মনে
রাখার জন্য এই ছোট্ট বইটি কাজে লাগতে পারে আপনাদের। পয়েন্ট আকারে সুন্দর ভাবে
সাজানো রয়েছে।
মুসলিম
হয়েও যারা মুনাফিক,যাদের অন্তরের মধ্যে এই আচরণ থেকে থাকে। এতে আছে_১ থেকে ৪২ টি
মুনাফিকের আচরণ, কুরআন ও হাদিসের বানী রেফারেন্স সহো দেওয়া আছে, এর সাথে আছে তাফসীর,সংক্ষিপ্ত
(ব্যাখ্যা, শিক্ষা ইত্যাদি। বিস্তারিত জানতে কুরানের তাফসির পড়ুন।
( একটি
কথা মনে রাখবেন ব্যাক্তিগত কাউকে এটা বলবেন না যে এই, তুই, তুমি, আপনি মুনাফিক,
নিজের আমোল কে নষ্ট করবেন না ) বিচারের দিন কিন্তু ফেঁসে যাবেন। আর প্রত্যেকেই নিজ
নিজ জায়গা থেকে ভাব্বেন যে আমি এর মধ্যে সামিল না তো? বুঝতে পারলে নিজেই সংশোধন
করার চেস্টা করুন আর আল্লাহ্ কে ভয় করুন। কারন মুনাফিকরা আল্লাহ্ ভয় করে না।
pdf Book Created- Rasikul Islam,
❑মুনাফিক'এর সংজ্ঞা বা কাকে বলে❑
📘'মুনাফিক'
একটি
আরবি শব্দ, যার বহুবচন হলো 'মুনাফিকুন'।
এর অর্থ হলো প্রতারক বা
ভন্ড ধার্মিক। ইসলামের পরিভাষায় মুনাফিক বলা হয় এমন ব্যক্তিকে, যে
প্রকাশ্যে ইসলাম চর্চা
করে, কিন্তু গোপনে অন্তরে কুফরি বা ইসলামের প্রতি অবিশ্বাস লালন করে।
তাদের এই দ্বিমুখী নীতিকে বলা হয় 'নিফাক'।
মুনাফিক।
অথবা
❑মুনাফিক শব্দটি আরবি থেকে এসেছে, যার অর্থ হলো এমন ব্যক্তি যে
বাহ্যিকভাবে ইসলাম গ্রহণ করেছে বা মুসলিম হিসেবে পরিচিত, কিন্তু অন্তরে ইসলামের
প্রতি বিশ্বাস রাখে না বা তার কথা ও কাজে অসঙ্গতি থাকে। সহজভাবে, মুনাফিক হলো সেই
ব্যক্তি যে মুখে একটি কথা বলে কিন্তু অন্তরে অন্য কিছু লুকিয়ে রাখে এবং তার কাজ
তার কথার সঙ্গে মিলে না। ইসলামে মুনাফিকি (নিফাক) একটি গুরুতর পাপ হিসেবে বিবেচিত।
📚রেফারেন্স:-
: সূরা আল-বাকারা (২:৮-১০):
📘মুনাফিক পরিচিতি ও প্রকারভেদ:
মুনাফিক বা কপটতা দুই প্রকারের হতে পারে: নিফাক আকবর (বড় কপটতা)
এবং নিফাক আসগর (ছোট কপটতা)।
❑১) নিফাক আকবর (বড়
কপটতা বা মুনাফিকি): এটি এমন কপটতা যেখানে একজন ব্যক্তি
মুখে নিজেকে ধার্মিক বা মুসলিম হিসেবে উপস্থাপন করে, কিন্তু সে আসলে মিথ্যাবাদী।
সে আল্লাহ, আখিরাত (পরকাল) বা দ্বীন (ইসলাম) কোন কিছুতেই বিশ্বাস করে না। সে শুধু লোকদেখানো
নামাজ পড়ে বা লোকদেখানো আল্লাহর যিকির করে, যেমনটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে
মুনাফিকরা করত। তারা জান্নাত, জাহান্নাম বা আল্লাহর একত্ববাদ – কোনো কিছুতেই
বিশ্বাস রাখত না।
বা যখন একজন
ব্যক্তি বাহ্যিকভাবে নিজেকে ধার্মিক বা মুসলিম হিসেবে প্রকাশ করে, কিন্তু অন্তরে
সে মিথ্যাবাদী। অর্থাৎ, সে আল্লাহ, আখেরাত বা দ্বীনের ওপর বিশ্বাস রাখে না। তবে সে
লোক দেখানোর জন্য (রিয়া) মানুষের সাথে সালাত আদায় করে বা আল্লাহর জিকির করে,
যেমনটি নবি মুহাম্মাদ (সা.)-এর যুগে মুনাফিকরা করতো। তারা দ্বীন, জান্নাত,
জাহান্নাম বা আল্লাহর একত্বের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে না।
এই ধরনের মুনাফিকি সবচেয়ে বড় কুফরি।
তারা ইহুদি ও খ্রিস্টানদের চেয়েও নিকৃষ্ট। আল্লাহ তায়ালা তাদের সম্পর্কে বলেছেন:
"নিঃসন্দেহে মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে। আর তাদের জন্য
তুমি কখনো কোনো সহায় পাবে না।"
📚রেফারেন্স:-
(সূরা নিসা:
১৪৫)
— আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই।
❑ ২) নিফাক আসগর
(ছোট কপটতা বা মুনাফিক): এটি মুনাফিকদের কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে নির্দেশ
করে। নবী করীম (সা.) বলেছেন: "মুনাফিকের আলামত তিনটি: যখন কথা বলে মিথ্যা
বলে, যখন ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করে, এবং যখন আমানত রাখা হয় তখন খেয়ানত করে।"
নবী করীম
(সা.) আরও বলেছেন: "চারটি স্বভাব যার মধ্যে থাকবে, সে খাঁটি মুনাফিক হবে (অর্থাৎ, কর্মগত মুনাফিকি)। আর যার মধ্যে এর
কোনো একটি থাকবে, মুনাফিকির একটি স্বভাব তার মধ্যে থাকবে যতক্ষণ না সে তা ত্যাগ করে।
সেই স্বভাবগুলো হলো: যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করে, যখন
ঝগড়া করে অশ্লীল কথা বলে, এবং যখন চুক্তি করে তা ভঙ্গ করে।"
এগুলো
তাদের এমন কাজ যা ছোট কপটতার পর্যায়ে পড়ে। একইভাবে, নামাজে অলসতা করা এবং খুব কম
আল্লাহকে স্মরণ করাও মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: "নিঃসন্দেহে
মুনাফিকরা আল্লাহকে ধোঁকা দিতে চায়, অথচ আল্লাহই তাদের ধোঁকা দেন। যখন তারা
নামাজে দাঁড়ায়, তখন অলসভাবে দাঁড়ায়; লোকদেখানো কাজ করে এবং আল্লাহকে খুব কমই
স্মরণ করে।"
📚রেফারেন্স:-
(সূরা নিসা: ১৪২)
❑চারটি স্বভাব যার মধ্যে আছে, সে খাঁটি মুনাফিক।❑
📘 আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত ৪ টি স্বভাব
ও আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। ৩ টি স্বভাব।
📘Translet(অনুবাদ):🌿রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:"মুনাফিকের আলামত তিনটি:
► ১. মিথ্যা বলা: যখন তারা কথা বলে, মিথ্যা বলে।
► ২. ওয়াদা ভঙ্গ করা: যখন তারা কোনো ওয়াদা করে, তা ভঙ্গ করে।
► ৩. আমানতের খেয়ানত করা: যখন তাদের কাছে কোনো আমানত রাখা হয়, তখন তারা খেয়ানত
করে।
রেফারেন্স: [সহীহ
বুখারী, কিতাবুল ঈমান, হাদীস নং-৩৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৫৯]
📘Translet(অনুবাদ): ►আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) বলেছেন: "চারটি স্বভাব যার
মধ্যে আছে, সে খাঁটি মুনাফিক। আর যার মধ্যে এগুলোর একটি স্বভাব থাকবে, তাতে
মুনাফিকের একটি স্বভাব বিদ্যমান থাকবে, যে পর্যন্ত না তা পরিহার করে।
► (১) যখন কথা বলে
মিথ্যা বলে;
► (২) যখন ওয়াদা করে
ভঙ্গ করে;
► (৩) যখন চুক্তি করে
বিশ্বাসঘাতকতা করে;
► (৪) যখন ঝগড়া করে,
অশ্লীল ও কটু কথা বলে।" অযৌক্তিক, মূর্খ, মন্দ এবং অপমানজনকভাবে আচরণ করে।
📚রেফারেন্স:-
(সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩৪)
— এগুলোও
তাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
►মুনাফিকদের স্বভাব-চরিত্র/লক্ষণ কুরআন সুন্নাহর আলোকে প্রমাণ, সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
🕋মুনাফিকের বৈশিষ্ট্যঃ1
✎বিষয়ঃ ১.কথা বললে মিথ্যা
বলেঃ
📌 সংজ্ঞা: মুনাফিকদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য বা লক্ষণ হলো—তারা সত্যকে
আড়াল করে এবং মিথ্যা বলাকে অভ্যাসে
পরিণত করে।
বা মিথ্যা বলাকে স্বাভাবিক মনে করে তাদের
কথা ও কাজের মাঝে
কোনো মিল থাকে না,
এবং তারা
ঈমানদারদের মাঝে ভণ্ডামির মাধ্যমে
বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।
🌿
কুরআনের বানীঃ
📘Translet(অনুবাদ):
"আর মানুষের মধ্যে এমনও আছে যারা বলে,
'আমরা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান এনেছি', অথচ তারা মু'মিন নয়। তারা আল্লাহ ও
মু'মিনদেরকে ধোঁকা দিতে চায়; অথচ তারা নিজেদেরকেই ধোঁকা দেয় এবং তারা তা উপলব্ধি
করে না।"
📚 রেফারেন্স:
(সূরা আল-বাকারা, ২:৮-৯)
📘Translet(অনুবাদ): “যারা
আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করে, তারাই প্রকৃত মিথ্যাবাদী।”
📚 সূরা আন-নূর: ১
📘Translet(অনুবাদ): ❝তাদের মিথ্যাচার ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণে আমি তাদের অন্তরে কিয়ামত পর্যন্ত
নিফাক ঢুকিয়ে দিয়েছি।❞
📚 (সূরা তাওবাহ: ৭৭)
📗 তাফসির ও ব্যাখ্যা:
👉
অর্থাৎ: যখন সে
কিছু বলে বা কথা শুরু করে, তখন সত্য নয়, বরং মিথ্যার আশ্রয় নেয়।
➡️ ইমাম নববী (রহ.) বলেন:
❝এগুলো এমন নিফাকের লক্ষণ, যা চরিত্রে
প্রকাশ পায়, যদিও বিশ্বাসে সে মুসলমান দাবিদার।❞
📚 (শরহ
মুসলিম)
➡️ ইবনে হাজার (রহ.)
বলেন:
❝এ হাদীসে বর্ণিত নিফাক
হল ‘আমলী নিফাক’—অর্থাৎ কাজের মাধ্যমে, অন্তরের ঈমানহীনতার কারণে নয়, বরং ঈমান
থাকা অবস্থায়—কিন্তু এই বৈশিষ্ট্যগুলো মুনাফিকদের সাথে মিলে যায়।❞
📚 (ফাতহুল
বারী, হাদীস ৩৩)
🌿
হাদীসের প্রমাণ:
📘Translet(অনুবাদ): আবু হুরাইরা
(রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:…১) "মুনাফিকের আলামত তিনটি: যখন কথা বলে মিথ্যা বলে।
📚
রেফারেন্স:
(সহীহ বুখারী, কিতাবুল ঈমান, হাদীস নং-৩৪; ২৬৮২, ২৭৪৯, ৩১৭৮, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৫৮, ৫৯, তিরমিযী ২৬৩২, নাসায়ী ৫০২০, আবূ দাউদ ৪৬৮৮, আহমাদ ৬৭২৯, ৬৮২৫, ৬৮৪০]
🌟.
বাস্তব চিত্র:
·
ধর্মীয়
পরিচয় দেয়, কিন্তু বলে
মিথ্যা কথা।
·
দ্বীনী
বিষয়ে কথা বলেও নিজে
তা মানে না।
·
নিজের
স্বার্থে, লোক দেখানো বা
দুনিয়াবি ফায়দার জন্য
·
❝আমি
তো ওর সঙ্গে ছিলাম
না…❞
·
❝আমি
তো বলিনি!❞
➡️ এগুলো নিফাকের সরাসরি প্রকাশ।
✅ .
উপসংহার:
❝যে ব্যক্তি সর্বদা মিথ্যা বলে, সে আল্লাহর কাছে “কাজ্জাব” (মিথ্যাবাদী) হিসেবে লিখে দেওয়া হয়।❞
❝মিথ্যা নিফাকের মূল স্তম্ভগুলোর একটি।❞
🕋মুনাফিকের বৈশিষ্ট্যঃ 2
✎বিষয়ঃ ২. ওয়াদা বা চুক্তি ভঙ্গ করেঃ
📌 সংজ্ঞা:
§
মুনাফিক
ব্যক্তি কথা দিলে তা
রক্ষা করে না।
সে মুখে প্রতিশ্রুতি দিলেও
অন্তরে থাকে ভিন্ন উদ্দেশ্য।
তাই তাকে বিশ্বাস করা
যায় না—তার ওয়াদা
কখনোই নির্ভরযোগ্য নয়।
🌿 কুরআনের বানীঃ
📘Translet(অনুবাদ):
"তাদের
মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার করেছিল যে, তিনি যদি আমাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহে
কিছু দান করেন, তবে আমরা অবশ্যই সদকা করব এবং সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হব। অতঃপর যখন
তিনি তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহে দান করলেন, তখন তারা তাতে কার্পণ্য করল এবং মুখ ফিরিয়ে
নিল, আর তারা ছিল বিমুখ।" এই আয়াত মুনাফিকদের ওয়াদা ভঙ্গের প্রবণতাকে নির্দেশ
করে)।
📚 রেফারেন্স: (সূরা
আত-তাওবাহ, ৯:৭৫-৭৬)
📘Translet(অনুবাদ):
❝হে মুমিনগণ! তোমরা কেন এমন কথা বলো যা
নিজেরা করো না?
আল্লাহর নিকট এটা
অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ—তোমরা এমন কিছু বলো যা করো না।❞
📚 (সূরা আস-সাফ: ২–৩)
📗 তাফসির ও ব্যাখ্যা:
👉
অর্থাৎ: যখন সে
ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতি দেয়, তখন তা রক্ষা করে না।
➡️ ইমাম নববী (রহ.)
বলেন:
❝এটা নিফাকের এমন বৈশিষ্ট্য, যা আমলের মধ্যে প্রকাশ পায়,
যদিও সে মুখে মুসলিম দাবি করে।❞
📚 (শরহ মুসলিমঃ খণ্ড:
২, পৃষ্ঠা: ৪৬)
➡️ ইবনে হাজার (রহ.)
বলেন:
❝এই
চুক্তি ভঙ্গ সেই ধরণের নয় যা অনিচ্ছাকৃত বা অপারগতার কারণে হয়, বরং ইচ্ছাকৃতভাবে
প্রতারণার উদ্দেশ্যে হয়।❞
📚 (ফাতহুল
বারীঃ ৩, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ১০০)
➡️ ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন:
❝ওয়াদা ভঙ্গ করা নিফাকের মূল ভিত্তিগুলোর একটি। যারা চুক্তি পালন করে না, তারা নিজেদেরই ক্ষতি করে।❞
📚 আল-ফাওয়ায়িদ, পৃষ্ঠা: ১০৯
❑হাদীসের প্রমাণ:
ü আবু
হুরাইরা (রাঃ)-এর হাদীস: "...২) যখন ওয়াদা করে ভঙ্গ করে..." ।
📚 রেফারেন্স: (সহীহ
বুখারী, হাদীস নং-৩৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৫৯)
📝ব্যাখ্যা:- তারা কোনো প্রতিশ্রুতি বা অঙ্গীকার দিলে তা পালন করে না, বরং নির্দ্বিধায় ভঙ্গ করে।
🌟.
বাস্তব
চিত্র:
·
চাকরি বা ব্যবসায়িক চুক্তিতে বলেছে: “কাল টাকা দিচ্ছি” – দেয়নি।
·
পরিবারে বা সমাজে ওয়াদা করে – পরে অস্বীকার করে।
·
দ্বীনি দায়িত্বে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা রাখে না।
✅ .
উপসংহার:
§ ❝মুনাফিকের কথা ও
কাজের মাঝে পার্থক্য থাকে।
তার ওয়াদা শুধুই ঠকানোর কৌশল।❞
❝বিশ্বাসভঙ্গ
মুনাফিকদের চরিত্র।❞
🕋মুনাফিকের বৈশিষ্ট্যঃ 3
✎বিষয়ঃ ৩. আমানতের খেয়ানত করেঃ
📌 সংজ্ঞা:
আমানত মানে হলো: মানুষের নিকট অর্পিত দায়িত্ব
বা গোপন কোনো তথ্য, সম্পদ, দায়িত্ব, পদের বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষা করা।
খেয়ানত হলো: এই আস্থার মর্যাদা না রাখা, গোপন
ফাঁস করা, সম্পদ আত্মসাৎ করা বা দায়িত্বে অবহেলা করা।
🌿 কুরআনের বানীঃ
📘Translet(অনুবাদ):
"হে
ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের সাথে খেয়ানত করো না এবং জেনে বুঝে তোমাদের আমানতের
খেয়ানত করো না।"
📚 রেফারেন্স: (সূরা আনফাল, ৮:২৭)
(মুনাফিকরা প্রকাশ্যে মুমিনদের মতো হলেও
গোপনে খেয়ানত করে)।
📘Translet(অনুবাদ):"
❝নিশ্চয়ই আল্লাহ
তোমাদের আদেশ দেন, যেন তোমরা আমানতসমূহ তাদের যথার্থ মালিকদের নিকট ফেরত দাও।❞
📚 (সূরা আন-নিসা: ৪:৫৮)
📗 তাফসির ও ব্যাখ্যা:
✅ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) বলেন:
❝এটা 'আমালী নিফাক'—কাজের মাধ্যমে নিফাক, যদিও তার ঈমানের দাবি থাকে। কিন্তু এ বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেলে তার মধ্যে মুনাফিকদের পরিচয় ফুটে ওঠে।❞
📚 ফাতহুল বারী, হাদীস ৩৩
✅ ইমাম নববী (রহ.) বলেন:
❝আমানত খেয়ানত করা এমন মারাত্মক গুণ, যা সামাজিক বন্ধন ছিন্ন করে দেয় এবং দ্বীনের মৌলিক নীতিকে লঙ্ঘন করে।
📚 (শরহ মুসলিমঃ খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৪৬)
📖 প্রাসঙ্গিক হাদীস:
ü (উপরে
উল্লেখিত) আবু হুরাইরা (রাঃ)-এর হাদীস: "...আর যখন তার কাছে আমানত রাখা হয়, তখন
খেয়ানত করে।"
📚 রেফারেন্স: (সহীহ
বুখারী, হাদীস নং-৩৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৫৯)
📝ব্যাখ্যা:-
তাদের কাছে কোনো বিশ্বাস, দায়িত্ব বা সম্পদ গচ্ছিত রাখলে তারা তাতে বিশ্বাসঘাতকতা করে।
🌟বাস্তব
চিত্র:
· কোনো
টাকা
বা
জিনিস
জমা
রাখলে
– ফেরত না দেওয়া।
· কাজের
দায়িত্ব
পেলে
– না করা বা গোপনে
ক্ষতি করা।
· সাংবাদিক,
নেতা,
বা
দাঈ
হওয়ার
পর
– সত্য আড়াল করে।
➡️ এসবই খেয়ানতের
বহুরূপ।
✅
. উপসংহার:
❝খেয়ানতকারী
আল্লাহর কাছে ঘৃণিত।❞
❝মুমিনের
বৈশিষ্ট্য—বিশ্বস্ততা, আর মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য—বিশ্বাসভঙ্গ।❞
🕋মুনাফিকের বৈশিষ্ট্যঃ 4
✎বিষয়ঃ ৪. ঝগড়া-বিবাদে অশ্লীল ও কটু কথা বলেঃ
📌
সংজ্ঞা:
মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অন্যতম হলো—তারা ঝগড়া-বিবাদে উত্তপ্ত হলে সীমা ছাড়িয়ে যায়, কুরুচিপূর্ণ ও অশালীন ভাষা ব্যবহার করে, সত্য-মিথ্যার তোয়াক্কা করে না।
🌿
কুরআনের বানীঃ
📘Translet(অনুবাদ):"অসৎ কাজে লিপ্ত ব্যক্তিরা তো তারাই, যারা
আল্লাহর আয়াতসমূহে মিথ্যা বলে এবং যারা সত্যকে প্রত্যাখ্যান করে, তারাই মিথ্যাবাদী।"
📚 রেফারেন্স: (সূরা
আন-নাহল, ১৬:১০৫)
·
(মুনাফিকরা বিতর্কে সত্যের পথ ত্যাগ করে মিথ্যা ও অশালীনতার আশ্রয়
নেয়)।
📘Translet(অনুবাদ): ❝তোমরা একে অপরকে অপমানজনক নামে ডাকো না। ঈমান আনার পর
এ ধরনের নাম ডাকা বড়ই গর্হিত পাপ।❞
📚 (সূরা হুজুরাত: ১১)
🔸 এই আয়াত ইঙ্গিত করে যে, একজন মুমিনের জন্য গালি, কটু কথা ও ঝগড়ায় সীমা লঙ্ঘন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
📗তাফসির ও ব্যাখ্যা:
👉 অর্থ: "যখন সে
ঝগড়ায় জড়ায়, তখন সীমালঙ্ঘন করে (অশ্লীলতা করে)।"
➡️ ইমাম নববী (রহ.) বলেন:
❝ফজর অর্থ—মারাত্মক সীমালঙ্ঘন, গালাগালি,
অপমানজনক কথা বলা, নিজের অবস্থান প্রতিষ্ঠার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া।❞
📚 (শরহ
মুসলিম, হাদীস ৫৮)
➡️ ইবনে হাজার (রহ.) বলেন:
❝এটি
নিফাকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য, কারণ একজন মুমিন ধৈর্যধারণ করে, ঝগড়ায় উত্তেজিত হলেও
চরিত্র হারায় না, অথচ মুনাফিক চিৎকার, গালি এবং ভিত্তিহীন অভিযোগে ভরে যায়।❞
📚 (ফাতহুল
বারী, হাদীস ৩৪)
📖 প্রাসঙ্গিক হাদীস:
📘Translet(অনুবাদ):
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর
(রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: "চারটি স্বভাব যার মধ্যে থাকবে,
সে খাঁটি মুনাফিক... ৪)
যখন ঝগড়া করে, অশ্লীল ও কটু কথা বলে।"
📚 রেফারেন্স:
(সহীহ বুখারী, কিতাবুল ঈমান, হাদীস নং-৩৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৫৮)
📝ব্যাখ্যা:-
§ বিতর্কের সময় সত্যকে বিচ্যুত করে এবং অশালীন, অপমানজনক বা কটু ভাষা ব্যবহার করে।
🌟
বাস্তব
উদাহরণ:
·
কারো
সঙ্গে ঝগড়ায় গালি-গালাজ করা
·
হক-বাতিল বিবেচনা না করে অপমানজনক
ভাষা প্রয়োগ
·
সামাজিক
মাধ্যমে অপদস্থ করার জন্য কুরুচিপূর্ণ
মন্তব্য করা।
✅
উপসংহার:
§
মুখের
❝ভাষা
হলো চরিত্রের দর্পণ❞
§
যে
ব্যক্তি ঝগড়ায় গালি দেয়, অশ্লীল
কথা বলে, মিথ্যা ও
দোষারোপে লিপ্ত হয়—সে নিফাকের
চিহ্ন বহন করে।
এমন আচরণ একমাত্র আল্লাহর
ভয়বিহীন
ও
হৃদয়
শূন্য
মানুষই করে।
🕋মুনাফিকের বৈশিষ্ট্যঃ 5
✎বিষয়ঃ ৫. আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ)-কে ঠাট্টা-বিদ্রূপ উপহাস করাঃ
🌿 কুরআনের বানীঃ
·
বর্ণনা: তারা আল্লাহ, রাসূল (সাঃ) এবং মুমিনদেরকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে, বিশেষত যখন তারা একা থাকে বা নিজেদের দলের মধ্যে থাকে। তারা ঈমানের বিষয়ে বিদ্রূপাত্মক মন্তব্য করে।
📘Translet(অনুবাদ):
"আর যদি তুমি তাদেরকে (তাদের কাজের কারণ) জিজ্ঞেস করো, তবে তারা অবশ্যই বলবে, 'আমরা তো কেবল কৌতুক ও খেল-তামাশা করছিলাম।' বলো, 'তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলকে নিয়ে ঠাট্টা করছিলে?'"
