Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল।।

ইসলামী আকীদা বিষয়ক কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা, মোট ৩৭ টি প্রশ্ন-উত্তর

ইসলামী আকীদা বিষয়ক কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা

ইসলামী আকীদা বিষয়ক কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা

লেখক : শায়খ মুহাম্মাদ জামীল যাইনু | অনুবাদক : মুহাম্মাদ আব্দুর রব আফ্ ফান
সম্পাদনা : সানাউল্লাহ নজির আহমদ | সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
মোট ৩৭ টি প্রশ্ন-উত্তর

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

বিভাগ ১: আমাদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য (প্রশ্ন ১-৪)+
১। প্রশ্ন : আল্লাহ আমাদের কেন সৃষ্টি করেছেন? ১। উত্তর : আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন এ জন্য যে, আমরা তাঁর ইবাদত করব, তাঁর আনুহগত্য করব এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করব না।

وَمَا خَلَقْتُ الَجِنَّ وَالإِنْسَ إِلاَّ لِيَعْبُدُوْنِ

"আমি জ্বিন এবং মানব জাতি এজন্য সৃষ্টি করেছি যে, তারা শুধু আমার ইবাদত করবে।" (সূরা আজ-জারিয়াত : ৫৬)

রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেন : "বান্দার উপর আল্লাহর হক হচ্ছে, তারা তাঁর ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না।" (বুখারী ও মুসলিম)

২। প্রশ্ন : ইবাদত বলতে কি বুঝায়? ২। উত্তর : ইবাদত একটি ব্যাপক বিষয়। ইসলামি আকিদা, আল্লাহর পছন্দনীয় প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কথা ও কাজ, সব কিছু এর অন্তর্ভুক্ত। যেমন : দোয়া, নামায, বিনয়, তাকওয়া ইত্যাদি।

قُلْ إِنَّ صَلاَتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَا وَمَمَاتِيْ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ

"বলুন : আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও মরণ বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য।" (সূরা আল-আন'আম : ৬২)

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন : আল্লাহ তাআলা বলেছেন : "আমি আমার বান্দার উপর যা ফরজ করেছি, তার চেয়ে অধিক প্রিয় কোনো জিনিসের মাধ্যমে বান্দা আমার সান্নিধ্য লাভ করতে পারেনি। আর আমার বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে।" (হাদীসে ক্বদসী - বুখারী)

৩। প্রশ্ন : ইবাদত কত প্রকার? ৩। উত্তর : ইবাদতের অনেক প্রকার রয়েছে। যেমন : দোয়া, আল্লাহর ভয়, তাঁর নিকট প্রত্যাশা, তাঁর ওপর ভরসা, তাঁর নিকট আকাঙ্ক্ষা, তাঁর উদ্দেশ্যে জবেহ-মান্নত-রুকু-সিজদা-তাওয়াফ ও শপথ ইত্যাদি। এর ভেতর কোন একটি জিনিস আল্লাহর জন্য না হলে ইবাদত বলে গণ্য হবে না।
৪। প্রশ্ন : আল্লাহ রাসূললগণকে কেন প্রেরণ করেছেন? ৪। উত্তর : আল্লাহ তাঁর বান্দাদের তাওহীদ ও ইবাদতের দিকে আহ্বান জানাতে রাসূলগণকে প্রেরণ করেছেন।

وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِيْ كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُوْلاً أَنِ اعْبُدُوْا اللهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوْتَ

"আমি প্রত্যেক জাতির কাছে রাসূল পাঠিয়েছি এই জন্য যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে এবং 'ত্বাগুত" বর্জন করবে।" (সূরা আন-নাহাল : ৩৬)

**ত্বাগুত :** আল্লাহ ব্যতীত মানুষ সেচ্ছায়-সন্তুষ্টি চিত্তে যার ইবাদত করে, যাকে আহ্বান করে সেই ত্বাগুত।

বিভাগ ২: তাওহীদ বা একত্ববাদের প্রকার (প্রশ্ন ৫-৮)+
৫। প্রশ্ন : তাওহীদে রুবুবিয়্যাত বা আল্লাহর 'রব' সিফাতে তাওহীদ বলতে কি বুঝায়? ৫। উত্তর : আল্লাহর কার্যাবলীতে কাউকে অংশিদার না করা। অর্থাৎ একমাত্র তিনি সৃষ্টিকর্তা, রিযিক দাতা, জীবন-মৃত্যু ও উপকার-অপকারের মালিক ইত্যাদি।

اَلْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ

অর্থ : "সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য।" (সূরা আল-ফাতেহা : ২)

৬। প্রশ্ন : ইবাদতে তাওহীদ বলতে কি বুঝায়? ৬। উত্তর : ইবাদতের মালিক শুধু আল্লাহকেই জ্ঞান করা এবং সকল ইবাদত তাঁর জন্য উৎসর্গ করা। যেমন : দুআ, জবেহ্, মান্নত, বিনয়াবনত অবস্থা, প্রার্থনা, স্বলাত, তাওয়াক্কুল ও ফয়সালা ইত্যাদির মালিক আল্লাহকে স্বীকার করা এবং শুধু তাঁর জন্যই সম্পাদন করা।

وَإِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَّاحِدٌ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيْمُ

অর্থ : "আর তোমাদের ইলাহ একজন-ই, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই, তিনি দয়াময় অতি দয়ালু।" (সূরা আল-বাকারাহ্ : ১৬৩)

৭। প্রশ্ন : রুবুবিয়্যাত ও ইবাদতের ক্ষেত্রে তাওহীদের লক্ষ্য কি? ৭। উত্তর : রুবুবিয়্যাত বা আল্লাহর সিফাতে 'রব' এবং ইবাদতে তাওহীদের লক্ষ্য হল, মানুষ আল্লাহর বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব অন্তরে ধারণ করত সকল ইবাদত তাঁর জন্য উৎসর্গ করবে। নিজ কর্ম ও আচরণে তাঁর অনুসরণ করবে। অন্তরে ঈমান সু-দৃঢ় রাখবে এবং পৃথিবীতে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করবে।
৮। প্রশ্ন : আল্লাহর নাম ও গুনাবলিতে তাওহীদ বলতে কি বুঝায়? ৮। উত্তর : আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে নিজেকে যেসব গুণে গুণান্বিত করেছেন অথবা তাঁর রাসূল (ﷺ) বিশুদ্ধ হাদীসে তাঁর যেসব গুণাবলি বর্ণনা করেছেন তা প্রকৃত অর্থে, কোনরূপ অপব্যাখ্যা, তাঁর কোন সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য স্থাপন, তাঁর প্রকৃত গুণকে নিষ্ক্রিয় করা এবং কোন বিশেষ আকৃতি ধারনা করা ব্যতীত যথাযথ রূপেই বর্ণিত গুণাবলি তাঁর জন্য স্থির করা বুঝায়। যেমন : আরশে আসীন হওয়া, অবতরণ করা, হাত ইত্যাদি আল্লাহর পরিপূর্ণ শানের উপযোগী পর্যায়ে সাব্যস্ত কর বুঝা যায়।

لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ

"কোন কিছুই তাঁর সাদৃশ্য নয়, তিনি সর্ব শ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।" (সূরা আশ-শুরা : ১১)

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন : "আমাদের রব পৃথিবীর আকাশে প্রত্যেক রাতে অবতরণ করেন।" (বুখারী - মুসলিম)

বিভাগ ৩: সব চেয়ে বড় পাপ (প্রশ্ন ৯-১২)+
৯। প্রশ্ন : আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বড় পাপ কি? ৯। উত্তর : শিরকে আকবার।

وَإِذْ قَالَ لُقْمَانُ لِابْنِهِ وَهُوَ يَعِظُهُ يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ

"আর যখন লোকমান তার পুত্রকে বলল, হে বৎস ! আল্লাহর সাথে শরীক করো না, নিশ্চয় শিরক বড় জুলুম।" (সূরা লোকমান : ১৩)

১০। প্রশ্ন : বড় শিরক কি? ১০। উত্তর : যে কোন ইবাদত আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো জন্য নিবেদন করা। যেমন : দুআ, জবেহ্ ইত্যাদি।

