পথভ্রষ্ট সেলেব্রিটি বক্তাঃ ইয়াসির ক্বাদী-----------------------
----------------------------
আজকাল অনেক নারী ও পুরুষেরা দ্বীন শেখার জন্যে বিদাতী কিংবা মনপূজারী কিন্তু জনপ্রিয়, এমন বক্তাদের কথা শুনে বা তাদের লেখা পড়ে। আর তারা বলেঃ আমরা মানুষের ভালোটা নেই আর খারাপটা বর্জন করি। অথচ, বিদাতপন্থী লোকদের কাছ থেকে দ্বীন শিক্ষা করা, তাদের সাথে উঠা-বসা করা, তাদের কথা শোনা, তাদের সাথে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হওয়া অত্যন্ত বিপদজনক একটি বিষয়। কারণ বিদাতীরা অনেক সময় এমন কথা বলে, যা শুনতে আপাতদৃষ্টিতে যৌক্তিক বা সঠিক বলে মনে হয়, কিন্তু শরিয়তের দৃষ্টিতে আসলে তা ভুল বা গোমরাহী। এমন চাকচিক্যময়, আকর্ষণীয় কথা বা লেখার দ্বারা তারা প্রায়ই সাধারণ মুসলমানদেরকে বিদাত/গোমরাহীর দিকে আহবান করে, বা লোকদের অন্তরকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে। এইভাবে, ইলমের অভাবে অনেক সৎ মুসলিমরাও বিদাতীদের ছলনায় পড়ে সরল পথ থেকে গোমরাহ হয়ে যায়। এ ব্যপারে পূর্ববর্তী আলেমরা আমাদেরকে খুব সতর্ক করেছেন।
(ক) ফুযাইল ইবনে আইয়ায রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “তুমি কোন আহলুল বিদআ’হর লোকের সাথে বসবেনা। আমি ভয় করি যে, তুমি যদি কোন বিদআ’তির সাথে বসো, তাহলে আল্লাহর অভিশাপ তোমার উপরেও আসবে।” ইমাম আল-বারবাহারী, শরাহুস সুন্নাহ।
(খ) ইমাম সুফিয়ান আস-সাউরি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি একজন বিদআ’তির কথা শ্রবণ করে, সে আল্লাহর হেফাজত থেকে নিজেকে বের করে নিলো, এবং তাকে তার উপরেই ছেড়ে দেওয়া হবে।” ইমাম আল-বারবাহারী, শরাহুস সুন্নাহ।
(গ) ইমাম আল-বারবাহারি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “কোন বাক্তির মাঝে বিদআ’ত প্রকাশ পেলে, তুমি তার কাছ থেকে সাবধান থেকো। কেননা, সে যা প্রকাশ করে, তা অপেক্ষা সে যা গোপন করে তা অনেক বেশী ভয়ংকর।” ইমাম আল-বারবাহারী, শরাহুস সুন্নাহ।
ইমাম আল-বারবাহারি রাহিমাহুল্লাহ আরো বলেছেন, “বিদআ’তিরা হচ্ছে বিছার মত। বিছা নিজের মাথা ও সারা দেহকে মাটিতে লুকিয়ে রাখে এবং কেবল হুলটিকে বের করে রাখে। অতঃপর যখনই সুযোগ পায়, তখনই হুল দিয়ে আঘাত করে। অনুরূপ, বিদআ’তি লোকেরা নিজেদের বিদআ’তকে লুকিয়ে রাখে। কিন্তু যখন সুযোগ পায়, তখন নিজেদের ইচ্ছা পূরণ করে।” তাবাকাতুল হানাবিলাহঃ ২/৪৪।
(ঘ) শায়খ সালেহ আল-ফাউজান হা’ফিজাহুল্লাহ বলেছেন, “বিদাত সেটা ছোট হোক কিংবা বড়, তুমি কোনটাকে তুচ্ছ মনে করবেনা। কারণ, ছোট্ট একটা ম্যাচের কাঠি থেকে জ্বালানো আগুন দ্বারা বিশাল বড় বনও জ্বালিয়ে শেষ করে দেওয়া যায়। ঠিক তেমনি, ছোট্ট একটা বিদাত যদি কারো অন্তরে প্রবেশ করে, আস্তে আস্তে সেটা একজন ব্যক্তির সমগ্র দ্বীনকে নষ্ট করে দিতে পারে।”