📚 রেফারেন্স: (সূরা
আত-তাওবাহ, ৯:৬৫৬৬)
এই আয়াত মুনাফিকদের জঘন্য স্বভাব প্রকাশ করে।
📘Translet(অনুবাদ):
·
"তারা যখন ঈমানদারদের সাথে মিলিত হয়, তখন বলে, 'আমরা ঈমান এনেছি।' আর যখন তাদের শয়তানদের (নেতাদের) সাথে একান্তে মিলিত হয়, তখন বলে, 'আমরা তো তোমাদের সঙ্গেই আছি, আমরা শুধু (মুমিনদের সাথে) উপহাস করছিলাম।'"
📚রেফারেন্স:-
(সূরা আল-বাকারা,
২:১৪)
📖 প্রাসঙ্গিক হাদীস: 📘Translet(অনুবাদ):
জাবির ইবনে
আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তাবুক অভিযানের সময় একদল মুনাফিক রাসূল (সাঃ) ও
তাঁর সাহাবীদের নিয়ে উপহাস করেছিল।
📚 রেফারেন্স: (আবু
দাউদ, তিরমিযী)
📖 হাদীসের ভিত্তিতে ব্যাখ্যা:
➡️
ইবনে
কাসীর
(রহ.)
বলেন:
❝এই আয়াত এমন লোকদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে, যারা রাসূল ﷺ ও তাঁর সাহাবিদের সম্পর্কে ব্যঙ্গ করত। তাদের এই উপহাসমূলক কথা তাদের ঈমানকে বাতিল করে দিয়েছে।❞
📚 (তাফসির ইবন কাসীর, তাওবাহ: ৬৫)
➡️
ইমাম
কুরতুবী
(রহ.)
বলেন:
❝এই আয়াত প্রমাণ করে, কেউ যদি আল্লাহ, কুরআনের আয়াত বা রাসূল ﷺ-কে নিয়ে উপহাস করে, তাহলে সে কুফরীতে পতিত হয়, তার ঈমান নষ্ট হয়ে যায়।❞
(আল-জামি লি আহকামিল কুরআন – ইমাম কুরতুবী:
📚 (আল-জামি লি আহকামিল কুরআন)
দলিল নং: ৮/২৮০ (দার আলকুতুব আলইলমিয়্যাহ সংস্করণ অনুযায়ী)
📗 .
বৈশিষ্ট্যটির ভয়াবহতা ও রূপ:
·
দ্বীন বা শরিয়তের বিধানকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা
·
নামাজ, হিজাব, সুন্নাহ পালনকারীদের ব্যঙ্গ করা
·
রাসূল ﷺ-এর জীবনাচরণকে "পুরোনো যুগের ব্যাপার" বলা
·
ধর্মীয় আলোচনা চলাকালে কটূক্তি করা বা গুরুত্বহীন বানিয়ে তোলা
🌟.
বাস্তব উদাহরণ (আজকের সমাজে):
·
কেউ বলে: “সব মাওলানাই ভণ্ড”, বা “দাড়ি রাখলে কি বেহেশত পাওয়া যায়?”
·
ইসলামী পোশাক বা পর্দাকে কটাক্ষ করে: “এই গরমে কালো কাপড় কেন?”
·
রাসূল ﷺ-এর আদর্শ নিয়ে ঠাট্টা: “তাঁর যুগ আর এখনকার যুগ এক নাকি?”
➡️ এ ধরনের কথা নিছক ঠাট্টা নয়—বরং তা ঈমাননাশকারী গর্হিত কুফরি।
✅ . উপসংহার:
§ ❝আল্লাহ, কুরআন ও রাসূল ﷺ-এর সম্মান রক্ষা করা—ঈমানের শর্ত।❞
এই বিষয়ে অল্পসল্প ঠাট্টা করাও মারাত্মক, যা সরাসরি ঈমানকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য হল—তারা দ্বীনকে গুরুত্বহীন মনে করে ও ঠাট্টা করে, যা সর্বনাশের কারণ।
🕋মুনাফিকের বৈশিষ্ট্যঃ 6
✎বিষয়ঃ ৬. মুমিনদের মূর্খ বা নির্বোধ মনে করাঃ
🌿 কুরআনের বানীঃ
📘Translet(অনুবাদ):
"যখন তাদেরকে বলা হয়, 'মানুষ যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ঈমান আনো', তখন তারা বলে, 'আমরা কি সেভাবে ঈমান আনব, যেভাবে নির্বোধেরা ঈমান এনেছে?' সাবধান! ওরাই নির্বোধ, কিন্তু তারা তা জানে না।"
📚 রেফারেন্স: (সূরা
আল-বাকারা, ২:১৩)
📚
তাফসীর ও ব্যাখ্যা:
🔸
তাফসীর ইবনে কাসীর
(রহঃ)
"মানুষ" বলতে
সাহাবায়ে কিরাম বোঝানো হয়েছে। মুনাফিকরা তাদের ঈমানকে তাচ্ছিল্য করে বলত — তারা
তো সরল-মূর্খ! অথচ আল্লাহ জানিয়ে দেন, মূলত তারাই (মুনাফিকরাই) প্রকৃত মূর্খ।
📘 তাফসীর ইবনে কাসীর, সূরা আল-বাকারা:
১৩
🔸 তাফসীর
কুরতুবী (রহঃ):
মুনাফিকরা
নিজেদের চালাক মনে করত কারণ তারা মুখে মুসলিম, অন্তরে কাফির। তারা মনে করত এতে
তারা দুনিয়ারও, আখিরাতেরও সুবিধা পাবে। অথচ কুরআন তা মূর্খতা বলেই চিহ্নিত করেছে।
📘 আল-জামে লি আহকামিল কুরআন,
কুরতুবী, সূরা আল-বাকারা: ১৩
🔸 তাফসীর আস-সা‘দী (রহঃ):
ঈমান
আনা ও সত্য মেনে নেওয়া — এটি বুদ্ধিমত্তার পরিচয়। যারা ঈমানদারদের মূর্খ ভাবে,
তারাই প্রকৃত জাহিল।
📘 তাফসীর আস-সা‘দী, সূরা আল-বাকারা:
১৩
📝ব্যাখ্যা:-
§ তারা নিজেদেরকে বেশি বুদ্ধিমান মনে করে
এবং মুমিনদেরকে অজ্ঞ, সহজ-সরল বা কম বুদ্ধি সম্পন্ন ভেবে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে।
🌟 শিক্ষণীয় দিক:
1.
মুমিনদের সরলতা ও আনুগত্যকে তুচ্ছ ভাবা মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য।
2.
আল্লাহর দৃষ্টিতে ঈমানের অনুসরণই প্রকৃত প্রজ্ঞা।
3.
বাহ্যিক অভিনয় বা চালাকি দ্বারা অন্তরের সত্য আড়াল করা যায় না।
4. সত্যকে
গ্রহণ না করে তা তাচ্ছিল্য করাই প্রকৃত মূর্খতা।
5. সৎ ও
ঈমানদার ব্যক্তিদের সরলতা, আনুগত্য, নম্রতা—এসবকে হেয় করা মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য।
6. আল্লাহর
চোখে প্রকৃত বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি, যে ঈমান ও সত্যের পথে চলে।
🕋মুনাফিকের বৈশিষ্ট্যঃ
7
✎বিষয়ঃ ৭. আল্লাহর পথে ব্যয় করতে কৃপণতাঃ
তারা আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ ব্যয় করাকে বোঝা মনে করে এবং তা থেকে দূরে থাকতে চায়।
🌿 কুরআনের বানীঃ
বর্ণনা: তারা আল্লাহর পথে দান-সদকা করতে কৃপণতা করে। তারা মনে করে, আল্লাহর পথে ব্যয় করা অপচয়।
📘Translet(অনুবাদ):
"আর তারা বলে, 'আল্লাহর রাসূলের সঙ্গীদের জন্য ব্যয়
করো না, যাতে তারা সরে পড়ে।' অথচ আকাশ ও পৃথিবীর ধনভাণ্ডার আল্লাহরই।
কিন্তু মুনাফিকরা তা বুঝে না।"
📚 রেফারেন্স: (সূরা
আল-মুনাফিকুন, ৬৩:৭)
📘Translet(অনুবাদ):
"আর তাদের মধ্যে এমনও আছে যারা
বলে, 'আমরা আল্লাহকে বিশ্বাস করি এবং পরকালকেও', অথচ তারা নিজেদের অন্তরকে অস্বীকার
করে।"
📚 রেফারেন্স: (সূরা
আল-বাকারা, ২:৮)
📘Translet(অনুবাদ):
“পুরুষ
ও নারী মুনাফিকরা পরস্পরের সমান;
... তারা
তাদের হাত গুটিয়ে রাখে (ব্যয় করে না)। তারা
আল্লাহকে ভুলে গেছে, তাই আল্লাহও তাদেরকে ভুলে গেছেন।”
📖 [সূরা আত-তাওবা: ৬৭]
🔹 “হাত গুটিয়ে রাখা” মানে, আল্লাহর
পথে ব্যয় না করে কৃপণতা করা।
📘Translet(অনুবাদ):
“তোমাদেরকে
আহ্বান করা হচ্ছে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করার জন্য,
অথচ তোমাদের কেউ কেউ কৃপণতা করছে।
ü
যে কৃপণতা করে, সে আসলে নিজেরই
ক্ষতি করে।”
📖
[সূরা মুহাম্মদ: ৩৭]
🔹 আল্লাহর
রাস্তায় ব্যয় থেকে বিরত থাকা — নিজের আখিরাত ধ্বংস করা।
📖 প্রাসঙ্গিক হাদীস:
আবু
হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: "দান করলে সম্পদ কমে না।"
📚রেফারেন্স:- (সহীহ
মুসলিম, কিতাবুল বিরর ওয়াস সিলাহ, হাদীস নং-২৫৮৮)
“কৃপণতা হলো এমন
একটি গুণ, যা তোমাদের পূর্ববর্তীদের ধ্বংস করেছে।”
📚
[মুসলিম: ২৫৩৫]
🔹 যারা আল্লাহর পথে ব্যয় করতো না, তারা শেষ
পর্যন্ত ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
(মুনাফিকরা
এর বিপরীত ধারণা করে)।
✅ শিক্ষা:
· ❝আল্লাহর পথে ব্যয় করতে কৃপণতা করা — এটি
মুনাফিকদের গুণ; তারা চায় না দ্বীন এগিয়ে যাক, বরং নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনে।❞
📖
[সূরা তাওবা: ৬৭]
🕋 মুনাফিকের
বৈশিষ্ট্যঃ 8
✎বিষয়ঃ
৮. নামাজে অলসতা ও লোক দেখানো ইবাদত করাঃ
🌿
কুরআনের বানীঃ
❑Translet(অনুবাদ):
"নিশ্চয়ই
মুনাফিকরা আল্লাহর সাথে ধোঁকাবাজি করে, আর তিনি তাদের ধোঁকা দেন। যখন তারা সালাতে দাঁড়ায়, তখন অলসভাবে
দাঁড়ায়—শুধু মানুষকে দেখানোর জন্য। আর তারা আল্লাহকে কমই স্মরণ করে।"
📚 রেফারেন্স: (সূরা আন-নিসা, ৪:১৪২)
🔹 এই আয়াত মুনাফিকদের তিনটি বৈশিষ্ট্য একত্রে তুলে ধরে:
ü অলসভাবে নামাজে দাঁড়ানো।
ü লোক দেখানো ইবাদত।
ü আল্লাহর স্মরণে গাফেলতা।
📗
. তাফসির
ও
ব্যাখ্যা:
➡️
ইবনে
কাসীর
(রহ.)
বলেন:
❝এটি মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য—তারা কেবল লোকের দৃষ্টির জন্য নামাজ পড়ে; আল্লাহর সন্তুষ্টি তাদের উদ্দেশ্য নয়।❞
📚 (তাফসির ইবনে কাসীর)
➡️ ইমাম
কুরতুবী
(রহ.)
বলেন:
❝তারা নামাজে দেরি করে, অলসভাবে দাঁড়ায় এবং রিয়া করে—এগুলো ঈমানহীনতার পরিচয়।❞
📚 (আল-জামি লি আহকামিল কুরআন-১৪২)
➡️ তাফসির আস-সা‘দী:
❝এই আয়াতে আল্লাহ মুনাফিকদের এমন নামাজের বর্ণনা দিয়েছেন, যাতে আন্তরিকতা নেই, আল্লাহর ভয় নেই, এবং উদ্দেশ্য হলো লোকদের সন্তুষ্টি।❞
📚 তাফসির আস-সা‘দী, সূরা আন্-নিসা, আয়াত: ১৪২
📖 প্রাসঙ্গিক হাদীস: 📘Translet(অনুবাদ): ❝এটাই মুনাফিকের নামাজ—সে
সূর্য ডোবার অপেক্ষায় বসে থাকে, সূর্য ডোবার সময় দাঁড়িয়ে চার রাকাআত খুব দ্রুত পড়ে;
সে তাতে আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে।❞
📚 রেফারেন্স: (বুখারী,
মুসলিম ৬২২)।
📝ব্যাখ্যা:-
·
তাদের ইবাদতে একনিষ্ঠতা থাকে না, বরং
মানুষের প্রশংসা পাওয়ার উদ্দেশ্যে লোক দেখানো ইবাদত করে এবং সালাতের প্রতি উদাসীন
থাকে।
·
অলসতা এবং গুরুত্বহীনতা — নামাজকে হালকাভাবে
নেওয়া মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য।
✅ শিক্ষা:
ü
❝যে
ব্যক্তি নামাজে অলসতা দেখায় ও লোক দেখানোর
জন্য ইবাদত করে, সে মুনাফিকদের
মতো আচরণ করছে।❞
📖
[সূরা নিসা: ১৪২]
🌟 বাস্তব উদাহরণ:
·
🌙 নামাজ শুধু রুকু-সিজদার নাম নয়, এটি হৃদয়ের আমল।
·
শুধু লোকজন দেখলে নামাজ পড়ে।
·
অলসতা ও রিয়া — ঈমানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
·
তাড়াহুড়ো করে নামাজ পড়ে; খুশু-খুজু নেই।
✅ . উপসংহার:
👉 ❝যে নামাজে খুশু-খুজু ও আন্তরিকতা নেই, সে নামাজ মুনাফিকদের আদলে রূপ নেয়।❞
👉 নামাজে অলসতা ও রিয়ার মিশ্রণ, অন্তরের রোগ এবং নিফাকের আলামত।
🕋 মুনাফিকের
বৈশিষ্ট্যঃ 9
✎বিষয়ঃ ৯.দ্বিচারিতা ও উভয় পক্ষের সাথে সম্পর্ক রাখা:
তারা মুমিনদের মাঝেও থাকতে চায়, আবার কাফিরদের সাথেও সম্পর্ক বজায় রাখে — উভয় পক্ষকেই ধোঁকা দেয়।
🌿 কুরআনের বানীঃ
📘Translet(অনুবাদ):
"তারা যখন ঈমানদারদের সাথে মিলিত হয়,
তখন বলে, 'আমরা ঈমান এনেছি।' আর যখন তাদের শয়তানদের (নেতাদের) সাথে একান্তে মিলিত
হয়, তখন বলে, 'আমরা তো তোমাদের সঙ্গেই আছি, আমরা শুধু (মুমিনদের সাথে) উপহাস করছিলাম।'"
📚 রেফারেন্স:
(সূরা আল-বাকারা, ২:১৪)
📘Translet(অনুবাদ):
"তারা বিশ্বাসী ও কাফিরদের মধ্যে দোদুল্যমান। তারা এদের দিকেও নয়, ওদের দিকেও নয়।"
📚 রেফারেন্স: (সূরা
আন-নিসা, ৪:১৪৩)
📘Translet(অনুবাদ):
“তুমি কি তাদের দেখনি, যারা মুনাফিকতা করেছে? তারা সেই কাফির ভাইদেরকে বলে…
(অর্থাৎ
তারা কাফিরদের
সাথেও গভীর সম্পর্ক
রাখে)।”
📖 [সূরা হাশর: ১১]
📗 তাফসির ও ব্যাখ্যা:
🔹 (১) তাফসির ইবনে
কাসীর:
❝মুনাফিকরা কাফিরদের সাথেও সম্পর্ক
রাখে, মুমিনদের সাথেও। নিজেদের স্বার্থ যেখানে, সেখানেই মুখ ফেরায়।❞
📚 ইবনে
কাসীর, সূরা আন্-নিসা: আয়াত ১৪৩
🔹 (২) তাফসির কুরতুবী:
❝তারা
কোন এক দলের সঙ্গে সত্য ও আন্তরিকতার সম্পর্ক রাখে না। বরং উভয় পক্ষকে ধোঁকা দেয়।
এটাই নিফাকের প্রকৃতি।❞
📚 আল-জামি
লি আহকামিল কুরআন, আন্-নিসা: ১৪৩
🔹 (৩) তাফসির আস-সা‘দী:
❝তারা
দ্বিচারিতা করে, নিজেরাই জানে না কার দলে আছে। কখনো মুমিন, কখনো কাফিরদের পক্ষ
নেয়।❞
📚 তাফসির
আস-সা‘দী, সূরা আন্-নিসা: ১৪৩
📚হাদীস দ্বারা ইঙ্গিত:
ü “সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি সেই দ্বিমুখো ব্যক্তি,
যে একদলের কাছে এক রূপে যায়,
আরেক দলের কাছে অন্য রূপে।”
📖
[সহীহ বুখারী: 3518, ৬০৫৮, মুসলিম 2516]
❗ বাস্তব
চিত্র:
·
মুসলমানদের
সামনে ধর্মপ্রাণ ও দ্বীনদার সাজে,
·
কিন্তু
ভিন্ন সমাজে ইসলামকে ঠাট্টা করে,
·
সুযোগ
বুঝে যেদিকে লাভ বেশি, সেদিকেই যোগ দেয়।
🌟
শিক্ষণীয়
দিক:
✅ মুমিন
সর্বদা স্পষ্ট অবস্থানে থাকে – সত্যের পক্ষে।
❌ মুনাফিক
সুবিধাবাদী – কখনো এদিক, কখনো
ওদিক।
📝ব্যাখ্যা:-
তারা
নিজেদের সুবিধামতো মুমিন ও কাফির উভয় দলের সাথে মিশে যায় এবং দু'মুখী নীতি
অবলম্বন করে।
এরা সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ায়, সত্য ও মিথ্যার মাঝে দোল খায় এবং বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়।
🕋মুনাফিকের বৈশিষ্ট্যঃ
10
বিষয়ঃ ১০. মুমিনদের বিপদে আনন্দিত হওয়া ও সুখে অসন্তুষ্ট হওয়াঃ
🌿 কুরআনের বানীঃ
📘Translet(অনুবাদ):
"যদি তোমাদের কোনো কল্যাণ স্পর্শ করে,
তবে তা তাদেরকে কষ্ট দেয়। আর যদি তোমাদের কোনো মন্দ স্পর্শ করে, তবে তারা তাতে আনন্দিত
হয়।"
📚 রেফারেন্স: (সূরা
আত-তাওবাহ, ৯:৫০)
📘Translet(অনুবাদ):
“তোমাদের
কোনো কল্যাণ হলে তা তাদের খারাপ লাগে, আর যদি তোমাদের কোনো অকল্যাণ ঘটে, তারা তাতে
খুশি হয়।”
📖
[সূরা আলে ইমরান: ১২০]
🔹 এটা মুনাফিকদের অন্তরের
প্রকৃত অবস্থা — ঈমানদারদের সাফল্য তাদের অসন্তুষ্ট করে।
🎓 ইমাম ইবন কাসীর (রহ.) বলেন:
· ❝এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা জানিয়ে দেন যে, মুনাফিকরা প্রকৃতপক্ষে
মুমিনদের শত্রু—তারা তাদের কল্যাণে কষ্ট পায়, আর বিপদে আনন্দিত হয়।❞
📚 তাফসীর ইবন কাসীর, আলে ইমরান:
১২০
📖 প্রাসঙ্গিক
হাদীস:
📘Translet(অনুবাদ): “হিংসা মানুষকে খেয়ে
ফেলে, যেমন আগুন কাঠ খেয়ে ফেলে।”
📚 সুনান আবু দাউদ: ৪৯০৩, হাসান
➡️ মুনাফিকদের অন্তরে ঈমানের আলো নেই, আছে হিংসা ও বিদ্বেষের আগুন।
Translet(অনুবাদ):
তোমাদের
কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না,
যতক্ষণ না সে তার
ভাইয়ের জন্যও তা-ই ভালোবাসে যা সে নিজের জন্য ভালোবাসে।”
📖 [সহীহ বুখারী: ১৩, সহীহ মুসলিম: ৪৫]
🔹 বিপরীতে, মুনাফিকরা চায় না মুমিনদের ভালো হোক — বরং হিংসা ও ক্ষতির কামনা করে।
🌟 শিক্ষণীয় দিক:
·
যারা মুসলমান ভাইয়ের
সাফল্যে জ্বলে, উন্নতিতে কষ্ট পায়, তারা অন্তরে মুনাফিকদের গুণ লালন করছে।
·
প্রকৃত মুমিন ভাইয়ের
দুঃখে দুঃখিত হয়, সুখে খুশি হয়।
·
ঈমান হৃদয়ের বিষয়, আর
এই ঈর্ষা ও বিদ্বেষ তার বিপরীত।
✅ সংক্ষেপে শিক্ষা:
ü মুমিনদের দুর্দশা,
দুঃখ বা বিপদে যারা খুশি হয়—সে অন্তরে নাফাক পুষছে। এটাই মুনাফিকের নিখুঁত চিহ্ন। ❝যে ব্যক্তি মুমিনদের বিপদে খুশি হয় ও
কল্যাণে ঈর্ষা করে, সে মুনাফিকের চিহ্ন বহন করে।❞
📖 [সূরা আলে ইমরান: ১২০]
🕋মুনাফিকের বৈশিষ্ট্যঃ
11
বিষয়ঃ ১১. সৎকাজে বাধা দেওয়া এবং মন্দ কাজের নির্দেশ দেওয়া ভালো কাজে আদেশ দিতে ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করতে অনীহা:
🌿 কুরআনের বানীঃ
- বর্ণনা: তারা সমাজে ভালো কাজের প্রসার চায় না এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করতেও আগ্রহী হয় না। বরং অনেক সময় তারা মন্দ কাজকে সমর্থন করে।
📘Translet(অনুবাদ):
"মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারীরা একে অপরের
অংশ। তারা অসৎ কাজের আদেশ দেয় এবং সৎ কাজ থেকে নিষেধ করে। আর তারা
তাদের হাতকে সংকীর্ণ করে রাখে (দান করে না)।"
📚 রেফারেন্স: (সূরা আত-তাওবাহ, ৯:৬৭)
📘
. তাফসির
(ইবনু
কাসীর,
তাবারী,
কুরতুবী):
🔹 এই আয়াতে আল্লাহ
মুনাফিকদের চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। তারা মন্দকে ভালো
বলে প্রচার করে, আর ভালো
কাজের প্রতি মানুষকে উদাসীন করে তোলে।
🔹
তাফসিরুল
কুরতুবী
বলেন:
❝তারা গীবত,
অপবাদ, জঘন্য কাজকে উৎসাহ দেয়, আর নামায,
যাকাত, সত্য বলা ইত্যাদি
কাজে বাধা দেয়।❞
🔹
তাফসির
ইবনু
কাসীর
বলেন:
❝মুমিনরা যেখানে
একে অপরকে ভালো কাজে আদেশ
করে, মুনাফিকরা ঠিক উল্টো করে—তারা বদঅমলকেই উসকে
দেয়।❞
📚 হাদীস থেকে সমর্থন:
📘Translet(অনুবাদ): 📖
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
“তোমাদের কেউ যদি কোনো মন্দ কাজ দেখে,
সে যেন তা হাতে
প্রতিরোধ করে,
না পারলে কথার
মাধ্যমে, তা-ও
না পারলে অন্তরে
ঘৃণা করে — এটাই
হল ঈমানের সবচেয়ে দুর্বল স্তর।”
📖
[সহীহ মুসলিম: ৪৯]
➡️
এই হাদীস প্রমাণ করে যে, মন্দকে
মেনে নেওয়া নিফাকের আলামত হতে পারে, যদি
মানুষ তা স্বেচ্ছায় প্রশ্রয়
দেয়।
📝ব্যাখ্যা:-
· তারা ভালো কাজ থেকে বিরত থাকে এবং অন্যদেরকেও ভালো কাজ করতে নিষেধ করে। একই সাথে মন্দ কাজের আদেশ দেয় এবং তাতে উৎসাহিত করে।
🌟
বাস্তব
উদাহরণ:
·
কোনো
ভালো কাজ করতে গেলে
বলে: “এইটা করে কী
হবে?”, “সময় নষ্ট করো
না।”
·
দ্বীনের
পথে চললে ব্যঙ্গ করে:
“মাওলানা হইছো নাকি?”
