বিষয়ঃ ইমামের কিরাআত– রাসূল ﷺ–এর আদর্শ অনুসরণ
🕌 ভূমিকা: ইমামের কিরাআতের আওয়াজ – রাসূল ﷺ–এর আদর্শ অনুসরণ,
ইসলামে
সালাত (নামাজ) শুধুই একটি শারীরিক উপাসনা নয়, বরং তা একান্ত খুশু-খুযু ও
শ্রদ্ধাপূর্ণ এক বন্দেগি। আর এই সালাতে ইমামের কিরাআত (কুরআন তেলাওয়াত) হল সালাতের
প্রাণ। তাই ইমামের জন্য জরুরি যে, তিনি রাসূল ﷺ-এর
সুন্নাহ অনুযায়ী কিরাআত করবেন—না অতিরিক্ত উচ্চস্বরে, না অতি নিচু স্বরে—বরং মধ্যম
পন্থা অবলম্বন করবেন।
কুরআন
তিলাওয়াত একটি ইবাদত। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ
ছিলেন এই ইবাদতের সর্বোত্তম আদর্শ। তাঁর কিরাআত বা কুরআন পাঠ ছিলো অত্যন্ত সুন্দর,
হৃদয়ছোঁয়া, পরিমিত, গভীর অর্থবোধক এবং ভাবগম্ভীর।
ইমামত একটি পবিত্র দায়িত্ব। ইমাম যখন সালাতের জন্য কিরাআত করেন, তখন তিনি শুধু নিজের জন্য নয়, বরং পেছনে দাঁড়ানো পুরো জামা‘আতের জন্য তেলাওয়াত করছেন। তাই কিরাআতের ধরন, উচ্চারণ, গতি ও আওয়াজ — সবকিছুর একটি সঠিক পরিমিতি থাকা উচিত।
নিশ্চয়ই,
কিরাআত— কুরআনের তেলাওয়াত — সালাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। একজন ইমামের কিরাআতের
ধরণ কেবল তাঁর নিজের নয়, বরং তা সমগ্র জামা‘আতের উপকার বা অনুপকারের কারণ হতে
পারে। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ
কিভাবে কুরআন তেলাওয়াত
করতেন —
সেটাই আমাদের জন্য সবচেয়ে উত্তম আদর্শ।
🕌রাসূল
(সাঃ) কিরাত যে রকম ছিলো 🌟
🌟
উম্মু সালামা (রাঃ, আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
"রাসূল (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
কুরআন তেলাওয়াত করার সময় খুব জোরেও পড়তেন না, আবার খুব আস্তেও পড়তেন না; বরং মধ্যম
পন্থা অবলম্বন করতেন।"
বা
তিনি সুন্দরভাবে (তাজবীদসহ) পাঠ করতেন।
তিনি অতিরিক্ত দ্রুতগতিতে পাঠ করতেন না, আবার
দীর্ঘ টান দিয়ে টেনে টেনে পড়তেনও না; বরং তাঁর কিরাআত ছিল – মাঝারি
কণ্ঠে (না জোরে, না ধীরে) পড়তেন।
📘 মুসনাদ আহমদ, হাদীস: ১৫৩৭১
(শাইখ
আহমাদ শাকির একে সহীহ বলেছেন) ; 📘 সুনান আবু দাউদ,
