এক মুসলমান ভাইয়ের ওপর অন্য মুসলমান ভাইয়ের হক বা অধিকার।
📁ইসলাম যে সব হক বা অধিকারের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো-এক মুসলমান ভাইয়ের ওপর অন্য মুসলমান
ভাইয়ের হক বা অধিকার। পবিত্র কোরানে ইরশাদ হয়েছে, নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর ভাই-ভাই। কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপস-মীমাংসা
করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, আশা করা যায় তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে। [সুরা আল হুজুরাত : ১০]
📁নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৭টি কাজ করার প্রতি উৎসাহিত করেছেন আর
৭টি কাজ করতে নিষেধ করেছেন। বিষয়গুলো মানুষের স্বাভাবিক জীবনের সঙ্গে জড়িত আর এর
মাঝে মানবিকতার বিষয়ও রয়েছে। এ বিষয়গুলোর মধ্যে মহান আল্লাহ রেখেছেন অনেক সওয়াব ও
ফজিলত। হাদিসের বর্ণনায় ওঠে আসা এ কাজগুলো কী?
📁হাদীসঃবারা’আ ইবনু আজিব
রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাতটি বিষয়ে আমাদের(কাজ করার) নির্দেশ
দিয়েছেন এবং সাতটি বিষয়ে আমাদের নিষেধ করেছেন। তিনি আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন-
حَدَّثَنَا أَبُو
الْوَلِيدِ
حَدَّثَنَا
شُعْبَةُ
عَنْ
الأَشْعَثِ
قَالَ
سَمِعْتُ
مُعَاوِيَةَ
بْنَ
سُوَيْدِ
بْنِ
مُقَرِّنٍ
عَنْ
الْبَرَاءِ
بْنِ
عَازِبٍ
قَالَ
أَمَرَنَا
النَّبِيُّ
صلى
الله
عليه
وسلم
بِسَبْعٍ
وَنَهَانَا
عَنْ
سَبْعٍ
أَمَرَنَا
بِاتِّبَاعِ
الْجَنَائِزِ
وَعِيَادَةِ
الْمَرِيضِ
وَإِجَابَةِ
الدَّاعِي
وَنَصْرِ
الْمَظْلُومِ
وَإِبْرَارِ
الْقَسَمِ
وَرَدِّ
السَّلاَمِ
وَتَشْمِيتِ
الْعَاطِسِ
وَنَهَانَا
عَنْ
آنِيَةِ
الْفِضَّةِ
وَخَاتَمِ
الذَّهَبِ
وَالْحَرِيرِ
وَالدِّيبَاجِ
وَالْقَسِّيِّ
وَالإِسْتَبْرَقِ
📁৭ কাজের নির্দেশ
✍️১. জানাজার অনুগমন(পিছনে পিছনে যাওয়া) করা,
✍️২. রুগ্ন/অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজ-খবর নেওয়া,
✍️৩. দাওয়াত দাতার দাওয়াত গ্রহণ করা,
✍️৪. মাজলুমকে সাহায্য করা,
✍️৫. কসম থেকে দায়মুক্ত করা,
✍️৬. সালামের জবাব দেওয়া এবং
✍️৭. হাঁচিদাতাকে (ইয়ারহামুকাল্লাহু বলে) সন্তুষ্ট করা।
📁আর তিনি (৭টি বিষয়) নিষেধ করেছেন-
✍️১. রুপার পাত্র (ব্যবহার),
✍️২. সোনার আংটি (ব্যবহার),
✍️৩. রেশম (পোশাক ব্যবহার),
✍️৪. দীবাজ (পাতলা রেশমের পোশাক ব্যবহার),
✍️৫. কাসসি (কেস রেশম ব্যবহার),
✍️৬.ইস্তিবরাক (তসরজাতীয় রেশম),[মোটা রেশম], ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন।
✍️৭. লাল নরম গদীতে বসতে।