·
নিজে
গুনাহে লিপ্ত এবং অন্যকেও গুনাহের
দাওয়াত দেয়।
✅ . উপসংহার:
§ ❝যে ব্যক্তি অন্যকে ভালো কাজের দাওয়াত দেয়, সে একটি উম্মাহ গড়ার কাজ করে।❞
§ ❝আর যে সৎকাজে বাধা দেয়, সে সমাজে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে।❞
§ মুনাফিকদের অন্তরে খোদাভীতি নেই, তাই তারা গুনাহকে প্রশ্রয় দেয় ও দ্বীনদারদেরকে কষ্ট দেয়।
🕋মুনাফিকের বৈশিষ্ট্যঃ
12
বিষয়ঃ ১২. আল্লাহর শরীয়তের ফয়সালা অপছন্দ করা ও তাগুতের কাছে ফয়সালা চাওয়াঃ
🌿 কুরআনের বানীঃ
📘Translet(অনুবাদ):
"আর যখন তাদেরকে বলা হয়, 'আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার দিকে এবং রাসূলের দিকে
আসো', তখন মুনাফিকদেরকে তুমি দেখবে তোমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।"
"তোমার পালনকর্তার কসম! তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তারা নিজেদের বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে (হে রাসূল) ফয়সালাকারী না বানায়।"
📚 রেফারেন্স: (সূরা
আন-নিসা, ৪:৬০-৬১,৬৫)
📘Translet(অনুবাদ):
“তাদের
আল্লাহ ও রাসূলের শাসনের দিকে আহ্বান করা হলে, তাদের একদল মুখ ফিরিয়ে নেয়... এ
কারণেই, তাদের অন্তরে ব্যাধি
রয়েছে।”
📖 [সূরা নূর: ৪৮–৫০]
🔹
আল্লাহর
বিচার
মানতে
অস্বীকৃতি
— এটা
অন্তরের
রোগ
ও
মুনাফিকির
চিহ্ন।
📘
২.
তাফসির
(ইবনু
কাসীর,
কুরতুবী,
তাবারী):
🔹
ইবনু কাসীর (রহ.) বলেন:
❝এই আয়াতে সেই
সব লোকদের কথা বলা হয়েছে
যারা মুখে ঈমান দাবি
করে, কিন্তু বাস্তবে আল্লাহর শরীয়ত অনুযায়ী ফয়সালাকে মানতে চায় না বরং
তাগুতের (অন্যায় বা শরীয়তবিরোধী আদালত)
দারস্থ হয়।❞
🔹
কুরতুবী (রহ.) বলেন:
❝তাগুত
বলতে বোঝায় – প্রত্যেক সে ব্যক্তি বা
ব্যবস্থা, যারা আল্লাহর শরীয়তের
বিরোধিতা করে এবং নিজের
মত বা মানবীয় আইনকে
বড় করে দেখে।❞
❝তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে
না, যতক্ষণ না তার কামনা-বাসনা আমার আনা শরীয়তের অনুসরণ করে।❞
📚 (শরহুস
সুন্নাহ, হাদীস: ১৬৪)
🔸 ইমাম মালিক (রহ.) বলেন:
❝যে
ব্যক্তি আল্লাহর শরিয়ত বাদ দিয়ে অন্য
কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে, সে ‘তাগুত’
এর অনুসারী।❞
📚 (মাওকুফ অথর, "তাফসির কুরতুবী")
✅ শিক্ষা:
·
❝যে
আল্লাহর শরীয়তকে অগ্রাহ্য করে এবং তাগুতি আইনকে পছন্দ করে — সে ঈমানদার নয়, বরং
এক মারাত্মক মুনাফিক।❞
⚠ 🌟. বাস্তব নিদর্শন:
·
ইসলামী
ফতোয়ার পরিবর্তে সেক্যুলার কোর্টে গিয়ে বিচারে বিশ্বাস
রাখা
·
শরীয়তের
সিদ্ধান্তকে অবজ্ঞা করা
·
অন্যায়ের
পক্ষে সুবিধামতো ধর্মকে বাদ দিয়ে তাগুতের
রায় খোঁজা।
✅ উপসংহার (হাদীস অনুযায়ী):
·
তাগুতের কাছে বিচার চাওয়া মানেই হল—আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অস্বীকার করা।
·
রাসূল ﷺ স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তাঁর ফয়সালাকে অস্বীকার করে কেউ মুমিন হতে পারে না।
➡️ এই হাদীস স্পষ্ট করে দেয়—আল্লাহর শরীয়তের বাইরে ফয়সালা চাওয়া নিফাকের লক্ষণ।
🕋মুনাফিকের বৈশিষ্ট্যঃ
13
বিষয়ঃ ১৩. কাপুরুষতা ও ভীরুতাঃ
বর্ণনা: তারা
অত্যন্ত ভীতু প্রকৃতির হয়। যখনই কোনো বিপদ বা ঝুঁকির আশঙ্কা দেখা যায়, তখন তারা পেছনে
হটে যায় এবং অজুহাত খুঁজে। জিহাদের ক্ষেত্রে তাদের এই ভীরুতা বিশেষভাবে প্রকাশ পায়।
🌿 কুরআনের বানীঃ
📘Translet(অনুবাদ):
"আর যখন তোমরা তাদের দিকে তাকাও, তাদের শরীর তোমাদেরকে মুগ্ধ করবে; আর যদি তারা কথা বলে, তাদের কথা তোমরা শুনবে। যেন তারা দেয়ালে ঠেস দেওয়া খুঁটি। তারা মনে করে যে, প্রতিটি চিৎকার তাদেরই বিরুদ্ধে। তারাই শত্রু, সুতরাং তাদের সম্পর্কে সতর্ক থাকো।"
📚 রেফারেন্স: (সূরা
আল-মুনাফিকুন, ৬৩:৪)
📘Translet(অনুবাদ):
"যখন তোমাদের উপর ভয় আসে, তখন তারা তোমাদেরকে
দেখতে পায় না; আর যখন ভয় চলে যায়, তখন তোমাদের প্রতি তীক্ষ্ণ জিহ্বা বিস্তার করে,
ধন-সম্পদের প্রতি লোভী হয়।"
📚 রেফারেন্স: (সূরা
আল-আহযাব, ৩৩:১৯)
📘Translet(অনুবাদ):
"যখন তোমাদের উপর ভয় আসে, তখন তারা তোমাদেরকে দেখতে পায় না; আর যখন ভয় চলে যায়, তখন তোমাদের প্রতি তীক্ষ্ণ জিহ্বা বিস্তার করে, ধন-সম্পদের প্রতি লোভী হয়। তারা ঈমান আনেনি, তাই আল্লাহ তাদের আমলসমূহকে নিষ্ফল করে দিয়েছেন। আর আল্লাহর জন্য তা সহজ।"
(সূরা
আল-আহযাব, ৩৩:১৯)
📖 প্রাসঙ্গিক হাদীস:
“মুনাফিক
জিহাদে অংশ নেয় না,
না জামাতে নামাজ পড়ে,
তার অন্তর অসুস্থ
(ভীরু, দুর্বল)।”
📖
[মাজমাউয-জাওয়ায়েদ: ১/৪০, সহীহ লিগাইরিহি]
📖 হাদীস:
“মুনাফিক
কখনো সাহসী নয়; সে সবসময় নিজের মিথ্যা ও কপটতা প্রকাশ পাওয়ার ভয়ে থাকে।”
📚 ইবনু আবি শাইবা, হাসান সনদে বর্ণিত
📝ব্যাখ্যা:- তারা যেকোনো বিপদ বা ঝুঁকির মুখে অত্যন্ত ভীত হয়ে পড়ে এবং পিছিয়ে যায়।
🌟 শিক্ষণীয়
দিক:
·
ঈমান
সাহস জোগায়, আর নিফাক জন্ম
দেয় ভয়,
দুশ্চিন্তা
ও
কাপুরুষতা।
·
সাহসের
মূল হলো আল্লাহর
উপর
তাওয়াক্কুল
ও ঈমানের দৃঢ়তা।
·
মুনাফিকদের
অন্তর দুর্বল হয়, তাই তারা
পরিস্থিতি আসলে পলায়নপর হয়।
🕋মুনাফিকের বৈশিষ্ট্যঃ
14
✎ বিষয়ঃ শপথ করে মিথ্যা বলা:
🌿 কুরআনের বানীঃ
মুনাফিকরা নিজেদের মিথ্যাকে
বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে আল্লাহর
নাম নিয়ে মিথ্যা শপথ
করে। এটা নিফাকের চূড়ান্ত
রূপ এবং খুবই ভয়ানক
অপরাধ।
📘Translet(অনুবাদ): “যখন মুনাফিকরা আপনার কাছে আসে, তারা বলে, ‘আমরা
সাক্ষ্য দিচ্ছি—আপনি আল্লাহর রাসূল।’ আল্লাহ জানেন আপনি অবশ্যই তাঁর রাসূল, কিন্তু
আল্লাহ সাক্ষ্য দেন যে, মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী।”
📖 [সূরা মুনাফিকুন:
১]
📘Translet(অনুবাদ):"তারা তাদের
শপথগুলোকে ঢালরূপে ব্যবহার করে, অতঃপর আল্লাহর পথ থেকে
বিমুখ
হয়। নিশ্চয়ই তারা যা করছে, তা কতই না মন্দ!"
📚 রেফারেন্স: (সূরা
আল-মুনাফিকুন, ৬৩:২)
📘Translet(অনুবাদ):“তাদের
অন্তরে চিরস্থায়ী মুনাফিকি রেখে দিলেন (আল্লাহ), কারণ তারা আল্লাহর সাথে ওয়াদা
ভঙ্গ করেছিল এবং মিথ্যা বলেছিল।”
📖 [সূরা তাওবা: ৭৭]
📘Translet(অনুবাদ): “তোমরা নিজেদের
শপথকে একে অপরের সাথে ধোঁকা দেওয়ার উপায় করে নিয়ো না, যাতে কোনো প্রতিষ্ঠিত পা পিছলে
পড়ে না যায়, আর আল্লাহর পথে বাধা দেয়ার কারণে তোমরা মন্দ পরিণতি ভোগ করবে, আর তোমাদের
জন্য থাকবে কঠিন শাস্তি।”
📖
[সূরা আন-নাহল: ৯৪]’
📘Translet(অনুবাদ): ❝তারা নিজেদের শপথকে ঢালরূপে ব্যবহার করে—এবং এর দ্বারা আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করে। নিশ্চয় তারা যা করছে, তা খুবই নিকৃষ্ট কাজ।❞
তাফসির ও ব্যাখ্যা:
🔹 ইবনে কাসীর (রহ.)
বলেন:
❝মুনাফিকরা তাদের কপটতা ঢাকতে আল্লাহর নাম ব্যবহার করত। এতে তারা নিজেদের নিরাপদ মনে করত। এই আয়াতে আল্লাহ তাদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।❞
📚 (তাফসির ইবনে কাসীর, সূরা মুজাদিলা: ১৬)
🔹 ইমাম কুরতুবী (রহ.) বলেন:
❝শপথ করে
মিথ্যা বলা আল্লাহর প্রতি
অবমাননার শামিল। কেননা এতে আল্লাহর নামকে
ব্যবহার করে মানুষকে ধোঁকা
দেওয়া হয়।❞
📘হদীসঃ ❝তিন ব্যক্তি আছে,
কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের
সঙ্গে কথা বলবেন না,
তাদের দিকে তাকাবেন না,
তাদেরকে পবিত্র করবেন না, এবং তাদের
জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি... তাদের একজন হলো সে
ব্যক্তি, যে কোনো পণ্যের
দাম বেশি দেখিয়ে শপথ
করে, অথচ সে দাম
দেওয়া হয়নি।❞ ও ➋ মিথ্যাবাদী শাসক,।
📚 সহীহ বুখারী: ২৬৭০, সহীহ মুসলিম: ১০৬, 📚 তিরমিযী: ১৯৮৯]
🌟.
বাস্তব
চিত্র:
·
ব্যবসায় ক্ষতিপূরণ দেখিয়ে শপথ করে দাম বাড়ানো।
·
কাউকে বিশ্বাস করানোর জন্য আল্লাহর নাম নিয়ে মিথ্যা বলা।
·
মুনাফা অর্জনের জন্য "আল্লাহর কসম" বলে বিভ্রান্ত করা।
✅ . উপসংহার:
❝শপথ করে মিথ্যা বলা শুধু মুনাফিকের কাজ নয়, বরং তা ঈমান ধ্বংসকারী এক ভয়ানক গুনাহ।❞
আল্লাহর নামে মিথ্যা শপথকারীকে কিয়ামতের দিন আল্লাহ ক্ষমা করবেন না—এটি অত্যন্ত ভয়ংকর পরিণতির সতর্কবার্তা।
🕋মুনাফিকের বৈশিষ্ট্যঃ
15
বিষয়ঃ ১৫. ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করা
এবং গুজব ছড়ানো:
বর্ণনা:
মুনাফিকরা সমাজে বিশৃঙ্খলা ও ফিতনা সৃষ্টি করার জন্য মিথ্যা খবর বা গুজব ছড়ায়। তারা মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চায়।
🌿 কুরআনের বানীঃ
📘Translet(অনুবাদ):
"আর যখন তাদের কাছে শান্তি বা ভয়ের কোনো খবর আসে, তখন তারা তা প্রচার করে দেয়। অথচ তারা যদি তা রাসূলের কাছে বা তাদের মধ্যকার কর্তৃত্বশীলদের কাছে পেশ করত, তবে তাদের মধ্যে যারা এর অনুসন্ধান করে, তারা তা জানতে পারত। আর যদি তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর দয়া না থাকত, তবে কিছুসংখ্যক ছাড়া তোমরা সবাই শয়তানের অনুসরণ করতে।"
📚 রেফারেন্স: (সূরা
আন-নিসা, ৪:৮৩)
📘Translet(অনুবাদ):
“আর
যখন তাদের বলা হয়: ‘তোমরা পৃথিবীতে ফাসাদ
করো না,’
তারা বলে, ‘আমরাই তো সংস্কারকারী!’
❗
জেনে রাখো, তরাই ফাসাদকারী,
কিন্তু তারা তা বুঝে না।”
📖 [সূরা বাকারা:
১১–১২]
🔹 তারা ফিতনা ছড়িয়ে
সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে, অথচ দাবি
করে তারা শান্তির দূত।
📘Translet(অনুবাদ):
“তারা যদি তোমাদের সাথে বের হতো,
তাহলে তারা শুধু অস্থিরতা ও বিভ্রান্তিই বাড়াতো,
তারা তোমাদের মধ্যে ফিতনার বিস্তার ঘটাতো...”
📖 [সূরা তাওবা: ৪৭]
🔹 মুনাফিকরা বাহ্যিকভাবে মুসলিমদের দলে থাকলেও, ভিতরে
ভিতরে ফিতনা ছড়াতে ব্যস্ত।
📖 প্রাসঙ্গিক হাদীস:
📘Translet(অনুবাদ):
📖 রাসূলুল্লাহ
ﷺ বলেন: “আল্লাহর নিকট সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি
হলো সেই, যে ফেতনা সৃষ্টি
করে, তর্কপ্রিয় এবং বিভ্রান্তি ছড়ায়।”
🔗 সূত্র:
[সহীহ বুখারী: ২৪৫৭, মুসলিম: ২৬৬৮]
📝ব্যাখ্যা:- এ
হাদীসের মূল অর্থ:
ü
যে
ব্যক্তি সত্য জানার পরও
বিতর্কে জিতে যাওয়ার জন্য
জাল যুক্তি ব্যবহার করে,
অথবা সমাজে ফিতনা-ফাসাদ
ছড়ায়
ও
ঝগড়া
করে
—
তাকে আল্লাহ তাআলা অপছন্দ করেন।
➡তারা সমাজে বিশৃঙ্খলা, বিভেদ ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য মিথ্যা খবর বা গুজব ছড়ায়।
🕋মুনাফিকের বৈশিষ্ট্যঃ
16
বিষয়ঃ ১৬. আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল থাকা (কম স্মরণ করা):
বর্ণনা:
তারা আল্লাহকে কম স্মরণ করে। সালাতে দাঁড়ানোর সময় অলসতা করে এবং লোক দেখানোর জন্য সালাত আদায় করে।
🌿 কুরআনের বানীঃ
📘Translet(অনুবাদ):
"নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহর সাথে ধোঁকাবাজি করে, আর তিনি তাদের ধোঁকা দেন। যখন তারা সালাতে দাঁড়ায়, তখন অলসভাবে দাঁড়ায়—শুধু মানুষকে দেখানোর জন্য। আর তারা আল্লাহকে কমই স্মরণ করে।"
📚 রেফারেন্স: (সূরা
আন-নিসা, ৪:১৪২)
🎓
ইবনে
কাসীর
(রহ.)
