🌿 প্রশ্ন: ইমামতির জন্য সর্বাধিক যোগ্য কে? তার মধ্যে কী কী বৈশিষ্ট্য থাকা উচিত? rasikulindia

 

🌿 প্রশ্ন: ইমামতির জন্য সর্বাধিক যোগ্য কে? তার মধ্যে কী কী বৈশিষ্ট্য থাকা উচিত?"

ইমামতি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব যা শুধু মুসল্লিদের সামনে নামায পড়ানোর বিষয় নয়, বরং এটি একটি নেতৃত্বের পদ। তাই যাকে-তাকে ইমাম বানানো শরিয়তের দৃষ্টিতে জায়েয নয়।

বর্তমানে বহু মানুষ ইমামতি বা নামাযে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতাকে হালকাভাবে নেয়, অথচ ইসলামের দৃষ্টিতে ইমামতি একটি আমানতপূর্ণ দায়িত্ব, যা শুধু নেতৃত্ব নয় বরং উম্মাহর দীনী আদর্শ বহনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

আসুন, কুরআন, হাদীস এবং সালাফদের বাণী দ্বারা দলিল সহ জানি, কারা ইমামতির জন্য সর্বাধিক যোগ্য —

👉 অনেকেই এ বিষয়ের গুরুত্ব দেন না, অথচ শরীয়তের দৃষ্টিতে এর পুঙ্খানুপুঙ্খ নির্দেশনা রয়েছে।

এই সম্পূর্ণ লেখা ভালো ভাবে বুঝে , তার উপর আমোল করার চেস্টা করুন। এই লেখাটি অনেক মেহনত করে তৈরি করা হয়েছে। জিবনের প্রতীটি ক্ষেত্রেই দলিল লাগে, প্রমাণ লাগে, কথা বলতে গেলেও দলিল সব কিছুর ক্ষেত্রেই দলিল। আমরা অনেকে হয়ত জানিনা এই সকল বিষয়ে। এই জন্য সালাফদের বানি, জিবনী বই গুলি পড়া দরকার। তাহলে এই সব সমস্যা থাকে না। তবে যেই বিষয়ে আপনার জ্ঞান নেই , তাহলে চুপ থাকায় ভালো। বা আমার জানা নেই। ঈল্ম চর্চা করুন, ঈল্ম ছাড়া বাঁচার রাস্তা নেই। ঈল্ম হচ্ছে পেটের ক্ষুদার মত। ঈল্ম আপনাকে শিখতে হবে, জানতে হবে জিবনের যেই গুলি প্রয়োজন আনুসাঙ্গিক আহকাম, মাসলামাসায়েল।  ভাল ভাবে লক্ষ্য করতে হবে যেমন-  শব্দ, লাইন, বাক্য গুলি পড়া।   

        রাসিকুল ইসলাম,২৫-০৬-২০২৫

📌 আসুন মুল বিষয় জানি__

👉 ইমামতির জন্য সর্বাধিক যোগ্য যারা, এক নজরে দেখুন–

১) আল্লাহর কিতাব (কুরআন) সবচেয়ে ভালোভাবে জানেন,

২) সুন্নাহ ও ফিকহ সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রাখেন, ‘হুকুম আহকামের জ্ঞান রাখেন, (নামাযের মাসআলা, সুন্নাহ এবং ফিকহ সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকা আবশ্যক’)।

৩) তাকওয়াধারী, ধার্মিক ও আমানতদার বা তাকওয়া ও দীনের ক্ষেত্রে অগ্রগামী ব্যক্তি,

৪) চারিত্রিকভাবে উত্তম ও মানুষের মাঝে গ্রহণযোগ্য।

৫) সুন্দর তিলাওয়াতকারী ও শুদ্ধ পড়তে পারেন,

৬) ইমামের নামাযের নিয়ম-কানুন পালনের শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতা থাকতে হবে।

৭) যদি উপরের বিষয়গুলোতে সমান হয়, তবে বয়সে বড় বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।।

৮) সুন্নাহ মান্যকারী, বিদ’আত থেকে দূরে। ৯)  কুরআনের সঠিক উচ্চারণ জানে

১০) ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত, ত্বাকওয়াসিল, ফাসিক নয়,

