কে এই ইমাম আওলাকি............

কে এই কথিত ঈমাম আওলাকি? একটি ত্বাত্তিক বিশ্লেষণ.. 

#কে_এই_ইমাম_আওলাকি???

আজ আপনাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিব জনপ্রিয় আমেরিকান বক্তা আনোয়ার আল-আওলাকি নামক এক ব্যক্তির সাথে! যাকে তার ভক্তরা ‘ইমাম আওলাকি’ বলে ডাকে, তার প্রকৃত মানহাজ ছিলো ‘তাকফিরী কুতুবী’ মানহাজ। আওলাকি এবং বাংলাদেশের ‘জেএমবি’ আর ইরাকের ‘আইসিস’ এদের সবার root disease same. সাধারণত অল্প বয়ষ্ক ছেলেরা খুব সহজেই আওলাকির হৃদয় গলানো লেকচার শুনে নিজের অজান্তেই কুতুবি/খারিজি মানহাজের দিকে আকৃষ্ট হয়ে শেষ পর্যন্ত ‘খারেজী আকীদাহর’ গর্তে গিয়ে পড়ে। এমনই কিছু ছেলেদের দ্বারা পরিচালিত একটা ফেইসবুক পেইজ হচ্ছে ‘Rais Drops’ যার উদ্দেশ্য হচ্ছে আওলাকি/আহাম্মেদ মুসা জিব্রিল/আদনানি সহ বহু খারিজি মানহাজের বক্তার লেকচার ও লেখা অনুবাদ করে প্রচার করা। দুঃখজনকভাবে কিছু অল্প বয়ষ্ক ছেলে নিজেদেরকে সহিহ আকিদার দাবী করে, কিন্তু তাকফিরী কুতুবীদের সাথে সুসম্পর্ক রাখে, তাদেরকে প্রমোট করে। এমন কুতুবী ও আধ-কুতুবী ব্যক্তি এবং সংগঠন - দুটোই বর্জনীয়।

আধুনিক যুগে চরমপন্থী তাকফিরি মতবাদের প্রচারকারী সাইয়েদ কুতুবের ভক্ত আনোয়ার আল-আওলাকি তার ধর্মগুরুর মতোই তাকফিরী ছিলেন, সে মুসলিম শাসকদেরকে কাফের /মুনাফেক ফতোয়া দিয়ে সাধারণ মানুষকে তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার জন্য উস্কানি দিয়েছিলো। অল্প ইলম সম্পন্ন লোকেরা আওলাকিকে ইমাম বলে মনে করে, অথচ মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা খারেজীদের প্রধান একটা বৈশিষ্ট্য। আমাদের কাছে আওলাকি নিশ্চয় ই একজন ইমাম, তবে #তাকফিরিদের।

যেসব কারণে আওলাকি খারিজি হয়ে যায়----

আনোয়ার আওলাকি সৌদি আরবসহ আরব বিশ্বের মুসলিম শাসকদেরকে ঢালাওভাবে কাফের, মুনাফেক,তাগুত ফতোয়া দিয়ে মুসলিম দেশের বিরুদ্ধে জিহাদ(!) করার জন্য তার ভক্তদেরকে আহবান জানিয়েছিলো। যদিও প্রথমদিকে তার মানহাজ অপ্রকাশ্য ছিল!

মুসলিম শাসকদের দোষ-ত্রুটি কিংবা তাদের জুলুম অত্যাচার/অন্যায়ের কারণে তাদেরকে কাফের, মুর্তাদ ফতোয়া দেওয়া এবং তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা খারেজীদের ধর্ম। এই বিষয়টি এতো মারাত্মক যে, আপনি প্রতিটা আকিদার কিতাব খুললে দেখতে পারবেন, মুসলিম শাসকদের অন্যায় বা জুলুম-অত্যাচার সত্ত্বেও সৎ কাজে তাদের প্রতি অনুগত থাকা এবং কোন মতেই বিদ্রোহ না করার জন্য বলা হয়েছে।

