ইসলামী আকীদা বিষয়ক কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা
সম্পাদনা : সানাউল্লাহ নজির আহমদ | সূত্র : ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
মোট ৩৭ টি প্রশ্ন-উত্তর
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
وَمَا خَلَقْتُ الَجِنَّ وَالإِنْسَ إِلاَّ لِيَعْبُدُوْنِ
"আমি জ্বিন এবং মানব জাতি এজন্য সৃষ্টি করেছি যে, তারা শুধু আমার ইবাদত করবে।" (সূরা আজ-জারিয়াত : ৫৬)
রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেন : "বান্দার উপর আল্লাহর হক হচ্ছে, তারা তাঁর ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না।" (বুখারী ও মুসলিম)
قُلْ إِنَّ صَلاَتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَا وَمَمَاتِيْ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
"বলুন : আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও মরণ বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য।" (সূরা আল-আন'আম : ৬২)
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন : আল্লাহ তাআলা বলেছেন : "আমি আমার বান্দার উপর যা ফরজ করেছি, তার চেয়ে অধিক প্রিয় কোনো জিনিসের মাধ্যমে বান্দা আমার সান্নিধ্য লাভ করতে পারেনি। আর আমার বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে।" (হাদীসে ক্বদসী - বুখারী)
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِيْ كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُوْلاً أَنِ اعْبُدُوْا اللهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوْتَ
"আমি প্রত্যেক জাতির কাছে রাসূল পাঠিয়েছি এই জন্য যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করবে এবং 'ত্বাগুত" বর্জন করবে।" (সূরা আন-নাহাল : ৩৬)
**ত্বাগুত :** আল্লাহ ব্যতীত মানুষ সেচ্ছায়-সন্তুষ্টি চিত্তে যার ইবাদত করে, যাকে আহ্বান করে সেই ত্বাগুত।
اَلْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
অর্থ : "সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য।" (সূরা আল-ফাতেহা : ২)
وَإِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَّاحِدٌ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيْمُ
অর্থ : "আর তোমাদের ইলাহ একজন-ই, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই, তিনি দয়াময় অতি দয়ালু।" (সূরা আল-বাকারাহ্ : ১৬৩)
لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ
"কোন কিছুই তাঁর সাদৃশ্য নয়, তিনি সর্ব শ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।" (সূরা আশ-শুরা : ১১)
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন : "আমাদের রব পৃথিবীর আকাশে প্রত্যেক রাতে অবতরণ করেন।" (বুখারী - মুসলিম)
وَإِذْ قَالَ لُقْمَانُ لِابْنِهِ وَهُوَ يَعِظُهُ يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ
"আর যখন লোকমান তার পুত্রকে বলল, হে বৎস ! আল্লাহর সাথে শরীক করো না, নিশ্চয় শিরক বড় জুলুম।" (সূরা লোকমান : ১৩)
وَلاَ تَدْعُ مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لاَ يَنْفَعُكَ وَلاَ يَضُرُّكَ فَإِنْ فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِّنَ الظَّالِمِيْنَ
"আর আল্লাহ ব্যতীত অন্য এমন কাউকে ডাকবেনা যে তোমার উপকারও করে না, ক্ষতিও করে না, আর যদি তুমি তা কর তবে অবশ্যই জালিমদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে।" (সূরা ইউনুস : ১০৬)
إِنَّهُ مَنْ يُّشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأوَاهُ النَّارَ وَمَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ أَنْصَارٍ
"যে কেউ আল্লাহর সাথে শরীক করবে আল্লাহ তার ওপর জান্নাত অবশ্যই হারাম করবেন, এবং তার ঠিকানা জাহান্নাম, আর জালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।" (সূরা আল মায়েদা : ৭২)
وَلَوْ أَشْرَكُوْا لَحَبِطَ عَنْهُمَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
"তারা যদি শিরক করত তবে তাদের সমস্তকৃতকর্ম নষ্ট হয়ে যেত।" (সূরা আল-আন্ আম : ৮৮)
وَالَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ لَا يَخْلُقُونَ شَيْئًا وَهُمْ يُخْلَقُونَ ﴿২০﴾ أَمْوَاتٌ غَيْرُ أَحْيَاءٍ وَمَا يَشْعُرُونَ أَيَّانَ يُبْعَثُونَ ﴿২১﴾
"তারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য যাদেরকে ডাকে তারা কিছুই সৃষ্টি করে না বরং তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়। তারা নিষ্প্রাণ, নির্জীব এবং কখন তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে সে বিষয়ে তাদের কোন চেতনা নেই।" (সূরা আন-নাহাল : ২০-২১)
فَاسْتَغَاثَهُ الَّذِيْ مِنْ شِيْعَتِهِ عَلَى الَّذِيْ مِنْ عَدُوِّهِ فَوَكَزَهُ مُوْسَى فَقَضَى عَلَيْهِ
"মুসার দলের লোকটি তার শত্রুর বিরুদ্ধে তাঁর সাহায্য কামনা করল, তখন মুসা তাকে ঘুষি মারল, যার ফলে সে মরে গেল।" (সূরা আল-কাসাস : ১৫)
إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِيْنَ
"আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি, শুধু তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।" (সূরা আল-ফাতেহা : ৫)
وَتَعَاوَنُوْا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى
"সৎকর্ম ও আল্লাহ ভীতিতে তোমরা পরস্পর সাহায্য করবে।" (সূরা আল -মায়েদাহ্ : ২)
رَبِّ إِنِّيْ نَذَرْتُ لَكَ مَا فِيْ بَطْنِيْ مُحَرَّراً
"হে আমার প্রতিপালক ! আমার গর্ভে যা আছে তা একান্ত তোমার জন্য আমি উৎসর্গ করলাম।" (সূরা আলে-ইমরান : ৩৫)
وَلَكِنَّ الشَّيَاطِيْنَ كَفَرُوْا يُعَلِّمُوْنَ النَّاسَ السِّحْرَ
"বরং শয়তানরাই কুফরী করেছিল, তারা মানুষকে জাদু শিক্ষা দিত।" (সূরা আল-বাকারা : ১০২)
ইসলামি বিধান মোতাবেক জাদুকরকে তার কৃতকর্মের শাস্তি স্বরূপ হত্যা করা ওয়াজিব।
قُلْ لاَ يَعْلَمُ مَنْ فِيْ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ الْغَْبَ إِلاَّ اللهُ
"বল, আল্লাহ ব্যতীত গায়েব বা অদৃশ্যের খবর আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে কেউ রাখে না।" (সূরা আন-নামল : ৬৫)
فَمَنْ كَانَ يَرْجُوْ لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلاً صَالْحاً وَلاَ يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَداً
"...সুতরাং যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে ও তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরীক না করে।" (সূরা আল-কাহ্ ফ : ১১০)
রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেন: "যে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে শপথ করল সে অবশ্যই শিরক করল।" (মুসনাদে আহ্ মাদ)
وَإِنْ يَّمْسَسْكَ اللهُ بِضُرٍّ فَلاَ كَاشِفَ لَهُ إِلاَّ هُوَ
"আর আল্লাহ যদি তোমাকে কোন কষ্ট দেন, তবে তিনি ব্যতীত তা মোচনকারী আর কেউ নেই..." (সূরা আল আন্ আম : ১৭)
(১) বৈধ ও পালনীয় অসীলা
- (ক) আল্লাহ তাআলার নাম ও গুনাবলির মাধ্যমে।
- (খ) সৎ কর্মের মাধ্যমে।
- (গ) জীবিত সৎ ব্যক্তিদের দুআর মাধ্যমে।
وَلِلَّهِ الأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوْهُ بِهَا
"আল্লাহর জন্য রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম, অতএব তোমরা তাঁকে সেই সব নামেই ডাকবে।" (সূরা আল আ'রাফ : ১৮০)
(২) অবৈধ অসীলা গ্রহণের রূপ
মৃত ব্যক্তির নিকট প্রার্থনা, তাঁর নিকট প্রয়োজনীয় বস্তু চাওয়া। এটি বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর মর্যাদার অসীলা গ্রহণ করাও চিন্তার বিষয়।
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِيْ عَنِّيْ فَإِنِّيْ قَرِيْبٌ
"আমার বান্দাগণ যখন তোমাকে আমার সম্মন্ধে প্রশ্ন করে, আমি তো নিকটেই।" (সূরা আল-বাকারা : ১৮৬)
وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِيْنِ وَالْمُؤْمِنَاتِ
"আর ক্ষমা প্রার্থনা কর তোমার এবং মু'মিন নর-নারীদের পাপের জন্য।" (সূরা মুহাম্মাদ : ১৯)
قَلْ لِلَّهِ الشَّفَاعَةُ جَمِيْعاً
"বল, সকল সুপারিশ আল্লাহরই ইখতিয়ারে..." (সূরা যুমার : ৪৪)
مَنْ يَّشْقَعْ شَفَاعَةً حَسَنَةُ يَكُنْ لَّهُ نَصِيْبٌ مِّنْهَا...
