Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর শিক্ষাদানের পদ্ধতি.



যেভাবে কথা বলতেন প্রিয় রাসুল(সা.)

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর শিক্ষাদান পদ্ধতি

 

পড়তোমার প্রভুর নামে। শিক্ষার এই মহান বাণী নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলো শিক্ষা ও উন্নয়নের ধর্ম ইসলাম।

নবী মুহাম্মদ(সা.) সূচনা করে ছিলেন তার নবুওয়তি জীবনের। একটি সভ্য ও সুন্দর পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে আল্লাহতায়ালা যুগে যুগে মানব জাতির শিক্ষকরূপে নবীদেরকে প্রেরণ করেন।

প্রথম নবী হজরত আদম(আ.) থেকে শুরু করে হজরত মুহাম্মদ(সা.) পর্যন্ত সব নবীই ছিলেন শিক্ষার আলোয় আলোকিত এবং সু-শিক্ষার ধারক ও বাহক। মুহাম্মদ(সা.) ছিলেন সে ধারার সর্বশেষ ও সর্বোত্তম প্রেরিত পুরুষ। তার মাধ্যমে ঐশী শিক্ষা পূর্ণতা লাভ করে। তিনি তার কার্যকর ও বাস্তবমুখী শিক্ষানীতি ও পদ্ধতির মাধ্যমে আরবের মূর্খ ও বর্বর একটি জাতিকে পৃথিবীর নেতৃত্বের আসনে সমাসীন করান এবং ইসলামের মহান বার্তা ছড়িয়ে দেন পৃথিবীর আনাচে কানাচে।

রাসূল(সা.)-এর শিক্ষা মিশন সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে বলেন, ‘তিনিই সেই পবিত্র সত্ত্বা। যিনি নিরক্ষর লোকদের মধ্য থেকে একজনকে নবী করে পাঠিয়েছেন। যিনি তাদেরকে তার আয়াতসমূহ পাঠ করে শোনাবেনতাদেরকে পবিত্র করবেনতাদের শিক্ষা দেবেন কিতাব ও প্রজ্ঞা। যদিও ইতোপূর্বে তারা ভ্রান্তিতে(অজ্ঞতায়) মগ্ন ছিলো। [-সূরা জুমা : ০২]

🔶যায়দ ইবনু সাবিত(রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আমার বক্তব্য শুনেছেঅতঃপর তার প্রচার করেছেআল্লাহ তাকে হাস্যোজ্জ্বল ও সতেজ করুন। এমন কতক জ্ঞানের বাহক আছে যারা নিজেরাই জ্ঞানী নয়। আবার এমন কতক জ্ঞানের বাহক আছেতারা যাদের নিকট তা বয়ে নিয়ে যায় তারা এই বাহকদের চেয়ে অধিক সমঝদার। আলী ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ)-এর বর্ণনায় আরো আছেঃ তিনটি বিষয়ে কোন মুসলিম ব্যাক্তির অন্তর যেন প্রতারিত না হয়ঃ নিষ্ঠার সাথে আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য কাজ করামুসলিম নেতৃবৃন্দকে সদুপদেশ দেয়া এবং তাদের (নেক কাজের) সাথে সম্পৃক্ত থাকা।]

[ইবনে মাজাহঃ ২৩০তাখরীজ কুতুবুত সিত্তাহ: তিরমিযী: ২৬৫৬আবূ দাঊদঃ ৩৬৬০আহমাদ: ২১০৮০দারিমী: ২২৯] হাদিসের মান সহীহ।

তার অনুপম শিক্ষানীতি ও পদ্ধতিতে মুগ্ধ ছিলেন তার পুণ্যাত্মা সাহাবি ও শিষ্যগণ। হজরত মুয়াবিয়া(রা.) বলেন, ‘তার জন্য আমার বাবা ও মা উৎসর্গিত হোক। আমি তার পূর্বে ও পরে তার চেয়ে উত্তম কোনো শিক্ষক দেখিনি। আল্লাহর শপথ! তিনি কখনো কঠোরতা করেননিকখনো প্রহার করেননিকখনো গালমন্দ করেননি। ’ [-সহিহ মুসলিম]

আর কেনোই বা তিনি শ্রেষ্ঠতম শিক্ষক হবেন নাযখন স্বয়ং আল্লাহতায়ালা তাকে সর্বোত্তম শিক্ষা ও শিষ্টাচার শিখিয়েছেন। রাসূল(সা.) বলেন, ‘আমাকে আমার প্রভু শিক্ষা দিয়েছেনসুতরাং আমাকে তিনি সর্বোত্তম শিক্ষা দিয়েছেন। আমার প্রভু আমাকে শিষ্টাচার শিখিয়েছেন সুতরাং তিনি সর্বোত্তম শিষ্টাচার শিখিয়েছেন। ’

🔶এই কথা মানুষকে যেমন, জান্নাতে পৌঁছাতে সাহায্য করেঅনুরূপ জাহান্নামের পথেও নিয়ে যায়। একজন মুমিনের কথাবার্তা কেমন হবেকেমন হবে তার সম্বোধন—তার উত্তম দৃষ্টান্ত রয়েছে রাসুল(সা.)-এর জীবনে।  