✔️[সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশনঃ ১২৩৯;৪৭৯৭, ৪৭৯৭,৫১৭৫; (২৪৪৫, ৫১৭৫, ৫৬৩৫, ৫৬৫০, ৫৮৩৮, ৫৮৪৯, ৫৮৬৩, ৬২২২, ৬২৩৫, ৬৬৫৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১১৬৭)]
📁উল্লেখ্য,
সোনা-রুপার পাত্র সব মুসলিমের জন্য হারাম। তবে কোনো পাত্র
ভেঙে গেলে তা সোনা-রুপার তার দিয়ে জোড়া ও ঝালাই দেওয়া বৈধ হবে। আর সোনার অলঙ্কার ও
রেশমের পোশাক পুরুষদের জন্য হারাম হলেও তা নারীদের জন্য বৈধ। তবে পুরুষদের কারও
কারও শরীরে চুলকানি বা ঘা ইত্যাদির কারণে রেশমের পোশাক ব্যবহারও বৈধ।
জাযারী বলেনঃ মিসর হতে আমদানীকৃত
রেশমযুক্ত কাত্তানী তাঁত কাপড়। রূপার পাত্র হারাম সোনার পাত্র আরও বেশি হারাম।
অন্য হাদীসে সুস্পষ্টভাবে তা হারাম করেছে। আর এটা হারাম অপচয় ও অহংকারের জন্য।
খাত্ত্বাবী বলেন,
এ বিষয়গুলো হুকুমের বিধানের ভিন্নতা রয়েছে। ‘আম, খাস এবং ওয়াজিব। সুতরাং সোনার আংটি অনুরূপ যা উল্লেখ্য রেশম
ও দিবাজ পরিধান করা খাস করে পুরুষের জন্য হারাম। আর রৌপের পাত্র ‘আমভাবে পুরুষ, মহিলা সকলের জন্য হারাম, কেননা তা অপচয় ও অহংকারের পথ।
✔️[মুসলিমঃ ২০৬৬,
আত্ তিরযিমীঃ ২৮০৯,
নাসায়ীঃ ১৯৩৯,
৫৩০৯, আহমাদঃ ১৮৫০৪,
সহীহ আদাবুল মুফরাদঃ ৯২৪,
সুনানুল কুবরা লিল নাসায়ীঃ ২০৭৭,
সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বীঃ ৫৮৪৬]
📁এক মুসলিমের প্রতি অপর মুসলিমের হক পাঁচটি-কোন বর্ণনায় ৪টি হক আসলে মুলত ৬টি
হক, এর মধ্যে কোণ রকমের পার্থক্য নেই।
✍️১. সালামের জওয়াব দেওয়া,
✍️২. অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজ-খবর নেওয়া,
✍️৩. জানাজার পশ্চাদানুসরণ করা,
✍️৪. দাওয়াত কবুল করা এবং
✍️৫. হাঁচিদাতাকে খুশি করা (আল-হামদুলিল্লাহর জবাবে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা)।'
(বুখারি ১২৪০), সুনান ইবনু মাজাহঃ২/১৪৩৪; আহমাদ ২১৮৩৭ সহীহাহ ২১৫৪, ১৮৩২ তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
📁হাদিসের শিক্ষা:
এ
হাদিসে এক মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের প্রাপ্য পাঁচটি হকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এ পাঁচটি হকই ফরজে কিফায়া পর্যায়ের। হকগুলো হলো-
✍️১. সালাম দেয়া সুন্নাত; উত্তর দেয়া ওয়াজিব। এটি এমন একটি সুন্নাত, যা ফরজের মতোই উত্তম। কেননা সালামের মাধ্যমে বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ পায়। এর
মাধ্যমে একটি ওয়াজিব আদায় করা হয়।
✍️২. প্রতিবেশি অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া সুন্নাত। তাঁর
খোঁজ খবর নেওয়া। এমনকি প্রতিবেশি যদি অমুসলিমও হয় তবুও তার খোঁজ-খবর নেওয়া জরুরি।
✍️৩. মৃতব্যক্তির জানাযায় অংশগ্রহণ করা ফরজে কিফায়া।
