🔶জিহাদ বিষয়ক হাদীস
🔶●●আবু হুরায়রা(রা) হতে বর্ণিত,
তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জিহাদ না
করে বা জিহাদের কামনা পোষণ না করে মারা যায় সে মুনাফিক্বী বা কপটতা অংশ বিশেষের
সঙ্গে যুক্ত হয়ে মারা যাবে। -[মুসলিমঃ ১৯১০; নাসায়ীঃ ৩০৯৭; আবু দাউদঃ ২৫০২]
🔶●●আনাস(রা) হতে বর্ণিত,
নাবী(সা) বলেছেনঃ তোমাদের মাল, জান ও কথার দ্বারা মুশরিকদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাতে
থাকবে। -[নাসায়ীঃ ৩১৯২; আবু দাউদঃ ২৫০৪]
🔶●●আয়িশা(রা) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ
(সা) এর কাছে জিহাদ করার অনুমতি চাইলাম। তিনি (রাসূলুল্লাহ সাঃ) বললেনঃ তোমাদের
জিহাদ হচ্ছে হজ্জ্ব। অপর একটি বর্ণনায় রয়েছে, নাবী (সা) কে
তাঁর স্ত্রীগণ জিহাদ সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন- তখন তিনি বললেনঃ (তোমাদের জন্য)
হজ্জ্বই হচ্ছে জিহাদ। -[বুখারীঃ
১৫২০, ২৮৭৫; মুসলিমঃ ১৯৬০]
🔶●●আব্দুল্লাহ ইবনু উমার(রা) হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী(সা)
এর নিকট জিহাদে যাবার অনুমতি প্রার্থনা করল। তখন তিনি বললেন, তোমার পিতামাতা জীবিত আছে কি ? সে বলল, হ্যাঁ। নাবী (সা)
বললেন,
তবে তাঁদের খিদমতের চেষ্টা কর। -[বুখারীঃ ৫৯৭২; মুসলিমঃ ১৯৬০]
🔶●●জারীর(রা) হতে বর্ণিত; তিনি বলেনঃ
রাসূলুল্লাহ(সা) বলেছেনঃ আমি ঐসব মুসলিমের উপর অসন্তুষ্ট ও
রূষ্ট যারা মুশরিকদের মধ্যে (তাদের হয়ে) অবস্থান করে। -[আবু দাউদঃ ২৬৪৫; তিরমিযীঃ ১৬০৪]
🔶●●ইবনু আব্বাস(রা) থেকে বর্ণিত:
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা)
বলেছেনঃ মক্কা বিজয়ের পর আর হিজরতের প্রয়োজন নেই । এখন কেবল জিহাদ ও নিয়্যাত
(জিহাদের জন্য মানসিক প্রস্তুতি) রয়েছে । (বুখারী, মুসলিমে আরো রয়েছে যখনই তোমাদের বের হবার আহ্বান জানানো হবে তখনই তোমরা বেড়িয়ে
পড়বে)। -[বুখারীঃ ১৩৪৯, ১৫৮৭, ১৮৩৩; মুসলিমঃ ১৩৫৩; তিরমিযীঃ ১৫৯০]
🔶●●আবু মূসা(রা) হতে বর্ণিত:
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা)
বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর কালিমা সুউচ্চ রাখার উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করল, সে-ই আল্লাহর পথে জিহাদ করল। -[বুখারীঃ ১২৩, ৩১২৬; মুসলিমঃ ১৯০৪; ইবনু মাজাহঃ ২৭৮৩; তিরমিযীঃ ১৬৪৬]
🔶●●আব্দুল্লাহ ইবনু সা'দ(রা) হতে বর্ণিত:
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(সা)
বলেছেনঃ হিজরত বন্ধ হবে না যতক্ষণ শত্রুর সাথে সংগ্রাম চলতে থাকব। -[নাসায়ীঃ
৪১৭২; আহমাদঃ
২১৮১৯; বুলুগুল
মারামঃ ১২৬৭]
[আব্দুল্লাহ বিন সা'দী(রা) থেকে বর্ণিত:
তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ(সা) এর কাছে একটি প্রতিনিধিদলের
সাথে গেলাম। আমাদের প্রত্যেকই কোন প্রয়োজন চাচ্ছিল। আর আমি রাসূলুল্লাহ(সা) এর
কাছে সর্বশেষ প্রবেশ করলাম। তিনি বললেন, তোমার কি
প্রয়োজন ?
আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সা), নিশ্চয় আমি আমার পরিবারকে ছেড়ে চলে এসেছি। আর তারা বলে যে
হিজরত নাকি শেষ হয়ে গেছে । অতঃপর তিনি হাদীসটি উল্লেখ করলেন।]
🔶●●নাফি(রা)হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ
রাসূলুল্লাহ(সা) বনী মুস্তালিক গোত্রের উপর হঠাৎ
(শত্রুপক্ষকে কোন প্রকার ঘোষণা ছাড়া) আক্রমণ করেছিলেন। তখন ঐ গোত্রের লোকেরা
উদাসীন ছিলো। তাদের যুদ্ধরতদের হত্যা করলেন ও সন্তানদেরকে বন্দী করলেন । নাফি(রা)
বলেছেন এ সংবাদ আমাকে বিশিষ্ট সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রা) বলেছেন। -[বুখারীঃ ২৫৪১; মুসলিমঃ ১৭৩০; আবু দাউদঃ ২৬৩৩]
🔶●●সুলাইমান ইবনু বুরাইদাহ(রা) হতে বর্ণিত:
তিনি তার পিতা বুরাইদাহ(রা) হতে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ(সা) যখন কোন ছোট বা বড় সৈন্যদলের জন্য কাউকে
নেতা নির্বাচন করে দিতেন তখন বিশেষভাবে তাকে আল্লাহকে ভয় করার, মুজাহিদ মুসলিমদের সাথে কল্যাণ করার জন্য উপদেশ দিতেন।
তারপর বলতেন,
আল্লাহর নামে আল্লাহর পথে যুদ্ধ কর, যে আল্লাহর সাথে কুফরী করেছে তার সাথে যুদ্ধ কর, যুদ্ধ করবে, গণিমতের মালে
খিয়ানত করবে না,
প্রতারণা করবে না, অঙ্গহানী
করবে না,
বালকদের হত্যা করবে না, যখন তুমি
মুশরিক শত্রুদের সাথে মুকাবিলা করবে তখন তাদেরকে তিনটি বিষয়ে দা'ওয়াত দিবে, তার যে কোন একটি
ক্ববুল করে নিলে তুমি তা মেনে নিবে এবং তাদের উপর হাত উঠাবে না।
(১) তাদেরকে ইসলাম
ক্ববুল করার দাওয়াত দিবে। যদি তারা তা ক্ববুল করে তুমি তাদের এ স্বীকৃতি মেনে
নিবেে। তারপর তাদেরকে মুহাজিরদের কাছে হিজরত করে আসার জন্য দাওয়াত দিবে, তারা সাধারণ গ্রাম্য মুসলিমদের সমশ্রেণীভুক্ত হয়ে থাকবে আর
গণিমত ও ফাই (বিনা যুদ্ধে শত্রুপক্ষের যে মাল হস্তগত হয়) এর মালে তাদের জন্য কোন
অংশ হবে না,
তবে যদি তারা মুসলিমদের সাথে জিহাদে অংশগ্রহণ করে (মাত্র
তখন পাবে)।
(২) যদি তারা ইসলাম ক্ববুল করতে রাজি না হয়
তবে তাদের কাছে জিযইয়া (এক প্রকার ট্যাক্স) দাবি করবে । যদি তারা স্বীকার করে তবে
তাদের এ স্বীকৃতি মেনে নিবে (আর তাদের দিকে আক্রমণের হাত বাড়াবে না)। আর যদি তারা
জিযইয়া কর দিতে অস্বীকার করে তবে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করবে ও তাদের সাথে
যুদ্ধ করবে।
(৩)আর যখন কোন দুর্গবাসীদের অবরোধ করবে তখন
যদি তারা আল্লাহ ও তার রাসূলের জিম্মায় আসার কোন প্রস্তাব তোমার কাছে পেশ করে, তবে তুমি তা স্বীকার করবে না। বরং তুমি তোমার
নিজের জিম্মায় তাদের নিতে পারবে । কেননা তোমাদের জিম্মা নষ্ট করা অনেক সহজ ব্যাপার, আল্লাহর জিম্মাকে নষ্ট করার চেয়ে।
আর
যদি তারা আল্লাহর ফয়সালায় উপনীত হওয়ার প্রস্তাব দেয় তবে তুমি তা করবে না । বরং
তুমি নিজের ফয়সালার অধীনে তাদেরকে আশ্রয় দিবে। কেননা তুমি অবগত নও যে, তুমি আল্লাহর ফয়সালা তাদের উপর সঠিকভাবে করতে
পারবে কি, পারবে না। -[মুসলিমঃ ১৭৩১; তিরমিযীঃ ১৪০৮; আবু দাউদঃ ২৬১২; বুলুগুল মারামঃ ১২৬৯]
🔶●●মু'আয ইবনু জাবাল(রা) হতে বর্ণিত:
তিনি বলেন, নাবী(সা) আমাকে
ইয়ামান পাঠিয়েছিলেন । আর প্রত্যেক বয়ঃপ্রাপ্ত জীম্মী প্রজার মাথাপিছু (বার্ষিক) কর
একটি দিনার বা তার সমমূল্যের মু'আফিরী কাপড়
(ইয়ামানের তৈরীকৃত পোশাক) আদায়ের আদেশ দিয়েছিলেন। -[আবু দাউদঃ ৩০৩৮, ১৫৭৬; তিরমিযীঃ ৬২৩]
🔶●●আব্দুল্লাহ ইবনু কা'ব ইবনু মালিক(রা) হতে বর্ণিত:
নাবী(সা) যখনই
কোথাও যুদ্ধে যাবার ইচ্ছা করতেন, তখন তিনি অন্য দিকে
দৃষ্টি ফিরিয়ে (কৌশলে) গোপন রাখতেন। -[বুখারীঃ ২৫৭৮, ২৯৪৮; মুসলিমঃ ২৭৬৯; তিরমিযীঃ ৩১০২]
🔶●●মা'কিল(রা) হতে বর্ণিত:
নু'মান ইবনু মুক্বারিন(রা) বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ(সা) কে
দেখেছি তখন যিনি দিনের প্রথমাংশে যুদ্ধ না করতেন তখন সূর্য পশ্চিমাকাশে যাওয়ার পরে
(স্নিগ্ধ) হাওয়া চললে এবং আল্লাহর সাহায্য অবতরণ হলে যুদ্ধ করতেন।(হাদীসটির মূল
বুখারীতে রয়েছে) -[বুখারীঃ ৭৫০০; তিরমিযীঃ ১৬১২]
🔶●●ইবনু উমার(রা) হতে বর্ণিত:
নাবী(সা) কোন একটি স্ত্রীলোককে তার কোন যুদ্ধে নিহত দেখে
মেয়েদের ও বালকদের নিহত হওয়াতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। (বুখারী, মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় রয়েছে তিনি(সা) মহিলা ও বাচ্চাদের
