বিষয়: সিয়ামের সুন্নতসমূহ

বিষয়: সিয়ামের সুন্নতসমূহ

🔘হাদীস: লোকেরা যতদিন দ্রুত ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের মধ্যে থাকবে।

সাহল বিন সা‘দ আস-সাঈদী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “লোকেরা যতদিন দ্রুত ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের মধ্যে থাকবে।” [(সহীহুল বুখারী: ১৯৫৭, ১০৯৮, তিরমিযী: ৬৯৯, ইবনু মাজাহ: ১৬৯৭, আহমাদ: ২২২৯৮, ২২৩২১, ২২৩৩৯, ২২৩৫২, ২২৩৬৩, মুওয়াত্তা মালিক: ৬৩৮, দারেমী:১৬৯৯)]

🔳ব্যাখ্যা:-

এ হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সংবাদ দিচ্ছেন যে, লোকেরা যতদিন দ্রুত ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের ওপর থাকবেন। কেননা তারা এর মাধ্যমে সুন্নাহর অনুসরণে যত্মবান হয়। সুতরাং যখন তারা এর বিপরীত করবে এবং বিলম্বে ইফতার করবে, তখন তাদের কল্যাণ চলে যাওয়ার কারণ হবে। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতের মাঝে যে সুন্নাত রেখে গেছেন এবং তাদেরকে যা সংরক্ষণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন তারা সেই সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরা ছেড়ে দিয়েছে।

🔘হাদীস: আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাহরী খেলাম, এরপর তিনি সালাতে দাঁড়ালেন। আনাস রহ. বলেন, আমি যায়েদকে জিজ্ঞেস করলাম, সাহরী ও সালাতের আযানের মধ্যে কত সময়ের ব্যবধান ছিলো? তিনি বলেন, পঞ্চাশ আয়াত তিলাওয়াত করার পরিমাণ সময়।

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু যায়েদ ইবন সাবিত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাহরী খেলাম, এরপর তিনি সালাতে দাঁড়ালেন। আনাস বলেন, আমি যায়েদকে জিজ্ঞেস করলাম, সাহরী ও সালাতের আযানের মধ্যে কত সময়ের ব্যবধান ছিলো? তিনি বলেন, পঞ্চাশ আয়াত তিলাওয়াত করার পরিমাণ সময়।

[সুনান ইবনু মাজাহ: ১/১৬৯৪; সহীহুল বুখারী: ৫৭৫, ১৯২১, মুসলিম: ১০৯৭, তিরমিযী: ৭০৩, নাসায়ী:২১৫৫, ২১৫৬, আহমাদ: ২১০৮৫, দারেমী: ১৬৯৫

তাহকীক আলবানীঃ সহীহ]

🔳ব্যাখ্যা:

যায়েদ ইবন সাবিত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু জানাচ্ছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহরী খেয়ে ফজরের সালাতে দাঁড়ালেন। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু তখন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞেস করলেন, সালাতের ইকামত ও সাহরীর মধ্যে কত সময়ের ব্যবধান ছিলো? তিনি বলেন, পঞ্চাশ আয়াত তিলাওয়াত করা পরিমাণ। বাহ্যিকভাবে বুঝা যায়, এ পরিমাণটি ছিল মধ্যম ধরণের আয়াতের ওপর নির্ভর করে, যা অতি দীর্ঘ যেমন সূরা আল-বাকারার শেষের ও সূরা আল-মায়েদার প্রথম আয়াতগুলোর মত ছিলো না, আবার অতি ছোট যেমন সূরা আশ-শু‘আরা, সূরা আস-সাফফাত ও সূরা আল-ওয়াকি‘আর আয়াতগুলোর মতো ছিলো না।

🔘হাদীস: তোমরা সাহরী খাও; কেননা সাহরীতে রয়েছে বরকত।

🔘আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা সাহরী গ্রহণ করো; কেননা সাহরীতে রয়েছে বরকত।”

[সহীহুল বুখারী: ১৯২৩, মুসলিম ১০৯৫, তিরমিযী: ৭০৮, নাসায়ী: ২১৪৬, আহমাদ: ১১৫৩৯, ১২৮৩৩, ১২৯৭৭, ১৩১৩৯, ১৩২৯৩, ১৩৫৮১, দারেমী: ১৬৯৬, বায়হাকী: ৩/৩।] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

