প্রশ্ন:কুরবানী কাকে বলে? কুরবানীর উদ্দেশ্য কি? গরু বা উট ২/৩/৫/৭ ভাগে কুরবানী দেয়া যাবে কি?একটি দলিল ভিত্তিক পর্যালোচনা।
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
➤উত্তর :আরবী ‘কুরবান’ (قربان) শব্দটি
ফারসী বা ঊর্দূতে ‘কুরবানী’ রূপে পরিচিত হয়েছে,যার অর্থ ‘নৈকট্য।পারিভাষিক অর্থে:আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায়
উৎসর্গকৃত পশু কিংবা অন্য যে কোনো কিছুকে আরবীতে ‘কুরবান’ বলা হয়।
সীমাহীন আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভের
জন্য তার বিধান মোতাবেক তার উদ্দেশ্যে পশু উৎসর্গ করার নাম কুরবানী।
ইবরাহীম (আ.) আল্লাহর আদেশ পালনার্থে নিজের আদরের সন্তান
ইসমাঈল (আ.)-কে কুরবানী দিতে উদ্যত হওয়ার মাধ্যমে মহান রবের আনুগত্যের যে অনুপম
দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গিয়েছিলেন, ইতিহাসে তা নযীরবিহীন ঘটনা।
▪️➤কুরবানীর
উদ্দেশ্য :কুরবানী করা একটি মহান ইবাদাত। কুরবানীর মূল উদ্দেশ্য
আল্লাহভীতি অর্জন করা।কুরবানী
হতে হবে একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে।
কে কত বড় কুরবানী দিল, কার কুরবানী দেখতে কত সুন্দর,
কতটা মোটাতাজা, এটা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দেখেন না। বরং তিনি দেখেন মানুষের অন্তর ও তাক্বওয়া।মহান আল্লাহ বলেন, এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে
পৌঁছে না, কিন্তু তার কাছে পৌঁছে তোমাদের তাক্বওয়া’ (সূরা হজ্জ, ৩৭)।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(ছা.) বলেছেন,নিশ্চয়ই আল্লাহ
তোমাদের বাহ্যিক গঠন ও বিত্ত-বৈভবের দিকে দেখেন না; বরং তিনি দেখেন তোমাদের অন্তর
ও আমল’।(সহীহ মুসলিম, হা/২৫৬৪; মিশকাত, হা/৫৩১৪)
◾➤গরু বা
উট ভাগে কুরবানী দেয়া যাবে কি?
▪️প্রথমত:মুক্বীম অবস্থায় একটি পরিবারের পক্ষ থেকে একটি পশু কুরবানী করাই
উত্তম। তবে
সামর্থ্য থাকলে একাধিক পশুও যেমন কুরবানী করতে পারবে।আবার একটি পশুতে একাধিক ব্যক্তি যেমন:২,৩,৫,
এবং সর্বোচ্চ ৭ জন অংশগ্রহণ করতে পারেন এটা হোক সফর অথবা মুক্বীম কোনটাই নাজায়েজ
নয়।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদায়
হজ্জের ভাষণে বলেন, ‘হে জনমন্ডলী! নিশ্চয় প্রতিটি পরিবারের উপরে প্রতি বছর একটি
করে কুরবানী।’(তিরমিযী, হা/১৫১৮; আবু দাঊদ, হা/২৭৮৮; মিশকাত,
হা/১৪৭৮, সনদ সহীহ)।
আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একটি
শিংওয়ালা সুন্দর সাদা-কালো দুম্বা আনতে বললেন, ...অতঃপর নিম্নোক্ত দো‘আ
পড়লেন,আল্লাহর নামে (কুরবানী করছি), হে আল্লাহ! তুমি এটি কবুল কর মুহাম্মাদের পক্ষ
