প্রশ্নঃ
“আলেম” কে? বর্তমান যুগের আলেম কারা??
_______________
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“আল উলামা ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া” - আলেম ওলামারা হচ্ছেন নবী-রাসূলদের
ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারী।_______________
আজকাল মানুষ যাদেরকে “আলেম” মনে করেঃ
১. টিভিতে
কাউকে কথা বলতে দেখলে
২. কুরান
হাদীসের অপব্যখ্যা করে কিছু লেখালিখি করতে পারলে
৩. ইউটিউব বা ইন্টারনেটে কিছু লেকচার ছেড়ে জনপ্রিয়তা
পেলে
৪. ফেইসবুক, টুইটারে কয়েক লক্ষ লাইক/ফলোয়ার/
৫. বড় কোন মাদ্রাসাতে বা সংগঠনে পজিশান বা ক্ষমতা
দখল করে বসে থাকলে
৬. মুফতি, মাওলানা ইত্যাদি সার্টিফিকেট নিলে বা নামের আগে মুফাসসির, মুহাদ্দিস, শায়খ ইত্যাদি টাইটেলে যোগ করলে
৭. হৃদয়
গলানো বা গরম গরম আবেগী বক্তৃতা দিয়ে বা মনভুলানো কিছু লেখালিখি করে মানুষের
ব্রেইন ওয়াশ করতে পারলে
_______________
কিন্তু এইগুলো কি আসলেই কারো “আলেম” হওয়ার জন্য
যথেষ্ঠ?
ইসলাম কি আমাদের এই শিক্ষা দেয় যে, এই গুণগুলো কারো মাঝে থাকলেই সে আলেম হয়ে
যাবে?
_______________
আমাদের আগের যুগের মুসলমানেরা কিন্তু এইভাবে মানুষকে
“আলেম” হিসেবে নিতোনা। কারণ, আমরা যারা সাধারণ মানুষ, দ্বীন সম্পর্কে
অভিজ্ঞ না, তাদের সামনে যদি একজন মূর্খ লোকও সামান্য কিছু
পড়াশোনা করে আলেমের লেবাস ধরে, আমরা কিন্তু ধরতে পারবোনা
– এই লোকটা আসলেই আলেম কিনা? নাকি আলেম না হয়েও সে
আলেমদের অভিনয় করে মানুষকে ধোকা দিচ্ছে? যেমন একজনু
জহুরীই কেবলমাত্র চিনতে পারবে কোনটা রত্ন কোনটা সস্তা পাথর, একজন স্বর্ণকারই চিনতে পারবে কোনটা স্বর্ণ আর কোনটা সিটি গোল্ড
(ইমিটেশান), ঠিক তেমনই একজন প্রকৃত আলেমই আসলে চিনতে
পারবেন কে আলেম আর কে জাহেল।
_______________
এইজন্য তাবেয়ীদের যুগ থেকেই, যখন থেকে মুসলমানদের মাঝে “উলামায়ে
সু” (মন্দ আলেম) ও আয়াম্মায়ে দ্বোয়াল্লিন (পথভ্রষ্ট ইমাম) ঢুকে গেছে, আমাদের আলেমরা উম্মতকে বার বার সতর্ক করে গেছেনঃ ইসলাম শেখার জন্য যাকে
তাকে “উস্তাদ” বা শিক্ষক হিসেবে না নেওয়ার জন্য, যার তার
কথা বা ওয়াজ শোনা বা বই না পড়ার। দ্বীনের ব্যপারে “প্রকৃত আলেম” ছাড়া অপরিচিত,
অজ্ঞ লোকদেরকে আলেম মনে করে তাদের কথা বিশ্বাস করবেনা। যদি করো
তাহলে যেন তুমি তোমার দ্বীনকেই ধ্বংস করলে!
