Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

বাঙ্গালীর সউদি বিদ্বেষ পর্বঃ-৪

  • বাঙ্গালীর সৌদী বিদ্বেষ পর্বঃ-৪

  • অনেকেই হয়ত জানেন না ইহুদী, খৃষ্টান, মুশরিক এবং নাস্তিকেরা মুসলমানের যত ক্ষতি করেছে, তার চেয়ে শতগুণ বেশী ক্ষতি হতে হয়েছে শিয়া মুনাফিকদের হাতে৷ শিয়াদের উৎপত্তি হয় ইহুদী আব্দুল্লাহ ইবনে সাবার দ্বারা৷ তার নামটি মুসলিমের মত হলেও প্রকৃতপক্ষে সে ছিলো একজন ইহুদী গুপ্তচর৷ তখনকার সময়ে আরবীয় অঞ্চলের মুসলিম, খৃষ্টান, ইহুদী কিংবা মুশরিক সকলের নামই এমন ছিলো৷

  • সে বাহ্যিকভাবে ইসলাম গ্রহণ করে৷ দু'হাতে দান করা থেকে শুরু করে মানুষের মন জয় করার জন্য যা যা করা দরকার তার কিছুই করতে সে বাদ রাখেনি। অল্পদিনেই অনেক সহজ-সরল মুসলমান তার ভক্ত হয়ে যায়৷ এদের নিয়ে সে শিয়া সম্প্রদায় গঠন করে৷ পরবর্তীতে তার ভক্তরা অর্থাৎ শিয়া সম্প্রদায় অসংখ্য দলে বিভক্ত হয়৷ জঙ্গে জামাল, জঙ্গে সিফফীন এবং কারবালার মত হৃদয় বিদারক যুদ্ধগুলো মূলত শিয়া মুনাফিকদের কূটকৌশলের কারনেই সংঘটিত হয়৷

  • ইসলামাবাদ গভঃ ডিগ্রী কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের সাবেক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ রচিত "Historical sites of Madinah Munawwarah" গ্রন্থে শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দীসে দেহলভী (রহঃ) এর "তারীখে মদীনা" কিতাবের রেফারেন্স দিয়ে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পবিত্র রওজা মুবারককে নিয়ে তিনটি ষড়যন্ত্রের ঘটনা উল্লেখ করেন৷ এর মাঝে একটিতে ইহুদী এবং দু'টিতে শিয়া সম্প্রদায় জড়িত৷

  • ৯৩০ সালে আব্বাসিয় খিলাফতের সময় আবু তাহের কারামতী নামক এক শিয়া হজ্বের মৌসুমে মক্কা শরীফ আক্রমন করে হাজরে আসওয়াদ ছিনতাই করে নিয়ে যায়৷ কাবা শরীফ তাওয়াফ রত মুসলিমদের উপর আক্রমন চালিয়ে প্রায় তিরিশ হাজার হাজীকে হত্যা করে। পবিত্র কাবা শরীফের দরজা ভেঙ্গে তছনছ করে দেয়। লন্ডভন্ড করে দেয় জমজম কূপকেও৷ আবু তাহের ঐ সময় আকাশের দিকে তাকিয়ে আল্লাহকে বলেছিলো, কোথায় তোমার আবাবিল পাখি, কোথায়? তার কারনে প্রায় দশ বছর হজ্ব বন্ধ থাকে এবং এগার বছর মুসলমানরা হাজরে আসওয়াদ ছাড়া হজ্ব পালন করে৷ (বিস্তারিত: শয়তানের বেহেশত-১ by এনায়েতুল্লাহ আলতামাশ)

  • সালাহউদ্দিন আইয়্যুবী (রহঃ) এর জেরুজালেম বিজয়ের ইতিহাস যারা পড়েছেন তারা জানেন যে অন্তত বিশ বার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে তাঁকে হত্যা করার জন্যে, বরাবরই মহান আল্লাহর সাহায্যে তিনি বেঁচে যান৷ যে ফেদাইন গোষ্ঠী তাঁকে হত্যা করার চেষ্টা করেছে তাদের গুরু ছিলো হাসান আল সাবাহ এবং সেও একজন শিয়া৷ (পুরো "ক্রুসেড সিরিজ" গুগল প্লে ষ্টোরে পাওয়া যায়৷ ডাউনলোড করে পড়ে দেখতে পারেন)