তাই শিক্ষা ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাফল্যের জন্য সর্বোত্তম শিক্ষকের শিক্ষাদান পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। নিম্নে রাসূল(সা.)-এর অনুসৃত কয়েকটি শিক্ষাপদ্ধতি তুলে ধরা হলো।

🔶হাদিসের অনুবাদ পড়ে তার মর্মার্থ বুঝতে হলে প্রথমে আমাদেরকে হাদিস বোঝার মূলনীতিগুলো সম্পর্কে কিছুটা হলেও জ্ঞান রাখতে হবে। অন্যথায় সে মূলনীতিহীন জ্ঞান আমাদেরকে ভুল পথে ঠেলে দিতে পারে।

🔶🔶হাদিস বর্ননা করতে হলে তাকে কয়েকটি জিনিস জানা দরকারঃ

১) হাদিসের অনুবাদ ঠিকঠাক করা। ২) হাদিসের ব্যাখ্যা জানা। ৩) সালাফদের ব্যাখ্যা ও বুঝ অনুযায়ী হাদিস বর্ণনা করা। ৪) কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখা। ৫) নিজের আক্বিদা ও মানহাজ বিশুদ্ধ হওয়া ও তার প্রতি আমোল করা। ৬) আলেমদের সহচার্যে থাকা। ৭) বেশি বেশি ইল্ম চর্চা করা।

কথাবার্তা দিয়ে একজন মানুষের ভালো-মন্দ যাচাই করা যায়। এরই মধ্যে ফুটে ওঠে তার ব্যক্তিত্ব ও স্বভাব।

 🔶নিম্নে মহানবী(সা.)-এর কথাবার্তা ও বাকভঙ্গির নানা দিক তুলে ধরা হলো—

কথার সত্যতা হলো কথার সঙ্গে বাস্তবতার মিল থাকা। সত্যের একটা প্রভাব আছেযা মানুষকে আকর্ষণ করে। কোরআনে সত্য কথার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে বর্ণিত হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো। ’(সুরা : তাওবাআয়াত : ১১৯)

রাসুল(সা.) নবুয়তের  আগে ও পরে সত্যবাদী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সত্যবাদী হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছিল শৈশব থেকে।

🔶রাসুল(সা.)সাহাবিদের সত্য বলতে উৎসাহিত করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ(রা.) থেকে বর্ণিতরাসুল(সা.) বলেননিশ্চয়ই সত্য ভালো কাজের পথ দেখায় আর ভালো কাজ জান্নাতের পথ দেখায়। আর মানুষ সত্য কথা বলতে অভ্যস্ত হলে আল্লাহর কাছে সত্যবাদী হিসেবে (তার নাম) লিপিবদ্ধ হয়। নিশ্চয়ই অসত্য পাপের পথ দেখায় আর পাপ জাহান্নামের পথ দেখায়। কোনো ব্যক্তি মিথ্যায় রত থাকলে পরিশেষে আল্লাহর কাছে মিথ্যাবাদী হিসেবেই (তার নাম) লিপিবদ্ধ করা হয়। (বুখারিহাদিস : ৬০৯৩)

শিক্ষাদানের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ অপরিহার্য। কোলাহলপূর্ণ বিশৃঙ্খল পরিবেশ শিক্ষার বিষয় ও শিক্ষক উভয়ের গুরুত্ব কমিয়ে দেয়। রাসূলুল্লাহ(সা.) শিক্ষাদানের জন্য উপযুক্ত পরিবেশের অপেক্ষা করতেন। হজরত জারির ইবনে আবদুল্লাহ(রা.) থেকে বর্ণিত। ‘নিশ্চয় বিদায় হজের সময় রাসূল(সা.) তাকে বলেনমানুষকে চুপ করতে বল। অতপর তিনি বলেনআমার পর তোমরা কুফরিতে ফিরে যেয়ো না......। [-সহিহ বোখারি: ৭০৮০]

🔶অর্থাৎ রাসূল(সা.) শ্রোতা ও শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিকভাবে স্থির হওয়ার এবং মনোসংযোগ স্থাপনের সুযোগ দিতেন। অতপর উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হলে শিক্ষাদান শুরু করতেন।

রাসূলুল্লাহ(সা.) পাঠদানের সময় থেমে থেমে কথা বলতেন। যেনো তা গ্রহণ করা শ্রোতা ও শিক্ষার্থীদের জন্য সহজ হয়। খুব দ্রুত কথা বলতেন না যেনো শিক্ষার্থীরা ঠিক বুঝে উঠতে না পারে আবার এতো ধীরেও বলতেন না যাতে কথার ছন্দ হারিয়ে যায়। বরং তিনি মধ্যম গতিতে থেমে থেমে পাঠ দান করতেন।

🔶হজরত আবু বাকরাহ(রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল(সা.) বলেন, ‘তোমরা কী জানো- আজ কোন দিন? ...এটি কোন মাস? ...এটি কী জিলহজ নয়? ...এটি কোন শহর?’

