৩৭)সালাত শেষে জামাতবদ্ধভাবে দুআ(মুনাজাত)করাঃ
🔵ফরয সালাত শেষ হলেই ইমাম মুক্তাদি মিলে দলবদ্ধ হয়ে মুনাজাত একটি বহুল প্রচলিত কাজ। মুসলমানগণ ব্যাপকভাবে এভাবে দুআ করে আসছে। অথচ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এব্যাপারে কোন হাদীস পাওয়া যায় না। সাহাবী তাবেঈদের যুগেও এর সহীহ্ সনদ ভিত্তিক কোন প্রমাণ মিলেনা। এমনকি নবীজি থেকে সহীহ্ তো দূরের কথা যঈফ বা মওযু বর্ণনাও পাওয়া যায় না। তাই একাজ সম্পূর্ণ সুন্নাত বিরোধী বা বিদআত। যা পরিত্যাগ করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরয।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমানে মুসলামানগণ এই বিদআতটিকে একটি সুন্নাত তো বটেই বরং ফরযের মতই মনে করে। যার কারণে আপনি দেখবেন, যদি আপনি ফরয সালাত শেষে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পঠিতব্য সহীহ্ হাদীছে প্রমাণিত দুআ যিকিরে মাশগুল হন, ওদের সাথে বিদআতী মুনাজাতে শরীক না হন- তবে অন্যান্য মুসল্লীরা আপনার প্রতি বাঁকা নজরে দেখবে, যেন আপনি মস্তবড় একটি অপরাধ করছেন।! আর ইমাম সাহেব যদি কখনো এই মুনাজাত ছেড়ে দেয় তবে অনেক ক্ষেত্রে তার চাকুরী নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে যাবে। এই হচ্ছে বর্তমান মুসলমানদের অবস্থা।
🔵পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর
মুনাজাত
আমাদের দেশে বলতে গেলে ভারতীয়
উপমহাদেশে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর দুআ-মুনাজাতের প্রচলন দেখা যায়। এ বিষয় এখন কিছু
আলোচনা করার ইচ্ছা করছি।
পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাত শেষে দুআ কবুল
হওয়ার কথা বহু সহীহ হাদীস থেকে প্রমাণিত। তাহলে এ নিয়ে বিতর্ক কেন? আসলে পাঁচ
ওয়াক্ত সালাতের পর দুআ নিয়ে বিতর্ক নয়, বিতর্ক হল এর
পদ্ধতি নিয়ে। যে পদ্ধতিতে দুআ করা হচ্ছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বা তাঁর সাহাবায়ে কেরাম এভাবে দুআ করেছিলেন কি-না? তাই আমি এখানে আলোচনা করব সে দুআ-মুনাজাত নিয়ে যার মধ্যে নিম্নোক্ত সবকটি
শর্ত বিদ্যমান :
এক. পাঁচ ওয়াক্ত
সালাতের পর দুআ করা।
দুই. যে দুআ-মুনাজাত
জামাআতের সঙ্গে করা হয়।
তিন. প্রতিদিন প্রতি
ফরজ সালাত শেষে দুআ-মুনাজাত করা।
এ শর্তাবলী বিশিষ্ট দুআ-মুনাজাত
কতটুকু সুন্নাত সম্মত সেটাই এ অধ্যায়ের মূল আলোচ্য বিষয়।
পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাত আদায়ের পর
প্রচলিত মুনাজাত করা না করার ব্যাপারে আমাদের দেশের লোকদের সাধারণত তিন ভাগে
বিভক্ত দেখা যায়।
এক. যারা ছালাম