হ’তে, তার পরিবারের পক্ষ হ’তে ও তার উম্মতের পক্ষ হ’তে’।
এরপর উক্ত দুম্বা দ্বারা কুরবানী করলেন’।[মুসলিম হা/১৯৬৭;
মিশকাত হা/১৪৫৪] আলবানী বলেন, ‘এর অর্থ কুরবানীর সওয়াবে সকল উম্মতকে শরীক
করা।
কেননা সকল বিদ্বানের ঐক্যমতে একটি ছাগল একটি পরিবারের বেশী অন্যদের পক্ষ থেকে যথেষ্ট নয়।’(মিশকাত ১৪৫৪ হাদীসের টীকা)।
সাহাবায়ে কেরামও রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)-এর উক্ত সুন্নাত অনুযায়ী আমল করতেন। ‘আত্বা ইবনু ইয়াসির সাহাবী আবু আইয়ুব আনসারী (রা)-কে
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে কুরবানী কেমন ছিল মর্মে
জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘একজন লোক একটি বকরী দ্বারা নিজের ও নিজের পরিবারের পক্ষ
হতে কুরবানী দিত।
অতঃপর তা নিজে খেত ও অন্যকে খাওয়াত। [তিরমিযী, হা/১৫০৫; ইবনু মাজাহ, হা/৩১৪৭ ‘নিজ পরিবারের পক্ষ হতে একটা বকরী কুরবানী করা’ অনুচ্ছেদ,‘কুরবানী’ অধ্যায়]
উক্ত বর্ণনা উদ্ধৃত করে ইমাম শাওকানী বলেন, والحق أنها ةجزئ عن أهل البية و إن كانوا مائة نفس أو أكثر كما قضة بذلك السنة ‘সঠিক
কথা এই যে, একটি বকরী একটি পরিবারের পক্ষ হ’তে যথেষ্ট, যদিও সেই পরিবারের সদস্য
সংখ্যা শতাধিক হয় এবং এভাবেই নিয়ম চলে আসছে’।[নায়লুল
আওত্বার ৬/২৪৪ পৃ.
ইমাম শাফেয়ি (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর ‘আল-উম্ম’ গ্রন্থে
বলেন:“যদি তারা সংখ্যায় সাতের চেয়ে কম হন সেক্ষেত্রেও কুরবানীটি তাদের পক্ষ থেকে
আদায় হয়ে যাবে। অতিরিক্ত ভাগ বহন করার মাধ্যমে তারা নফল আমলকারী।
যেমনিভাবে যে ব্যক্তির উপর বকরী কুরবানী করা আবশ্যক সে
উট দিয়ে কুরবানী করলে আদায় হয়ে যায়। বকরীর চেয়ে বেশি
কিছু কুরবানী দেয়ার মাধ্যমে সে ব্যক্তি নফল আমলকারী গণ্য হল।”(আল উম্ম’ খন্ড:২ পৃষ্ঠা:২৪৪)
কাসানী তাঁর ‘বাদায়েউস সানায়ে’ গ্রন্থে বলেন: “সাতজনের
কম সংখ্যক ব্যক্তির পক্ষ থেকে একটি উট বা একটি গরু (কুরবানীর জন্য) যথেষ্ট হবে এতে
কোন সন্দেহ নেই।
উদাহরণতঃ দুইজন,
তিনজন, চারজন, পাঁচজন বা ছয়জন যদি এক উটে কিংবা এক গরুতে অংশীদার হয়।
কেননা এক সপ্তমাংশ ভাগ নেয়া যেহেতু জায়েয সুতরাং এর চেয়ে
বেশি ভাগ নেয়া জায়েয হওয়া আরও বেশি যুক্তিযুক্ত; চাই এক্ষেত্রে সবার ভাগ সমান হোক
কিংবা ভিন্ন ভিন্ন হোক।
যেমন কারো ভাগ হলো অর্ধেক, কারো ভাগ হলো এক তৃতীয়াংশ,
কারো ভাগ হলো এক ষষ্ঠাংশ; তবে এক সপ্তমাংশের চেয়ে কম যাতে না হয়।(বাদায়েউস সানায়ে’ খন্ড:৫ পৃষ্ঠা:৭১)
অতএব, একান্নবর্তী পরিবারের সদস্য সংখ্যা যত বেশীই হোক
না কেন সকলের পক্ষ থেকে একটি পশুই যথেষ্ট। এক পিতার সন্তান