(২)
বিদাতীরা কিন্তু কাফের নয় বিদাতীরা মুসলমান, কিন্তু মনগড়া ইবাদত করার কারণে বা দ্বীনের ব্যপারে বানোয়াট কথা বলার কারণে তারা পাপী, পথভ্রষ্ট; যদিওবা তারা নামায পড়ে, রোযা রাখে, কুরআন ও হাদীস নিয়ে অনেক বড় বড় কথা বলে। আমাদের আলেমদের দৃষ্টিতে মুসলমান কিন্তু বিদাতী, এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে দ্বীন শেখা যদি এতো মারাত্মক বিষয় হয়, তাহলে চিন্তা করুনঃ একজন ইয়াহুদী বা খ্রীস্টান, একজন কাফের, কিংবা একজন নাস্তিকের কাছ থেকে কেউ যদি ইসলাম শিখতে যায়, দ্বীনের কোন বিষয়ে ডিগ্রী নিতে যায়, তাহলে তার ঈমান-আকিদাহর কি মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে? কারণ, কাফেররা কোনদিন মুসলমানদের ভালো চায়না। কাফেররা ইসলামের উপরে ডিগ্রী দিচ্ছে, তার মানে এর পেছনে তাদের বিশেষ কোন উদ্দেশ্য আছে। যদিও তারা মুখে দাবী করে, আমরা ইসলামের উপরে ডিগ্রী দিচ্ছি, কিন্তু এর দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের অধীনে অধ্যায়নরত ছাত্র-ছাত্রীদেরকে দ্বীন থেকে বিচ্যুত করা। এটা কাফেরদের মজ্জাগত স্বভাব, যে ব্যপারে আল্লাহ তাআ’আলা কুরআনে আমাদেরকে সাবধান করেছেন।
আল্লাহ তাআ’লা বলেন “হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের আপনজন (মুসলিম) ব্যতীত অন্য কাউকে (কোন কাফের ব্যক্তিকে) অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা (কাফেরা) তোমাদের অনিষ্ট সাধনে চেষ্টার কোন ত্রুটি করবে না। তোমরা যাতে বিপদে পড়ো, তারা সেটাই কামনা করে। তাদের মুখে সেই বিদ্বেষ প্রকাশ পায় এবং যা তারা তাদের অন্তরে গোপন করে রাখে, সেটা আরও ভয়ংকর। আমি তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করছি, যাতে তোমরা বুঝতে পারো।” সুরা আলে-ইমরানঃ ১১৮।
.
কাফেরদের এমনই একটা ষড়যন্ত্র হচ্ছেঃ তারা তাদের কলেজ ইউনিভার্সিটিগুলোতে ইসলামী বিষয়ে অনার্স, মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রী দেয়। কাফেরদের ষড়যন্ত্রের কথা জেনেই হোক বা না জেনেই হোক, কাফের দেশে বসবাসরত অনেক মুসলিম ছেলে-মেয়েরা সেই সমস্ত ডিগ্রী নেওয়ার জন্যে ভর্তি হচ্ছে, যেখানে ইয়াহুদী/খ্রীস্টান, কাফের-মুশরেক, নাস্তিক কিংবা পথভ্রষ্ট মুসলিম বা নামে মুসলিম, কিন্তু অন্তরের দিক থেকে আসলে মুনাফেক. . .