আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াত দেওয়ার বিধান পর্বঃ ১ বিষয় ভিত্তিক হাদিস

বিষয়ঃ আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেওয়ার বিধান:

1)আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াত দেওয়ার বিধান ।

2)আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াত দেওয়ার আদব।

3)আল্লাহর দিকে আহ্বানকারীদের আদর্শ ও দায়িত্বসমূহ ।

4) দীন ইসলামের ব্যাপকতা ।

হাদীস: আমার কথা পৌঁছিয়ে দাও, তা যদি এক আয়াতও হয়। আর বনী ইসরাঈল থেকে বর্ণনা করো। এতে কোনো দোষ নেই; কিন্তু যে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে আমার ওপর মিথ্যারোপ করল সে যেনো জাহান্নামে তার ঠিকানা নির্ধারিত করে নিলো।

عن عبد الله بن عمرو بن العاص رضي الله عنهما : أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «بلغوا عني ولو آية، وحدثوا عن بني إسرائيل ولا حرج، ومن كذب علي متعمدا فَلْيَتَبَوَّأْ مقعده من النار».

আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত,নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমার কথা পৌঁছিয়ে দাও, তা যদি এক আয়াতও হয়। আর বনী ইসরাঈল সম্প্রদায় থেকে বর্ণনা করো। এতে কোনো দোষ নেই; কিন্তু যে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে আমার ওপর মিথ্যারোপ করল সে যেনো জাহান্নামে তার ঠিকানা নির্ধারিত করে নিলো।” 

সহীহ-এটি বুখারী বর্ণনা করেছেন।; [সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন):৩৪৬১. (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩২০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩২১২)]

🔶ব্যাখ্যা:

হাদীসের অর্থ: আমার থেকে উত্তরাধিকারী সূত্রে প্রাপ্ত কুরআন হাদীসের ইলম মানুষের কাছে পৌঁছে দাও; যদিও পৌঁছে দেওয়া ইলম সামান্য পরিমাণ যেমন কুরআনের একটি আয়াতও হয় তবে শর্ত হলো যা পৌঁছাবে তা ভালোভাবে আয়ত্ত্ব করা জানা জরুরি ব্যক্তির ওপর পৌঁছানোর নির্দেশ তখনই ওয়াজিব যখন সেটা তার ওপর একান্তভাবে নির্ধারিত হয়ে যাবে আর যদি তার ওপর পৌঁছানো ওয়াজিব হওয়ার বিষয়টি নির্ধারিত না হয়, যেমন দেশে মানুষকে দীন শিক্ষা দীনের ব্যাপারে দিক নির্দেশনা দেওয়ার মতো আরও বেশ কিছু দা লোক থাকে তাহলে পৌঁছানো তার ওপর ওয়াজিব নয়; বরং তখন তার জন্যে মুস্তাহাব বনী ইসরাঈলদের বর্ণিত সত্য ঘটনাবলী তাদের থেকে বর্ণনা করাতে কোনো দোষ নেই যেমন, আসমান থেকে আগুন নেমে কুরবানীর গোশত পুড়িয়ে দেওয়া, গো বৎস পূজারীদের তাওবা কবুল হতে একে অন্যকে হত্যা করার ঘটনা অথবা কুরআনে বর্ণিত ঘটনার বিস্তারিত ব্যাখ্যা যাতে উপদেশ রয়েছে যে ব্যক্তি (ইচ্ছাকৃতভাবে) আমার ওপর মিথ্যারোপ করল সে যেনো জাহান্নামে তার নিজের ঠিকানা নির্ধারিত করে নিলো কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর মিথ্যারোপ করা সাধারণ মানুষের ওপর মিথ্যারোপ করার মতো নয় বরং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর মিথ্যারোপ মানে আল্লাহর ওপর মিথ্যারোপ করা অতঃপর আল্লাহর ওপর মিথ্যারোপ তার শরীআতের ওপর মিথ্যারোপের নামান্তর কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম অহীর মাধ্যমে যা কিছু আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন তাই আল্লাহর শরীআত সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর মিথ্যারোপ করার শাস্তি অধিক কঠিন  

🔶ফায়দাসমূহ

1: আল্লাহর শরীআতের তাবলীগ করা ওয়াজিব একজন মানুষ যা জেনেছে এবং বুঝেছে তা সে অপরকে পৌঁছে দেবে যদিও তা কম হয়

2: ইলম তলব করা ওয়াজিব যাতে সে আল্লাহর দীনের তাবলীগ করতে সক্ষম হয় এটি ফরযে কিফায়াহ, যখন কতক মুসলিম দায়িত্ব পালন করবে অন্যদের থেকে আদায় হয়ে যাবে আর যদি কেউ আদায় না করে তখন সবাই গুনাহগার হবে

3: উপদেশ নসীহত গ্রহণের জন্য বনী ইসরাঈলের ঘটনাগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা বৈধ তবে শর্ত হলো যে কথাগুলো মিথ্যা প্রমাণিত তা থেকে বিরত থাকতে হবে চেষ্ট করবে সেগুলো বলতে যেগুলো প্রমাণিত এবং ইসলামী শরীআতের কাছাকাছি

