Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

❒ সালাফী মানহাজের বৈশিষ্ট্য (পর্ব-০২)

সালাফী মানহাজের বৈশিষ্ট্য (পর্ব-০২)
সহীহ আকিদা RIGP
২ নং বৈশিষ্ট্যঃ
● তাওহীদ সংরক্ষণে বিশেষ মনযোগ দেয়াঃ
.
তাওহীদ অর্থ হচ্ছে কোনো কিছুকে একক করা, এক বানানো। সকল ইলাহ বা উপাস্যকে অস্বীকার করে আল্লাহকে একমাত্র ইলাহ হিসাবে মনেপ্রাণে ও কর্মে মেনে নেয়ার নাম হচ্ছে তাওহীদ। কুরআন ও সুন্নাহতে তাওহীদকে আকীদার অন্যান্য বিষয়গুলো ও ইবাদাত, মু’আমালাত ইত্যাদির তুলনায় অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। তাই সালাফগণও সর্বদা তাওহীদকে ইসলামের অন্যান্য যে কোনো দিক, বিভাগ বা ইবাদাতের তুলনায় অগ্রাধিকার দিতেন। তাওহীদ সংরক্ষণে সর্বাধিক মনযোগ দিতেন। এজন্যই তাওহীদ সংরক্ষণকে সালাফী মানহাজের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হিসাবে গণ্য করা হয়।
.
এজন্যই সকল জ্ঞানের মধ্যে সর্বপ্রথম তাওহীদের জ্ঞান অর্জন করা প্রতিটি মুসলিমের জন্য আবশ্যক।
.
সূরা মুহাম্মাদ-এর ১৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্‌ সবার আগে এ কথা জানতে বলেছেন যে, আল্লাহ্‌ ছাড়া কোনো সত্যিকারের ইলাহ নেই। তাওহীদের বিশুদ্ধ জ্ঞান ছাড়া কোনো ইবাদাতই আল্লাহর কাছে পৌঁছে না। তাওহীদের বিপরীতে শিরকের সাথে সামান্য সম্পর্ক ব্যক্তিকে জাহান্নামে নিক্ষেপের কারণ হতে পারে। তাই আমল কবুল হওয়ার জন্য শিরকমুক্ত আকীদা ও আমল হওয়া আবশ্যক।
.
আল্লাহর সমকক্ষ কাউকে মনে করলে বা তার জন্য নির্দিষ্ট কোনো কাজে তার সাথে অন্য কাউকে অংশীদার স্থাপন করলে তাওহীদ নষ্ট হয়ে যায়, শিরক হয়ে যায়। এই জন্য সালাফগণ সর্বদা তাওহীদ সংরক্ষণের ব্যাপারে অগ্রাধিকার ও যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করতেন। তারা তাওহীদের ওপরে এতো গুরুত্ব দেয়ার যথেষ্ট ভিত্তি ও দলীল বিদ্যমান। তারা যেহেতু সকল ক্ষেত্রে কুরআন ও সুন্নাহকে অগ্রাধিকার দিতেন সেহেতু যে বিষয়টিকে কেন্দ্র করে কুরআন ও সুন্নাহর পুরোটাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আলোচনা করেছে সেই বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিবেন এটাও তো স্বাভাবিক।
.
.
কুরআনে আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেন,
.
وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ
.
“তারা তো আদিষ্ট হয়েছিলো আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তার ইবাদাত করতে”। (সূরা আল-বায়্যিনাহ, আয়াত নং- ০৫)
‌_____________
.
আল্লাহর একত্ব প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে কেউ কেউ তাওহীদের হাকীকত সালাফগণের মানহাজ মোতাবেক না বুঝবার কারণে বিভ্রান্ত হয়েছে। আল্লাহর রুবুবিয়্যাত ও উলুহিয়্যাতের ক্ষেত্রে এসব বিভ্রান্ত গোষ্ঠীগুলোর বিভ্রান্তি যতটা না বেশি তার চেয়ে অনেক বেশি বিভ্রান্তি তাওহীদুল আসমা ওয়া সিফাত অর্থাৎ আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর ক্ষেত্রে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহর জন্য অন্য সৃষ্টির মত দেহাবয়ব সাব্যস্ত করেছে। আবার কেউ কেউ আল্লাহ্‌র তাওহীদ সংরক্ষণ করার নামে তার গুণাবলিকেই অস্বীকার করেছে বা অপব্যাখ্যা করেছে। এছাড়াও তাওহীদকে কেন্দ্র করে অনেকে বিভ্রান্ত হয়েছে শুধু এ সম্পর্কে সালাফগণের মানহাজকে না বোঝার কারণে।