এমন লোকেরা শিক্ষা দেয়। এইভাবে দ্বীন শিখতে গিয়ে অনেকেই ভ্রান্ত আকিদাহ গ্রহণ করছে, অনেকে দ্বীনের ব্যপারে সন্দেহের মাঝে পড়ে নাস্তিক (atheist) বা সংশয়বাদী (agnostic) হয়ে যাচ্ছে। এমনই একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে এমেরিকার কানাটিকাটে অবস্থিত ইয়েল ইউনিভার্সিটি, যেখানে ইসলামী আকিদাহর উপরে গবেষণা ও পিএইচডি ডিগ্রী চালু রয়েছে। অনেকে দ্বীন শিখার জন্যে নির্ভরযোগ্য ও সৎ আলেমদের কাছে না গিয়ে, সহীহ আকিদাহর অনুসারী মাদ্রাসায় ভর্তি না হয়ে, উন্নত জীবন-যাপনের সুবিধা পাওয়ার জন্যে, কাফেরদের কাছ থেকে ডিগ্রী পাওয়ার লোভে কাফেরদের দ্বারা পরিচালিত সেই সমস্ত ইউনিভার্সিটিতে দ্বীন শিখতে বা দ্বীন নিয়ে গবেষণা করতে যাচ্ছে। সেখানে কাফেররা ইসলামের যেই সমস্ত বিষয় নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে বা প্রশ্ন তুলে, সেই সমস্ত বিষয় দ্বারা তারা তাদের ছাত্রদের অন্তরে কুফুরী ও মুনাফেকীর বিষ ঢুকিয়ে দিচ্ছে। কাফেরদের শুবুহাত (সন্দেহ) বা প্রশ্নের সঠিক উত্তর না জানার কারণে সেই সমস্ত ছাত্রদের অনেকে কাফের বা সংশয়বাদী হয়ে যাচ্ছে, অথবা কাফেরদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তারা ইসলামকেই পরিবর্তন করে ফেলছে।
এতক্ষণ আমি যা বললাম তার প্রমান দেখুনঃ নীচের এই ভিডিওতে ইয়েল ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রী নেওয়া, একসময়ের পীস টিভি বক্তা ডা. ইয়াসির ক্বাদী নিজের মুখে স্বীকার করছেঃ তার ইউনিভার্সিটিতে ইসলামী বিষয় পড়তে গিয়ে অনেক মুসলিম নাস্তিক বা এগনস্টিক হয়ে গেছে, অনেকে দ্বীনের মৌলিক বিষয়কে অস্বীকার করছে, যা তাদেরকে কাফের বানিয়ে দেওয়ার জন্যে যথেষ্ঠ। এমনকি খোদ ইয়াসির ক্বাদীও এমন কিছু শুবুহাত (দ্বীনের ব্যপারে সন্দেহের) শিকার হয়েছেন যে, সেইগুলোর উত্তর তিনি জানেন না।
সতর্কতাঃ ভিডিওটাতে পর্দার লংঘন করে একজন মহিলাকে উপস্থাপন করা হয়েছে। সেজন্যে ভাইয়েরা এই ভিডিওটা অন করার সময় অন্য ট্যাব অন করে রাখবেন, অথবা ব্রাউজার মিনিমাইজ করে রাখবেন, যাতে করে বেপর্দা মেয়ে মানুষকে দেখতে না হয়। নারীদের অসংগতভাবে প্রদর্শন করার দোষ আসলে তাদের যারা অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছে, এবং বক্তা সাহেবের, যারা দ্বীনের নির্দেশনা অমান্য করে দ্বীন প্রচার করতে চায়। কোন নারীর ভিডিও প্রচার করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা আমার নেই, আমি ভিডিওটার লিংকটা দিয়েছে যাতে করে ডা. ইয়াসির ক্বাদীর ভক্ত নারী ও পুরুষের এই অভিযোগ করতে না পারে যে, আমি তাদের উস্তাদের নামে মিথ্যা রচনা করছি।
https://www.youtube.com/watch?v=drYvaxpejpI
.
যাই হোক প্রশ্ন আসতে পারে, ইয়াসির ক্বাদী নিজে স্বীকার করেছেন, ইয়েলের মতো ওয়েস্টার্ণ ইউনিভার্সিটিগুলোতে পড়ে অনেকে পথভ্রষ্ট হয়েছে, অনেকে দ্বীনকে পরিবর্তন করেছে, কিন্তু ইয়াসির ক্বাদী, তার নিজের কি অবস্থা?