হত্যা করতে নিষেধ করেছেন)। -[বুখারীঃ
৩০১৪, মুসলিমঃ
১৭৪৪; তিরমিযীঃ
১৫৬৯]
🔶●●সা'ব ইবনু জাসসামাহ(রা) হতে বর্ণিত: তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ(সা) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, মুসলিমদের রাত্রিকালীন আক্রমণে মুশরিকদের মহিলা ও শিশুরা
নিহত হয়,
তবে কী হবে ? আল্লাহর
রাসূল(সা) জবাবে বলেন,
তারাও তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।
-[বুখারীঃ ৩০১২; মুসলিমঃ ৭৫৪৫; তিরমিযীঃ ১৫১৭; ইবনু মাজাহঃ ২৮৩৯]
🔶●●আয়িশা(রা) হতে বর্ণিত:
এক (মুশরিক) লোক বদরের যুদ্ধের দিন নাবী (সা) এর সাথে
যাচ্ছিল,
তিনি ঐ লোকটাকে বলেনঃ তুমি ফিরে যাও, আমি কখনো (যুদ্ধে) মুশরিকের সাহায্য নেব না। -[মুসলিমঃ ১৮১৭; তিরমিযীঃ ১৫৫৮; আবু দাউদঃ ২৭৩২]
🔶●●আবু আইয়ুব আনসারী(রা) হতে বর্ণিত:
তিনি বলেনঃ ওয়ালা তুলুক.... (আয়াতটির অর্থ, তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিও না) আয়াতটি আনসার
সম্প্রদায় প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে। আয়াতটি ঐসব মুসলিমদের মনোভাবের প্রতিবাদে
অবতীর্ণ হয়েছিল যারা রোমক সৈন্যের উপর আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়ে শত্রুসৈন্যের মধ্যে প্রবেশকারী
মুজাহিদদের কাজকে অনুচিত কাজ বলে মন্তব্য করেছিলেন। (অর্থাৎ কুরআনের উপরোক্ত আয়াতে
যুদ্ধে মুসলিমদের উৎসাহী ও নির্ভিক হওয়ার জন্য জোড় তাগিদ করা হয়েছে এবং ধর্মীয়
সংগ্রামকে ধ্বংসের কারণ মনে করার ঘোর প্রতিবাদ করা হয়েছে) এবং যুদ্ধে অংশগ্রহণ না
করে ঘরে বসে থাকাকে ধ্বংসের কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। -[আব দাউদঃ ২৫১২; তিরমিযীঃ ২৯৭২, বুলুগুল মারামঃ ১২৭৭]
🔶●●উমার(রা) হতে বর্ণিত:
তিনি বলেন, বনূ নাযীরের সম্পদ
আল্লাহ তা'আলা তাঁর রাসূল(সা) কে ফায় হিসেবে দান করেছিলেন। এতে মুসলিমগণ অশ্ব
বা সাওয়ারী চালনা করেনি। এ কারণে নাবী(সা) এর জন্য নির্দিষ্ট ছিলো। এ সম্পদ থেকে নাবী(সা)
তার পরিবারকে এক বছরের খরচ দিয়ে দিতেন এবং বাকী সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের
প্রস্তুতির জন্য হাতিয়ার ও ঘোড়া ইত্যাদিতে ব্যয় করতেন।
-[বুখারীঃ ৩০৯৪, ৪০৩৪; মুসলিমঃ ১৭৫৭; তিরমিযীঃ ১৭১৯]
🔶●●উমার(রা) হতে বর্ণিত:
তিনি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছেনঃ অবশ্যই ইয়াহুদী ও
নাসারাদেরকে আরবের মাটি হতে বের করে দেব, আর কেবল
মুসলিমদেরকেই এখানে রেখে দেব। -[মুসলিমঃ
১৭৬৭; তিরমিযীঃ
১৬০৬]
🔶●● আব্দুল্লাহ ইবনু আমর(রা) হতে বর্ণিত:
নাবী (সা) বলেন, যে ব্যক্তি
কোন জিম্মীকে হত্যা করে,
সে জান্নাতের ঘ্রাণ পাবে না। যদিও জান্নাতের ঘ্রাণ চল্লিশ
বছরের দূরত্ব হতে পাওয়া যাবে। -[বুখারীঃ
৬৯১৪; নাসায়ীঃ
৪৭৫০; আহমাদঃ
৬৭০৬]
🔶●●আবু হুরায়রা(রা) হতে বর্ণিত:তিনি বলেনঃ
রাসূলুল্লাহ(সা) বলেছেনঃ উট, তীর,
ঘোড়া (যুদ্ধাস্ত্র চালানো) ছাড়া অন্য বস্তুতে প্রতিযোগিতা
নেই। -[আবু দাউদঃ ২৫৭৪; তিরমিযীঃ ১৭০০]
🔶●●উক্ববাহ ইবনু আমির(রা) হতে বর্ণিত:
তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে মিম্বরের উপরে ওয়া আ'ইদ্দুল্লাহুম' এ আয়াতটি
পড়তে শুনেছি,
তিনি এর ব্যাখ্যায় বলেছিলেন, তোমরা সজাগ হও শর নিক্ষেপেই শক্তি । সজাগ হও, শর নিক্ষেপেই শক্তি রয়েছে। সজাগ হও শর নিক্ষেপেই শক্তি রয়েছে। (অর্থাৎ তীর
নিক্ষেপে তখনকার দিনে বিশেষভাবে উৎসাহিত করেছেন। সমসাময়িক কালে যুদ্ধের জন্য
প্রয়োজন বলে যা সাব্যস্ত হবে সেটাকে আয়ত্ব করা মুজাহিদগণের কর্তব্য)। -[মুসলিমঃ ১৯৭১; আবু দাউদঃ ২৫৭৯; বুলুগুল মারামঃ ১৩১৮]
🔶●●আয়িয ইবনু আমর মুযানী (রা) হতে বর্ণিত:
নাবী (সা) বলেনঃ ইসলাম উঁচু থাকবে নীচু হবে না। -[দারকুতনীঃ ৩য় খন্ড, হা নং ৩১; বুলুগুল মারামঃ ১৩০৯]
🔶 আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে মারফু‘ হিসেবে বর্ণিত, “যে ব্যক্তি মারা গেল অথচ তার নফসকে জিহাদ সম্পর্কে উদ্বুদ্ধ
করে নি,
সে মুনাফিকীর একটি শাখার ওপর মারা গেল।” [সহীহ - এটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন।]
🔶 ব্যাখ্যা: 🔶
জিহাদ করতে সক্ষম প্রত্যেক ব্যক্তির যখন মৃত্যু চলে আসে, অথচ ইতোপূর্বে সে জিহাদ করে নি এবং তার অন্তরকে জিহাদ করার