মুসলিম আমীর বা শাসকদের ব্যপারে আমাদের দৃষ্টিভংগি কেমন হওয়া উচিত?
(১) ইমাম আবু জাফর আত-তাহাবী রাহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ৩২১ হিজরী), তার বিখ্যাত আহলে “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের আকীদা” নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেনঃ
“আমীর ও শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাকে আমরা জায়েয মনে করি না, যদিও তারা যুলুম-অত্যাচার করে। আমরা তাদেরকে অভিশাপ দিব না, এবং তাদের আনুগত্য হতে হাত গুটিয়ে নিব না। তাদের আনুগত্য আল্লাহর আনুগত্যের সাপেক্ষে ফরয, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর অবাধ্যচরণের আদেশ দেয়। আমরা তাদের মঙ্গল ও কল্যাণের জন্য দুয়া করব।”
আকীদাহ আত-ত্বাহাবীয়া।
(২) মুসলমান শাসকদেরকে গালিগালাজ করা, মিম্বারে বসে তাদের সমালোচনা করে, জনগণকে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে উস্কে দেওয়া মনপূজারী, বেদাতী ও খারজীদের একটা লক্ষণ। ইমাম আল-বারবাহারি রাহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ৩২৯ হিজরী) বলেছেন,
“যদি তুমি কোন ব্যক্তিকে দেখো সে শাসকদের জন্য বদদুয়া করছে, তাহলে জেনে রাখো সে একজন মনপূজারী, বিদআ'তী। আর তুমি যদি কোন ব্যক্তিকে দেখো যে, সে শাসকদের জন্য কল্যাণের দুয়া করছে, তাহলে সে একজন আহলে সুন্নাহ, ইন শা’ আল্লাহ।”
শরাহুস সুন্নাহঃ পৃষ্ঠা ১১৩-১১৪।
(৩) ইমাম আল-বারবাহারি রাহিমাহুল্লাহ আরো বলেছেন,
“যে ব্যক্তি কোন মুসলিম শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে সে
ক. খারেজীদের মধ্যে একজন,
খ. সে মুসলিমদের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি করলো,
গ. সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসের বিরোধীতা করলো এবং,
ঘ. তার মৃত্যু যেন ‘জাহেলী’ যুগের মৃত্যুর মতো।
শরাহুস সুন্নাহঃ পৃষ্ঠা ৪২।

