🔴প্রসংগঃ রাজতন্ত্র কি ইসলামে জায়েজ?
--বহুল আলোচিত সমালোচিত প্রশ্নের জবাব--
➖➖➖➖➖➖➖🇸🇦➖➖➖➖➖➖➖
সৌদি রাজতন্ত্র শরী‘আতসম্মত। ইসলামে রাজতন্ত্র আদৌ নিষিদ্ধ নয়। সঊদী রাজতন্ত্রে আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করা হয় এবং তা কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী পরিচালিত হয়।
যেমন সঊদী সংবিধানের ৭নং ধারায় বলা হয়েছে, ﻳﺴﺔﻣﺪ ﺍﻟﺤﻜﻢ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﻤﻠﻜﺔ ﺍﻟﻌﺮﺑﻴﺔ ﺍﻟﺴﻌﻮﺩﻳﺔ ﺳﻠﻄﺔﻩ ﻣﻦ ﻛﺔﺍﺏ ﺍﻟﻠﻪ ﺓﻋﺎﻟﻰ ﻭﺳﻨﺔ ﺭﺳﻮﻟﻪ . ﻭﻫﻤﺎ ﺍﻟﺤﺎﻛﻤﺎﻥ ﻋﻠﻰ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻨﻈﺎﻡ ﻭﺟﻤﻴﻊ ﺃﻧﻈﻤﺔ ﺍﻟﺪﻭﻟﺔ (সঊদী রাজতন্ত্রের সর্বত্র আল্লাহর কিতাব ও তার রাসূলের সুন্নাহর কর্তৃত্ব জারী থাকবে)। ৮নং ধারায় বলা হয়েছে, ﻳﻘﻮﻡ ﺍﻟﺤﻜﻢ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﻤﻠﻜﺔ ﺍﻟﻌﺮﺑﻴﺔ ﺍﻟﺴﻌﻮﺩﻳﺔ ﻋﻠﻰ ﺃﺳﺎﺱ ﺍﻟﻌﺪﻝ ﻭﺍﻟﺸﻮﺭﻯ ﻭﺍﻟﻤﺴﺎﻭﺍﺓ ﻭﻓﻖ ﺍﻟﺸﺮﻳﻌﺔ ﺍﻹﺳﻼﻣﻴﺔ (সঊদী রাজতন্ত্রের বিধানসমূহ প্রতিষ্ঠিত হবে ইসলামী শরী‘আতের অনুকূলে ন্যায়পরায়ণতা, পরামর্শ ও সমতাবিধানের ভিত্তির উপরে)।
অতএব শাসক যদি আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করেন এবং ইসলামী শরী‘আত অনুযায়ী রাজ্যশাসন করেন, তাহ’লে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি তার অনুকূলে। উক্ত নীতির অনুসরণে কোন শাসক যদি পরবর্তী শাসক হিসাবে তার পরিবার থেকে যোগ্য কাউকে বা অন্য কারু ব্যাপারে অছিয়ত করে যান, তাতে কোন বাঁধা নেই। যেমন আবুবকর (রাঃ) মৃত্যুকালীন সময়ে বিশিষ্ট ছাহাবীগণের সাথে পরামর্শক্রমে পরবর্তী খলীফা হিসাবে ওমর (রাঃ)-কে নির্বাচন করেন (তারীখে ত্বাবারী ২/৩৫২-৩৫৩; ইবনু সা‘দ, তাবাক্বাতুল কুবরা ৩/১৯৯-২০০) । শাসক পরিবার থেকে কেউ পরবর্তী শাসক হ’তে পারবে না, এরূপ কোন নিষেধাজ্ঞা শরী‘আতে নেই। এক্ষণে শাসক যদি অযোগ্য কারো ব্যাপারে অছিয়ত করে থাকেন, তার জন্য তিনিই দায়ী হবেন। কেননা অযোগ্য লোককে ক্ষমতাসীন করাকে রাসূল (ছাঃ) ক্বিয়ামতের আলামত হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন (বুখারী হা/৫৯, মিশকাত হা/৫৪৩৯) । অতএব মৌলিকভাবে সঊদী রাজতন্ত্র শরী‘আতবিরোধী গণ্য করার কোন সুযোগ নেই।
পক্ষান্তরে পশ্চিমা গণতন্ত্রের মৌলিক ভিত্তিই হ’ল ধর্মনিরপেক্ষতা। যেখানে মানুষ হ’ল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। আর আইন রচনার ভিত্তি হ’ল, মানুষের মনগড়া সিদ্ধান্ত। এভাবে ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ প্রথমে মুসলমানকে ঈমানের গন্ডীমুক্ত করে। অতঃপর গণতন্ত্র তাকে মানুষের গোলাম বানায়। অতঃপর সে আল্লাহর সন্তুষ্টি বাদ দিয়ে ভোটারের মনস্ত্তষ্টিকে অগ্রাধিকার দেয়। যা তাকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ ব্যতীত কারু বিধান দেবার ক্ষমতা নেই’ (ইউসুফ ১২/৪০) । তিনি বলেন, যদি তুমি জনপদের অধিকাংশ লোকের কথা মেনে চল, তাহ’লে ওরা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। তারা তো কেবল ধারণার অনুসরণ করে এবং তারা তো কেবল অনুমান ভিত্তিক কথা বলে’ (আন‘আম ৬/১১৬) ।