সত্যি কথা হচ্ছে, ইয়াসির ক্বাদী নিজেও কাফেরদের শুবুহাতের স্বীকার হয়েছেন, কাফেরদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তিনি নিজেও তার আকিদাহ, তার দ্বীনকে পরিবর্তন করেছেন। একারণে, আমরা দেখতে পাই, মদীনাহ থেকে পড়া-শোনার পরে তার প্যান্ট ছিলো টাখনুর উপরে, আর এখন তার কাপড় সব সময়ে টাখনুর নীচে। পূর্বে তিনি মানুষকে কিতাবুত তাওহীদ শিক্ষা দিতেন, ঈমান-আকিদাহ শিক্ষা দিতেন আর এখন তিনি রাজনীতি, সামাজিক সমস্যা, বিদাতীদের সাথে বন্ধুত্ব, কাফেরদের প্রশংসা ও তাদের প্রতি মহব্বত রাখা, বেহায়া নারী ও পুরুষদেরকে পাবলিকলি যৌন শিক্ষা(!) দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন. . .আল্লাহু মুস্তাআ’ন।
যাই হোক, এতো গেলো, বাইরের বিষয় সমূহ...এমনকি ইয়াসির ক্বাদীর ঈমান-আকিদাহর বিষয়েও পরিবর্তন এসেছে। ইয়াসির ক্বাদীর অন্তরে কুফুরী প্রবেশ করেছে, যা তিনি নিজে স্বীকার করেছেন। এমনকি, ইয়াসির ক্বাদী তার কুফুরী বিশ্বাস গোপনে অন্যদেরকেও শিক্ষা দিচ্ছেন, যা তিনি পাবলিকলি তার শ্রোতাদেরকে এই মুহূর্তে জানতে দিতে চান না। কারণ, মানুষ যদি এখন বুঝতে পারে যে, তার কুফুরী আকিদাহ রয়েছে, লোকেরা তার কথা আর শুনবেনা।
এ ব্যপারে ইয়াসির ক্বাদীর বক্তব্য এবং সেইগুলো নিয়ে ডিটেইলস আলোচনা করেছে ইমরান বিন মানসুর নামে একজন ব্যক্তি। লিংক –
What Happens BEHIND The Scenes In The Da'wah Scene!!!
https://www.youtube.com/watch?v=Gpm2M2VZ7qA
.
ইমরান বিন মানসুর কোন আলেম নয়, এমনকি তার কথা ও বক্তব্যের উপস্থাপন ত্রুটিপূর্ণ। আমি আপনাদেরকে ইমরানের অন্য কোন ভিডিও দেখার জন্যে আহবান করবোনা। তবে, এই ভিডিওটাতে সে ইয়াসির ক্বাদী সম্পর্কে কিছু কথা একত্রিত করে সে সম্পর্কে কিছু সত্যি কথা তুলে ধরেছে। আশা করি যারা ইয়াসির ক্বাদীর কথার দ্বারা বিভ্রান্তির শিকার হয়ে আছেন, এগুলো তাদের হক্ক বুঝতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে, ইন শা আল্লাহ।
আপনাদের কেউ মনে করবেন না, ইমরান বিন মানসুর হঠাত করে ইয়াসীর ক্বাদী সম্পর্কে এই কথাগুলো বলছেন। বরং, বিগত ৭-৮ বছর ধরে ইয়াসির ক্বাদীর বিভ্রান্তিকর কথা থেকে অনেক আগেই বিষয়টি পরিষ্কার ছিলো, ইয়াসীর ক্বাদী তার দ্বীনকে পরিবর্তন করে ফেলছে, মদীনা থেকে শিখা ইসলামকে ছুড়ে ফেলে সে নিজে নিজে ইসলামের নতুন রূপ দিতে চাচ্ছে। ইয়াসীর ক্বাদী সম্পর্কে আরো ভালো ধারণা পাবেন উস্তায আবু মুসসাব ওয়াজদি আল আক্বিরি হাফিযাহুল্লাহর লেকচারটি শুনলে ইন শা আল্লাহ!
লিংক-Why Are You Doing This to the Muslims? | Abu Mussab Wajdi Akkari
https://www.youtube.com/watch?v=d6ux72MnP-s
.