ওপর উদ্বুদ্ধ করে নি,
তাহলে বুঝতে হবে তার মধ্যে কিছুটা নিফাকি বিদ্যমান আছে। আর
জিহাদের বাহ্যিক নিদর্শন হলো, যুদ্ধের অস্ত্র তৈরি
করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“যদি তারা বের হওয়ার ইচ্ছা করত, তাহলে তার জন্য তারা প্রস্তুতি গ্রহণ করত”। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৪৬] আর তাঁর বাণী: “সে মুনাফিকির একটি শাখার ওপর মারা
গেল।” অর্থাৎ নিফাকের ধরণসমূহের একটি ধরণের ওপর। অর্থাৎ যে এর ওপর মারা যাবে সে
মুনাফিক ও জিহাদ থেকে পিছে থাকা ব্যক্তিদের সাথে সাদৃশ্য রাখলো। আর যে ব্যক্তি
কোনো সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য রাখে সে তাদেরই দলভুক্ত। সুতরাং প্রত্যেক মুমিনের
ওপর ওয়াজিব হলো জিহাদের নিয়ত করা।
🔶 আবূ মূসা আল-আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে
জনৈক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল: যে লড়াই করে বীরত্বের জন্য, স্ব-পক্ষের মান রক্ষার জন্যে, এবং লোক দেখানোর জন্যে। তাদের কে আল্লাহর রাস্তায়? নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর বাণীকে বুলন্দ রাখার জন্য লড়াই করে সে-ই
আল্লাহর পথে।”[সহীহ - মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি (বুখারী ও
মুসলিম)।]
🔶🔶 ব্যাখ্যা:
এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সে
লোক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন যিনি দীনের শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে; কিন্তু তার যুদ্ধ করার উদ্দেশ্য হলো নিজের বীরত্ব প্রদর্শন
ও মানুষের সামনে এগিয়ে হওয়া। আবার আরেক লোক যুদ্ধ করে বংশ ও দেশের মর্যাদার জন্যে।
আবার তৃতীয়জন যুদ্ধ করে লোক দেখানোর জন্যে যে, লোকেরা তাকে
আল্লাহর পথের মুজাহিদ বলবে। ফলে সে তাদের প্রশংসা ও সম্মাান পাবে। তাহলে তাদের
তিনজন থেকে কে সত্যিকারে আল্লাহর পথে লড়াই করছে? তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রশ্নের উত্তরে সংক্ষিপ্তকারে
কিন্তু ব্যাপক অর্থবোধক শব্দে বললেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর বাণীকে বুলন্দ রাখার জন্য লড়াই করছে সে ব্যক্তিই আল্লাহর
পথে।” আর এ ছাড়া যারাই যুদ্ধ করুক তারা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করছে না। কেননা সে
অন্য কোন উদ্দেশ অর্জনের জন্য যুদ্ধ করছে। মানুষের আমলে ভালো ও মন্দ তার নিয়াত
অনুসারেই হয়ে থাকে। এ রীতি যাবতীয় আমলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সুতরাং নিয়াত অনুসারেই
ভালো বা মন্দ ফল হয়ে থাকে। এ ব্যাপারে অসংখ্য দলিল রয়েছে।
আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি কোন চুক্তিবদ্ধ মানুষকে হত্যা করে সে জান্নাতের
ঘ্রাণ পাবে না। অথচ তার ঘ্রাণ চল্লিশ বছর দূরের দূরত্ব থেকে পাওয়া যাবে।”
🔶🔶 ব্যাখ্যা:
🔶হাদীসটি থেকে প্রতিয়মান হয় যে, যে ব্যক্তি
কোন চুক্তিবদ্ধ মানুষকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে- চুক্তিবদ্ধ বলতে তাকে বুঝানো হয়েছে
যে কোন মুসলিম দেশে চুক্তিবদ্ধ হয়ে বা নিরাপত্তা নিয়ে প্রবেশ করে অথবা জিম্মী
কাফির,
তার জন্য জান্নাতে প্রবেশ করা সম্ভব হবে না। অথচ তার ঘ্রাণ
চল্লিশ বছর দূরের দূরত্ব থেকে পাওয়া যাবে। এতে প্রমাণিত হয়, সে তা থেকে দূরে হবে। এতে আরও প্রমাণিত হয় যে, ইসলাম চুক্তিবদ্ধ এবং জিম্মিদের নিষ্পাপ রক্তের হিফাযতের
ওপর কতটুক যত্নশীল। আর তাদের অন্যায়ভাবে হত্যা করা কবীরাহ গুনাহ।
🔶🔶ফায়দাসমূহ:
1)চুক্তিবদ্ধ কাউকে হত্যা করা হারাম। এটি কবীরাহ গুনাহের
একটি। কারণ,
হাদীসটির বাহ্যিক অর্থে জান্নাতে প্রবেশ করা হতে তাকে
বঞ্চিত করার ঘোষণা এসেছে।
2)হাদীসটির অন্যান্য বর্ণনায় এসেছে, “বিনা অপরাধে” ও “না হকভাবে”। বস্তুত হত্যার ক্ষেত্রে এ
ধরনের শর্ত যোগ করা শরী`আতের নিয়ম-নীতিতে স্বাভাবিক।
3)প্রতিশ্রুতি পূরণ করা ওয়াজিব।
4)জান্নাতের সুঘ্রাণ প্রমাণিত।
5)জান্নাতের সুঘ্রাণ অনেক দূর থেকেও পাওয়া যায়।
🔶🔶জিহাদের হুকুম ও প্রকারভেদ:
মূলঃ শায়খ মুহাম্মাদ সালিহ আল মুনাজ্জিদ
অনুবাদঃ মুহাম্মাদ মুশফিকুর রহমান মিনার
. 🔶প্রশ্নঃ- বর্তমান সময়ে শারিরীকভাবে সক্ষম সকল মানুষের জন্য কি জিহাদ ফরয হয়ে
গেছে?