4: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর মিথ্যাচার করা হারাম এবং এটি কবীরাহ গুনাহ

5: কথা বলার সময় সত্য বলার প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং সতর্কতা অবলম্বন করার প্রতি উৎসাহ প্রদান যাতে কোন মিথ্যা পতিত না হতে হয় বিশেষ করে আল্লাহর শরীআতের ক্ষেত্রে আর এর জন্য প্রয়োজন সহীহ ইলম এবং সুক্ষ্ম জ্ঞান

) আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেওয়ার আদবঃ

হাদীস: ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহুআনহু প্রত্যেক বৃহস্পতিবারে আমাদেরকে নসীহত শুনাতেন একটি লোক তাঁকে নিবেদন করল, ‘হে আবূ আব্দুর রহমান! আমার বাসনা এই যে, আপনি আমাদেরকে যদি প্রত্যেক দিন নসীহত শুনাতেন (তো ভাল হত)তিনি বললেন, ‘স্মরণে রাখবে, আমাকে এতে বাধা দিচ্ছে এই যে, আমি তোমাদেরকে বিরক্ত করতে অপছন্দ করি আমি নসীহতের ব্যাপারে তোমাদের প্রতি ঠিক ঐভাবে লক্ষ্য রাখছি, যেভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বিরক্ত হবার আশংকায় উক্ত বিষয়ে আমাদের প্রতি লক্ষ্য রাখতেন

ওয়ায-নসীহত এবং তাতে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করার বিবরণ:

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

﴿ ٱدۡعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِٱلۡحِكۡمَةِ وَٱلۡمَوۡعِظَةِ ٱلۡحَسَنَةِۖ [النحل: ١٢٥]

অর্থাৎ “তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান কর হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা।” (সূরা নাহল ১২৫ আয়াত)

 হাদীস

وَعَن أَبي وَائِلٍ شَقِيقِ بنِ سَلَمَةَ، قَالَ: كَانَ ابنُ مَسْعُودٍ رضي الله عنه يُذَكِّرُنَا في كُلِّ خَمِيسٍ، فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ: يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمانِ، لَوَدِدْتُ أنَّكَ ذَكَّرْتَنَا كُلَّ يَوْمٍ، فَقَالَ: أمَا إنَّهُ يَمْنَعُنِي مِنْ ذَلِكَ أنَّي أكْرَهُ أنْ أُمِلَّكُمْ، وَإنِّي أتَخَوَّلُكُمْ بِالْمَوْعِظَةِ، كَمَا كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم يَتَخَوَّلُنَا بِهَا مَخَافَةَ السَّآمَةِ عَلَيْنَا . متفقٌ عَلَيْهِ

আবূ ওয়ায়েল শাকীক ইবনে সালামা-রাহিমাহুল্লাহ- হতে বর্ণিত তিনি বলেন, ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহুআনহু প্রত্যেক বৃহস্পতিবারে আমাদেরকে নসীহত শুনাতেন একটি লোক তাঁকে নিবেদন করল, ‘হে আবূ আব্দুর রহমান! আমার বাসনা এই যে, আপনি আমাদেরকে যদি প্রত্যেক দিন নসীহত শুনাতেন (তো ভাল হত)তিনি বললেন, ‘স্মরণে রাখবে, আমাকে এতে বাধা দিচ্ছে এই যে, আমি তোমাদেরকে বিরক্ত করতে অপছন্দ করি আমি নসীহতের ব্যাপারে তোমাদের প্রতি ঠিক ঐভাবে লক্ষ্য রাখছি, যেভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বিরক্ত হবার আশংকায় উক্ত বিষয়ে আমাদের প্রতি লক্ষ্য রাখতেন’  সহীহ - মুত্তাফাকুনআলাইহি (বুখারী মুসলিম)

[রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন): ১/৭০৪; সহীহুল বুখারী: ৬৮, ৭০, ৬৪১১, মুসলিম ২৮২১, তিরমিযী: ২৮৫৫, আহমাদ: ৩৫৭১, ৪০৩১, ৪০৫০, ৪১৭৭, ৪২১৬, ৪৩৯৫, ৪৪২৫]

🔶ব্যাখ্যা:

শাকীক ইবনে সালামা-রাহিমাহুল্লাহ- বলেন, ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহুআনহু প্রত্যেক বৃহস্পতিবারে আমাদেরকে নসীহত শুনাতেন একটি লোক তাঁকে নিবেদন করল, আমরা পছন্দ করি যে, আপনি আমাদেরকে প্রত্যেক দিন নসীহত শুনান তিনি বললেন, আমাকে এতে যে বিষয়টি বারণ করছে, তা হলো আমি তোমাদেরকে বিরক্তি সংকোচে ফেলতে অপছন্দ করি আমি নসীহতের ব্যাপারে তোমাদের প্রতি ঠিক ঐভাবে লক্ষ্য রাখছি, যেভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বিরক্ত হবার আশংকায় উক্ত বিষয়ে আমাদের প্রতি লক্ষ্য রাখতেনকারণ, বিরক্তির সময় নসীহত করা দ্বারা কোন উপকার হয় না

হাদীস: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গেলাম তখন তিনি খুতবা দিচ্ছিলেন..