"কেউ কোন ভাল কাজের সুপারিশ করলে তাতে তার অংশ থাকবে..." (সূরা আন-নিসা : ৮৫)
- **আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নিকট প্রার্থনা:** যা বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত।
- **আল্লাহ স্বীয় স্বত্ত্বায় সর্বস্থানে বিরাজমান বিশ্বাস:** যা কুরআন বিরোধী। আল্লাহ 'আরশে' সমাসীন।
- **আল্লাহ তাঁর সৃষ্টি জীবের ভিতরে অবতরণ করেন বিশ্বাস (ইব্ নে আরাবীর উক্তি):** ভ্রান্ত আকীদা।
- **আল্লাহ মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর জন্য দুনিয়া সৃষ্টি করেছেন ধারণা:** কুরআন বিরোধী।
- **অলী-আউলিয়ার নামে মান্নত, কবরের চারিপাশে তওয়াফ, জিকিরের সময় নাচা-নাচি, গাঁজা সেবন** ইত্যাদি ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপ।
َيأَيُّهَا الَْذِيْنَ آمَنُوْا لاَ تُقَدِّمُوْا بَيْنَ يَدَيِ اللهِ وَرَسُوْلِهِ
"হে মু'মিনগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সামনে তোমরা কোন বিষয়ে আগে বেড়ে যেও না।" (সূরা আল-হুজুরাত : ১)
فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِيْ شَيْءٍ فَرُدُّوْهَ إِلَى اللهِ وَالرَّسُوْلِ...
"কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে উপস্থাপিত কর..." (সূরা আননিসা : ৫৯)
কবর যিয়ারতের কতিপয় আদব
- জিয়ারতকারীর জন্য কবর যিয়ারত উপদেশ ও নসীহত স্বরূপ।
- আমরা কবরস্থানে গিয়ে মৃতদের জন্য এস্তেগফার করব, ক্ষমা চাইব।
- কবরের ওপর বসা ও তার দিক ফিরে নামায পড়া নিষেধ।
- কবরস্থানে কোরআন মজীদ এমনকি সূরা ফাতেহাও পড়া যাবে না।
- কবরে বা মাজারে পুষ্পমাল্য বা ফুল অর্পণ করা যাবে না (এটি খৃষ্টানদের কালচার)।
- কবর প্লাষ্টার, পেইন্ট ও উঁচু করা এবং কবরে নির্মাণ কার্য করা নিষেধ।
- মৃত ব্যক্তির নিকট দুআ চাওয়া ও তাদের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা শিরকে আকবরের অন্তর্ভুক্ত।
قُلْ إِنَّ صَلاَتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَا وَمَمَاتِيْ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
"বল, নিশ্চয় আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মৃত্যু, জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য নিবেদিত।" (সূরা আল-আন্ আম : ১৬২)
اُدْعُ إِلَى سَبِيْلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ
"তুমি তোমার রবের পথে হিকমত ও উত্তম ওয়াজ-নসিহতের মাধ্যমে আহ্বান কর।" (সূরা আন-নাহাল : ১২৫)
মাকামে ইব্রাহীম চুম্বন ও স্পর্শ করা যাবে না, এটা বিদআত। কাবা শরীফের **রুকনে ইয়ামানীকে শুধু হাত দিয়ে স্পর্শ** এবং **হজরে আসওয়াদকে মুখ দিয়ে চুম্বন ও হাত দিয়ে স্পর্শ** করা যাবে। অবশিষ্ট দুই কোণ বা কাবার অন্য কোন অংশ স্পর্শ করা যাবে না।


0 Comments