মৃতব্যক্তির জানাযা আদায় থেকে দাফন পর্যন্ত সঙ্গ দেওয়া মুস্তাহাব।
✍️৪. দাওয়াতের দুটি অর্থ হতে পারে-
📁ক. কাউকে
সাহায্য করার জন্য কেউ আহ্বান করলে, তাঁর ডাকে সাড়া দেওয়া;
📁খ. কারো দাওয়াত কবুল করা;
এ দাওয়াত কবুল করা তখনই আবশ্যক, যখন তা গ্রহণ করলে কোনো গোনাহ হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে।
এমনিভাবে মেজবানের কামাই-রোজগার যদি হালাল হয় তবে দাওয়াত গ্রহণ করা ওয়াজিব। আর
কামাই-রোজগার যদি সুস্পষ্ট হারাম হওয়া প্রমাণিত হয় তবে দাওয়াত বর্জন করা ওয়াজিব।
➧ আর বিশেষভাবে দাওয়াতের ক্ষেত্রে কথা হল,
শরিয়ত সম্মত কোন ওজর থাকলে
দাওয়াত দাতার নিকট কথা বলে নিজের অপারগতা প্রকাশ করা উচিৎ।
তবে স্মরণ রাখা জরুরি যে, কেউ যদি বিদআতি ও পাপাচার সংঘটিত হয় এমন অনুষ্ঠানে দাওয়াত
দেয় তাহলে তাতে অংশগ্রহণ করা জায়েজ নেই। যেমন:
–
মিলাদ মাহফিল।
–
কুলখানি।
–
চল্লি...
–
জন্মবার্ষিকী।
–
মৃত্যুবার্ষিকী।
–
বিবাহ বার্ষিকী ইত্যাদি অনুষ্ঠান।
–
এবং যে সকল অনুষ্ঠানে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, গান-বাজনা এবং বিভিন্ন ইসলাম বিরোধী কার্যক্রম রয়েছে। এ
জাতীয় অনুষ্ঠানে দাওয়াত গ্রহণ করা বৈধ নয়।
এছাড়া আকিকা, ওলিমা, ঈদ উপলক্ষে বা
বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা উচিত। একান্ত ওজর ব্যতিরেকে এসকল
দাওয়াত গ্রহণ না করলে মুসলিম হিসেবে প্রাপ্য হক পালন না করার কারণে গুনাহগার হতে হবে। আল্লাহু আলাম। উত্তর প্রদানে:আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
✍️৫. কোনো মুসলমান হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বললে, তাঁর উত্তরে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা। হাঁচির উত্তর দেয়ার ক্ষেত্রে মানুষ ভালো-মন্দ উভয়েই সমান। তবে নেককারদের হাঁচির জবাব হাসিমুখে দেওয়া উত্তম। ✔[সুনান ইবনু মাজাহঃ ৩/১৪৩৫; সহীহুল বুখারী ১২৪০, মুসলিম ২১৬২, নাসায়ী ৫০৩০ আহমাদ ২৭৫১১ সহীহাহ ১৮৩২]
📁সালামের জবাব দেয়া ফারযে আইন একজন হলে আর জামা‘আতবদ্ধ হলে ফারযে কিফায়াহ্। জানাযায় অংশগ্রহণ বলতে সলাতুল জানাযাহ্ শেষে দাফনের উদ্দেশে লাশের পেছনে চলা। তবে এটা ফারযে কিফায়াহ্। দা‘ওয়াত কবূল করা শারী‘আত অনুমোদিত যদি কোন প্রকার শার‘ঈ বা অন্য কোন বাধা না থাকে আর এটা ওয়ালীমার চেয়েও ব্যাপক। হাঁচির জবাবে يَرْحَمُكَ الله বলবে যদি সে اَلْحَمْدُ لِلّهِ বলে।[মিসকাতঃ ১৫২৪]
🔸সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন
মুসলিম তার অসুস্থ কোন মুসলিম ভাইকে দেখার জন্য চলতে থাকে, সে ফিরে আসা পর্যন্ত জান্নাতের ফল আহরণ করতে থাকে ।