 🔶হাদীস:

عن أبي رِفَاعَةَ تَمِيم بن أُسَيدٍ رضي الله عنه قَالَ: انتهيتُ إلى رسولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وهو يَخطبُ، فَقُلتُ: يَا رسولَ اللهِ، رَجُلٌ غَريبٌ جاءَ يَسألُ عن دِينِهِ لا يَدرِي مَا دِينُهُ؟ فَأَقْبلَ عليَّ رسولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وتَرَكَ خُطبتَهُ حتى انتَهى إليَّ، فأُتِيَ بكُرسِيٍّ، فَقَعَدَ عليه، وجَعَلَ يُعَلِّمُنِي ممّا عَلَّمَهُ اللهُ، ثم أتى خُطبتَهُ فَأَتَمَّ آخِرَهَا.

আবূ রিফা‘আহ তামীম ইবন উসাইদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গেলাম তখন তিনি খুৎবা দিচ্ছিলেন। অতঃপর আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! একজন অপরিচিত মানুষ, নিজের দীন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে এসেছে, সে জানে না তার দীন কী?’ (এ কথা শুনে) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার দিকে ফিরলেন এবং খুৎবা দেওয়া বর্জন করলেন; এমনকি তিনি আমার নিকটে আসলেন। অতঃপর একটি চেয়ার আনা হলো। তিনি তার উপর বসে আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা থেকে আমাকে শিখাতে লাগলেন। অতঃপর তিনি খুৎবায় ফিরে এসে তার শেষাংশটুকু পূর্ণ করলেন। 

সহীহ - এটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন।

🔶ব্যাখ্যা:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিনয়ের এটি একটি ঘটনা একদা তিনি খুৎবা দিচ্ছিলেন, এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বলল, একজন অপরিচিত লোক এসেছে, সে তার দীন সম্পর্কে জানতে চায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাষণ বন্ধ করে তার দিকে দ্রুত অগ্রসর হলেন এবং তার কাছে এসে পৌঁছলেন অতঃপর তাঁর কাছে একটি চেয়ার নিয়ে আসা হলো তিনি লোকটিকে দীন শিক্ষা দিচ্ছিলেন কারণ, লোকটি অাগ্রহ করে জ্ঞানের মহব্বতে ছুটে এসেছে সে আমল করার উদ্দেশ্যে দীন শিখতে চায় কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুৎবা দেওয়া মুলতবি করে তার দিকে অগ্রসর হলেন এবং তাকে দীন শিক্ষা দিলেন অতঃপর তিনি তার অসম্পন্ন ভাষণ পরিপূর্ণ করলেন 

) আল্লাহর দিকে আহ্বানকারীদের আদর্শ দায়িত্বসমূহঃ

হাদীসবারা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খালিদ ইবন ওয়ালিদকে ইয়ামনের দিকে প্রেরণ করেন যাতে তিনি তাদের ইসলামের দিকে দাওয়াত দেয় কিন্তু তারা তাকে সাড়া দেয়নি তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী ইবন আবী তালেব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে পাঠালেন এবং তাকে নির্দেশ দিলেন যে, খালিদ এবং তার সাথে আরও যারা আছে তাদের ফেরত পাঠাতে তবে যদি খালিদের সাথে থাকা কোন লোক আলীর সাথে থাকতে চায় সে যেন তার সাথে থাকে বারা বলেন, আমি তাদের মধ্যে একজন ছিলাম সে তার সাথে রয়ে গেল তারপর যখন আমরা সম্প্রদায়ের লোকদের কাছাকাছি গেলাম, তারা আমাদের কাছে বের হয়ে আসল আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাদের সালাত পড়ালেন এবং এক কাতার করে দাড়ালাম তারপর তিনি আমাদের সামনে অগ্রসর হলেন তারপর তাদেরকে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চিঠি পড়ে শুনালেন, ফলে হামদান গোত্রের সব লোক ইসলাম গ্রহণ করে ফেলল আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট তাদের ইসলাম গ্রহণের সংবাদ জানিয়ে চিঠি লিখলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন চিঠিটি পড়লো সেজদায় লুটে পড়ল তারপর তিনি তার মাথা তুললেন এবং বললেন, হামদান সম্প্রদায়ে ওপর শান্তি হামদান সম্প্রদায়ে ওপর শান্তি সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী

 হাদীস:

عن البراء رضي الله عنه قال: بعث النبي صلى الله عليه وسلم خالد بن الوليد إلى أهل اليمن يَدْعُوهُمْ إلى الإسلام فَلَمْ يُجِيبُوهُ، ثم إنَّ النبي صلى الله عليه وسلم بعث علي بن أبي طالب، وأمره أن يَقْفُلَ خالد ومن كان معه إلا رجل ممن كان مع خالد أحب أن يُعَقِّبَ مع علي رضي الله عنه فَلْيُعَقِّبْ معه قال البراء فَكُنْتُ مِمَّنْ عَقَّبَ مَعَهُ، فَلَمَّا دَنَوْنَا مِنَ القوم خرجوا إلينا فصلى بنا عليٌّ رضي الله عنه وَصَفَّنَا صَفًّا واحدا، ثم تقدَّم بين أيدينا، فقرأ عليهم كتاب رسول الله صلى الله عليه وسلم فَأَسْلَمَتْ هَمْدَانُ جَمِيعًا، فكتب علي رضي الله عنه إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم بإسلامهم، فلمَّا قرأ رسول الله صلى الله عليه وسلم الكتاب خَرَّ ساجدا، ثم رفع رأسه، فقال: السَّلَامُ عَلَى هَمْدَانَ، السلامُ على هَمْدَانَ.

বারা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খালিদ ইবন ওয়ালিদকে ইয়ামনের দিকে প্রেরণ করেন যাতে তিনি তাদের ইসলামের দিকে দাওয়াত দেয়। কিন্তু তারা তাকে সাড়া দেয়নি। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী ইবন আবী তালেব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে পাঠালেন এবং তাকে নির্দেশ দিলেন যে, খালিদ এবং তার সাথে আরও যারা আছে তাদের ফেরত পাঠাতে। তবে যদি খালিদের সাথে থাকা কোন লোক আলীর সাথে থাকতে চায় সে যেন তার সাথে থাকে। বারা বলেন, আমি তাদের মধ্যে একজন ছিলাম সে তার সাথে রয়ে গেল। তারপর যখন আমরা সম্প্রদায়ের লোকদের কাছাকাছি গেলাম, তারা আমাদের কাছে বের হয়ে আসল। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাদের সালাত পড়ালেন এবং এক কাতার করে দাড়ালাম। তারপর তিনি আমাদের সামনে অগ্রসর হলেন। তারপর তাদেরকে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চিঠি পড়ে শুনালেন, ফলে হামদান গোত্রের সব লোক ইসলাম গ্রহণ করে ফেলল। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট তাদের ইসলাম গ্রহণের সংবাদ জানিয়ে চিঠি লিখলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন চিঠিটি পড়লো সেজদায় লুটে পড়ল। তারপর তিনি তার মাথা তুললেন এবং বললেন, হামদান সম্প্রদায়ে ওপর শান্তি। হামদান সম্প্রদায়ে ওপর শান্তি। হাসান - এটি বাইহাকী বর্ণনা করেছেন।

🔶ব্যাখ্যা:

হাদীসটি বর্ণনা করে যে, যখনই এমন কোন সংবাদ আসে যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খুশি করে, তখন তিনি আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের লক্ষ্যে সেজদায় পড়ে যান ধরনের একটি ঘটনা যা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে সংঘটিত হয় খালেদ ইবন ওয়ালিদের হাতে ইসলাম গ্রহণ করতে অস্বীকার করার পর যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ইয়ামানের দিকে তার অধিবাসীদের ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার জন্য পাঠান, তখন আলী তাদের ইসলামের দাওয়াত দিলে হামদান গোত্রের সবাই তার হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন তখন তিনি বিষয়টি জানিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে চিঠি লেখেন তা পড়ে আল্লাহর শুকরিয়া স্বরূপ তিনি সেজদায় পড়ে যান

) দীন ইসলামের ব্যাপকতা

হাদীস: হিরাকল আবূ সুফিয়ানকে বললেন, ‘তিনি (নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাদেরকে কী নির্দেশ দেন?’ আবূ সুফিয়ান বলেন, আমি বললাম, ‘তিনি বলেন, “তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর এবং তার সাথে কোন কিছুকে অংশীদার করো না এবং তোমাদের বাপ-দাদা যা বলে সেটা ত্যাগ কর এবং তিনি আমাদেরকে সালাত আদায় করা সত্য বলার আদেশ দেন

 হাদীস:

عن أبي سفيان صخر بن حرب رضي الله عنه قال: قال هِرَقل: فماذا يَأمُرُكُم -يعني: النبي صلى الله عليه وسلم- قال أبو سفيان: قلت: يقول: «اعبدُوا الله وَحدَه لاَ تُشرِكُوا بِهِ شَيئًا، وَاترُكُوا ما يَقُول آبَاؤُكُم، ويَأمُرُنَا بِالصَّلاَة، والصِّدق، والعَفَاف، والصِّلَة».

