জান্নাত
বিষয়ক হাদীস
🔶আবূ হুরাইরা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ(সা:) বলেন, “মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি আমার পুণ্যবান বান্দাদের জন্য এমন জিনিস প্রস্তুত রেখেছি, যা কোন চক্ষু দর্শন করেনি, কোন কর্ন শ্রবন করেনি এবং যার সম্পর্কে কোন মানুষের মনে ধারণাও জন্মেনি। তোমরা চাইলে এ আয়াতটি পাঠ করতে পার; যার অর্থ- “কেউই জানে না তার জন্য তার কৃতকর্মের বিনিময় স্বরূপ নয়ন-প্রীতিকর কী পুরস্কার লুকিয়ে রাখা হয়েছে। (সূরা সাজদাহ- ১৭)" -[সহীহুল বুখারী- ৩২৪৪, ৪৭৭৯,৪৭৮০]
🔶আবু হুরায়রা(রা) থেকে মারফূ সূত্রে বর্ণিত,
"নিশ্চয় জান্নাতে (কোন) ব্যক্তির মর্যাদা (অনেক) বৃদ্ধি করা
হবে। সে বলবে,
আমার জন্য কিভাবে এটা হলো? অতঃপর তাকে বলা হবে,
তোমার জন্য তোমার সন্তানের (ক্ষমা প্রার্থনা) ইস্তেগফার
করার কারণে।" -[ইবনু মাজাহ, আহমাদ, আস-সহীহাঃ ১৫৯৮]
🔶উবাউদুল্লাহ ইবনু উমার ইবনু মায়সারাহ(রাদিয়াল্লাহু আনহু)সূত্রে
সুহায়ব(রহিমাহুল্লাহ) বলেন,নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- জান্নাতীগণ যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে বলবেন: তোমরা কি চাও, আমি আরো অনুগ্রহ বাড়িয়ে দেই? তারা বলবে: আপনি কি আমাদের চেহারাগুলোকে আলোকোজ্জ্বল করে দেননি, আমাদের জান্নাতে দাখিল করেন নি এবং জাহান্নাম থেকে নাজাত দেননি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: এরপর আল্লাহ তা'আলা আবরণ তুলে নিবেন। আল্লাহর দর্শন লাভের চেয়ে অধিক পছন্দনীয় জিনিস আর কিছুই তাদের দেয়া হয় নি।-[মুসলিমঃ ১৮১]
রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, 'জাহান্নামে থেকে সবশেষে বের হয়ে আসা ব্যক্তিকে আমি চিনি। সে হামাগুড়ি দিয়ে জাহান্নাম থেকে বের হয়ে আসবে। তাকে বলা হবে, "যাও জান্নাতে প্রবেশ কর"। নবী সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, "সে গিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। সে দেখবে, লোকেরা স্ব স্ব স্থান অধিকার করে আছে। অতঃপর তাকে বলা হবে, "আচ্ছা সে যুগের (জাহান্নামের শাস্তি) কথা তোমার স্মরণ আছে কি?" সে বলবে, "হ্যাঁ, মনে আছে"। তাকে বলা হবে, "তুমি কি পরিমাণ জায়গা চাও তা ইচ্ছা কর"। সে ইচ্ছা করবে। তখন তাকে বলা হবে, "তুমি যে পরিমাণ ইচ্ছা করেছো তা এবং দুনিয়ার দশগুণ জায়গা তোমাকে দেয়া হল"। একথা শুনে সে বলবে, "আপনি আমার সাথে ঠাট্টা করছেন? অথচ আপনি হলেন সর্ব শক্তিমান"। বর্ণনাকারী ইবনে মাসঊদ রাযিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, "এ সময় আমি রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এমনভাবে হাসতে দেখেছি যে, তাঁর মাড়ির দাঁত পর্যন্ত প্রকাশ হয়ে পড়েছে'।[সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান]
🔶রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
'জান্নাতে এমন একটি বৃক্ষ আছে যার ছায়ায় কোন আরোহী শত বছর