وَلاَ تَدْعُ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لاَ يَنْفَعُكَ وَلاَ يَضُرُّكَ فَإِنْ فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِّنَ الظَّالِمِيْنَ

"আর আল্লাহ ব্যতীত অন্য এমন কাউকে ডাকবেনা যে তোমার উপকারও করে না, ক্ষতিও করে না, আর যদি তুমি তা কর তবে অবশ্যই জালিমদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে।" (সূরা ইউনুস : ১০৬)

১১। প্রশ্ন : বড় শিরকের পরিণাম কি? ১১। উত্তর : চিরস্থায়ী জাহান্নাম।

إِنَّهُ مَنْ يُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأوَاهُ النَّارَ وَمَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ أَنْصَارٍ

"যে কেউ আল্লাহর সাথে শরীক করবে আল্লাহ তার ওপর জান্নাত অবশ্যই হারাম করবেন, এবং তার ঠিকানা জাহান্নাম, আর জালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।" (সূরা আল মায়েদা : ৭২)

১২। প্রশ্ন : আল্লাহর সাথে শরীক করা অবস্থায় সৎকর্ম কাজে আসবে কি? ১২। উত্তর : শিরকের সাথে সৎকর্ম কোন উপকারে আসবে না।

وَلَوْ أَشْرَكُوْا لَحَبِطَ عَنْهُمَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ

"তারা যদি শিরক করত তবে তাদের সমস্তকৃতকর্ম নষ্ট হয়ে যেত।" (সূরা আল-আন্ আম : ৮৮)

বিভাগ ৪: বড় শিরকের প্রকারভেদ (প্রশ্ন ১৩-১৬)+
১৩। প্রশ্ন : আমরা মৃত বা অনুপস্থিত ব্যক্তিদের নিকট ফরিয়াদ করব কি? ১৩। উত্তর : না, আমরা মৃত বা অনুপস্থিত ব্যক্তির নিকট ফরিয়াদ করব না বরং আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ করব।

وَالَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ لَا يَخْلُقُونَ شَيْئًا وَهُمْ يُخْلَقُونَ ﴿২০﴾ أَمْوَاتٌ غَيْرُ أَحْيَاءٍ وَمَا يَشْعُرُونَ أَيَّانَ يُبْعَثُونَ ﴿২১﴾

"তারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য যাদেরকে ডাকে তারা কিছুই সৃষ্টি করে না বরং তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়। তারা নিষ্প্রাণ, নির্জীব এবং কখন তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে সে বিষয়ে তাদের কোন চেতনা নেই।" (সূরা আন-নাহাল : ২০-২১)

১৪। প্রশ্ন : আমরা কি জীবিত ব্যক্তির নিকট ফরিয়াদ করতে পারি? ১৪। উত্তর : হ্যাঁ ! যেসব ক্ষেত্রে জীবিত ব্যক্তি সামর্থ রাখে সে সব ব্যাপারে সাহায্যের ফরিয়াদ করা যাবে।

فَاسْتَغَاثَهُ الَّذِيْ مِنْ شِيْعَتِهِ عَلَى الَّذِيْ مِنْ عَدُوِّهِ فَوَكَزَهُ مُوْسَى فَقَضَى عَلَيْهِ

"মুসার দলের লোকটি তার শত্রুর বিরুদ্ধে তাঁর সাহায্য কামনা করল, তখন মুসা তাকে ঘুষি মারল, যার ফলে সে মরে গেল।" (সূরা আল-কাসাস : ১৫)

১৫। প্রশ্ন : আল্লাহ ব্যতীত অন্যের সাহায্য প্রার্থনা কি জায়েয? ১৫। উত্তর : যে সব ক্ষেত্রে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের কোন ক্ষমতা নেই সে ক্ষেত্রে জায়েয নয়।

إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِيْنَ

"আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি, শুধু তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।" (সূরা আল-ফাতেহা : ৫)