আবূ সুফিয়ান সখর ইবনে হারব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, (রোম-সম্রাট) হিরাকল বলেন: ‘তিনি (নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাদেরকে কী নির্দেশ দেন?’ আবূ সুফিয়ান বলেন, আমি বললাম, ‘তিনি বলেন, “তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর এবং তার সাথে কোন কিছুকে অংশীদার করো না এবং তোমাদের বাপ-দাদা যা বলে সেটা ত্যাগ কর। এবং তিনি আমাদেরকে সালাত আদায় করা ও সত্য বলার আদেশ দেন।’

সহীহ-মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি (বুখারী ও মুসলিম)। ওহী অধ্যায়

🔶ব্যাখ্যা:

হাদীসটি হিরাকলের সাথে আবূ সুফিয়ান সাখার ইবন হারবের প্রসিদ্ধ হাদীস আবূ সুফিয়ান তখন মুশরিক ছিল, কারণ তিনি শেষে ইসলাম গ্রহণ করেছেন হুদাইবিয়্যাহ মক্কা বিজয়ের মাঝামাঝি সময়ে আবূ সুফিয়ান তার সাথে কুরাইশের একটি জামাত শিরিয়ায় হিরাকলের নিকট আগমন করে সময়ে হিরাকল ছিল খৃষ্টানদের বাদশাহ সে তাওরাত ইনজিল অধ্যয়ন করে ছিল এবং পূর্বের আসমানী কিতাবসমূহ সম্পর্কে তার জ্ঞান ছিল এবং একজন মেধাবী বিচক্ষণ বাদশাহ ছিল যখন তিনি শুনতে পেলেন যে, আবূ সুফিয়ান তার সাথীরা হিজায থেকে আগমন করেছে তখন তিনি তাদের ডেকে পাঠালেন আর তিনি তাদের রাসূলের অবস্থা, তার বংশ, সাথী তার প্রতি তাদের সম্মান এবং প্রতিশ্রুতি পূর্ণতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন সে যখনই কোন কিছু উল্লেখ করে তারা তাকে তা অবহিত করে এবং সে বুঝতে পারে যে, তিনিই সেই নবী যার সম্পর্কে পূর্বের আসমানী কিতাবসমূহ খবর দিয়েছে কিন্তু সে তার রাজত্ব নিয়েই আঁকড়ে থাকে ফলে আল্লাহর কোন হিকমতের কারণে সে ইসলাম গ্রহণ করেনি আবূ সুফিয়ানকে সে যা জিজ্ঞাসা করল তার মধ্যে ছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কি বিষয়ে আদেশ করেন তখন আবু সুফিয়ান তাকে জানান যে, তিনি তাদের আল্লাহর ইবাদত করতে, তার সাথে কাউকে শরীক না করতে গায়রুল্লাহের ইবাদত না করতে নির্দেশ দেন না কোন ফিরিশতা, রাসূল, গাছ, পাথর, সূর্য, চন্দ্র বা অন্য কিছু, ইবাদত কেবল এক আল্লাহর জন্য আর এটিই হলো রাসূলগণের দাওয়াত সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে দাওয়াত নিয়েই এসেছেন যে দাওয়াত নিয়ে তার পূর্বে নবীগণ এসেছিলেন অর্থাৎ ইবাদত কেবল আল্লাহর ইবাদত করা যিনি একক তার কোন শরীক নেই আর তিনি বলেন, “তোমরা তোমাদের বাপ দাদাগণ যার ওপর আছে তা পরিত্যাগ কর এটিই ছিল সত্যের ঘোষণা তাদের বাপ দাদা যেসব মুর্তির উপাসনা করত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সেসব ছাড়ার নির্দেশ দেন আর তাদের বাপ দাদার মধ্যে যে সব উন্নত চরিত্র ছিল তা ছাড়ার তিনি নির্দেশ দেননি তার বাণী: “তিনি আমাদের সালাতের নির্দেশ দিতেন সালাত হলো বান্দা তার রবের মাঝে সম্পর্কের সেতু বন্ধন শাহাদাতাইনের পর সেটি ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ রুকন দ্বারা একজন মুমিন কাফির থেকে পৃথক হয় সালাতই হলো আমাদের মাঝে এবং কাফের মুশরিকদের মাঝে চুক্তি যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন আমাদের মাঝে তাদের মাঝে বন্ধন হলো সালাত যে ব্যক্তি সালাত ত্যাগ করল সে কাফের হয়ে গেল আর তিনি আমাদের সততার নির্দেশ দেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উম্মতকে সত্য কথা বলার নির্দেশ দিতেন এটি আল্লাহর বাণীর মতো, “হে ঈমানদারগণ তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর আর তোমরা সত্যবাদীদের সাথে থাকো [সূরা তাওবাহ, আয়াত: ১১৯] সত্য কথা বলা একটি উন্নত চরিত্র এটি দুই ভাগে বিভক্ত: আল্লাহর সাথে সততা আর আল্লাহর বান্দাদের সাথে সততা উভয়টিই উন্নত চরিত্র আর তার বাণী: “পবিত্রতা পবিত্রতা দুই প্রকার: লজ্জাস্থানের চাহিদা থেকে পবিত্রতা, আর পেটের চাহিদা থেকে পবিত্রতা আর প্রথম প্রকার পবিত্রতা যেমন একজন মানুষের যিনা উপকরণ যা হারাম করা হয়েছে তা থেকে দূরে থাকা আর দ্বিতীয় প্রকার পবিত্রতা: আর সেটি হলো পেটের চাহিদা থেকে বিরত থাকা অর্থাৎ, মানুষের হাতে যা আছে তা থেকে বিরত থাকা তাদের নিকট না চাওয়া যেমন সে কোন মানুষের নিকট কোন কিছু চায় না কারণ, চাওয়া বেঈজ্জতী ভিক্ষুকের হাত নিকৃষ্ট নিম্ন মানের আর যে দান করে তার হাত উঁচা সম্মানী সুতরাং নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কারো কাছে কোন কিছু চাওয়া উচিত নয় আর পঞ্চম: তার বাণীআত্মীয়তা রক্ষাসম্পর্ক আল্লাহ তাআলা যে সব আত্মীয়ের সাথে সু সম্পর্ক বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তাদের সাথে সু সম্পর্ক বজায় রাখা আর তাদের মধ্যে সবোর্চ্চ হলো মাতা-পিতা কারণ, মাতা-পিতার সাথে সু সম্পর্ক সৎ কর্ম সত্যিকার সু-সম্পর্ক আত্মীয়দের সাথে সু সম্পর্ক যে যতটুকু কাছের সে অনুযায়ী রাখতে হবে যেমন, ভাই অধিক গুরুত্বপূর্ণ চাচা থেকে আর চাচা অধিক গুরুত্বপূর্ন বাপের চাচা থেকে আর আত্মীয়তা বজায় রাখা এমন সব কর্ম দ্বারা বাস্তবায়ন করতে হয় যা মানুষের নিকট পরিচিত প্রসিদ্ধ