ফিরানোর পর বসে বসে কিছুক্ষণ যিকর-আযকার আদায় করেন, যা
সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
দুই. যারা ছালাম
ফিরানোর পর যিকির-আযকার না করে তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে যান সুন্নাত নামায আদায়ের জন্য।
তিন. যারা ছালাম
ফিরানোর পর সর্বদা ইমাম সাহেবের সঙ্গে একত্রে মুনাজাত করেন। এবং মুনাজাত শেষ হওয়ার
পর সুন্নাত নামায আদায় করেন।
আর এ তিন ধরনের লোকদেরই এ সকল আমলের
সমর্থনে কোনো না কোনো দলীল প্রমাণ রয়েছে। হোক তা শুদ্ধ বা অশুদ্ধ। স্পষ্ট বা অস্পষ্ট।
প্রথম দলের দলীল-প্রমাণ স্পষ্ট। তাহল
বুখারী ও মুসলিমসহ বহু হাদীসের কিতাবে সালাতের পর যিকির-আযকার অধ্যায়ে বিভিন্ন
যিকিরের কথা সহীহ সনদে বর্ণিত আছে, যা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার সাহাবায়ে কেরাম
আমল করেছেন। অনেক ইমাম ও উলামায়ে কেরাম এ যিকির-আযকার সম্পর্কে স্বতন্ত্র পুস্তক
সংকলন করেছেন।
আর দ্বিতীয় দলের প্রমাণ হল এই হাদীস
عن عائشة رضى الله عنها قالت كان النبي صلى الله عليه وسلم إذا سلم لم يقعد إلا مقدار ما يقول اللهم أنت السلام ومنك السلام تباركت يا ذالجلال والإكرام.") أخرجه ابن ماجة والنسائي والترمذي وقال حديث حسن صحيح وهو كما قال، صححه الألباني في صحيح ابن ماجه رقم الحديث 761(
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী কারীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ছালাম ফিরাতেন তখন আল্লাহুম্মা আনতাচ্ছালাম
ওয়ামিনকাচ্ছালাম তাবারাকতা ইয়া জালজালালি ওয়াল ইকরাম পড়তে যতটুকু সময় লাগে তার
চেয়ে বেশি সময় বসতেন না। (তিরমিজী, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ)
তারা এ হাদীস দ্বারা বুঝে নিয়েছেন যে, এ যিকিরটুকু
আদায় করতে যতটুকু সময় লাগে এর চেয়ে বেশি বসা ঠিক নয়। তাই তাড়াতাড়ি সুন্নাত আদায়ের
জন্য দাঁড়িয়ে যেতে হবে। আসলে এ হাদীস দ্বারা তারা যা বুঝেছেন তা সঠিক নয়।
🔵হাদীসটির ব্যাখ্যা হল, আল্লাহর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেহেতু ইমাম ছিলেন তাই তিনি ছালাম ফিরানোর পর
এতটুকু সময় মাত্র কেবলামুখী হয়ে বসতেন এরপর তিনি মুসল্লীদের দিকে মুখ ফিরিয়ে
বসতেন। আর তিনি যে প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর মুসল্লীদের দিকে মুখ করে বসতেন তা বহু
সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। (মজমু আল ফাতাওয়া : ইমাম ইবনু তাইমিয়া)
এ হাদীস দ্বারা কখনো প্রমাণিত
হয় না যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছালাম ফিরিয়ে এ দুআটুকু পড়ে
তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে যেতেন সুন্নাত সালাত আদায়ের জন্য। ফরজ সালাত আদায়ের পর যিকির, তাছবীহ, তাহলীল বর্জন করে তাড়াতাড়ি সুন্নাত
আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে যাওয়া মোটেও সুন্নাত নয়। বরং সুন্নাত হল সহীহ হাদীস দ্বারা
প্রমাণিত যিকির, দুআ, তাছবীহ, তাহলীল সাধ্যমত আদায় করে তারপর সুন্নাত আদায় করা।
তৃতীয় দল যারা ফরজ নামাযের পর
সম্মিলিতভাবে (জামাআতের সঙ্গে) মুনাজাত করেন তাদের দলীল হল ওই সকল হাদীস যাতে
সালাত শেষে দুআ কবুলের কথা বলা হয়েছে এবং দুআ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। এ সকল হাদীস
ছাড়া তাদের এ কাজের সমর্থনে হাদীস থেকে সরাসরি কোনো প্রমাণ নেই। এমন কোনো হাদীস
তারা পেশ করতে পারবেন না যাতে দেখা যাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম প্রত্যেক সালাত জামাআতের সঙ্গে আদায় শেষে সকলকে নিয়ে সর্বদা হাত তুলে
মুনাজাত করেছেন।
তারা যে সকল হাদীস প্রমাণ
হিসেবে পেশ করতে চান তার শিরোনাম হল الدعاء عقيب الصلوات، الدعاء دبر الصلوات
তারা মনে করে নিয়েছেন আকীবাস সালাত ও দুবুরাস সালাত অর্থ ছালাম ফিরানোর পর। আসলে তা নয়। এর অর্থ হল সালাতের শেষ অংশে। এ সকল হাদীসে সালাতের শেষ অংশে অর্থাৎ শেষ বৈঠকে দরূদ পাঠ করার পর ছালাম ফিরানোর পূর্বে দুআ করার কথা বলা হয়েছে। পরিভাষায় যা দুআয়ে মাছুরা হিসেবে আমাদের কাছে পরিচিত। সালাত শেষে দুআ কবুল সম্পর্কে যত হাদীস এসেছে তা সবগুলো দুআ মাছুরা সম্পর্কে। যার সময় হল ছালাম ফিরানোর পূর্বে। আর দুআ মাছুরা শুধু একটা নয়, অনেক। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে সালাতের শেষে দুআ সংক্রান্ত এ সকল হাদীসে বাদাস সালাত বলা হয়নি। হাদীস গ্রন্থে
সকল দুআকে
الأدعياء دبر الصلوات أو الدعاء عقيب الصلاة
(সালাত শেষের দুআ)
অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে দুটো বিষয়; প্রথমটা হল
সালাত শেষের দুআ। দ্বিতীয়টা হল সালাত শেষের যিকির। প্রথমটির স্থান হল ছালাম
ফিরানোর পূর্বে। আর দ্বিতীয়টির স্থান হল ছালাম ফিরানোর পর। ইমাম ইবনু তাইমিয়া রহ.
ইবনুল কায়্যিম রহ. প্রমুখ উলামায়ে কেরামের মত এটা-ই।
এ মতটা কুরআন ও হাদীসের আলোকে
বেশি যুক্তিগ্রাহ্য। বান্দা যখন সালাতে থাকে তখন সে আল্লাহর নিকটে অবস্থান করে।
দুআ মুনাজাতের সময় তখনই। যখন সালাতের সমাপ্তি ঘোষিত হল তখন নয়। তখন সময় হল আল্লাহর
যিকিরের, যেমন আল্লাহ বলেন :
فَإِذَا قَضَيْتُمُ الصَّلَاةَ فَاذْكُرُوا اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِكُمْ.