পর্যন্ত চলতে পারবে। আর তোমরা ইচ্ছা করলে তিলাওয়াত করতে পার ‘এবং দীর্ঘ
ছায়া"। আর জান্নাতে তোমাদের কারও একটি ধনুকের পরিমাণ জায়গাও ঐ জায়গা
অপেক্ষা উত্তম যেখানে সূর্য উদিত হয় আর সূর্য অস্তমিত হয় (অর্থাৎ পৃথিবীর
চেয়ে)"। -[সহীহ বুখারী, হাদীস সংখ্যা- ৩২৫২, ৩২৫৩]
🔶মোয়াজ বিন জাবাল রাযিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ
নবী সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশের সময় তাদের চেহারায় কোন দাড়ি-গোঁফ থাকবে না।
চক্ষুদ্বয় লাজুক হবে। বয়স হবে ত্রিশ থেকে তেত্রিশ এর মাঝামাঝি"। হাসানঃ -[তিরমিজী: ২৫৩৯,২৫৪৫
]
🔶আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে দলটি সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে, সেই দলের মানুষদের আকৃতি হবে পূর্ণিমার চাঁদের মতো উজ্জ্বল। তারা সেখানে থুথু ফেলবে না, নাকের শিকনিও বের হবে না, প্রস্রাব-পায়খানাও করবে না। তাদের ব্যবহার্য পাত্রসমূহ হবে স্বর্ণের তৈরি আর সোনা–রূপার সংমিশ্রণে তৈরি হবে চিরুনি। চন্দন কাঠ ও আগরবাতি জ্বালানো থাকবে। তাদের শরীরের ঘাম হবে মিশকের মতো সুগন্ধময়। তাদের প্রত্যেকের জন্য দুজন করে স্ত্রী (হুর) থাকবে। সৌন্দর্যের কারণে মাংসের ভিতর দিয়ে তাদের পায়ের জংঘার হাড়ের মজ্জা পর্যন্ত দৃষ্টিগোচর হবে। তাদের মধ্যে না থাকবে ঝগড়া–বিবাদ, আর না থাকবে হিংসা–বিদ্বেষ। তাদের সকলের অন্তর যেন একটি অন্তরে পরিণত হবে। সকাল-বিকাল তারা আল্লাহ্ তা‘আলার পবিত্রতা বর্ণনা করবে।সহীহঃ [বুখারী (৩২৪৫), মুসলিম (৮/১৪৬-১৪৭)।]
🔶আবূ হুরাইরাহ(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
জান্নাতীদের শরীরে কোন লোম থাকবে না, দাড়ি–গোঁফ
থাকবে না এবং চোখে সুরমা লাগানো থাকবে। কখনো তাদের যৌবন শেষ হবে না, জামাও পুরাতন হবে না।
হাসানঃ [মিশকাত তাহক্বীক্ব সানী (৫৬৩৮, ৫৬৩৯), তা’লীকুর রাগীব (৪/২৪৫)।]
🔶আবু হুরাইরাহ রাযিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ
রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "জান্নাতে প্রবেশকারী প্রত্যেক ব্যক্তি আদম আলাইহিস সলাতু ওয়াস সালামের ন্যায়
ষাট হাত লম্বা হবে। (প্রথমে মানুষ ষাট হাত ছিল) পরবর্তীতে তারা খাট হতে লাগল, শেষে বর্তমান অবস্থায় এসে পৌঁছেছে"। সহীহুল বুখারী ৩২৪৫, মুসলিম ২৮৩৪, তিরমিযী ২৫৩৭। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
🔶আবু মূসা(রা:) বর্ণনা করেন যে,
রসূলুল্লাহ্(সা:) বলেন, 'নিশ্চয়ই জান্নাতে মুক্তা দিয়ে তৈরী ফাঁকা একটি বাড়ি
থাকবে যার আকাশের দিকে উচ্চতা হবে ৬০ মাইল। এই বিশাল বাড়িতে মুমিনদের স্ত্রীরা
থাকবে এবং মুমিনরা (আনন্দের জন্য) তাদের কাছে যাবে। এই স্ত্রীরা একে অপরকে দেখবে
না। -[সহীহুল বুখারী, ৩২৪৩, মুসলিম ৭১৫৮]
🔶সাঈদ বিন আমির(রা:) বলেন,
তিনি রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছ থেকে শুনেছেন যে, যদি জান্নাতী
ললনা পৃথিবীর দিকে তাকায়,
