Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

হাদীসে ‘সুন্নাত’: ভালো বা মন্দ রীতি বা পদ্ধতি অর্থে,সুন্নাত সম্পর্কে,

 
(খ) হাদীস শরীফে ‘সুন্নাত’: ভালো বা মন্দ রীতি বা পদ্ধতি অর্থেঃ

হাদীস শরীফে সাধারণত সুন্নাত শব্দটি রীতি, পদ্ধতি বা নিয়ম অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে । হাদীসের আলোকে বুঝা যায় কোনো কাজ নিয়মিত রীতিতে পরিণত হলেই তাকে সুন্নত বলা হয় । ভালো বা মন্দ কোনো কর্ম সমাজে প্রচলিত নিয়মে পরিণত হলে তাকে সুন্নাত বলা হয়েছে। 

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) বলেন:

ا كَيْفَ أَنْتُمْ إِذَا لَبِسَتْكُمْ فِتْنَةٌ يَهْرَمُ فِيهَهَا الْكَبِيرُ وَيَرْبُو فِيهَا الصَّغِيرُ وَيَتَّخِذُهَا النَّاسُ سُنَّةَ فَإِذَا غُيِّرَتْ قَالُوا غُفُيّرَتِ السُّنَّةُ قَالُوا وَمَتَى ذَلِكَ يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ قَالَ إِذَا كَثُرَتْ قُرَّاوِؤُكُمْ وَقَلَّتْ فُقَهَاؤُكُمْ وَكَثُرَتْ أُمَرَاؤُكُمْ وَقَلَّتْ أُمَنَاؤُكُمْ وَالْتُمِسَتِ الدُّنْيَا بِعَمَلِ الآخِرَةِ.

“এক সময় আসবে, যখন ফিতনা-ফাসাদ তোমাদের ঘিরে ফেলবে, ফিতনার মধ্যেই শিশুরা বড় হবে, বড়রা বৃদ্ধদ্ধ হবে, মানুষেরা ফিতনাগুলোকেই সুন্নাত হিসাবে গ্রহণ করবে। যখন কোনো ফিতনা সংশোধন করা হবে বা পরিবর্তন করা হবে তখন মানুষেরা (আফসোস করে) বলবে:: সুন্নাত পরিবর্তিত হয়ে গেল! সেই পরিস্থিতিতে তোমরা কি করবে?

তাঁর সঙ্গীগণ জিজ্ঞাসা করেন: কখন এরূপ অবস্থা হবে? তিনি বলেন: যখন তোমাদের মধ্যে আবেদের সংখ্যা বেড়ে যাবে, অভিজ্ঞ ফকীহ আলেমদের সংখ্যা কমে যাবে, তোমাদের নেতা ও আমীরদের সংখ্যা বেড়ে যাবে কিন্তু বিশ্বস্ত ও সৎ মানুষদের সংখ্যা কমে যাবে, যখন। মানুষ দুনিয়া (পাথিব সুবিধা ও ফায়দা) লাভের উদ্দেশ্যে আখেরাতের কর্ম সম্পাদনা করবে।” 

[দারেমী, সুনান, মুকাদ্দিমা, নং ১৮৫]

আভিধানিক অর্থে ‘সুন্নাত' ভালো। বা মন্দ হতে পারে । 

জারীর ইবনু আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন:

جَاءَ نَاسٌ مِنَ الْأَعْرَابِ إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَلَيْهِمُ الصُّوْفُ فَرَأَى سُوءَ حَالِهِمْ قَدْ أَصَابَتْهُمْ حَاجَةٌ فَحَنَّ النَّاسَ عَلَى الصَّدَقَةِ فَأَبْطَئُوا عَنْهُ حَتَّى رُئِيَ ذَلِكَ فِي وَجْهِهِ قَالَ ثُمَّ إِنَّ رَجُلًا مِنَ الْأَنْصَارِ جَاءَ بِصُرَّةٍ مِنْ وَرِقٍ ثُمَّ جَاءَ آخَرُ ثُمَّ تَتَابَعُوا حَتَّى عُرِفَ السُّرُورُ فِي وَجْهِهِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم: "مَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةَ حَسَنَةً فَعُمِلَ بِهَا بَعْدَهُ كُتِبَ لَهُ مِثْلُ أَجْرٍ مَنْ عَمِلَ بِهَا وَلا يَنْقُصُ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْءٌ وَمَنْ سَنَّ فِي الإِسْلامِ سُنَّةَ سَيِّئَةً فَعَمِلَ بِهَهَا بَعْدَهُ كُتِبَ عَلَيْهِ مِثْلُ وِزْرِ

مَنْ عَمِلَ بِهَا وَلَا يَنْقُصُ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَيْءٌ".