যখন তোমরা সালাত শেষ করলে তখন
দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করবে। (আন নিসা : ১০২ )
এ সম্পর্কিত হাদীসগুলোর ভাষা এবং সঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আমলসমূহ গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে এ বিষয়টিই বুঝে আসে ছালাম ফিরানোর পরের সময়টা দুআ করার সময় নয়, যিকির করার সময়।
📙একাকি হাত তুলে দুয়া যে সব স্থানে করা যায় পর্ব📙
🔴আনাস(রাযিঃ) ও আবূ মূসা(রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’খানা হাত এতোটুকু উঠিয়ে দূ’আ করতেন যে, আমি তার বগলের ফর্সা রঙ দেখতে পেয়েছি। [প্রমান-সহীহ বুখারীঃ ৬৩৪১,১০৩১]
🔴আওত্বাস যুদ্ধে আবু মূসা আশ‘আরী(রাঃ)-এর নিহত ভাতিজা দলনেতা আবু ‘আমের আশ‘আরী (রাঃ)-এর জন্য ওযূ করে দু’হাত তুলে একাকী দো‘আ করেছিলেন। 👉★[প্রমাণ-এটি ছিল ৮ম হিজরীতে সংঘটিত ‘হোনায়েন’ যুদ্ধের পরপরই। বুখারী হা/৪৩২৩]
🔴(১)বৃষ্টি প্রার্থনার জন্যঃ দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে। আনাস(রাঃ) বলেন,নাবী কারীম(সাঃ) বৃষ্টির জন্য ছাড়া
অর্থাৎ বৃষ্টির জন্য দু’আ ছাড়া জামা’আতবদ্ধভাবে
অন্য কোথায় হাত তুলতেন না। 👉প্রমাণ★[ বুখারী, প্রথম খন্ড,পৃঃ ১২৭,১৪০;হা/৯৩৩,১০২৯],[বুখারীঃ ১ম খন্ড, পেজ নং-১৪০; হাদিসঃ ১০৩১,৬৩৪২, মিশকাতঃ ১৪৯৯]
(৩)চন্দ্র ও সূর্যগ্রহনের সময়ঃ
সূর্য গ্রহণ লেগে গেলে। 👉★[ প্রমাণ-(মুসলিম ১ম খন্ড, পৃঃ ২৯৯ হা/৯১৩]
(৪)উম্মাতের জন্য রাসূল সাঃ এর
দোয়াঃ একদা রাসূল(সাঃ) সূরা ইবরাহীমের-৩৫ নং আয়াত পাঠ করে দু’হাত উঠিয়ে বলেন আমার উম্মাত, আমার উম্মাত এবং কাঁদতে থাকেন। তখন আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে জিবরীল! তুমি আমার মুহাম্মাদের নিকট যাও এবং জিজ্ঞেস করো, কেন তিনি কাঁদেন। অতঃপর জিবরীল তাঁর নিকটে আগমন করে কাঁদার কারণ জানতে চাইলেন। তখন রাসূল সাঃ তাঁকে বললেন, আল্লাহতায়ালা তা অবগত। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা জিবরীলকে বললেন,যাও, মুহাম্মাদকে বল যে, আমি তার উপর এবং তার উম্মাতের উপর সন্তুষ্ট আছি। আমি তার অকল্যাণ কবর না’। 👉★[ প্রমাণ-(মুসলিম, ১ম খন্ড , পৃ১১৩, হা/৩৪৬ ‘ঈমান’ অধ্যায় ]
(৫)কবর যিয়ারতের সময়ঃ আয়েশা(রাঃ) বলেন, কোন এক রাতে রাসূল(সাঃ) বের হলেন, আমি বারিরা(রাঃ) কে পাঠালাম, তাঁকে দেখার জন্য যে, তিনি কোথায় যান। তিনি জান্নাতুল বাক্বীতে গেলেন এবং পার্শ্বে দাঁড়ালেন। অতঃপর হাত তুলে দোয়া করলেন। তারপর ফিরে আসলেন। বারিরাও ফিরে আসলো এবং আমাকে খবর দিল। আমি সকালে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি গত রাতে কোথায় গিয়েছিলেন? তিনি বললেন জান্নাতুল বাকীতে গিয়েছিলাম কবর বাসীর জন্য দোয়া করতে। 👉★[প্রমাণ (ইমাম বুখারী , রাফউল ঈয়াদাঈন, পৃঃ ১৭ , হাদীস সহীহ; মুসলিম হা/৯৭৪]