[সহিহ বোখারি : ১৭৪১শামায়েল তিরমিযিঃ ১৬৫মুসনাদে আহমাদহা/২৬২৫২ শারহুস সুন্নাহহা/৩৬৯৬]

🔶প্রতিটি প্রশ্নের পর রাসূলুল্লাহ(সা.) চুপ থাকেন এবং সাহাবারা উত্তর দেন আল্লাহ ও তার রাসূল ভালো জানেন।

🔶রাসূলুল্লাহ(সা.) কোনো বিষয়ে আলোচনা করলেতার দেহাবয়বেও তার প্রভাব প্রতিফলিত হতো। তিনি দেহ-মনের সমন্বিত ভাষায় পাঠ দান করতেন। কারণএতে বিষয়ের গুরুত্বমাহাত্ম্য ও প্রকৃতি সম্পর্কে শ্রোতা শিক্ষার্থীগণ সঠিক ধারণা লাভে সক্ষম হয় এবং বিষয়টি তার অন্তরে গেঁথে যায়। যেমনতিনি যখন জান্নাতের কথা বলতেনতখন তার দেহে আনন্দের স্ফূরণ দেখা যেতো। জাহান্নামের কথা বললে ভয়ে চেহারার রঙ বদলে যেতো। যখন কোনো অন্যায় ও অবিচার সম্পর্কে বলতেনতার চেহারায় ক্রোধ প্রকাশ পেতো এবং কণ্ঠস্বর উঁচু হয়ে যেতো।

🔶হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ(রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসূল(সা.) যখন বক্তব্য দিতেন- তার চোখ লাল হয়ে যেতোআওয়াজ উঁচু হতো এবং ক্রোধ বৃদ্ধি পেতো। যেনো তিনি(শত্রু) সেনা সম্পর্কে সতর্ককারী। ’ [-সহিহ মুসলিম: ৪৩]

স্পষ্টতা:

কথার অন্যতম গুণ। শ্রোতার মনে স্পষ্ট কথার প্রভাব বেশি পড়ে। আয়েশা(রা.) বলেন, ‘রাসুল(সা.)-এর কথা এত সুস্পষ্ট ছিল যে প্রত্যেক শ্রোতা তাঁর কথা বুঝত। ’ [আবু দাউদহাদিস : ৪৮৩৮৪৮৩৯;  তিরমিযিআহমেদ] তাহকিকঃ হাসান

ধীরস্থিরতা:

 

 ধীরস্থিরতা কথার অন্যতম গুণ। দ্রুত গতিতে কথা বলাযা মানুষের বুঝতে কষ্ট হয় দোষণীয়। রাসুল(সা.) কথাবার্তায় ধীরস্থির ছিলেন।

حَدَّثَنَا حُمَيْدُ بْنُ مَسْعَدَةَ الْبَصْرِيُّ ، قَالَ : حَدَّثَنَا حُمَيْدُ بْنُ الأَسْوَدِ ، عَنِ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ ، عَنِ الزُّهْرِيِّ ، عَنْ عُرْوَةَ ، عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ : " مَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْرُدُ سرْدَكُمْ هَذَا ، وَلَكِنَّهُ كَانَ يَتَكَلَّمُ بِكَلامٍ بَيِّنٍ فَصْلٍ ، يَحْفَظُهُ مَنْ جَلَسَ إِلَيْهِ " .

🔶আয়েশা(রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল(সা.) এমনভাবে কথা বলতেন যদি কোনো গণনাকারীর গণনা করতে ইচ্ছা করে তবে সে গুনতে পারবে।’

[মুসলিমহাদিস: ৭৩৯৯) আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৪৯৩, (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭২৩৭ইসলামিক সেন্টার ৭২৯১)]

🔶🔶ব্যাখ্যা:-

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার হাদীসতিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা ছিল পৃথক পৃথক। পৃথক থাকার অর্থ হচ্ছে হরফগুলো একটি অপরটির ভেতর অনুরূপভাবে শব্দগুলো একটি অপরটির ভেতর প্রবেশ করত না। এতই স্পষ্ট ও পরিস্কার যেপ্রত্যেক শ্রোতাই তা বুঝতে পারত। তাতে কোন জড়তা বা অহেতুক কথা থাকত না। তার কথার ধীরস্থীরতা কারণে যদি কোন গণনাকারী চাইতো তবে তা গণনা করতে পারত। এটি এ জন্য যেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেওয়া হয়েছে কম বাক্যে অধিক অর্থবোধক কথা। তার জন্য কথাকে সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। “জাওয়ামিউল কালিম” হচ্ছে অল্প শব্দে অধিক অর্থকে অন্তর্ভুক্ত করা। সুতরাং একজন মানুষের জন্য উচিত হলো তার কথা যেন একটির সাথে অপরটি সন্নিবিষ্ট না হয় যাতে শ্রোতার কাছে অপস্পষ্ট থাকে। কারণকথা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো শ্রোতাকে বুঝানো। যখনই কথা বুঝতে সহজ হবে তা অবশ্যই উত্তম ও সুন্দর। অতঃপর একজন মানুষ যখন এ পন্থা অর্থাৎ কথা পরিষ্কারস্পষ্ট এবং যে বুঝেনা তার জন্য তিনবার বলার পদ্ধতি অবলম্বন করবে তার অনুভব করা উচিত যেসে রাসূলের অনুসরণ করছেযাতে এ দ্বারা তার জন্য সাওয়াব ও বিনিময় লাভ হয় এবং স্বীয় মুসলিম ভাইকে বুঝাতে সক্ষম হয়। প্রতিটি সুন্নাতের ক্ষেত্রে একই নিয়ম- তুমি তোমার অন্তরে এ চিন্তা করবে যেতুমি তাতে রাসূলের সুন্নাতেরই অনুসারী যাতে তোমার জন্য ইত্তেবা‘ ও তার সাওয়াব উভয়টি সাব্যস্ত হয়।