فَهَلْ يَنْظُرُونَ إِلا سُنَّةَ الْأَوَّلِينَ فَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّةِ اللهِ تَبْدِيلا وَلَنْ تَجِدَ لِسُنَّةِ اللَّهِ تَحْوِيلا

একদল বেদুঈন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে উপস্থিহ হয়। তাদের পরনে ছিল পশমী পোশাক।

তিনি তাদের করুণ দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা দেখতে পান এবং তাদের অভাব বুঝতে পারেন। তিনি সমবেত সকলকে (এদের জন্য) দান করতে উৎসাহ প্রদান করেন। 

উপস্থিত শ্রোতাগণ বেশ দেরি করেন (তাঁর ওয়াজ শোনার পরেও অনেকক্ষণ পর্যন্ত কেউ কোনো দান করেন না), এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিচলিত হন এবং তাঁর চেহারা মোবারকে তা বোঝা যায়। এমন সময় একজন আনসারী সাহাবী রৌপ্যের একটি থলে নিয়ে আসেন।

এরপর আরেক ব্যক্তি আসেন, এরপর ক্রমাগত মানুষেরা তাদের দানের দ্রব্য নিয়ে আসতে থাকেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারা মোবারাকে আনন্দের ছাপ ফুটে ওঠে। তিনি বলেন: “যদি কেউ ইসলামের মধ্যে কোনো ভালো সুন্নাত চালু করে অতঃপর অন্য মানুষেরা এই ‘ভালো সুন্নাত' অনুযায়ী কর্ম করে তাহলে ঐ প্রবর্তক ব্যক্তি পরবর্তী সকল কর্মকারীর কর্মের সমান সাওয়াব ও পুরস্কার পাবে, তবে এতে পরবর্তী কর্মকারীদের সাওয়াব কমবে না। অনুরূপভাবে যদি কেউ ইসলামের মধ্যে কোনো খারাপ সুন্নাত চালু করে এবং পরে অন্য মানুষেরা এই খারপ সুন্নাত মতো কর্ম করে তাহলে পরবর্তী ভোরের সকল কর্মকারীর কর্মের গোনাহের সমপরিমাণ গোনাহ লাভ করবে প্রথম প্রবর্তক ব্যক্তি, কিন্তু এতে পরবর্তী কর্মকারীদের গোনাহ কমবে না। 

[মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ, সহীহ, কিতাবুল ইলম, নং ৪৮৩০ ]

এখানে আমরা দেখছি যে, ক্ষুদ্র রীতিকেও 'সুন্নাত' বলা যায়। রাসূলুল্লাহ সবাইকে দান করতে উৎসাহ প্রদান করলেন। এতে প্রথম যে ব্যক্তি সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসল তাকে তিনি 'সুন্নাতে হাসানা'র বা সুন্দর রীতির প্রচলক বলে আখ্যায়িত করেছেন। 

যেহেতু তার দেখাদেখি আরো অনেকে দান করতে এগিয়ে এসেছেন কাজেই এই দান কর্মটি একটি সুন্নাত বা রীতি হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছে। আমরা আরো দেখছি যে, ‘সুন্নাত' ভালো বা মন্দ হতে পারে ।

সুন্নাত’ সামাজিক বা ব্যক্তি প্রচলিত হতে পারে । আয়েশা (রা.) বলেছেন:

إِنَّ الْأَنْصَارَ كَانُوا قَبْلَ أَنْ يُسْلِمُوا هُمْ وَغَسَّانُ يُهِلُّونَ لِمَنَاةَ

“ইসলাম গ্রহণের পূর্বে আনসারগণ এবং গাসসান গোত্রের মানুষেরা 'মানাত' দেবীর জন্য হজ্বের ইহরাম বাঁধত।... এটি তাদের পিতা-পিতামহদের মধ্যে ‘সুন্নাত’ (প্রচলিত রীতি) ছিল ।"[সহীহ মুসলিম, কিতাবুল হজ্ব, নং ১২৭৭] 

জাহিলী যুগের রীতিনীতিকেও হাদীসে 'সুন্নাত' বলা হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন:

أَبْغَضُ النَّاسِ إِلَى اللهِ ثَلاثَةٌ ... وَمُبْتَغِ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةَ الْجَاهِلِيَّةِ

“তিন প্রকারের মানুষ আল্লাহ কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত, এক প্রকার হলো: যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যেও জাহেলিয়াতের সুন্নাত অনুসরণ করে

[বুখারী, মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল, সহীহ, ফাতহুল বারী সহ, কিতাবুদ দিয়াত, নং ৬৮৮২] 

 রাসিকুল ইসলাম

Post a Comment

0 Comments