১৬। প্রশ্ন : আমরা জীবিত ব্যক্তির নিকট সাহায্য প্রার্থনা করব কি? ১৬। উত্তর : হ্যাঁ, যে সব ক্ষেত্রে জীবিত লোক সামর্থ রাখে। যেমন : ঋণ বা কোন বস্তু প্রার্থনা করা। তবে রোগ মুক্তি, হিদায়াত, রুযী ও এ ধরনের অন্য কিছু আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নিকট চাওয়া যাবে না।

وَتَعَاوَنُوْا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى

"সৎকর্ম ও আল্লাহ ভীতিতে তোমরা পরস্পর সাহায্য করবে।" (সূরা আল -মায়েদাহ্ : ২)

বিভাগ ৫: মান্নত, জাদু ও অদৃশ্য বিষয় (প্রশ্ন ১৭-১৯)+
১৭। প্রশ্ন : আল্লাহ ব্যতীত অন্যের উদ্দেশ্যে মান্নত করা জায়েয কি? ১৭। উত্তর : আল্লাহ ব্যতীত অন্যের উদ্দেশ্যে মান্নত করা জায়েয নয়।

رَبِّ إِنِّيْ نَذَرْتُ لَكَ مَا فِيْ بَطْنِيْ مُحَرَّراً

"হে আমার প্রতিপালক ! আমার গর্ভে যা আছে তা একান্ত তোমার জন্য আমি উৎসর্গ করলাম।" (সূরা আলে-ইমরান : ৩৫)

১৮। প্রশ্ন : জাদুর বিধান কি? ১৮। উত্তর : জাদু কাবীরা গুনার অন্তর্ভুক্ত, কখনো কুফরী হতে পারে।

وَلَكِنَّ الشَّيَاطِيْنَ كَفَرُوْا يُعَلِّمُوْنَ النَّاسَ السِّحْرَ

"বরং শয়তানরাই কুফরী করেছিল, তারা মানুষকে জাদু শিক্ষা দিত।" (সূরা আল-বাকারা : ১০২)

ইসলামি বিধান মোতাবেক জাদুকরকে তার কৃতকর্মের শাস্তি স্বরূপ হত্যা করা ওয়াজিব।

১৯। প্রশ্ন : আমরা গায়েবের ব্যাপারে গণক এবং ভবিষ্য বেত্তাদের খবর বিশ্বাস করব কি? ১৯। উত্তর : আমরা তাদেরকে বিশ্বাস করব না।

قُلْ لاَ يَعْلَمُ مَنْ فِيْ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ الْغَْبَ إِلاَّ اللهُ

"বল, আল্লাহ ব্যতীত গায়েব বা অদৃশ্যের খবর আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে কেউ রাখে না।" (সূরা আন-নামল : ৬৫)

বিভাগ ৬: ছোট শিরক (প্রশ্ন ২০-২৩)+
২০। প্রশ্ন : ছোট শিরক বলতে কি বুঝায়? ২০। উত্তর : ছোট শিরক কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। তবে ছোট শিরিককারী জাহান্নামে চিরদিন থাকবে না। ছোট শিরিক কয়েক প্রকার। যেমন : 'রিয়া' বা লোক দেখানো আমল।

فَمَنْ كَانَ يَرْجُوْ لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلاً صَالْحاً وَلاَ يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَداً

"...সুতরাং যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে ও তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরীক না করে।" (সূরা আল-কাহ্ ফ : ১১০)

২১। প্রশ্ন : আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে শপথ করা জায়েয কি? ২১। উত্তর : আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে শপথ করা জায়েয নয়।

রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেন: "যে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে শপথ করল সে অবশ্যই শিরক করল।" (মুসনাদে আহ্ মাদ)

২২। প্রশ্ন : আরোগ্য লাভের জন্য সুতা বা বালা ব্যবহার করা যায় কি? ২২। উত্তর : আরোগ্যের জন্য সুতা বা বালা ব্যবহার করা যাবে না।

وَإِنْ يَّمْسَسْكَ اللهُ بِضُرٍّ فَلاَ كَاشِفَ لَهُ إِلاَّ هُوَ

"আর আল্লাহ যদি তোমাকে কোন কষ্ট দেন, তবে তিনি ব্যতীত তা মোচনকারী আর কেউ নেই..." (সূরা আল আন্ আম : ১৭)

