❒ সালাফী মানহাজের বৈশিষ্ট্যঃ পর্ব-০১

  • ❒ সালাফী মানহাজের বৈশিষ্ট্যঃ
  • পর্ব-০১  
  • সালাফী মানহাজ নতুন কোনো মানহাজ নয়। এটি ইসলামের সবচেয়ে পুরনো ও একমাত্র গ্রহণযোগ্য মানহাজ। সালাফী মানহাজে অন্য কোনো মানহাজ থেকে কিছু সংযোজন করা হয়নি। আবার এই মানহাজ থেকে কিছু বিয়োগও করা হয়নি। এটি মানুষের মস্তিষ্কপ্রসূত কোনো চিন্তাধারা থেকেও উদ্ভাবিত হয়নি। আবার ইতিহাসের কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটেও তৈরি হয়নি। এমনকি এটি কোনো মুজতাহিদের ইজতিহাদের ফসল নয়। এটি মূলত এমন একটি মানহাজ যেটির ভিত্তি দাঁড়িয়ে আছে কুরআন ও সুন্নাহের উপরে। আর এর রয়েছে কিছু মূলনীতি, কিছু বৈশিষ্ট্য যা দ্বারা এই মানহাজটিকে সমগোত্রীয় অন্যান্য মানহাজ থেকে আলাদা করা যায়। এই কারণেই এই মানহাজটি হয়ে গেছে একটি ইউনিক মানহাজ।
  • ইসলাম যাদের হাত ধরে আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে তাদেরই প্রথম কয়েকযুগের সোনালী মানুষেরাই সালাফ। যাদেরকে আমরা সালাফে সালিহীন বলে জানি ও চিনি। তাদের রেখে যাওয়া মানহাজের নামই হচ্ছে সালাফী মানহাজ। এটি ছাড়াও আরো বেশ কিছু মানহাজ দুনিয়াতে অতীতে ছিলো ও বর্তমানে চালু আছে। অতীতের ও বর্তমানের সকল মানহাজ থেকে সালাফী মানহাজ সম্পূর্ণ আলাদা। এই মানহাজটি যেসব বৈশিষ্ট্যের কারণে আলাদা তার প্রধান প্রধান কয়েকটি বৈশিষ্ট্য নিচে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলোঃ

  • ● ১ নং বৈশিষ্ট্যঃ কুরআন ও সহীহ সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা এবং প্রবৃত্তি ও বিদ’আত-এর অনুসরণ না করাঃ
  • সর্বাবস্থায় কুরআন ও সহীহ সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার আদেশ সম্বলিত অসংখ্য দলীল কুরআন ও সুন্নাহতে রয়েছে। আর এটিই সালাফে সালিহীনের দেখানো মানহাজ। সালাফী মানহাজ-এর প্রথম ও প্রধান বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে, যে কোনো ছোট কিংবা বড় বিষয়কে যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে জ্ঞান ও সূক্ষ্মদৃষ্টিসহ কুরআন ও সুন্নাহের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া। সর্বোত্তম সালাফ অর্থাৎ সাহাবীগণ এই নীতিই অনুসরণ করতেন। এই প্রসঙ্গে সূরা নিসার ৫৯ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ তা’আলা স্পষ্ট করেই বলেছেন,

  • فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا“অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর”।

  • মতবিরোধের সময় এবং মতবিরোধ না হওয়ার সময় উভয় অবস্থায়ই কুরআন ও সুন্নাহকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরার পাশাপাশি সাহাবীদেরকেও বিশেষ করে খোলাফায়ে রাশিদীন-এর রীতিনীতিকে অনুসরণ করার নির্দেশনা এসেছে। বিশেষ করে রাসূলুল্লাহ সা.-এর ইন্তিকালের পরে তার অনুপস্থিতিতে যারা জীবিত থাকবেন তারা যদি কোনো মতবিরোধ দেখতে পান তাহলে তারা কী করবেন সেই নির্দেশনার ঘোষণা তিনি নিজেই দিয়ে গিয়েছেন।

  • একই সাথে ইখতিলাফের অন্যতম অনুঘটক মানবমনের খেয়ালখুশির অনুসরণ ও দীনের মধ্যে চালুকৃত নতুন কিছুর (বিদ’আতের) অনুসরণ করাকে শক্তভাবে বর্জন করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

  • فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِى فَسَيَرَى اخْتِلاَفًا كَثِيرًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِى وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِينَ تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ“তোমাদের মাঝে যারা আমার পরে জীবিত থাকবে, তারা বহু মতভেদ দেখতে পাবে। এমতাবস্থায় তোমাদের উচিত হবে আমার ও আমার খুলাফায়ে-রাশেদার সুন্নাতের অনুসরণ করা, যারা সত্য ও ন্যায়ের অনুসারী। তোমরা তাদের দৃঢ়ভাবে অনুসরণ করবে। তোমরা বিদ'আতের অনুসরণ ও অনুকরণ করা হতে দূরে থাকবে। কেননা, প্রত্যেক নতুন কথাই বিদ'আত এবং প্রত্যেক বিদ'আতই গুমরাহী”। (সুনান আবু দাঊদ, হাদীস নং- ৪৬০৯, শাইখ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ মানের বলেছেন।)

  • সালাফী মানহাজকে যারা অনুসরণ করেন তারা যা কিছু কুরআন ও সুন্নাহর সাথে মিলে যায় তাকে নির্দ্বিধায় গ্রহণ করেন এবং যা কিছু কুরআন ও সুন্নাহর বিরোধী হয় তা নিঃসংকোচে পরিত্যাগ করেন। তারা কোনোক্রমেই সহীহ ও সুসাব্যস্ত দলীল থেকে সরে যান না আর সহীহ দলীলের সামনে ব্যক্তিগত মতামত, গবেষণা ও তার ফলাফলকে এবং আকল (বিবেক/বুদ্ধি)-কে অগ্রাধিকার দেন না। অর্থাৎ তারা কুরআন ও সুন্নাহকে যাচাই-বাছাই করার জন্য নিজের আকল বা বুদ্ধি-বিবেচনাকে বিচারক বানান না। যেমনটা অতীতেও অনেকে করে বিভ্রান্ত হয়েছে, বর্তমানেও অনেকে আকল দ্বারা হাদীসকে যাচাই করতে গিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠিত ও সুসাব্যস্ত সহীহ হাদীসকে বাতিল ঘোষণা করছে।

  • মোটকথা, সালাফী মানহাজের প্রধান ও প্রথম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে জীবনের সকল ক্ষেত্রে কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা ও অগ্রাধিকার দেয়া এবং প্রবৃত্তি ও বিদ’আতের অনুসরণ থেকে নিরাপদ দূরে থাকা। কোনো মুসলিম ব্যক্তি যদি নিজেকে সালাফী দাবী করে তাহলে তাকে সর্বপ্রথম এই বৈশিষ্টের অধিকারী হতে হবে। এই বৈশিষ্টের অধিকারী না হয়ে সালাফী দাবী মিথ্যা।

  • (১ম পর্বের সমাপ্তি) salafi manhaj er boishista

Post a Comment

0 Comments