(৬)হজ্জে পাথর নিক্ষেপের সময় দুয়া করা। [👉প্রমাণ-বুখারী, ১ম খন্ড, পৃঃ ২৩৬৭, হা/১৭৫১ ‘হজ্জ’ অধ্যায়]
(৭)যুদ্ধক্ষেত্রে দুয়া করা। 👉★প্রমাণ [মুসলিম, ২য় খন্ড, পৃঃ ৯৩, হা/১৭৬৩ ‘জিহাদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ ১৮]
(৮)কোন গোত্রের জন্য দু’আ করা। 👉
প্রমাণ★ [ বুখারী, মুসলিম, ছহীহ আল আদাবুল মুফরাদ, পৃঃ২০৯, হা/৬১১ সনদ সহীহ ]
(০৯)সাফা মারওয়া সায়ী করার সময় দুয়া করা। 👉প্রমাণ [সহীহ আবু দাউদ, হা/১৮৭২ সনদ সহীহ, মিসকাত হা/২৫৭৫ ‘হজ্জ’ অধ্যায়]
🔴(১০) কুনুতে নাযেলার সময়: আবু উসামা রাঃ হতে বর্ণিত, রাসূল সাঃ কুনুতে নাযেলায় হাত তুলে দু’আ করেছিলেন।
👉★[
প্রমাণ(ইমাম বুখারী,
রাফউল ঈয়াদাঈন,
সনদ সহীহ]
📙ফরয সালাতের পরে সম্মিলিতভাবে হাত তুলে দু’আ করা সম্বদ্ধে 📙
🔷পৃথিবীর শ্রেষ্ট আলেমদের অভিমতঃ🔷
(১)আহমাদ ইবনু তাইমিয়াহ(রাঃ) কে ফরয সালাতের পর ইমাম মুক্তাদি সম্মিলিতভাবে দু’আ করা জায়েয কি-না জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, “সালাতের পর ইমাম মুক্তাদি সম্মিলিতভাবে দু’আ করা বিদ’আত। রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর যুগে এরুপ দু’আ ছিল না। বরং তার দু’আ ছিল সালাতের মধ্যে। কারণ সালাতের মধ্যে মুসল্লি স্বীয় প্রতিপালকের সাথে নীরবে কথা বলে আর নীরবে কথা বলার সময় দু’আ করা যথাযথো”। 👉★[প্রমাণ-মাজমুআ ফাতাওয়া ,২২/৫১৯পৃঃ]
(২)শায়খ আব্দুল্লাহ বিন বায(রাহঃ) বলেন: “পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাত ও নফল সালাতের পর দলবদ্ধভাবে দু’আ করা স্পষ্ট বিদ’আত। কারণ এরুপ দু’আ রাসূলুল্লাহ(সাঃ) এর যুগে এবং তাঁর সাহাবীদের যুগে ছিল না। যে ব্যক্তি ফরয সালাতের পর অথবা নফল সালাতের পর দলবদ্ধভাবে দু’আ করে সে যেন আহলে-সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের বিরোধীতা করে।”👉প্রমাণ-[হাইয়াতু কেবারিল ওলামা-১/২৪৪পৃঃ]
তিনি আরো বলেন, “ইমাম-মুক্তাদি সম্মিলিত ভাবে দু’আ করার প্রমাণে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) থেকে, কথা, কর্ম ও অনুমোদন(কাওলী, ফে’লী, তাক্বরীরী) কোন হাদীস সম্পর্কে আমরা অবগত নই। আর একমাত্র রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আদর্শের অনুসরণেই রয়েছে সমস্থ কল্যাণ। সালাত আদায়ের পর ইমাম-মুক্তাদির দু’আ সম্পর্কে রাসূল(সাঃ) এর আদর্শ সুস্পষ্ট আছে, যা তিনি সালামের পর পালন করতেন। চার খলীফা সহ সাহাবীগণ এবং তাবেঈ গণ যথাযথভাবে তাঁর আদর্শ অনুসরণ করেছেন। অতঃপর যে ব্যক্তি তাঁর আদর্শের বিরোধীতা করবে, তাঁর আমল পরিত্যাজ্য হবে। রাসূল(সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি আমার নির্দেশ ব্যতীত কোন আমল করবে, তা পরিত্যাজ্য।” কাজেই যে ইমাম হাত তুলে দু’আ করবেন এবং মুক্তাদীগণ হাত তুলে আ-মীন আ-মীন বলবেন তাদের নিকট এ সম্পর্কে গ্রহণযোগ্য দলীল চাওয়া হবে।অন্যথায়(তারা দলীল দেখাতে ব্যর্থ হ’লে) তা পরিত্যাজ্য।” 👉★[সহীহ মুসলিমঃ ৪৩৮৪,,১৭১৮,৪৩৪৩,হাইয়াতু কেবারিল ওলামা ১/২৫৭]
(৩)বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দীস আল্লামা শায়খ নাসিরউদ্দীন আলবানী(রহঃ) বলেন: “দু’আয়ে কুনুতে হাত তুলার পর মুখে হাত মুছা বিদ’আত। সালাতের পরেও ঠিক নয়। এ সম্পর্কে যত হাদীস রয়েছে, এর সবগুলিই যঈফ(দুর্বল)। এজন্য ইমাম আযউদ্দীন বলেন, সালাতের পর হাত তুলে দু’আ করা মুর্খদের কাজ। 👉★প্রমাণ (সিফাতু সালাতিন নাবী (সাঃ) পৃঃ ১৪১)__
(৪)শায়খ উসায়মিন (রহঃ) বলেন, সালাতের পর দলবদ্ধভাবে দু’আ করা বিদ’আত। যার প্রমাণ রাসূল (সাঃ) ও তাঁর সাহাবীগণ থেকে নেই। মুসল্লিদের জন্য বিধান হচ্ছে প্রত্যেক মানুষ ব্যক্তিগতভাবে যিকির করবে। 👉প্রমাণ★[ফাতাওয়া উছায়মিন, পৃঃ ১২০]
(৫)আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী(রহঃ) বলেন: ফরয সালাতের পর হাত তুলে দু’আ করা ব্যতীত অনেক দু’আই রয়েছে। 👉★প্রমাণ [রফূস সামী-পৃঃ ৯৫]
(৬)আল্লামা আব্দুল হাই লাক্ষনৌভী(রহঃ) বলেন, বর্তমান সমাজে প্রচলিত প্রথা যে, ইমাম সালাম ফিরানোর পর হাত উঠিয়ে দু’আ করেন এবং মুক্তাদীগণ আ-মীন, আ-মীন বলেন, এ প্রথা রাসূল(সাঃ) এর যুগে ছিল না। 👉★প্রমাণ [ফৎওয়া আব্দুল হাই, ১ম খন্ড, পৃঃ ১০০]
(৭)আল্লামা ইউসুফ বিন নূরী বলেন, অনেক স্থানেই এ প্রথা চালু হয়ে গেছে যে ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর পর সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা হয় যা রাসূল সাঃ হতে প্রমাণিত নয়। 👉★ [প্রমাণ-(মা’আরেফুস সুনান, ৩য় খন্ড, পৃঃ ৪০৭]
(৮)আল্লামা আবুল কাশেম নানুতুবী বলেন, ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর পর ইমাম মুক্তাদি সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা নিকৃষ্ট বিদ’আত। 👉প্রমাণ★[এমদুদ্দীন, পৃঃ ৩৯৭]
(৯)আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম(রহঃ) বলেন, ইমাম পশ্চিমমুখী হয়ে অথবা মুক্তাদী গণের দিকে ফিরে মুক্তাদী গণকে নিয়ে মুনাজাত করা কখনও রাসূল (সাঃ) এর তরীকা নয়। এ সম্পর্কে একটিও সহীহ অথবা হাসান হাদীস নেই। 👉প্রমাণ★[ ইবনুল কাইয়্যেম, যাদুল মা’আদ, ১ম খন্ড,পৃঃ নং ১৪৯‘ফরয সালাতের পর দু’আ করা সম্পর্কে লেখকের মতামত’ অনুচ্ছেদ ]__