.উত্তরঃ
সকল প্রশংসা আল্লাহর।
🔶প্রথমতঃ
জিহাদের বিভিন্ন প্রকার আছে। এর কিছু প্রকার আছে যা প্রতিটি
ব্যক্তির জন্য আলাদাভাবে ওয়াজিব বা জরুরী। আর কিছু প্রকার আছে যা পুরো জাতির জন্য
সামষ্টিকভাবে জরুরী – যদি কিছু মানুষ আদায় করে তাহলে অন্যরা দায়িত্ব থেকে মুক্ত
হয়। আর কিছু প্রকারের জিহাদ আছে যা মুস্তাহাব।
.জিহাদুন নাফস (নাফসের বিরুদ্ধে জিহাদ) এবং জিহাদুশ শাইত্বন
(শয়তানের বিরুদ্ধে জিহাদ) প্রতিটি ব্যক্তির জন্য ওয়াজিব। মুনাফিক এবং কাফিরদের
বিরুদ্ধে জিহাদ এবং জুলুম ও বিদআতের নেতৃত্বদানকারীদের বিরুদ্ধে জিহাদ পুরো জাতির
জন্য সামষ্টিকভাবে জরুরী। কোনো কোনো
পরিস্থিতিতে শারিরীক জিহাদ (অর্থাৎ লড়াই) সক্ষম সকল
ব্যক্তির জন্য ব্যক্তিগতভাবে ওয়াজিব হয়ে যেতে পারে। এই পরিস্থিতিগুলো নিম্নে
উল্লেখ করা হল।
🔶.ইবনুল কাইয়িম(র.) বলেছেন,
জিহাদ চার প্রকারের। জিহাদুন নাফস (নাফসের বিরুদ্ধে জিহাদ), জিহাদুশ শাইত্বন (শয়তানের বিরুদ্ধে জিহাদ), কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদ এবং মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ।
🔶 জিহাদুন নাফস (নাফসের বিরুদ্ধে জিহাদ) চার প্রকারের। যথাঃ
.১। হেদায়েত এবং সত্য দ্বীন (ইসলাম) শেখার জন্য জিহাদ বা
সংগ্রাম করা। কেননা এটি ব্যতিত ইহকাল ও পরকালে কেউ সুখ বা সাফল্য অর্জন করতে পারে
না। যদি এটি বাদ পড়ে,
তাহলে ইহকাল ও পরকালে তার আমল নষ্ট হয়ে যাবে এবং সে ধ্বংস
হয়ে যাবে।
২। যে ইলম অর্জন করা হয়েছে, সে অনুযায়ী আমলের জন্য সংগ্রাম করা। আমল ব্যতিত শুধুমাত্র ইলম অর্জন যদিও কোনো
ক্ষতির কারণ নয়;
কিন্তু তা কোনো উপকারও করে না।
৩। মানুষকে ইসলামের দিকে আহ্বানের জন্য সংগ্রাম করা। যারা
ইসলাম সম্পর্কে জানে না,
তাদেরকে জানানো। তা না হলে একজন ব্যক্তি আল্লাহ্ যে
হেফায়েত ও প্রমাণ নাজিল করেছেন, তা গোপনকারী হিসাবে
গণ্য হবেন। এবং তার ইলম তাকে আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারবে না।
৪। মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকার পথে মানুষের অপমান ও বিভিন্ন
কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সংগ্রাম করা। এ সমস্ত কিছুকে আল্লাহর জন্য সহ্য
করা।
.যদি কেউ এই চারটি প্রকারের সবগুলো পূর্ণ করে, তাহলে সে একজন ‘রব্বানী’ {দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গ যাঁরা ইলম অনুযায়ী আমল করেন এবং অন্যের
নিকটেও প্রচার করেন;
দেখুন সুরা আলি ইমরান ৩ : ৭৯} হিসাবে গণ্য হবে।
সালাফগণ এ ব্যাপারে একমত যে, কোনো আলেম ‘রব্বানী’ হিসাবে গণ্য হবেন না যদি না তিনি হক জানেন, সে অনুযায়ী আমল করেন এবং অন্যকে তা শিক্ষা দেন। যাঁর ইলম
আছে,
তা শিক্ষা দেন এবং সে অনুযায়ী আমল করেন – আসমানী রাজ্যে
তিনি মহান বলে গণ্য হবেন।