) ইসলামে মানবাধিকার

হাদীসনিশ্চয় আপনার ওপর আপনার রবের হক রয়েছে আপনার ওপর আপনার নিজের নফসেরও হক রয়েছে আর আপনার ওপর আপনার পরিবারেরও হক রয়েছে সুতরাং প্রত্যেক হকদারকে তার হক প্রদান করুন

 হাদীস

عن أبي جحيفة وهب بن عبد الله رضي الله عنه قال: آخى النبي صلى الله عليه وسلم بين سلمان وأبي الدرداء، فزار سلمان أبا الدرداء فرأى أم الدرداء مُتَبَذِّلَةً، فقال: ما شأنُكِ؟ قالت: أخوك أبو الدرداء ليس له حاجة في الدنيا، فجاء أبو الدرداء فصنع له طعاما، فقال له: كل فإني صائم، قال: ما أنا بآكل حتى تأكل فأكل، فلما كان الليل ذهب أبو الدرداء يقوم فقال له: نم، فنام، ثم ذهب يقوم فقال له: نم. فلما كان من آخر الليل قال سلمان: قم الآن، فصليا جميعا فقال له سلمان: إن لربك عليك حقا، وإن لنفسك عليك حقا، ولأهلك عليك حقا، فأعطِ كل ذي حق حقه، فأتى النبي صلى الله عليه وسلم فذكر ذلك له فقال النبي صلى الله عليه وسلم : «صدق سلمان». 

আবূ জুহায়ফা ওয়াহাব ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে মারফু‘ সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালমান ও আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন তৈরি করে দেন। (একবার) সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে সাক্ষাৎ করতে এসে উম্মুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে মলিন কাপড় পরিহিত দেখতে পান। তিনি এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে উম্মুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন, আপনার ভাই আবুদ দারদার পার্থিব কোনো কিছুর প্রতি মোহ নেই। কিছুক্ষণ পরে আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আসলেন। তারপর তিনি সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর জন্য আহার্য প্রস্তুত করান এবং বলেন, আপনি খেয়ে নিন, আমি সাওম পালন করছি। সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আপনি না খেলে আমি খাবো না। এরপর আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সঙ্গে খেলেন। রাত হলে আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু (সালাত আদায়ে) দাঁড়াতে গেলেন। সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, এখন ঘুমিয়ে যান। আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ঘুমিয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পরে আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আবার সালাতে দাঁড়াতে উদ্যত হলেন, সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ঘুমিয়ে যান। যখন রাতের শেষভাগ হলো, সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বললেন, এখন দাঁড়ান। এরপর তারা দু’জনে সালাত আদায় করলেন। পরে সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে বললেন, নিশ্চয় আপনার ওপর আপনার রবের হক রয়েছে। আপনার ওপর আপনার নিজের নফসেরও হক রয়েছে। আর আপনার ওপর আপনার পরিবারেরও হক রয়েছে। সুতরাং প্রত্যেক হকদারকে তার হক প্রদান করুন। এরপর আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত হয়ে এ ঘটনা বর্ণনা করলেন।

(সব শুনে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “সালমান ঠিকই বলেছে।”