✔️[সহীহ :মিসকাতঃ ১৫২৭; মুসলিমঃ ২৫৬৮, আত্ তিরমিযীঃ ৯৬৭, আহমাদঃ ২২৪৪৪, ইবনু হিব্বানঃ ২৯৫৭, সহীহ আত্ তারগীবঃ ৩৪৭৫, সহীহ আল জামিঃ‘ ১৯৪৮]
আল্লাহ
তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাঁদের হকগুলো যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন।
হাদিসের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
📁হাদীস:০২, মুসলিমের ওপর
অপর মুসলিমের অধিকার ছয়টি: তুমি তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তাকে সালাম দাও, সে তোমাকে দাওয়াত দিলে তার দাওয়াত গ্রহণ কর, সে তোমার কাছে উপদেশ চাইলে তুমি তাকে উপদেশ দাও, সে হাঁচি দিয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বললে তার জবাব দাও, সে অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাও এবং সে মারা গেলে তার জানাযায়
অংশ গ্রহণ কর।
عن أبي
هريرة رضي
الله عنه
مرفوعاً: «حقُّ
المسلم على
المسلم ست:
إذا لَقِيتَهُ
فسَلِّمْ عليه،
وإذا دعاك
فَأَجِبْهُ، وإذا
اسْتَنْصَحَكَ فانْصَحْهُ،
وإذا عَطَسَ
فَحَمِدَ الله
فسَمِّتْهُ، وإذا
مرض فعُدْهُ،
وإذا مات
فاتَّبِعْهُ»
[صحيح]
- [رواه مسلم]
✍️আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে মারফূ‘ হিসেবে বর্ণিত, “মুসলিমের ওপর অপর মুসলিমের অধিকার ছয়টি: তুমি তার সঙ্গে
সাক্ষাৎ করলে তাকে সালাম দাও, সে তোমাকে
দাওয়াত দিলে তার দাওয়াত গ্রহণ কর, সে তোমার কাছে
উপদেশ চাইলে তুমি তাকে উপদেশ দাও, সে হাঁচি দিয়ে
‘আলহামদুলিল্লাহ’ বললে তার জবাব দাও, সে অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাও এবং সে মারা গেলে তার জানাযায় অংশ গ্রহণ
কর।” 📁সহীহ
- এটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন।
📁ব্যাখ্যা:-
ইসলাম মহব্বত, ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্বের দীন; ফলে ইসলাম এসব ব্যাপারে সর্বাধিক উৎসাহ এবং আগ্রহ দেখায়। এ কারণেই যেসব কারণসমূহ এ ধরণের মহান লক্ষ্যকে বাস্তবায়ন করে তার প্রচলন ইসলাম করেছে। এসব লক্ষ্যসমূহের গুরুত্বপূর্ণ হলো মুসলিম জনগণের মাঝে সামাজিক দায়িত্বগুলো আদায় করা। যেমন, সালামের প্রসার করা, দাওয়াতে সাড়া দেওয়া, পরামর্শে ভালো উপদেশ দেওয়া, হাঁছির উত্তর দেওয়া, অসুস্থকে দেখতে যাওয়া এবং জানাযায় উপস্থিত হওয়া।
📁হাদীস:এক মুসলিমের ওপর অপর মুসলিমের পাঁচটি
অধিকার: সালামের জবাব দেওয়া, রুগীকে দেখতে যাওয়া, জানাযার সঙ্গে যাওয়া,
দাওয়াত কবুল করা এবং হাঁচী দাতার জবাব দেওয়া।
عن أبي
هريرة رضي
الله عنه
: أن رسول
الله صلى
الله عليه
وسلم قال:«حقُّ
المُسلمِ على
المُسلمِ خمسٌّ:
ردُّ السلام،
وعِيَادَةُ المريض،
واتباع الجنائز،
وإجابة الدَّعوة،
وتَشميتُ العاطِس».