বলেন:
❝এই
আয়াতে ‘আল্লাহর স্মরণ কম করাকে’ মুনাফিকদের চিহ্ন হিসেবে বলা হয়েছে, কারণ তাদের
মধ্যে ইখলাস (আন্তরিকতা) থাকে না।❞
📚 তাফসির ইবনে কাসীর, সূরা নিসা: ১৪২
📌 ব্যাখ্যা:
§ এই আয়াতে আল্লাহ
তা‘আলা মুনাফিকদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন—তারা শুধু লোক দেখানো
ইবাদত করে এবং প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর স্মরণে তাদের মন থাকে না। তারা খুব কম সময়ের
জন্য, তাও কেবল বাহ্যিকভাবে, আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। অন্তরে খুশু, ভক্তি বা
তাকওয়া থাকে না।
§ মূলত, একজন মুমিন
আল্লাহর স্মরণে সর্বদা সচেষ্ট থাকে; কিন্তু একজন মুনাফিক স্মরণ করে কেবল লোক
দেখানো বা প্রয়োজনে—তবে অন্তর গাফেল ও অন্যমনস্ক।
§ তারা দুনিয়াবী বিষয় নিয়ে ব্যস্ত বা মগ্ন থাকে এবং আল্লাহকে
স্মরণ করতে বা তাঁর ইবাদতে মনোযোগী হতে অত্যন্ত উদাসীন থাকে।
রেফারেন্স: সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত ৬৭।
📖 প্রাসঙ্গিক হাদীস:
📘Translet(অনুবাদ):
“তোমরা আল্লাহর যিকর এমন পরিমাণে করো, যাতে লোকেরা বলে – সে পাগল।”
📚 মুসনাদে আহমদ: ৬৭০৫, হাসান লিগাইরিহি
🌟 শিক্ষণীয় দিক:
·
আল্লাহর স্মরণ (যিকর) হৃদয়ের জীবন।
·
যে যত বেশি আল্লাহকে স্মরণ করে, সে তত বেশি আল্লাহর কাছে প্রিয় হয়।
·
গাফেলতা মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য, আর যিকর মুমিনের আলামত।
🕋মুনাফিকের বৈশিষ্ট্যঃ
17
বিষয়ঃ ১৭. নিজেদের কৃতকর্মের জন্য আনন্দিত হওয়া এবং যা করেনি তার জন্যও প্রশংসা চাওয়াঃ
🌿 কুরআনের বানীঃ
📘Translet(অনুবাদ):
📜আল্লাহ বলেন: "যারা নিজেদের কৃতকর্মের জন্য আনন্দিত হয় এবং যা করেনি তার জন্যও প্রশংসা পেতে
ভালোবাসে, তাদের তুমি শাস্তি থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত মনে করো না।"
📚 রেফারেন্স: (সূরা
আলে-ইমরান, ৩:১৮৮)
🎓 ইবনে কাসীর (রহ.) বলেন:
·
❝এ
আয়াতে মুনাফিকদের নিন্দা করা হয়েছে যারা
চায়, মানুষ যেন তাদের এমন
আমলের জন্য প্রশংসা করে,
যা তারা আদৌ করেনি,
বরং তারা মিথ্যা প্রচার
করে।❞
📚 তাফসীর ইবনে কাসীর, আলে ইমরান: ১৮৮
📖 প্রাসঙ্গিক হাদীস:
📘Translet(অনুবাদ):
“যে ব্যক্তি এমন
পরিচয় দেয়, যা তার নয়—সে দুই পোশাক পরা একজন প্রতারকের মতো।”
📚 সহীহ মুসলিম: ২১৪০
📌 ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে বলা হয়েছে—মুনাফিকদের একটি বড় চারিত্রিক দোষ হলো:
·
তারা এমন কাজ নিয়ে গর্ব করে, যা তারা
প্রকৃতপক্ষে করেনি।
·
তারা চায় মানুষ যেন তাদের এমন
কৃতিত্বের জন্য প্রশংসা করে, যা তাদের অর্জন নয়।
·
তারা এমন কাজের জন্য প্রশংসা চায় যা
তারা আদৌ করেনি, এবং নিজের ত্রুটি বা মন্দ কাজগুলোকে গোপন করে ভালোর ভান করে।
এই বৈশিষ্ট্য হলো আত্মপ্রশংসা
ও
প্রতারণামূলক
আত্মপ্রচার,
যা একজন মুমিনের চরিত্রের
সম্পূর্ণ বিপরীত। একজন মুমিন বিনয়ী
ও সত্যনিষ্ঠ হয়, সে যা
করেনি তা নিজ নামে
চালাতে ভয় পায়।
🌟 শিক্ষণীয় দিক:
·
আত্মপ্রশংসা ও ভুয়া কৃতিত্ব চাওয়া—আল্লাহর
নিকট অপছন্দনীয়।
·
মুমিন সবসময় তার কাজ সম্পর্কে
দায়িত্বশীল হয়।
·
বান্দার উচিত—নিজের দোষ গোপন না করে
সংশোধনের চেষ্টা করা এবং অকারণে নিজেকে বড় করে না দেখা।
যে ব্যক্তি নিজের মিথ্যা গুণাবলি বা ভুয়া আমল দিয়ে মানুষের প্রশংসা কামনা করে, সে মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। বিনয়, সততা ও সত্যভাষণ—মুমিনের চিহ্ন।
🕋মুনাফিকের বৈশিষ্ট্যঃ
18
বিষয়ঃ ১৮.
জিহাদ ও আল্লাহর পথে কষ্ট স্বীকারে অনীহাঃ
🌿 কুরআনের বানীঃ
📘Translet(অনুবাদ):
"যদি সহজলভ্য কোনো লাভ ও নিকটবর্তী সফর হতো, তবে তারা অবশ্যই তোমার অনুসরণ করত,
কিন্তু তাদের উপর সফর দীর্ঘ মনে হয়েছে। আর তারা আল্লাহর নামে কসম
করে বলবে, 'যদি আমরা পারতাম, তবে অবশ্যই তোমাদের সাথে বের হতাম।' তারা নিজেদেরই ধ্বংস করছে, আর আল্লাহ জানেন যে, তারা মিথ্যাবাদী।"
📚 রেফারেন্স: (সূরা
আত-তাওবাহ, ৯:৪২)
📘Translet(অনুবাদ):
আর যদি তারা বের হবার সংকল্প নিত, তবে অবশ্যই কিছু
সরঞ্জাম প্রস্তুত করতো। কিন্তু তাদের উত্থান আল্লাহর পছন্দ
নয়, তাই তাদের নিবৃত রাখলেন এবং আদেশ হল বসা লোকদের সাথে তোমরা বসে থাক।
[সূরা তাওবা: 46]
🎓 সংক্ষিপ্ত তাফসীর
📚 তাফসীর ইবন কাসীর:
·
“এই আয়াত (সূরা তাওবা: ৪৬) আল্লাহর
সেই হিকমত ব্যাখ্যা করে যে, কেন তিনি মুনাফিকদের জিহাদে অংশগ্রহণ করতে দেননি—কারণ তারা
দ্বীনের জন্য সত্যিকার উৎসাহী ছিল না। আল্লাহ তাদের অন্তরের গাফলতি দেখে তাদেরকে বসে
থাকার নির্দেশ দেন।”
📚 তাফসীর আস-সা‘দী:
§ “এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি রহমত ছিল যে তিনি মুনাফিকদের জিহাদে বের না হতে
দিলেন। তারা বের হলে শুধু ফিতনা ছড়াতো, ভীতি সৃষ্টি করত এবং মুসলমানদের মনোবল দুর্বল
করত।”
📖
হাদীস:
📘Translet(অনুবাদ):
আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ)
হতে বর্ণিত। “যে ব্যক্তি জিহাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, অথচ তার পক্ষে সম্ভব ছিল—সে মুনাফিকের
একটি শাখায় মৃত্যুবরণ করলো।”
📚 সহীহ
মুসলিম: ১৯১০,৪৮২৫
📝ব্যাখ্যা:- তারা আরাম-আয়েশ ভালোবাসে এবং আল্লাহর পথে যেকোনো কষ্ট বা ত্যাগ স্বীকার করতে রাজি থাকে না, বরং অজুহাত খুঁজে।
💡 সামাজিক বাস্তবতায় প্রভাব:
·
আজও
অনেকেই দ্বীনের পথে কষ্ট, সময়, টাকা বা শ্রম দিতে চায় না,
·
দাওয়াহ,
কুরবানি, ত্যাগ—সব কিছুতেই পেছনের
কাতারে থাকে,
·
অথচ
বাহ্যিকভাবে নিজেকে মুসলমান বলে পরিচয় দেয়,
➡️
এটি নিফাকের স্পষ্ট লক্ষণ।
🌟 শিক্ষণীয়
দিক:
·
দ্বীনের
পথে কষ্ট স্বীকার করা
মুমিনের চিহ্ন।
·
দ্বীনের
জন্য সময়, অর্থ, কষ্ট
দিতে না চাইলে—নিফাক
ঢুকে
পড়ে।
·
শুধু
মুখে ঈমান নয়, বাস্তবে
আল্লাহর
পথে
কুরবানি
দিতে হয়।
🕋মুনাফিকের বৈশিষ্ট্যঃ
19
বিষয়ঃ ১৯. আকর্ষণীয় কথাবার্তা ও বাহ্যিক সৌন্দর্যঃ
🌿 কুরআনের বানীঃ
📘Translet(অনুবাদ):
"আর যখন তুমি তাদের দিকে তাকাও, তাদের শরীর তোমাদেরকে মুগ্ধ
করবে; আর যদি তারা কথা বলে, তাদের কথা তোমরা শুনবে। যেন তারা দেয়ালে ঠেস দেওয়া খুঁটি।"
📚 রেফারেন্স: (সূরা
আল-মুনাফিকুন, ৬৩:৪)
🎓 ইমাম কুরতুবী (রহ.) বলেন:
· ❝তারা বাহ্যিকভাবে
সুসজ্জিত, কিন্তু অন্তরে মুনাফিক। এ কারণে তারা সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রতারক।❞
📚 তাফসীর আল-কুরতুবী: ১৮/১১৩
📌 ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহ সুবহানু ওয়া তাআলা বলছেন—
·
মুনাফিকরা
সাধারণত বাহ্যিকভাবে চমৎকার, সুন্দর ও আকর্ষণীয় চেহারার
অধিকারী হয়।
·
তাদের
কথা মধুর ও আকর্ষণীয়;
চমৎকার ভাষায় মানুষকে মুগ্ধ করে।
·
কিন্তু
তারা ভিতরে একেবারে শূন্য—আত্মিকভাবে ফাঁকা ও দ্বীনের আলো
থেকে বঞ্চিত।
·
তাদের
অবস্থাকে গোঁজ কাঠ বা
ঠেস দেওয়া কাঠের সাথে তুলনা করা
হয়েছে—যার বাহ্যিক রূপ
আছে, কিন্তু প্রাণ নেই।
📖 প্রাসঙ্গিক
হাদীস:
📘Translet(অনুবাদ):
নবী ﷺ বলেন:❝তোমরা সেই ব্যক্তি
থেকে ভয় করো, যার জিহ্বা মিষ্টিভাষী কিন্তু অন্তর ভয়ঙ্কর।❞
📚 সুনান আত-তিরমিযী: ২০৪৮,
হাসান
🌟 শিক্ষণীয় দিক:
·
বাহ্যিক
সৌন্দর্য বা মধুর কথা—কারো ঈমানের মানদণ্ড
নয়।
·
প্রকৃত
মুমিন বাহ্যিক চেহারায় নয়, বরং অন্তরের
তাকওয়া ও ইখলাসে আল্লাহর
নিকট প্রিয়।
·
আকর্ষণীয়
কথাবার্তা কখনো কখনো ধোঁকার
মাধ্যম হতে পারে।
✅ সংক্ষেপে
শিক্ষা:
আকর্ষণীয়
চেহারা ও ভাষা কখনো
কখনো হৃদয়ের রোগকে ঢেকে রাখে। তাই
বাহ্যিক দেখে নয়, বরং
চরিত্র ও আমলের মাধ্যমে
কাউকে মূল্যায়ন করতে হবে।
🕋মুনাফিকের বৈশিষ্ট্যঃ
20
বিষয়ঃ ২০. দোদুল্যমান অবস্থা (ঈমান ও কুফরের মাঝে দোল খাওয়া):
🌿 কুরআনের বানীঃ
📘Translet(অনুবাদ):
"তারা বিশ্বাসী
ও কাফিরদের মধ্যে দোদুল্যমান। তারা এদের দিকেও নয়, ওদের দিকেও নয়।"
📚 রেফারেন্স: (সূরা
আন-নিসা, ৪:১৪৩)
🎓 ইবনে আব্বাস (রহ.) বলেন:
❝মুনাফিকদের অন্তর ছিল দ্বিধান্বিত, তারা কখনো মুমিনদের পক্ষ নেয়নি, আবার কাফেরদের পক্ষেও নয়।❞
📚 তাফসীর ইবনে কাসীর, আন্-নিসা:
১৪৩
📖 প্রাসঙ্গিক হাদীস:
📘Translet(অনুবাদ):
❝দুটি হৃদয়ে একজন ব্যক্তির ঈমান টিকে থাকতে পারে না।❞
📚 সহীহ বুখারী: ৫২২১, মুসলিম: ২৬৫৪
📌 ব্যাখ্যা:
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা স্পষ্টভাবে বলেন—মুনাফিকরা কোনো নির্দিষ্ট অবস্থান নেয় না।
§ কখনো মুসলমানদের দলে,
§ আবার সুবিধা হলে কাফেরদের পক্ষে।
§ তারা সদা সন্দেহে, দ্বিধায় ও সুবিধাবাদিতায় ভোগে। এদের মূল উদ্দেশ্য দ্বীন নয়, বরং নিজের স্বার্থ।
এমন দোদুল্যমানতা—ঈমানের বিপরীত। কারণ, ঈমান দৃঢ়তা চায়,
সিদ্ধান্ত ও আত্মসমর্পণ চায়।
দ্বিধা ঈমানের শত্রু।
🌟 শিক্ষণীয় দিক:
·
দ্বীনের ব্যাপারে দ্বিধা নয়, বরং স্পষ্ট ও দৃঢ় অবস্থান জরুরি।
·
বিশ্বাসে দোদুল্যমানতা—মুনাফিকদের চিহ্ন।
·
মুমিনের অবস্থান স্পষ্ট হয়—সে একনিষ্ঠ, বিনয়ী ও দ্বীনের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
✅ সংক্ষেপে শিক্ষা:
§ যে
ব্যক্তি কখনো ঈমানের দিকে, আবার কখনো কুফরের দিকে ঝুঁকে পড়ে—সে মুনাফিকদের পথ
অনুসরণ করছে। দ্বীন পুরোপুরি কবুল না করলে, প্রকৃত ঈমান আসবে না।
🕋মুনাফিকের বৈশিষ্ট্যঃ
21
বিষয়ঃ ২১. আল্লাহকে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করাঃ
🌿 কুরআনের বানীঃ
📘Translet(অনুবাদ):
📜 আল্লাহ বলেন:
ü
“তারা আল্লাহ ও মুমিনদেরকে ধোঁকা দিতে চায়, অথচ তারা ধোঁকা
দেয় শুধু নিজেদেরই—তবে তারা তা বোঝে না।”
📖 সূরা আল-বাকারা (২): আয়াত ৯
ü "নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহর সাথে ধোঁকাবাজি করে, আর তিনি তাদের ধোঁকা দেন।"
📚 রেফারেন্স: (সূরা
আন-নিসা, ৪:১৪২)
🎓 ইমাম তাবারী (রহ.) বলেন:
❝তারা মনে করে,
তাদের মুখের কথাই যথেষ্ট, আর
তাদের গোপন বিশ্বাস আল্লাহ
জানেন না—এটাই তাদের
ধোঁকাবাজি।❞
📚 তাফসীর আত-তাবারী, বাকারা: ৯
📖 প্রাসঙ্গিক হাদীস:
📘Translet(অনুবাদ):
“যে ব্যক্তি লোক দেখানোর জন্য নামাজ পড়ে, সে শিরক করে। যে ব্যক্তি লোক শুনার জন্য কুরআন পড়ে, সে শিরক করে।”
📚 মুসনাদে আহমাদ: ৮৪২০, সহীহ
📌 ব্যাখ্যা:
এই
আয়াতে আল্লাহ তাআলা জানিয়ে দেন—
·
মুনাফিকরা
মুখে ঈমান আনার ভান করে, কিন্তু অন্তরে কুফর লুকিয়ে রাখে।
·
তারা
মনে করে, মুখে ঈমানের কথা বলে, নামাজে দাঁড়িয়ে, জাকাত দিয়ে ইত্যাদি করে তারা
আল্লাহ ও মুসলমানদের ধোঁকা দিতে পারবে।
·
কিন্তু
বাস্তবে, তারা কেবল নিজেদের ধোঁকা দেয়।
·
কারণ,
আল্লাহর সামনে কিছুই গোপন নয়। তিনি অন্তরের সব খবর রাখেন।
·
তারা
মনে করে যে তারা আল্লাহর সাথে চালাকি করতে সক্ষম, কিন্তু আল্লাহ তাদের আসল
উদ্দেশ্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত এবং তিনি তাদের কুফল তাদের উপরই ফিরিয়ে দেন।
🌟 শিক্ষণীয় দিক:
·
আল্লাহর
সঙ্গে প্রতারণার চিন্তাও করা ঈমানহীনতার প্রমাণ।
·
মুনাফিকদের
মুখ আর অন্তরের মধ্যে
মিল থাকে না।
·
মুমিন
সব সময় ইখলাসের সাথে
কাজ করে—চায় কেবল
আল্লাহর সন্তুষ্টি।
✅ সংক্ষেপে শিক্ষা:
ü
যে
ব্যক্তি মানুষকে দেখিয়ে ভালো আচরণ করে
কিন্তু একান্তে গুনাহ ও কুফর লালন
করে—সে আল্লাহকে ধোঁকা
দেওয়ার চেষ্টা করছে, যা মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য।
🕋মুনাফিকের বৈশিষ্ট্যঃ
22
বিষয়ঃ ২২. অন্তরে ব্যাধি বা সংশয় পোষণ করা
🌿 কুরআনের বানীঃ
📘Translet(অনুবাদ):
📜 আল্লাহ বলেন:
§ "তাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, অতঃপর
আল্লাহ তাদের ব্যাধি বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর তাদের
জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি; কারণ তারা মিথ্যা বলত।"
📚 রেফারেন্স: (সূরা আল-বাকারা, ২:১০)
🎓 ইমাম ইবনে কাসীর (রহ.) বলেন:
ü ❝এই ব্যাধি হচ্ছে—শক (সন্দেহ), নিফাক (কপটতা), ও কুফরের প্রতি ঝুঁকে
থাকা। আল্লাহ তাদের এ অন্তরজ ব্যাধিকে বৃদ্ধি করেন শাস্তিস্বরূপ।❞
📚 তাফসীর ইবনে কাসীর, বাকারা: ১০
📌 ব্যাখ্যা:
§ এ রোগ মানসিক বা দেহগত
নয়, বরং আকীদাগত ব্যাধি।
§ তারা দ্বীনের ব্যাপারে
সন্দেহ পোষণ করে, নবী ﷺ ও কুরআনের প্রতি বিশ্বাস তাদের ভিতরে পূর্ণ হয় না।
§ মুখে মুসলিম, কিন্তু
অন্তরে কুফরের বিষ।
§ যখন সত্য সামনে আসে,
তখন তারা সংশয় করে, অস্বীকার করে বা অবজ্ঞা করে।
§ আল্লাহ তাদের এ রোগের
শাস্তিস্বরূপ আরও সংশয় ও গোমরাহি দেন।
📖 প্রাসঙ্গিক
হাদীস:
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন: ❝যে কেউ সন্দেহের মধ্যে পড়ে, সে নিফাকের একধরনের রোগে আক্রান্ত।❞
📚 (তিরমিযী: হাদীস ২৬২৪ - হাসান)
🌟 শিক্ষণীয় দিক:
·
ঈমানের প্রথম স্তর হলো—সন্দেহ মুক্ত হওয়া।
·
যাদের অন্তরে সবসময় কুরআন-সুন্নাহ সম্পর্কে সংশয় থাকে, তারা নিফাকের পথে।
·
অন্তরের ব্যাধি থেকেই বাহ্যিক আচরণের ভ্রষ্টতা শুরু হয়।
✅ সংক্ষেপে শিক্ষা:
আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসে যার অন্তর দ্বিধাগ্রস্ত—সে মুনাফিকের গুণে আক্রান্ত। মুমিন অন্তর হয় পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণকারী, সন্দেহহীন ও নিশ্চিন্ত।
🌟.
বাস্তব চিত্র:
·
কেউ
কুরআন-সুন্নাহর হুকুম শুনে মনে করে:
“আসলে এটা কতটা বাস্তবসম্মত?”
