🔶কুরআন মানি, হাদীস মানি না🔶
🔶ঈসায়ী প্রচারকগণ বলেন, আমরা কুরআন মানি, হাদীস মানি না। আমরা দেখলাম যে,
আল্লাহর প্রেম ও মুক্তিলাভের জন্য মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ‘অনুসরণ করতে হবে (আলে-ইমরান: ৩১),
অর্থাৎ ইবাদত-বন্দেগি ও সকল বিষয়ে তাঁর পদ্ধতি মানতে হবে।
কুরআনে মূল নির্দেশ থাকলেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে
এগুলো পালন করতেন তা হাদীসে বিদ্যমান। কাজেই হাদীস বাদ দিয়ে কেউ মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুবহু অনুসরণ করার এ কুরআনী নির্দেশ মানতে পারে
না। মানবতাকে নাজাতের পথ থেকে বিভ্রান্ত করার জন্যই খৃস্টান প্রচারকগণ হাদীস না
মানার কথা বলেন। আপনি তাঁকে বলুন:
🔶(ক) কুরআন মানলে আপনাকে নিম্নের বিষয়গুলি বিশ্বাস করতে হবে:
(১)প্রচলিত তাওরাত-ইঞ্জিলের মধ্যে অগণিত জালিয়াতি বিদ্যমান। (বাকারা ৭৯, আল-ইমরান ৭৮, মায়িদা: ১৩, ১৪ ও ৪১)।
(২)প্রচলিত খৃস্টধর্মের বিশ্বাসগুলি প্রচলিত ইঞ্জিলের মধ্যে
নেই;
বরং তা কতিপয় ধর্মগুরুর উদ্ভাবিত বিদ‘আত ও শির্ক। (মায়িদা: ৭৭)।
(৩)যারা ঈসাকে (আঃ) মানুষরূপী আল্লাহ বা আল্লাহর সত্যিকার
পুত্র বলে বিশ্বাস করেন এবং ত্রিত্বে বিশ্বাস করে তারা কাফির। (মায়িদা
১৭,
৭২, ৭৩)।
(৪)ঈসা মাসীহ ক্রুশে বিদ্ধ হয়ে প্রাণ দেন নি। (নিসা: ১৫৭)।
(৫)কেউ অন্যের পাপের জন্য দায়ী হয় না এবং কেউ অন্যের পাপ বহন
করতে পারে না; বরং
প্রত্যেকেই নিজের পাপের জন্য দায়ী। (আন‘আম:
১৬৪, বনী ইসরাঈল: ১৫, ফাতির:
১৮, যুমার: ৭, নাজম: ৩৮)
(৬)ঈসা মাসীহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
আগমনের সুসংবাদ দিয়েছেন।
(সূরাহ্ আস-সাফ্ব: ৬)।
🔶(খ)যে ব্যক্তি কুরআন মানার দাবি করে আবার বলে যে,
হাদীস মানি না তিনি মূলতই কুরআন মানেন না। মহান আল্লাহ
বারংবার বলেছেন যে, তিনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে শুধু কুরআন প্রদান করেন নি;
বরং কিতাব এবং প্রজ্ঞা দুটি বিষয় তাঁর উপর নাযিল।
করেন। (বাকারা ১২৯, ১৫১, ২৩১; আল-ইমরান
১৬৪, নিসা, ১১৩; আহযাব ৩৪; জুমুআহ ২ আয়াত)
কিতাব আক্ষরিকভাবে কুরআন হিসেবে
সংকলিত। আর হিকমাহ বা প্রজ্ঞা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের
ভাষায় উম্মাতকে জানান, যা হাদীস হিসেবে সংকলিত। কাজেই যিনি কুরআন নির্দেশিত হিকমাহ বা হাদীস মানেন না
তার কুরআন মানার দাবি অসত্য।
🔶(গ)প্রচলিত ইঞ্জিলের মধ্যে আল্লাহর কালাম খুঁজে পাওয়া
দুষ্কর। এতে ঈসা মাসীহের কিছু কথা, তাঁর কয়েকজন শিষ্য, শিষ্যের শিষ্য ও অন্যান্য মানুষদের কথাবার্তা সংকলিত।
অর্থাৎ ‘ইঞ্জিল’ নামক গ্রন্থটি যীশু, তাঁর কয়েকজন সাহাবী ও তাবিয়ীর হাদীসের সংকলন। মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস ও ঈসার(আঃ) হাদীসের মধ্যে পার্থক্য হলো,
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতিটি
হাদীসের সনদ বিদ্যমান এবং হাদীসগুলি প্রথম থেকেই লেখা শুরু হয়ে পরবর্তী ২০০ বৎসরের
মধ্যে গ্রন্থাকারে সংকলিত। পক্ষান্তরে ইঞ্জিল নামক মাসীহী হাদীস-এর কোনোরূপ কোনো
সনদ নেই এবং ৩০০ বৎসরের পরে সংকলিত। অতএব, যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ঈসা
(আঃ) উভয়কে মানার দাবি করেন, অথচ ঈসার (আঃ) হাদীস মানেন কিন্তু মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস মানেন না- তার দাবিটি অবশ্যই মিথ্যা।
🔶(ঘ)তাঁরা বলেন: “হাদীস যদি ওহী হয় তা হলে হাদীসের এত প্রকার কেন? তাতে জাল ও মওজু কেন?” আপনি বলুন: কিতাবুল মোকাদ্দাস যদি ওহী হয় তাহলে এত প্রকার কিতাবুল মুকাদ্দাস কেন? ক্যাথলিক কিতাবে বইয়ের সংখ্যা ৭৩; কিন্তু প্রটেস্ট্যান্ট কিতাবুল মোকাদ্দসে বইয়ের সংখ্যা ৬৬। উভয়ের মধ্যে বিদ্যমান বইগুলির মধ্যেও আয়াত ও অধ্যায়ে অনেক বৈপরীত্য। জাল-মাওযু যাচাই করা যদি খারাপ হয় তাহলে খৃস্টানদের কিতাবুল মুকাদ্দাসের এত শতশত জাল (non-canonical/ Apocryphal) ইঞ্জিল কেন? ইন্টারনেটে গসপেল (ইঞ্জিল) এবং (Apocrypha) লিখে সার্চ দিলেই দেখবেন কিতাবুল মোকাদ্দসের জাল-মাউযূ কাকে বলে! ইংরেজি না জানলে বাংলা জুবিলী বাইবেল, কেরি বাইবেল, কিতাবুল মোকাদ্দাস ও ইঞ্জিল শরীফ মিলিয়ে দেখলেই বুঝবেন বৈপরীত্য কাকে বলে!
[(ঙ) তাছাড়া ঈসা আলাইহিস সালামের হাদীসের শুদ্ধ ও অশুদ্ধতা
যাচাইয়ের কোনো সুনির্দিষ্ট মাপকাঠি খৃস্টানদের কাছে নেই। সেখানে সেগুলোর
বর্ণনাকারীদের নেই কোনো গ্রহণযোগ্য জীবন-চরিত; যা দেখে গ্রহণযোগ্য বর্ণনাকারী ও অগ্রহণযোগ্য বর্ণনাকারী
নির্ধারণ করা যাবে, পক্ষান্তরে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসসমূহের
শুদ্ধাশুদ্ধ যাচাইয়ের রয়েছে সুনির্দিষ্ট মাপকাঠি। সেগুলোর বর্ণনাকারীদের পূর্ণাঙ্গ
জীবন-বৃত্তান্ত সুন্দরভাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে। সেগুলোর উপর ভিত্তি করে সত্যনিষ্ঠ
বিজ্ঞ আলেমগণ খুব সহজেই গ্রহণযোগ্য বর্ণনাকে অগ্রহণযোগ্য বর্ণনা থেকে পৃথক করতে
পারেন। এ বিষয়টিকে অনেক ইনসাফের অধিকারী প্রাচ্যবিদও স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন।
সুতরাং হাদীস না মানার কোনো যৌক্তিক কারণ কেউ দেখাতে পারবে না। কারণ কোনো বিষয়ে
জাল ও দুর্বল বর্ণনা থাকলেই সেখানকার বিশুদ্ধ বর্ণনাও নেওয়া যাবে না এমন কথা
দুনিয়ার কোনো বিবেকবানও বলবে না। যদি এটা বলা হয় তবে দুনিয়ার কোনো কর্মকাণ্ডই
সঠিকভাবে পরিচালিত হবে না। কারণ সকল কিছুরই পক্ষে-বিপক্ষে কথা আছে,
তারপরও মানুষ বিশুদ্ধতাকে যাচাই করে দুনিয়ার বিধি-বিধান
পরিচালনা করছে।[1]
>[1]দু ব্রাকেটের মাঝখানের অংশ সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত। [ কিতাবুল মোকাদ্দস, ইঞ্জিল শরীফ ও ঈসায়ী ধর্ম
ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.)] অনুচ্ছেদ:৭ঃ২]
0 Comments