হ’লেও পৃথকান্ন হ’লে তারা পৃথক পরিবার হিসাবে গণ্য হবেন।
তবে তারা পৃথক কুরবানীর জন্য পিতাকে অর্থ সাহায্য করতে পারেন।(মুসলিম হা/১৯৬৭; মিশকাত হা/১৪৫৪; উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব ২২৫/৭ বিন বায, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১৮/৩৭; ফাতাওয়া লাজনাহ দায়েমাহ ১১/৪০৬)।
▪️দ্বিতীয়তঃএটা সর্বজনবিদিত যে, ছাগলে শরিক কুরবানি বৈধ নয়। সুতরাং,সেটা আমাদের আলোচনার বিষয়ও নয়। আমরা আলোচনা করব উট ও গরুতে শরিক কুরবানির
বৈধতা-অবৈধতা নিয়ে।
যাই হোক মুক্বীম-মুসাফির সর্বাবস্থায় উট ও গরুতে শরিক হওয়া নবী ﷺ এর একাধিক বিশুদ্ধ হাদীস এবং ন্যায়নিষ্ঠ সালাফগণের মহামূল্যবান বাণী ও ফাতাওয়া দ্বারা প্রমাণিত ও সুসাব্যস্ত। এ ব্যাপারে সরাসরি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। কয়েকটি হাদীস নিম্নরূপ:
(১).ইবনু ‘আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন,“আমরা এক সফরে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে ছিলাম। ইতোমধ্যে কুরবানির ঈদ এসে গেল। আমরা একটি উট দশজনে এবং একটি গরু সাতজনে শরিক হয়ে কুরবানি করলাম।”[তিরমিযী, হা/৯০৫; নাসাঈ, হা/৪৩৯২; ইবনু মাজাহ, হা/৩১৩১; সনদ: সাহীহ ]
(২).জাবির (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমরা হুদাইবিয়াহ নামক স্থানে নবী ﷺ এর সাথে একটি উট সাতজনের পক্ষ থেকে এবং একটি গরুও সাতজনের পক্ষ থেকে কুরবানি করেছি।[সাহীহ মুসলিম, হা/১৩১৮; আবূ দাউদ, হা/২৮০৯; তিরমিযী, হা/৯০৪, ১৫০২, নাসাঈ, হা/৪৩৮৩; ইবনু মাজাহ, হা/৩১৩২]
(৩).জাবির (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন,“একটি গরু সাতজনের পক্ষ থেকে এবং একটি উট সাতজনের পক্ষ থেকে (কুরবানি করা যাবে)।” [আবূ দাউদ, হা/২৮০৮; সনদ: সহীহ]
(৪).আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কর্তৃক বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেছেন,“কুরবানিতে একটি গরু সাতজনের পক্ষ থেকে এবং একটি উট সাতজনের পক্ষ থেকে (যথেষ্ট হবে)।” [ইমাম আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ), সহীহুল জামি‘ইস সাগীর, হা/২৮৯০; সনদ: সহীহ)
▪️প্রথমত,উপরিউক্ত হাদীসগুলো বা শরিকানা কুরবানি সংক্রান্ত অন্যান্য হাদীসগুলোর মধ্যে কোনো একটি হাদীসেও বলা হয়নি যে, মুক্বীম অবস্থায় কুরবানীতে শরিক হওয়া বৈধ নয়। একবারও এ কথা বলা হয়নি যে, শরিকানা কুরবানী শুধুমাত্র সফরের সাথেই খাস।
▪️দ্বিতীয়ত,শরিক কুরবানি সংক্রান্ত বেশ কিছু এমন হাদীস আছে, যেগুলোতে সফরের
কোনো উল্লেখই নেই। যেটার
প্রমান উপরে শেষের দুটি হাদীসে দেখলাম।