হাদীস: ১৩২৪
📘 সহীহ ইবনু খুযাইমা, হাদীস: ১৬৯৬;
📕 জামে’ আত-তিরমিযী, হাদীস নম্বর: ২৯২৩, (হাদীসটি হাসান,
সহীহ হিসেবে বর্ণিত হয়েছে)
📚 ইমাম তিরমিযী বলেন: 📘হাদীসটি সহীহ পর্যায়ের।
🎓 নির্ভরযোগ্য
মুহাদ্দিসদের মন্তব্যঃ আলবানী রহঃ ✅সহীহ বলেছেন (সিলসিলা সহীহাহ ৩৫৮৩, সহীহ তিরমিযী
২৯২৩); ইবনু হাজার, ইবনু মাজাহ, বাগভী গ্রহণযোগ্য হাদীস।
কিছু
বাংলা ওয়েবসাইটে এই হাদীসটি ভুলক্রমে "যঈফ" বলা হয়ে থাকে, কারণ তারা সনদের
প্রাথমিক রাবী আবু সালামা বা দাররাজ সম্পর্কে সন্দেহ করেছেন, অথচ অধিকাংশ মুহাদ্দিস এই রাবীদের হাদীসকে গ্রহণযোগ্য
বলেছেন।
🌟
তিলাওয়াতে ধীরগতি ও তাজউইদের সাথে পাঠ করতেন 🌟
আয়েশা (রাঃ) বলেন:
“রাসূল ﷺ
কুরআন ধীরস্থিরভাবে তিলাওয়াত করতেন।”
📚 সহীহ বুখারী
(৭৫২), সহীহ মুসলিম (৭৩২)
·
"তারতীল"শব্দটি নির্দেশ করে
— স্পষ্টভাবে হরফ ও শব্দ উচ্চারণ, সঠিক মাখরাজ ও যথাযথ তাজউইদ রক্ষা করে ধীরে ধীরে
পড়া।
·
ধীরস্থিরভাবে ও পরিপাটি করে তেলাওয়াত
করা, যেখানে হরফের হক আদায় হয়, মাখরাজ ঠিক থাকে এবং শব্দ স্পষ্টভাবে বের হয়।
“আর তুমি কুরআন তিলাওয়াত কর পরিপাটি করে, ধীরস্থিরভাবে।”
📚 সূরা মুয্জাম্মিল (৭৩:৪)
🌟.
সাজেশন ও পরামর্শ ইমামদের জন্য
রাসূল ﷺ
ইমামদের উদ্দেশে বলেনঃ
“তোমাদের
মধ্যে কেউ যখন লোকদের ইমামতি করে, তখন যেন হালকা সালাত পড়ে। কারণ পেছনে দুর্বল,
বৃদ্ধ এবং প্রয়োজনসম্পন্ন মানুষ থাকতে পারে।”
📚 সহীহ বুখারী (৭০৪)
👉 অর্থাৎ:
·
দীর্ঘ সূরা না পড়ে ছোট সূরার
তেলাওয়াত
·
এমন গতিতে পড়া যাতে শ্রোতা বুঝতে ও
মনে রাখতে পারে
·
তাজউইদ ঠিক রেখে স্পষ্ট উচ্চারণ
করা।
🕋
রাসূল (ﷺ)-এর
কিরাআতের বৈশিষ্ট্যসমূহ: সংক্ষেপে
1. মধ্যম
আওয়াজে পড়া – না খুব জোরে, না খুব আস্তে।
2. ধীরে
ধীরে ও স্পষ্ট করে তিলাওয়াত করা (তারতীল)
3. আয়াত
অনুযায়ী থেমে থেমে পড়া
4. মনোযোগ
ও গভীর ভাব নিয়ে পাঠ করা
5. আল্লাহর
আয়াত শুনে প্রভাবিত হওয়া (কখনও কান্না)
6. রাত্রিকালে
দীর্ঘ কিরাআত করা
7. তাজউইদের
মূলনীতি অনুসরণ করে পড়া.