 

রেফারেন্স:

📖 [,(সূরা হুজুরাত, আয়াত: ১৩) , সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৭৩। মুসনাদ আহমদ, হাদিস নং: ২৩৪৮৫)। সুনান তিরমিজী, হাদিস নং: ২৩৫১)। মুয়াত্তা মালিক, হাদিস নং: ৩৬১)  , আল-মুগনী, ২/১৯৫। আল-উম্ম, ১/১৮৮।সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৮০।, আল-উম্ম ১/১৭৫, আল-মাজমু‘ ৪/১৯২, ইস্তিজকার ২/২৮৯ , (ফাতহুল বারী, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ১২৫) ]

📖 কুরআনের দৃষ্টিতে ইমামতির যোগ্যতা:

🌟 নামাজের ইমামতির জন্য সর্বাধিক যোগ্য ব্যক্তি কে?

 💠 1. নেতৃত্বের ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও আমানতের ভিত্তিতে নির্বাচন:

“সে বলল, আপনি যদি কাউকে নিয়োগ করতে চান, তাহলে উত্তম সেই, যে শক্তিশালী এবং আমানতদার।”

📖রেফারেন্সঃ সূরা কাসাস (২৮): আয়াত ২৬

🔎 ব্যাখ্যা: ইমাম ইবনু কাসীর বলেন – এটা মূলনীতি, যে কোন দায়িত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে যোগ্যতা, আমানতদারি ও তাকওয়া-বিশ্বস্ততা দেখা জরুরি।

 

এবং যখন ইবরাহীমকে তার রব পরীক্ষা করেছিলেন কতিপয় কথার মাধ্যমে, তখন তিনি তা পূর্ণ করেছিলেন। আল্লাহ বললেন, ‘আমি তোমাকে মানুষের জন্য ইমাম (নেতা) বানাচ্ছি।’"

এখানে ইমামতি বা নেতৃত্বের জন্য ইব্রাহীম (আ.)-এর জ্ঞান, আনুগত্য এবং তাকওয়ার পরীক্ষা নেওয়া হয়।। এটি থেকে বোঝা যায় যে, ইমামতির জন্য উচ্চ পর্যায়ের ধর্মীয় গুণাবলী প্রয়োজন।

📖রেফারেন্সঃ সূরা আল-বকরা (2:124):

📜 সহীহ হাদীস দ্বারা ইমাম নির্বাচনের নিয়ম:

রাসূলুল্লাহ (সা.) ইমামতির যোগ্যতার ক্ষেত্রে কিছু সুনির্দ্দিষ্ট মানদণ্ড প্রদান করেছেন।। নিম্নে কিছু হাদীস উল্লেখ করা হলো:

❖2. ইমাম হবে, যে সবচেয়ে ভালো কুরআন তেলাওয়াতকারী , জ্ঞান ও শুদ্ধ কিরাআত:

 “লোকদের ইমামতি করবে তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব (কুরআন) সবচেয়ে ভালোভাবে পড়ে (অর্থাৎ জানে) বেশি জানে...।”

📖রেফারেন্সঃ সহীহ মুসলিম: ৬৭৩;  সহীহ বুখারী: ৭৩১, সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৮০।

✅ এখানে " আকরাহুম" মানে কেবল মুখস্থ নয়, বরং তাফসীর (ব্যাখ্যা) ও যথাযথ তিলাওয়াত জানাও।

🔹 আরবিতে ‘আকরাউহুম’  মানে শুধু মুখস্থ নয়, বরং তাজবীদ, তাফসীর ও গভীর জ্ঞান বোঝায়।

📌3. যদি কুরআনে সমান হয় ? 🔹যিনি সুন্নাহ বেশি জানেন____

"...যদি কুরআনে সমান হয়, তাহলে যিনি সুন্নাহ বেশি জানেন; যদি তাতেও সমান হয়, তবে যিনি হিজরতে অগ্রগামী; তাতেও যদি সমান হয়, তবে যিনি বয়সে বড়।”

🔹সবচেয়ে আগে হিজরত করেছেন বা বয়সে বড়, এই ক্রম অনুযায়ী, হাদীসে বলা হয়েছে হিজরতের পুরাতন ব্যক্তি, বয়সে বড় এবং চরিত্রে উত্তম ব্যক্তির অগ্রাধিকার।