▪️তৃতীয়ত,সম্মানিত মুহাদ্দিসগণ যেভাবে কুরবানী অধ্যায়ে হাদীসগুলো এনেছেন; এ
থেকেও বুঝা যায় যে, তাঁরা ওই সব হাদীসকে সফরের সাথে খাস হওয়া বুঝেননি। এটা সুবিদিত যে, মুহাদ্দিসগণ তাঁদের হাদীস
গ্রন্থে যেসব বাব তথা অনুচ্ছেদ রচনা করেন, সেটাই তাঁদের ফিক্বহ (বুঝ)। সুতরাং আসুন, তাঁদের বাব তথা অনুচ্ছেদ রচনার
ক্যাটাগরিটা দেখে নিই।
▪️(১). ইমাম তিরমিযী (রাহিমাহুল্লাহ) ওপরে উল্লিখিত ১ নং হাদীসটি যেই অনুচ্ছেদে বর্ণনা করেছেন, তার শিরোনাম হচ্ছে—“বাবুন ফিল ইশরাকি ফিল উদ্বহিয়্যাহ।” অর্থাৎ, “কুরবানিতে শরিক হওয়ার অনুচ্ছেদ। [সুনানুত তিরমিযী, কিতাবুল হাজ্ব (হজ অধ্যায়); অনুচ্ছেদ নং: ৬৬]
এরপর তিনি হুদায়বিয়ায় উট ও গরুতে ৭ জন করে শরিক হয়ে কুরবানি করার আরেকটি হাদীস বর্ণনা করেন এবং বলেন, والعمل على هذا عند أهل العلم من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم و غيرهم “এর ওপর নবী ﷺ এর সাহাবীবর্গ এবং অন্যান্য আহলুল ‘ইলমের আমল রয়েছে।”
এই বাক্যটির ব্যাখ্যায় সুনানে তিরমিযীর ভাষ্যকার ইমাম
‘আব্দুর রহমান মুবারকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, “অর্থাৎ, হাদ্ঈ* ও কুরবানির উট ও
গরুতে সাত জন শরিক হওয়ার বৈধতার আমল রয়েছে।” [ইমাম
‘আব্দুর রহমান মুবারকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ), তুহফাতুল আহওয়াযী; খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা:
৮৮; দারুল ফিকর, দিমাশক্ব কর্তৃক প্রকাশিত (সন-তারিখ বিহীন)]
▪️(২).ইমাম আবু দাঊদ (রাহিমাহুল্লাহ) এভাবে অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন, “বাবুন ফিল বাক্বারি ওয়াল জাযূরি ‘আন কাম তুজযাউ।” অর্থাৎ, “অনুচ্ছেদ: কুরবানিতে গরু ও উট কত জনের পক্ষ থেকে যথেষ্ট।” [সুনানু আবী দাঊদ, কিতাবুদ্ব দ্বাহাইয়া (কুরবানি অধ্যায়); অনুচ্ছেদ নং: ৭]
এরপর যে হাদীসকে সফরের সাথে খাস হওয়ার ধারণা করা হয়, সে
হাদীসটিই এই অনুচ্ছেদের অধীনে এনেছেন।
হাদীসটি হলো—জাবির (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, كُنَّا نَتَمَتَّعُ فِي عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَذْبَحُ الْبَقَرَةَ عَنْ سَبْعَةٍ، وَالْجَزُورَ عَنْ سَبْعَةٍ نَشْتَرِكُ فِيهَا “আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে তামাত্তু‘ হজ করতাম এবং সাতজনে মিলে একটি গরু কুরবানি করতাম। অনুরূপভাবে সাতজনে শরিক হয়ে একটি উট কুরবানি করতাম।” [আবূ দাঊদ, হা/২৮০৭; সনদ: সহীহ]
▪️(৩).ইমাম নাসাঈ (রহিমাহুল্লাহ) যেই অনুচ্ছেদে হাদীসটি (উপরিউক্ত ১ নং
