কেয়ামতের ছয়টি আলামত নিয়ে একটি হাদীস ও শায়খ ফাউজানের ব্যখ্যা

কেয়ামতের ছয়টি আলামত নিয়ে একটি হাদীস ও শায়খ ফাউজানের ব্যখ্যা

কেয়ামতের ছয়টি আলামত নিয়ে একটি হাদীস ও শায়খ ফাউজানের ব্যখ্যা
আওফ ইবনে মালেক আল-আশজাঈ রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তাবুক যুদ্ধের সময় আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি একটি চামড়ার তাঁবুর ভেতরে ছিলেন। আমি তাঁবুর আঙ্গিনায় বসে পড়লাম। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ হে আওফ! ভেতরে এসো। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি কি সম্পূর্ণ প্রবেশ করবো? তিনি বলেনঃ হাঁ, সম্পূর্ণভাবে এসো। অতঃপর তিনি বললেন, “হে আওফ! কিয়ামতের পূর্বে ছয়টি আলামত স্মরণ রাখবে।
(১) সেগুলোর একটি হচ্ছে আমার মৃত্যু।” আওফ রাদিয়াল্লাহু আ’নহু বলেন, আমি একথায় অত্যন্ত মর্মাহত হলাম। তিনি বলেন, তুমি বলো, প্রথমটি।
(২) অতঃপর বাইতুল মুকাদ্দাস বিজয়।
(৩) অতঃপর তোমাদের মধ্যে এক মহামারী রোগ ছড়িয়ে পড়বে, যার দ্বারা আল্লাহ তোমাদের বংশধরকে ও তোমাদেরকে শাহাদত নসীব করবেন এবং তোমাদের আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করবেন।
(৪) এরপর তোমাদের সম্পদের প্রাচুর্য হবে, এমনকি মাথাপিছু একশত দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) পেয়েও মানুষ সন্তুষ্ট হবে না।
(৫) তোমাদের মধ্যে এমন একটা ফিতনাহ সৃষ্টি হবে, যা থেকে কোন একটি মুসলমান ঘরও রেহাই পাবে না।
(৬) এরপর বনু আসফার (রোমান খৃস্টানদের) সাথে তোমাদের সন্ধি হবে। কিন্তু তারা তোমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে এবং আশিটি পতাকা তলে সংঘবদ্ধ হয়ে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। প্রতিটি পতাকার অধীনে থাকবে বারো হাজার সৈন্য।
সহীহ বুখারীঃ ৩১৭৬, আবু দাউদঃ ৫০০০, আহমাদঃ ২৩৪৫১।
আল্লামাহ সালিহ আল-ফাউজান হা’ফিজাহুল্লাহ উপরোক্ত হাদীসের ব্যখ্যায় বলেনঃ
“কেয়ামতের পূর্বে ছয়টি ঘটনা ঘটবে।
(১) প্রথমটা হচ্ছে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যু।
(২) এরপর হচ্ছে (মুসলমানেরা জেরুজালেমের) বায়তুল মুকাদ্দাস জয় করবে। আর এটা উমার রাদিয়াল্লাহু আ’নহুর খিলাফতের সময় হয়েছিলো।
(৩) এরপর হচ্ছে মারাত্মক একটা মহামারী রোগ যা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়বে, যার কারণে অনেক মানুষ মৃত্যুবরণ করবে। আমরা আল্লাহর কাছে এটা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
(৪) এরপর হচ্ছে মানুষের মাঝে সম্পদ বেড়ে যাওয়া। সম্পদ বেড়ে যাওয়া একটা ‘ফিতনাহ’, এবং এটা কেয়ামতের একটা লক্ষণ। কেয়ামতের পূর্বে মানুষের হাতে সম্পদ বেড়ে যাওয়ার কারণে মানুষ অল্প সম্পদে সন্তুষ্ট হবেনা। এমনকি কোন ব্যক্তিকে একশত স্বর্ণমুদ্রা (অনেক সম্পদ) দিলেও সে সন্তুষ্ট হবেনা।
(৫) এরপর হচ্ছে, এমন একটা ‘ফিতনাহ’, যেটা থেকে কোন মুসলমানের বাড়ি বেঁচে থাকতে পারবেনা। এটা একটা মারাত্মক সমস্যা, যা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে এবং যা বর্তমানে খুব বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন, আমার (শায়খ ফাউজন এর) মতে, “বর্তমান যুগের বিভিন্ন মিডিয়া এবং ইন্টারনেট হচ্ছে হাদীসে বর্ণিত সেই ফিতনাহ। কে জানে, এই মিডিয়ার থেকে সৃষ্ট ক্ষতি কত দূর পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এই (মিডিয়া, ইন্টারনেট) নিজে থেকে মানুষের বাড়িতে প্রবেশ করছে। তোমার তাদের কাছে যাচ্ছ বিষয়টা এমন নয়, বরং তারা নিজেরাই তোমাদের কাছে চলে আসছে। তুমি তোমার বিছানায় শুয়ে আছে, আর এই অলস জিনিসটা তোমার পাশে আছে। তোমার খুব বেশি চেষ্টা ছাড়াই এইগুলো তোমার জন্যে অনেক বড় ক্ষতি ও ধংস নিয়ে আসছে। এর এটাই হচ্ছে ফিতনাহ (বিপর্যয়, কঠিন পরীক্ষা)।
(৬) সর্বশেষ, তোমাদের ও বনু আসফার লোকদের মাঝে একটা সন্ধি চুক্তি। বনু আসফার হচ্ছে রোমান খ্রীস্টানরা। মুসলমান ও রোমান খ্রীস্টানদের মাঝে একটা সন্ধি চুক্তি হবে এবং তাদের মধ্যে যুদ্ধের মাধ্যমে এই চুক্তি শেষ হবে। রোমানরা তোমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে। রোমানরা মুসলমানদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে কারণ, প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা হচ্ছে কাফেরদের একটা চরিত্র। আর আমানত ও ওয়াদা রক্ষা করা হচ্ছে মুসলমানদের চরিত্র। নাআ’ম।”

admin by rasikul islam

Post a Comment

0 Comments