📖রেফারেন্সঃ সহীহ মুসলিম: হাদীস ৬৭৩

🔹হাদিসঃ ১ আবু মাসউদ আল-আনসারী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

"নামাযে ইমামতি করবে সে, যে কুরআনের পড়ায় সবচেয়ে উত্তম (অর্থাৎ যার কিরাআত ও তাজবীদ সবচেয়ে শুদ্ধ এবং যে বেশি কুরআন মুখস্থ জানে)।। যদি কিরাআতে সবাই সমান হয়, তবে যে সুন্নাহ সম্পর্কে বেশি জানে।। যদি সুন্নাহর জ্ঞানে সমান হয়, তবে যে হিজরতে অগ্রগামী।। যদি হিজরতেও সমান হয়, তবে যে বয়সে বড়।।"

 

🔹হাদীস ২: আমর ইবনু সালিমা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:

"আমি আমাদের সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বেশি কুরআন পাঠক ছিলাম, তাই তারা আমাকে ইমামতির জন্য অগ্রাধিকার দিয়েছিল।।"

📖রেফারেন্সঃ সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৩০১। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৭৩; সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৮০।

ব্যাখ্যা: এই হাদীস থেকে বোঝা যায় যে, সাহাবীরা কুরআনের জ্ঞানের ভিত্তিতে ইমাম নির্বাচন করতেন।।

🔹হাদীস ৩: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

"কোনো ব্যক্তি এমন কাউকে ইমামতি করতে দেবে না, যার উপর তার কর্তৃত্ব রয়েছে।।"

📖রেফারেন্সঃ সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৮৯।।

ব্যাখ্যা: এটি ইঙ্গিত করে যে, বাড়ির মালিক বা নির্দিষ্ট স্থানের কর্তৃপক্ষের ইমামতির অধিকার রয়েছে, তবে তিনি যদি যোগ্য না হন, তবে উপরোক্ত হাদীসের ক্রম অনুসারে অন্য কাউকে ইমামতি করতে দেওয়া উচিত।।

📌4)ইমামতি তুচ্ছ কাজ নয়/ঘৃণিত বা অযোগ্য ব্যক্তির ইমামতি গ্রহণযোগ্য নয়:

“তিন ব্যক্তির নামায তাদের মাথার উপরে এক বিঘতও ওঠে না: ... তাদের একজন, যে লোকদের ইমামতি করে অথচ তারা তাকে ঘৃণা করে।‘’

📖রেফারেন্সঃ সুনান ইবনে মাজাহ: ৯৭১; সহীহুল জামে‘ (হাদীস ৩০৬৫), 🔎 শায়খ আলবানি হাসান বলেছেন

4.👤 সালাফদের বাণী থেকে:

সালাফুস সালিহীন (প্রথম তিন প্রজন্মের আলিমগণ) ইমামতির যোগ্যতা নির্ধারণে কুরআন ও সুন্নাহর উপর ভিত্তি করে সুনির্দিষ্ট মতামত প্রকাশ করেছেন।।

🌿1. ইমাম শাফি'ঈ (রহ.) বলেন

ইমামতির জন্য অগ্রাধিকার দেওয়া হবে তাকে, যে কুরআনের জ্ঞানে অগ্রগণ্য, তারপর সুন্নাহর জ্ঞানে, তারপর তাকওয়া ও চরিত্রে।।" এবং আমানতদার না হলে তাকে ইমাম বানানো ঠিক নয়।” তার পেছনে ইমামতি করা ঠিক নয়।”

📖রেফারেন্সঃ আল-উম্ম, ইমাম শাফিঈ, ১/১৮৮।।আদাবুশ শাফি'ঈ, ইমাম বাইহাকি (১/২৩৬),

---

🌿2. ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল (রহ.) বলেন:

“লোকদের ইমামতি সে করবে, যিনি কুরআনের সবচেয়ে ভালো ক্বারী, সুন্নাহ ভালো বোঝেন/ জানেন”, তাকওয়ায় অগ্রগামী।”