·
দ্বীনের
কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করলে তার মধ্যে
বিদ্রুপ ও সংশয় প্রকাশ
পায়।
·
ঈমানের
মৌলিক বিষয় যেমন: কিয়ামত,
জান্নাত-জাহান্নাম—এগুলোর প্রতি সন্দেহ প্রকাশ।
✅ উপসংহার:
§
❝অন্তরের রোগ গোপন নিফাকের শেকড়।❞
§
যে ব্যক্তি দ্বীনের মৌলিক বিষয়ে সংশয় পোষণ করে, সে আল্লাহর নিকট ঈমানদার নয়। বরং সে তার মুনাফিকি প্রকাশ করছে।
🕋মুনাফিকের
বৈশিষ্ট্যঃ 23
বিষয়ঃ ২৩. মুমিনদেরকে উপহাস করা (একান্তে):
🌿 কুরআনের বানীঃ
📘Translet(অনুবাদ):
📜 আল্লাহ বলেন:"তারা যখন ঈমানদারদের
সাথে মিলিত হয়, তখন বলে, 'আমরা ঈমান এনেছি।'
আর যখন তাদের শয়তানদের (নেতাদের) সাথে
একান্তে মিলিত হয়, তখন বলে, 'আমরা তো তোমাদের সঙ্গেই আছি, আমরা শুধু (মুমিনদের সাথে)
উপহাস করছিলাম।'"
📚 রেফারেন্স: (সূরা
আল-বাকারা, ২:১৪)
🎓 ইমাম ইবনু কাসীর (রহ.) বলেন:
ü ❝তারা নিজেদের মতের গোষ্ঠী বা বন্ধুদের সামনে বলে—‘আমরা তো কেবল
মুমিনদেরকে বোকা বানাচ্ছি, ঠাট্টা করছি’, অথচ বাস্তবে তারা নিজেদের ধ্বংস করছে।❞
📚 তাফসীর ইবনে কাসীর: বাকারা:
১৪
📖 প্রাসঙ্গিক হাদীস:
📘Translet(অনুবাদ):
“যে ব্যক্তি কোনো মুসলমান
ভাইকে তার পাপ বা কাপড়ের কারণে উপহাস করে, আল্লাহ তাকে ওই গুনাহে পতিত করে দেন।”
📚 তিরমিযী: ২৫০৪, হাসান
📌 ব্যাখ্যা:
· মুনাফিকরা দ্বিমুখী
আচরণ করে:
· মুমিনদের সামনে ঈমানের ভান করে।
· আর নিজের গোষ্ঠীর সামনে গর্ব
করে তারা মুমিনদের সাথে উপহাস করেছে।
· তারা ধর্মপ্রাণ,
পরহেযগার বা ইসলামের বিধান পালনকারীদের নিয়ে ঠাট্টা করে, ব্যঙ্গ করে, নিজেদের
শ্রেষ্ঠ মনে করে।
·
তারা মনে করে, এই ঠাট্টা মজা, অথচ আল্লাহ বলেন—এর মাধ্যমে তারা নিজেদের ধ্বংস
ডেকে আনে।
· মুমিনদের সামনে ঈমানের ভান করলেও
আড়ালে, নিজেদের সঙ্গীদের সাথে মুমিনদের বিশ্বাস, ইবাদত বা আচার-আচরণ নিয়ে উপহাস
করে।
🌟 শিক্ষণীয় দিক:
·
কোনো মুসলমানকে তার ঈমান, পোশাক, আখলাক, বা দ্বীনের চর্চা নিয়ে
হাস্যরস করা — মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য।
·
আল্লাহর কোনো বিধানকে বা তা মান্যকারীদেরকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা
ঈমান হরণকারী কাজ।
·
মুমিন কখনো দ্বীনদার ভাইকে ঠাট্টা করে না—বরং তাকে সম্মান করে।
✅ সংক্ষেপে শিক্ষা:
ü দ্বীনের অনুসারী বা
মুমিনদের নিয়ে একান্তে ঠাট্টা ও উপহাস করা মানে নিজের ঈমান ধ্বংস করা। এটি নিফাকের
পরিচয়।
🕋মুনাফিকের
বৈশিষ্ট্যঃ 24
বিষয়ঃ ২৪. নিজেদের ভুল স্বীকার না করাঃ
🌿 কুরআনের বানীঃ
📘Translet(অনুবাদ):
📜 আল্লাহ বলেন: "আর যখন তাদেরকে
বলা হয়, 'জমিনে বিপর্যয় সৃষ্টি
করো না', তখন তারা বলে, 'আমরা তো কেবল সংশোধনকারী।’’
📚 রেফারেন্স: (সূরা আল-বাকারা, ২:১১)
📘Translet(অনুবাদ):
“তারা
তোমাদের সন্তুষ্ট করার জন্য শপথ করে, কিন্তু তোমরা যদি সন্তুষ্ট হও, তবে জেনে রাখ—আল্লাহ
ফাসিকদের প্রতি কখনো সন্তুষ্ট নন।”
📖 সূরা আত-তাওবা (৯): আয়াত ৯৬
🎓 ইমাম ইবন কাসীর (রহ.) বলেন:
·
❝তারা নিজেদের দোষ
ঢাকতে শপথ করে এবং নিজেদের ভুল স্বীকার করে না। অথচ মুমিনের বৈশিষ্ট্য হলো—ভুল হলে
তা স্বীকার করে, তাওবা করে।❞
📚 তাফসীর ইবন কাসীর, তাওবা: ৯৬
📖 প্রাসঙ্গিক
হাদীস:
📘Translet(অনুবাদ): “প্রতিটি আদমসন্তান
ভুল করে, আর সর্বোত্তম ভুলকারী হলো—যে তাওবা করে।”
📚 তিরমিযী: ২৪৯৯, হাসান সহীহ
➡️ মুনাফিক এই সর্বোত্তম গুণটি থেকে বঞ্চিত, কারণ সে নিজের ভুল মানে না।
🌟 শিক্ষণীয় দিক:
·
ভুল করে সেটি অস্বীকার করাই মুনাফিকদের গুণ।
·
একজন মুমিন নিজের ভুল বুঝে আল্লাহর কাছে ফিরে আসে।
·
নিজেকে সবসময় নির্দোষ প্রমাণ করতে চাইলে আত্মম্ভরিতা ও ধোঁকায় পড়ে
যাওয়া অস্বাভাবিক নয়।
·
ভুল স্বীকার না করা, অজুহাত দেওয়া ও আত্মপক্ষ সমর্থনে লিপ্ত থাকা—মুনাফিকদের
অভ্যাস।
·
মুমিন আত্মসমালোচক, বিনয়ী ও তাওবাকারী হয়।
📌 ব্যাখ্যা:
§ মুনাফিকদের স্বভাব
হলো—দোষ করলে তাও
অস্বীকার করা, বাহানা তৈরি করা, শপথ করা, কিন্তু ভুল মানার ন্যূনতম সাহস থাকে না।
§ তারা মানুষের সামনে
নিজেকে পরিশুদ্ধ দেখাতে চায়, অথচ আল্লাহর কাছে তারা ধোঁকাবাজ।
§ তাওবা নয়, আত্মপক্ষ সমর্থনই তাদের প্রধান
লক্ষ্য।
§ আল্লাহ জানিয়ে
দিয়েছেন: তারা যদি দুনিয়াবাসীকে খুশিও করতে পারে, আল্লাহ তাদের ওপর অসন্তুষ্টই
থাকবেন।
📝ব্যাখ্যা:- নিজেদের অপরাধ বা অপকর্মকে তারা কখনোই স্বীকার করে না, বরং মিথ্যা যুক্তি
দিয়ে নিজেদেরকে নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টা করে।
🕋মুনাফিকের
বৈশিষ্ট্যঃ 25
বিষয়ঃ ২৫. অন্যের উপর দোষ চাপানোঃ
🌿 কুরআনের বানীঃ
📘Translet(অনুবাদ): “তারপর তোমরাই হলে এমন, যারা নিজেদেরই মানুষ হত্যা করছ
এবং
নিজেদের মধ্য থেকে ক দলকে বা জনগোষ্ঠীকে তাদের ঘর বা দেশ
থেকে বহিষ্কার করছ।;” তোমরা একে অন্যের সহযোগীতা করছ তাদের উপর অন্যায় ও সীমালঙ্ঘন
দ্বারা।
📘Translet(অনুবাদ): “তারা শহীদদের উপর দোষ
চাপায় এবং নিজেদের পলায়নকে বুদ্ধিমত্তা -
প্রমাণ করতে চায়। আল্লাহ
তাদের এই বক্তব্যের মিথ্যাচার প্রকাশ করে চ্যালেঞ্জ দেন— তবে যদি সত্য বলো, মৃত্যু
ঠেকিয়ে দেখাও!”
📘Translet(অনুবাদ): “তারা (মুনাফিকরা) নির্দোষ মুমিন পুরুষ
ও নারীদের এমন অপবাদ দেয়, যা তারা করেনি।”
📚 রেফারেন্স:
(সূরা আল-বাকারা (২): আয়াত ৮৫)
, 📖 সূরা আলে ইমরান (৩): আয়াত ১৬৮,
📖 সূরা
আহযাব
(৩৩):
আয়াত
৫৮
📚
সংক্ষিপ্ত তাফসীর (ইবন কাসীর):
§ আল্লাহ এই আয়াতে ইহুদি ও মুনাফিকদের ভণ্ডামি
উন্মোচন করেছেন,
যারা প্রথমে অন্যায় করে, তারপর নিজেদের দোষ ঢাকতে অন্যদের দোষ তুলে ধরে।
§ তারা নিজেদের গুনাহ ও জুলুমকে ন্যায্যতা দেয়—এটাই হল নিফাক।
📖 হাদীস:
📘Translet(অনুবাদ): “মুনাফিকের অন্যতম লক্ষণ হলো: সে দোষ স্বীকার করে না, বরং অন্যকে দায়ী করে।”
📚 মুসনাদ আবু ইয়ালা (সহীহ লিসগেইরিহি)
📘 “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি
মুনাফিক, যে নিজের দোষ গোপন করতে অন্যের দোষ তুলে ধরে।”
📚 সহীহুল
জামে‘: ৫৪৪৭
📘 “যে অন্যের দোষ এমনভাবে তুলে ধরে যাতে সে নিজে আড়ালে থাকে, সে মুনাফিকদের দলভুক্ত।”
📚 আবু দাউদ: ৪৮৮৮, হাসান হাদীস
📚
ইতিহাস থেকে উদাহরণ:
➡️
ইফকের
ঘটনা
(মিথ্যা
অপবাদ):
📖 সূরা নূর (২৪): ১১–২০ — এই আয়াতে
📌 ব্যাখ্যা:
·
মুনাফিকরা
নিজেদের ভুল
কখনোই স্বীকার করে না।
·
যখনই
ধরা পড়ে, বলে:“আমি
তো কিছু করিনি!”, “সবকিছু ওই লোকের কারণে হয়েছে!”
“আমার নিয়ত খারাপ ছিল না!”
·
তারা
সব সময় নিজের দোষ অন্য
কারো ঘাড়ে চাপায়।
·
মুনাফিকরা
নিজেদের কাজকে সঠিক
বলে চালায়,
·
তারা
সত্যবাদী বা মুমিনদেরকেই
দোষারোপ করে
যেন তারা ফিতনা সৃষ্টি করছে, অথচ ফিতনার মূল হোতা তারাই।
·
তারা
চায় সবার চোখে নিজেকে নির্দোষ
ও পবিত্র
হিসেবে তুলে ধরতে।
🌟
শিক্ষণীয় দিক:
·
একজন
মুমিন নিজের
ভুল
স্বীকার
করে,
অনুতপ্ত হয়, সংশোধন করে।
·
মুনাফিক
দোষ
স্বীকার
নয়
বরং
আত্মরক্ষা
ও
অপরকে
দোষারোপে
ব্যস্ত
থাকে।
·
সত্যিকারের
ঈমানদার নিজের দোষের জন্য ক্ষমা
চায়,
কিন্তু মুনাফিক অন্যকে দোষারোপ করে আল্লাহর
ক্রোধের
পাত্র
হয়ে
যায়।
নিজেদের দোষ বা ব্যর্থতার দায় তারা
অন্যের উপর চাপিয়ে দেয় এবং নিজেদের দায়বদ্ধতা এড়িয়ে চলে।
🕋মুনাফিকের বৈশিষ্ট্যঃ
26
বিষয়ঃ ২৬. ফিতনা (বিশৃঙ্খলা) সৃষ্টি করাকে 'সংশোধন' মনে করাঃ
🌿 কুরআনের বানীঃ
📘Translet(অনুবাদ):
“আর যখন তাদের বলা হয়, ‘পৃথিবীতে ফিতনা-ফাসাদ করোনা,’
তারা বলে, ‘আমরাই তো সংশোধনকারী।’ জেনে রাখো! তারাই আসলে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী, কিন্তু
তারা বুঝে না।”
📚 রেফারেন্স: (সূরা
আল-বাকারা, 2:11-12)
📘Translet(অনুবাদ):
“আল্লাহ ফাসাদ সৃষ্টিকারীদেরকে
পছন্দ করেন না।”
📖 সূরা আল-কাসাস (২৮): আয়াত ৭৭
📘Translet(অনুবাদ):
“আমরা কি বিশ্বাসীদের, যারা সৎকর্ম করে, তাদেরকে
ওইসব লোকদের মতো করে দেব, যারা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করে?”
📖 সূরা সাদ (৩৮): আয়াত ২৮
📌
ব্যাখ্যা
(তাফসীর):
📚 ইবন কাসীর (রহ.) বলেনঃ
“মুনাফিকরা নিজেদের কর্মকে ভালো মনে করে, অথচ
বাস্তবে তা ছিল ফাসাদ বিভ্রান্তি। তারা মুমিনদের ঈমান ও দ্বীন নিয়ে ঠাট্টা করত, সমাজে
সন্দেহ ছড়াত, অথচ বলত—‘আমরা শুধু সমাজকে ঠিক করছি।’”
📚 তাফসীর আস-সা‘দী রহঃ
আল্লাহ তাদেরকে ফাসাদকারী বলেছেন, কারণ তারা দীন ও ঈমানের
নাম নিয়েও তা ধ্বংস করে—একে সংশোধনের কাজ মনে করে। বাস্তবে তারা সবচেয়ে বড় মিথ্যা (ফিতনা
সৃষ্টিকারী)।
📖 হাদীস:
📘Translet(অনুবাদ): “দু’টি জিনিস নিফাকের চিহ্ন: এক. যখন কথা বলে, মিথ্যা বলে; দুই. যখন_
_ফিতনা ছড়ায়, বলে ‘আমি তো শুধু সাহায্য করতে চেয়েছিলাম।’”
📚 সহীহুল জামে‘: ৩০৪৪, হাসান হাদীস
আল্লাহর রাসূল ﷺ
বলেন:“তোমরা জানবে, আমার
উম্মতের মধ্যে এমন লোক আসবে, যারা মিথ্যাকে সত্য বলবে, ফিতনাকে নসিহত বলবে, আর সৎ উপদেশকে
ফিতনা মনে করবে।”
📚 তাবারানী আল-কবীর, হাদীস: ৮৪২৯ | ইমাম হায়সামী বলেছেন: sanad jayyid (সনদ ভালো)
📝ব্যাখ্যা:-
তারা সমাজে বিশৃঙ্খলা ও অন্যায় সৃষ্টি করলেও
নিজেদেরকে সংস্কারক বা সংশোধনকারী হিসেবে দাবি করে, এবং তাদের অপকর্মকে জায়েজ প্রমাণ
করার চেষ্টা করে।
🌟
শিক্ষণীয়
দিক:
·
একজন
মুমিন ফিতনা থেকে দূরে থাকে,
কারণ সে জানে ফাসাদ
সৃষ্টি করা বড় গোনাহ।
·
কিন্তু
তারা নিজেকে সচেতন, সংস্কারক, উদারপন্থী, ও ‘সত্যবাদের সাহসী’ বলে দাবি করে।
·
তারা
আসলে নিজেই বিভ্রান্ত, কিন্তু বুঝতে চায় না।
🌍আজকের বাস্তবতায় উদাহরণ:
·
কেউ দ্বীনের নিয়ম অনুসারে কথা বললে
বলে: “তুমি তো ফিতনা করতেছো!”
·
আর যখন নিজের মতো ‘উদারতা’ বা বিকৃত
ব্যাখ্যা দেয়, তখন বলে: “আমরা তো সংস্কার করছি।”
🕋মুনাফিকের বৈশিষ্ট্যঃ
27
বিষয়ঃ ২৭. আল্লাহর নির্দেশ পালনে অজুহাত সৃষ্টি করা:
🌿 কুরআনের বানীঃ
📚 Translet(অনুবাদ):
"যদি তারা বের হওয়ার ইচ্ছা করত, তবে
অবশ্যই তার জন্য সাজ-সরঞ্জাম প্রস্তুত করত, কিন্তু আল্লাহ তাদের যাওয়া অপছন্দ করেছেন,
তাই তিনি তাদের বসে থাকতে দিয়েছেন..."
📚 রেফারেন্স: (সূরা
আত-তাওবাহ, ৯:৪৬)
📚 Translet(অনুবাদ):
“যখন তোমরা (মুমিনরা) গনীমতের জন্য
বের হবে, তখন পিছনে পড়ে থাকা (মুনাফিকরা) বলবে, ‘আমাদের যেতে দাও, আমরা তোমাদের সাথে
হবো।’ তারা চায় আল্লাহর বাণী পরিবর্তন করতে। বলো, ‘তোমরা আমাদের অনুসরণ করবে না’—আল্লাহ
পূর্বেই এমন বলেছিলেন।”
📖 সূরা আল-ফাতহ (৪৮):
আয়াত ১৫
📖 তাফসির ও ব্যাখ্যা (সহজভাবে):
🧕 ঘটনা
কী
ছিল?
·
রাসূলুল্লাহ
ﷺ ও সাহাবীগণ হুদাইবিয়ার সময় উমরাহ
করতে
মক্কার
পথে
রওনা
দেন।
·
মুনাফিকরা
তখন
ভয়
পেয়ে
বলল:
"যাওয়া ঠিক হবে না,
ঝামেলা হবে, যুদ্ধ হবে..."
— তাই তারা
যায়নি।
·
কিন্তু
পরে যখন খায়বার
যুদ্ধ
জয়
করে
মুসলিমরা
গনীমত
পেলো
(সম্পদ,
জমি,
খাদ্য)—তখন সেই মুনাফিকরাই
বলল:
“আমাদেরকেও
নিয়ে চলো, আমরা তো
তোমাদের ভাই!”
❗তাদের
ভুল কী ছিল?
·
কষ্টের
সময়ে দ্বীন থেকে পিছু হটা, আর লাভের সময়ে এসে দখল চাওয়া—এটা দ্বিমুখী চরিত্র
(নিফাক)।
·
তারা
চায় আল্লাহর বিধান পাল্টাতে — যেন যারা কষ্টে
শরিক হয়নি, তারাও লাভের ভাগ পায়।
📖
হাদীস থেকেঃ
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন: “যে ব্যক্তি কোনো ভালো কাজ থেকে অজুহাত সৃষ্টি করে বিরত থাকে, আল্লাহ তার অন্তরেও বিরূপতা সৃষ্টি করেন।”
📚 মুসনাদে আহমদ: ২৩৫৭৪, হাসান হাদীস
“যে
ব্যক্তি কোনো সৎকাজ থেকে অজুহাত ছাড়া পিছিয়ে থাকে, তার অন্তরে কালো দাগ পড়ে যায়।”
📚 মুসনাদে আহমাদ: ২৩৫৭৪, হাদীসটি হাসান
🌟
শিক্ষণীয় দিক:
§
যে ব্যক্তি দ্বীনের প্রতি ঢিলে দেয়
ও সর্বদা বাহানা খোঁজে—সে নিফাকের ঝুঁকিতে আছে।
§ মুমিন হয়—যাকে যখন বলা হয় “আল্লাহর পথে চলো”, সে বলে “সামনে এগিয়ে যাই”।
§ যে আল্লাহর হুকুম পালনে বারবার অজুহাত দেখায়, কিন্তু দুনিয়ার লাভের সময় চটজলদি
চলে আসে — সে মুনাফিকদের দলে পরিণত হয়।
§
একজন
প্রকৃত মুমিন কষ্ট হোক বা সুখ—দ্বীনের কাজে পিছপা হয় না।
🕋মুনাফিকের বৈশিষ্ট্যঃ
28
বিষয়ঃ ২৮. আল্লাহর নির্ধারিত শাস্তিকে ভয় না করা:
📌 বৈশিষ্ট্যটির সংজ্ঞা:
মুনাফিকরা মনে
করে—তাদের গোপন ষড়যন্ত্র কেউ জানে না, তারা বেঁচে যাবে। তারা আল্লাহর আযাবকে ভয় করে না, বরং ঠাট্টা-উপহাস করে। এই ভয়হীনতা ও ঔদ্ধত্যই নিফাকের লক্ষণ।
🌿 কুরআনের বানীঃ
📘Translet(অনুবাদ):
❝তাদের মিথ্যা শপথের
মাধ্যমে আল্লাহর পথ থেকে বিমুখ হওয়ার কথা বলা হয়েছে, যা আল্লাহর প্রতি তাদের ভয়ের
অভাব নির্দেশ করে। তারা মনে করে যে তাদের মিথ্যা শপথের কারণে তাদের কোনো ক্ষতি হবে
না।❞
📚 রেফারেন্স: সূরা
আল-মুনাফিকুন (৬৩):২
📘Translet(অনুবাদ):
❝মুনাফিকরা ভয় করে যদি এমন একটি সূরা নাযিল হয়, যা
তাদের অন্তরের গোপন বিষয় প্রকাশ করে দেয়।
(হে নবী!) বলুন, তোমরা ঠাট্টা করো; আল্লাহ তো প্রকাশ করেই দেবেন
যেটা তোমরা গোপন করতে চাও।❞
📚 (সূরা আত-তাওবাহ ৯:৬৪)
📘Translet(অনুবাদ):
❝নিশ্চয়ই মুনাফিকরা জাহান্নামের সবচেয়ে নিচের স্তরে
থাকবে এবং তুমি তাদের জন্য কোনো সাহায্যকারী পাবে না।❞
📚 (সূরা আন-নিসা ৪:১৪৫)
🧠 তাফসির ও ব্যাখ্যা (সংক্ষেপে):
🔹 মুমিন:
আল্লাহর শাস্তির ভয় তার অন্তরে সর্বদা থাকে। সে
গুনাহ করলেও কাঁদে, লজ্জিত হয়।
🔹 মুনাফিক:
আল্লাহর ও রাসূলের বিষয়ে ঠাট্টা করে, হাসাহাসি
করে। ভাবে,❝আল্লাহ তো মাফ করবেন, এত ভয় কিসের?❞
➡️ এই অবজ্ঞাই তার নিফাক প্রকাশ করে।
📗 . হাদীসের আলোকে ব্যাখ্যা:
অর্থ:
❝তুমি এমন কিছু লোক পাবে যারা দুনিয়াতে হাসাহাসি করে, কিন্তু আখিরাতের শাস্তিকে ভয় করে না—এটাই নিফাক।❞
📘 (মাআনিউল আছার)
📝ব্যাখ্যা:-
§ তারা
আল্লাহর বিধানের কঠোরতা বা শাস্তির পরোয়া করে না, কারণ তাদের অন্তরে প্রকৃত ঈমান ও
আল্লাহর ভয় নেই।
📘 . বাস্তব উদাহরণ (আজকের সমাজে):
· দ্বীনের কথা বললে বলে:
· ❝আরে ভাই, এসব বেশি সিরিয়াস হইও না!❞
· আল্লাহর গজবের কথা উঠলে বলে:
· ❝আল্লাহ তো গফুরুর রাহীম, ভয় কিসের?❞
· ভয় না করে বরং গুনাহে গর্ববোধ করে।
অনেকেই দ্বীনের বিষয়ে ঠাট্টা করে:
·
“আচ্ছা! এত টুপি, এত দাঁড়ি দিয়ে কী হবে?”,
“একবার তো নামায পড়ি,
বাঁচব না?”
