Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

ভালো মানুষেরা কষ্টে থাকে- আর পাপী লোকেরা আনন্দে দিন কাটায়?

ভালো মানুষেরা কষ্টে থাকে, আর পাপী লোকেরা আনন্দে দিন কাটায়?

@@@ভালো মানুষেরা কষ্টে থাকে, আর পাপী লোকেরা আনন্দে দিন কাটায়?
প্রশ্নঃ অনেক ভালো লোক আছে, যাদের একটার পর একটা বিপদ-আপদ লেগেই থাকে। কিন্তু অমুক লোকটা এতো খারাপ কাজ করে, তারপরেও সুস্থ সামর্থ্য, দিব্যি আনন্দেই দিন কাটাচ্ছে! আল্লাহ যদি পাপীদের শাস্তি দিয়ে থাকেন তাহলে, এটা কেমন করে হতে পারে?
উত্তরঃ আলহা’মদুলিল্লাহ, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআ’লার জন্য। এটা একটা প্রশ্ন যা অনেক ভাই ও বোনেরাই করে থাকেন। যাই হোক এ সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু কথা উল্লেখ করছি।

.
প্রথমেই বলে নেই, আমাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষ “ভালো থাকা” বলতে যা বুঝে থাকেনঃ
(১) প্রচুর ধন-সম্পদের মালিক, স্ত্রী-সন্তানের সাথে তথাকথিত ‘হাই স্ট্যাটাস’ নিয়ে সমাজে আনন্দে জীবন কাটাচ্ছে।
(২) ছাত্র জীবনে সফল, ক্লাসে সর্বোচ নম্বর পেয়ে বড় বড় ডিগ্রী ধারী, ২-৩ টা প্রেম করে, অবৈধভাবে নারীদের ভোগ করে যাচ্ছে, মদ জুয়া নিয়ে ইচ্ছেমত ক্ষণিকের এই দুনিয়াতে ‘এনজয়’ করছে, তারপরেও ভালো ডিগ্রী নিয়ে পাস করে ক্যারিয়ার এস্টাব্লিশ করছে।
(৩) হালাল-হারাম মন যা চায় ব্যবসা করে, সুদ-ঘুষের সাথে জড়িয়ে খুব দ্রুত বিশাল টাকার মালিক হয়ে বাড়ি-গাড়ি করতে পারলে।
‘ইসলাম’ অনেক কিছুর সংজ্ঞা পরিবর্তন করে দেয়। হতে পারে দুনিয়ার পাপাচারে লিপ্ত থাকার পরেও কারো ভোগ-বিলাসের সুযোগ পাওয়া, এটা আসলে তার জন্য একপ্রকার শাস্তি! আবার কারো জন্য এমনও হতে পারে, বিপদ-আপদে পতিত মানুষটা এর প্রতিদানের কারণে তিনিই হচ্ছেন চূড়ান্ত ভাগ্যবান।
আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। আর তোমরা কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ প্রতিদান পাবে। অতঃপর যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সেই প্রকৃত সফলকাম। আর পার্থিব জীবন প্রতারণাপূর্ণ সাময়িক ভোগের সম্পদ ছাড়া আর কিছুইনা। অবশ্যই তোমাদেরক ধন-সম্পদে এবং তোমাদের জীবন দিয়ে পরীক্ষা করা হবে।” সুরা আলে-ইমরানঃ ১৮৫-১৮৬।
.
অনেক ভালোমানুষ বা বড় রকমের পাপী না হয়েও আল্লাহর হিকমত অনুযায়ী বিপদের সম্মুখীন হতে পারেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকে বিপদের মুখে পতিত করেন। অর্থাৎ বিপদ দিয়ে তাকে পরীক্ষা করেন।” সহীহ বুখারীঃ ৫২৩৬।
যদিও আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন তবুও তাকে বিপদে ফেলে পরীক্ষা করেন, এর হিকমত হচ্ছেঃ
(১) বিপদের দ্বারা তার দুনিয়ার জীবনের পাপ ও ভুল-ভ্রান্তির প্রায়শ্চিত্ত হয়ে পাপ মোচন হবে।
(২) বিপদ-আপদে ধৈর্য ধরার কারণে সে পরকালে বেহিসাব নেয়ামত পাবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনম “দুনিয়ায় যারা বিপদ-আপদে নিপতিত হয়েছে তাদেরকে যখন কিয়ামতের দিন বিনিময় প্রদান করা হবেম তখন বিপদ-আপদ মুক্ত ব্যক্তিরা আশা করবে, দুনিয়ায় যদি তাদের চাঁমড়া কাচি দিয়ে টুকরা টুকরা করে ফেলা হত।” সহিহ আৎ-তিরমিজি, সংসারের প্রতি অনাসক্তি অধ্যায়, হাদিসঃ ২৪০২, হাদীসটি হাসান সহীহ।