 📖রেফারেন্সঃ আল-মাসায়িল, আবু দাউদ: ১/৮৭

আহমদ (রহ.) বলেন: "যে ব্যক্তি কুরআনের সবচেয়ে বেশি জানে, সে ইমামতির জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত।। যদি কুরআনের জ্ঞানে সমান হয়, তবে যে ফিকহ ও সুন্নাহ সম্পর্কে বেশি জানে।।"

ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ.) বলেছেন, “ফাসিক ব্যক্তির পেছনে নামাজ পড়া মাকরূহ, যদি না তার পরিবর্তে অন্য কেউ না থাকে।”

📖রেফারেন্সঃ আল-মুগনী, ইবনু কুদামা, ২/১৯৫, ৪২১।।

---

🌿3. ইবনু আব্বাস (রাঃ)

“ইমাম হবে এমন ব্যক্তি, যিনি ফিকহ বোঝেন; শুধুমাত্র মুখস্থ হওয়াই যথেষ্ট নয়।”

📖রেফারেন্সঃ আল-মুসান্নাফ, ইবনে আবি শায়বা: ২/৮৮

🌿4.ইবনে সিরীন (রহ.) বলেন:

“সাহাবারা শুধু তাকেই ইমাম বানাতেন যাকে সঠিক পথে দেখতে পেতেন।”

📚 মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ৫৩২৯

🔹5. ইমাম মালেক (রহ.) বলেন:

“যে ব্যক্তি কুরআন ঠিকভাবে পড়তে পারে না, অথচ এমন কেউ আছে যিনি পারেন— তাহলে ওই অযোগ্য ব্যক্তিকে ইমাম বানানো নাজায়েয।”

আরও বলেন,  “ইমামতির জন্য সেই ব্যক্তি যোগ্য যে দ্বীনের জ্ঞানে সমৃদ্ধ এবং সুন্নাহর অনুসরণে অবিচল।”

📚 আল-মুদাওয়ানা: (খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৮৪, ৮৭)

 

📌5. ইমামতির গুরুত্ব ও সতর্কতা:

ইমামতি একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।।

📘 রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: "তোমরা নামাযে ইমামের অনুসরণ করো।। যদি সে ঠিক করে, তবে তোমাদের জন্য রয়েছে পুরস্কার।। আর যদি সে ভুল করে, তবে তার উপর দোষ যাবে।।"

📖রেফারেন্সঃ সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৯১।।

অতএব, যোগ্য ব্যক্তিকে ইমামতির জন্য নির্বাচন করা উচিত, কারণ ইমামের ভুলের প্রভাব পুরো জামাআতের উপর পড়তে পারে।।

📌 নামাজের বিধানে দক্ষতাঃ

হাদিস: ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: 

“তোমরা নামাজ শিখে নাও, কারণ নামাজ দ্বীনের স্তম্ভ। যে ব্যক্তি নামাজ ঠিকমতো আদায় করতে জানে, সে ইমামতির জন্য উপযুক্ত।”

(মুসনাদ আহমদ, হাদিস নং: ৪৩৮২; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং: ২০৮৪) 

ব্যাখ্যা: এই হাদিসে নামাজের বিধানে দক্ষতার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। ইমামের নামাজের ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাহ ও মুস্তাহাব সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকতে হবে।

---

🚫 নামাজের ইমামতির জন্য অযোগ্য ব্যক্তি কারা?

❌ 1. ফাসিক বা প্রকাশ্য পাপকারী

🔸 যেমন: গীবতকারী, গান-বাজনায় লিপ্ত, শরাবখোর, বা নামাজে অনিয়মকারী।

📘. ইবনে আবদুলবার (রহ.) বলেন:

“ফাসিক ব্যক্তির ইমামতি বৈধ নয়, যদি না সে প্রতিষ্ঠিত (মসজিদের নির্ধারিত) ইমাম হয়।”

📚 আল-ইস্তিজকার: ২/২৮৯

❌ 2. বিদ’আতি ব্যক্তি (নব উদ্ভাবিত ধর্মীয় কাজ করে)

যে ব্যক্তি শরীয়তের বিরুদ্ধে নতুন কিছু উদ্ভাবন করে বা বিদ’আত প্রচার করে, তার পেছনে নামাজ মাকরুহ বা বাতিলের আশঙ্কা থাকে।