আনোয়ার আল-আওলাকি (USA), জসীম উদ্দিন রাহমানি (BD), আঞ্জেম চৌধুরী (UK), মুসা সেরান্টানিও (Australia), আবু কাতাদাহ, আবু বারা (UK), আবু ওয়ালিদ (UK),আহাম্মদ মুসা জিব্রিল(usa) এইরকম বোকা শ্রেনীর কিছু তরুণ ফতোয়াবাজ লোকেরা ক্বুরআনের আয়াত বা হাদীসের মনগড়া ব্যখ্যা দিয়ে উঠতি বয়সী কিছু কিশোর ও যুবকদের অন্তরকে তাকফিরী পয়জন দিয়ে বিষাক্ত করে রেখে গেছে। এরা বিভিন্ন অপব্যখ্যা দিয়ে তাদের অন্ধ ভক্তদের ব্রেইন ওয়াশ করেছে।
.
তাকফিরিদের মাঝে একটা ভ্রান্ত মতবাদ হচ্ছেঃ
বর্তমানে মুসলিম বিশ্বে যেই সমস্ত শাসকরা শরিয়াহ আইন বাস্তবায়ন করছেনা, তারা সবাই মুর্তাদ, তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা আমাদের জন্য ফরযে আইন!
এটা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত, খারেজীদের আকীদা, যা রাসুল (সাঃ) এর হাদীসের সরাসরি বিরোধীতা করে। এনিয়ে হুযাইফা বিন ইয়ামান রাঃ এর বিখ্যাত হাদীস দেখুন, এবং সুন্নাহর সাথে খারেজীদের কথাকে মিলিয়ে দেখুন -
.
হুযায়ফা ইবনে ইয়ামান (রাঃ) বলেছেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এক সময় আমরা অকল্যাণ ও মন্দের মধ্যে (কুফরীর মধ্যে) ডুবে ছিলাম। অতঃপর আল্লাহ আমাদেরকে কল্যাণের (ঈমানের) মধ্যে নিয়ে এসেছেন। এখন আমরা সেই কল্যাণের মধ্যে বহাল আছি। তবে এই কল্যাণের পরে কি আবার অকল্যাণের যুগ আসবে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। আমি আবার বললাম, সেই অকল্যানের যুগের পর কি পুনরায় কল্যানের যুগ আসবে?
তিনি বললেনঃ হাঁ, আসবে।
আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, সেই কল্যানের পর কি আবার অকল্যানের যুগ আসবে?
তিনি বললেনঃ আসবে।
আমি (হুজাইফা) জিজ্ঞেস করলামঃ তা কিভাবে?
তিনি বললেনঃ “আমার পরে এমন কিছু ইমামের (শাসক) আগমন ঘটবে, তারা আমার প্রদর্শিত পথে চলবে না এবং আমার সুন্নাত (জীবন বিধান) গ্রহন করবে না। (অর্থাৎ তারা নিজেদের খোয়াল-খুশী মত চলার পথ আবিষ্কার করে নেবে)। অচিরেই তাদের মধ্যে এমন কিছু লোক সমাজের নেতৃত্ব নিয়ে দাঁড়াবে যাদের মানব দেহে থাকবে শয়তানের অন্তর”।
আমি (হুজাইফা রাঃ) জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমি সেই যুগে উপনীত হই তাহলে আমি কি করব?
তিনি (সাঃ) বললেনঃ “তুমি আমীরের নির্দেশ শোন এবং তার আনুগত্য কর। যদিও সে তোমার পিঠে আঘাত (নির্যাতন) করে এবং তোমার ধন-সম্পদ ছিনিয়ে নেয় তবুও তার কথা শোন এবং তার আনুগত্য কর”।
সহীহ মুসলিমঃ কিতাবুল ইমারাহ (প্রশাসন ও নেতৃত্ব) অধ্যায়, হাদীস নং- ৪৫৫৪।
.
এই হাদীসে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেনঃ
(১) মুসলিমদের উপর ভবিষ্যতে এমন কিছু শাসক আসবে, যারা ক্বুরান ও সুন্নাহ অনুযায়ী চলবেনা। উল্লেখ্য বর্তমানে বিভিন্ন মুসলিম দেশে এইরকম জালেম শাসক দেখা যাচ্ছে।
(২) তাদের কাজকর্ম এতো জঘন্য হবে যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃ) তাদেরকে “মানুষের ভেতরে শয়তানের অন্তর” বলেছেন। আমার মনে হয়না অন্য কোন ভাষায় মানুষকে এর চাইতে খারাপ বলে বর্ণনা করা যেতে পারে।
(৩) সেই সময়ে আমরা কেউ যদি পৌঁছে যাই, তাহলে আমরা সেই শাসক জালেম হলেও, সে যদি মুসলিম হয়, আমরা যেন তার আনুগত্য করি, এমনকি যদিও সে আমাদেরকে মারধর করে এবং আমাদের সম্পদ ছিনিয়ে নেয়।
(৪) উল্লেখ্য, শাসক বা অন্য যে কারো আনুগত্য শুধুমাত্র জায়েজ কাজে। অন্যায় বা হারাম কাজের আদেশ দিলে, সেটা যে-ই হোক না কেনো, তার আদেশ মানা যাবেনা।
.
আপনি প্রশ্ন করতে পারেনঃ
বিদ্রোহ না করে কেন রাসুল (সাঃ) আমাদেরকে শাসক জালেম হলেও তবুও তাদের আনুগত্য করতে নির্দেশ দিয়েছেন?
এর কারণ হচ্ছে, বিদ্রোহ করলে যে ক্ষয়-ক্ষতি হয়, তার তুলনায় যুলুম অত্যাচার সহ্য করা অনেক কম ক্ষতিকর, যা যুগে যুগে খারেজীদের কার্যকলাপ দ্বারা বারবার প্রমানিত হয়েছে।
.
আপনারা বিগত কয়েক বছরে লিবিয়া, তিউনিয়সিয়া, মিশরসহ অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতে সংঘটিত বিদ্রোহগুলোর দিকে লক্ষ্য করে দেখুনঃ
অপরিণামদর্শী, আবেগী লোকদের বিদ্রোহের পূর্বে শাসকদের জুলুম অত্যাচার এবং বিদ্রোহের পরে সৃষ্ট বিশৃংখলা ও ফেতনা-ফাসাদ, হত্যা ও নৈরাজ্য তুলনা করলে খুব সহজেই বুঝতে পারবেন, কেনো বিদ্রোহের ব্যপারে ইসলাম এতোটা সতর্কতা অবলম্বন করেছে।
.