রা

 

 সূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা ছিল সুস্পষ্ট:

আয়েশা(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের ন্যায় চটপটে তথা অস্পষ্টভাবে তাড়াতাড়ি কথা বলতেন নাবরং তাঁর প্রতিটি কথা ছিল সুস্পষ্ট। আর শ্রোতারা খুব সহজেই তা হৃদয়ঙ্গম করতে পারত। [শামায়েল তিরমিযিঃ ১৬৫মুসনাদে আহমাদহা/২৬২৫২ শারহুস সুন্নাহহা/৩৬৯৬]

🔶রাসুল(সা.) কথাবার্তায় ও আচার-আচরণে কোমলতা অবলম্বন করতেন। কর্কশ ও রূঢ় ভাষায় কারো সঙ্গে কথা বলতেন না এবং কাউকে সম্বোধনও করতেন না। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি যদি কঠোর হৃদয়ের হতেনতবে মানুষ আপনার থেকে দূরে চলে যেত। (সুরা : আলে ইমরানআয়াত : ১৫৯)

আবদুল্লাহ ইবনে হারিস(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনআমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেয়ে অধিক মুচকি হাস্যকারী ব্যক্তি কাউকে দেখিনি।

[সামায়েল তিরমিযিঃ ১৭৬৯,১৭০মুসনাদে আহমাদহা/২১৪৩০মুসনাদুল বাযযারহা/৩৯৮৭শারহুস সুন্নাহহা/৪৩৬০সিলসিলা সহীহাহহা/৩০৫২]

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى ، قَالَ : حَدَّثَنَا أَبُو قُتَيْبَةَ سَلْمُ بْنُ قُتَيْبَةَ ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الْمُثَنَّى ، عَنْ ثُمَامَةَ ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، قَالَ : " كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , يُعِيدُ الْكَلِمَةَ ثَلاثًا لِتُعْقَلَ عَنْهُ "

🔶রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কোন কথা তিনবার বলতেন:

আনাস ইবনে মালিক(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কথা তিনবার বলতেনযাতে (শ্রোতারা) ভালোভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে পারে।

সহীহ শামায়েলে তিরমিযী: ১৬৬মুজামুল ইসমাঈলীহা/১০৫মুজামুস সগীরহা/৯১২১]

🔶🔶ব্যাখ্যা:

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীসে বলা হয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কথা বলতেন তখন তা বুঝে নেয়ার জন্য তিনবার বলতেন। তার বাণী: “যাতে তা বুঝা যায়” এ কথা প্রমাণ করে যেযদি একাধিকবার বলা ছাড়া বুঝে ফেলে তখন তিনি তা বারবার বলতেন না। কিন্তু যদি মানুষ না বুঝতো যেমন সে অর্থ ভালো জানে না। তখন তার জন্য বারবার বলত যাতে সে বুঝে। অথবা যদি কানে কম শোনে অথবা সেখানে হৈচৈ তখন কথাকে একাধিকবার বলা মুস্তাহাব যাতে সে তোমার থেকে কথা বুঝে নেয়। আর যখন তিনি কোন গোত্রের নিকট এসে সালাম দিতেনতাদের প্রতি তিনবার সালাম দিতেন। অর্থাৎ তিনবারের বেশি সালাম দিতেন না। একবারই সালাম দিতেন। যখন উত্তর না দিতো দ্বিতীয়বার সালাম দিতেন আর যখন দ্বিতীয়বার উত্তর না দিতেন তখন তিনি তিনবার সালাম দিতেন। অনুরূপভাবে অনুমতির ক্ষেত্রে তিনি তিনবার অনুমতি চাইতেন। যখন কোন মানুষের ঘরে প্রবেশের জন্য তার বাড়ীতে আসতেন তখন তিনি তার দরজায় তিনবার আওয়াজ করতেন। যখন সে উত্তর না দিত ফিরে যেতেন। এটি ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত তিনি যাবতীয় কর্ম তিনবার করতেন তারপর বিরত থাকতেন।

শা

লীনতা:

🔶রাসুল(সা.) কখনো প্রয়োজন ছাড়া কথা বলতেন না। সওয়াবহীন কাজে কখনো সময় ব্যয় করতেন না। আবু হুরায়রা(রা.) থেকে বর্ণিতরাসুল(সা.) বলেনকোনো ব্যক্তির ইসলাম পালনের অন্যতম সৌন্দর্য হলো অনর্থক কথা ও কাজ ত্যাগ করা। ’ (তিরমিজিহাদিস : ২৩১৮)  হাদিসের মানঃ সহিহ

🔶রাসুল(সা.)-এর কথাবার্তা শালীনতার চাদরে আবৃত ছিল। তিনি কখনো অশালীন কথা বলেননি।

আনাস(রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল(সা.) অশালীনঅভিশাপকারী ও গালিদাতা ছিলেন না। তিনি কাউকে তিরস্কার করার সময় শুধু এটুকু বলতেন—কী হলো তারতার কপাল ধূলিমলিন হোক। ’ (বুখারিহাদিস : ৬০৬৪)

🔶রাসুল(সা.) ছিলেন সবচেয়ে বিশুদ্ধ ভাষার অধিকারী। তাঁর উচ্চারণশব্দ প্রয়োগ ও বাচনভঙ্গি সবই ছিল বিশুদ্ধতার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ। হিন্দ ইবনে আবু হালা(রা.)-কে রাসুল (সা.)-এর বাচনভঙ্গি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনরাসুল(সা.) তিনি বেশির ভাগ সময় নীরব থাকতেন। বিনা প্রয়োজনে কথা বলতেন না।

তিনি স্পষ্টভাবে কথা বলতেন।

তিনি ব্যাপক অর্থবোধক বাক্যালাপ করতেন। তাঁর কথা ছিল একটি থেকে অপরটি পৃথক। তাঁর কথাবার্তা অতি বিস্তারিত কিংবা অতি সংক্ষিপ্তও ছিল না। অর্থাৎ তাঁর কথার মর্মার্থ অনুধাবনে কোনো প্রকার অসুবিধা হতো না। তাঁর কথায় কঠোরতার ছাপ ছিল নাথাকত না তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের ভাব। ’ (শামায়েলে তিরমিজিহাদিস : ১৬৭)

গল্প

 বলার মিষ্টি ভঙ্গি: গল্প-ইতিহাস জ্ঞানের সমৃদ্ধ এক ভাণ্ডার। শিক্ষার প্রয়োজনে শিক্ষককে অনেক সময় গল্প-ইতিহাস বলতে হয়। রাসূল(সা.) ও পাঠদানের সময় গল্প বলতেন। তিনি গল্প বলতেন অত্যন্ত মিষ্টি করে। এমন মিষ্টি ভঙ্গি গল্প-ইতিহাস স্বপ্রাণ হয়ে উঠতো। জীবন্ত হয়ে উঠতো শ্রোতা-শিক্ষার্থীর সামনে। হজরত আবু হুরায়রা(রা.) থেকে বর্ণিত।

তিনি বলেনরাসূলুল্লাহ(সা.) ইরশাদ করেন, ‘দোলনায় কথা বলেছে তিনজন। হজরত ঈসা ইবনে মরিয়ম(আ.) ...। হজরত আবু হুরায়রা(রা.) বলেনআমি (মুগ্ধ হয়ে) রাসূল(সা.)-এর দিকে তাকিয়ে থাকলাম। তিনি আমাকে শিশুদের কাজ সম্পর্কে বলছিলেন। তিনি তার মুখে আঙুল রাখলেন। এবং তাতে চুমু খেলেন। ’

[ মুসনাদে আহমদ: ৮০৭১]

অর্থাৎ তিনি শিশুদের মতো ঠোঁট গোল করে তাতে আঙুল ঠেকালেন।

🔶রাসূল(সা.) পাঠদানের সময় শিক্ষার্থীদের নিকট প্রশ্ন করতেন। যেনো তারা প্রশ্ন করতে এবং তার উত্তর খুঁজতে অভ্যস্ত হয়। কেননা নিত্যনতুন প্রশ্ন শিক্ষার্থীকে নিত্যনতুন জ্ঞান অনুসন্ধানে উৎসাহী করে।

হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল(রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনরাসূলুল্লাহ(সা.) জিজ্ঞেস করেনহে মুয়াজ! তুমি কী জানো বান্দার নিকট আল্লাহর অধিকার কীতিনি বলেনআল্লাহ ও তার রাসূল ভালো জানেনরাসূল(সা.) বলেনতার ইবাদত করা এবং তার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক না করা। ’ [-সহিহ বোখারি : ৭৩৭৩]

বি

 