যেমন,

·       যে ব্যক্তি কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী নতুন আমল প্রচার করে — যেমন:

·       গায়েবী নিয়তের সালাত ,

·       ফাতিহা দিবস উদযাপন,

·       রাসূল (ﷺ)–কে অস্পষ্টভাবে সর্বজ্ঞ মনে করা,

·       কবরে সিজদা করা ইত্যাদি।

📘3. ইমাম শাফি’ঈ (রহ.) বলেন:

“যে ব্যক্তি সুন্নাহর বিরোধী হয়ে বিদ’আত প্রচার করে, তার পেছনে নামাজে অংশ না নেওয়াই উত্তম।”

ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেছেন, “বিদআতির পেছনে নামাজ পড়া জায়েজ নয়, যদি তার বিদআত শিরক পর্যন্ত পৌঁছে।”

📚 আল-উম্ম: ১/১৭৫, ১২৩

📘4.ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কুরআন ও সুন্নাহর বিরোধিতা করে, তার ইমামতি গ্রহণযোগ্য নয়।”

ইবনে তাইমিয়া (রহ.): বিদআত ও শিরক থেকে মুক্ত ব্যক্তিকে ইমামতির জন্য উপযুক্ত বলেছেন।

(মাজমু ফাতাওয়া, খণ্ড: ২৩, পৃষ্ঠা: ৩৪৬)

📘 ইবনু তাইমিয়া (রহ.) বলেন:

“বিদআতির ইমামতির কারণে সাধারণ মুসল্লিদের ঈমান হুমকিতে পড়ে।”

📚 মাজমূ’ফাতাওয়া: ২৩/৩৫৪

📘5.ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহ.) বলেন:

“যদি কেউ বিদআত প্রকাশ করে, তাহলে তার পেছনে নামায পড়া ঠিক নয়।”

📚 আল-মাসাইল: পৃষ্ঠা ৬১

📘6. ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহ.) আর বলেছেন,

“ফাসিক ব্যক্তির পেছনে নামাজ পড়া মাকরূহ, যদি না তার পরিবর্তে অন্য কেউ না থাকে।”

(আল-মুগনী, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৪২১) 

📘 7.নাবালক: নাবালক ছেলের পেছনে প্রাপ্তবয়স্কদের নামাজ সাধারণত জায়েজ নয়, যদি না প্রাপ্তবয়স্ক কেউ না থাকে।

         🔸যদিও কিছু ইমাম এটাকে বৈধ বলেছেন (যদি শিশুটি সঠিকভাবে কুরআন পড়ে), তবে অধিকাংশ ইমাম বলেছেন: বালেগ না হলে পূর্ণ ইমামতির দায়িত্ব তার জন্য উচিত নয়।

📚 আল-ইমাম আন্নাওবী: আল-মাজমূ‘ ৪/১৩৮; (আল-মুগনী, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৪২৩) 

📘8. মহিলা (পুরুষদের জন্য): মহিলা পুরুষদের ইমামতি করতে পারেন না।

(সহিহ বুখারী, হাদিস নং: ৮৫১, ৪৪২৫ 📚 আল-মুগনী: ২/২০৭)

📘 9.অপবিত্র ব্যক্তি: যিনি পবিত্রতা ছাড়া নামাজ পড়েন, তার ইমামতি বৈধ নয়।

(সূরা মায়িদা, আয়াত: ৬; ফাতহুল বারী, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২৮০)

🛑 10. পাগল/অসুস্থ বিবেকসম্পন্ন ব্যক্তিঃ

 ❌ পাগল ব্যক্তি, বা যার বিবেক ঠিক নেই, বা মাতাল অবস্থায় আছে — তার ইমামতি বৈধ নয়।“তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামাযের কাছে যেও না…”

📚 সূরা নিসা: ৪:৪৩

🛑11. অজ্ঞ ব্যক্তি (যে কুরআন-সুন্নাহ জানে না)ঃ

“যিনি বেশি কুরআন জানেন তিনিই ইমাম হবেন।”