সহীহ - এটি বুখারী বর্ণনা করেছেন

🔶ব্যাখ্যা:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালমান আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহুআনহুমার মাঝে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন করে দেন একবার সালমান রাদিয়াল্লাহুআনহু আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহুআনহুর সাথে সাক্ষাৎ করতে এসে উম্মুদ দারদা রাদিয়াল্লাহুআনহাকে বিবাহিত নারীর মত দেখতে পান নি অর্থাৎ তার জামা কাপড় সুন্দর ছিল না তিনি এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে উম্মুদ দারদা রাদিয়াল্লাহুআনহা বললেন, আপনার ভাই আবুদ দারদা দুনিয়া, পরিবার-পরিজন, পানাহারসহ সবকিছু থেকে বিমুখী হয়ে গেছে কিছুক্ষণ পরে আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহুআনহু বাড়িতে আসলে তিনি সালমান রাদিয়াল্লাহুআনহুর জন্য আহার্য প্রস্তুত করে তাকে খেতে দিলেন তিনি সাওম পালনকারী ছিলেন সালমান রাদিয়াল্লাহুআনহু তাকে সাওম ভঙ্গ করে তার সাথে খেতে বললেন যেহেতু তিনি জানতেন আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহুআনহু সর্বদা সাওম পালন করতেন আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহুআনহু সালমান রাদিয়াল্লাহুআনহুর সঙ্গে খেলেন রাত হলে আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহুআনহু সালাত আদায়ে করতে দাঁড়াতে গেলেন সালমান রাদিয়াল্লাহুআনহু তাকে রাতের শেষভাগ পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকতে বললেন রাতের শেষভাগে দুজনে উঠে সালাত আদায় করলেন এবং সালমান রাদিয়াল্লাহুআনহু আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহুআনহুকে বুঝাতে চেয়েছেন যে, প্রতিটি মানুষের সাধ্যের বাইরে সালাত সিয়াম আদায় করা উচিৎ নয়; বরং তার এমনভাবে সালাত সিয়াম পালন করা উচিত যাতে কল্যাণ সাধন হয় আবার নিজের ওপর কষ্ট-ক্লেশও দূরীভূত হয়

হাদীস: তোমরা তোমাদের সক্ষমতা অনুযায়ী আমল করো আল্লাহর কসম, তিনি ক্লান্ত হন না যতক্ষণ না তোমরা ক্লান্ত হও

  হাদীস

عن عائشة زوجِ النبي صلى الله عليه وسلم ، أخبرته أنَّ الحَوْلاء بنت تُوَيت بن حبيب بن أسد بن عبد العُزَّى مرَّت بها وعندها رسول الله صلى الله عليه وسلم ، فقلتُ: هذه الحَوْلاء بنت تُوَيت، وزعموا أنها لا تنام الليلَ، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم : «لا تنامُ الليلَ! خذوا مِن العمل ما تُطِيقون، فواللهِ لا يسأمُ اللهُ حتى تسأموا».

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী আয়েশা তাকে সংবাদ দেন যে, হাওলা বিনতে তুয়াইত ইবন হাবীব ইবন আসাদ ইবন আব্দুল উয্যা তার পাশ দিয়ে অতিক্রম করে যখন তার নিকট রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন। আমি বললাম এ হলো হাওলা বিনতে তুয়াইত। আর তারা ধারণা করত যে, সে রাতে ঘুমায় না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “সে রাতে ঘুমায় না! তোমরা তোমাদের সক্ষমতা অনুযায়ী আমল করো। আল্লাহর কসম, তিনি ক্লান্ত হন না যতক্ষণ না তোমরা ক্লান্ত হও”। সহীহ - মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি (বুখারী ও মুসলিম)।

🔶ব্যাখ্যা:

হাওলা বিনতে তুয়াইত আয়েশার পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিল তখন আয়েশা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, হাওলা বিনতে তুয়াইত সারা রাত সালাত আদায় করে সে রাতে ঘুমায় না তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সারা রাত কিয়ামুল লাইল করাকে অপছন্দ করলেন এবং বললেন, তোমরা তোমাদের সক্ষমতা অনুযায়ী আমল করো সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাকে তাকে বেশি আমল করতে না করেন যা তার জন্য কষ্টের কারণ হয় এবং ভবিষ্যতে তা করতে অক্ষম হবে এবং চালিয়ে যেতে পারবে না তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নির্দেশ দেন যে, আমরা যেন এমন আমল করি যা আমরা করতে সক্ষমআল্লাহর কসম, তিনি ক্লান্ত হন না যতক্ষণ না তোমরা ক্লান্ত হওঅর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে তোমাদের আমল অনুযায়ী সাওয়াব দেবেন যতদিন পর্যন্ত তোমরা আমলে লিপ্ত থাকবে আল্লাহ অবশ্যই তার ওপর তোমাদের সাওয়াব দান করবেন যখন বান্দা আমল করতে করতে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয় এবং আমল করা ছেড়ে দেয় এবং আমল থেকে বিরত থাকে, আল্লাহ তাআলা তার আমলের সাওয়া বন্ধ করে দেয় কারণ, বান্দাকে তার আমলের কারণেই বিনিময় দেওয়া হয়ে থাকে যে ব্যক্তি কোন প্রকার আপরগতা ছাড়া যেমন সফর বা অসুস্থতা ব্যতীত আমল ছেড়ে দেয়, তখন তার সাওয়াব বিনিময় বন্ধ হয়ে যায় ক্লান্ত হওয়ার অর্থের ক্ষেত্রে ব্যাখ্যাটিই অধিক গ্রহণযোগ্য যেটি দ্বারা স্পষ্ট হয় যে, আল্লাহ ক্লান্ত হোন তবে আল্লাহর ক্লান্ত হওয়া আমাদের ক্লান্ত হওয়ার মতো নয় কারণ আমাদের ক্লান্তি কষ্ট অলসতার ক্লান্তি আর আল্লাহর ক্লান্ত হওয়া এমন একটি গুণ যা তার সাথে খাস এবং তার শানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বস্তুত আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার সাথে কষ্ট বা অলসতা সম্পৃক্ত হয় না 