🌟 কিরাআতের আদর্শ শিক্ষা:
১. মধ্যম পন্থা অবলম্বন করুন:
খুব উচ্চ আওয়াজেও নয়, খুব নিচু স্বরেও নয়; বরং এমনভাবে পড়ুন যাতে আপনি নিজে বুঝতে
পারেন এবং পাশের কেউ যদি চায় শুনতে, সে-ও বুঝতে পারে।
২. তাজবিদ ও মাখারিজ মেনে পড়া:
কুরআন যেমনভাবে নাযিল হয়েছে, তেমনভাবে পড়ার চেষ্টা করা।
৩. অর্থের প্রতি মনোযোগ:
যেন কুরআনের আয়াত হৃদয়ে প্রভাব ফেলে।
৪.রসূল ﷺ-এর
কিরাআত ছিল ধীরে ধীরে, ভারসাম্যপূর্ণ, ভাবগম্ভীর ও আবেগপূর্ণ—আমরাও তা অনুসরণে
চেষ্টা করি।
✅কুরআন তেলাওয়াতে
সংযম ও মধ্যপন্থা অবলম্বন সুন্নাহ।
✅খুব দ্রুত ও অস্পষ্টভাবে
পড়াও ঠিক না, আবার খুব ধীরগতিতেও নয়।
✅রাসূল ﷺ
তাজবীদসহ আয়াত ধরে ধরে অর্থবোধকভাবে পাঠ করতেন।
❓
ইমামের কিরাআত কতটা শব্দ করে (আওয়াজে) পড়া উচিত?
এটা
কি জোরে হবে, নাকি আস্তে? এবং কোন ইমাম কীভাবে পড়বেন?
________________________________________
🔹
মূলনীতি:
·
ইমাম এমনভাবে কিরাআত করবে, যাতে পাশে
থাকা মুসল্লিরা শুনতে পায়, কিন্তু বড় আওয়াজে চেঁচিয়ে না পড়ে।
________________________________________
📖
দলীল ১:
“তুমি তোমার নামাযের
মধ্যে (তিলাওয়াতে) খুব জোরেও আওয়াজ করো না, আবার একেবারে নিঃশব্দেও করো না; বরং এর
মাঝামাঝি পথ অনুসরণ করো।”
📚 সূরা আল-ইসরা (১৭:১১০)
🔍
তাফসীর (ইবনে আব্বাস ও ইমাম কুরতুবী):
·
এই আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা
রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে শিক্ষা দিচ্ছেন,
যেন তিনি তাঁর সালাতে কিরাআত বা কুরআন তিলাওয়াতে এমন আওয়াজ না করেন যাতে তা অতিরিক্ত
উচ্চস্বরে হয়ে যায়, এবং এমনও না করেন যাতে কেউ কিছুই শুনতে না পারে। বরং মাঝামাঝি পথ
অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। যাতে মুসল্লিরা শুনতে পায় কিন্তু হঠাৎ চমকে না ওঠে।
·
আল্লাহর রাসূল ﷺ-কে
কুরআন তিলাওয়াতে পরিমিত স্বর ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে — যাতে তা খুব উচ্চস্বরেও
না হয় আবার একেবারে নিঃশব্দেও না হয়।"
·
📘 তাফসীর আত-তাবারী, সূরা আল-ইসরা ১৭:১১০
________________________________________
📖 দলীল ২:
“রাসূল ﷺ কখনো কখনো ফজর,
যোহর ও ইশার কিরাআতে আওয়াজ তুলতেন, যাতে পেছনের মুসল্লিরা শুনতে পারে।”