·
তারা ভাবে আল্লাহ কিছু বলবেন না,
➡️ এই শৈথিল্য ও নির্ভীকতা মুনাফিকদের আলামত।
🌟 শিক্ষণীয় দিক:
·
প্রকৃত মুমিন আল্লাহর গজবের ভয়েই গুনাহ থেকে বাঁচে।
·
কিন্তু মুনাফিক আল্লাহর শাস্তিকে তাচ্ছিল্য করে, ভাবে:
“এত ভয় পাওয়ার কী আছে?”,
“আল্লাহ তো মাফ করেই দেবেন”
➡️ এই মনোভাবই নিফাক।
🔚 উপসংহার:
❝আল্লাহর আযাবের ভয় অন্তরে না থাকা, ঈমানের দুর্বলতা নয়—বরং নিফাকের
চিহ্ন।❞
🧴 আল্লাহর ভয়
অন্তরে না থাকলে মানুষ ধীরে ধীরে দ্বীনের প্রতি উদাসীন হয়ে পড়ে এবং শয়তানের
প্ররোচনায় গুনাহে ডুবে যায়।
🕋মুনাফিকের
বৈশিষ্ট্যঃ 29
বিষয়ঃ ২৯. আল্লাহর পরিবর্তে অন্যকে অভিভাবক রূপে গ্রহণ করা:
📌 সংজ্ঞা:
মুনাফিকদের অন্তরে আল্লাহর প্রতি ঈমান নেই বলেই তারা আল্লাহকে যথার্থ অভিভাবক মনে করে না। বরং তারা কুফর, বাতিল শক্তি, দুনিয়াবি কর্তৃত্বশীলদের অভিভাবকতা ও সমর্থনে নিরাপত্তা খোঁজে।
🌿 কুরআনের বানীঃ
📘Translet(অনুবাদ):
"হে মুমিনগণ! তোমরা মুমিনদের পরিবর্তে
কাফিরদেরকে বন্ধু ও অভিভাবক রূপে গ্রহণ করো না। তোমরা কি চাও যে, আল্লাহকে তোমাদের
বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট প্রমাণ দাও?"
📚 রেফারেন্স: (সূরা আন-নিসা, ৪:১৪৪)
(মুনাফিকরা
গোপনে কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব রাখে)।
📘Translet(অনুবাদ):
❝মুনাফিকদেরকে আপনি সুসংবাদ দিন, তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
তারা মু’মিনদের ছেড়ে কাফিরদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ
করে। তারা কি তাদের কাছেই সম্মান খোঁজে?
অথচ সব সম্মান তো একমাত্র আল্লাহর কাছেই।❞
📚 সূরা আন-নিসা: ১৩৮-১৩৯
📘 . তাফসির ও ব্যাখ্যা:
§ অভিভাবক, সাহায্যকারী,
নিকটজন, যাকে আপনি শ্রদ্ধা করেন ও অনুসরণ করেন।
§ মুনাফিকরা মনে
করে, আল্লাহর বদলে কুফরী শক্তির সাথে সম্পর্ক করলেই বাঁচবে, সম্মান পাবে।
§ তারা আল্লাহর শক্তি, সাহায্য ও শাস্তিকে
মূল্যহীন মনে করে, যা নিফাকের বড় লক্ষণ।
§ তারা আল্লাহ ও মুমিনদের পরিবর্তে
কাফির বা আল্লাহদ্রোহী শক্তির প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে এবং তাদেরকেই নিজেদের
বন্ধু ও সাহায্যকারী মনে করে।
📗 হাদীসের ইঙ্গিত:
🔹 সরাসরি হাদীস নয়, তবে অর্থগতভাবে ইঙ্গিত মেলে:
“যে ব্যক্তি কোনো কওমকে ভালোবাসে,
সে তাদের সাথেই resurrect হবে।”
📚 (আবু দাউদ, হাদীস:
৫১২৮)
➡️ এর দ্বারা বোঝা যায়, যাকে আপনি অভিভাবক বা নেতা রূপে
গ্রহণ করবেন, তার সাথে আপনার অন্তর যুক্ত হয়ে যাবে।
⚠আজকের সমাজে এর রূপ:
· যারা দ্বীনের চেয়ে নাস্তিক, ধর্মবিদ্বেষী বা আল্লাহ-বিরোধী শক্তিকে সম্মান করে।
· যারা বলে:
“ওরা পশ্চিমা উন্নত দেশ, ওদের
মতো হলেই উন্নতি।”
·
যারা ইসলামী আইন বা সমাজব্যবস্থাকে তুচ্ছ করে, অন্য মতাদর্শের দিকে ঝুঁকে
পড়ে।
➡️ এ মনোভাবই আল্লাহর অভিভাবকত্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া।
🕋মুনাফিকের
বৈশিষ্ট্যঃ 30
বিষয়ঃ ৩০. সর্বদা ভয় ও সংশয়ের মধ্যে থাকাঃ
🌿 কুরআনের বানীঃ
📘Translet(অনুবাদ):
তারা সবসময় ভীত ও অস্থির থাকে। কোনো আওয়াজ শুনলে মনে করে তারাই শত্রু বা তাদের বিরুদ্ধেই। "
📚 রেফারেন্স: (সূরা
আল-মুনাফিকুন, ৬৩:৪)
📘Translet(অনুবাদ):
❝তারা আল্লাহর কসম খেয়ে বলে, ‘আমরা তোমাদেরই একজন।’
অথচ তারা
তোমাদের কেউ নয়, তারা এক ভীতু জাতি।
যদি তারা
কোনো আশ্রয়স্থল, গুহা বা প্রবেশযোগ্য জায়গা পেত, তবে তারা দ্রুত সেদিকে ছুটে
যেত।❞
📚 (সূরা আত-তাওবাহ: ৯:৫৬–৫৭)
📗 . হাদীসের ইঙ্গিত:
রাসূল ﷺ
বলেন, “মুনাফিক
হল সে ব্যক্তি, যার অন্তরে দ্বিধা ও ভয় রয়েছে, আর সে চায়—লোকের দৃষ্টি তাকে ভালো মনে
করুক।”
📚 (মাআনিউল আসার, হাদীস অনুরূপ অর্থে)
📝 ব্যাখ্যা:-
§ তাদের অন্তরে ঈমান না থাকায় তারা সবসময় অজানা আশঙ্কায় ভোগে এবং যেকোনো ঘটনাকে নিজেদের বিরুদ্ধে মনে করে।
🧠 . বাস্তব চিত্র:
·
দ্বীন নিয়ে সবসময় দ্বিধা:
❝ইসলাম ঠিক আছে, কিন্তু এখন সময়ের চাহিদাও তো বুঝতে হবে!❞
·
জাহান্নামের ভয় নেই, আবার জান্নাতের আশাও নেই।
·
দ্বীনী কথা শুনলেও ভিতরে ভয় ঢুকে যায়:
❝না জানি কী হবে! এত কথা বলা ঠিক তো?❞
➡️ এই অস্থিরতা ও সংশয় – নিফাকের লক্ষণ।
🌟 . শিক্ষণীয় দিক:
মুমিন |
মুনাফিক |
অন্তরে
প্রশান্তি ও দৃঢ়তা |
অন্তরে
ভয় ও সংশয় |
ঈমানের
কারণে শান্ত |
দ্বিধার
কারণে অস্থির |
আল্লাহর
উপর ভরসা করে |
লোকদের
প্রতিক্রিয়া দেখে চলে |
🕋মুনাফিকের
বৈশিষ্ট্যঃ 31
✎ বিষয়ঃ
সংশয় ও সন্দেহ: 31
- বর্ণনা:
মুনাফিকরা ইসলাম এবং এর মৌলিক বিষয়ে গভীরভাবে সন্দিহান থাকে। তাদের ঈমান দৃঢ়
নয়, বরং দ্বিধাগ্রস্ত। তারা সুবিধাবাদী হয় এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেদের অবস্থান
পরিবর্তন করে।
🌿 কুরআনের বানীঃ
📘Translet(অনুবাদ):
"তাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, অতঃপর আল্লাহ তাদের ব্যাধি বাড়িয়ে দিয়েছেন।"
📚 রেফারেন্স: (সূরা
আল-বাকারা, ২:১০)।
এই 'ব্যাধি' বলতে সংশয়, সন্দেহ এবং কপটতাকে বোঝানো হয়েছে।
📘Translet(অনুবাদ):
"যারা নিজেদের দ্বীনকে খেল-তামাশা হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং যাদেরকে দুনিয়ার জীবন প্রতারিত করেছে, তাদেরকে বর্জন করো।"
📚 রেফারেন্স: (সূরা
আল-আন'আম, ৬:৭০)।
মুনাফিকরা দ্বীনকে হালকাভাবে নেয় এবং এর প্রতি তাদের পূর্ণ বিশ্বাস থাকে না।
📘 . তাফসির ও ব্যাখ্যা:
🔸 ইবনে কাসীর (রহ.) বলেন:
“এ ব্যাধি হলো নিফাক, সন্দেহ, ও দ্বীনের বিষয়ে সংশয়। এদের মনে দ্বিধা, আল্লাহর প্রতি অস্থিরতা এবং কুরআনের প্রতি অবিশ্বাস জমে থাকে।”
📚 (তাফসির ইবনে কাসীর)
🔸 কুরতুবী (রহ.) বলেন:
“এই আয়াতে ‘রোগ’ বলতে ঈমানের দুর্বলতা ও দ্বীনের বিষয়ে সংশয় বোঝানো হয়েছে।”
📚 (আল-জামি’ লি আহকামিল কুরআন)
📖 সহীহ হাদীস:
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন: ❝যে দ্বীনের কোনো বিষয়ে সন্দেহ করে, সে নিফাকের মধ্যে পড়ে গেছে।❞
📚 (তিরমিযী, হাদীস: ২৬২৪ - হাসান)
🌟.
বাস্তব চিত্র:
·
কেউ
কিয়ামতের বিষয়ে বলে: “আসলে এটা সত্যিই
হবে কি?”
·
জান্নাত-জাহান্নাম নিয়ে সন্দেহ পোষণ
করা।
·
কুরআনের
কোনো আয়াত বা হুকুম
শুনে মনে মনে সন্দেহ
পোষণ করা।
·
দ্বীনের
ব্যাখ্যা গ্রহণে দ্বিধা ও কটাক্ষ করা।
✅ .
উপসংহার:
❝সন্দেহ
ও সংশয় মুনাফিকদের অন্তরের
রোগ।❞
যে
ব্যক্তি দ্বীনের মৌলিক বিষয়ে সংশয় পোষণ করে, সে
আল্লাহর কাছে একজন মুমিন
নয়, বরং সে তার
অন্তরের মুনাফিকির আলামত প্রকাশ করছে।
🕋মুনাফিকের
বৈশিষ্ট্যঃ 32
✎বিষয়ঃঠাট্টা-বিদ্রূপ ও উপহাস/ রাসূল (সাঃ)/ইসলামের প্রতি ঘৃণা বা বিদ্বেষ
·
বর্ণনা: তারা আল্লাহ, রাসূল (সাঃ) এবং মুমিনদেরকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে, বিশেষত যখন তারা একা থাকে বা নিজেদের দলের মধ্যে থাকে। তারা ঈমানের বিষয়ে বিদ্রূপাত্মক মন্তব্য করে।
🌿 কুরআনের বানীঃ 📘Translet(অনুবাদ):
📜 আল্লাহ বলেন:
"আর
যদি তুমি তাদেরকে (তাদের কাজের কারণ) জিজ্ঞেস করো, তবে তারা অবশ্যই বলবে, 'আমরা তো
কেবল কৌতুক ও খেল-তামাশা করছিলাম।' বলো, 'তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলকে
নিয়ে ঠাট্টা করছিলে?'"
📚 রেফারেন্স: (সূরা
আত-তাওবাহ, ৯:৬৫)।
এই আয়াত মুনাফিকদের জঘন্য স্বভাব প্রকাশ করে।
📘Translet(অনুবাদ):
"তারা যখন ঈমানদারদের সাথে মিলিত হয়, তখন
বলে, 'আমরা ঈমান এনেছি।' আর যখন তাদের শয়তানদের (নেতাদের) সাথে একান্তে মিলিত হয়,
তখন বলে, 'আমরা তো তোমাদের সঙ্গেই আছি, আমরা শুধু (মুমিনদের সাথে) উপহাস করছিলাম।'"
📚 রেফারেন্স: (সূরা আল-বাকারা, ২:১৪)
🎓 ইমাম কুরতুবী (রহ.) বলেন:
ü ❝এ আয়াত প্রমাণ করে যে, আল্লাহর আয়াত, রাসূল ও দ্বীন নিয়ে ঠাট্টা
করা কুফরি—even যদি কেউ তা মজা করেই করে।❞
📚 তাফসীর কুরতুবী, তাওবা: ৬৫–৬৬
📌 ব্যাখ্যা:
·
এ আয়াত একটি ঐতিহাসিক ঘটনার প্রেক্ষিতে নাজিল হয়—যেখানে কিছু
মুনাফিক নবী ﷺ ও সাহাবিদের নিয়ে
উপহাস করছিল।
·
তারা বলছিল: “এরা তো পেটুক ও ভীতু।”
·
তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হলে, তারা বলে—“আমরা তো মজা করছিলাম।”
·
তখন আল্লাহ তাআলা কঠোরভাবে ঘোষণা করেন—আল্লাহ, রাসূল ﷺ এবং কুরআনের আয়াত নিয়ে ঠাট্টা
কুফরি।
📖 প্রাসঙ্গিক হাদীস:
📘Translet(অনুবাদ): “এক ব্যক্তি কথায় এমন
কিছু বলে ফেলে, যাতে সে সন্তুষ্ট থাকে,
অথচ তা
তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করে।”
📚 সহীহ বুখারী: ৬৪৭৮, মুসলিম:
২৯৮৮
🌟 শিক্ষণীয় দিক:
ü দ্বীনের
কোনো বিধান কুরআনের কোনো আয়াত মানে কুরআনের
বাণী, হাদীস, ইসলামী শরিয়তের বিধান।
ü এগুলো
নিয়ে ঠাট্টা, ব্যঙ্গ, বিদ্রূপ—মুনাফিকদের কাজ।
ü আজকের
যুগে সোশ্যাল মিডিয়া বা বিনোদনের নামে যারা দ্বীনকে নিয়ে উপহাস করে, তারা একই গোনাহে
লিপ্ত হচ্ছে।
🕋মুনাফিকের
বৈশিষ্ট্যঃ 33
✎ বিষয়ঃ বিশ্বাসীদের ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা: 33
তারা আল্লাহ
ও বিশ্বাসীদের ধোঁকা দিতে চায়, কিন্তু তারা নিজেদেরকেই ধোঁকা দেয় এবং তা উপলব্ধি
করে না।
🌿 কুরআনের বানীঃ
📘Translet(অনুবাদ):
“নিশ্চয়ই
মুনাফিকরা আল্লাহকে ধোঁকা দিতে চায়,
অথচ আল্লাহই তাদেরকে ধোঁকায় ফেলেন।”
📖 [সূরা আন-নিসা: ১৪২,
📚 সূরা আল-বাকারা: ৯]
🔹 এই আয়াতে বোঝানো হয়েছে, তারা আল্লাহ ও বিশ্বাসীদের সঙ্গে প্রতারণার চেষ্টা করে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজেরাই ধোঁকায় পড়ে যায়।
ü
"আর
মানুষের মধ্যে এমনও আছে যারা বলে, 'আমরা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান এনেছি',
অথচ তারা মু'মিন নয়।
ü
তারা
আল্লাহ ও মু'মিনদেরকে ধোঁকা দিতে চায়; অথচ তারা নিজেদেরকেই ধোঁকা দেয় এবং তারা
তা উপলব্ধি করে না। তাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, অতঃপর আল্লাহ তাদের ব্যাধি
বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি; কারণ তারা মিথ্যা
বলত।"
📚 রেফারেন্স: সূরা
আল-বাকারা, আয়াত ৮-১০]
📗 . তাফসির ও ব্যাখ্যা:
🔸 ইবনে কাসীর
(রহ.) বলেন:
“এ আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, মুনাফিকরা
মুখে মুসলমান বলে, কিন্তু মনে কুফর লুকিয়ে রাখে। তারা ভেবে নেয়, এতে মুমিনদের
ধোঁকা দেওয়া যাবে। অথচ এতে তাদের নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”
📚 (তাফসির
ইবনে কাসীর, সূরা বাকারা: ৯)
🔸 আল-সা‘দী
(রহ.) বলেন:
“তারা মুমিনদের প্রতি বন্ধুত্ব ও
ঈমানের ভান করে, কিন্তু অন্তরে শত্রুতা লুকিয়ে রাখে। এই নোংরা মনোভাবই হচ্ছে ধোঁকা
দেওয়ার চেষ্টা।”
📚 (তাফসির
আস-সা‘দী)
হাদীসঃ
❝যে আমাদেরকে ধোঁকা দেয়, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।❞
📚 সহীহ মুসলিম: ১০১
🌟.
বাস্তব
চিত্র:
·
মুনাফিক
নামধারীরা মুমিনদের সামনে ভদ্র, কিন্তু পেছনে ষড়যন্ত্র করে।
·
ইসলামিক
আন্দোলন বা দ্বীনের কাজের
মধ্যে ঢুকে ভিতর থেকে
ক্ষতি সাধনের চেষ্টা করে।
·
দ্বীনের
নামে লোক দেখানো ভণ্ডামি
করে, মুমিনদের বিভ্রান্ত করতে চায়।
✅
. উপসংহার:
❝ধোঁকা
দেওয়া নিফাকের প্রকাশ—মুসলমান কখনো সত্য লুকায়
না, কারো ক্ষতি চায়
না।❞
যে
ব্যক্তি মুমিনদের বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে ষড়যন্ত্র ও
ধোঁকা দেয়, সে নিফাকের
পথেই চলছে।
✅ শিক্ষা:
·
❝যে ব্যক্তি বিশ্বাসীদের ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করে, সে মুনাফিকদের পথ অনুসরণ করছে এবং সে নিজেই তার সর্বনাশের ব্যবস্থা করছে।❞
📖
[সূরা আন-নিসা: ১৪২, সূরা বাকারা: ৯]
🕋মুনাফিকের
বৈশিষ্ট্যঃ 34
✎বিষয়ঃ কাফির ও আল্লাহদ্রোহীদের সাথে গভীর সম্পর্ক রাখা এবং মুমিনদের থেকে দূরে থাকা:
🌿 কুরআনের বানীঃ
📘Translet(অনুবাদ):
“হে
ঈমানদারগণ! তোমরা ইহুদি ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধু বানিও না।
তারা একে
অপরের বন্ধু।
ü আর
তোমাদের মধ্যে কেউ তাদেরকে বন্ধু বানালে,
সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।”
📖
[সূরা আল-মায়েদা: ৫১]
🔹
যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের
বিরোধিতা করে, তাদের প্রতি
অনুগত্য ও সম্পর্ক ঈমান
ধ্বংস করে দেয়।
📘Translet(অনুবাদ):
“পুরুষ ও নারী মুনাফিকরা একে অপরের সাথী। তারা অসৎ কাজের আদেশ দেয় এবং সৎকাজে নিষেধ করে।”
📖 [সূরা তাওবা: ৬৭]
🔹 মুনাফিকদের চিনে রাখো — তারা
সত্যিকার ঈমানদারদের বিরুদ্ধেই অবস্থান নেয়।
📘Translet(অনুবাদ):
"তাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, অতঃপর আল্লাহ তাদের ব্যাধি বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি; কারণ তারা মিথ্যা বলত।"
📚 রেফারেন্স: (সূরা আল-বাকারা, ২:১০)
📘Translet(অনুবাদ):"তারা যখন ঈমানদারদের সাথে মিলিত হয়, তখন বলে, 'আমরা ঈমান এনেছি।' আর যখন তাদের শয়তানদের (নেতাদের) সাথে একান্তে মিলিত হয়, তখন বলে, 'আমরা তো তোমাদের সঙ্গেই আছি, আমরা শুধু (মুমিনদের সাথে) উপহাস করছিলাম।'"
📚 রেফারেন্স: (সূরা
আল-বাকারা, ২:১৪)
📖 প্রাসঙ্গিক হাদীস:
📘Translet(অনুবাদ):
রাসূলুল্লাহ
ﷺ বলেন: “তুমি যেন কেবল ঈমানদারদের সঙ্গী
হও, এবং তোমার খাবার যেন কেবল পরহেযগাররাই খায়।”
📚 [তিরমিযি:
২৩৯৫, হাসান সহীহ]
🔹
যার
অন্তর
ঈমানশূন্য,
তার
সঙ্গে
অন্তরঙ্গতা
রাখলে
নিজেও
ক্ষতিগ্রস্ত
হবে
— এটাই
মুনাফিকদের
পথ।
✅ শিক্ষা:
·
❝যে
ব্যক্তি ঈমানদারদের ছেড়ে আল্লাহদ্রোহী কাফিরদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করে, সে
মুনাফিকদের দলে অন্তর্ভুক্ত।❞
[সূরা
নিসা: ১৩৮–১৩৯]
🕋মুনাফিকের
বৈশিষ্ট্যঃ 35
✎ বিষয়ঃ মুনাফিকদের নেতৃত্ব
অনুসরণ করা:
এটি
মুমিনদের জন্য ভয়ানক বিপদ।
🌿
কুরআনের বানীঃ
📘Translet(অনুবাদ):
“হে নবী!
আপনি আল্লাহকে ভয় করুন, এবং কাফির ও মুনাফিকদের অনুসরণ করবেন না। নিশ্চয়ই
আল্লাহ সবকিছু জানেন, প্রজ্ঞাময়।”
📖 [সূরা
আহযাব: ১]
🔹 যদি নবী ﷺ-কে নিষেধ করা হয় মুনাফিকদের অনুসরণ করতে, তাহলে
সাধারণ মুমিনদের জন্য কত বড় সতর্কতা—তা সহজেই অনুমেয়।
📘Translet(অনুবাদ):
“মুনাফিকদেরকে সংবাদ দিন যে তাদের জন্য রয়েছে
যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
তারা
মুমিনদের ছেড়ে কাফিরদেরকেই বন্ধু (নেতা ও অভিভাবক) বানিয়ে নেয়।”
📖 [সূরা
নিসা: ১৩৮–১৩৯]
🔹 মুনাফিকদের নেতৃত্ব মানে — ঈমানদারদের বিরুদ্ধ পথে চলা, দ্বীনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।
📖 প্রাসঙ্গিক হাদীস:
📘Translet(অনুবাদ):
“যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের
মতো আচরণ করে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।”
📚 [সহীহ
বুখারী: ৬১৭০, মুসলিম: ২৬৪১), আবু দাউদ: ৪০৩১, হাদীস সহীহ]
🔹 যিনি মুনাফিকদের পথ অনুসরণ করেন, তাদের মত জীবন যাপন করেন, তাদের আদর্শকে লালন করেন—তিনি
তাদেরই দলভুক্ত হয়ে পড়েন।
📗
তাফসির
ও
ব্যাখ্যা:
🔸 ইবনে কাসীর (রহ.) বলেন:
§
❝এই
আয়াতে আল্লাহ তায়ালা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, যারা ঈমানদারদের ছেড়ে
কাফেরদের সহচরতা গ্রহণ করে, তারা মুনাফিক।
কারণ তারা আল্লাহর শত্রুদের
কাছেই সম্মান ও নিরাপত্তা খোঁজে,
যা একমাত্র আল্লাহর কাছেই রয়েছে।❞
📚 (তাফসির ইবনে কাসীর, সূরা নিসা: ১৩৮-১৩৯)
🔸 কুরতুবী (রহ.) বলেন:
·
❝এই
আয়াত দ্বারা বুঝা যায়, যে
ব্যক্তি আল্লাহর বন্ধুদের (মুমিনদের) পরিবর্তে কুফর ও ফাসিকদেরকে
ভালোবাসে ও অনুসরণ করে,
সে নিফাকের পথে চলছে।❞
📚 (আল-জামে লি আহকামিল কুরআন)
🌟.