 ষয়বস্তুর গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করা: বিষয়বস্তুর গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা থাকলে   শিক্ষার্থী শ্রেণী কক্ষে অনেক বেশি মনোযোগী হয়। একাগ্র হয়ে শিক্ষকের আলোচনা শোনে। রাসূল(সা.) পাঠদানের সময় বিষয়বস্তুর গুরুত্ব ফুটিয়ে তুলতেন। হজরত সাঈদ ইবনে মুয়াল্লা(রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল(সা.) তাকে বলেন, ‘মসজিদ থেকে বের হওয়ার পূর্বে আমি তোমাদেরকে কোরআনের সবচেয়ে মহান সূরাটি শিক্ষা দেবো। তিনি বলেনআমি যখন বের হওয়ার ইচ্ছে করলাম রাসূল(সা.) আমার হাত ধরে বললেনতোমাকে বলিনি! মসজিদ থেকে বের হওয়ার আগে তোমাকে কোরআনে সবচেয়ে মহান সূরা শিক্ষা দেবো। অতপর তিনি বলেনআলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। ’ [-সহিহ বোখারি : ৪৪৭৪]

অর্থাৎ রাসূল(সা.) তাকে সূরা ফাতেহা শিক্ষা দেন।

🔶রাসূলুল্লাহ(সা.) বিশেষ বিশেষ শিক্ষাদানের জন্য আগ্রহী শিক্ষার্থী নির্বাচন করতেন। যেনো শেখানো বিষয়টি দ্রুত ও ভালোভাবে বাস্তবায়িত হয়। হজরত আবু হুরায়রা(রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল(সা.) বলেনআমার উম্মতের মধ্য থেকে কে পাঁচটি গুণ ধারণ করবে এবং তার ওপর আমল করবেতিনি বলেনআমি বলিআমি হে আল্লাহর রাসূল! তখন তিনি আমার হাত ধরলেন এবং হাতে পাঁচটি বিষয় গণনা করলেন। [মুসনাদে আহমদ : ৮০৯৫]

 

পমা দিয়ে বোঝানো: নবী করিম(সা.) অনেক সময় কোনো বিষয় স্পষ্ট করার জন্য উপমা ও উদাহরণ পেশ করতেন। কেননা উপমা ও উদাহরণ দিলে যে কোনো বিষয় বোঝা সহজ হয়ে যায়। হজরত সাহাল ইবনে সাদ(রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূল(সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমি ও এতিমের দায়িত্ব গ্রহণকারী জান্নাতে এমনভাবে অবস্থান করবো। হজরত সাহাল(রা.) বলেনরাসূল(সা.) তার শাহাদত ও মধ্যমা আঙুলের প্রতি ইঙ্গিত করেন। ’ [-সহিহ বোখারি : ৬০০৫]

 

 

শি

ক্ষার্থীর প্রশ্নগ্রহণ এবং প্রশ্নের জন্য প্রসংশা করা: শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকের আলোচনা শুনে শিক্ষার্থীর মনে প্রশ্ন জাগতে পারে। এসব প্রশ্নের সমাধান না পেলে অনেক সময় পুরো বিষয়টিই শিক্ষার্থীর নিকট অস্পষ্ট থেকে যায়। সে পাঠের পাঠোদ্ধার করতে পারে না। আর প্রশ্নের উত্তর দিলে বিষয়টি যেমন স্পষ্ট হয়তেমনি শিক্ষার্থী জ্ঞানার্জনে আরো আগ্রহী হয়।

 

রাসূল(সা.) শিক্ষাদানের সময় শিক্ষার্থীর প্রশ্ন গ্রহণ করতেন এবং প্রশ্ন করার জন্য কখনো কখনো প্রশ্নকারীর প্রসংশাও করতেন। হজরত আবু আইয়ুব আনসারি(রা.) থেকে বর্ণিত। ‘এক ব্যক্তি রাসূল(সা.) কে প্রশ্ন করেআমাকে বলুন! কোন জিনিস আমাকে জান্নাতের নিকটবর্তী করে দিবে এবং কোন জিনিস জাহান্নাম থেকে দূরে সড়িয়ে নিবে। নবী করিম(সা.) থামলেন এবং তার সাহাবাদের দিকে তাকালেন। অতপর বললেনতাকে তওফিক দেওয়া হয়েছে বা তাকে হেদায়েত দেওয়া হয়েছে।

[–সহিহ মুসলিম : ১২]

🔶লক্ষ্যণীয় বিষয় হলোরাসূল(সা.) প্রশ্নটি শুনেই সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দেননি। বরং তিনি চুপ থাকেন এবং সাহাবিদের দিকে তাকিয়ে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং প্রশ্নকারীর প্রশংসা করেন। যাতে প্রশ্নটির ব্যাপারে সকলের মনোযোগ সৃষ্টি হয় এবং সকলেই উপকৃত হতে পারে। বর্তমানে আমাদের আহলেহাদিস ভাইয়ের এই ব্যাপারে সচেতন অনেক কম।

 🔶শিক্ষার সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম হলো প্রাক্টিক্যাল বা প্রয়োগিক শিক্ষা।

রাসূল(সা.) অধিকাংশ বিষয় নিজে আমল করে সাহাবিদের শেখাতেন। শেখাতেন হাতে-কলমে। এজন্য হজরত আয়েশা(রা.) বলেনতার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হলো কোরআন। রাসূল(সা.) বলেন, ‘তোমরা নামাজ আদায় করযেমন আমাকে আদায় করতে দেখো। ’ [-সুনানে বায়হাকি : ৩৬৭২]