.
পক্ষান্তরে অনেকে দিন-রাত পাপ কাজে ডুবে থাকে, তবুও আল্লাহ তাদেরকে পার্থিব জীবনে সাময়িক ভোগ-বিলাসের জন্য অবসর দেন। এ প্রসংগে আল্লামাহ মুহা’ম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “যদি কাউকে দেখ সে প্রকাশ্য কবীরা গুনাহতে লিপ্ত আর আল্লাহ তাকে তার বিরোধীতাকারীদের থেকে আশ্রয় দিয়েছেন এবং তাকে দুনিয়ার জীবনে উন্নতি দান করছেন, তাহলে নিশ্চিত জেনে রাখ যে, আল্লাহ তার খারাপ চান। কারণ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহহ যখন তাঁর বান্দার কল্যাণের ইচ্ছা করেন তখন দুনিয়াতে তার জন্য তাড়াতাড়ি বিপদ-আপদ নাযিল করে দেন। আর যখন তিনি তাঁর বান্দার অমঙ্গলের ইচ্ছা করেন তখন তাকে গোনাহের মধ্যে ছেড়ে দেন। অবশেষে কিয়ামতের দিন তাকে পাকড়াও করবেন।” তিরমিযী, রিয়াদুস স্বালিহিন।
নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আরো বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন, “যার বিপদ-আপদ যত বড়, তার প্রতিদানও তত বড় হয়। আল্লাহ তাআ’লা যখন কোন সম্প্রদায়কে ভালবাসেন, তখন তাদেরকে তিনি পরীক্ষায় ফেলেন। যে তাতে সন্তুষ্ট থাকবে তার জন্য হবে (আল্লাহর) সন্তুষ্টি, আর তাতে যে অসন্তুষ্ট হবে তার জন্য হবে (আল্লাহর) অসন্তুষ্টি।” সহীহ আত-তিরমিজি, সংসারের প্রতি অনাসক্তি অধ্যায়, হাদিস ২৩৯৫, হাদীসটি সহীহ।
.
পাপাচারী লোকদের ব্যপারে মহান আল্লাহ বলেন, “আর যারা কুফরের দিকে ধাবিত হচ্ছে তারা যেন তোমাদেরকে চিন্তিত করে না তোলে। তারা আল্লাহ তাআ’লার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। (আল্লাহ তাদেরকে ছাড় দিয়েছেন কারণ) আল্লাহর ইচ্ছা হচ্ছে আখেরাতে তাদেরকে কোন কল্যাণ দান না করা। প্রকৃতপক্ষে তাদের জন্যে রয়েছে মহা শাস্তি। যারা ঈমানের পরিবর্তে কুফুরীকে ক্রয় করে নিয়েছে, তারা আল্লাহ তাআ’লার কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি। কাফেররা যেন মনে না করে যে, আমি তাদেরকে যে অবকাশ দান করি, তা তাদের পক্ষে কল্যাণকর। আমিতো তাদেরকে অবকাশ দেই একারণে যে, যাতে করে তারা পাপে উন্নতি লাভ করতে পারে। বস্তুতঃ তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাজনক শাস্তি।” সুরা আলে-ইমরানঃ ১৭৬-১৭৮।
.
দুনিয়ার সম্পদ, ভোগ-বিলাস আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে দান করেন, আল্লাহ যাকে ভালোবাসেন তাকে দেন, যাকে ভালোবাসেন না, তাকেও দেন। কারণ, দুনিয়া দিয়ে আল্লাহ বান্দাকে রহমত করেন না, বরং পরীক্ষা করেন। কিন্তু দ্বীন আল্লাহ শুধুমাত্র তাকেই দান করেন যাকে তিনি ভালোবাসেন। বিশ্বাস হয়না?
খোঁজ নিয়ে দেখুন, দুনিয়ার সবচাইতে ধনী মানুষদের কয়জন মুসলিম? আর এর বিপরীতে নবী রাসুলরা কত কষ্ট করে, কাফের-মুশরেকদের সাথে যুদ্ধ করে, দারিদ্র ও দুঃখ-কষ্টের সাথে লড়াই টিকে ছিলেন? by rasikul islam

Post a Comment

0 Comments