বাস্তব
চিত্র:
·
ইসলামের বিরোধী শাসকদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা।
·
দ্বীন ও শরিয়তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া নেতা ও চিন্তাবিদদের সমর্থন করা।
·
মুমিনদের নেতৃত্বের অবজ্ঞা ও তুচ্ছজ্ঞান করা।
✅ শিক্ষা:
·
❝যে
ব্যক্তি মুনাফিকদের আদর্শ, চিন্তা ও নেতৃত্ব অনুসরণ করে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে
যায় এবং আখিরাতে কঠিন শাস্তির যোগ্য হয়ে দাঁড়ায়।❞
🕋মুনাফিকের
বৈশিষ্ট্যঃ 36
✎ বিষয়ঃ জামাতে নামাজে অংশ নিতে অনীহাঃ
🌿
কুরআনের বানীঃ
📘Translet(অনুবাদ):
“নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহকে ধোঁকা দিতে চায়,
অথচ আল্লাহ তাদের ধোঁকায় ফেলেন।
ü তারা যখন নামাযে দাঁড়ায়, অলসভাবে দাঁড়ায়;
লোকদের দেখানোর উদ্দেশ্যে এবং তারা আল্লাহকে খুব অল্পই স্মরণ করে।”
📖 সূরা আন-নিসা: ১৪২
🔹 জামাতে নামাজে অনীহা, অলসতা ও রিয়া (লোক দেখানো)—এই সবই মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য।
📗
. তাফসির
ও
ব্যাখ্যা:
🔸 ইবনে কাসীর (রহ.) বলেন:
❝এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা জানিয়ে দিয়েছেন, মুনাফিকরা নামাযে আসে অলসভাবে ও অনিচ্ছা নিয়ে। তারা অন্তরে নামাযের প্রতি গুরুত্ব দেয় না বরং মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে পড়ে।❞
📚 (তাফসির ইবনে কাসীর, সূরা নিসা: ১৪২)
🔸 ইমাম কুরতুবী (রহ.) বলেন:
❝ (কুসালা) শব্দ দ্বারা বোঝানো
হয়েছে—তারা নামাযের প্রতি আন্তরিক নয়। নামাযের সময় মনে হয় যেন শাস্তির দিকে
যাচ্ছে। এটা নিফাকের প্রতীক।❞
📚 (আল-জামে লি আহকামিল কুরআন)
📘Translet(অনুবাদ):
“মুনাফিকদের কাছে সবচেয়ে ভারী নামায দুটি হলো—এশা
ও ফজরের নামায।
ü যদি তারা এ দুই নামাযের ফজিলত
জানত, তবে হামাগুড়ি দিয়েও তাতে উপস্থিত হতো।”
📚 [সহীহ
বুখারী: ৬৫৭, সহীহ মুসলিম: ৬৫১]
🔹 মুনাফিকেরা জামাতে আসতে অলসতা ও অনীহা দেখায়, বিশেষ করে রাত ও সকালে।
📘Translet(অনুবাদ):
যদি তারা জানত এ দু'টি নামাজের কী ফযীলত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাতে উপস্থিত হত।"
📚 রেফারেন্স:
(সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৫৭, সহীহ
মুসলিম, হাদীস নং-৬৫১)
🔹মসজিদের প্রতিবেশীর জন্য মসজিদেই
জামাতের সাথে নামাজ না পড়লে তার নামাজ নেই (সম্পূর্ণতা নেই।
📚
সহীহ মুসলিম: ৬৫২ (ইমাম আহমাদ থেকেও বর্ণিত)
📌.
বাস্তব উদাহরণ:
·
জামাতে
ফজর বা ‘ইশা পড়তে
গেলে বোঝা মনে হয়।
·
নিজের
ব্যস্ততা বা অলসতার অজুহাতে
জামাত এড়িয়ে চলে।
·
কেবল
লোক দেখানোর জন্য মসজিদে আসে,
নিজে অন্তরে চায় না।
✅
. উপসংহার:
§ ❝জামাতে নামাযে অনীহা শুধু শরীরের অলসতা নয়, বরং অন্তরের দুর্বলতা ও নিফাকের আলামত।❞
মুমিন সব সময় জামাতের প্রতি আগ্রহী হয়, আর মুনাফিক তা এড়িয়ে চলে, যদিও দুনিয়াবি কাজে চটপটে থাকে।
🕋মুনাফিকের
বৈশিষ্ট্যঃ 37
✎ বিষয়ঃ ❝দ্বীনকে তুচ্ছ করা ও উপহাসমূলক মন্তব্য
করা❞:
🌿 কুরআনের বানীঃ
📘Translet(অনুবাদ):
📜 আল্লাহ বলেন:
“তুমি যদি তাদের জিজ্ঞেস করো,
তারা অবশ্যই বলবে, ‘আমরা তো কেবল আলাপ-আলোচনা ও খেলাচ্ছলে কথা বলছিলাম।’ বলো: ‘তোমরা
কি আল্লাহ, তাঁর আয়াত ও তাঁর রাসূলকে নিয়ে ঠাট্টা করছিলে?’ অজুহাত দিও না, তোমরা তোমাদের
ঈমানের পর কুফরী করেছ।”
📖 সূরা আত-তাওবা (৯): আয়াত
৬৫–৬৬
📌 ব্যাখ্যা:
·
মুনাফিকরা দ্বীন এবং দ্বীনদার লোকদের নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে।
·
তারা মনে করে, দ্বীনের কথা শুধু পুরোহিতদের বা মসজিদের ভেতরের
বিষয়।
·
তারা দ্বীন নিয়ে উপহাস করে, যেমন কেউ বলে:
“সব জায়গায় ইসলাম টানার দরকার কী?”
“সবসময় হালাল-হারাম বলা বিরক্তিকর!”
·
অথচ এসব কথা ঈমানের ক্ষতিসাধনকারী—even ঈমান হরণকারীও হতে পারে।
🎓 ইমাম নববী (রহ.) বলেন:
📘Translet(অনুবাদ):❝আল্লাহ, রাসূল সাঃ ও
কুরআন নিয়ে তুচ্ছ মন্তব্য বা হাস্যরস—even মনের খুশিতে হলেও—তা কুফরি।❞
📚 শরহ মুসলিম, নববী; তাওবা:
৬৫–৬৬
📖 প্রাসঙ্গিক হাদীস:
📘Translet(অনুবাদ):
“কেউ আল্লাহর
কোনো আদেশ নিয়ে তুচ্ছ মন্তব্য করলে, সে ঈমান হারিয়ে ফেলে।”
📚 দারেমী: মুয়াল্লাক, অর্থ
নির্ভরযোগ্য উলামাদের বর্ণনায় সহীহভাবে প্রমাণিত
🌟 শিক্ষণীয় দিক:
·
দ্বীন মানা না মানা এক বিষয়, কিন্তু উপহাস করা ভয়ানক অন্যায়।
·
ইসলামের শিক্ষা, কুরআন-হাদীস, হিজাব, দাড়ি, পর্দা, সালাত—এসব নিয়ে
কেউ ঠাট্টা করলে, সে নিফাকের পথে আছে।
·
এমনকি হাস্যরস বা মিম আকারেও দ্বীন নিয়ে ব্যঙ্গ করলে তা ঈমান ধ্বংসকারী।
✅ সংক্ষেপে শিক্ষা:
ü দ্বীন নিয়ে হালকা মন্তব্য, ঠাট্টা
বা অবজ্ঞা—মুনাফিকদের মূল গুণ। এটি শুধু নাফাক নয়, বরং স্পষ্ট
কুফরি।
🕋মুনাফিকের
বৈশিষ্ট্যঃ 38
✎ বিষয়ঃপরকালকে অবিশ্বাস করা বা তাতে সন্দেহ পোষণ করা:
🌿 কুরআনের বানীঃ
📘Translet(অনুবাদ):
📜 আল্লাহ বলেন:
§
❝এ কারণেই তারা প্রথমে ঈমান আনে,
তারপর কুফর করে, ফলে তাদের হৃদয়ে মোহর লাগিয়ে দেওয়া হয়—তারা বুঝে না।❞
📖 সূরা
আল-মুনাফিকুন (৬৩): আয়াত ৩
§ 📘Translet(অনুবাদ): ❝তারা
আল্লাহকে মনে রাখেও না।❞
📖 সূরা
আত-তাওবা (৯): আয়াত ৬৭
§ 📘Translet(অনুবাদ): ❝তারা
দুনিয়ার জীবনের বাহ্যিক দিক জানে, কিন্তু আখিরাত সম্পর্কে তারা গাফেল।❞
📖 সূরা
আর-রূম (৩০): আয়াত ৭
§ 📘Translet(অনুবাদ): ❝যে
ব্যক্তি মুখে পরকালে বিশ্বাসের দাবি করে, কিন্তু অন্তরে সন্দেহ ও প্রস্তুতিহীনতা রাখে—সে
মুনাফিকদের অন্তর্ভুক্ত।❞
§ 📘Translet(অনুবাদ): ❝লোকদের মধ্যে এমনও আছে যারা বলে, ‘আমরা আল্লাহ ও
পরকালের ওপর ঈমান এনেছি’, অথচ তারা প্রকৃত মুমিন নয়।❞
📖 [সূরা
বাকারা: ৮]
🔹 মুখে ঈমান আনার দাবি, কিন্তু
অন্তরে সন্দেহ ও অবিশ্বাস — এটাই মুনাফিকি।
§ 📘Translet(অনুবাদ): ❝বরং তারা আখেরাতকে ভয় করে না।❞
📖 [সূরা মুদ্দাসসির: ৫৩]
🔹 যারা আখেরাতে বিশ্বাস রাখে না, ভয় করে না — তারা
আল্লাহর বিচারের দিনকে উপহাস করে।
ü 📘Translet(অনুবাদ): ❝তাদের
অন্তরে কি রোগ আছে? না তারা কি সন্দেহ পোষণ করে? না কি তারা ভয় পায় যে,
আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তাদের উপর জুলুম করবেন? ❞
📖 [সূরা
আন-নূর: ৫০]
🔹 যারা
পরকাল, শাস্তি বা প্রতিদান সম্পর্কে সন্দেহ করে, তারা আসলে জুলুমকারী ও মুনাফিক
প্রকৃতির।
📌 ব্যাখ্যা:
·
মুনাফিকরা আখিরাতকে মনে রাখে না, ভয় করে না, প্রস্তুতও হয় না,
·
তারা বলে ঈমান এনেছে,
কিন্তু আখিরাতের চিন্তা তাদের জীবনে
অনুপস্থিত।
·
তাদের আমল ও আচরণ—সবই
দুনিয়ামুখী,
·
এ কারণে তারা দীনকে
ছলচাতুরি ও লোক দেখানোর মাধ্যম বানায়।
➡️ তারা আখিরাতের হিসাব, কবর, কিয়ামত, জান্নাত-জাহান্নাম—সবকিছুকে হালকা ভাবে নেয়।
📖 প্রাসঙ্গিক হাদীস:
📘Translet(অনুবাদ):
“যে ব্যক্তি আখিরাতকে ভুলে যায়, সে ধোঁকায়
পড়ে এবং ধ্বংস হয়ে যায়।”
📚 সহীহুল জামে: ৬৩৪১, সহীহ সনদে
বর্ণিত
📘Translet(অনুবাদ):
📖 রাসূল ﷺ
বলেন:
§ “যদি
তাদের কাছে আখেরাতের প্রতি ঈমান থাকত, তবে তারা দুনিয়ার কথা কম বলত এবং আখেরাতের জন্য
বেশি আমল করত।”
📚
[হাসান, মুস্তাদরাক হাকিম: ৭৯০৩]
🔹 দুনিয়া-মুখীতা ও আখেরাত-অবিশ্বাস একসাথে চলে
না। যারা পরকালে অবিশ্বাস করে, তাদের ঈমান শুধু মুখেই সীমাবদ্ধ।
ü তাদের কার্যকলাপ দেখায় যে তারা পরকালে বিশ্বাসী নয় বা তাদের বিশ্বাস দুর্বল।
🌟 শিক্ষণীয় দিক:
· মুমিন প্রতিনিয়ত আখিরাতের জন্য প্রস্তুতি নেয়,
· কিন্তু মুনাফিকের কাছে আখিরাত দুর্বল ধারণা বা তুচ্ছ বিষয়।
· বাস্তবে যার অন্তরে আখিরাতের ভয় নেই, তার আচরণে দ্বীন থাকে না।
✅ শিক্ষা:
§ আখিরাতকে অবহেলা করা,
ভুলে যাওয়া ও গুরুত্ব না দেওয়া—এটি নিফাকের ভয়ানক লক্ষণ। ঈমানদার সবসময় আখিরাতকে সামনে
রেখে চলে।
🕋মুনাফিকের
বৈশিষ্ট্যঃ 39
✎ বিষয়ঃ
সন্ত্রাস ও বিশৃঙ্খলা ছড়ানো:
🌿
কুরআনের বানীঃ
📘Translet(অনুবাদ):
“আর যখন তাদেরকে বলা হয়: ‘পৃথিবীতে ফাসাদ
সৃষ্টি করো না’, তখন তারা বলে: ‘আমরা তো শুধুই শান্তি স্থাপন করছি’।
ü জেনে রাখ, তারাই আসলে ফাসাদকারী;
কিন্তু তারা তা বোঝে না।”
🟩
এই আয়াতে আল্লাহ স্পষ্ট করে বলেছেন,
মুনাফিকরা নিজেরা বিশৃঙ্খলা করে, সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ায়—কিন্তু মুখে শান্তি ও ইসলাহ
(সংস্কার)-এর দাবি করে।
📚 রেফারেন্স: (সূরা আল-বাকারা, ২:১১)
·
তারা আল্লাহর নামে ওয়াদা করে কিন্তু তা
ভঙ্গ করে; আল্লাহ তাদের অন্তরে চিরস্থায়ী মুনাফিকি ঢুকিয়ে দেন।
📖 [সূরা তাওবা: ৭৫–৭৭]
🟥
মুনাফিকদের কর্মফল:
ü “নিশ্চয়ই মুনাফিকরা
জাহান্নামের সবচেয়ে নিচু স্তরে থাকবে।”
📖 [সূরা
নিসা: ১৪৫]
📗
. তাফসির
ও
ব্যাখ্যা:
🔸 ইবনে কাসীর (রহ.) বলেন:
§
❝এরা
এমন শ্রেণির মানুষ যারা নিজেরাই বিশৃঙ্খলা
সৃষ্টি করে, কিন্তু নিজেদের
সংস্কারক হিসেবে তুলে ধরে। তারা
আল্লাহর পথে বাধা দেয়,
সত্যকে গোপন করে এবং
অন্যদের দ্বীন থেকে দূরে সরায়।❞
📚 (তাফসির ইবনে কাসীর, সূরা বাকারা: ১১–১২)
🔸 ইমাম তাবারী (রহ.) বলেন:
§
❝‘ফাসাদ’
বলতে এখানে আল্লাহর হুকুম অমান্য করা, অন্যদেরকে সত্য
থেকে ফেরানো এবং পাপাচার ছড়িয়ে
দেওয়া বোঝানো হয়েছে।❞
📚 (তাফসির আত-তাবারী)
📖 প্রাসঙ্গিক হাদীস:
📘Translet(অনুবাদ):
📖 রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
ü “আমার
উম্মতের জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলো এমন মুনাফিক, বাকপটু-বাগ্মী লোকদেরকে আল্লাহ তা’আলা
অবশ্যই ঘৃণা করেন, যারা গরুর জাবর কাটার ন্যায় কথা বলে। পারে।”
📚 হাদীস সহীহ [তিরমিযী: ২৮৫৩ – সহীহাহ (৮৭৮)]
🟩 তারা মুখে
ইসলাম ও শান্তির কথা
বললেও, বাস্তবে ফেতনা, বিভ্রান্তি ও বিভাজন ছড়ায়।
🌟উপসংহার:
o
❝যে
মুখে শান্তি ও দ্বীনের কথা বলে, অথচ অন্তরে সন্ত্রাস, বিভক্তি ও বিশৃঙ্খলা ছড়ায়—সে
প্রকৃত মুনাফিক, এবং সে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে অপছন্দনীয় ব্যক্তি।❞
📖 [সূরা
বাকারা: ১১–১২]
🕋মুনাফিকের
বৈশিষ্ট্যঃ 40
✎ বিষয়ঃ দ্বীনকে ব্যবসা
ও দুনিয়ার স্বার্থে ব্যবহার করেঃ
·
এরা
মুখে দ্বীনের দাবি করে, কিন্তু অন্তরে বিশ্বাস নেই বা দ্বীনকে স্বার্থে ব্যবহার করে।
🌿 কুরআনের বানীঃ
📘Translet(অনুবাদ):
❝তারা
আল্লাহর আয়াতের বিনিময়ে সামান্য মূল্য (দুনিয়ার স্বার্থ) গ্রহণ করে এবং মানুষকে
আল্লাহর পথে বাধা দেয়। তারা যা করে, তা খুবই নিকৃষ্ট।❞
📚 রেফারেন্স: সূরা
তাওবা ৯:৯
📘 Translet(অনুবাদ):
❝যে দ্বীনকে দুনিয়ার
ব্যবসা বা স্বার্থে ব্যবহার করে, সে মুনাফিকদের পথ অনুসরণ করে; তার জন্য জাহান্নামই
যথেষ্ট।❞
📖 [সূরা বাকারা: ২০৬;
📗 তাফসির
ও
ব্যাখ্যা:
🔸 ইবনে কাসীর (রহ.) বলেন:
§
❝এ
আয়াত মুনাফিক ও আহলে কিতাবদের
জন্য প্রযোজ্য, যারা নিজেদের জ্ঞান
ও ধর্মীয় অবস্থানকে দুনিয়ার সামান্য স্বার্থে বিকিয়ে দেয়। তারা দ্বীন
প্রচারের নামে মানুষকে বিভ্রান্ত
করে, যাতে নিজেদের প্রভাব
ও লাভ বজায় থাকে।❞
📚 (তাফসির ইবনে কাসীর)
🔸 ইমাম তাবারী (রহ.) বলেন:
§
❝আল্লাহর
বাণীকে যারা লোভের বিনিময়ে বিকিয়ে দেয়, তারা দ্বীনের মুখোশ পরে থাকলেও আসলে তারা
ধোঁকাবাজ ও মুনাফিক।❞
📚 (তাফসির তাবারী)
📖 হাদীসের দলীল:
🔹 রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
❝শিগগির এমন এক সময় আসবে, যখন মানুষ দ্বীন দিয়ে দুনিয়া কামাবে।❞
📚 (মুসনাদ
আহমাদ: হাদীস ২২৩৪৭)
🔹 আরেক হাদীসে:
❝তোমরা ভয় কর সেই লোককে, যে দ্বীন নিয়ে ব্যবসা করে।❞
📚 (সুনান
আদ-দারিমি: ১/৭৮)
🌟
বাস্তব উদাহরণ:
·
ইসলামিক
পোশাক বা ভাষা ব্যবহার
করে মিথ্যা ব্যবসা
·
ওয়াজ
বা খুতবা দিয়ে লোক দেখানো
ও দান আহরণ
·
ধর্মীয়
পদ বা সংগঠন ব্যবহার
করে ক্ষমতা অর্জন
·
সত্য
গোপন করে ‘হালাল’ নামে
হারাম প্রচার।
✅ উপসংহার:
§
❝দ্বীন
হচ্ছে আল্লাহর আমানত, ব্যবসার পণ্য নয়।❞
§
যে
ব্যক্তি দ্বীন দিয়ে দুনিয়া কামায়, সে মুনাফিকের পথ ধরে।
§
মুমিন
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দ্বীন পালন করে, আর মুনাফিক লোক দেখিয়ে দ্বীন বিক্রি করে।
🕋মুনাফিকের
বৈশিষ্ট্যঃ 41
✎ বিষয়ঃ
নিজের স্বার্থেই দ্বীন মানেঃ
❝যে দ্বীনকে নিজের সুবিধার জন্য মানে,
বিপদে সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়—সে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত।❞
🌿
কুরআনের বানীঃ
📘Translet(অনুবাদ):
“মানুষদের মধ্যে
কেউ কেউ আছে, যারা আল্লাহকে একপ্রকার ‘ধারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে’ উপাসনা করে। যদি তার
কোনো কল্যাণ হয়, তাহলে সে এতে সন্তুষ্ট থাকে; আর যদি কোনো বিপদে পড়ে, তখন সে মুখ
ফিরিয়ে নেয়। সে দুনিয়া ও আখিরাত—উভয়টাই হারায়। এটাই হলো প্রকৃত ও স্পষ্ট ক্ষতি।”
📖 রেফারেন্স: সূরা হজ
২২:১১
📘 তাফসীর থেকে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা:
🔹 ইবনে কাসীর (রহ.) বলেন:
ü
এই
আয়াতে এমন ব্যক্তিদের কথা
বলা হয়েছে যারা দ্বীনের ওপর
প্রতিষ্ঠিত নয়। যখন উপকার
হয় তখন খুশি থাকে;
কিন্তু পরীক্ষা ও বিপদ আসলে
দ্বীন ছেড়ে দেয়। এরা
দ্বীনকে নিজের স্বার্থে মানে, আত্মার শান্তি বা পার্থিব কল্যাণের
জন্যই ইবাদত করে।
📖 রেফারেন্স: [তাফসীর ইবনে কাসীর, সূরা
হজ্জ ১১ আয়াতের ব্যাখ্যা]
🔹 তাফসীর আস-সা‘দী বলেন:
ü
এই
ব্যক্তি দ্বীনের পথে থাকে কেবল তখনই, যখন সবকিছু তার ইচ্ছামতো হয়। কিন্তু যখন
পরীক্ষা আসে, সে নিজের অবস্থান থেকে ফিরে যায় এবং কুফর ও নাফরমানিতে ফিরে যায়।
📝 ব্যাখ্যা: সুবিধা থাকলে দ্বীনের পথে থাকে, বিপদে মুখ ফিরিয়ে
নেয়।
🎯 শিক্ষা: দ্বীনের উপর অটল থাকা মুমিনের গুণ।
· দ্বীন
মানে কেবল সুবিধার সময় নয়, কষ্টের সময়েও স্থির থাকা।
· ঈমান
পরীক্ষা হয় বিপদের সময়।
· দ্বীনকে
নিজের স্বার্থের জন্য ব্যবহার করা একপ্রকার মুনাফিকি বা দ্বিমুখিতা।
Ø এছাড়াও কুরআনে অসংখ্য আয়াত রয়েছে যা মানুষের জন্য দ্বীন পালনের উপকারিতা ও কল্যাণের কথা বলে। এখানে কিছু উদাহরণ দেওয়া হলো:
(সূরা তালাক, ৬৫:২-৩)
📘Translet(অনুবাদ):"যে হেদায়েত গ্রহণ করে, সে তো নিজের কল্যাণার্থেই তা গ্রহণ করে।
আর যে পথভ্রষ্ট হয়, সে তো নিজের ধ্বংসের জন্যই পথভ্রষ্ট
হয়।"
(সূরা বনী ইসরাইল, ১৭: ১৫) –
এটি সরাসরি বলে যে, সৎপথ অবলম্বন করা ব্যক্তির
নিজেরই উপকারে আসে।
📘Translet(অনুবাদ):"যে
সৎকর্ম করে, সে নিজের উপকারের জন্যই করে। আর যে মন্দ
কাজ করে, সে নিজের ক্ষতির
জন্যই করে। অতঃপর তোমাদেরকে তোমাদের পালনকর্তার
কাছে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।"
(সূরা জাসিয়া, ৪৫: ১৫) –
·
এই আয়াতটিও পরিষ্কারভাবে দুনিয়া
ও আখিরাতে সৎকর্মের সুফল এবং মন্দ কর্মের কুফলের কথা বলে।
🕋মুনাফিকের
বৈশিষ্ট্যঃ 42
✎ বিষয়ঃ
❝সৎকাজে অনীহা
ও অলসতা❞
📘Translet(অনুবাদ):
📜 আল্লাহ বলেন: “তারা
যখন সালাতে দাঁড়ায়, তখন অলসভাবে দাঁড়ায়; লোক দেখানোর জন্য। আর তারা খুব অল্পই আল্লাহকে
স্মরণ করে।”
📖 সূরা
আন-নিসা (৪): আয়াত ১৪২
📘Translet(অনুবাদ): তারা
সালাতে আসে না, কিন্তু অলসভাবে।”
📖 সূরা
আত-তাওবা (৯): আয়াত ৫৪
তাফসির ও ব্যাখ্যা:
🔹 ইমাম কুরতুবী (রহ.) বলেন:
❝মুনাফিকেরা সালাতের গুরুত্ব বোঝে না।
তারা শুধু লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করে। তাদের অন্তরে খুশু-খুজু ও
আন্তরিকতা থাকে না।❞
📚 (আল-জামি
লি আহকামিল কুরআন)
🔹 ইবনে কাসীর (রহ.) বলেন:
❝এই
আয়াত মুনাফিকদের অলসতা, অনীহা এবং লোক দেখানো ইবাদতের একটি খোলামেলা চিত্র তুলে
ধরেছে।❞
📚 (তাফসির
ইবনে কাসীর)
📌 ব্যাখ্যা:
·
মুনাফিকরা সৎকাজে আন্তরিক নয়,
·
সালাত, দান, দ্বীনি
কাজ—সবই লোক দেখানো হয়,
·
অন্তরে উৎসাহ ও ঈমানী
শক্তি না থাকায় অলসতা ও গাফেলি দেখা যায়।
➡️ তারা দুনিয়ার কাজে তৎপর, কিন্তু আল্লাহর কাজে ধীর ও বিরক্তিকরভাবে এগোয়।
🌟 শিক্ষণীয় দিক:
·
ইবাদত যদি কেবল রেওয়াজ, অলসতা ও বাহ্যিকতা হয়—তা নিফাকের আলামত।
·
মুমিন ব্যক্তি আল্লাহর কাজকে প্রাধান্য দেয়, অলসতা করে না।
·
আমাদের প্রতিটি ভালকাজে থাকা উচিত—উৎসাহ, খুশি ও আন্তরিকতা।
✅ সংক্ষেপে শিক্ষা:
§ আল্লাহর ইবাদতে অলসতা, গাফেলি ও লোক দেখানো মনোভাব—মুনাফিকদের
বৈশিষ্ট্য। সত্যিকার ঈমানদার সৎকাজে তৎপর ও আন্তরিক।
🌟.