যাইহোক, অজ্ঞ মুফতিরা ক্বুরআন ও সুন্নাহ আয়ত্ত্ব না করেই বড় বড় লেকচার দিতে গিয়ে আবেগের বশে জালেম শাসক বা মুসলিম শাসকদের দোষ-ত্রুটি দেখে তাদেরকে কাফের ফতোয়া দেয় এবং খারেজীদের মতো তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে মানুষকে উস্কানি দেয়। আমাদের আলেমরা এমন তাকফিরি দ্বাইয়ীদেরকে ‘ক্বাদিয়্যা’ বা sitting khawaarij বলে চিহ্নিত করেছেন। এমন ব্যক্তিরা তারা নিজেরা কোনদিন জিহাদে অংশগ্রহণ করেনা, কিন্তু শাসকদের বিরুদ্ধে অজ্ঞ লোকদেরকে জিহাদ করার জন্য উত্তেজিত করে। যেমন করেছিলে কথিত ‘ইমাম’(!) আনোয়ার আওলাকি এবং অন্যান্যরা।
.
আপনারা লক্ষ্য করে দেখুন, কিছু দোষ-ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও সৌদি আরবে আজ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামি শরিয়াহ আইন চালু আছে, আদালত পরিচালিত হচ্ছে ক্বুরআন সুন্নাহ দিয়ে, রাষ্ট্রীয়ভাবে সালাত কায়েম আছে, মানুষকে সৎ কাজের আদেশ ও নিষেধ আজ পর্যন্ত চালু আছে। এমন একটা ইসলামী দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাতো দুরের কথা, যেই শাসক নিজে মুসলিম কিন্তু দেশ পরিচালিত হয় মানব রচিত আইন দিয়ে, এমন শাসকের বিরুদ্ধেও বিদ্রোহ করা আলেমরা হারাম বলে মনে করেন।
- ইখোয়ানুল মুসলিমিনের নেতা ডা. মুহাম্মদ মুরসি ক্ষমতায় থাকার সময় ক্বুরআন-সুন্নাহ দিয়ে দেশ পরিচালনা করেন নি, বরং শরিয়াহ নিয়ে বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা বলেছেন যা কুফরের পর্যায়ে পড়ে। তবুও আহলে সুন্নাহর কোন আলেম তাকে কাফের বলেন নি, বরং মুসলিম শাসক হিসেবে তাঁর জন্য দুয়া করেছেন।
- অনুরূপভাবে বর্তমান তুরস্কের শাসক এরদোগানকেও কোন আলেম কাফের বলে ফতোয়া দেন নাই, যদিও তিনি গণতন্ত্র দিয়ে দেশ পরিচালনা করছেন।
.
অল্প বয়ষ্ক কিছু যুবক যাদের না আছে বিদ্যা, না বুদ্ধি, জসীম উদ্দিন, আওলাকি,জিব্রিল এমন লোকদের কথা শুনে সমস্ত শাসকদেরকে ঢালাওভাবে কাফের ফতোয়া দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ(!) করার জন্য ফতোয়া দিচ্ছে। যদিও তারা নিজেরাই এই জিহাদ করছেনা, অবশ্য হুটহাট ২-৪টা বোমা ফাটিয়ে নিরীহ মানুষ হত্যা করা ছাড়া। কিন্তু অন্যরা কেনো এই ভার্চুয়ায়ল জিহাদকে সমর্থন করছেনা, এটা নিয়ে তাদের বিরোধীদেরকে গালি-গালাজ করছে।
এদের ভক্তদের দিকে লক্ষ্য করুন – সৎ আলেমদেরকে কাফের ফতোয়া দিয়ে তাদেরকে দালাল, তাগুতসহ অন্যান্য নোংরা ভাষায় গালিগালাজ করা হচ্ছে তাদের ধর্ম। অথচ, আলেমদের সাথে শত্রুতা পোষণ করা মুনাফেকীর লক্ষণ। আর যারা তাদেরকে চেনেন তারা সকলেই জানেন, ভাষার দিক থেকে এরা সবচাইতে জঘন্য। এইরকম স্বঘোষিত মুফতি মুহাদ্দিসদের বিভ্রান্তিকর ওয়াজ-লেকচার বাদ দিয়ে আহলে সুন্নাহর আলেমদের থেকে ইসলাম নেবেন, যাতে করে ফেতনা থেকে নিজেকে বাচাতে পারেন।
.
আনোয়ার আল-আওলাকি এবং তার ভক্ত-শ্রোতাদের মাঝে আরেকটা কমন বিভ্রান্তি হচ্ছেঃ
"আত্মঘাতী বোমা হামলা করে নিরীহ মানুষ হত্যা করা জায়েজ।"
একারণে তারা মুসলমান কিংবা কাফের দেশে কথিত জিহাদী দলের লেবেল নিয়ে যেই আত্মঘাতী বোমা হামলাগুলো করা হচ্ছে - এইগুলোকে তারা অন্ধভাবে সমর্থন দেয়। এইভাবে মানুষ হত্যা করা, যেখানে কাফেরদের পাশাপাশি অনেক নিরপরাধ মুসলমানরাও নিহত হচ্ছে, এইগুলোকে তারা জিহাদ এবং ইসলামের মহান খেদমত বলে মনে করে। যাই হোক, নিরস্থ, নিরীহ মানুষ সে কাফের হোক কিংবা ঈমানদার, জিহাদের নাম দিয়ে তাদেরকে হত্যা করা জায়েজ নয়!
- শুধু তাই নয়, নিজেদের এই বর্বর কাজকে “জায়েজ” প্রমান করার জন্য কাপুরুষের মতো তারা ক্বুরআন-হাদীসের মনগড়া অপব্যখ্যা করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার অপচেষ্টা করে।
- হক্ক কথা হচ্ছে, এরা আসলে ইয়াহুদী-খ্রীস্টানদের দ্বারা মগজ ধোলাই খাওয়া মুসলমান ছদ্মবেশী গোপন এজেন্ট, যাদের মিশন হচ্ছে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান “জিহাদ” কে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড হিসেবে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা, যাতে করে মুসলমানদেরকে “জংগী” লেবেল দিয়ে যখন ইচ্ছা তখন আক্রমন করে মুসলমান দেশগুলো দখল করা যায়।
কথিত এই মুজাহিদদের দাবী হচ্ছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুশরিকদের নিরস্ত্র, নিরীহ নারী ও শিশু, যারা মুসলমানদের সাথে যুদ্ধে জড়িত নয়, তাদেরকেও যখন ইচ্ছা টার্গেট করে নির্বিচারে হত্যা করার অনুমতি দিয়েছেন। নাউযুবিল্লাহি মিং সাররি যালিক!
.
মানবতাবিরোধী তাদের এই সন্ত্রাসী নীতির পক্ষে নীচের এই হাদীসের অপব্যাখ্যা পেশ করেছেঃ
