Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

✎প্রশ্ন:3📘মরক্কোর বিয়েতে “আমারিয়া” নামক উঁচু আসনে কনেকে বসিয়ে ঘোরানো হয়, এবং সে অতিথিদের মাঝে মিষ্টি ছুঁড়ে দেয়।

 প্রশ্ন:3📘মরক্কোর বিয়েতে “আমারিয়া” নামক উঁচু আসনে কনেকে বসিয়ে ঘোরানো হয়, এবং সে অতিথিদের মাঝে মিষ্টি ছুঁড়ে দেয়। এই রীতি কি ইহুদি সংস্কৃতি থেকে এসেছে? আর এটি কি মুসলিমদের জন্য বৈধ?

মরক্কোর একটি বিয়েতে, কনেকে "আম্মারিয়া" নামক একটি "আসনে" তোলা হয়, যেখানে লোকেরা তার চারপাশে ঘুরে বেড়ায় যখন সে তার অতিথিদের দিকে হাত নাড়ে এবং তাদের দিকে মিষ্টি ছুঁড়ে মারে। ইহুদি বিয়েতে বর-কনেকে তুলে চেয়ারে তাদের সাথে নাচানোর একটি ঐতিহ্য রয়েছে। অনেক ইহুদি মরক্কোতে অভিবাসিত হয়েছে এবং তাদের অনেকেই গোপনে ইহুদি হিসেবে বসবাস করেছে তা বিবেচনা করে, অনেক লোক বিশ্বাস করে যে এই ঐতিহ্য ইহুদি সংস্কৃতি থেকে মরক্কোর সংস্কৃতিতে প্রবেশ করেছে। এটি এখন মরক্কোতে মুসলিম বিবাহের একটি খুব স্বাভাবিক অংশ, তাই মরক্কোর মুসলিম কনেদের জন্য কি এই ঐতিহ্যে অংশগ্রহণ করা জায়েজ নাকি এটি নিষিদ্ধ? এখন কি এতে কোনও ভুল আছে, কারণ এটি মরক্কোর সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে, নাকি এটি পরিত্যাগ করা উচিত, কারণ ইহুদিরাও এটি করে?


🔹3. ফতোয়ার তথ্য:🔖 ফতোয়া নং: ২৫৪২১৩

📅 প্রকাশকাল: ৪ রবিউস সানি ১৪৩৮ হিজরী / ২ জানুয়ারি ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ। 🌐 উৎস: ইসলাম প্রশ্ন ও উত্তর (IslamQA.info)।


🔰 উত্তর:

🔹মূল হুকুম:

কনেকে একটি উঁচু আসনে বসানো (যেমন "আমারিয়া" বা মঞ্চ/চেয়ার) — এটি মুসলমানদের পুরাতন এক প্রথা।

📌সুতরাং একে ইহুদি সংস্কৃতি বলা সঠিক নয়। এটি প্রাচীন আরব মুসলিমদের প্রথা হিসেবেই বিবেচিত।

[📘 আল-মিসবাহুল মুনীর: পৃষ্ঠা ৬০৮,

“অর্থাৎ উঁচু চেয়ার বা আসন যেখানে কনেকে তার সৌন্দর্য প্রকাশের জন্য বসানো হয়।

📘 শরহুল কাওকাবুল মুনীর: খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৪৭৮] অর্থাৎ হরিণী তার মাথা উঁচু করল, সেখান থেকেই এসেছে"]


🔹শরয়ি দৃষ্টিকোণ থেকে বৈধতার শর্ত:

 যদি:

শুধুমাত্র নারীরা উপস্থিত থাকে

কোনো পুরুষ তাকাতে না পারে

কোনো বাদ্যযন্ত্র, গান, নাচ না থাকে

 তাহলে কনে মঞ্চে বসতে পারবে।

 তবে যদি:

বর তার স্ত্রীর পাশে বসে

সাজসজ্জিত নারীরা সামনে থাকে

নারী-পুরুষ একত্র হয়

বাদ্যযন্ত্র ও গান বাজে

️ তাহলে এটি হারাম, কেননা এতে আছে:

দৃষ্টির গুনাহ

ফিতনা

অনার মাহরামের উপস্থিতি।

কনে যদি মঞ্চে বসে থাকে, তাহলে তাতে কোনও দোষ নেই, যদি সে বিদেশী পুরুষদের দৃষ্টির আড়ালে থাকে, ঢোল বা সঙ্গীত ছাড়াই। যদি সে মঞ্চে বসে থাকে এবং মহিলারা তার চারপাশে থাকে, তাহলে তাতে কোনও দোষ নেই, তারা চক্কর দিচ্ছে বা বসে আছে, কারণ এই রীতিনীতিগুলির মূল নীতি হল এগুলি জায়েজ।

পুরুষরা যখন তাকে দেখে, অথবা স্বামীর সাথে বসে থাকে এবং সে নারীদের দেখে, তখন এটি নিষিদ্ধ, কারণ পুরুষরা যখন কনেকে তার সাজসজ্জায় দেখে, অথবা স্বামী যখন নারীদের সাজসজ্জায় দেখে, তখন এটি প্রলোভনের কারণ হয়। মহান আল্লাহ আমাদের দৃষ্টি অবনত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, বলেছেন: “