🔶শয়তানের বিরুদ্ধে জিহাদ ২ প্রকারের।
.১। ঈমানকে নাড়িয়ে দিতে পারে এমন সংশয় ও সন্দেহকে প্রতিরোধ
করা।
২। নিজ খারাপ প্রবৃত্তি ও কামনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা।
.এখানে প্রথম জিহাদটি হয় ইয়াকিন বা দৃঢ় বিশ্বাসের দ্বারা। আর
পরেরটি হয় ধৈর্যের দ্বারা। আল্লাহ্ বলেছেন,
وَجَعَلنا
مِنهُم أَئِمَّةً يَهدونَ بِأَمرِنا لَمّا صَبَروا ۖ وَكانوا بِآياتِنا يوقِنونَ
অর্থঃ আর আমি তাদের মধ্য হতে নেতাদেরকে মনোনিত করেছিলাম
যারা আমার নির্দেশ অনুসারে সৎপথ প্রদর্শন করত, যখন তারা
ধৈর্য ধারণ করতো। আর তারা ছিল আমার নিদর্শনাবলীতে দৃঢ় বিশ্বাসী।(আল কুরআন, সাজদাহ ৩২ : ২৪)
.আল্লাহ্ আমাদেরকে জানাচ্ছেন যে, নের্তৃত্ব অর্জিত হয় ধৈর্য এবং দৃঢ় বিশ্বাসের দ্বারা। ধৈর্য
কামনাকে দমন করে,
দৃঢ় বিশ্বাস সংশয়কে দমন করে।
🔶কাফির এবং মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ চার প্রকার।
যথাঃ অন্তর দ্বারা, জবানের
দ্বারা,
সম্পদ দ্বারা এবং জীবনের দ্বারা। কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদ
শারিরীকভাবে লড়াইয়ের সাথে অধিক সম্পৃক্ত, অপরদিকে
মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ ভাষা ও চিন্তার প্রয়োগের সাথে অধিক সম্পৃক্ত।
🔶জুলুম ও বিদআতের নেতৃত্বদানকারীদের বিরুদ্ধে জিহাদ তিন প্রকারের। যথাঃ
.১। হাতের দ্বারা (অর্থাৎ শারিরীক জিহাদ বা লড়াই), যদি কেউ সক্ষম হয়। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে জিহ্বা দ্বারা (অর্থাৎ কথা বা ভাষার দ্বারা)। আর যদি
তা-ও সম্ভব না হয় তাহলে অন্তর দ্বারা (অর্থাৎ মন্দকে ঘৃণা করা এবং তাকে ভুল মনে
করা)।
🔶এই হচ্ছে ১৩ প্রকারের জিহাদ।.
مَنْ
مَاتَ وَلَمْ يَغْزُ، وَلَمْ يُحَدِّثْ نَفْسَهُ بِغَزْوٍ، مَاتَ عَلَى شُعْبَةِ
نِفَاقٍ
যে ব্যাক্তি জিহাদ না করে মারা গেল বা তার মনে যুদ্ধের
বাসনা জাগলো না,
তার মৃত্যু হলো নিফাকের একটি অংশ (জিহাদ বিমুখ হওয়া)-এর
উপর। (সহীহ মুসলিম ১৯১০)[যাদুল মাআদ ৩/৯-১১]
🔶.শায়খ আব্দুল আজিজ ইবন বাজ(র.) বলেছেন,
“জিহাদ বিভিন্ন প্রকারের হতে পারেঃ জীবন দ্বারা, সম্পদ দ্বারা, দুআ করার
দ্বারা,
শিক্ষা ও দিকনির্দেশনা প্রদানের দ্বারা, যে কোনো উপায়ে উত্তম কাজে সহায়তা করার দ্বারা। জিহাদের সব
থেকে বড় ধরন হচ্ছে আপন সত্ত্বা দ্বারা জিহাদ (অর্থাৎ নিজে গমন করা ও লড়াই করা)।
এরপরে রয়েছে সম্পদ দ্বারা জিহাদ করা, বক্তব্যের
দ্বারা জিহাদ করা এবং অন্যদেরকে দিকনির্দেশনা দেয়া। কিন্তু আপন সত্ত্বা দ্বারা
জিহাদ হচ্ছে এর মধ্যে জিহাদের সর্বোচ্চ ধরন।”[ফাতাওয়া
শায়খ ইবন বাজ ৭/৩৩৪, ৩৩৫]
🔶দ্বিতীয়তঃ
মুসলিম উম্মাহ কী অবস্থায় রয়েছে এর উপর ভিত্তি করে কাফিরদের
বিরুদ্ধে শারিরীকভাবে জিহাদ (বা লড়াই) এর বিভিন্ন পর্যায় রয়েছে। ইবনুল কাইয়িম(র.)