সা’ব ইবনু জাসসামা রাদিয়াল্লাহু আ’নহু হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, মুসলমানদের রাত্রিকালের অভিযানের ফলে শত্রুপক্ষের মুশরিকদের কিছু মহিলা ও শিশুরা নিহত হয়, তাহলে কি হবে? আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম জবাবে বলেছিলেন, “তারা মুশরিকদের সাথে বলেই গণ্য হবে।” সহীহ বুখারীঃ ৩০১২, সহীহ মুসলিমঃ ৭৫৪৫, আবু দাউদঃ ২৬৭২, তিরমিযীঃ ১৫১৭, ইবনু মাজাহঃ ২৮৩৯।
__________________________
হাদীসের ব্যখ্যাঃ সহীহ বুখারীর ব্যখ্যাগ্রন্থ ‘ফাতহুল বারী’ তে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রাহিমাহুল্লাহ এই হাদীস সম্পর্কে বলেছেন,
“এই হাদীসের অর্থ এই নয় যে, নারী ও শিশুদেরকে টার্গেট করে হত্যা করা যাবে। বরং এই হাদীসের অর্থ হচ্ছে এই যে, মুশরেকদের সাথে যুদ্ধের সময় যদি নারী ও শিশুরা অস্ত্রবহনকারী শত্রুদের মাঝে অবস্থান করে এবং একারণে তারা নিহত হয়, তাহলে মুসলমানদের কোন দোষ হবেনা।” ফাতহুল বারীঃ সহীহ বুখারীর ৩০১২, ২৩৭০ নং হাদীসের ব্যখ্যা।
__________________________
সুবহা’নাল্লাহ!
চিন্তা করে দেখুন, হাদীসের কি পরিমান অপব্যখ্যা তারা করেছে?
হাদিসের অর্থ হচ্ছেঃ যুদ্ধের সময় অস্ত্র বহনকারী মুশরেকদের মাঝে যদি নারী ও শিশুরা অবস্থান করে, আর সেই অবস্থায় তাদের কেউ নিহত হয়, তাহলে কোন দোষ নেই।
আর এই হাদীসকে তারা ব্যবহার করছে ক্লাসরুমে ঢুকে নিরস্ত্র ছাত্রদেরকে আক্রমন করে তাদেরকে গণহত্যা করার জন্য?
.
সবচাইতে আশ্চর্যজনক ব্যপার হচ্ছে, জিহাদ সম্পর্কে চরম অজ্ঞ, মনগড়া ফতুয়াবাজ এই লোকগুলো এটাও জানেনা যে, উপরের এই হাদীসটি আসলে পরবর্তীতে ‘মানসুখ’ বা রহিত করে দেওয়া হয়েছে! নিচের হাদীস দ্বারা উপরের হাদীসকে রহিত করে দেওয়া হয়েছেঃ
উমার রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক গাযওয়ায় (যুদ্ধের অভিযানে) এক মহিলাকে নিহত অবস্থায় দেখতে পেলেন। তখন রাসুলুল্লাহ অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং নারী ও শিশুদেরকে হত্যা করা নিষিদ্ধ করে দেন।” হাদীসটির ভাষা তিরমিযী থেকে নেওয়া।
বুখারী ও মুসলিমের অপর বর্ণনায় রয়েছে, “তিনি (রাসুলুল্লাহ) সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম মহিলা ও শিশুদেরকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন।” সহীহ বুখারীঃ ৩০১৪, সহীহ মুসলিমঃ ১৭৪৪, আবু দাউদঃ ২৬৬৮, তিরমিযীঃ ১৫৬৯, ইবনু মাজাহঃ ২৮৪১।
একারণে উপরে প্রথম বর্ণিত বুখারীর হাদীস, যেখানে দেখা যাচ্ছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম “যুদ্ধের ময়দানে অস্ত্রধারী মুশরেকদের মাঝে অবস্থানকারী নারী ও শিশুরা নিহত হলে সেটাকে খারাপ বলেন নি”, সেই হাদীসের একজন গুরুত্বপূর্ণ রাবী, যিনি সাহাবীর কাছ থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, তাবেয়ী ইমাম ইবনে শিহাব আয-যুহরী রাহিমাহুল্লাহ, সহীহ বুখারীর হাদীসটি যতবারই বর্ণনা করতেন, ততবারই সাথে সাথে এটাও উল্লেখ করে দিতেন যে,
“পরবর্তীতে এই হাদীসটিকে রহিত করে দেওয়া হয়েছে।”
__________________________
ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রাহিমাহুল্লাহ ফাতহুল বারীতে উল্লেখ করেছেন, “ইমাম আয-যুহরী কখনোই সহীহ বুখারীর এই হাদীসটি বর্ণনা করতেন না, যার সাথে সাথে এই হাদীসটিও উল্লেখ করে দিতেন যে,
(১) “আমাকে কাব ইবনু মালিক বলেছেন, যিনি তার চাচার কাছ থেকে শুনেছেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম যখন তাঁর সৈন্যদেরকে পাঠালেন ইবনে আবিল হাকিক্বের সাথে যুদ্ধ করার জন্য, “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেকোন অবস্থাতেই নারী ও শিশুদেরকে হত্যা করা নিষিদ্ধ করেছেন, এমনকি যদিওবা শত্রুরা নারী ও শিশুদেরকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে।”
(২) সুফিয়ান বর্ণনা করেছেন, ইমাম যুহরী আরো বর্ণনা করেছেন, “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুনাইনের যুদ্ধে সর্ব অবস্থাতেই নারী ও শিশুদেরকে হত্যা করা সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ করেছেন। আর এটাই ছিলো রাসুলুল্লাহ এর জীবনে মুশরিকদের বিরুদ্ধে সর্বশেষ যুদ্ধ।”
(৩) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) এর কাছে একজন দূতকে পাঠান এবং বলেন, “শিশু ও আসিফদেরকে হত্যা করোনা।” (আসিফ হচ্ছে কৃষক, সাধারণ কর্মী, দাস বৃদ্ধ, অর্থাৎ শত্রুপক্ষের এমন লোক যারা যুদ্ধ করছেনা)
ফাতহুল বারীঃ সহীহ বুখারীর ৩০১২, ২৩৭০ নং হাদীসের ব্যখ্যা।