📚 সহীহ বুখারী: হাদীস ৭৬১
🎓
ফিকহি ব্যাখ্যা চার মাযহাবের ফিকহি ব্যাখ্যা:
মাযহাব— কিরাআতের আওয়াজ সম্পর্কে নির্দেশনা।
হানাফি—ইমাম
এমন আওয়াজ করবে যাতে পাশে থাকা মুসল্লিরা শুনতে পায়।
শাফি‘ঈ—কিরাআত
হবে পরিষ্কার ও স্পষ্ট, কিন্তু শান্তভাবে।
মালিকি—মাঝে
মাঝে ইমাম একটু উচ্চ আওয়াজে পড়তে পারেন।
হাম্বলি— সুন্নাহ
অনুযায়ী শব্দ হবে ভারসাম্যপূর্ণ, যেন মনোযোগ বজায় থাকে। মধ্যম আওয়াজে, যেন মুসল্লিরা
অংশ নিতে পারে।
⚠জোরে
আওয়াজ করলে সমস্যাসমূহ:
সমস্যা ব্যাখ্যা
❌ পিছনের কাতারে
শব্দ প্রতিধ্বনি সৃষ্টি হতে পারে— মনোযোগ নষ্ট হয়।
❌
অসুস্থ বা বৃদ্ধ মুসল্লিরা অস্বস্তি বোধ করে ইমামের
দায়িত্ব—সহজতা।
❌
পাশের মসজিদের নামায নষ্ট হতে পারে—কষ্টদায়ক আওয়াজ শরয়ি নয়।
🎯যে
কণ্ঠে মুসল্লিরা শ্রবণ করতে পারে, কিন্তু চিৎকার মনে না হয়—এটাই সুন্নাহ।
________________________________________
📚রেফারেন্স:
উৎস রেফারেন্স
কুরআন,
সূরা আল-ইসরা – আয়াত: ১১০
সহীহ
বুখারী, হাদীস: ৭৬১
ফাতহুল
বারি – ইবনু হাজার, হাদীস ব্যাখ্যা: কিতাবুস সালাহ
তাফসীর
ইবনে কাসীর ও কুরতুবী, সূরা আল-ইসরা ১১০ ব্যাখ্যা
ইসলামী
শরীয়তের আলোকে বিশ্লেষণ-
________________________________________
✅ মূলনীতি:
🔸 ইমাম কিরাআত
এমনভাবে পড়বে, যাতে পেছনের মুসল্লিরা শুনতে পারে, কিন্তু চেঁচিয়ে বা বিরক্তিকর শব্দে
নয়।
🔸 এটা ইবাদতের
অংশ, তাই সুন্নাহ অনুযায়ী আওয়াজ হবে মধ্যম মাত্রায়—না খুব জোরে, না একেবারে আস্তে।
________________________________________
📖 কুরআনের দলীল:
“তুমি তোমার নামাযের
মধ্যে (কিরাআতে) অতিরিক্ত জোরেও আওয়াজ করো না, আবার একেবারে আস্তেও না; বরং এর মাঝামাঝি
পথ অবলম্বন করো।”
📚 সূরা আল-ইসরা (১৭:১১০)
🔍 তাফসীর:
এই আয়াতে সালাতের
কিরাআতের আওয়াজ সম্পর্কে ভারসাম্য রক্ষা করার নির্দেশ রয়েছে।
— তাফসীর ইবনে কাসীর ও আল-কুরতুবী
📖 রাসূল ﷺ-এর আমল:
“রাসূল ﷺ
কিরাআতে এমন আওয়াজ করতেন যাতে প্রথম কাতারের মুসল্লিরা শুনতে পেত।”
"নবী ﷺ
যখন কুরআন তিলাওয়াত করতেন, তখন আওয়াজ উঁচু করতেন যাতে সাহাবিরা শুনতে পান।"
📚
সহীহ বুখারী, হাদীস: ৭৬১, 📘
মুসলিম, হাদীস: ৪৫৬, ৮৭২,
🔸উম্মে হানী (রাযি.)