সর্বশেষ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম-এর গুরুত্বপূর্ণ একটি হাদীস দিয়ে আজকের মতো এখানেই শেষ করছিঃ “মানুষের মাঝে অচিরেই এমন এক সময় আসবে যখন ধোঁকাবাজি বাড়বে, তখন মিথ্যাবাদীকে সত্যবাদী মনে করা হবে আর সত্যবাদীকেই মিথ্যাবাদী মনে করা হবে, আমানতদারকে খিয়ানতকারী মনে করা হবে আর খিয়ানতকারীকেই আমানতদার মনে করা হবে, আর ‘রুয়াইবিদা’রা কথা বলবে। জিজ্ঞাস করা হলো, ‘রুয়াইবিদা’ কারা? তিনি বললেন, সাধারণ মানুষের কর্মকান্ডে হস্তক্ষেপ করে (নীচু মানের, ফালতু) এমন ব্যক্তি।”
ত্বাবারানি, কিতাবুল ফিতান, বাব সিদ্দাতুয যামনঃ ২/৩২৬১।
প্রচারে--আহলুস সুন্নাহ ব্লগ
আজকাল অনেক নারী ও পুরুষেরা দ্বীন শেখার জন্যে বিদাতী কিংবা মনপূজারী কিন্তু জনপ্রিয়, এমন বক্তাদের কথা শুনে বা তাদের লেখা পড়ে। আর তারা বলেঃ আমরা মানুষের ভালোটা নেই আর খারাপটা বর্জন করি। অথচ, বিদাতপন্থী লোকদের কাছ থেকে দ্বীন শিক্ষা করা, তাদের সাথে উঠা-বসা করা, তাদের কথা শোনা, তাদের সাথে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হওয়া অত্যন্ত বিপদজনক একটি বিষয়। কারণ বিদাতীরা অনেক সময় এমন কথা বলে, যা শুনতে আপাতদৃষ্টিতে যৌক্তিক বা সঠিক বলে মনে হয়, কিন্তু শরিয়তের দৃষ্টিতে আসলে তা ভুল বা গোমরাহী। এমন চাকচিক্যময়, আকর্ষণীয় কথা বা লেখার দ্বারা তারা প্রায়ই সাধারণ মুসলমানদেরকে বিদাত/গোমরাহীর দিকে আহবান করে, বা লোকদের অন্তরকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে। এইভাবে, ইলমের অভাবে অনেক সৎ মুসলিমরাও বিদাতীদের ছলনায় পড়ে সরল পথ থেকে গোমরাহ হয়ে যায়। এ ব্যপারে পূর্ববর্তী আলেমরা আমাদেরকে খুব সতর্ক করেছেন।
(ক) ফুযাইল ইবনে আইয়ায রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “তুমি কোন আহলুল বিদআ’হর লোকের সাথে বসবেনা। আমি ভয় করি যে, তুমি যদি কোন বিদআ’তির সাথে বসো, তাহলে আল্লাহর অভিশাপ তোমার উপরেও আসবে।” ইমাম আল-বারবাহারী, শরাহুস সুন্নাহ।
(খ) ইমাম সুফিয়ান আস-সাউরি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি একজন বিদআ’তির কথা শ্রবণ করে, সে আল্লাহর হেফাজত থেকে নিজেকে বের করে নিলো, এবং তাকে তার উপরেই ছেড়ে দেওয়া হবে।” ইমাম আল-বারবাহারী, শরাহুস সুন্নাহ।
(গ) ইমাম আল-বারবাহারি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “কোন বাক্তির মাঝে বিদআ’ত প্রকাশ পেলে, তুমি তার কাছ থেকে সাবধান থেকো। কেননা, সে যা প্রকাশ করে, তা অপেক্ষা সে যা গোপন করে তা অনেক বেশী ভয়ংকর।” ইমাম আল-বারবাহারী, শরাহুস সুন্নাহ।
ইমাম আল-বারবাহারি রাহিমাহুল্লাহ আরো বলেছেন, “বিদআ’তিরা হচ্ছে বিছার মত। বিছা নিজের মাথা ও সারা দেহকে মাটিতে লুকিয়ে রাখে এবং কেবল হুলটিকে বের করে রাখে। অতঃপর যখনই সুযোগ পায়, তখনই হুল দিয়ে আঘাত করে। অনুরূপ, বিদআ’তি লোকেরা নিজেদের বিদআ’তকে লুকিয়ে রাখে। কিন্তু যখন সুযোগ পায়, তখন নিজেদের ইচ্ছা পূরণ করে।” তাবাকাতুল হানাবিলাহঃ ২/৪৪।