🔳ব্যাখ্যা:

নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহরী খেতে নির্দেশ দিয়েছেন, রাতের শেষাংশে সাওম পালনের প্রস্তুতি হিসেবে খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করাকে সাহরী বলা হয়। তিনি সাহরী গ্রহণে আল্লাহর তা‘আলার হিকমত উল্লেখ করে বলেন যে, এতে রয়েছে বরকত। আর বরকত দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণকে শামিল করে। সাহরীর বরকতের মধ্যে রয়েছে, দিনের বেলায় আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য পালনে সাহরী সাহায্য করে। সাহরীর আরেকটি বরকত হলো, সাওম পালনকারী সাহরী খেলে পুনরায় সাওম পালন করতে বিরক্ত হয় না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি সাহরী খায় না তার ওপর পুনরায় সাওম পালন করা কষ্টকর হয়। সাহরীর আরেকটি বরকত হলো, এতে রয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করার সাওয়াব এবং আহলে কিতাব তথা ইয়াহূদী-নাসারাদের বিরোধিতা। সাহরীর আরেকটি বরকত হলো, মানুষ যখন সাহরীর জন্য ঘুম থেকে জাগ্রত হয় তখন সে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতে পারে,অভাবীদেরকে সাহায্য করতে পারে, যাদেরকে সে অভাবী বলে জানে এবং কখনো কুরআনের কিছু অংশ তিলাওয়াত করতে পারে। সাহরীর আরেকটি বরকত হলো, এটি একটি ইবাদাত। ব্যক্তি যখন আল্লাহর আনুগত্য ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণের ক্ষেত্রে সাহরীকে সহায়ক হিসেবে গ্রহণ করে তখন তা ইবাদাত হিসেবে গণ্য হয়। আল্লাহর শরী‘আতে রয়েছে অসংখ্য হিকমত ও রহস্য। সাহরীর সবচেয়ে বড় উপকার হলো ফজরের সালাতের জন্য জাগ্রত হওয়া। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলম্বে সাহরী খেতে নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে সে সাহরী গ্রহণ করে ঘুমিয়ে না পড়ে। ফলে তার ফজরের সালাত ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। যে ব্যক্তি সাহরী গ্রহণ করে না তার জন্য এসব সুযোগ থাকে না। বাস্তবতার নিরিখে তাই দেখা যায়। সাহরী গ্রহণের কারণে রামাদান মাসে ফজরের জামা‘আতে মুসল্লীর সংখ্যা অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি থাকে। [ তাইসীরুল ‘আল্লাম, পৃষ্ঠা 317; তান্বীহুল আফহাম (৩/৪১৭); তা’সীসুল আহকাম (৩/২১৭)]

🔘হাদীস: মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথীদের মধ্যে দু’জন সাথীদের কল্যাণের ব্যাপারে আদৌ ত্রুটি করেন না।

আবূ আত্বিয়্যাহ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ও মাসরূক আয়েশা রাদিয়াল্লাহ আনহার নিকট উপস্থিত হলাম। মাসরুক তাঁকে বললেন, ‘মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথীদের মধ্যে দু’জন সাথী কল্যাণের ব্যাপারে আদৌ ত্রুটি করেন না। তাঁদের একজন মাগরিব ও ইফতার দ্রুত সম্পাদন করেন এবং অপরজন মাগরিব ও ইফতার দেরীতে সম্পাদন করেন।’ এ কথা শুনে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কে মাগরিব ও ইফতার দ্রুত করেন?’ তিনি বললেন, ‘আব্দুল্লাহ—অর্থাৎ ইবন মাসঊদ—তিনি বললেন, ‘আল্লাহর রসূল এরূপই করতেন।’

[সুনান ইবনু মাজাহ:১২৪২], মুসলিম: ১০৯৯, তিরমিযী: ৭০২, নাসায়ী: ২১৫৮, ২১৫৯-২১৬১, আবূ দাউদ: ২৩৫৪, আহমাদ: ২৩৬৯২, ২৪৮৭১)]

🔳ব্যাখ্যা:

আবূ আত্বিয়্যাহ ও মাসরূক আয়েশা রাদিয়াল্লাহ আনহাকে‘মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথীদের মধ্যে দু’জন সাথীর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেন। তাদের একজন মাগরিব ও ইফতার দেরিতে করেন এবং অপরজন মাগরিব ও ইফতার তাড়াতাড়ি সম্পাদন করেন।’ তাদের দুইজনের মধ্যে কে সঠিক পথের ওপর আছে? এ কথা শুনে আয়েশা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কে মাগরিব ও ইফতার তাড়াতাড়ি করেন?’ তারা বললেন, ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু।’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপই করতেন।’ অর্থাৎ মাগরিব ও ইফতার তাড়াতাড়ি সম্পাদন করেন।’ এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কর্মগত সুন্নাত। এতে প্রমাণিত হয়, যে উত্তম হলো ইফতার দ্রুত করা।

🔘হাদীস: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত পড়ার আগে কতিপয় টাটকা পাকা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন।

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত পড়ার আগে কতিপয় টাটকা পাকা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। যদি টাটকা পাকা খেজুর না পেতেন, তাহলে শুকনো কয়েকটি খেজুর যোগে ইফতার করতেন। যদি শুকনো খেজুরও না হত, তাহলে কয়েক ঢোক পানি পান করতেন।’ 

[সুনান ইবনু মাজাহ:১২৪৭, (আবূ দাউদ, তিরমিযী হাসান) (আবূ দাউদ ২৩৫৬, তিরমিযী ৬৯৪, আহমাদ ১২২৬৫)]

ইমাম নাওয়াবী শিরোনামায় দু'আর কথা উল্লেখ করেছেন, কিন্তু তার হাদীসটি উল্লেখ করেননি। হাদীসটি নিম্নরূপ:-

ইবনে উমার (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ইফতার করতেন, তখন এই দু‘আ বলতেন, “যাহাবায যামা-উ অবতাল্লাতিল উরুক্বু অষাবাতাল আজরু ইন শা-আল্লাহ

অর্থাৎ, পিপাসা দূরীভূত হল, শিরা-উপশিরা সতেজ হল এবং ইন শা আল্লাহ সওয়াব সাব্যস্ত হল। (আবূ দাউদ)]

🔳ব্যাখ্যা:

এ হাদীসটিতে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু সংবাদ দেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সাওম পালনকারী হতেন তখন মাগরিবের সালাতের পূর্বে কতিপয় টাটকা পাকা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। যদি টাটকা পাকা খেজুর না পেতেন, তাহলে শুকনো কয়েকটি খেজুর যোগে ইফতার করতেন। যদি শুকনো খেজুরও না হত, তাহলে কয়েক ঢোক পানি পান করতেন। খেজুর বা পানি দিয়ে ইফতার করা স্বাস্থ্য সম্মত। কারণ, সায়িমের পেট খালি থাকার কারণে প্রথমে চর্বি জাতীয় খাবার দ্বারা আরম্ভ করবে না। যাতে তার কোন ক্ষতি না হয়

(ইসলামিক বিশুদ্ধ শুধু বই পেতে📚 এখানে পাবেন🎶প্রচুর অডিও সিরিজ🎶100 এর বেশী শায়খ ভিত্তিক অডিও 90 এর উপর 🎶বিষয় ভিত্তিক অডিও🌎অডিও কুরআন এবং অনলাইনে অডিও শুনুন🎶এছাড়াও বিষয় ভিত্তিক ভিডিও,♂সহীহ-সুন্নাহ-ভিত্তিক ইউটিউব চ্যানেল,ইসলামিক পত্রিকা 📚 and অনেক জানা-অজানা-আর্টিকল 📚 বিষয় ভিত্তিক সিরিজ আকারে http://islamicebookandpic.in/ ইসলামিক গালারি 👇বিশেষ দ্রস্টব্যঃ-👇 ওয়েবসাইট sarolpoth.blogspot.com/ ইসলামিক সমস্থ প্রগ্রাম একসাথে পেতে http://salafimp3web.blogspot.com/👉 অডিও সমাহার👈 👉 https://salafi-pdfbooks.blogspot.com/ সমস্ত ইসলামিক বই👆

Post a Comment

0 Comments