.
সালাফগণ একদিকে যেমন কুরআন ও সুন্নাহতে বর্ণিত আল্লাহর নাম ও গুণাবলী যথাযথভাবে সাব্যস্ত করেছেন আবার যারা এগুলোর অপব্যাখ্যা করেছেন তাদেরও জবাব দিয়েছেন। তাই সালফগণের জীবন ও যুগ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তারা তাদের জীবনে তাওহীদ প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণের প্রতি সর্বাধিক মনযোগ দিয়েছেন। তাই এটি কালক্রমে সালাফী মানহাজের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে।
.
ইসলামে তাওহীদের অবস্থান সর্বোচ্চ। এটি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন, এর শর্তাবলি বাস্তবায়ন ও এর দাবীসমূহ পূরণ করাই তাওহীদ সংরক্ষণ। মানব্জীবনের অভীষ্ট লক্ষ্যই হলো তার জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করা। আর ইসলামী শরীয়াতেরও অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য (মাকসাদ) হলো, দ্বীনের সংরক্ষণ (হিফযুদ দ্বীন)। দ্বীন সংরক্ষণের প্রথম স্তরই হচ্ছে আকীদা সংরক্ষণ এবং সকল শিরক, বিদ’আত ও জাহিলিয়্যাত থেকে দ্বীনকে মুক্ত রাখা। সালাফগণ সর্বদা এই কাজই করে গেছেন।
.
অনেকে সালফী মানহাজের অনুসারীদের এই মর্মে অভিযুক্ত করেন যে, সালাফীগণ নাকি #রাষ্ট্রীয়ভাবে#তাওহীদ #প্রতিষ্ঠার কাজ করেন না। আসলে সালাফীদের প্রতি এই ধারণা সঠিক নয়। বর্তমান যুগের সালাফীগণও সালাফগণের অনুসরণে ব্যক্তিজীবন থেকে রাষ্ট্রীয় বা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তাওহীদের প্রতিষ্ঠা চান। কিন্তু তারা শুরু করতে চান ব্যক্তি থেকে। রাষ্ট্রীয়ভাবে তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করার ক্ষমতা ও সুযোগ আসার পূর্ব পর্যন্ত ব্যক্তি, পরিবার, সমাজে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার কাজ করতে হবে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা যখন আসবে তখন তাওহীদকে আরো পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা যাবে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আসার পূর্ব পর্যন্ত ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ পর্যায়ে তাওহীদ প্রতিষ্ঠায় যথেষ্ট গুরুত্ব না দেয়া সালাফগণের নীতি নয়।
.তাই সালাফগণ যেমন তাদের যুগে সাধ্যানুযায়ী সার্বিকভাবে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার কাজ করে গেছেন তেমনিভাবে আমাদেরও কর্তব্য তাদের মত করে, তাদের স্টাইলে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার কাজ করা। সালাফগণ যেভাবে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার কাজ করেননি সেভাবে চেষ্টা করে কিয়ামত পর্যন্ত তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। সালাফীগণ সালাফগণের বুঝ ও তরীকা মোতাবেকই তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করতে চায়; আধুনিক যুগের কোনো চিন্তাবিদের চিন্তাধারা অনুযায়ী নয়।
.(২য় পর্বের সমাপ্তি)

Post a Comment

0 Comments