(ঘ) শায়খ সালেহ আল-ফাউজান হা’ফিজাহুল্লাহ বলেছেন, “বিদাত সেটা ছোট হোক কিংবা বড়, তুমি কোনটাকে তুচ্ছ মনে করবেনা। কারণ, ছোট্ট একটা ম্যাচের কাঠি থেকে জ্বালানো আগুন দ্বারা বিশাল বড় বনও জ্বালিয়ে শেষ করে দেওয়া যায়। ঠিক তেমনি, ছোট্ট একটা বিদাত যদি কারো অন্তরে প্রবেশ করে, আস্তে আস্তে সেটা একজন ব্যক্তির সমগ্র দ্বীনকে নষ্ট করে দিতে পারে।”
(২)
বিদাতীরা কিন্তু কাফের নয় বিদাতীরা মুসলমান, কিন্তু মনগড়া ইবাদত করার কারণে বা দ্বীনের ব্যপারে বানোয়াট কথা বলার কারণে তারা পাপী, পথভ্রষ্ট; যদিওবা তারা নামায পড়ে, রোযা রাখে, কুরআন ও হাদীস নিয়ে অনেক বড় বড় কথা বলে। আমাদের আলেমদের দৃষ্টিতে মুসলমান কিন্তু বিদাতী, এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে দ্বীন শেখা যদি এতো মারাত্মক বিষয় হয়, তাহলে চিন্তা করুনঃ একজন ইয়াহুদী বা খ্রীস্টান, একজন কাফের, কিংবা একজন নাস্তিকের কাছ থেকে কেউ যদি ইসলাম শিখতে যায়, দ্বীনের কোন বিষয়ে ডিগ্রী নিতে যায়, তাহলে তার ঈমান-আকিদাহর কি মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে? কারণ, কাফেররা কোনদিন মুসলমানদের ভালো চায়না। কাফেররা ইসলামের উপরে ডিগ্রী দিচ্ছে, তার মানে এর পেছনে তাদের বিশেষ কোন উদ্দেশ্য আছে। যদিও তারা মুখে দাবী করে, আমরা ইসলামের উপরে ডিগ্রী দিচ্ছি, কিন্তু এর দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের অধীনে অধ্যায়নরত ছাত্র-ছাত্রীদেরকে দ্বীন থেকে বিচ্যুত করা। এটা কাফেরদের মজ্জাগত স্বভাব, যে ব্যপারে আল্লাহ তাআ’আলা কুরআনে আমাদেরকে সাবধান করেছেন।
আল্লাহ তাআ’লা বলেন “হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের আপনজন (মুসলিম) ব্যতীত অন্য কাউকে (কোন কাফের ব্যক্তিকে) অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা (কাফেরা) তোমাদের অনিষ্ট সাধনে চেষ্টার কোন ত্রুটি করবে না। তোমরা যাতে বিপদে পড়ো, তারা সেটাই কামনা করে। তাদের মুখে সেই বিদ্বেষ প্রকাশ পায় এবং যা তারা তাদের অন্তরে গোপন করে রাখে, সেটা আরও ভয়ংকর। আমি তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করছি, যাতে তোমরা বুঝতে পারো।” সুরা আলে-ইমরানঃ ১১৮।
.
কাফেরদের এমনই একটা ষড়যন্ত্র হচ্ছেঃ তারা তাদের কলেজ ইউনিভার্সিটিগুলোতে ইসলামী বিষয়ে অনার্স, মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রী দেয়। কাফেরদের ষড়যন্ত্রের কথা জেনেই হোক বা না জেনেই হোক, কাফের দেশে বসবাসরত অনেক মুসলিম ছেলে-মেয়েরা সেই সমস্ত ডিগ্রী নেওয়ার জন্যে ভর্তি হচ্ছে, যেখানে ইয়াহুদী/খ্রীস্টান, কাফের-মুশরেক, নাস্তিক কিংবা পথভ্রষ্ট মুসলিম বা নামে মুসলিম, কিন্তু অন্তরের দিক থেকে আসলে মুনাফেক. . .