একইভাবে গণতন্ত্র সমাজের প্রত্যেককে ক্ষমতালোভী করে তোলে। অথচ ক্ষমতা চেয়ে নেওয়া শরী‘আতে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৩৬৮০, ৩৬৮৩) ।
অনেকে রাজতন্ত্র হারাম, ইসলাম বিরোধী বলে ফতোয়া দিচ্ছেন। এই ধরণের মানুষেরা কয়েকভাগে বিভক্তঃ
=> ভ্রান্ত মতবাদে বিশ্বাসী শিয়া, যারা অনেক সাহাবিকে কাফের মনে করে (নাউযুবিল্লাহ)!
=> শিয়াপ্রেমী জামাতে ইসলামী, ইখোয়ানুল মুসলিমিন এইরকম ইসলামী আন্দোলনের লোকেরা যারা ইসলামের নামে গণতান্ত্রিক শিরকি মতবাদের মাধ্যমে ক্ষমতা পেতে চায়, হিকমতের নামে নারী নেতৃত্ব জায়েজ ফতোয়া দেয়।
=> জেএমবি বা সমমনা খারেজী মনোভাবের লোকেরা যাদের মেইন কাজ হচ্ছে মানুষ্কে পাইকারি হারে কাফের ফতোয়া দিয়ে বোমাবাজি করা, নিজে ঘরে বসে থেকে অন্যদেরক জিহাদ নিয়ে গালি দেওয়া। এই মূর্খ ফতোয়াবাজরা ৯/১১ এর মতো টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী আক্রমনকেও জিহাদ মনে করে, আত্মঘাতী বোমা হামলা নামের বর্বর আত্মহত্যা করে নিজেকে ধ্বংস করা ও নির্বিচঁারে মানুষ হত্যা ও সম্পদ নষ্ট করার সিস্টেমকে অনেক ফযীলতের কাজ বলে মনে করে।
যাই হোক, রাসুল সাঃ সহীহ হাদীসে বলেছেন - তোমাদের মাঝে খিলাফত থাকবে ৩০ বছর, এর পর হবে রাজত্বের যুগ। যেই সাহাবী এই হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেনঃ আমীরে মুয়াবিয়া রাঃ রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন (ইয়াজীদকে তার পরবর্তি খলিফা নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে)।
লক্ষ্য করে দেখুন, রাসুল সাঃ কে আল্লাহ আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, মুসলমদের মাঝে রাজতন্ত্র চালু হবে - তবুও কোন একটি সহীহ হাদিস পাওয়া যায়না যেখানে রাসুল সাঃ রাজতন্ত্রকে হারাম ফতোয়া দিয়েছেন, রাজাদের কাছে বায়াত করতে, তাদের আনুগত্য করতে নিষেধ করেছেন। বরং এটা পাওয়া যায়, নেতা যতই অত্যাচারি জুলুমবাজ হোক, যতদিন পর্যন্ত তারা নামায কায়েম করে, ভালো কাজে তাদের আনুগত্য করা ফরয। এ সম্পর্কে অনেক হাদিস আছে যার কিছু পাবেন সহীহ মুসলিমের কিতাবুল ইমারাতে।
এছাড়াও, সোলায়মান আঃ সহ অনেক নবীকে আল্লাহ রাজত্ব দান করেছিলেন যা অনেক ক্ষেত্রে বংশ পরম্পরায় চালু ছিলো।
রাজত্ব ইসলামে সর্বোত্তম পদ্ধতি নয়, সর্বোত্তম হচ্ছে শুরার মাধ্যমে খলিফা নির্বাচন করা, তবে পূর্বের খলিফা যদি পরবর্তী খলিফা নির্বাচন করে দিয়ে যান, সেটাও জায়েজ যা আবু বকর রাঃ করেছিলেন। এ সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ইমাম ইবনে কাসীর সুরা বাক্বারার তাফসীরে।
