Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

দুনিয়ার ধোঁকায় পড়বেন না; দুনিয়ার হাকিকত:




দুনিয়ার হাকিকত:

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কুরআনে ইরশাদ করেছেন—

 ٱعْلَمُوٓا۟أَنَّمَاٱلْحَيَوٰةُٱلدُّنْيَالَعِبٌوَلَهْوٌوَزِينَةٌوَتَفَاخُرٌۢبَيْنَكُمْوَتَكَاثُرٌفِىٱلْأَمْوَٰلِوَٱلْأَوْلَٰدِكَمَثَلِغَيْثٍأَعْجَبَٱلْكُفَّارَنَبَاتُهُۥثُمَّيَهِيجُفَتَرَىٰهُمُصْفَرًّاثُمَّيَكُونُحُطَٰمًاوَفِىٱلْءَاخِرَةِعَذَابٌشَدِيدٌوَمَغْفِرَةٌمِّنَٱللَّهِوَرِضْوَٰنٌوَمَاٱلْحَيَوٰةُٱلدُّنْيَآإِلَّامَتَٰعُٱلْغُرُورِ٢٠

তোমরা জেনে রেখ যে, পার্থিব জীবনতো ক্রীড়া কৌতুক, জাঁকজমক, পারস্পরিক অহংকার প্রকাশ, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা ব্যতীত আর কিছুই নয়; ওর উপমা বৃষ্টি, যদ্বারা উৎপন্ন শস্য সম্ভার কৃষকদেরকে চমৎকৃত করে, অতঃপর ওটা শুকিয়ে যায়, ফলে তুমি ওটা পীতবর্ণ দেখতে পাও; অবশেষে ওটা খড়কুটায় পরিণত হয়। পরকালে (অবিশ্বাসীদের জন্য) রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং (সৎপথ অনুসারীদের জন্য রয়েছে) আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ব্যতীত কিছুই নয়।

 [সূরা হাদীদ: ২০ ]

তাফসীরঃ আলোচ্য আয়াতদ্বয়ে আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার সম্পূর্ণ জীবনের একটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করছেন। মানুষ জন্মের পর তার শিশু ও শৈশবকাল অতিবাহিত করে খেল-তামাশায়, তারপর যৌবনকাল পোশাক-পরিচ্ছেদ, খাবার-দাবার ইত্যাদিতে চাকচিক্য পছন্দ করে, তারপর বৈবাহিক জীবনে সন্তান ও সম্পদের প্রাচুর্য নিয়ে প্রতিযোগিতা করে, এভাবেই তো মানুষ তাদের মূল্যবান জীবন অতিবাহিত করে। যারা এভাবে দুনিয়ার মোহে মোহিত হয়ে দীন-ধর্মের তোয়াক্কা না করে দুনিয়ার জীবন অতিবাহিত করে তাদের উদাহরণ হল সে বৃষ্টির মত যা নাযিল হয়ে কৃষকের ফসল খুব সবুজ শ্যামল ও তরতাজা করে তুলে যা দেখে কৃষকের মন জুড়িয়ে যায়। তারপর তা হঠাৎ শুকিয়ে গিয়ে পীতবর্ণ ধারণ করে, অতঃপর তা টুকরো টুকরো হয়ে খড় কুটোয় পরিণত হয়। কৃষকের আশা যেমন নিরাশায় পরিণত হয়ে যায় তেমনি দুনিয়াকে নিয়ে যারা সন্তুষ্ট তাদের অবস্থাও ঠিক তা-ই।

অর্থাৎ যারা দীন-ধর্ম উপেক্ষা করে দুনিয়ার ক্রীড়া ও কৌতুকেই মগ্ন থাকে তাদের জন্য আখিরাতেও রয়েছে মহা শাস্তি। পক্ষান্তরে মু’মিনদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :

১. দুনিয়া অতি তুচ্ছ ও নগণ্য বস্তু, তাই দুনিয়ার ধোঁকা থেকে সতর্ক থাকা উচিত।

২. সৎকাজে প্রতিযোগিতা করা ভাল।

৩. জান্নাতের প্রশস্ততার বিবরণ জানলাম।

 

ইবনে কাসীর বলেন, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা দুনিয়ার জীবনের সবকিছুই অতি ঘৃণ্য, তুচ্ছ ও নগণ্য। এখানে দুনিয়াবাসীর জন্যে রয়েছে শুধুমাত্র ক্রীড়া-কৌতুক, শান-শওকত, পারস্পরিক গর্ব ও অহংকার এবং ধন-দৌলত ও সন্তান-সন্ততিতে প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ

  زُیِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوٰتِ مِنَ النِّسَآءِ وَ الۡبَنِیۡنَ وَ الۡقَنَاطِیۡرِ الۡمُقَنۡطَرَۃِ مِنَ الذَّهَبِ وَ الۡفِضَّۃِ وَ الۡخَیۡلِ الۡمُسَوَّمَۃِ وَ الۡاَنۡعَامِ وَ الۡحَرۡثِ ؕ ذٰلِكَ مَتَاعُ الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا ۚ وَ اللّٰهُ عِنۡدَهٗ حُسۡنُ الۡمَاٰبِ ﴿۱۴﴾


আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “জান্নাতে একটি চাবুক রাখার জায়গা দুনিয়া ও ওর মধ্যে যা কিছু আছে তার সব থেকে উত্তম। তোমরা পাঠ করঃ (আরবী) অর্থাৎ “পার্থিব জীবন ছলনার ভোগ ব্যতীত কিছুই নয়।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন। আয়াতটির উল্লেখ ছাড়া হাদীসটি সহীহ গ্রন্থেও রয়েছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন)

 

অর্থাৎ পার্থিব জীবনের ফলাফল ক্রীড়া-কৌতুক, জাঁকজমক, পারস্পরিক আত্মম্ভরিতা আর ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। 

এককথায়, দুনিয়ার বিষয়টি দুনিয়াদারদের নিকট ঠিক তেমনই,

 

যেমনটা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তাঁর নিম্নোক্ত আয়াতে বর্ণনা করেছেন-


মানুষের জন্য সুশোভিত করা হয়েছে নারী, সন্তান-সন্ততি, রাশিকৃত স্বর্ণ-রৌপ্য, চিহ্নিত অশ্ব, গবাদি পশুরাজি এবং ক্ষেত- খামারের মতো আকর্ষণীয় বস্তুসামগ্রী। এ সবই হচ্ছে পার্থিব জীবনের ভোগ্য বস্তু। আল্লাহর নিকটই হল উত্তম আশ্রয়। 

[সূরা আলে ইমরান : ১৪]

আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, তিনি পার্থিব জীবনকে বিভিন্ন প্রকারের উপভোগ্য বস্তু দ্বারা সুশোভিত করে দিয়েছেন।

حُبُّ الشَّهَوٰتِ

 বা প্রবৃত্তির ভালবাসা, প্রবৃত্তির আনুগত্য করা। জান্নাত প্রবৃত্তির অনুসরণকে বর্জন ছাড়া লাভ করা সম্ভব নয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: জান্নাত কষ্টদায়ক বস্তু দ্বারা বেষ্টন করে রাখা হয়েছে, আর জাহান্নাম চাকচিক্যময় বস্তু ও প্রবৃত্তির অনুসরণ দ্বারা বেষ্টন করে রাখা হয়েছে।

(সহীহ মুসলিম হা: ২৮২৩)

সুতরাং জান্নাত পেতে হলে কষ্ট ও কাঠিন্যতা অতিক্রম করতে হবে। আর জাহান্নামে যেতে হলে প্রবৃত্তির অনুসরণে কোন বাধা নেই যেমন খুশি তেমন চলতেও কোন বাধা নেই।

 

‘কাম্য জিনিস’ বলতে এমন সব জিনিসকে বুঝানো হয়েছে যা স্বভাবত মানুষ পছন্দ করে ও ভালবাসে। এ সব জিনিসের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া বা তা ভালবাসা অপছন্দনীয় নয়; তবে তা হতে হবে শরীয়তের গণ্ডির ভেতরে; কারণ দুনিয়ার সাজ-সজ্জা ও চাকচিক্য আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে পরীক্ষা।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

“পৃথিবীর ওপর যা কিছু আছে আমি সেগুলোকে তার শোভা-সৌন্দর্য করেছি, মানুষের মধ্যে কর্মের দিক থেকে কে সর্বোত্তম তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য।”

(সূরা কাহ্ফ ১৮:৭)

কাম্য জিনিসের মধ্যে প্রথম উল্লেখ করা হয়েছে নারী; কারণ মানুষ স্বভাবগতভাবে যেসব জিনিসের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয় তার প্রধান হল নারী। একজন পুরুষ সাবালক হবার পর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বোধ করে একজন সঙ্গিণীর। তাছাড়া পুরুষের কাছে নারী সর্বাধিক প্রিয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: মহিলা ও সুগন্ধি আমার কাছে অতি প্রিয় জিনিস। 

(নাসায়ী হা: ৩৯৪৯, আহমাদ হা: ৩৪৮২, হাসান) 

অন্যত্র তিনি বলেন: গোটা দুনিয়া হলো সম্পদ, আর তন্মধ্যে সর্বোত্তম সম্পদ হল সতী-সাধ্বী নারী। 

(সহীহ মুসলিম হা: ৩৭১৬, নাসায়ী হা: ৩২৩২)

 

সুতরাং যদি নারীর প্রতি ভালবাসা শরীয়তের সীমালঙ্ঘন না করে তা হলে তা উত্তম। পক্ষান্তরে নারীরাই সবচেয়ে বেশি ফেতনার কারণ। তাই তাদের থেকে সাবধান হতে হবে।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:

ما تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَي الرِّجَالِ مِنَ النِّسَاءِ