এমন লোকেরা শিক্ষা দেয়। এইভাবে দ্বীন শিখতে গিয়ে অনেকেই ভ্রান্ত আকিদাহ গ্রহণ করছে, অনেকে দ্বীনের ব্যপারে সন্দেহের মাঝে পড়ে নাস্তিক (atheist) বা সংশয়বাদী (agnostic) হয়ে যাচ্ছে। এমনই একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে এমেরিকার কানাটিকাটে অবস্থিত ইয়েল ইউনিভার্সিটি, যেখানে ইসলামী আকিদাহর উপরে গবেষণা ও পিএইচডি ডিগ্রী চালু রয়েছে। অনেকে দ্বীন শিখার জন্যে নির্ভরযোগ্য ও সৎ আলেমদের কাছে না গিয়ে, সহীহ আকিদাহর অনুসারী মাদ্রাসায় ভর্তি না হয়ে, উন্নত জীবন-যাপনের সুবিধা পাওয়ার জন্যে, কাফেরদের কাছ থেকে ডিগ্রী পাওয়ার লোভে কাফেরদের দ্বারা পরিচালিত সেই সমস্ত ইউনিভার্সিটিতে দ্বীন শিখতে বা দ্বীন নিয়ে গবেষণা করতে যাচ্ছে। সেখানে কাফেররা ইসলামের যেই সমস্ত বিষয় নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে বা প্রশ্ন তুলে, সেই সমস্ত বিষয় দ্বারা তারা তাদের ছাত্রদের অন্তরে কুফুরী ও মুনাফেকীর বিষ ঢুকিয়ে দিচ্ছে। কাফেরদের শুবুহাত (সন্দেহ) বা প্রশ্নের সঠিক উত্তর না জানার কারণে সেই সমস্ত ছাত্রদের অনেকে কাফের বা সংশয়বাদী হয়ে যাচ্ছে, অথবা কাফেরদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তারা ইসলামকেই পরিবর্তন করে ফেলছে।
এতক্ষণ আমি যা বললাম তার প্রমান দেখুনঃ নীচের এই ভিডিওতে ইয়েল ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রী নেওয়া, একসময়ের পীস টিভি বক্তা ডা. ইয়াসির ক্বাদী নিজের মুখে স্বীকার করছেঃ তার ইউনিভার্সিটিতে ইসলামী বিষয় পড়তে গিয়ে অনেক মুসলিম নাস্তিক বা এগনস্টিক হয়ে গেছে, অনেকে দ্বীনের মৌলিক বিষয়কে অস্বীকার করছে, যা তাদেরকে কাফের বানিয়ে দেওয়ার জন্যে যথেষ্ঠ। এমনকি খোদ ইয়াসির ক্বাদীও এমন কিছু শুবুহাত (দ্বীনের ব্যপারে সন্দেহের) শিকার হয়েছেন যে, সেইগুলোর উত্তর তিনি জানেন না।
সতর্কতাঃ ভিডিওটাতে পর্দার লংঘন করে একজন মহিলাকে উপস্থাপন করা হয়েছে। সেজন্যে ভাইয়েরা এই ভিডিওটা অন করার সময় অন্য ট্যাব অন করে রাখবেন, অথবা ব্রাউজার মিনিমাইজ করে রাখবেন, যাতে করে বেপর্দা মেয়ে মানুষকে দেখতে না হয়। নারীদের অসংগতভাবে প্রদর্শন করার দোষ আসলে তাদের যারা অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছে, এবং বক্তা সাহেবের, যারা দ্বীনের নির্দেশনা অমান্য করে দ্বীন প্রচার করতে চায়। কোন নারীর ভিডিও প্রচার করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা আমার নেই, আমি ভিডিওটার লিংকটা দিয়েছে যাতে করে ডা. ইয়াসির ক্বাদীর ভক্ত নারী ও পুরুষের এই অভিযোগ করতে না পারে যে, আমি তাদের উস্তাদের নামে মিথ্যা রচনা করছি।
https://www.youtube.com/watch?v=drYvaxpejpI
.
যাই হোক প্রশ্ন আসতে পারে, ইয়াসির ক্বাদী নিজে স্বীকার করেছেন, ইয়েলের মতো ওয়েস্টার্ণ ইউনিভার্সিটিগুলোতে পড়ে অনেকে পথভ্রষ্ট হয়েছে, অনেকে দ্বীনকে পরিবর্তন করেছে, কিন্তু ইয়াসির ক্বাদী, তার নিজের কি অবস্থা?