(১০)আল্লামা মাজদুদ্দীন ফিরোযাবাদী(রহঃ) বলেন, ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর পর ইমামগণ যে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেন, তা কখনও রাসূল (সাঃ) করেননি। এবং এ সম্পর্কে কোন হাদীসও পাওয়া যায় না 👉প্রমাণ★[ছিফরুস সা’আদাত, পৃঃ ২০]
(১১)আল্লামা শাত্বেবী(রহঃ) বলেন, শেষ কথা হল এই যে, ফরয সালাতের পর সম্মিলিতভাবে রাসূল (সাঃ) নিজেও মুনাজাত করেননি, করার আদেশও দেননি। এমনকি তিনি এটা সমর্থন করেছেন, এ ধরনের কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। 👉প্রমাণ-[আল-ইতেসাম, ১ম খন্ড, পৃঃ ৩৫২]
(১২)আল্লামা ইবনুল হাজ মাক্কী(রহঃ) বলেন, নিঃসন্দেহে এ কথা বলা চলে যে, রাসূল (সাঃ) ফরয সালাতের সালাম ফিরানোর পর হাত উঠিয়ে দু’আ করেছেন এবং মুক্তাদীগণ আ-মীন, আ-মীন বলেছেন, এরুপ কখনও দেখা যায় না। চার খলীফা থেকেও এর কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। তাই এ ধরনের কাজ, যা রাসূল (সাঃ) করেননি, তাঁর সাহাবীগণ করেননি, নিঃসন্দেহে তা না করা উত্তম এবং করা বিদ’আত।👉প্রমাণ-[মাদখাল, ২য় খন্ড, পৃঃ ২৮৩]
(১৩)মাওলানা আশরাফ আলী থানভী(রহঃ) বলেন, ফরয সালাতের পর ইমাম সাহেব দু’আ করবেন এবং মুক্তাদীগণ আ-মীন আ-মীন বলবেন, এ সম্পর্কে ইমাম আরফাহ এবং ইমাম গারবহিনী বলেন, এ দু’আকে সুন্নাত অথবা মুস্তাহাব মনে করা না জায়েজ। 👉★প্রমাণ-[ইস্তিবাবুদ দাওয়াহ পৃঃ৮]
🔴(১৪)মুফতী মুহাম্মাদ শফী(রহঃ) বলেন, বর্তমানে অনেক মসজিদের ইমামদের অভ্যাস হয়ে গেছে যে, কিছু আবরী দু্’আ মুখস্থ করে নিয়ে সালাত শেষ করেই (দু’হাত উঠিয়ে ) ঐ মুখস্থ দু’আগুলি পড়েন। কিন্তু যাচাই করে দেখলে দেখা যাবে যে, এ দু’আগুলোর সারমর্ম তাদের অনেকেই বলতে পারে না। আর ইমামগণ বলতে পারলেও এটা নিশ্চিত যে, অনেক মুক্তাদী এ সমস্থ দু’আর অর্থ মোটেই বুঝে না। কিন্তু না জেনে না বুঝে আ-মীন, আ-মীন বলতে থাকে। এ সমস্ত তামাশার সারমর্ম হচ্ছে কিছু শব্দ পাঠ করা মাত্র। প্রার্থনার যে রুপ বা প্রকৃতি, তা এতে পাওয়া যায় না। 👉প্রমাণ- (মা’আরেফুল কুরআন, ৩য় খন্ড ,
পৃঃ ৫৭৭) তিনি আরো বলেন ,
রাসূল (সাঃ) এবং সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেঈনে ইযাম হ’তে এবং শরীয়তের চার মাযহাবের ইমামগণ হ’তেও সালাতের পরে এ ধরনের মুনাজাতের প্রমাণ পাওয়া যায় না । সারকথা হ’ল ,
এ প্রথা পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের প্রদর্শিত পন্থা ও সাহাবায়ে কেরামের আদর্শের পরিপন্থি । (আহকামে দু’আ, পৃঃ ১৩)