আনোয়ার আল-আওলাকি, যাকে তারা বড় আলেম বলে মনে করে (আসলে সে একজন বক্তা মাত্র, আলেম নন) সে একটা ভিডিওতে বলেছিলো,
“যুদ্ধের মাঠের বাইরে (৯/১১ এর মতো মুসলিম বা কাফের যেকোনো দেশে) আত্মঘাতী বোমা হামলা করে নিরস্ত্র কাফেরদেরকে হত্যা করা ইসলামে জায়েজ, এমনকি যদিও তাতে অনেক নিরীহ নারী ও শিশু নিহত হয়।”
এর পক্ষে সে বুখারী থেকে উক্ত হাদীসের অপব্যখ্যাটাকে রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করেছিলো। আর সেই থেকে আজ পর্যন্ত, যত ধরণের সন্ত্রাসী আক্রমন করছে নামধারী এই মুসলমানেরা (আসলে কাফেরদের সাজানো নাটকের অভিনেতা), আওলাকি ভক্তরা বিভিন্ন যুক্তি ও হাদীসের অপব্যখ্যা দেখিয়ে তাদের ইমামের মতোই সেইগুলোকে অন্ধভাবে সমর্থন করে যাচ্ছে। আল্লাহু মুস্তায়ান!

এখানে আরেকটা বিষয় জাজানিয়ে রাখা প্রয়োজন তা হল -পিস টিভি ইংলিশে আওলাকীর লেকচার রেকর্ড করা হয়েছিল যখন সে খারেজী ছিল না। কিন্তু যখন তার খারেজী আকীদা প্রকাশ পায় তখন ডা.যাকির নায়েকের নির্দেশে রেকর্ডকৃত লেকচারগুলো নষ্ট করে ফেলা হয় এবং পিস টিভিতে তাকে আর সুযোগ দেয়া হয়নি।