📚 সহীহ মুসলিম: ৬৭৩

➡️ অজ্ঞ ব্যক্তি, বিশেষ করে কুরআন ভুল পড়লে বা ফিকহ না জানলে — ইমাম হওয়া তার জন্য নিষেধ।

🚫 12. জনপ্রিয়তা বা অর্থ-বিত্ত নয়ঃ

কোনো ব্যক্তি যদি কেবল সামাজিক মর্যাদা বা ধনী হওয়ার কারণে ইমাম হয়—

🔻 এটি সুন্নাহবিরোধী। ইমামতির জন্য শরীয়ত নির্ধারিত যোগ্যতাই একমাত্র মানদণ্ড।

 

📘 ইমাম ইবনু তায়মিয়া (রহ.) বলেন:

“ইমামতির ক্ষেত্রে বিচার হবে কুরআন ও সুন্নাহ জানায়, দুনিয়াবি মর্যাদায় নয়।”

📚 মাজমূ‘ ফাতাওয়া: ২৩/৩৫২

❌ 13. কুরআন ভুল পড়া বা তাজউইদের নিয়ম জানে না:

যে ব্যক্তি কুরআন বিশুদ্ধভাবে পড়তে পারে না, সে ইমামতি করতে পারবে না, বিশেষ করে যদি কোনো আয়াত বিকৃত হয়ে যায়।

📘 ইমাম নববী (রহ.) বলেন:

“যদি কেউ এত ভুল করে যে অর্থ পাল্টে যায়, তবে তার ইমামতি জায়েয নয়।”

📚 আল-মাজমু‘: ৪/১৯২

❌14. অজ্ঞ ব্যক্তি, কুরআন বা সুন্নাহর জ্ঞান নেই,

❌ 15.ঘৃণিত ব্যক্তি মুসল্লিরা তাকে অপছন্দ করে,

ইবনু আবদিল বার (রহঃ)  বলেন:"মুসল্লিরা যার ইমামত পছন্দ করে না, অথচ বৈধ বিকল্প আছে — তার পেছনে সালাত পড়া মাকরূহ।"

📚 আল-ইস্তিযকার (১/৫২২)

---

📌 উপসংহার/শিক্ষণীয় দিক:

·       ইমামতি কেবল নামায পড়ানো নয় – এটি একপ্রকার উম্মাহর নেতৃত্ব। তাই ওই সকল গুণাবলী দ্বারা ইমাম নির্বাচন করুন।

·       ইমামতি করা সম্মানজনক দায়িত্ব; তাই সর্বোচ্চ যোগ্য ব্যক্তিকেই বেছে নেওয়া উচিত।

·       সাধারণ মানুষ নয়, বরং যারা কুরআন-সুন্নাহ জানে, সুস্পষ্টভাবে সঠিক উচ্চারণ জানে, তাকওয়া রাখে — তাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।

·       মুসল্লিরা যদি দেখে, একজন অযোগ্য ব্যক্তি ইমামতি করছেন, তবে তারা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের জানানোর মাধ্যমে তা সংশোধনের ব্যবস্থা করতে পারেন।

·       যদি অর্থ পরিবর্তন হয়, ইমামতি বৈধ নয়, নামায শুদ্ধ হবে না

·       যদি অর্থ পরিবর্তন না হয়, কেবল মাখরাজ ভুল হয়; নামায শুদ্ধ, তবে যোগ্য ইমাম থাকলে তাকে ইমাম বানানো ঠিক নয়।

·       তার বিকল্প কেউ না থাকলে, প্রয়োজনে সে ইমাম হতে পারে।

📌 অতএব:

🔹 যাকে তাকে ইমাম করা, বা অজ্ঞ/ফাসিক/বিদআতী ব্যক্তিকে ইমাম বানানো — শরীয়তের দৃষ্টিতে মারাত্মক গাফিলতি।

📍 নামাযের ইমাম এমন হতে হবে, যিনি কুরআন সঠিকভাবে পড়তে পারেন — অর্থাৎ মাখরাজ, সঠিক উচ্চারণ এবং অন্ততপক্ষে প্রয়োজনীয় তাজউইদ রক্ষা করতে পারেন।

যদি এমন কেউ পাওয়া না যায়, তাহলে যিনি সবচেয়ে কম ভুল করেন, তাকেই ইমাম করা যাবে। তবে তাকে শিখতে উৎসাহিত করা ফরয কিফায়া।