তাহলে পুরো পৃথিবীকে সে মৃগনাভীর ঘ্রাণে ভরে দিবে এবং তার
অপরূপ সৌন্দর্য সূর্য ও চাঁদের আলোকে অতিক্রম করে যাবে। -[তাবারানী, বাযযার]
🔶আনাস(রা:) বর্ণনা করেন যে,
রসূলুল্লাহ্(সা:) বলেন, যদি জান্নাতের একজন রমণী পৃথিবীতে ক্ষণিকের জন্য দৃষ্টি
দেয়,
তাহলে সে পৃথিবীর পুরো আবহাওয়াকে সুগন্ধির ঘ্রাণে ভরে
দিবে। তার মাথার মুকুট দুনিয়া ও এর মাঝে যা কিছু আছে তার চেয়ে মূল্যবান।
-[তাবারানী]
🔶আনাস(রা:) বর্ণনা করেন যে,
রসূলুল্লাহ্(সা:) বলেন, জান্নাতের হুরেরা গান গাইবে (এই বলে), 'আমরা সুন্দরী ললনা আমাদের দেয়া হয়েছে সম্মানিত স্বামী'।-[তাবারানী]
🔶আবু
হুরায়রা(রা:) বর্ণনা করেন যে,
রসূলুল্লাহ্(সা:) কে জিজ্ঞেস করা
হলো,
জান্নাতে কি আমাদের স্ত্রীদের সাথে যৌনমিলন হবে? তিনি উত্তরে বলেন, একজন
জান্নাতী এক সকালে ১০০ কুমারী তরুণীর সাথে যৌনসঙ্গম করবেন। -[তাবারানী, বাযযার]
🔶মুসতাওরিদ(রা:) বর্ণনা করেন যে,
রসূলুল্লাহ্(সা:) বলেন, আখিরাতের সাথে এই পৃথিবীর তুলনা হল যে তোমার হাতকে সমুদ্রের
মধ্যে ডুবিয়ে যে পানি তুমি গ্রহণ করবে তার মত। -[মুসলিম
হা: ৭১৯৭]
🔶আবু সাঈদ ও আবু হুরায়রা(রা:) বর্ণনা করেন যে,
🔶রসূলুল্লাহ্(সা:)
বলেন,
(যখন জান্নাতী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে) একজন ঘোষণাকারী
ঘোষণা করবে,
নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য জীবন এবং তোমাদের কখনো মৃত্যু হবে
না। তোমাদের জন্য সু-স্বাস্থ্য, তোমরা কখনো অসুস্থ
হবে না। তোমাদের জন্য যৌবন,
তোমরা কখনো বৃদ্ধ হবে না। তোমাদের জন্য বিলাসিতা এবং আরাম, তোমরা কখনো কষ্ট স্বীকার করবে না।না। -[সহীহ মুসলিম, ৭১৫৬]
🔶আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণিত,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় জান্নাতে মু’মিনদের জন্য একটি শূন্যগর্ভ মোতির তাঁবু থাকবে, যার দৈর্ঘ্য হবে ষাট মাইল। এর মধ্যে মু’মিনদের জন্য একাধিক স্ত্রী থাকবে। যাদের সকলের সাথে মু’মিন সহবাস করবে। কিন্তু তাদের কেউ কাউকে দেখতে পাবে না।(বুখারী: ৩২৪৩, ৩৮৮৫, ৪৮৭৯, মুসলিম ৭৩৩৭-৭৩৩৮)
এক মাইলঃ ছয় হাজার হাত সমান দীর্ঘ।
🔶আবূ সাঈদ খুদরী(রাঃ) হতে বর্ণিত,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
জান্নাতের মধ্যে এমন একটি
বৃক্ষ আছে, যার ছায়ায় কোন আরোহী উৎকৃষ্ট,
বিশেষভাবে প্রতিপালিত
হালকা দেহের দ্রুতগামী ঘোড়ায় চড়ে একশো বছর চললেও তা অতিক্রম করতে সক্ষম হবে না। (বুখারী ৬৫৫৩, মুসলিম ৭৩১৭)
এটিকেই আবূ হুরাইরা(রাঃ) হতে বুখারী-মুসলিম সহীহায়নে বর্ণনা করেছেন যে, একটি সওয়ার (অশ্বারোহী) তার ছায়ায় একশো বছর ব্যাপী চললেও তা অতিক্রম করতে পারবে না।(বুখারী ৩২৫২, ৪৮৮১, মুসলিম ৭৩১৪)
🔶সাহল ইবনে সা’দ(রাঃ) হতে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জান্নাতীগণ জান্নাতের বালাখানাগুলিকে এমন গভীরভাবে দেখবে, যেভাবে তোমরা আকাশের তারকা দেখে থাক। (বুখারী
৬৫৫৫, মুসলিম ৭৩১৯)
0 Comments