ক্বুরান ও হাদিসের সুস্পষ্ট বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে বড় বড় সাহাবী যেমন হাসান রাঃ, আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাঃ, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ সহ সমস্ত সাহাবি, সমস্ত তাবেয়ী, তাবে তাবেয়ী, ইমাম আবু হানীফাহ, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ি, ইমাম আহমাদ রাজতন্ত্রের রাজাদের আনুগত্য করেছেন, এবং আমাদের জন্য ভালো কাজে রাজার আনুগত্য করা ফরয বলে ফতোয়া দিয়েছেন। এমনকি সুন্নতের কঠোর পাবন্দী বিজ্ঞ সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাঃ যারা ইয়াজিদের বাইয়াত ভংগ করেছিল তাদের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই বলে ঘোষণা করেছিলেন এবং তাদেরকে তোওবা করে ইয়াজীদের বাইয়াত করতে উপদেশ দেন।
এছাড়া আরো বহু ঘটনা দ্বারা প্রমানিত, রাজা বাদশাহ অত্যাচারি হলেও সাহাবাদের আদর্শ হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করা, নেকের কাজে তাদের আনুগত্য করা, মানুষের সামনে তাদের দোষ ত্রুটি বর্ণনা করে তাদের বিরুদ্ধে মানুষকে খেপিয়ে না তোলা। বরং তাদেরকে প্রাইভেটলি উপদেশ দেওয়া, নসিহত করা, বোঝানো। আর সাহাবীদের তরিকাই হচ্ছে প্রকৃত ইসলাম, এর বিরোধীতা যারা করে তারা হচ্ছে শিয়া বা খারেজী।
সর্বশেষ, রাজা যদি ক্বুরান ও সুন্নাহ দিয়ে দেশ পরিচালনা করে, নামায কায়েম রাখে, তাহলে ভালো কাজে তার আনুগত্য করা ফরয। আর কেউ যদি অন্যায়ভাবে সেই রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, চাই সে ভালো হোক বা অত্যাচারি হোক, তাহলে সে খারেজী বলে গণ্য হবে। হানাফি মাযহাবের বড় আলেম ইমাম তাহাবী তার বিখ্যাত আকীদাহ তাহাভিয়াতে এই কথাগুলো উল্লেখ করেছেন।
দুঃখের বিষয় হচ্ছে মাওলানা মওদুদি, সাইয়েদ কুতুব, হাসান আল বান্নার মত বিংশ শতাব্দীর দার্শনিক চিন্তাভেদেরা এইগুলো বিশ্বাস করতোনা, কারণ তারা শিয়াপ্রেমী ছিলো। আর বর্তমানে তাদের অন্ধ ভক্তরা সাহাবিদের তরিকার বিরোধীতা করে ও সুন্নাহ নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করে। আল্লাহু মুস্তাআন।
● কুরআনে আল্লাহ্ বলছেন:
মূসার পরে তুমি কি বনী ইসরাঈলের একটি দলকে দেখনি, যখন তারা বলেছে নিজেদের নবীর কাছে যে, আমাদের জন্য একজন বাদশাহ (রাজা) নির্ধারিত করে দিন যাতে আমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে পারি। নবী বললেন, তোমাদের প্রতিও কি এমন ধারণা করা যায় যে, লড়াইর হুকুম যদি হয়, তাহলে তখন তোমরা লড়বে না? তারা বলল, আমাদের কি হয়েছে যে, আমরা আল্লাহর পথে লড়াই করব না। অথচ আমরা বিতাড়িত হয়েছি নিজেদের ঘর-বাড়ী ও সন্তান-সন্ততি থেকে।
