওয়াইয়াত করা হবে, যখন হাদীস বর্ণনা করার জন্য তার সনদ ছাড়া অন্য কোনো সনদ পাওয়া যায় না। নতুবা যদি অন্য কাউকে পাওয়া যায়, তাহলে বিদআতীর দিকে ভ্রুক্ষেপও করা হবে না, তাকে হেয় ও লাঞ্ছিত করার জন্য। ইমাম ইবনু হাজার আল-আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৮৫২ হি.] বলেছেন, “বিদআতীর নিকট থেকে কোনো কিছু বর্ণনা করা উচিত নয়, যখন সে বিষয়ে কোনো গাইরে বিদআতী তার সাথে বর্ণনায় শরিক হয়।[ইমাম ইবনু হাজার (রাহিমাহুল্লাহ), নুযহাতুন নাযার ফী তাওদ্বীহি নুখবাতিল ফিকার; পৃষ্ঠা: ১২৩; তাহক্বীক্ব: ড.আব্দুল্লাহ বিন দ্বইফুল্লাহ আর-রুহাইলী; বাদশাহ ফাহাদ লাইব্রেরি কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৯ হি./২০০৮ খ্রি. (২য় প্রকাশ)]

অথচ বিরুদ্ধবাদীরা নিঃশর্তভাবে বিদআতীর নিকট থেকেইলম গ্রহণ করার দাবি করছে, যদি কোনো সালাফী পাওয়া যায় তবুও।

🔴অষ্টমত, ‘আলিমগণ এই সিদ্ধান্ত পেশ করেছেন যে, বিদআতীদের নিকট থেকেইলম গ্রহণ করা কেবল হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে খাস, হাদীস সংরক্ষণ করার কারণে। অথচ তারা এই বিষয়কে নিঃশর্ত করে নিয়েছে। ফলে তারা বিদআতীদের নিকট থেকে সকল শাস্ত্রেরইলম গ্রহণ করছে।

🔴নবমত, কিছুআলিমের মতে (যেমন ইমাম যাহাবী) বিদআতীর নিকট থেকে কেবল তখনই রিওয়াইয়াত করা হবে, যখন তার বিদআত ছোটো হবে। অথচ তারা বিদআতীর নিকট থেকেইলম গ্রহণের বিষয়টিকেনিঃশর্তবানিয়ে নিয়েছে।

🔴দশমত, বিদআতীর বর্ণিত বিষয়গুলোর মধ্যে সঠিক ও ভুলের পার্থক্য করা এবং বিদআতীর নিকট থেকে রিওয়াইয়াত করার বিষয়টি দক্ষ মুহাদ্দিসদের জন্য। তাহলে কীভাবে আমরা সাধারণ জনসাধারণকে বিদআতীর নিকট থেকেইলম গ্রহণ করার দিকে আহ্বান করি, যাদের কাছে সঠিক ও ভুলের মধ্যে পার্থক্য করার মতো তমিজ নেই! [শেষোক্ত সংশয়ের জবাব শাইখ ফাওয়্যায বিনআলী আল-মাদখালী

আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, শরিয়তের জ্ঞানার্জন করার জন্য আমাদেরকে আহলুস সুন্নাহর দ্বারাই যথেষ্ট করুন এবং বিদআতিদের সংশয় থেকে হেফাজত করুন। আমীন, ইয়া রাব্বালআলামীন।

🔴🔴 বাড়তি আর কিছু অ্যাড কয়া হল--

এবার আসি বিদআতিদের মৃত্যুতে খুঁশ প্রকাশের বর্ণনায়!

ওরা ইসলামের অধিক ক্ষতিকারক! সঠিক দ্বীনকে পরিবর্ত ওরাই করেছে।

বিদআতিদের মৃত্যুতে আমাদের সালাফগণ খুঁশ হতেন আনন্দ প্রকাশ করতেন। এই ভেবে যে, যাইহোক একটা বিদআত প্রচারকারীর জবান নিস্তব্ধ হয়েছে! আর পারবেনা বিদআত প্রচার করতে।

হাদিস দেখুন! ﻋﻦ ﺇﺑﺮاﻫﻴﻢ ﺑﻦ ﻣﻴﺴﺮﺓﺭﺿﻲ اﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪﻗﺎﻝ: ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ اﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ: «ﻣﻦ ﻭﻗﺮ ﺻﺎﺣﺐ ﺑﺪﻋﺔ، ﻓﻘﺪ ﺃﻋﺎﻥ ﻋﻠﻰ ﻫﺪﻡ اﻹﺳﻼﻡ» “. ﺭﻭاﻩ اﻟﺒﻴﻬﻘﻲ ﻓﻲ (ﺷﻌﺐ اﻹﻳﻤﺎﻥ)

অর্থাৎ, নবিজী স. বলেছেন যে কোন বিদআতিকে সম্মান বা সাহায্য করল, সে যেন দ্বীনকে ধ্বংস করতে সাহায্য করল!

ফিক্বহ থেকে, এই হাদিসের ব্যাখ্যায় মোল্লা আলী ক্বারী রহিমাহুল্লাহ বলেন, ইবনে হাজার আসকালানি রহ. বলেছেনবিদআতি লোকটি বিদআতের দিকে আহ্বানকারী হোক বা সাধারণ বিদআতি, তাকে সম্মান বা সাহায্য করা যাবে না।আল্লামা তীবি বলেছেন বিদআতিকে সম্মান ও সাহায্যকারীর ব্যাপারে যদি এত কঠিন ধমক হয় তবে স্বয়ং বিদআতীর অবস্থা কেমন হবে!

যাচ্ছি এবার সালাফ ও ইমামদের আমলের দিকে!

ইবনে আবি দাউদ যখন প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়, তখন আহলে সুন্নাত আনন্দ প্রকাশ করেন, এমনকি ইবনে শুরাআ বসরী আনন্দে প্রকাশে কবিতা রচণা করেন। তারীখে বাগদাদঃ ৪/৫৫)

আরো দেখুন!

আহমদ ইবনে হাম্বাল রহ.-কে প্রশ্ন করা হলো, ইবনে আবি দাউদের অনুসারীদের বিপদে কেউ যদি খুশি হয় তাহলে কী তাঁর গোনাহ হবে? তিনি বললেন, এতে আবার কে খুশি না হয়? (আস সুন্নাহঃ ৫/১২১)

অর্থাৎ আহমাদ রহ. বুঝিয়ে দিলেন, এদের মৃত্যুতে আনন্দিত হওয়াই সালাফদের আদর্শ, ব্যাথিত হওয়া আদর্শের বিপরীত। আল্লাহ যেন আমাদেরকে বিদআতিদের কবল থেলে রক্ষা করেন আমিন।

🔴লেখক: শিক্ষক; দারুস সালাম ইসলামিয়া মাদ্রাসা দেবিদ্বার কুমিল্লা

এডিটরঃ rasikulindia


Post a Comment

0 Comments