[صحيح]
- [متفق عليه]
✍আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“এক মুসলিমের ওপর অপর মুসলিমের পাঁচটি অধিকার: সালামের জবাব
দেওয়া,
রুগীকে দেখতে যাওয়া, জানাযার সঙ্গে যাওয়া, দাওয়াত কবুল করা এবং হাঁচী দাতার জবাব
দেওয়া।”
✔️সহীহ-মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি (বুখারী ও মুসলিম)১২৪০; (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১১৬৮); (মুসলিমঃ ৩৯/৩, হাঃ ২১৬২, আহমাদঃ ৮৪০৫)
📁ব্যাখ্যা:-
এ হাদীসটিতে একজন মুসলিম
ভাইয়ের জন্য তার অপর মুসলিম ভাইয়ের প্রতি যে সব অধিকার রয়েছে তার কতক অধিকারের
আলোচনা করা হয়েছে। একজন মুসলিমের অধিকার তার ভাইয়ের ওপর অনেক। তবে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কখনো অনেক বস্তু থেকে কয়েকটি বস্তু আলোচনা
করেন তার প্রতি গুরুত্ব ও আগ্রহী করে তোলার জন্যে। এ সবের থেকে কতক অধিকার হলো যা
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “এক মুসলিমের অপর মুসলিমের উপর পাঁচটি অধিকার রয়েছে: সালামের
জবাব দেওয়া”।
অর্থাৎ, যখন তোমাকে সালাম দেয় তুমি সালামের উত্তর দাও। অপর একটি
হাদীসে বর্ণিত,
“এক মুসলিমের অধিকার অপর মুসলিমের ওপর ছয়টি। যখন তুমি তার
সাথে সাক্ষাৎ করবে তুমি তাকে সালাম দেবে”। যে ব্যক্তি মুসলিমদের অধিকার আদায় করতে
গিয়ে এ সব অধিকার যথাযথ আদায় করবে সে অন্যান্য অধিকার আদায়ে আরো বেশি যত্নবান হবে।
আর এ সব অধিকার ও দায়িত্বসমূহ আদায়ে তার জন্য লাভ হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে অসংখ্য
কল্যাণ ও মহান বিনিময় যদি সে তা সাওয়াবের আশায় আঞ্জাম দেয়।
🔸প্রথম অধিকার হলো: যখন তুমি
সাক্ষাৎ করবে তখন তুমি তাকে সালাম দেবে। অপর হাদীসে বর্ণিত “সালামের উত্তর দেওয়া।”
🔸দ্বিতীয় হক: রুগীকে দেখতে যাওয়া। যখন সে
রোগে আক্রান্ত হয় নিজ গৃহে অথবা হাসপাতালে অথবা অন্য কোথাও একা হয়ে পড়ে, তখন তার জন্য তার মুসলিম ভাইদের ওপর অধিকার যে তারা তাকে
দেখতে যাবে।
🔸আর তৃতীয়
অধিকার হলো, জানাযার সঙ্গে যাওয়া ও তাকে বিদায় দেওয়া। কারণ, একজন মুসলিম ভাইয়ের ওপর একজন মুসলিমের অধিকার হলো তার
জানাযার সঙ্গে তার ঘর থেকে সালাতের স্থান পর্যন্ত চাই মসজিদ হোক বা অন্য কোন জায়গা
হোক এবং সেখান থেকে কবর পর্যন্ত যাওয়া।
🔸চতুর্থ অধিকার হলো, দাওয়াত কবুল করা। একজন মুসলিমের ওপর অপর মুসলিমের অধিকার হলো যখন দাওয়াত দেবে
তাতে সাড়া দেবে।
🔸আর পঞ্চম অধিকার হলো, হাঁচী দিলে তার
জবাব দেওয়া। কারণ,
হাঁচি আল্লাহর পক্ষ থেকে নি‘আমত। কারণ, তাতে মানুষের দেহের বিভিন্ন অঙ্গে জমে থাকা দুষিত বাতাসকে