অতঃপর যখন লড়াইয়ের নির্দেশ হলো, তখন সামান্য কয়েকজন ছাড়া তাদের সবাই ঘুরে দাঁড়ালো। আর আল্লাহ তা’আলা জালেমদের ভাল করেই জানেন। আর তাদেরকে তাদের নবী বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তালূতকে তোমাদের জন্য বাদশাহ (রাজা) সাব্যস্ত করেছেন। তারা বলতে লাগল, তা কেমন করে হয় যে, তার শাসন চলবে আমাদের উপর। অথচ রাষ্ট্রক্ষমতা (রাজতন্ত্র) পাওয়ার ক্ষেত্রে তার চেয়ে আমাদেরই অধিকার বেশী। আর সে সম্পদের দিক দিয়েও সচ্ছল নয়। নবী বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর তাকে পছন্দ করেছেন এবং স্বাস্থ্য ও জ্ঞানের দিক দিয়ে প্রাচুর্য দান করেছেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তাকেই রাজ্য (রাজতন্ত্র) দান করেন, যাকে ইচ্ছা। আর আল্লাহ হলেন অনুগ্রহ দানকারী এবং সব বিষয়ে অবগত…[সূরা বাকারাহ্, আয়াত: ২৪৬-২৪৭]
যখন মূসা স্বীয় সম্প্রদায়কে বললেনঃ হে আমার সম্প্রদায়, তোমাদের প্রতি আল্লাহর নেয়ামত স্মরণ কর, যখন তিনি তোমাদের মধ্যে পয়গম্বর সৃষ্টি করেছেন, তোমাদেরকে রাজ্যাধিপতি (রাজা) করেছেন এবং তোমাদেরকে এমন জিনিস দিয়েছেন, যা বিশ্বজগতের কাউকে দেননি…[সূরা আল-মাইদা, আয়াত-২০]
নাকি যাকিছু আল্লাহ তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহে দান করেছেন সে বিষয়ের জন্য মানুষকে হিংসা করে। অবশ্যই আমি ইব্রাহীমের বংশধরদেরকে কিতাব ও হেকমত দান করেছিলাম আর তাদেরকে দান করেছিলাম বিশাল রাজ্য (রাজতন্ত্র)…[সূরা আন-নিসা, আয়াত-৫৪]
● উপরের এই আয়াত গুলি থেকে স্পষ্ট হয় যে, রাজতন্ত্র ইসলামে বৈধ, কারন কুরআনে আল্লাহ্ বলছেন: “আল্লাহ তালূতকে তোমাদের জন্য বাদশাহ (রাজা) সাব্যস্ত করেছেন”… [সূরা বাকারাহ্, আয়াত: ২৪৭]
রাসুল (সাঃ) এর জীবনী তত্কালীন ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, ( সুত্রঃ আর রাহিকুল মাখতুম)
কাফেররা রাসুল (সাঃ) কে তাদের রাজা বানানোর প্রস্তাব দিয়েছিল। বিনিময়ে দ্বীন প্রচার বন্ধ করতে হবে। রাসুল (সাঃ) , আমার এক হাতে সূর্য অন্য হাতে চন্দ্র এনে দিলেও কোনো কিছুর বিনিময়ে তিনি দ্বীন প্রচার থেকে পিছু হটবেন না। এখানে রাসুল (সাঃ) বলেন নি রাজা হওয়া বা রাজ্য ব্যবস্থা আলাহ নিষেধ করেছেন।
রাসুল (সাঃ) বিভিন্ন রাষ্ট্রনায়কদের কাছে পত্র প্রেরণ করেছেন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে।
রাসূল (সাঃ)সারা বিশ্বের রাসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছিলেন। সুতরাং পৃথিবীর সব জায়গায় ইসলামের আহ্বান পৌঁছ দেয়া তাঁর দায়িত্ব ছিল। হুদায়বিয়ার সন্ধির পর কুরাইশ ও অন্যান্য আরব গোত্রগুলো থেকে আশ্বস্ত হয়ে এ কাজে মননিবেশ করেন। সেসময়ে পৃথিবীর প্রধান রাজশক্তিগুলো ছিল ইউরোপের রোম সাম্রাজ্য (the holy roman empire),এশিয়ার পারস্য সাম্রাজ্য এবং আফ্রিকার হাবশা সাম্রাজ্য। এছাড়াও মিশরের 'আযীয মুকাউকিস',ইয়ামামার সর্দার এবং সিরিয়ার গাসসানী শাসনকর্তাও বেশ প্রতাপশালী ছিল। তাই ষষ্ঠ হিজরীর জিলহজ্জ মাসের শেষদিকে একইদিনে এদেঁর কাছে ইসলামের আহ্বানপত্রসহ ছয়জন দূত প্রেরণ করেন।
