Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

নির্বাচন কেন জায়েয নয়? তাহলে কীভাবে মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে?

 প্রশ্ন: নির্বাচন কেন জায়েয নয়? তাহলে কীভাবে মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে?

জবাব: এর জন্য লম্বা আলোচনা প্রয়োজন। তবে আমি সংক্ষিপ্তাকারে বলব, নির্বাচন এক ইউরোপীয় শিরকী পৌত্তলিক পদ্ধতি। কারণ, তার অনেক বিষয় ইসলামীপরিপন্থির ওপর দণ্ডায়মান।

যেমন ধরুন মজলিসে শূরা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলছেন,

وَأَمْرُهُمْ شُورَى بَيْنَهُمْ​

তারা নিজেদের মধ্যে পরামর্শের মাধ্যমে নিজেদের কাজ সম্পাদন করে।[সূরা শূরা, আয়াত:৩৮]

ভালো-খারাপ ও আলিম-জাহিল সকল শ্রেণির মুসলিম এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং সবাই মজলিসে শূরার সদস্য হতে পারে না।

‘তারা নিজেদের মধ্যে পরামর্শের মাধ্যমে নিজেদের কাজ সম্পাদন করে।’দ্বারা সেসব মুসলিমদের বোঝানো হয়েছে, যারা ঈমান, আমল, সমঝ এবং মানুষের চাহিদা ও প্রয়োজন উপলব্ধি করার ক্ষেত্রে অনন্য।

আর মসজিসে শূরাতে কাফিরদের সদস্য হওয়ার তো প্রশ্নেই আসে না। কিন্তু নির্বাচন পদ্ধতির নিয়ম কী? সেখানে প্রথমত কাফির ও মুসলিমদের মাঝে কোনো বিভাজন করা হয় না। দ্বিতীয়ত ভালো মুমিন ও খারাপ মুমিন এবং আলিম মুমিন ও জাহিল মুমিনের মাঝেও কোনো পার্থক্য করা হয় না।

যেসব দেশে পার্লামেন্টভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতি চালু আছে, সেসব দেশে এই নীতি খুবই পরিচিত ও সবার দৃষ্ট। এ কারণে আমরা বিশ্বাস করি, কোনো মুসলিম রাষ্ট্রের জন্য মুশরিকদের এ পদ্ধতি গ্রহণ করা জায়েয নয়। অথচ আমরা তাদেরকে নিম্নের আয়াতের মাধ্যমে সম্বোধন করতে পারি:

 أَفَنَجْعَلُ الْمُسْلِمِينَ كَالْمُجْرِمِينَ (35) مَا لَكُمْ كَيْفَ تَحْكُمُونَ​

 আমি মুসলিমদেরকে অপরাধীদের সমান গণ্য করব? তোমাদের কী হলো? এ কেমন তোমাদের ফয়সালা? [ সূরা কলম, আয়াত: ৩৫-৩৬]

আমরা কীভাবে ইসলামী জীবন পুনরারম্ভ করতে পারি এবং কীভাবে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করা সম্ভব? বাস্তবতা হলো, বর্তমানে মুসলিম দাঈদের মাঝে এটি একটি অত্যন্ত বড়ো আলোচিত বিষয়।

তবে দুঃখের বিষয়, এ নিয়ে তাদের মাঝে রয়েছে চরম মতপার্থক্য। তবে আমরা নবী সেই বাণীর পেছনে ছুটে চলি যা তিনি প্রত্যেক খুতবায় বলতেন। তিনি বলতেন, ‘সর্বশ্রেষ্ঠ দিকনির্দেশনা মুহাম্মাদ -এর দিকনির্দেশনা।’

আমরা মনে করি, নবী যে পদ্ধতি অবলম্বন করে জমিনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন এবং ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করে কাফিরদের পরাভূত করেছেন, সেই পদ্ধতিতে ইসলামী জীবন পুনরারম্ভ করা এবং ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করা সম্ভব।

আমরা তাঁর সেই পদ্ধতিকে দুই শব্দে সংক্ষেপন করি। সেই দুই শব্দ আমরা বিভিন্ন সময়ে ব্যাখ্যা করেছি। শব্দ দুটি হলো, ‘তাসফিয়া ও তারবিয়া’।

ক. তাসফিয়া দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, আকীদা, যুহদ ও ফিকহ-সহ ইসলামের অন্যান্য বিষয়ে যেসব আগাছা ও ভুল প্রবেশ করেছে, তা থেকে ইসলামকে পরিচ্ছন্ন করা। যঈফ হাদীস থেকে সহীহ হাদীস পৃথক করা।

ফিকহের ক্ষেত্রে সুন্নাহপরিপন্থি যেসব ব্যক্তিমতামতের অনুপ্রবেশ ঘটেছে, তা থেকে ফিকহকে নিষ্কৃত করা।

তাসাওফের মাধ্যমে যেসব জঘন্য মতবাদ ও বিচ্যুতির প্রচলন ঘটেছে, তা বিতাড়িত করা। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক মতবাদ হলো সর্বেশ্বরবাদ। মুসলিম আলিমদের সকলের ঐকমত্যে এটি কুফরী মতবাদ।

তবে অত্যন্ত দুঃখের কথা হলো, কিছু ইসলামী ফিরকার মতবাদ সর্বেশ্বরবাদ নামক এ মতবাদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। বর্তমান যুগেও এমন মতবাদ চালু আছে।

এরা তো তারাই যাদের যদি জিজ্ঞেস করা হয় ‘আল্লাহ কোথায়?’, তখন তারা বলে তিনি সর্বত্র বিরাজমান। এটি সর্বেশ্বরবাদ মতবাদ।

কাজেই ইসলামের নাম দিয়ে ইসলামের ভেতর যা কিছু প্রবেশ করেছে, তা থেকে এ দীনকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে হবে। একেই ‘তাসফিয়া’ বলা হয়।

খ. তারবিয়া দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, এই পরিশোধিত ইসলামের ওপর মুসলিমদেরকে গড়ে তোলা। এভাবে গড়ে তুলতে পারলে মুসলিমরা নিজেরাই স্বচ্ছ ইসলামের ওপর চলবে এবং তাদের পরিবারকে স্বচ্ছ ইসলামের ওপর গড়ে তুলবে।

তখন থেকেই ইসলামী সমাজ বাস্তবায়ন আরম্ভ হবে। এরপর মুসলিম রাষ্ট্র কায়েম হয়ে যাবে।

আর আমরা যদি ওয়ারিশ সূত্রে যে ইসলাম পেয়েছি তা-ই বলবৎ রাখি, তাহলে তা হবে সেই ওষুধের ন্যায় যাতে রোগের জীবাণু মিশ্রণ করা হয়েছে।

এমন ওষুধ তো রোগ বৃদ্ধি করা ছাড়া কিছুই করবে না এবং রোগ মুক্তিও হবে না।

[তুরাসুল আলবানী ফিল মানহাজ, ৩/১৫২-১৫৪]

মানহাজুস সালাফ

ইমাম মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রাহি.)

অনুবাদ: উস্তায আবদুল্লাহ মাহমুদ।

Post a Comment

0 Comments