বের করে দেয়। আল্লাহ তা বের হওয়ার জন্য একটি ছিদ্র সহজ করে দেন। যার ফলে হাঁচিদাতা
আরাম পায়। তাই আল্লাহ তা‘আলা এ নি‘আমতের ওপর তার জন্য আল্লাহর প্রশংসা করাকে
প্রচলন করেন। আর (শ্রবণকারী) তার ভাইয়ের জন্য ইয়ারহামুকাল্লাহ বলার প্রচলন করেন।
আবার তাকে (হাঁচীদাতাকে) নির্দেশ দেন যে, সে যেন এ বলে,
‘আল্লাহ তোমাকে সঠিক পথ দেখাক এবং তোমার যাবতীয় কর্ম সংশোধণ
করে দিক’ তাকে (শ্রবণকারী উত্তরদাতাকে) উত্তর দেয়। যে ব্যক্তি হাঁচি দেওয়ার পর
আল্লাহর প্রশংসা করল না সে উত্তর পাওয়ার অধিকার রাখল না। সে নিজেকে ব্যতীত কাউকে
দোষারোপ করার অধিকার রাখে না।
📁হাঁচির জবাব দেয়ার হুকুমের ক্ষেত্রে ‘আলিমদের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে। যেমন হাফিয ইবনু হাজার ‘আসকালানী(রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ হাঁচির জবাব দেয়া ওয়াজিব। কারণ, আবূ হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস রয়েছে, فَحَقٌّ عَلٰى كُلِّ مُسْلِمٍ سَمِعَهٗ أَنْ يُشَمِّتَهُ।
✔️ইবনু আবূ জামরাহ্ বলেনঃ একদল ‘আলিম
এটাকে ফরযে ‘আইন বলে অভিহিত করেছেন। ইমাম ইবনুল কইয়িম (রহিমাহুল্লাহ) এ মতটিকে
তাঁর সুনানের মধ্যে জোর দিয়ে বলেছেন। আরেকদল বিদ্বান এটাকে ফরযে কিফায়াহ্ বলেছেন।
অতএব যখন কেউ এর জবাব দেয় তখন তা সবার পক্ষ থেকে যথেষ্ট হয়ে যাবে। জামহূর হাম্বালী, হানাফী ও আবুল ওয়ালীদ ইবনু রুশদ প্রমুখ এরূপ মত পেশ করেন।
মালিকীদের একদল ও ‘আবদুল ওয়াহ্ব মুস্তাহাব বলেছেন।
এ
ধরনের মত শাফি‘ঈ মতাবলম্বীদেরও। হাফিয(রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ সহীহ হাদীস দ্বারা জবাব
দেয়া কিফায়াহ্। ওয়াজিব প্রমাণিত হলেও দ্বিতীয় মতটি দলীলের দিক থেকে
অগ্রাধিকারযোগ্য। কারণ হাঁচির জবাবদান যদিও ‘আমভাবে বর্ণিত হয়েছে তবুও এর দ্বারা
সবাইকে সম্বোধন করা হয়েছে।
✔️ইবনুল কইয়িম (রহিমাহুল্লাহ) ‘‘যাদুল মা‘আদ’’ গ্রন্থে হাঁচির জবাব সম্পর্কে একাধিক হাদীস নিয়ে এসেছেন তন্মধ্যে প্রথমে বুখারী কর্তৃক বর্ণিত আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর إِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْعُطَاسَ وَيَكْرَهُ التَّثَاؤُبَ فَإِذَا عَطَسَ فَحَمِدَ اللهَ فَحَقٌّ عَلٰى كُلِّ مُسْلِمٍ سَمِعَهٗ أَنْ يُشَمِّتَهٗ হাদীসটি উল্লেখ করে বলেন, হাঁচিদাতা ব্যক্তির আলহাম্দুলিল্লা-হ শ্রবণকারী প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির হাঁচির জবাব দেয়া ফরযে ‘আইন। সবার তরফ থেকে একজনের হাঁচির জবাব দেয়া যথেষ্ট হবে না। তিনি আরো বলেন, এটা ‘আলিমদের একটি মত, যাকে ইবনু যায়দ ও ইবনুল ‘আরাবী মালিকী পছন্দ করেন। তুহফাতুল আহ্ওয়াযীর ভাষ্যকার ইবনুল কইয়িম (রহিমাহুল্লাহ)-এর মতটিকে গ্রহণ করেন।