আমি পুরুষদের জন্য নারীর চেয়ে বেশি ক্ষতিকর ও ফেতনার কারণ আর কিছু ছেড়ে যাইনি।

(সহীহ বুখরী হা: ৫০৯৬, সহীহ মুসলিম হা: ২০৯৭-৯৮)

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন:

أَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِيْ إِسْرَائِيْلَ كَانَتْ فِي النِّسَاءِ

বানী ইসরাঈলের মধ্যে সর্বপ্রথম ফেতনা সৃষ্টি হয়েছিল মহিলাদের ব্যাপারে।

(সহীহ মুসলিম হা: ২৭৪২)

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন, এ সবকিছু পরীক্ষাস্বরূপ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَاعْلَمُوْٓا اَنَّمَآ اَمْوَالُکُمْ وَاَوْلَادُکُمْ فِتْنَةٌﺫ وَّاَنَّ اللہَ عِنْدَھ۫ٓ اَجْرٌ عَظِیْمٌ)

“আর জেনে রাখ যে, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পরীক্ষাস্বরূপ এবং আল্লাহরই নিকট মহাপুরস্কার রয়েছে।”

(সূরা আনফাল ৮:২৮)

              সুতরাং দুনিয়ার এসব সম্পদের মোহে আকৃষ্ট হয়ে পরকালকে ভুলে গেলে চলবে না, বরং দুনিয়ার সম্পদকে পরকালের পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। মানুষের সন্তান ও সম্পদ উভয় জগতে তার কাজে আসবে যদি তা দীনের আলোকে গড়ে তুলা যায় । যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:

إذا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثَةِ أَشْيَاءَ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُوْ لَهُ

 

যখন মানুষ মৃত্যু বরণ করে তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তিনটি আমল ব্যতীতঃ সদাকায়ে জারিয়া অথবা এমন জ্ঞান যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় অথবা সৎ সন্তান, যে তার জন্য দু‘আ করবে।

(সহীহ মুসলিম হা: ১৬৩১,ইসেঃ ৪০৭৬,)

তেমনিভাবে মানুষ যখন তার সম্পদের হক আদায় করবে তখন তার সম্পদ তার উপকারে আসবে। আর যদি হক আদায় না করে তবে সম্পদ তার জন্য পরকালে ক্ষতির কারণ হবে।

এগুলো হল দুনিয়ার ভোগের সামগ্রী অথচ আল্লাহ তা‘আলার নিকট যে সমস্ত জিনিস রয়েছে তা এ সমস্ত বস্তু অপেক্ষা উত্তম। সেগুলো হল চিরস্থায়ী জান্নাত, যার নীচ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। আর এগুলো হল তাদের জন্য যারা আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করবে, তাঁর প্রতি ঈমান আনবে, তাঁর আদেশ নিষেধ মানবে।

যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ أُولٰ۬ئِكَ أَصْحٰبُ الْجَنَّةِ)

“এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে তারাই জান্নাতবাসী।”

(সূরা বাকারাহ ২:৮২)

আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(وَبَشِّرِ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ جَنّٰتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهٰرُ)

“আর যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে তাদেরকে সুসংবাদ প্রদান কর যে, তাদের জন্য এমন জান্নাত রয়েছে যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়।”

(সূরা বাকারাহ ২:২৫)

তাদের জন্য তথায় আরো থাকবে পূত-পবিত্র নারীগণ। যারা দুনিয়াবী সমস্ত অপবিত্রতা থেকে পবিত্র। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(حُوْرٌ مَّقْصُوْرٰتٌ فِی الْخِیَامِﮗﺆ فَبِاَیِّ اٰلَا۬ئِ رَبِّکُمَا تُکَذِّبٰنِﮘﺆ لَمْ یَطْمِثْھُنَّ اِنْسٌ قَبْلَھُمْ وَلَا جَا۬نٌّ)

 

“তাঁবুতে থাকবে সুরক্ষিত হূর; সুতরাং তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন কোন নেয়ামত অস্বীকার করবে? পূর্বে কোন মানুষ অথবা জিন তাদের স্পর্শ করেনি।”

(সূরা আর-রহমান ৫৫:৭২-৭৪)

 তাদের প্রতি থাকবে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি; কেননা আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির চেয়ে বড় নি‘য়ামত আর কিছুই হতে পারে না। সুতরাং যারা আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ মোতাবেক কাজ করবে তাদের জন্যই রয়েছে এসমস্ত প্রতিদান।

 

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. দুনিয়াকে বিভিন্ন জিনিস দ্বারা সুশোভিত করে দেয়া হয়েছে।

২. দুনিয়ার মোহে পড়ে পরকালকে ভুলে যাওয়া উচিত নয়।

৩. সন্তান ও সম্পদ সঠিক পন্থায় ব্যবহার করলে উপকারে আসবে অন্যথায় তা ক্ষতির কারণ হবে।

 

 


Post a Comment

0 Comments