_______________
অপরিচিত (অজ্ঞ/
_______________
এইজন্য আলেমরা অপরিচিত কেউ এবং কেউ প্রকৃত আহলে
সুন্নত নাকি ভেজাল আহলে সুন্নত, আহলে বেদাতের লোক কিনা, আলেম নাকি জাহেল – এই
বিষয়গুলো ভালোভাবে যাচাই না করে তার কাছ থেকে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান নিতে কঠোরভাবে
নিষেধ করেছেন। এই ব্যপারে প্রখ্যাত তাবেয়ী, ইমাম
মুহাম্মাদ ইবনে সিরীন রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ “এই যে জ্ঞান (দ্বীনের ব্যপারে),
এটাই হচ্ছে তোমার দ্বীন। সুতরাং, কার
কাছে থেকে তুমি দ্বীনের জ্ঞান নিচ্ছ সেই ব্যাপারে সতর্ক থাকো।”
এইজন্য আমার যাকে ভালো লাগে, যার বই পড়ে বা ওয়াজ শুনে আমার কাছে বড় আলেম,
জ্ঞানী ব্যক্তি মনে হয়, তাকেই আলেম
হিসেবে মনে করা মারত্মক ভুল। বরং দেখতে হবে, যার ব্যপারে
কথা হচ্ছে, তার ব্যপারে তার আগে যারা “আলেম” ছিলেন তারা
তাকে কি তাকে আলেম মনে করতেন নাকি জাহেল (অজ্ঞ) মনে করতেন?
_______________
“ইলম” বা দ্বীনের জ্ঞান আকাশে
বাতাসে ঘুরে বেড়ায় না, যার ইচ্ছা নিয়ে সে আলেম হয়ে যাবে
অথবা এমনটা ঠিকনা যে, বই পড়েই কেউ আলেম হয়ে যাবে। এটা ঠিক
ভালো কিছু বই পড়ে, বা কিছু উপকারী কথা শুনে আমার ইলম
বাড়বে, কিন্তু তার মানে এইনা যে এর দ্বারা আমি বড় কোন
“মুফতি”, “আলেম”, “আল্লামাহ” হয়ে
যাবো। যেমন কেউ নিজে নিজে ডাক্তারীর উপরে কিছু বই পড়েই ডাক্তার হয়ে যায়না, তার জন্য তাকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে হবে, প্রফেসর
ডাক্তারদের কাছ থেকে হাতে কলমে ডাক্তারী শিখতে হবে। ঠিক তেমনি কেউ নিজে নিজে শুধু
কুরান হাদীস পড়েই আলেম হয়ে যেতে পারেনা। তাকে অবশ্যই আলেমদের কাছে যেতে হবে,
দীর্ঘদিন ধরে তাদের সাথে থেকে, তাদের
সাথে সময় কাটিয়ে কুরান ও হাদীসের প্রকৃত জ্ঞান শিখতে হবে। এইভাবে আলেমদের সাথে
ছাত্র-শিক্ষকের যে সম্পর্ক তৈরী হবে – এর মাধ্যমেই আসলে পরবর্তী প্রজন্মের আলেম
তৈরী হয়। অর্থাৎ, আগের যুগের আলেম যারা থাকেন, তারা তাদের ছাত্রদের মাঝে যারা জ্ঞানী, বিচক্ষণ,
আল্লাহওয়ালা তাদেরকে “আলেম” বলে ঘোষণা করে যান। উম্মতকে তাদের
কাছ থেকেই উপকৃত হতে নসীহত করে যান।
_______________
এর উদাহরণ হিসেবে ইমাম মালেক এর বিখ্যাত ঘটনা বলা
যেতে পারে...