 🔹 একজন ইমাম হওয়া উচিত –

·        কুরআন, সুন্নাহ, তাকওয়া, আমানত ও আদব-আখলাকে উত্তম ব্যক্তি, এবং মুসল্লিদের মাঝে গ্রহণযোগ্য সেই সর্বাধিক যোগ্য ইমাম।

·

---

❓ প্রশ্ন: যদি কেউ কুরআন পড়তে জানে, কিন্তু তার মাখরাজ (অক্ষরের উচ্চারণস্থান) শুদ্ধ না হয় — তাহলে সে কি ইমামতি করতে পারবে?

📘 সংক্ষিপ্ত উত্তর:

🔹 যদি তার ভুল উচ্চারণে কুরআনের অর্থ বিকৃত হয়, তাহলে সে ইমামতি করতে পারবে না।

🔹 আর যদি মাখরাজ বা উচ্চারণে কিছু ভুল থাকলেও অর্থ বিকৃত না হয়, তাহলে তার পেছনে নামায আদায় শুদ্ধ হবে— কিন্তু তাকে ইমাম বানানো অবশ্যই পরিত্যাজ্য যদি অন্য কেউ থাকে যিনি সঠিকভাবে পড়তে পারেন।

🔸 ১. কুরআনের অর্থ পরিবর্তন হয় এমন ভুল হলে:

যেমন কেউ "ض" (দ্বাদ) এবং "ظ" (জ্বা) এর মধ্যে পার্থক্য না করতে পারে, বা "ق" ও "ك" এর ভুল করে বসে, এবং এরফলে অর্থের বড় পরিবর্তন হয়—

তাহলে তার ইমামতি বৈধ নয়।

📘 ইমাম নববী (রহ.) বলেন:

“যদি কেউ এমন ভুল করে যাতে অর্থ পরিবর্তন হয়ে যায়, তাহলে তার নামাযও সহীহ হবে না, মুসল্লিদের নামাযও না।”

📚 আল-মাজমূ‘: ৪/১৯২

---

🔸 ২. অর্থ পরিবর্তন না হলে, কিন্তু তাজউইদ বা মাখরাজে ভুল হয়:

এমন ব্যক্তি নিজে পড়তে পারলেও তাজউইদ ও মাখরাজের ভুল করে থাকলে —

তার পেছনে নামায শুদ্ধ হবে, তবে……..

✅ যদি তার বিকল্প না থাকে (যেমন গ্রামে একজনই আছে), তাহলে সে ইমাম হতে পারে।

🚫 কিন্তু যদি তার চেয়ে ভালো কেউ থাকে, যিনি তাজউইদসহ সঠিকভাবে কুরআন পড়েন — তাহলে তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া ওয়াজিবের কাছাকাছি।

📘 ইবনু কুদামা (রহ.) বলেন:

“যে ব্যক্তি কুরআন বিশুদ্ধভাবে পড়ে না, তার চেয়ে বিশুদ্ধ পাঠকারীকে ইমাম বানানো উত্তম ও উচিত।”

📚 আল-মুগনী: ২/১৪০

🕌 যদি কোন ব্যাক্তি সুরাহ আল ফাতিহায় ভূল করে তাহলে তার পিছনে সালাত আদায় করা যাবে কিনা?

🌿 ভুল কত প্রকার? (ফিকহি দৃষ্টিতে)

ভুলের ধরন	ব্যাখ্যা	প্রভাব
১. তাজউইদের সাধারণ ভুল	হরফ টানার জায়গা ভুলে যাওয়া, যেমন টান না দেওয়া	মাফযোগ্য, তবে ইচ্ছাকৃত হলে গুনাহ
২. মাখরাজ বা হরফ পরিবর্তন	যেমন শব্দের উচ্চারণে হরফ পাল্টে যাওয়া	অর্থ বদলে গেলে নামায বাতিল হতে পারে
৩. আয়াত বাদ দেওয়া বা বিকৃত করা	“ (ইয়্যাকা নাআবুদু) এর পরিবর্তে “ (ইয়্যাকা নাআবিদু) পড়া।	অর্থ পরিবর্তন হলে ইমামের নামাযসহ মুসল্লিদেরও বাতিল