প্রেরিত দূতগণের তালিকা
দাহিয়া ক্বালবী (রাঃ) কে রোমসম্রাট কায়সারের কাছে।
আবদুল্লাহ বিন হুযাফা (রাঃ) কে পারস্যসম্রাট পারভেজের কাছে।
হাতিব বিন আবূ বুলতা'আ (রাঃ) কে মিশরৈর শাসনকর্তার কাছে।
আমর বিন উমাইয়া (রাঃ) কে হাবশার রাজা নাজ্জাশীর কাছে।
সলীত বিন উমর বিন আবদে শামস (রাঃ) কে ইয়ামামার সর্দারের কাছে।
শুজাইবনে ওয়াহাব আসাদী (রাঃ) কে গাসসানী শাসক হারিসের কাছে।
শাসকদের মধ্য হতে শুধুমাত্র বাদশাহ নাজ্জাসী ছাড়া আর কেউ ইসলাম গ্রহণ করেননি। বাদশাহ নাজ্জাসী ছিলেন বাদশাহ বাদশাহ বাদশাহ!!!
এদের রাসুল (সাঃ) বলেন নি ক্ষমতা ত্যাগ করে খিলাফত গ্রহণ করার কথা বরং তিনি ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন এবং ইসলাম গ্রহণ করলে রাজত্ব আল্লাহ আরো বাড়িয়ে দিবেন ইহকালে ও পরকালে কল্যান দান করবেন এমনটাই নির্দেশ করেন।
তাই এ নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারে না যে রাজতন্ত্র ইসলামে বৈধ কিনা। যেহেতু কুরআনে স্বয়ং আল্লাহ্ একজনকে রাজা বানিয়েছেন, বলে উল্লেখ করেছেন। তাই অবশ্যই আমাদের বিশ্বাস করা ফরয যে ইসলামে রাজতন্ত্র বৈধ।
রাজতন্ত্র ইসলামে হারাম এই প্রচার কেন?
মূলত গণতন্ত্র নামক কুফরী প্রথার প্রচলনের পর থেকেই পাশ্চাত্যের অনুসারী কিছু বিভ্রান্ত লোক ইসলামের নাম এই বিষয়টা প্রচার করে থাকে। হারাম সাব্যস্ত করতে হলে সুস্পষ্ট দলিল প্রয়োজন। কুফরী গণতন্ত্রের বৈধতা খুজতে গিয়ে বর্তমান আরব ইসলামিক রাষ্ট্রগুলো থেকে অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে পৃথক বা দুরত্ব বজায়ের লক্ষে এই প্রোপাগান্ডা চালানো হয়।
সমগ্র দুনিয়ার মানব ইতিহাসে রাজা ব্যবস্থা আদি কাল থেকেই প্রচলিত যা পবিত্র কুরআন দ্বারা প্রমাণিত।
রাসুল (সাঃ) খিলাফত প্রতিষ্ঠা করেন এবং এই খিলাফতের মেয়াদ ৩০ বছর বলে উল্লেখ করেন, অতঃপর রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাবে, তারপর জালেম শাসক ক্ষমতা দখল করবে বলে উল্লেখ করেন। (আহমাদ)
খিলাফত বা রাজতন্ত্র:
খলিফার ছেলেই খলিফা হতে হবে এটা যেমন খিলাফত নয় তেমনি রাজার ছেলেই রাজা হতে হবে এটাও রাজতন্ত্র নয়। যোগ্যতা থাকে খলিফার ছেলেও খলিফা হতে পারে তেমনি রাজার ছেলেও রাজা হতে পারে।
এই বিষয়টা নির্ভর করে যিনি রাজা তার উপর। রাজা যদি ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকেন সত নিষ্ঠাবান হন তবে তিনি অবশ্যই যোগ্য উত্তরসুরীর নির্দেশনা দিয়ে যাবেন।
আমাদের সবার মনে যে ধারণা বদ্ধমূল যে রাজার ছেলে রাজা হবে এটাই রাজতন্ত্র তাই রাজতন্ত্র হারাম! আমরা হারাম ফতোয়া বিলি করে বেড়াচ্ছি!!! অথচ এই হারামের কোনো দলিল কি আছে? রাসুল (সাঃ) খিলাফত দিয়েছেন ঠিক আছে রাজা ব্যবস্থাকে হারাম তো করেন নাই বা কুরআনের কোনো আয়াত বা হাদিস দ্বারা তা হারাম সাব্যস্তও হয় নাই!