২৩। প্রশ্ন : কুনজর থেকে বাঁচার জন্য পুঁতি, কড়ি বা এ ধরনের অন্য কোন বস্তু ঝুলানো যায় কি? ২৩। উত্তর : কুনজর থেকে বাঁচার জন্য এগুলি ঝুলানো যাবে না। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেন : "যে ব্যক্তি তাবীজ-কবচ ঝুলাল সে শিরক করল।" (মুসনাদে আহ্ মাদ)
বিভাগ ৭: অসীলা ও তার প্রকারভেদ (প্রশ্ন ২৪)+
২৪। প্রশ্ন: কিসের মাধ্যমে আল্লাহর অসীলা বা নৈকট্যের মাধ্যম গ্রহণ করা যায়? ২৪। উত্তর : অসীলা বা নৈকট্য গ্রহণের উপায় দুই ধরনের হয়ে থাকে, (১) বৈধ (২) অবৈধ।

(১) বৈধ ও পালনীয় অসীলা

  • (ক) আল্লাহ তাআলার নাম ও গুনাবলির মাধ্যমে।
  • (খ) সৎ কর্মের মাধ্যমে।
  • (গ) জীবিত সৎ ব্যক্তিদের দুআর মাধ্যমে।

وَلِلَّهِ الأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوْهُ بِهَا

"আল্লাহর জন্য রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম, অতএব তোমরা তাঁকে সেই সব নামেই ডাকবে।" (সূরা আল আ'রাফ : ১৮০)

(২) অবৈধ অসীলা গ্রহণের রূপ

মৃত ব্যক্তির নিকট প্রার্থনা, তাঁর নিকট প্রয়োজনীয় বস্তু চাওয়া। এটি বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর মর্যাদার অসীলা গ্রহণ করাও চিন্তার বিষয়।

বিভাগ ৮: দুআ ও শাফাআত (প্রশ্ন ২৫-২৮)+
২৫। প্রশ্ন : দুআ কবুল হওয়ার জন্য কোন সৃষ্টিজীবকে মাধ্যম করা কি জরূরী? ২৫। উত্তর : দুআর জন্য কোন সৃষ্টিজীবকে মাধ্যম করার প্রয়োজন নেই।

وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِيْ عَنِّيْ فَإِنِّيْ قَرِيْبٌ

"আমার বান্দাগণ যখন তোমাকে আমার সম্মন্ধে প্রশ্ন করে, আমি তো নিকটেই।" (সূরা আল-বাকারা : ১৮৬)

২৬। প্রশ্ন : জীবিত ব্যক্তির নিকটে প্রার্থনা জায়েয কি? ২৬। উত্তর : হ্যাঁ, প্রার্থনা মৃত ব্যক্তির নিকট নয়, জীবিত (উপস্থিত) ব্যক্তির নিকট জায়েয।

وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِيْنِ وَالْمُؤْمِنَاتِ

"আর ক্ষমা প্রার্থনা কর তোমার এবং মু'মিন নর-নারীদের পাপের জন্য।" (সূরা মুহাম্মাদ : ১৯)

২৭। প্রশ্ন : রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর শাফাআত কার নিকট চাইতে হবে? ২৭। উত্তর : রাসূলের শাফায়াত আল্লাহর নিকট চাইতে হবে।

قَلْ لِلَّهِ الشَّفَاعَةُ جَمِيْعاً

"বল, সকল সুপারিশ আল্লাহরই ইখতিয়ারে..." (সূরা যুমার : ৪৪)

২৮। প্রশ্ন : জীবিত ব্যক্তির নিকট কি সুপারিশ চাওয়া যাবে? ২৮। উত্তর : জীবিত ব্যক্তির নিকট পার্থিব্য জগতের ব্যাপারে সুপারিশ চাওয়া যাবে।

مَنْ يَّشْقَعْ شَفَاعَةً حَسَنَةُ يَكُنْ لَّهُ نَصِيْبٌ مِّنْهَا...