বিবেক মানুষের বড় রক্ষক। বিবেক জাগ্রত থাকলে মানুষ নানা অপরাধ থেকে বেঁচে যায় এবং বিবেকলুপ্ত হলে অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। তাই মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করার একটি সহজ উপায় হলো- মানুষের বিবেক ও মনুষ্যত্ব জাগিয়ে তোলা। রাসূল(সা.) বিবেক ও মনুষ্যত্ব জাগিয়ে তোলার মাধ্যমেও মানুষকে শিক্ষাদান করেছেন।

🔶যেমন- এক যুবক রাসূল(সা.) কে বললো। হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে ব্যভিচারের অনুমতি দিন। তার কথা শুনে উপস্থিত লোকেরা মারমুখি হয়ে উঠলো এবং তিরস্কার করলো। রাসূল(সা.) তাকে কাছে ডেকে নিলেন এবং বললেনতুমি কী তোমার মায়ের ব্যাপারে এমনটি পছন্দ করসে বললোআল্লাহর শপথ না। আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গিত করুন। রাসূল(সা.) বললেনকেউ তার মায়ের ব্যাপারে এমন পছন্দ করে না। এরপর রাসূল(সা.) একে একে তার সব নিকট নারী আত্মীয়ের কথা উল্লেখ করেন এবং সে না উত্তর দেয়। এভাবে রাসূল(সা.) তার বিবেক জাগ্রত করে তোলেন। [-মুসনাদে আহমদ : ২২২১১]

রে

 

খাচিত্রের সাহায্যে স্পষ্ট করা:

কখনো কখনো কোনো বিষয়কে স্পষ্ট করার জন্য রাসূল(সা.) রেখাচিত্র ও অঙ্কনের সাহায্য নিতেন। যেনো শ্রোতা ও শিক্ষার্থীর স্মৃতিতে তা রেখাপাত করে।

 

🔶আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ(রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসূল(সা.) একটি চারকোণা দাগ দিলেন। তার মাঝ বরাবর দাগ দিলেন। যা তা থেকে বের হয়ে গেছে। বের হয়ে যাওয়া দাগটির পাশে এবং চতুষ্কোণের ভেতরে ছোট ছোট কিছু দাগ দিলেন। তিনি বললেনএটি মানুষ। চতুষ্কোণের ভেতরের অংশ তার জীবন এবং দাগের যে অংশ বের হয়ে গেছে সেটি তার আশা। [-সহিহ বোখারি : ৫৯৭৫৫৯৬৯,৬৪১৭]

এভাবে রাসূল(সা.) রেখাচিত্রের সাহায্যে মানুষের জীবন ও জীবনের সীমাবদ্ধতার বিষয় স্পষ্ট করে তুললেন।

🔶রাসূলে আকরাম(সা.) শিক্ষার্থীদের মেধা ও স্মৃতিশক্তির ওপর নির্ভর না করে বার বার পাঠ করতে উদ্বুদ্ধ করতেনবরং বার বার পাঠ করে কঠিন বিষয়কে আয়ত্ব করতে বলতেন।

🔶হজরত আবু আইয়ুব আনসারি(রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল(সা.) বলেন, ‘তোমরা কোরআনের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হও। সেই সত্ত্বার শপথ যার হাতে আমার জীবন তা উটের চেয়ে দ্রুত স্মৃতি থেকে পলায়ন করে। ’[–সহিহ বোখারি : ৫০৩৩]

 

শা ও ভয়ের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি: রাসূলে আকরাম(সা.) শ্রোতা ও শিক্ষার্থীদের অনাগত জীবন সম্পর্কে যেমন আশাবাদী করে তুলতেন,  তেমনি তার চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা সম্পর্কে সচেতন করে তুলতেন। যেমন- হজরত আনাস(রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসূল(সা.) একটি ভাষণ দিলেন। আমি এমন ভাষণ আর শুনিনি। তিনি বলেনআমি যা জানি তা যদি তোমরা জানতে তবে অল্প হাসতে এবং বেশি কাঁদতে। ’ [-সহিহ বোখারি : ৪৬২১]

🔶হজরত আবু জর গিফারি(রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল(সা.) বলেনযে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাহ’ বললো এবং তার ওপর মৃত্যুবরণ করলোতবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমি বললামযদি সে ব্যভিচার করে এবং চুরি করেরাসূল(সা.) বলেনহ্যাঁ। যদি সে ব্যভিচার করে এবং চুরি করে। ’ [-সহিহ বোখারি : ৫৪২৭]

মু

ক্ত আলোচনা ও মতবিনিময়ের মাধ্যমে শিক্ষাদান:

 মুক্ত আলোচনা ও মতবিনিময়ের মাধ্যমে বহু জটিল ও দুর্বোধ্য বিষয় সহজ হয়ে যায় এবং উত্তম সমাধান পাওয়া যায়। রাসূলুল্লাহ(সা.) ও বহু বিষয় মুক্ত আলোচনা ও মতবিনিময়ের মাধ্যমে শিক্ষাদান করতেন। সমাধান বের করতেন। যেমনহুনায়নের যুদ্ধের যুদ্ধলব্ধ সম্পদ বণ্টন নিয়ে আনসার সাহাবায়ে কেরামের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিলে রাসূল(সা.) তাদের সঙ্গে মুক্ত আলোচনা করেন। একইভাবে বদর যুদ্ধের বন্দিদের ব্যাপারে সাহাবিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।[-সহিহ বোখারি ও মুসলিম]

🔶রাসূল(সা.) তার পাঠদানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ তিন বার পর্যন্ত পুনরাবৃত্তি করতেন। হজরত আনাস ইবনে মালেক(রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসূল(সা.) তার কথাকে তিনবার পুনরাবৃত্তি করতেন যেনো তা ভালোভাবে বোঝা যায়। ’

[শামায়েলে তিরমিজি : ২২২]

ভু

 

ল সংশোধনের মাধ্যমে শিক্ষাদান: রাসূলুল্লাহ(সা.) ভুল সংশোধনের মাধ্যমে শ্রোতা ও শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতেন। হজরত আবু মাসউদ আনসারি(রা.) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ(সা.)-এর নিকট অভিযোগ করে যেহে আল্লাহর রাসূল! আমি নামাজে অংশগ্রহণ করতে পারি না। কারণ অমুক ব্যক্তি নামাজ দীর্ঘায়িত করে ফেলে। আমি উপদেশ বক্তৃতায় রাসূল(সা.) কে সেদিনের তুলনায় আর কোনোদিন বেশি রাগ হতে দেখিনি। রাসূল(সা.) বলেন, ‘হে লোক সকল! নিশ্চয় তোমরা অনীহা সৃষ্টিকারী। সুতরাং যে মানুষ নিয়ে(জামাতে) নামাজ আদায় করবেসে তা যেনো হাল্কা করে(দীর্ঘ না করে)। কেননা তাদের মধ্যে অসুস্থ্যদুর্বল ও জুল-হাজাহ(ব্যস্ত) মানুষ রয়েছে। [-সহিহ বোখারি : ৯০]

গুরুতর অপরাধের জন্য রাসূলুল্লাহ(সা.) কখনো তার শিষ্য ও শিক্ষার্থীদের শাস্তি প্রদান করে সংশোধন করতেন। তবে রাসূল(সা.) অধিকাংশ সময় শারীরিক শাস্তি এড়িয়ে যেতেন। ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতেন। যেমন উপযুক্ত কারণ ব্যতীত তাবুক যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করায় হজরত কাব ইবনে মালেক(রা.) সহ কয়েকজনের সঙ্গে রাসূল(সা.) কথা বলা বন্ধ করে দেন। যা শারীরিক শাস্তির তুলনায় অনেক বেশি ফলপ্রসূ ছিলো।

🔶রাসূল(সা.)-এর শিক্ষাদান পদ্ধতির সামান্য কিছু দৃষ্টান্ত এখানে তুলে ধরা হলো। এ বিষয়ে প্রাজ্ঞ পণ্ডিতদের দীর্ঘ কলেবরের স্বতন্ত্র বই রয়েছে।

শিক্ষাদান পদ্ধতিতে রাসূল(সা.)-এর সাফল্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় পবিত্র কোরআনের একটি আয়াত থেকে। তাহলো, ‘স্মরণ করো! তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ। যখন তোমরা ছিলে পরস্পরের শত্রু। অতপর আল্লাহতায়ালা তোমাদের অন্তরে ভালোবাসা সঞ্চার করলেন। তার অনুগ্রহে তোমরা ভাই ভাইয়ে পরিণত হলে। প্রকৃতার্থে তোমরা অবস্থান করছিলে অগ্নিকুণ্ডের প্রান্ত সীমায়। অতপর আল্লাহ তোমাদেরকে সেখান থেকে উদ্ধার করলেন। এভাবে আল্লাহতায়ালা তোমাদের জন্য তার নিদর্শন স্পষ্ট করে বর্ণনা করেনযাতে তোমরা সঠিক পথের সন্ধান পাও। -[সূরা আল ইমরান : ১০৩]

🔶অর্থাৎ রাসূল(সা.) পতন্মুখ একটি জাতিকে তার কার্যকর শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে পৃথিবীর নেতৃত্বের আসনে সমাসীন করান। তার শিক্ষা ও সাফল্য শুধু ইহকালীন সাফল্য বয়ে আনেনিবরং তার পরিব্যপ্তি ছিলো পরকালীন জীবন পর্যন্ত। সুতরাং মুসলিম উম্মাহকে যদি তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেতে হয় এবং উভয় জগতের সাফল্য অর্জন করতে হয়তবে অবশ্যই রাসূল (সা.)-এর শিক্ষাদান পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।

সংকলনে ও এডিটর রাসিকুল ইসলাম

Post a Comment

0 Comments