  • বাগদাদের কসাই খ্যাত হালাকু খানের নাম অনেকেই শুনেছেন৷ তার স্ত্রী ছিলো ডোকুজ বা দোকুজ খাতুন৷ "খান" এবং "খাতুন" নাম শোনে অনেকেই তাদের মুসলমান ভাবতে পারেন৷ খান শব্দের অর্থ লিডার বা নেতা৷ খাতুন শব্দের অর্থ প্রিন্সেস বা রাজকুমারী৷ হালাকু খান ছিলো বৌদ্ধ এবং তার স্ত্রী ছিলো খৃষ্টান৷ তার উপদেষ্টা ছিলো ইবনুল আলকেমি এবং নাসিরূদ্দীন তুসী৷ এ দু'জনেই ছিলো শীয়া এবং এদের প্ররোচনায় হালাকু খান বাগদাদে প্রায় দশ থেকে বিশ লক্ষ নিরীহ মুসলমানকে হত্যা করে৷ (বিস্তারিতঃ আল-বিদায়া ওয়া আন-নিহায়া by ইবনে কাসীর, দ্যা-প্যান্থার রোকনউদ্দীন বাইবার্স by ইমরান আহমেদ)

  • শিয়া-সুন্নী দ্বন্ধ আমাদের দেশে চোখে না পড়লেও আরবে রাষ্ট্রগুলোতে এই দ্বন্ধটি অত্যন্ত প্রবল এবং প্রকট৷ শিয়ারা আরবের সুন্নীদের এখনও কি পরিমাণ ঘৃণার চোখে দেখে তার সামান্য নমুনা পাওয়া এক ইরাকি ভাইয়ের জবানিতে৷

  • কয়েক বছর আগে মিশরের একটি টিভিতে লাইভ অনুষ্ঠানে শায়খ জহবি হাম্মাদকে ইরাকের বাগদাদ থেকে একজন সুন্নি মুসলিম ফোন করে নিজের করুন কাহিনী বর্ণণা করে বলেন, “হে শায়খ, আমাদের মেয়েদেরকে বন্ধী করা হচ্ছে, আহলুস সুন্নাহর পুরুষদের দাঁড়ি ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে, তাঁদেরকে জীবন্ত পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে, বৃদ্ধাদের লাঠি দিয়ে আঘাত করা হচ্ছে। তারা আমাদের উপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে কারন তারা চায় আমরা যেন মা আয়েশা (রাঃ) কে গালি দেই (নাউজুবিল্লাহ)। তারা আমার দাড়িতে ময়লা লাগিয়ে আমাকে অপদস্থ করেছে৷ তারা আমাদের মেয়েদেরকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে; আমাদের মাঝে যাদের নাম আবু বকর, ওমর, ওসমান আছে তাঁদেরকে তারা জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষেপ করছে। আমি একটি মেয়েকে দেখেছি যাকে ধর্ষণ করা হয়েছে, সে মেয়েটি আল্লাহর কসম করে বলেছে- ওয়াল্লাহি, আমি কুমারি ছিলাম! ওয়াল্লাহি আমি কোরআনের হাফিজ ছিলাম! সে চিৎকার করে বলে- কে আমার গল্প রসূল সাঃ এর কাছে পৌঁছে দিবে?হে শায়খ! এবার আমার নিজের কাহিনী শুনুন। রাফিজিরা আমার তিন বছরের ছেলেকে ওভেনের ভিতর দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। কারন তাঁর নাম রেখেছিলাম ওমর। এরপর তারা তাঁর পোড়া মৃত দেহ আমার কাছে রেখে যায়।”(নেট হতে সংগৃহীত)

  • যে বাশার আল আসাদের ক্ষমতার বলি হয়ে সিরিয়া আজ ধূলোয় সাথে মিশে যাচ্ছে সে একজন শিয়া৷ ইয়ামেন-সৌদী যুদ্ধটা হচ্ছে মূলত হুতিদের সাথে৷ এই হুতিরা শিয়া মতাদর্শী৷ যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টা করতে গিয়ে মাত্র কিছুদিন পূর্বে ইয়ামেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ সালেহকে প্রাণ দিতে হয়েছে হুতিদের হাতে৷