সত্যি কথা হচ্ছে, ইয়াসির ক্বাদী নিজেও কাফেরদের শুবুহাতের স্বীকার হয়েছেন, কাফেরদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তিনি নিজেও তার আকিদাহ, তার দ্বীনকে পরিবর্তন করেছেন। একারণে, আমরা দেখতে পাই, মদীনাহ থেকে পড়া-শোনার পরে তার প্যান্ট ছিলো টাখনুর উপরে, আর এখন তার কাপড় সব সময়ে টাখনুর নীচে। পূর্বে তিনি মানুষকে কিতাবুত তাওহীদ শিক্ষা দিতেন, ঈমান-আকিদাহ শিক্ষা দিতেন আর এখন তিনি রাজনীতি, সামাজিক সমস্যা, বিদাতীদের সাথে বন্ধুত্ব, কাফেরদের প্রশংসা ও তাদের প্রতি মহব্বত রাখা, বেহায়া নারী ও পুরুষদেরকে পাবলিকলি যৌন শিক্ষা(!) দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন. . .আল্লাহু মুস্তাআ’ন।
যাই হোক, এতো গেলো, বাইরের বিষয় সমূহ...এমনকি ইয়াসির ক্বাদীর ঈমান-আকিদাহর বিষয়েও পরিবর্তন এসেছে। ইয়াসির ক্বাদীর অন্তরে কুফুরী প্রবেশ করেছে, যা তিনি নিজে স্বীকার করেছেন। এমনকি, ইয়াসির ক্বাদী তার কুফুরী বিশ্বাস গোপনে অন্যদেরকেও শিক্ষা দিচ্ছেন, যা তিনি পাবলিকলি তার শ্রোতাদেরকে এই মুহূর্তে জানতে দিতে চান না। কারণ, মানুষ যদি এখন বুঝতে পারে যে, তার কুফুরী আকিদাহ রয়েছে, লোকেরা তার কথা আর শুনবেনা।
এ ব্যপারে ইয়াসির ক্বাদীর বক্তব্য এবং সেইগুলো নিয়ে ডিটেইলস আলোচনা করেছে ইমরান বিন মানসুর নামে একজন ব্যক্তি। লিংক –
What Happens BEHIND The Scenes In The Da'wah Scene!!!
https://www.youtube.com/watch?v=Gpm2M2VZ7qA
.
ইমরান বিন মানসুর কোন আলেম নয়, এমনকি তার কথা ও বক্তব্যের উপস্থাপন ত্রুটিপূর্ণ। আমি আপনাদেরকে ইমরানের অন্য কোন ভিডিও দেখার জন্যে আহবান করবোনা। তবে, এই ভিডিওটাতে সে ইয়াসির ক্বাদী সম্পর্কে কিছু কথা একত্রিত করে সে সম্পর্কে কিছু সত্যি কথা তুলে ধরেছে। আশা করি যারা ইয়াসির ক্বাদীর কথার দ্বারা বিভ্রান্তির শিকার হয়ে আছেন, এগুলো তাদের হক্ক বুঝতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে, ইন শা আল্লাহ।
আপনাদের কেউ মনে করবেন না, ইমরান বিন মানসুর হঠাত করে ইয়াসীর ক্বাদী সম্পর্কে এই কথাগুলো বলছেন। বরং, বিগত ৭-৮ বছর ধরে ইয়াসির ক্বাদীর বিভ্রান্তিকর কথা থেকে অনেক আগেই বিষয়টি পরিষ্কার ছিলো, ইয়াসীর ক্বাদী তার দ্বীনকে পরিবর্তন করে ফেলছে, মদীনা থেকে শিখা ইসলামকে ছুড়ে ফেলে সে নিজে নিজে ইসলামের নতুন রূপ দিতে চাচ্ছে। ইয়াসীর ক্বাদী সম্পর্কে আরো ভালো ধারণা পাবেন উস্তায আবু মুসসাব ওয়াজদি আল আক্বিরি হাফিযাহুল্লাহর লেকচারটি শুনলে ইন শা আল্লাহ!
লিংক-Why Are You Doing This to the Muslims? | Abu Mussab Wajdi Akkari
https://www.youtube.com/watch?v=d6ux72MnP-s
.
সর্বশেষ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম-এর গুরুত্বপূর্ণ একটি হাদীস দিয়ে আজকের মতো এখানেই শেষ করছিঃ “মানুষের মাঝে অচিরেই এমন এক সময় আসবে যখন ধোঁকাবাজি বাড়বে, তখন মিথ্যাবাদীকে সত্যবাদী মনে করা হবে আর সত্যবাদীকেই মিথ্যাবাদী মনে করা হবে, আমানতদারকে খিয়ানতকারী মনে করা হবে আর খিয়ানতকারীকেই আমানতদার মনে করা হবে, আর ‘রুয়াইবিদা’রা কথা বলবে। জিজ্ঞাস করা হলো, ‘রুয়াইবিদা’ কারা? তিনি বললেন, সাধারণ মানুষের কর্মকান্ডে হস্তক্ষেপ করে (নীচু মানের, ফালতু) এমন ব্যক্তি।”
ত্বাবারানি, কিতাবুল ফিতান, বাব সিদ্দাতুয যামনঃ ২/৩২৬১।
প্রচারে--আহলুস সুন্নাহ ব্লগ