রাজা তার অপকর্মের কারণে নিজে দায়ী হবেন।
এখানে যে বিষয়টি হচ্ছে শাসক নিজেকে খলিফা ঘোষণা করলে তার উপাধি হবে খলিফা। শাসক নিজেকে রাজা উপাধি ঘোষণা করলে তিনি হবেন রাজা! এবং খলিফা বা রাজা কি ইসলামী অনুশাসন অনুযায়ী রাজ্য পরিচালনা করছেন কিনা তা !
মূলতঃ শাসক ইসলামী আইন মেনে চলছেন কিনা সেটাই গুরুত্ব পুর্ণ! গণতন্ত্র নামক কুফরী প্রথার প্রসারের লক্ষেই আরব রাষ্ট্রগুলোকে আক্রমন করার এবং মুসলিম বিশ্বে আরব বিদ্বেষীতা চড়ানোর জন্যই এই প্রোপাগান্ডা চরানো হয়।
বর্তমান সৌদি রাজাদের অনেক কু কর্ম থাকতে পারে যা ইসলাম সমর্থন করেনা। রাজা তার কর্মের জন্য দায়ী থাকবেন। দেখতে হবে রাজা ইসলামের বিধি বিধানে কোনো বাঁধা প্রদান করছেন কিনা! এই রকম রাজা তো আজকে থেকে নয় বরং সেই ১৫০ হিজরী থেকেই চলছে !!!
ইমাম আবু হানিফা (রাঃ) কে তত্কালীন খলিফা বা রাজা বা শাসক জেলে বন্দী করে রাখেন এবং বিষ প্রয়োগে হত্যা করেন !
ইমাম মালেক (রাঃ) কে তত্কালীন খলিফা বা রাজা বা শাসক গাধার পিঠে উল্টো করে বসিয়ে মুখে কালী মাখিয়ে এলাকা ঘুরিয়েছেন একটা ফতোয়ার কারণে!
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রাঃ) কে তত্কালীন খলিফা বা রাজা বা শাসক জেলে বন্দী করে বেত্রাঘাত করেছেন বছরের পর বছর!
অতএব খলিফা হলেও হলো না ! মূলত ইসলামের বিধান অনুযায়ী শাসনটা হচ্ছে মূল কথা ।
গণতন্ত্রের মূল শিকড় হচ্ছে, জনগণ সকল ক্ষমতার উত্স এবং জনগনই আইন প্রনেতা যা সরাসরি কুরআন এর বিরোধী। এটাকে ইসলামাইজড করে ইসলামিক গণতন্ত্র করার চেষ্টা চলছে !!!
উল্লেখ গণতন্ত্র চালু হয়েছে মাত্র এই দেড়শ বছর! খিলাফত ছিল ৩০ বছর। খিলাফতের পূর্বেও রাজতন্ত্র দুনিয়াতে ছিল। এবং পরেও ছিল। বর্তমানেও আছে । কেয়ামতের পূর্বে ইমাম মাহদী এর সময় আবার খেলাফত শুরু হবে ইসা (আঃ) এর মাধ্যমে তা সমাপ্তি ঘটবে ! অতঃপর কেয়ামত সংঘটিত হবে।
রাজতন্ত্র হারাম এরকম সুস্পষ্ট কথার বিপরীতে কোনো দলিল থাকলে দয়া করে তা উপস্থাপন করার অনুরোধ রইলো। নতুবা রাজতন্ত্র অপছন্দনিয় হলেও ''হারাম হারাম'' প্রচার করা বা বিষেদাগার করা বন্ধ করা উচিত। ইসলামে গণতন্ত্রের মত শাসক পরিবর্তনের বিধান নেই শাসকের সংশোধনের বিধান রয়েছে।
প্রচারেঃ-সৌদি আরব-The Land of Tawheed🇸🇦♥
👉👉শেয়ার করে সবাইকে জানিয়ে দিন।
সৌদি আরবে কেন রাজতন্ত্র চলছে?রাজতন্ত্র কি শরিয়তে জায়েজ?