বলেছেন,
“প্রথম যে জিনিসটি মহামহিম প্রভু তাঁর[মুহাম্মাদ(ﷺ)] উপর নাজিল করেছিলেন তা হলঃ তাঁর প্রভুর নামে পাঠ করা যিনি
সৃষ্টি করেছেন [اقرَأ بِاسمِ رَبِّكَ الَّذي
خَلَقَ]। এটিই ছিল তাঁর
নবুয়তে সূচনা,
যেখানে আল্লাহ্ তাঁকে পাঠ করতে বলেছিলেন কিন্তু তখনও
প্রচার করার নির্দেশ দেননি। এরপরে তিনি নাজিল করলেন,
يا
أَيُّهَا المُدَّثِّرُ
قُم
فَأَنذِر
অর্থঃ হে বস্ত্রাবৃত! ওঠো, সতর্কবাণী প্রচার করো।(আল কুরআন, মুদ্দাসসির ৭৪ :
১-২)
.সুতরাং তিনি নবী হলেন একটি শব্দ اقرَأ এর দ্বারা এবং রাসুল হলেন এই শব্দগুলো দ্বারাঃ يا
أَيُّهَا المُدَّثِّرُ।
এরপর আল্লাহ্ তাঁকে তাঁর কাছের আত্মীয়দের নিকট সতর্কবাণী
প্রচারের নির্দেশ দেন। এরপর তাঁর গোত্রকে, এরপর সকল
আরবকে এবং এরপর সমগ্র মানবজাতির প্রতি সতর্কবাণী প্রচারের নির্দেশ দেন। নবুয়তের
শুরুর সময় থেকে দশ বছর ধরে তিনি ক্রমাগত তাদের নিকট প্রচারকাজ চালিয়ে যান। এ সময়
তিনি তাদের সাথে কোনো যুদ্ধ করেননি, জিজিয়াও
চাননি। তাঁকে এ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছিলো। ধৈর্য ও সহনশীলতা অবলম্বন করতে বলা
হয়েছিলো।
অতঃপর তাঁকে হিজরত করার অনুমতি দেয়া হয়। এবং যুদ্ধ করার
অনুমতি দেয়া হয়। ”
এরপর তাঁকে আদেশ দেয়া হয় তাদের সঙ্গে লড়তে যারা তাঁর সঙ্গে
লড়ে। এবং তাদের সাথে লড়াই হতে বিরত থাকতে যারা তাঁর সঙ্গে লড়াই করে না এবং এমন
কিছু থেকে বিরত থাকে।
.এরপর আল্লাহ তাঁকে আদেশ দেন মুশরিকদের সঙ্গে লড়তে যাতে
দ্বীন শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য হয়ে যায়।
তাঁকে জিহাদের আদেশ দেবার পর থেকে কাফিরদেরকে তিনটি
শ্রেণীতে নির্দিষ্ট করা যায়। চুক্তিবদ্ধ, যুদ্ধরত এবং
আহলুয যিম্মাহ (ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাসকারী অমুসলিম)।[যাদুল মাআদ ৩/১৫৯]
🔶▪তৃতীয়তঃ
কাফিরদের বিরুদ্ধে হাত দ্বারা (শারিরীক) জিহাদের বিধান
হচ্ছে,
তা ফরযে কিফায়াহ।
.ইবন কুদামাহ(র.) বলেছেন,
“জিহাদ হচ্ছে ফরযে কিফায়াহ। যদি কিছু ব্যক্তি তা আদায় করে
তাহলে অন্যরা দায়িত্ব থেকে মুক্ত হয়।”
ফরযে কিফায়াহ মানে হচ্ছে, যদি যথেষ্ট সংখ্যক ব্যক্তি এটি আদায় না করে তাহলে সবাই গুনাহগার হবে। কিন্তু
যদি যথেষ্ট সংখ্যক ব্যক্তি তা আদায় করে, তাহলে বাকিরা
দায় থেকে মুক্ত হবে। প্রথমে এই বক্তব্য সবার জন্য, যেভাবে ফরযে আইন হয়। কিন্তু ফরযে কিফায়াহর ক্ষেত্রে, যদি যথেষ্ট পরিমাণ লোক এটি পালনের জন্য পদক্ষেপ নেয়, তাহলে অন্যরা দায়িত্ব থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে যায়। যা ফরযে
আইনের ক্ষেত্রে হয় না। ফরযের আইনের ক্ষেত্রে একজন পালন করলে অন্য কারো দায়মুক্তি
হয় না। জিহাদ ফরযে কিফায়াহ,
আমভাবে এটাই আহলুল ইলমদের অভিমত। ”
[আল মুগনী ৯/১৬৩]
🔶শায়খ আব্দুল আজিজ ইবন বাজ(র.) বলেছেন,
“আমরা ইতিমধ্যেই একাধিকবার আলোচনা করেছি যে, জিহাদ ফরযে কিফায়াহ, ফরযে আইন নয়।
সকল মুসলিমেরই কর্তব্য হচ্ছে অন্য ভাইদের সাহায্যে নিজ সত্ত্বা (দৈহিকভাবে যোগ
দিয়ে),
অর্থ, অস্ত্র, দাওয়াহ এবং উপদেশ দ্বারা জিহাদ করা। যদি তাদের মধ্যে যথেষ্ট
সংখ্যক ব্যক্তি (লড়াই করতে) বের হয়, তাহলে অন্যরা
পাপ থেকে মুক্ত হয়। আর যদি তাদের সকলেই এ থেকে বিরত থাকে, তাহলে সবাই গুনাহগার হয়।
.মামলাকাহ (সৌদি আরব), আফ্রিকা, মাগরিব (উত্তর আফ্রিকা) এবং এর কাছের ও দূরের মুসলিমদের
তাদের সাধ্যানুযায়ী শক্তি ব্যয় করা কর্তব্য (যদি এসব জায়গায় জিহাদ হয়)। যদি এর
একটি,
দুইটি, তিনটি অথবা এর চেয়ে
বেশি দেশ তাদের দায়িত্ব পালন করে, তাহলে অন্যরা
দায়িত্ব থেকে মুক্ত হয়।
তারা সাহায্য ও সমর্থনের হকদার। তাদেরকে তাদের শত্রুর
বিরুদ্ধে সাহায্য করা অপরিহার্য কেননা তারা মজলুম। আল্লাহ সকল মুসলিমকে জিহাদের
নির্দেশ দিয়েছেন। তারা ততক্ষন পর্যন্ত আল্লাহর শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়বে যতক্ষন না
তাদের ভাইয়েরা বিজয়ী হয়। যদি তারা এ থেকে বিরত হয় তবে তারা পাপী বলে গণ্য হবে। আর
যদি যথেষ্ট সংখ্যক ব্যক্তি এর জন্য দাঁড়িয়ে যায় – তাহলে বাকিরা পাপ থেকে মুক্ত হয়।[ফাতাওয়া শায়খ ইবন বাজ ৭/৩৩৫]
🔶▪চতুর্থতঃ
কাফিরদের বিরুদ্ধে দৈহিক জিহাদ চারটি ক্ষেত্রে ওয়াজিব বা