  • শিয়াদের সব চেয়ে ভালো গুণ হলো শিয়া নেতারা, ইমামরা, আলেমরা যা বলে ও লিখে, কোন শিয়া কখনোই তার প্রতিবাদ করে না৷ এরা কোরান ও হাদীসের চেয়ে তাদের নেতা এবং ইমামের কথাকে বেশি গুরত্ব দেয়৷ শিয়াদের বর্তমান সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু বা আধ্যাত্মিক নেতা হচ্ছে আয়াতুল্লাহ খোমেনী৷

  • আঠার শতকের রূশ সিংহ ইমাম শামিল (রহঃ) যখন জার সৈন্যদের হাতে গ্রেফতার হন, তখন তাঁকে রূশ সম্রাট জিজ্ঞেস করেছিলেন, তাঁর শেষ ইচ্ছা কি? তিনি বলেছিলেন, তিনি হজ্ব পালন করতে চান৷ প্রতিটি মুসলমানের সাধারণত এমনই নিয়্যত থাকে, মৃত্যুর পূর্বে যেন একবার হলেও হজ্ব পালন করতে পারেন৷ কিন্তু আয়াতুল্লাহ খোমেনী এমনই এক ইসলামী নেতা যার সব ধরনের সুযোগ সুবিধা থাকা সত্বেও হজ্ব পালন করে নি৷

  • অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে খোমেনী হজ্ব না করলে কি হয়েছে? শিয়ারাতো হজ্ব করে৷ শিয়ারা যখন হজ্ব ও ওমরাহ্ করতে আসে তখন তারা তাদের নিজস্ব ইমাম নিয়ে আসে এবং তার পেছনে নামায পড়ে৷ এরা সাধারণত মক্কা-মদীনার ইমামদের পেছনে নামায পড়ে না৷ আর যদি পড়েও তারা বাইতুল্লাহ এবং মসজিদে নববীতে সিজদা করে না৷ তারা ক্যারামের গুটির মত গোলাকার মাটির চাকা তাদের সাথে রাখে এবং এটিতে সিজদা করে৷ তাদের ভাষ্যমতে, এই গোলাকার মাটির চাকাটি কারবালার মাটি দিয়ে তৈরি এবং কারবালা তাদের কাছে মক্কা-মদীনার চেয়েও পবিত্র৷

  • আফসোসের বিষয় হলো, শিয়াদের পাশাপাশি আমাদের দেশের অনেক সুন্নী মুসলমানও খোমেনীকে বিশাল বড় ধর্মীয় নেতা মানে এবং মনে করে ইরান বা খোমেনীর নেতৃত্বে আরব থেকে ইহুদীদের বিতাড়িত করে জেরুজালেম পুনরূদ্ধার করা হবে৷ তাদের জন্য দুঃসংবাদ হলো ইসরাঈলের পরে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ইহুদীর বসত ইরানের ইস্পাহান প্রদেশে৷ এই ইস্পাহান প্রদেশ এক সময় হাসান আল সাবাহর গুরু শিয়া জাদুকর আবদুল মালিক আল আতাশের দখলে ছিলো৷ দুনিয়াতে শয়তানকে প্রথম এখানেই পাঠানো হয়৷

  • ইরানি শিয়ারা শুধু নিজ দেশে ইহুদীদের আশ্রয় দেয়নি ইসরাঈলের ইহুদীদের সুরক্ষার ব্যবস্থাও করেছে৷ ইসরাঈলী ডিফেন্স ফোর্সের বিরাট একটা অংশ ড্রুজ সম্প্রদায়৷ এই ড্রুজ সম্প্রদায় হচ্ছে ইসমাঈলী শিয়াদের একটা গ্রুপ৷ অনেকে এক্ষেত্রে লেবাননের হিজবুল্লাহর (এটিও শিয়াদের একটি গ্রুপ) সাথে ইসরাঈলের বিরোধকে সামনে নিয়ে আসবেন৷ আপনি যদি শেক্সপিয়রের "মার্চেট অব ভেনিস", চার্লস ডিকেন্সের "অলিভার ট্যুইস্ট" পড়ে থাকেন, সেখানে দেখবেন এক সময় খৃষ্টানদের সাথেও বিরোধ ছিলো ইহুদীদের সাথে৷ আজকে মুসলিম নিধনে তারা একে অপরের সহযোগী৷