এই আওলাকি সম্পকে আরবের বিখ্যাত আলেমেদ্বীন শাইখ ওবাইদ আল যাবেরি হাফি : বলেন---
এই আওলাকি কোন আলেম নন বরং সে হচ্ছে জাহিল, (মূর্খ) খারিজিদের গুরু!সে তার অনুসারীদের বিভ্রান্ত করে মুসলিম শাসকদের বিরুদ্বে লেলিয়ে দিচ্ছে! ভিবিন্ন দেশে সন্ত্রাসী হামলায় তার পরোক্ষ মদদ রয়েছে!

শাইখ কঠিন জারাহ করেছেন এই জাহিলকে!বিস্তারিত লিংক--শাইখ কঠিন জারাহ করেছেন এই জাহিলকে!বিস্তারিত লিংক--

সর্বশেষ -বিগত শতাব্দীর একজন আলেমে দ্বীন, শায়খ ইবনে উসায়মিন রাহিমাহুল্লাহর একটি কথা উল্লেখ করছি গভীর ভাবে চিন্তা করার জন্য,
“অনেক মানুষকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, কিন্তু অর্জিত সেই জ্ঞান অনুধাবন করার মতো ক্ষমতা তাদেরকে দেওয়া হয়নি। না বুঝে শুধু ক্বুরআন মাজীদ ও হাদীস মুখস্থ করাই যথেষ্ট নয়। বরং অবশ্য-ই আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীসের মর্মার্থ আপনাকে বুঝতে হবে। ঐ লোকদের দ্বারা কতইনা ত্রুটি-বিচ্যুতি সংঘটিত হয়েছে, যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীসের বাণীর মর্ম না বুঝেই দলীল পেশ করছে, যার ফলে তাদের অনুসারীদের মাঝে অনেকেই পথভ্রষ্ট হয়েছে।”