বলেন: আমি আমার (ঘরের) ছাউনির ওপর থেকেও রাসূলুল্লাহ ﷺ- এর কিরাআতের শব্দ
শুনতে পেতাম।
📘 সূত্র:সহীহ মুসলিম, হাদীস: 465, সহীহ বুখারী, অধ্যায়:
সালাত, হাদীস: 745, সহীহ মুসলিম: 670
সহীহ
ইবন খুযাইমা: 471
🔍 বুঝুন:
তিনি আওয়াজ করতেন, কিন্তু অতিরিক্ত জোরে নয়; এমনভাবে যে
নিকটবর্তী মুসল্লি শুনতে পেতেন।
🔹
ইমাম ইবনু কুদামাহ (রহ.) বলেন:
“ইমামের উচিত এমন আওয়াজে কিরাআত করা যাতে অন্তত যারা
তার পেছনে আছে তারা শুনতে পায়। আওয়াজ এত নিচু হলে যে কেউই শুনতে পায় না, তাহলে
নামাজ আদায়ের মূল উদ্দেশ্যই নষ্ট হয়ে যায়।”
➡️ “মুসল্লিদের কিরাআত
শোনানো সুন্নাহ।”
______________________________________________________________________
⚠️
কিছু সাধারণ ভুল ও সতর্কতা:
ভুল আচরণ — পরিণতি
❌ অতিরিক্ত জোরে
পড়া— মুসল্লিদের ভয়, ক্লান্তি বা পাশের মসজিদে বিঘ্ন।
❌ শব্দ গিলে ফেলা
বা অস্পষ্ট উচ্চারণ—শ্রোতা বুঝে না, ইবাদতের প্রভাব নষ্ট হয়।
❌ প্রতিটি আয়াতে
বিরতি না রাখা— অর্থ ও ফিকহ হারিয়ে যায়।
❌ গানের সুরে পড়া—কিরাআতের
আদব লঙ্ঘন হয়।
❌
নিচু আওয়াজে কিরাআত পাঠ – যদি কেউই না শোনে?
🔸 ইমাম না শুনাতে পারলে ৩টি সমস্যা হয়:
·
কিরাআতের সুন্নাত তরক হয়।
·
জামাআতের উদ্দেশ্য (সমষ্টিগত ইবাদত)
ব্যাহত হয়।
·
মুসল্লিরা জানতেই পারেন না কোন সূরা
পড়া হচ্ছে, ফলে তারা মনোযোগ হারান।
🔹 ইমামের
দায়িত্ব:
·
এমন
আওয়াজে কিরাআত পড়া, যাতে অন্তত প্রথম কাতারের মুসল্লিরা স্পষ্ট শুনতে
পারে।
·
সাউন্ড সিস্টেম থাকলে সেটি
সঠিকভাবে ব্যবহার করা।
·
যেখানে
মাইক নেই, সেখানে গলা উঁচু করে হুসনে আওয়াজে পড়া।
🔹 মুসল্লিদের
দায়িত্ব:
·
ইমামকে
ভদ্রভাবে বলুন: “আমরা আপনার কিরাআত শুনতে পাচ্ছি না, দয়া করে একটু জোরে পড়লে ভাল
হয়।”
·
👉 ইমামের কিরাআত
এমন হওয়া চাই যাতে পেছনের মুসল্লিরা অন্তত শুনতে পায় — এটিই সুন্নাহ।
·
👉 খুব নিচু আওয়াজে
পড়া, যেখানে মুসল্লিরা শুনতেই পায় না— তা সুন্নাহবিরোধী এবং জামাআতের উদ্দেশ্যের
বিরুদ্ধে।
📚 রেফারেন্স:
কুরআন, সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১১০
সহীহ বুখারী, হাদীস: ৭৬১, মুসলিম
465, 677, আবু দাউদ 1324,
তাফসীর ইবনে কাসীর, আয়াত ১৭:১১০
ফাতহুল বারী – ইবনু হাজার, হাদীস
ব্যাখ্যা: কিতাবুস সালাহ
📌
সংক্ষেপে হাদীস অনুসারে কিরাআতের আদব: 🌟
বিষয়- -- করণীয়
· আওয়াজ স্পষ্ট-- মুসল্লিদের
শোনানো।
· অত্যধিক জোরে নয়-
যেন নিজে কষ্ট না পান।
· ইমাম আওয়াজে নেতৃত্ব দিবেন-