📚 ইমাম নববী (রহ.) বলেন, “যদি কিরাআতের ভুল কুরআনের শব্দ বা অর্থ বিকৃত করে, তবে সালাত বৈধ হবে না।” 

রেফারেন্স: 📚 আল-মাজমূ‘: ৩/৩৮৬, শরহু মুসলিম, ৪/১৫১।

 📚 ইবনু কুদামা (রহ.) বলেন:

“যদি ইমাম সূরা আল-ফাতিহায় বড় ভুল করেন এবং অর্থ পরিবর্তিত হয়, তাহলে তার ইমামতি বাতিল হবে।”

📚 আল-মুগনী: ২/১৫৬ 

 

 

✅ সিদ্ধান্ত (ফতওয়া ও ফিকহের আলোকে):

অবস্থা	হুকুম
ছোটখাটো তাজউইদের ভুল (যেমন মাদ টানা না হওয়া)	মাফযোগ্য, নামায সহীহ (যদি ইচ্ছাকৃত না হয়)
মাখরাজ বা হরফ পরিবর্তন (অর্থ পরিবর্তন হয়)	নামায বাতিল, মুসল্লিদেরও
আয়াত ফেলে দেওয়া বা বিকৃতি	নামায বাতিল, এমন ইমামের পেছনে নামায পুনরায় পড়া জরুরি

📌 আপনার করণীয় যদি এমন হয়:

1.    যদি আপনি জানেন যে ইমাম প্রতিনিয়ত ফাতিহায় অর্থবিকৃত ভুল করেন ➤ তার পেছনে নামায না পড়ুন

2.    যদি অনিচ্ছাকৃত ভুল হয় এবং শুধরে ফেলে ➤ তাহলে নামায বৈধ

3.    নিশ্চিত হন ইমাম এই ভুল করেন ➤ মসজিদের কমিটিকে জানানো ওয়াজিব।

---

🤲 উপসংহার:

·        ইমামের সূরা আল-ফাতিহার তাজউইদ ভুল হলে গুনাহগার হতে পারেন, তবে মাফযোগ্য ভুল হলে নামায হয়।

·        অর্থ বিকৃত হয় এমন ভুল হলে নামায বাতিল, কারণ আল-ফাতিহা সালাতের রুকন।

---

·        ❝কোনদিন যদি মনে হয় শেষ সময়ে এসে, আমার আমোল ভূল ছিলো,

·        তাহলে সংশোধন করে নিবো ইনশাআল্লাহ,

·        যদি দলিল সহোকারে পাওয়া যায়। আলহামদুলিল্লাহ্‌।❞

হাদীস: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাললাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুয়াযযিন (তাঁর জন্য) প্রতীক্ষা করতে থাকতেন ও ইক্বামাত দিতেন না। যখন তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাললাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বেরিয়ে আসতে দেখতেন তখনই সালাতের জন্য ইক্বামাত দিতেন।

 জাবির ইবন সামুরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাললাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুয়াযযিন (তাঁর জন্য) অপেক্ষা করতেন— ইক্বামাত দিতেন না। যখন তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাললাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বেরিয়ে আসতে দেখতেন তখন সালাতের ইক্বামাত দিতেন।” 

সহীহ - এটি মুসলিম বর্ণনা করেছেন। 606

ব্যাখ্যা

এ হাদীসে বর্ণিত, ইক্বামতের সময় নির্ধারণ করা একমাত্র ইমামেরই অধিকার। কেননা মুয়াযযিন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাললাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের না হওয়া পর্যন্ত ইক্বামত দিতেন না।

আর কিছু বই__________

🕋 প্রশ্ন ইমামতির জন্য সর্বাধিক যোগ্য কে বা তার কি কি বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার।.pdf

🕋 ঈদুল আযহার দিনের করণীয় কাজসমূহ.pdf

🕋ফরয সালাত ও সুন্নাত সালাত নির্দিষ্ট জায়গায় আদায় করা কি ঠিক।2025.pdf

🕋মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য চারিত্রিক 42 টি বৈশিষ্ট্য ✅ Rasikul India 2025.pdf