হাদীস) নিয়ে এসেছেন, তার নামকরণ করা হয় এভাবে, “বাবু মা তুজযি’উ ‘আনহুল বাদানাতু
ফিদ্ব দ্বাহাইয়া।”
অর্থাৎ, “অনুচ্ছেদ: কুরবানিতে একটি উট যত জনের পক্ষে যথেষ্ট।”
[সুনানুন নাসাঈ, কিতাবুদ্ব দ্বহাইয়া (কুরবানি অধ্যায়); অনুচ্ছেদ নং: ১৫]
▪️(৪). ইমাম ইবনু মাজাহ (রাহিমাহুল্লাহ) কুরবানি অধ্যায়ে যেই অনুচ্ছেদে হাদীসটি উল্লেখ করেন, তার শিরোনাম এই রকম—“বাবু ‘আন কাম তুজযি’উল বাদানাতু ওয়াল বাক্বারাহ।” অর্থাৎ, “অনুচ্ছেদ: একটি গরু ও উট কত জনের পক্ষে যথেষ্ট?” [সুনানু ইবনি মাজাহ, কিতাবুল আদ্বাহী (কুরবানি অধ্যায়); অনুচ্ছেদ নং: ৫]
সম্মানিত পাঠক, আপনি নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন, মুহাদ্দিসগণ
বাবগুলো রচনার ক্ষেত্রে ঘুণাক্ষরেও সফরের কথা বলেননি। তাঁরা ব্যাপকভাবে বলেছেন, ‘উট ও গরুতে শরিক হওয়া
প্রসঙ্গ’ বা ‘একটি গরু ও উট কত জনের পক্ষে যথেষ্ট’ প্রভৃতি। তাঁরা যদি শরিক কুরবানী সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসগুলোকে
সফরের সাথে খাস হওয়া বুঝাতেন, তাহলে অবশ্যই তা তাঁদের বাব তথা অনুচ্ছেদ গুলোর
শিরোনামে উল্লেখ করতেন।
কিন্তু তাঁরা তা করেননি! অতএব সুস্পষ্টরূপে প্রতীয়মান
হলো যে, উপরিউক্ত হাদীসের গ্রন্থগুলোতে শরিক কুরবানী সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসগুলোকে
সফরের সাথে খাস করা ভুল।
❏➤এবার যুগ শ্রেষ্ঠ কয়েকজন আলিমের ফাতাওয়া লক্ষ্য করুন:
▪️১ম ফাতওয়া: হাম্বলী মাযহাবের প্রখ্যাত ফাক্বীহ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন কুদামাহ আল-মাক্বদিসী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬২০ হি.] বলেছেন,“একটি উট সাত ভাগে, অনুরূপভাবে একটি গরুও সাত ভাগে কুরবানি দেওয়া জায়েজ।
আর এই কথাই বলেছেন—তাবি‘ঈ ‘আত্বা, ত্বাঊস, সালিম, হাসান
বাসরী, ‘আমর বিন দীনার, সুফইয়ান সাওরী, আওযা‘ঈ, শাফি‘ঈ, আবু সাওর, আবু হানীফাহ ও
তাঁর ছাত্রবর্গ।” [ইমাম ইবনু কুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ), আল-মুগনী; খণ্ড: ১৩;
পৃষ্ঠা: ৩৬৩-৩৬৪; মাসআলাহ নং: ১৭৫০; দারু ‘আলামিল কুতুব, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত;
সন: ১৪১৭ হি./১৯৯৭ খ্রি. (৩য় প্রকাশ)]
▪️(২).বিংশ শতাব্দীর সর্বশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, সৌদি ফাতাওয়া বোর্ডের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতী, শাইখুল ইসলাম, ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন,রাসূল ﷺ থেকে বর্ণিত বিশুদ্ধ সুন্নাহ প্রমাণ করেছে যে, উট, গরু ও ছাগল প্রভৃতির যে কোনো একটি জান (কুরবানির ক্ষেত্রে) একজন ব্যক্তি ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে যথেষ্ট হবে; যদিও তারা (পরিবারের সদস্য) সংখ্যায় অনেক হয়।