জরুরী হয়ে যায়,
.১। যখন মুসলিমরা জিহাদের পরিস্থিতিতে উপনিত হয়
২। যখন শত্রুরা কোনো মুসলিম ভুখণ্ডে আক্রমণ করে
৩। যখন ইমাম (শাসক) জনগণকে (জিহাদের জন্য) একত্রিত করেন, তাদেরকে অবশ্যই সাড়া দিতে হবে
৪। যখন কোনো ব্যক্তির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় এবং তিনি ব্যতিত
অন্য কেউ সেই কাজ করতে সক্ষম না হন
🔶শায়খ ইবন উসাইমিন(র.) বলেছেন,
জিহাদ জরুরী হয়ে যাবে এবং ফরযে আইন হয়ে যাবে যদি কোনো
ব্যক্তি এমন স্থানে উপস্থিত থাকে যেখানে কিতাল বা লড়াই চলছে। এটি প্রথম পরিস্থিতি
যার জন্য জিহাদ ব্যক্তিগতভাবে জরুরী হয়ে যায়। যেমনটি আল্লাহ বলেছেন,
يَا
أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا لَقِيتُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا زَحْفًا فَلَا
تُوَلُّوهُمُ الْأَدْبَارَ
وَمَن
يُوَلِّهِمْ يَوْمَئِذٍ دُبُرَهُ إِلَّا مُتَحَرِّفًا لِّقِتَالٍ أَوْ
مُتَحَيِّزًا إِلَىٰ فِئَةٍ فَقَدْ بَاءَ بِغَضَبٍ مِّنَ اللَّهِ وَمَأْوَاهُ
جَهَنَّمُ ۖ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ
অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন কাফির বাহিনীর সম্মুখীন হবে
তখন তাদের মোকাবিলা করা হতে কখনোই পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবেনা।
আর যে ব্যক্তি সেদিন তাদেরকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে তাহলে সে
আল্লাহর গযব নিয়ে ফিরে আসবে। তবে যুদ্ধের জন্য (কৌশলগত) দিক পরিবর্তন অথবা নিজ দলে
আশ্রয় গ্রহণের জন্য হলে ভিন্ন কথা এবং তার আবাস জাহান্নাম। আর সেটি কতইনা নিকৃষ্ট
প্রত্যাবর্তনস্থল।(আল কুরআন, আনফাল ৮ : ১৫-১৬)
🔶নবী(ﷺ) আমাদের
জানিয়েছেন যে,
যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা ধ্বংসাত্মক কাজগুলোর একটি।
তিনি বলেছেন,
তোমরা ৭ ধ্বংসাত্মক কাজ থেকে বেচে থাকো। এবং তিনি সে (৭ টি
ধ্বংসাত্মক) বিষয়ের মধ্য হতে (১ টি) যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করাও উল্লেখ্য
করেছে। এটাই সর্বসম্মত মত,
তবে আল্লাহ ২ ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম করেছেন (অর্থাৎ শাস্তি
দেবেন না)।
.১। যুদ্ধের কৌশল হিসাবে (পিছু হটা), যাতে একজন ব্যক্তি চলে গিয়ে বাড়তি শক্তি-সাহায্য নিয়ে ফিরে
আসতে পারে।
২। যখন কাউকে বলা হয় যে, মুসলিমদের
অন্য একটি দল এই জায়গায় আছে এবং তারা হেরে যাচ্ছে। আর তখন সে পিছু হটে ঐ দলে যোগ
দেয় যাতে তাদের শক্তিবৃদ্ধি হয়। এক্ষেত্রে একটি শর্ত রয়েছে – সে যেই দলে ছিলো, এর দ্বারা সেই দল যেন কোনো ঝুঁকির মুখে না পড়ে। যদি এর
দ্বারা ঐ দল ঝুঁকির মুখে পড়ে, তাহলে তার জন্য অন্য
দলে যোগ দেয়া জায়েজ নয়। সেক্ষেত্রে এটি (জিহাদ) তার জন্য ফরযে আইন এবং তার জন্য
যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করা বৈধ নয়।
🔶দ্বিতীয় পরিস্থিতি হলো (জিহাদ ফরযে আইন হবার জন্য), যখন কোনো শহর শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হয়। তখন সে শহরকে রক্ষার
জন্য লড়াই করতে হবে। কেননা যখন কোনো শহরকে অবরোধ করা হয় তখন একে রক্ষার জন্য লড়াই
ছাড়া উপায় থাকে না। শত্রুরা শহরের কাউকে ঢুকতে দেয় না বা শহর থেকে কাউকে বেরোতে
দেয় না,
জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ বা অন্য কোনো জিনিস ঐ
শহরে পৌঁছাতে দেয় না। এই পরিস্থিতিতে সেই শহরের অধিবাসীদের জন্য জরুরী হচ্ছে নিজ
শহর রক্ষার জন্য যুদ্ধ করা।
🔶তৃতীয় পরিস্থিতি হলো,
যখন তাদের ইমাম (শাসক) সকলকে একত্রিত হবার আদেশ দেন। ইমাম
হচ্ছেন একটি রাষ্ট্রের কর্তৃত্বের অধিকারী। এক্ষেত্রে তাঁর জন্য সমগ্র মুসলিম
উম্মাহর ইমাম হওয়া জরুরী নয়। কেননা বহুকাল ধরে সমগ্র মুসলিম উম্মাহর ইমামত (অর্থাৎ
খিলাফত) নেই। নবী(ﷺ) বলেছেন, “তোমরা শোনো এবং আনুগত্য করো, যদিও তোমাদের উপর কোনো হাবশী কৃতদাসকে শাসক নিযুক্ত করা হয়”। সুতরাং যদি কোনো
ব্যক্তি শাসক হন,
তাঁর কথা শুনতে হবে এবং তাঁর আদেশ মেনে চলতে হবে।[শারহুল মুমতি ৮/১০-১২]
মূল ফতোয়ার লিঙ্কঃ
ইংরেজিঃ https://islamqa.info/en/20214/
আরবিঃ https://islamqa.info/ar/20214/
0 Comments