ইমাম মালেক রাহিমাহুল্লাহ বলেছিলেনঃ
“আমি ততদিন পর্যন্ত কোন ফাতওয়া দেইনি, যতদিন পর্যন্ত না ৭০ জন আলেম আমাকে ফাতওয়া দিতে বলেছেন।”
অর্থাৎ ইমাম মালেক নিজে থেকে কোন ফাতওয়া দেন নি
(অর্থাৎ আলেম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন নি), যতদিন পর্যন্ত না ৭০ জন আলেম তাকে “আলেম” বলে ঘোষণা করেছেন। এইভাবে
পূর্ববর্তী আলেমরা যখন কাউকে “আলেম” হিসেবে ঘোষণা করেন, আমরা
সাধারণ মানুষেরা ঐ আলেমদেরকে অনুসরণ করবো, তাদের কাছ থেকে
ইলম নেবো – তবে অন্ধভাবে নয়, কুরান ও সুন্নাহর ভিত্তিতে।
_______________
মুসলিমদের চিরাচরিত নীতি অনুযায়ী, বর্তমান যুগের আলেম কে এটা জানার
জন্য আমরা দেখবো এর আগের যুগে যারা “আলেম” ছিলেন তারা কাকে আলেম বলে ঘোষণা করেছেন।
বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ আলেমদের মাঝে সাবেক সৌদি প্রধান মুফতি আল্লামাহ, শায়খ আব্দুল আ’জীজ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে বাজ রাহিমাহুল্লাহ, শীর্ষস্থানীয় অন্য আরেকজন আলেম আল-ফকীহ, শায়খ
মুহা’ম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমিন – এই দুইজনকেই যখন প্রশ্ন করা হয়েছিলো – আপনাদের
পরে আমরা কার কাছে যাবো – ফতোয়া নেওয়ার জন্য? তারা সবার
আগে যার কথা বলেছিলেন তিনি হচ্ছেন – আল্লামাহ, শায়খ সালেহ
আল-ফাওজান হা’ফিজাহুল্লাহ এর নাম। উল্লেখ্য শায়খ বিন বাজ, শায়খ উসাইমিনসহ আরো অন্যান্য বড় বড় আলেমরা আমদেরকে শায়খ ফাওজানের কাছ
থেকে ইলম নিতে বলেছেন।
_______________
বর্তমান যুগে জীবিত আছেন এমন আরো কিছু আলেমদের নাম
নিচে দেওয়া হলো। এছাড়াও আহলে সুন্নতের আরো কিছু বড় আলেম আছেন, আল্লাহ তাদের সকলকে হেফাজত করুন।
_______________
১.
শায়খ যায়েদ আল-মাদখালী রাহিমাহুল্লাহ - উনার নাম সবার আগে বলার কারণ হচ্ছে - উনি
প্রায় ১ মাস হলো মৃত্যুবরণ করেছেন। পেজে উনাকে নিয়ে পোস্ট দিবো অনেকবার ভেবেও
দেওয়া হয়নি। যাই হোক, আল্লাহ তার আমলগুলো কবুল করে নিন, তার
গুনাহসমূহ
মাফ
করে তাকে জ়ান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন - আমিন।
২. শায়খ সালেহ আল-ফাওজান হা'ফিজাহুল্লাহ
৩. শায়খ আব্দুল আজীজ আহলুশ-শায়খ হা'ফিজাহুল্লাহ
৪. শায়খ উবায়েদ আল-জাবেরী হা'ফিজাহুল্লাহ
৫. শায়খ আব্দুল মুহসিন আল-আব্বাদ হা'ফিজাহুল্লাহ
৬. শায়খ রাবী বিন হাদী আল-মাদখালী হা'ফিজাহুল্লাহ
৭. শায়খ মুহাম্মাদ বিন হাদী আল-মাদখালী হা'ফিজাহুল্লাহ
৮. শায়খ উয়াসী উল্লাহ আব্বাস হা'ফিজাহুল্লাহ
৯. শায়খ সালেহ আল-লুহাইধান হা'ফিজাহুল্লাহ
১০. শায়খ মুহাম্মাদ সাঈদ রাসলান হা'ফিজাহুল্লাহ
১১. শায়খ সালেহ আস-শুহাইমি হা'ফিজাহুল্লাহ
COPY: bACK TO ALLAH.
0 Comments