হাদীস: আল্লাহর শপথ অবশ্যই আমি আমাকে বনী মুকাররিন গোত্রের সাত সদস্য বিশিষ্ট পরিবারের সপ্তম লোক হিসেবে দেখতে পাচ্ছি আমাদের একজন গোলাম ব্যতীত অন্য কোনো গোলাম ছিল না একদা আমাদের মধ্যকার সর্ব কনিষ্ঠ ব্যক্তি তাকে চপোটাঘাত করল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন আমাদেরকে নির্দেশ দিলেন তাকে আযাদ করে দিতে

 হাদীস

عن أبي علي سويد بن مُقَرِّن رضي الله عنه قال: لقد رَأَيْتُنِي سابع سبعة من بني مُقَرِّن ما لنا خادم إلا واحدة لطمها أصغرنا فأمرنا رسول الله صلى الله عليه وسلم أن نعتقها وفي رواية: «سابع إخوة لي».

আবূ ‘আলী সুওয়ায়েদ ইবন মুকাররিন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি (এক দেখলেন এক বৃদ্ধকে, যিনি তার চাকরকে চপোটাঘাত করেছেন তখন তিনি) বলেন, আল্লাহর শপথ অবশ্যই আমি আমাকে বনী মুকাররিন গোত্রের সাত সদস্য বিশিষ্ট পরিবারের সপ্তম লোক হিসেবে দেখতে পাচ্ছি। আমাদের একজন গোলাম ব্যতীত অন্য কোনো গোলাম ছিল না। একদা আমাদের মধ্যকার সর্ব কনিষ্ঠ ব্যক্তি তাকে চপোটাঘাত করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন আমাদেরকে নির্দেশ দিলেন তাকে আযাদ করে দিতে। অন্য বর্ণনায় এসেছে, আমাদের সপ্তম ভাইটি। 

সহীহ - এটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন।

🔶ব্যাখ্যা:

আবূআলী সুওয়ায়েদ ইবন মুকাররিন রাদিয়াল্লাহুআনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বনী মুকাররিন গোত্রের সাত সদস্য বিশিষ্ট সদস্যের একজন ছিলাম তারা সকলেই হিজরতকারী সাহাবী ছিলেন তাদের সাথে অন্য কেউ ছিল না আমাদের সেবার জন্য একজন গোলাম ব্যতীত অন্য কোনো লোক ছিল না একদা আমাদের মধ্যকার সর্ব কনিষ্ঠ ব্যক্তি তার গালে চপোটাঘাত করল ফলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নির্দেশ দিলেন তাকে আযাদ করে দিতে; যাতে স্বাধীন করার মাধ্যমে তার প্রহারের কাফফারা হয়ে যায় 

(ইসলামিক বিশুদ্ধ শুধু বই পেতে📚 এখানে পাবেন🎶প্রচুর অডিও সিরিজ🎶100 এর বেশী শায়খ ভিত্তিক অডিও 90 এর উপর 🎶বিষয় ভিত্তিক অডিও🌎অডিও কুরআন এবং অনলাইনে অডিও শুনুন🎶এছাড়াও বিষয় ভিত্তিক ভিডিও,♂সহীহ-সুন্নাহ-ভিত্তিক ইউটিউব চ্যানেল,ইসলামিক পত্রিকা 📚 and অনেক জানা-অজানা-আর্টিকল 📚 বিষয় ভিত্তিক সিরিজ আকারে http://islamicebookandpic.in/ ইসলামিক গালারি 👇বিশেষ দ্রস্টব্যঃ-👇 ওয়েবসাইট sarolpoth.blogspot.com/ ইসলামিক সমস্থ প্রগ্রাম একসাথে পেতে http://salafimp3web.blogspot.com/👉 অডিও সমাহার👈 👉 https://salafi-pdfbooks.blogspot.com/ সমস্ত ইসলামিক বই👆


Post a Comment

0 Comments