সঠিক উচ্চারণ, শ্রুতিযোগ্যতা।
·
🔸রাসূল
ﷺ এমন আওয়াজে কিরাআত পড়তেন যাতে সামনের
কাতারের সাহাবীগণ স্পষ্ট শুনতে পেতেন, কিন্তু এত জোরেও না যে পুরো মসজিদে গর্জন হতো।
·
🔸এ
থেকে ফিকহবিদগণ বলেন— ইমামের আওয়াজ এমন হওয়া উচিত যা প্রথম কাতার শুনতে পারে, কিন্তু
অন্যদের কষ্ট না হয়।
·
✔ইমাম
এমন আওয়াজে পড়বে,যাতে সামনে থাকা মুসল্লি শুনে বুঝতে পারে। যাতে মনে প্রশান্তি ও মনোযোগ
আসে।
·
কিরাআতের আওয়াজ হবে–"আত্মমর্যাদাশীল,
স্পষ্ট, শ্রুতিমধুর– কিন্তু নম্রতা ও ভারসাম্যপূর্ণ"।
·
ইমামের কিরাআতের আওয়াজ এমন হওয়া জরুরি,
যাতে মুসল্লিরা শুনে হৃদয়ে রেখা টানতে পারে।
·
এটা শুধু "আওয়াজ" নয়— বরং
তিলাওয়াতের আদব ও হেদায়াহর মাধ্যম।
·
ইমামের দায়িত্ব- মুসল্লিদের হেদায়াতের
জন্য বুঝে শুনে পড়া।
·
আওয়াজ একেবারে নিচু- সুন্নাহবিরোধী,
গাফেল বা অসুস্থ হলে ভিন্ন কথা।
·
কিরাআতের আওয়াজ- এমন হতে হবে, যাতে
মুসল্লিরা অন্তত প্রথম কাতারে শুনতে পায়। এবং যাতে সালাতের ভাবগাম্ভীর্য বজায় থাকে।
·
👉ইমামের
কিরাআত এমন হওয়া চাই যাতে পেছনের মুসল্লিরা অন্তত শুনতে পায় — এটিই সুন্নাহ।
·
👉খুব
নিচু আওয়াজে পড়া, যেখানে মুসল্লিরা শুনতেই পায় না— তা সুন্নাহবিরোধী এবং জামাআতের উদ্দেশ্যের
বিরুদ্ধে।
🌟
(কুরআন অধ্যয়ন ও তিলাওয়াতের আদব) 🌟
🌟বারা ইবনু ’আযিব
(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে
শুনেছি, তোমরা কুরআনকে তোমাদের কণ্ঠস্বরের মধুর আওয়াজ দিয়ে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে পড়বে।
কারণ সুমিষ্ট স্বর কুরআনের সৌন্দর্য বাড়ায়।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ’তোমাদের মিষ্টি স্বর দিয়ে কুরআনকে সুন্দর করো।’
🌟 ব্যাখ্যা:
ইমাম
ত্বীবী (রহঃ) বলেন,
কুরআনকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করা বলতে তারতীলসহ
বিনম্র করুণ সুরে শোকাকুল হয়ে সুন্দরভাবে তিলাওয়াত করা। এখান থেকে বুঝা যাচ্ছে কুরআন
স্বরবে সুন্দর আওয়াজে পড়া যাবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, এর দ্বারা কোন মুসল্লি বা ঘুমন্ত
ব্যক্তির কষ্ট না হয়।
এ ব্যাপারে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অর্থাৎ- সুমধুর কণ্ঠ কুরআনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। আর তা নিষিদ্ধ
নয়, কেননা সৌন্দর্য বর্ধক জিনিস সেই বস্ত্তরই অন্তর্ভুক্ত।
🌟আল
মানাবী (রহঃ) বলেন,
আসলে উপরোক্ত হাদীস দ্বারা তারতীল সহ কুরআন তিলাওয়াতের উপর উদ্ধুদ্ধ করা হয়েছে। যেমন