✔️(তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৭৩৬)
📁ফায়দাসমূহ:-
✍1)একজন মুসলিমের ওপর অপর মুসলিমের অধিকারের বর্ণনা। আর তা থেকে কতক মুস্তাহাব।
আর এ গুলো ব্যক্তি ও অবস্থার পরিবর্তনের কারণে পরিবর্তন হয়।
✍️2)সালামের উত্তর দেওয়া যদি একজন হয় তবে ফরযে আইন আর যদি একাধিক ব্যক্তি থাকে তখন
তা ফরযে কিফায়া।
✍️3)অসুস্থব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া ফরযে কিফায়া।
✍️4)জানাযার অনুসরণ করা ফরযে কিফায়াহ। আর তা হলো জানাযার স্থান থেকে বা সালাতের
স্থান থেকে কবরস্থান পর্যন্ত বিদায় জানানো।
✍️5)বিবাহে ওলিমার দাওয়াত গ্রহণ করা ফিকাহের কিতাবসমূহের শর্তানুযায়ী ওয়াজিব। আর
অন্যান্য ওলিমায় সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ।
✍️6)আল্লাহর প্রসংশার পর হাঁছির উত্তর দেওয়া। কতক আলেম বলেন, যদি সেখানে আর কেউ না থাকে তাহলে তা ওয়াজিবে আইনি। আর যদি
একাধিক থাকে তাহলে ওয়াজিবে কিফায়াহ। আর কতক আলেম বলেন, এটি মুস্তাহাব।
✍️7)মুসলিমদের মাঝে মুহাব্বাত ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন মজবুত করার ক্ষেত্রে ইসলামের
মহানুভবতা।
✍️8)ইমামের খুতবা চলা অবস্থায় সালামের উত্তর এবং হাঁছির জবাব দেওয়া জায়েয নাই।
কারণ,
এ গুলো সবই কালাম। আর খুতবা চলাকালে কথা বলা হারাম।
✔️[1] সহীহুল বুখারীঃ ১২৪০, মুসলিমঃ ২১৬২, তিরমিযীঃ ২৭৩৭, নাসায়ীঃ ১৯৩৮, আবূ দাউদঃ ৫০৩০, ইবনু মাজাহঃ ১৪৩৫, আহমাদঃ ২৭৫১১, ১০৫৮৩ হাদিসের মানঃ সহিহ
✔️[2] সহীহুল বুখারীঃ ১২৩৯, ২৪৪৫, ৫১৫৭, ৫৬৩৫, ৫৬৫০,৫৮৩৮, ৫৮৪৯, ৫৮৬৩, ৬২২২, ৬২৩৫, ৬৬৫৪, মুসলিমঃ ২০৬৬, তিরমিযীঃ ১৭৬০, ২৮০৯, নাসায়ীঃ ১৯৩৯, ৩৭৭৮, ৫৩০৯, ইবনু মাজাহঃ ২১১৫, আহমাদঃ ১৮০৩৪, ১৮০৬১, ১৮১৭০ হাদিসের মানঃ সহিহ
✔️[3] সহীহুল বুখারীঃ ১২৩৯, ২৪৪৫, ৫১৭৫, ৫৬৩৫, ৫৬৬০, ৫৮৩৮, ৫৮৪৯, ৫৮৬৩, ৬২২২, ৬২৩৫, ৬৬৫৪, মুসলিমঃ ২০৬৬, তিরমিযীঃ ১৭৬০, ২৮০৯, নাসায়ীঃ ১৯৩৯, ৩৭৭৮, ৫৩০৯, ইবনু মাজাহঃ ২১১৫ আহমাদঃ ১৮০৩৪, ১৮০৬১, ১৮১৭০ হাদিসের মানঃ সহিহ
✔️[4] সহীহুল বুখারীঃ ১২৩৯, ২৪৪৫, ৫১৭৫, ৫৬৩৪, ৫৬৫০, ৫৮৩৮, ৫৮৪৯, ৫৮৬৩, ৬২২২, ৬২৩৫, ৬৬৫৪, মুসলিমঃ ২০৬৬, তিরমিযীঃ ১৭৬০, ২৮০৯, নাসায়ীঃ ১৯৩৯, ৩৭৭৮, ৫৩০৯, ইবনু মাজাহঃ ২১১৫,আহমাদঃ ১৮০৩৪, ১৮০৬১, ১৮১৭০ হাদিসের মানঃ সহিহ
writer: rasikul islam.; time:09:17pm,date:02/02/2023
0 Comments