"কেউ কোন ভাল কাজের সুপারিশ করলে তাতে তার অংশ থাকবে..." (সূরা আন-নিসা : ৮৫)

বিভাগ ৯: সূফীবাদ ও তার ভয়াবহতা (প্রশ্ন ২৯)+
২৯। প্রশ্ন : সূফী ত্বত্তের ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান কি? ২৯। উত্তর : সূফীবাদ রাসূল, সাহাবা ও তাবিয়ীদের যুগে ছিল না। ইসলামের সাথে সূফীবাদের বহুক্ষেত্রে বিরোধ রয়েছে, যেমন:
  • **আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নিকট প্রার্থনা:** যা বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত।
  • **আল্লাহ স্বীয় স্বত্ত্বায় সর্বস্থানে বিরাজমান বিশ্বাস:** যা কুরআন বিরোধী। আল্লাহ 'আরশে' সমাসীন।
  • **আল্লাহ তাঁর সৃষ্টি জীবের ভিতরে অবতরণ করেন বিশ্বাস (ইব্ নে আরাবীর উক্তি):** ভ্রান্ত আকীদা।
  • **আল্লাহ মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর জন্য দুনিয়া সৃষ্টি করেছেন ধারণা:** কুরআন বিরোধী।
  • **অলী-আউলিয়ার নামে মান্নত, কবরের চারিপাশে তওয়াফ, জিকিরের সময় নাচা-নাচি, গাঁজা সেবন** ইত্যাদি ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপ।
বিভাগ ১০: আল্লাহ ও রাসূলের কথার ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান (প্রশ্ন ৩০-৩২)+
৩০। প্রশ্ন : আমরা আল্লাহ এবং তার রাসূলের কথার ওপর কারো কোন কথাকে অগ্রাধিকার দেব কি? ৩০। উত্তর : আমরা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের কথার ওপর কারো কোন কথা অগ্রাধিকার দেব না।

َيأَيُّهَا الَْذِيْنَ آمَنُوْا لاَ تُقَدِّمُوْا بَيْنَ يَدَيِ اللهِ وَرَسُوْلِهِ

"হে মু'মিনগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সামনে তোমরা কোন বিষয়ে আগে বেড়ে যেও না।" (সূরা আল-হুজুরাত : ১)

৩১। প্রশ্ন : দ্বীনের ক্ষেত্রে মতবিরোধ হলে আমাদের করণীয় কি? ৩১। উত্তর : আমরা কুরআন ও সহীহ হাদীসের আশ্রয় গ্রহণ করব।

فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِيْ شَيْءٍ فَرُدُّوْهَ إِلَى اللهِ وَالرَّسُوْلِ...

"কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে উপস্থাপিত কর..." (সূরা আননিসা : ৫৯)

৩২। প্রশ্ন : কেউ যদি মনে করে তার প্রতি শরীয়তের আদেশ-নিষেধ রক্ষা করা জরুরী নয়, তবে তার বিধান কি? ৩২। উত্তর : উক্ত ব্যক্তি কাফের, মুরতাদ এবং মিল্লাতে ইসলাম বহির্ভুত। কারণ, আল্লাহর নাজিলকৃত বিধানের বাইরে হালাল-হারাম সাব্যস্ত করা সরাসরি শিরকের অন্তর্ভূক্ত।
বিভাগ ১১: কবর যিয়ারত ও তার আদব (প্রশ্ন ৩৩)+
৩৩। প্রশ্ন : কবর যিয়ারতের বিধান কি? এবং আমরা কেন কবর যিয়ারত করি? ৩৩। উত্তর : মহিলা ব্যতীত শুধু পুরুষের জন্য কবর যিয়ারত সাধারণত মুস্তাহাব। এর উপকারীতা হলো মৃত্যুর কথা স্বরণ হয়।