আল্লাহ বলেন, ‘‘আর ধীরে ধীরে সুস্পষ্টভাবে কুরআন পাঠ কর’’-
(সূরা
আল মুযযাম্মিল-৭৩: ৪)।
অর্থাৎ- কুরআন তাজবীদসহ চিন্তা বিমুগ্ধ করুন
স্বরে পাঠ কর। সুন্দর কালামুল্লাহকে সুর করে পড়লে মানুষ বিমোহিত হয়ে পড়ে। একদা নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ মূসা -এর তিলাওয়াত শুনে বললেন, তোমাকে দাঊদ (আঃ)-এর
কণ্ঠস্বর দেয়া হয়েছে।
🌟
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। হাদিস এর ব্যাখ্যা
🌟 ইমাম জাযরী (রহঃ) বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাবি‘ঈদেরকে কিরাআত সহজ ছিল। তিনি বলেন, তোমরা যেভাবে সহজ উচ্চারণ
করতে পার সেভাবে কুরআন তেলাওয়াত কর। এক্ষেত্রে হরফ উচ্চারণে কষ্ট কাঠিন্য স্বীকার ও
মাদ্দ, হামজা উচ্চারণে ও ইশ্বা করণে বাড়াবাড়ি ও অতিরিক্ত করার দরকার নেই।
মিশকাত-
২২০৬-[২০], আবূ দাঊদ ৮৩০, আহমাদ ১৫২৭৩, শু‘আবূল ঈমান, ২৩৯৯, সহীহাহ্ ২৫৯, সহীহ আল জামি‘১১৬৭।]
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা কোন নবীর মধুর স্বরে সুরেলা
কণ্ঠে স্বরবে কুরআন পাঠ যত পছন্দ করেন, তত পছন্দ করেন না আর কোন স্বরকে।
[ মিশকাত- ২১৯৩ , ২১৯৪, সহীহ : বুখারী ৭৫২৭, সুনানুল
কুবরা লিল বায়হাক্বী ২১০৪৬।]
ব্যাখ্যা: প্রত্যেক নাবী সুমধুর কন্ঠের
অধিকারী ছিলেন যেমন হাদীসে এসেছে, এখানে নাবী বলতে প্রত্যেক নাবী ও প্রচারকারী,
অর্থাৎ- সাধারণ মানুষ। তারা সবাই কুরআনকে সালাতে, তিলাওয়াতের সময় ও প্রচারের
ক্ষেত্রে উঁচু স্বরে সুললিত কণ্ঠে পাঠ করেন।
🌟 আবূ কাতাদাহ্ (রহঃ) হতে বর্ণিত।
তিনি বলেন, একবার আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম-এর কুরআন পাঠ কেমন ছিল? তিনি বললেন, তাঁর কুরআন পাঠ ছিল টানা টানা।
তারপর তিনি [আনাস (রাঃ)] ’বিস্মিল্লা-হির রহমা-নির রহীম’ পড়লেন। তিনি ’বিস্মিল্লা-হি’
টানলেন। ’রহমা-নির’ টানলেন এবং ’রহীম’-এ টানলেন।
[ মিশকাত- ২১৯১, বুখারী ৫০৪৬।
🌟 উম্মু
সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আলাদা আলাদা করে কেটে কেটে কিরাআত করতেন। তিনি পড়তেন, আলহামদু লিল্লাহি
রাব্বিল আলামিন। এরপর থামতেন। আর-রাহমানির রাহিম এরপরে থামতেন। তারপর তিনি পড়তেন মালিক
ইয়াওমিদ্দীন।
[ সহীহ, সুনান আত তিরমিজী, ২৯২৭; ,
ইরওয়া ৩৪৩, মিশকাত ২২০৫, সিফাতুস সালাত, মুখতাসার শামাইল ২৭০, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ
২৯২৭ [আল মাদানী প্রকাশনী]
🔰 উপস্থাপনা: Rasikul
Islam
0 Comments