📘 দলিলসমূহ(অনুবাদ):

১.কুরআন:

মুমিন পুরুষদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে ও তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে... এবং মুমিন নারীদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।

📖 সূরা আন-নূর: ৩০–৩১]

📘 ২. হদীসঃ

জারীর ইবন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন:

আমি রাসূলুল্লাহ কে আকস্মিক দৃষ্টির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘তুমি তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নাও।

বা আমি রাসূল –কে আকস্মিকভাবে (হঠাৎ) দৃষ্টিপাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, ‘তুমি তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নাও।

📘 সহীহ মুসলিম: হাদীস ২১৫৯]

🌟৩.স্থায়ী ফতোয়া কমিটি:

বর-কনের মঞ্চে একত্রে বসা, যেখানে অনার মাহরাম নারীরা সাজসজ্জায় থাকে—এটি এক গর্হিত কাজ, যার উপর ইসলামী নেতৃবৃন্দ, আলেম ও পরিবার প্রধানদের উচিত কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করা।

📘 Fatawa al-Lajnah ad-Da’imah, “ফাতাওয়া আল-লাজনা আল-দাইমাহ”- খণ্ড ১৯পৃষ্ঠা ১২০

বর ও কনের মঞ্চে একত্রে উপস্থিত থাকা—যেখানে সাজসজ্জিত অনার মাহরাম নারীরা উপস্থিত—এটি শরীয়তের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ এবং রাষ্ট্রীয় ও পারিবারিকভাবে এর প্রতিরোধ করা আবশ্যক।

🌟৪. শাইখ ইবনে বায রহঃ বলেন:

বর-কনের মঞ্চে উপস্থিতি, সাজসজ্জিত নারীদের সামনে, পুরুষ আত্মীয়দের সম্মুখে—এটি ভয়াবহ ফিতনা ও অনাচার ছড়ানোর মাধ্যম, তাই তা নিষিদ্ধ।

[📘মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ইবনে বায, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ২৪৪, 📘 Majmū‘Fatāwā Ibn Bāz, খণ্ড ৪, পৃ. ২৪৪]


এই যুগে কনের জন্য আলাদা মঞ্চ তৈরি করা হয়, যেখানে বর তার স্ত্রীর পাশে বসে, নারীরা সাজসজ্জা করে সেখানে উপস্থিত থাকে—এটি এক ভয়াবহ গুনাহ ও ফিতনার পথ। মুসলিমদের উচিত এমন কর্মকাণ্ড পরিত্যাগ করা।

আমি এই দেশ এবং অন্যত্র আমার সমস্ত মুসলিম ভাইদের আল্লাহকে ভয় করার এবং সবকিছুতে তাঁর শরীয়ত মেনে চলার, আল্লাহ তাদের জন্য যা নিষিদ্ধ করেছেন তা থেকে সাবধান থাকার এবং বিবাহ এবং অন্যত্র মন্দ ও দুর্নীতির কারণগুলি থেকে দূরে থাকার, সর্বশক্তিমান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য এবং তাঁর ক্রোধ ও শাস্তির কারণগুলি এড়াতে পরামর্শ দিচ্ছি।” সমাপ্ত উদ্ধৃতি।



🌟৫. শাইখ ইবন উসাইমীন রহঃ বলেন:

যদি বর স্ত্রীর পাশে বসে, তাকে চুমু দেয়, মিষ্টি খাওয়ায়, নারীদের সামনে এসব করে—তাহলে এটি শরয়ি দিক থেকে হারাম এবং বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকেও অশোভন

[ফাতাওয়া নূর ‘আলা আদ-দারব, নিকাহ,প্রশ্ন নং: ৪১৫📘আল-লিক্বা আশ-শাহরী, সাক্ষাৎকার ৮৫,পৃষ্ঠা ৮]


বর ও কনের একত্রে উপস্থিত থাকা, স্ত্রীকে মিষ্টি খাওয়ানো, চুমু খাওয়া—এটি বুদ্ধি ও শরীয়ত উভয়ের দৃষ্টিতে নিন্দনীয়। নারীদের মধ্যে ফিতনা সৃষ্টি হয় এবং দাম্পত্য সম্পর্কেও প্রভাব পড়ে।

📝 উপসংহার:

কনেকে মঞ্চে বসানো বা ‘আমারিয়া’ প্রথা শরীয়তে হারাম নয় যদি তা নির্ধারিত সীমায় থাকে।

ইহুদিদের অনুকরণে নয়, বরং নিজেদের সংস্কৃতির নামে হারাম বিষয়কে বৈধ মনে করা চলবে না

বর-কনের যৌথ মঞ্চে উপস্থিতি, ভিডিও ধারণ, গান-বাজনা, সাজসজ্জিত নারীদের সামনে আসা—এসব কঠোরভাবে হারাম

Post a Comment

0 Comments