  • আমরা যদি গত কয়েক দশকের ইরান-ইসরাঈলের সম্পর্ক পর্যালোচনা করি তাহলে দেখা যাবে তাদের সম্পর্কটা চলছে, "লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই লাগলে আমরা নাই" ভিত্তিতে৷ আরবের অন্যান্য দেশগুলোর দিকে যদি আমরা লক্ষ্য করি মিশর, সুদান, লেবানন সহ আরবের অনেক দেশেই শিয়া-সুন্নী ছাড়াও খৃষ্টান বাস করে৷ অর্থাৎ পুরো আরবে এখন সুন্নী, শিয়া, ইহুদী, খৃষ্টান এই চার সম্প্রদায়ের বসবাস৷ এর মাঝে সুন্নীরা বিভক্ত আর এদের দমন করার জন্য বাকিরা সবাই ঐক্যবদ্ধ৷

  • শিয়ারা বাইতুল্লাহ এবং মসজিদে নববীতে নামায না পড়ার অন্যতম কারন হলো, এই পবিত্র মসজিদ দু'টিতে শিয়া পন্থী কোন ইমাম নেই৷ তারা চাইছে মধ্যপ্রাচ্যে যেকোন ভাবে একটা গোলযোগ বাধিয়ে এই পবিত্র মসজিদ দু'টির দখল নিতে৷ শিয়াদের উত্থান মুসলমানদের জন্য কি রকম বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে তা ইতিহাসের দিকে তাকালেই চোখে পড়ে৷ যার কারনে মধ্যপ্রাচ্যের সুন্নী আলেমগণ ইহুদীদের চেয়েও বেশি সতর্ক শিয়াদের ব্যাপারে৷

  • অপ্রিয় হলেও সত্য, আমাদের দেশের মুসলমানদের প্রচুর ধর্মীয় আবেগ আছে কিন্তু ধর্মীয়, রাষ্ট্রীয়, ইতিহাস জ্ঞান এখনো প্রাইমারী পর্যায়ে৷ এই প্রাইমারী পর্যায়ের জ্ঞান নিয়ে তারা পিএইচডি লেভেলের চিন্তা করে৷ অনেকের টাইম লাইনে প্রায় সময় একটা কার্টুন চিত্র দেখা যায়, যেখানে সৌদী আরবের একজন নাগরিক ডলারের উপরের দাঁড়িয়ে আছে আর ইরান গণিত, দর্শণ সহ বিভিন্ন বইয়ের উপর দাঁড়িয়ে আছে৷ কার্টুনটির মূল থিম হচ্ছে শিক্ষা, দীক্ষা, জ্ঞানে, গুণে ইরান সৌদী আরবের চেয়ে অনেক অনেক গুণ উপরে৷

  • শিয়ারা এধরনের কার্টুন প্রচার করার পেছনে তাদের ভিসন আছে৷ কিন্তু সুন্নীরা কেন করছে? হুজুগে, আবেগে, অজ্ঞতা এবং অন্ধ বিদ্বেষ থেকে৷

  • তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম ইরান সৌদী থেকে সব দিক দিয়ে অনেক অনেক উন্নত৷ তাদের এই উন্নতি বাংলাদেশের কি কাজে লেগেছে? বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে ইরান থেকে কি পরিমাণ সাহায্য আসছে? বাংলাদেশ থেকে কতজন ছাত্র ইরানে গিয়ে পড়ালেখা করতে পারছে? ইরানে গিয়ে বাংলাদেশের কতজন যুবকের বেকারত্বের অবসান হয়েছে? বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইরানের অবদান কি?

  • আজকের বাংলাদেশের উন্নতির পেছনে এক নাম্বার বন্ধু রাষ্ট্র হলো সৌদী আরব৷ অথচ বাংলাদেশের মানুষ উঠতে বসতে সৌদী আরবকে গালাগালি করে! বাঙ্গালীর ইরান প্রীতির সাথে আমাদের আঞ্চলিক একটা প্রবাদের খুব মিল আছে ৷ আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় বলে, "ভাত খায় ভাতাইয়ার, হা টিবে নন্দাইয়ার" (স্বামীর ভাত খেয়ে ননদের স্বামীর গুণ গাওয়া)৷

  • যে দেশটির বাংলাদেশে তেমন কোন অবদান নেই, সে দেশের প্রেমে বাংলাদেশের মানুষের মুগ্ধ হওয়ার পেছনে বিশাল এক রহস্য লুকিয়ে আছে৷ সেই রহস্য জানতে হলে আমাদের উপমহাদেশের ইতিহাসের দিকে তাকাতে হবে৷

  • (কলাম--->>সাইদুর রহমান।)