বাস্তব
উদাহরণ:
·
সালাত
ও কুরআন পাঠে অনীহা
·
দ্বীনি
কাজে অনুৎসাহ, কিন্তু দুনিয়ার কাজে উদ্যম
·
ইবাদতকে
কষ্ট মনে করা
·
লোক
না থাকলে দ্বীন চর্চা বন্ধ রাখা।
✅ . উপসংহার:
§ ❝সৎকাজে অলসতা নিফাকের আলামত।❞
§ একজন মুমিনের পরিচয় হলো—সে নেক কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখে।
§ মুনাফিক সৎকাজে কেবল তখনই অংশ নেয়, যখন দুনিয়াবি লাভ জড়িত থাকে।
🕋মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য
সম্পর্কিত কিছু হাদিস।
🌿 হাদীসের প্রমাণ:
ü 📘Translet(অনুবাদ): আবূ উমামা
রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেছেনঃ হায়া (লজ্জাশীলতা) এবং রুদ্ধবাক হওয়া (কম কথা বলা) ঈমানের দু’টি
শাখা। অশ্লীলতা (লজ্জাহীনতা) ও বাক্যবাগিশ হওয়া (বেশি কথা বলা) মুনাফেকীর দু’টি
শাখা।
📚 রেফারেন্স: (ঈমান ইবনু আবী শাইবা ১১৮, মিশকাত, তাহকীক ছানী ৪৭৯৬,
তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ২০২৭]
🌿 হাদীসের প্রমাণ:
ü 📘Translet(অনুবাদ): রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় লজ্জাশীলতা, যৌন-পবিত্রতা, মুখচোরামি ও দ্বীনী জ্ঞান
ঈমানের অন্তর্ভুক্ত। এগুলি পরকালের সম্বল বৃদ্ধি করবে এবং ইহকালের সম্বল হ্রাস
করবে।
পক্ষান্তরে কার্পণ্য, অশ্লীলতা ও নোংরা ভাষা
মুনাফিকীর অন্তর্ভুক্ত। এগুলি পরকালের সম্বল হ্রাস করে এবং ইহকালের সম্বল বৃদ্ধি
করে। আর পরকালের যা হ্রাস পায়, তা ইহকালের যা বৃদ্ধি করে তা অপেক্ষা অধিক।
📚 রেফারেন্স: [হাদীস সম্ভার ৯৯০, ত্বাবারানী ১৫৪০৭, সিলসিলাহ সহীহাহ ৩৩৮১]
🌿 হাদীসের প্রমাণ:
ü 📘Translet(অনুবাদ): আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মু’মিনের উদাহরণ হল
ক্ষেতের শস্যের মতো যাকে বাতাস সর্বদা আন্দোলিত করতে থাকে। মু'মিন সদাসর্বদাই
বিপদগ্রস্ত হতে থাকবে।
মুনাফিক
হল বট গাছের মতো যা বাতাসে না হেললেও (ঝড়ে) সমূলে
উৎপাটিত হয়।
— রেফারেন্স:- [(সহীহঃ
তাখরাজুল ঈমান ইবনু আবী শাইবা (৮৬), সহীহাহ (২৮৮৩), বুখারী ও মুসলিম।]
ü উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মুনাফিক (কপট)দের উপর ফজর ও এশার নামায
অপেক্ষা অধিক ভারী নামায আর নেই। যদি তারা এর ফযীলত ও গুরুত্ব জানত, তাহলে
হামাগুড়ি দিয়ে বা পাছার ভরে অবশ্যই (মসজিদে) উপস্থিত হত।"
—
📚রেফারেন্স:- (সহীহুল বুখারী ৬৫৭, ৬৪৪, ৬৫৭, ২৪২০, ৭২২৪, মুসলিম
৬৫১, তিরমিযী ২১৭, নাসায়ী ৮৪৮, দাউদ, ৭২৬০, ৭৮৫৬, ২৭৩৬৬, ২৭৪৭৫, মুওয়াত্তা মালিক
২৯৯, দারেমী ১২১২, ১২৭৪]
🌿 হাদীসের প্রমাণ:
ü 📘Translet(অনুবাদ): বারা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, মু’মিন ছাড়া আনসারদেরকে কেউ
ভালবাসবে না এবং মুনাফিক ছাড়া কেউ তাঁদের প্রতি ঘৃণা পোষণ করে না।
— 📚রেফারেন্স:- ( [বুখারী ৩৭৮৩,(আধুনিক প্রকাশনীঃ
৩৫০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৫০৯) মুসলিম ১/৩৩, হাঃ নং ৭৫, আহমাদ ১৮৬০০]
🌿 হাদীসের প্রমাণ:
§ 📘Translet(অনুবাদ): আবূ মূসা (রাঃ) সূত্রে নবী
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ঐ মু’মিন যে কুরআন পাঠ
করে এবং সে অনুযায়ী ‘আমল করে, তাঁর দৃষ্টান্ত ঐ লেবুর মত যা খেতে সুস্বাদু এবং
গন্ধে চমৎকার।
§ আর ঐ মু’মিন যে কুরআন পাঠ করে না; কিন্তু এর অনুসারে ‘আমল করে তার
দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ খেজুরের মত যা খেতে সুস্বাদু কিন্তু সুগন্ধ নেই।
§ আর মুনাফিক যে কুরআন পাঠ করে; তার উদাহরণ হচ্ছে, ঐ রায়হানের মত, যার মন
মাতানো খুশবু আছে, অথচ খেতে একেবারে বিস্বাদ।
§ আর ঐ মুনাফিক যে কুরআন পাঠ করে না, তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ মাকাল ফলের মত,
যা খেতে বিস্বাদ এবং গন্ধে দুর্গন্ধময়।
— রেফারেন্স:- (বুখারি[৫০২০]
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৯০ তাওহীদঃ ৫০৫৯)
🌿 হাদীসের প্রমাণ:
ü 📘Translet(অনুবাদ): সে মহান সত্তার শপথ, যিনি বীজ থেকে
অংকুরোদ্গম করেন এবং জীবকুল সৃষ্টি করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, মুমিন ব্যাক্তই আমাকে ভালবাসবে আর মুনাফিক
ব্যাক্তি আমার সঙ্গে শক্রতা পোষণ করবে।
— 📚রেফারেন্স:- ( [ মুসলিম, ১৪৩]
🌿 হাদীসের প্রমাণ:
ü 📘Translet(অনুবাদ): নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোনো মু‘মিনকে
মুনাফিক থেকে রক্ষা করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার শরীর জাহান্নাম থেকে রক্ষার
জন্য একজজন ফিরিশতা প্রেরণ করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমকে অপমান করার উদ্দেশ্যে
তাকে দোষারোপ করবে তাকে মহান আল্লাহ জাহান্নামের সেতুর উপর প্রতিরোধ ব্যবস্থা
করবেন যতক্ষণ না তার কৃত কর্মের ক্ষতিপূরণ হয়।
— 📚রেফারেন্স:- ( [আবু দাউদ, ৪৮৮৩]
🌿 হাদীসের প্রমাণ:
ü 📘Translet(অনুবাদ): ইবনু ’উমার (রাঃ) ততক্ষণ পর্যন্ত আহার
করতেন না যতক্ষণ না তাঁর সঙ্গে খাওয়ার জন্য একজন মিসকীনকে ডেকে আনা হতো। একদা আমি
তাঁর সঙ্গে বসে খাওয়ার জন্য এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসলাম।
ü লোকটি খুব অধিক আহার করল। তিনি বললেনঃ নাফি’! এমন মানুষকে আমার কাছে নিয়ে
আসবে না। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, মু’মিন
এক পেটে খায় আর কাফির সাত পেটে খায়।
— রেফারেন্স:-
( [বুখারী,
৫৩৯৪; মুসলিম ৩৬/৩৪, হাঃ ২০৬০, আহমাদ ১৫২২০] (আধুনিক প্রকাশনী- ৪৯৯২, ইসলামিক
ফাউন্ডেশন- ৪৮৮৮)
🌿 হাদীসের প্রমাণ:
ü 📘Translet(অনুবাদ): ইবনে উমার (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুনাফিকের উদাহরণ
ঐ বকরীর ন্যায়, যা দুই পালের মাঝে উদ্ভ্রান্তের ন্যায়
ঘুরতে থাকে। একবার এ দিকে আবার ঐ দিকে। স্থির করতে পারে না যে সে কোন পালের
অনুসরণ করবে।
— রেফারেন্স:-
( (মুসলিম৬৭৮৬, ৭২২০,
আহমাদ ৫৭৯০, নাসাঈ ৫০৩৭)
🌿 হাদীসের প্রমাণ:
ü 📘Translet(অনুবাদ): আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় মারা গেলো যে,
সে জিহাদ করেনি এবং মনে জিহাদের আকাঙ্ক্ষাও রাখেনি, তবে সে মুনাফিক্বী অবস্থায়
মারা গেলো।
— রেফারেন্স:-
[আবু দাউদ ২৫০২]
🌿 হাদীসের প্রমাণ:
ü 📘Translet(অনুবাদ): আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিবাহ বন্ধন হতে (বিনা কারণে) বিচ্ছিন্নকারিণীগণ (অর্থাৎ-
ধন-সম্পদের বিনিময়ে খুলা’ তালাক প্রার্থনাকারিণীগণ) মুনাফিক রমণী।
— রেফারেন্স:- [মিশকাত ৩২৯০,
নাসায়ী ৩৪৬১, তিরমিযী ১১৮৬, ইরওয়া ৬৩২, সহীহ আল জামি‘ ৬৬৮১। সহীহ : নাসায়ী
৩৪৬১, তিরমিযী ১১৮৬, ইরওয়া ৬৩২, সহীহ আল জামি‘ ৬৬৮১]
🌿 হাদীসের প্রমাণ:
ü 📘Translet(অনুবাদ): আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি
বলেনঃ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু'মুখ বিশিষ্ট ব্যক্তি
(অর্থাৎ মুনাফিক) নিকৃষ্টতম, যে এক পক্ষের লোকের সাথে এক মুখে এবং অপর পক্ষের
লোকের সাথে অন্য মুখে কথা বলে।
— রেফারেন্স:- [আবু দাউদ ৪৭৯৬]
🌿 হাদীসের প্রমাণ:
ü 📘Translet(অনুবাদ): আম্মার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুনিয়াতে যে ব্যক্তি দু'মুখ
বিশিষ্ট (মুনাফিক) হবে, কিয়ামতের দিন তার আগুনের দু'টি মুখ হবে।
— রেফারেন্স:-
(আবু দাউদ ৪৭৯৭)
🌿 সালিহ আল মুনাজজিদ
তার আননিফাক বইতে বলেন, ইসলামী নবী মুহাম্মদ কোন মুনাফিককে নেতা বানাতে নিষেধ
করেছেন,
🌿 হাদীসের প্রমাণ:
ü 📘Translet(অনুবাদ): আবদুল্লাহ ইবন বুরায়দা (রহঃ) তার পিতা
থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ 'তোমরা কোন মুনাফিককে সাইয়্যিদ বা নেতা নামে আখ্যায়িত কর না। কেননা সে
যদি সত্যিই (তোমাদের) নেতা হয়, তাহ'লে তোমরা তোমাদের প্রভুকে ক্ষুব্ধ করবে'।
— রেফারেন্স:-
( [আবু দাউদঃ ৪৯৭৭, ইফাঃ ৪৮৯৩]
🌿 হাদীসের প্রমাণ:
📘Translet(অনুবাদ):
§
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কোন এক সফর হতে প্রত্যাগমন করে মদীনার নিকটবর্তী স্থানে পৌছলে এমনভাবে
প্রবল বায়ু প্রবাহিত হয় যে, মনে হচ্ছিল যেন আরোহীকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে। বর্ণনাকারী বলেন,
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কোন মুনাফিকের মৃত্যুর কারণে
এ বাতাস প্রবাহিত হয়েছে যখন তিনি মদীনায় পৌছলেন, তখন দেখা গেল, এক বড় মুনাফিকের মৃত্যু
হয়েছে।
📚রেফারেন্স:-
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৬৭৮৪
🌿 হাদীসের প্রমাণ:
📘Translet(অনুবাদ):
§ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বনী
নাজ্জারের এক ব্যক্তি আমাদের মাঝে ছিল। সে সূরা বাকারা এবং সূরা আলে-ইমরান পড়েছিল।
সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর লেখার দায়িত্ব পালন করতো। পরে পালিয়ে
সে কিতাবীদের সাথে মিলে যায়। রাবী বলেন, তারা তাকে খুব সম্মান করল এবং বললো, এ লোকটি
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাতিব ছিল। এতে তারা খুবই আনন্দিত হলো।
§ তারপর বিলম্ভ হয়নি, আল্লাহ তাআলা তাদের মধ্যেই তাকে
ধ্বংস করে দিলেন। এরপর তারা তার জন্য গর্ত করে তাকে তাকে পুঁতে দিল। সকালে দেখা গেল
যে, যমীন তার লাশ মাটির উপরে নিক্ষেপ করেছে। এরপর আবার তারা গর্ত করে তাকে পুঁতে দিল।
সকালে এবার দেখা গেল যে, যমীন তার লাশ মাটির উপর নিক্ষেপ করেছে। তারপর আবার তারা তার
জন্য গর্ত করে তাকে তাতে গেড়ে রাখলো। সকালে দেখা গেল, এবারও যমীন তার লাশ মাটির উপর
ছুঁড়ে দিয়েছে। কাজেই তারা তাকে নিক্ষিপ্ত অবস্থায় ছেড়ে দিল।
📚রেফারেন্স:-
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৬৭৮৩,
🌿 হাদীসের প্রমাণ:
§ 📘Translet(অনুবাদ):কায়স ইবনু উবাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা
আম্মার (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনাদের এ লড়াই সম্পর্কে বলুন তো, তা কি আপনাদের
(নিজস্ব) মতের ভিত্তিতে? তবে মত তো ভুলও হতে পারে, ঠিকও হতে পারে। অথবা রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে বিশেষভাবে আপনাদের নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন?
তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বসাধারণকে যে নির্দেশ
দেননি, এমন কিছু তিনি বিশেষভাবে আমাদেরও দেননী। তিনি বলেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে
......।
§
বর্ণনাকারী শু’বা (রহঃ) বলেন,
আমার মনে হয়, তিনি বলেছেন, আমার উম্মাতের মধ্যে বারোজন মুনাফিক হবে। তারা জান্নাতে
প্রবেশ করতে পারবে না এবং জান্নাতের ঘ্রানও পাবে না, যতক্ষন না সূঁচের ছিদ্রপথে উট
প্রবেশ করবে। তাদের মধ্যে আট জনের (ধ্বংসের) জন্য “দুবায়লা” যথেষ্ট হবে। “দুবায়লা”
হল আগুনের পলিতা, যা কাঁধের মধ্যে প্রকাশ পেয়ে বুকে ভেদ করে বেরোবে।
📚রেফারেন্স:-
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৬৭৭৯, ৬৭৭৮
🌿 হাদীসের প্রমাণ:
📘Translet(অনুবাদ):
§
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় কতিপয় মুনাফিক ব্যক্তির অভ্যাস এই ছিল যে, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন যু্দ্ধের জন্যে বের তখন তারা পশ্চাতে থাকতো এবং রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিরুদ্ধাচরণ করে বসে থাকাতেই তারা আনন্দ লাভ করতো।
§
তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যাগমন করলে
তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গিয়ে ওজুহাত পেশ করতো, শপথ
করতো এবং আশা করতো যেন তারা যা করেনি এমন কার্যের প্রশংসা করা হয়।
§
তখন নাযিল হলঃ "যারা নিজেরা যা করেছে তাতে আনন্দ প্রকাশ করে
এবং যা নিজেরা করেনি এমন কাজের জন্য প্রশংসিত হতে ভালবাসে, তারা শাস্তি থেকে মুক্তি
পাবে আপনি কখনো এরূপ মনে করবেন না। তাদের জন্য রয়েছে মর্মান্তিক শাস্তি।"
📚রেফারেন্স:-
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ৬৭৬৭-৭৪- ৭৬ পর্যন্ত
দেখুন।
📘 শায়খ সালিহ আল-মুনাজ্জিদের বই থেকে কিচছু অংশ নেওয়া এবং অন্যান্য বই থেকে নেওয়া। এই
বৈশিষ্ট্য মুনাফিকদের চারিত্রিক দিকের একটি ব্যাপক চিত্র তুলে ধরে। যাতে মুসলিমরা মুনাফিকের চরিত্র থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে এবং সমাজে এই ধরনের ব্যক্তিদের চিনতে পারে।
🕋 প্রশ্ন ইমামতির জন্য সর্বাধিক যোগ্য
কে বা তার কি কি বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার।.pdf
🕋 ঈদুল আযহার দিনের করণীয় কাজসমূহ.pdf
🕋ফরয সালাত ও সুন্নাত সালাত নির্দিষ্ট
জায়গায় আদায় করা কি ঠিক।2025.pdf
🕋মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য চারিত্রিক 42 টি
বৈশিষ্ট্য ✅ Rasikul
India 2025.pdf
►PDF created by Rasikul Islam.
নিন্মে আমার ওয়েবসাইটের বিবরণঃ
►এই পিডিএফ টি ডিজাইন করেছেন। রাসিকুল ইসলাম।
►Fb: rasikulindia
0 Comments