(১৫)মুফতী আযম ফয়যুল্লাহ
হাটহাজারী বলেন, ফরয সালাতের পর দু’আর চারটি নিয়ম আছে।
(১)মাঝে মাঝে একা একা হাত উঠানো ব্যতীত হাদীসে উল্লিখিত মাসনুন দু’আ সমূহ পড়া। নিঃসন্দেহে তা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। (২) মাঝে মাঝে একা একা হাত উঠিয়ে দু’আ করা। এটা কোন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। তবে কিছু যঈফ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।(৩) ইমাম ও মুক্তাদীগণ সম্মিলিতভাবে দু’আ করা। এটা না কোন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, না কোন যঈফ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। (৪)ফরয সালাতের পর সর্বদা দলবদ্ধভাবে হাত উঠিয়ে প্রার্থনা করার কোন প্রমাণ শরীয়তে নেই। না সাহাবী ও তাবেঈদের আমল দ্বারা প্রমাণিত, না হাদীস সমূহ দ্বারা, সহীহ হোক অথবা যঈফ হোক অথবা জাল হোক। আর না ফিক্বাহ এর কিতাবের কোন পাতায় লিখা আছে। এ দু’আ অবশ্যই বিদ’আত। 👉★[আহকামে দু’আ, পৃঃ ২১]
(১৬)পাকিস্থানের বিখ্যাত মুফতী আল্লামা রশীদ আহমাদ(রহঃ) বলেন, রাসূল(সাঃ) প্রতিদিন পাঁচওয়াক্ত সালাত পাঁচবার প্রকাশ্যে জামা’আত সহকারে পড়তেন।
যদি রাসূল(সাঃ) কখনও সম্মিলিতভাবে মুক্তাদীগণকে নিয়ে মুনাজাত করতেন তাহলে নিশ্চয়ই একজন সাহাবী হলেও তা বর্ণনা করতেন। কিন্তু এতগুলো হাদীসের মধ্যে একটি হাদীসও এ মুনাজাত সম্পর্কে পাওয়া যায়নি। তারপর কিছুক্ষনের জন্য মুস্তাহাব মানলেও বর্তমানে যেরুপ গুরুত্ব দিয়ে করা হচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে বিদ’আত। 👉★[আহসানুল ফাতোয়া, ৩য় খন্ড,পৃঃ ৬৮]
(১৭)মাওলানা মওদুদী(রহঃ) বলেন, এতে সন্দেহ নেই যে, বর্তমানে জামা’আতে সালাত আদায় করার পর ইমাম ও মুক্তাদী মিলে যে নিয়মে দু’আ করেন, এ নিয়ম রাসূল(সাঃ) এর যামানায় প্রচলিত ছিল না। এ কারণে বহুসংখ্যক আলেম এ নিয়মকে বিদ’আত বলে আখ্যায়িত করেছেন। 👉★[আহসানুল ফাতাওয়া ,
৩য় খন্ড , পৃঃ ৬৯৮]
(১৮)মাসিক মঈনুল ইসলাম পত্রিকার প্রশ্নোত্তর, কলামে বলা হয়েছে, জামা’আতে ফরয সালাতে ইমাম-মুক্তাদী সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা বিদ’আত ও মাকরুহে তাহরীমী। কেননা সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন,তাবে তাবেঈনদের কেউ এ কাজ শরী’আত মনে করে ‘আমল করেছেন বলে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। তা নিশ্চয়ই মাকরুহ ও বিদ’আত। 👉★[মাসিক মঈনুল ইসলাম, সফর সংখ্যা ১৪১৩ হিঃ]
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীস অনুযায়ী ‘আমল করার তাওফীক দান করুন–আমীন !!
edit by rasikulindia
0 Comments