▪️(৩).বিগত শতাব্দীতে সৌদি ‘আরবের শ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ, ফাদ্বীলাতুশ শাইখ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] আরও স্পষ্ট করে বলেছেন,একটি ছাগল একজন ব্যক্তির পক্ষ থেকে যথেষ্ট হবে।
কারণ জাবির (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বর্ণিত হাদীসে এসেছে, তিনি বলেছেন, হুদাইবিয়ার বছর (৬ষ্ঠ হিজরী) আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে সাতজনের পক্ষ থেকে একটি উট এবং সাতজনের পক্ষ থেকে একটি গরু কুরবানি করেছি। হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রাহিমাহুল্লাহ) বর্ণনা করেছেন (হাদীস নং: ১৩১৮)।
অন্য বর্ণনায় জাবির (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেছেন, আমরা হজের ইহরাম বেঁধে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে রওনা হলাম। তিনি আমাদেরকে প্রতিটি উট এবং গরু সাতজনে মিলে কুরবানি করার নির্দেশ দিলেন। (সহীহ মুসলিম, হা/১৩১৮) এখানে এই দলিল রয়েছে যে, উট বা গরুর এক সপ্তমাংশ একটি পূর্ণাঙ্গ ছাগলের স্থলাভিষিক্ত হবে, এবং যে পরিমাণের জন্য একটি ছাগল যথেষ্ট, সেটাও (ওই এক সপ্তমাংশ) সে পরিমাণের জন্য যথেষ্ট হবে।
কেননা তামাত্তু‘ হজের ক্ষেত্রে এবং (হজে) বাধাগ্রস্ত
হলে, সেক্ষেত্রেও প্রত্যেকের ওপর একটি করে হাদ্ঈ (হজের পশু কুরবানি করা) ওয়াজিব। অথচ নবী ﷺ একটি উটকে সাতজনের পক্ষ
থেকে নির্ধারণ করলেন।
.পরিশেষে, উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা প্রমাণিত যে, একটি পরিবারের পক্ষ থেকে একটি পশু কুরবানী করাই উত্তম।
তবে সামর্থ্য থাকলে একাধিক পশুও যেমন কুরবানী করতে পারবে।
আবার একটি পশুতে একাধিক ব্যক্তি অংশগ্রহণ করতে পারেন। তাই ভাগে কুরবানী নিয়ে সামান্য ইখতেলাফ থাকলেও আল্লামা
শামসুল হক আযীমাবাদী, আব্দুর রহমান মুবারকপুরী, ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী, শায়খ বিন
বায, শায়খ উসাইমীন প্রমুখ বলেন,একে নাজায়েয বলা যাবে না।(ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ, ১১তম খণ্ড, পৃ. ৩৯৫ ও ৪০৫ দ্র.;
উছায়মীন, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েল, ২৫তম খণ্ড, পৃ. ২২ ও ৪৬; আল-ইসলাম সওয়াল ওয়া
জাওয়াব, ৫ম খণ্ড, পৃ. ৪৫৩১) (আল্লাহই অধিক জ্ঞানী)
◾➤যিলহজ্জ
ও কুরবানী ধারাবাহিক ২০ পর্বের এটি সপ্তম পর্ব আগের ছয়টি পর্বের লিংক কমেন্টে
পাবেন।
__________________________
উপস্থাপনায়,জুয়েল মাহমুদ সালাফি









0 Comments