কবর যিয়ারতের কতিপয় আদব

  1. জিয়ারতকারীর জন্য কবর যিয়ারত উপদেশ ও নসীহত স্বরূপ।
  2. আমরা কবরস্থানে গিয়ে মৃতদের জন্য এস্তেগফার করব, ক্ষমা চাইব।
  3. কবরের ওপর বসা ও তার দিক ফিরে নামায পড়া নিষেধ।
  4. কবরস্থানে কোরআন মজীদ এমনকি সূরা ফাতেহাও পড়া যাবে না।
  5. কবরে বা মাজারে পুষ্পমাল্য বা ফুল অর্পণ করা যাবে না (এটি খৃষ্টানদের কালচার)।
  6. কবর প্লাষ্টার, পেইন্ট ও উঁচু করা এবং কবরে নির্মাণ কার্য করা নিষেধ।
  7. মৃত ব্যক্তির নিকট দুআ চাওয়া ও তাদের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা শিরকে আকবরের অন্তর্ভুক্ত।
বিভাগ ১২: কবরে সিজদা ও তাওয়াফ (প্রশ্ন ৩৪-৩৫)+
৩৪। প্রশ্ন : কবরে সিজদা ও সেখানে জবেহ্ করার বিধান কি? ৩৪। উত্তর : কবরে সিজদা ও পশু জবেহ করা জাহেলী যুগের মুর্তিপুজা তুল্য এবং বড় শিরক।

قُلْ إِنَّ صَلاَتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَا وَمَمَاتِيْ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ

"বল, নিশ্চয় আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মৃত্যু, জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য নিবেদিত।" (সূরা আল-আন্ আম : ১৬২)

৩৫। প্রশ্ন : অলীদের কবরের চারিপার্শ্বে তাওয়াফ করার বিধান কি? অলীদের উদ্দেশ্যে পশু উৎসর্গ বা জবেহ করা অথবা মান্নত করার বিধান কি? ইসলামের দৃষ্টিতে জীবিত বা মৃত অলীদের নিকট দুআ প্রার্থনা কি জায়েয? ৩৫। উত্তর : মৃত অলীদের উদ্দেশ্যে পশু উৎসর্গ বা জবেহ করা ও মান্নত করা **শিরকে আকবর**। কবরের চতুর্পাশে তাওয়াফ করা জায়েয নয়, তা একমাত্র কা'বা শরীফের বৈশিষ্ট।
বিভাগ ১৩: আল্লাহর পথে দাওয়াত ও শেষ মাসয়ালা (প্রশ্ন ৩৬-৩৮)+
৩৬। প্রশ্ন : আল্লাহর পথে দাওয়াত এবং ইসলামের জন্য কাজ করার বিধান কি? ৩৬। উত্তর : আল্লাহর পথে দাওয়াত দেয়া প্রত্যেক মুসলিমের দায়িত্ব।

اُدْعُ إِلَى سَبِيْلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ

"তুমি তোমার রবের পথে হিকমত ও উত্তম ওয়াজ-নসিহতের মাধ্যমে আহ্বান কর।" (সূরা আন-নাহাল : ১২৫)

৩৭। প্রশ্ন : নবী (ﷺ)-এর কবর বা অন্য নবী এবং সৎ ব্যক্তিদের কবর স্পর্শ করা এমনিভাবে মাকামে ইব্ রাহীম, কাবা ঘরের দেয়াল-গেলাফ এবং দরজা স্পর্শ করার বিধান কি? ৩৮। উত্তর : উলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে, নবী (ﷺ) বা অন্য কোন নবী বা সৎ ব্যক্তিদের কবর যিয়ারত করার সময় **হাত দিয়ে স্পর্শ কিংবা মুখ দিয়ে চুম্বন করা যাবে না**। দুনিয়াতে জড় পদার্থের মধ্যে **হজরে আসওয়াদ (কালো পাথর) ব্যতীত কোন বস্তু চুম্বন দেয়া বৈধ নয়**।

মাকামে ইব্রাহীম চুম্বন ও স্পর্শ করা যাবে না, এটা বিদআত। কাবা শরীফের **রুকনে ইয়ামানীকে শুধু হাত দিয়ে স্পর্শ** এবং **হজরে আসওয়াদকে মুখ দিয়ে চুম্বন ও হাত দিয়ে স্পর্শ** করা যাবে। অবশিষ্ট দুই কোণ বা কাবার অন্য কোন অংশ স্পর্শ করা যাবে না।

Post a Comment

0 Comments