শাইখ আব্দুর রাকীক বুখারী। (হাফিয্বাহুল্লাহ)
⇩ Download SD ⇩ Download HD
Or Download From Here --> https://www.fb.com/2233555829989385
Overview
--বহুল আলোচিত সমালোচিত প্রশ্নের জবাব--
➖➖➖➖➖➖➖🇸🇦➖➖➖➖➖➖➖
সৌদি রাজতন্ত্র শরী‘আতসম্মত। ইসলামে রাজতন্ত্র আদৌ নিষিদ্ধ নয়। সঊদী রাজতন্ত্রে আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করা হয় এবং তা কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী পরিচালিত হয়।
যেমন সঊদী সংবিধানের ৭নং ধারায় বলা হয়েছে, ﻳﺴﺔﻣﺪ ﺍﻟﺤﻜﻢ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﻤﻠﻜﺔ ﺍﻟﻌﺮﺑﻴﺔ ﺍﻟﺴﻌﻮﺩﻳﺔ ﺳﻠﻄﺔﻩ ﻣﻦ ﻛﺔﺍﺏ ﺍﻟﻠﻪ ﺓﻋﺎﻟﻰ ﻭﺳﻨﺔ ﺭﺳﻮﻟﻪ . ﻭﻫﻤﺎ ﺍﻟﺤﺎﻛﻤﺎﻥ ﻋﻠﻰ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻨﻈﺎﻡ ﻭﺟﻤﻴﻊ ﺃﻧﻈﻤﺔ ﺍﻟﺪﻭﻟﺔ (সঊদী রাজতন্ত্রের সর্বত্র আল্লাহর কিতাব ও তার রাসূলের সুন্নাহর কর্তৃত্ব জারী থাকবে)। ৮নং ধারায় বলা হয়েছে, ﻳﻘﻮﻡ ﺍﻟﺤﻜﻢ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﻤﻠﻜﺔ ﺍﻟﻌﺮﺑﻴﺔ ﺍﻟﺴﻌﻮﺩﻳﺔ ﻋﻠﻰ ﺃﺳﺎﺱ ﺍﻟﻌﺪﻝ ﻭﺍﻟﺸﻮﺭﻯ ﻭﺍﻟﻤﺴﺎﻭﺍﺓ ﻭﻓﻖ ﺍﻟﺸﺮﻳﻌﺔ ﺍﻹﺳﻼﻣﻴﺔ (সঊদী রাজতন্ত্রের বিধানসমূহ প্রতিষ্ঠিত হবে ইসলামী শরী‘আতের অনুকূলে ন্যায়পরায়ণতা, পরামর্শ ও সমতাবিধানের ভিত্তির উপরে)।
অতএব শাসক যদি আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করেন এবং ইসলামী শরী‘আত অনুযায়ী রাজ্যশাসন করেন, তাহ’লে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি তার অনুকূলে। উক্ত নীতির অনুসরণে কোন শাসক যদি পরবর্তী শাসক হিসাবে তার পরিবার থেকে যোগ্য কাউকে বা অন্য কারু ব্যাপারে অছিয়ত করে যান, তাতে কোন বাঁধা নেই। যেমন আবুবকর (রাঃ) মৃত্যুকালীন সময়ে বিশিষ্ট ছাহাবীগণের সাথে পরামর্শক্রমে পরবর্তী খলীফা হিসাবে ওমর (রাঃ)-কে নির্বাচন করেন (তারীখে ত্বাবারী ২/৩৫২-৩৫৩; ইবনু সা‘দ, তাবাক্বাতুল কুবরা ৩/১৯৯-২০০) । শাসক পরিবার থেকে কেউ পরবর্তী শাসক হ’তে পারবে না, এরূপ কোন নিষেধাজ্ঞা শরী‘আতে নেই। এক্ষণে শাসক যদি অযোগ্য কারো ব্যাপারে অছিয়ত করে থাকেন, তার জন্য তিনিই দায়ী হবেন। কেননা অযোগ্য লোককে ক্ষমতাসীন করাকে রাসূল (ছাঃ) ক্বিয়ামতের আলামত হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন (বুখারী হা/৫৯, মিশকাত হা/৫৪৩৯) । অতএব মৌলিকভাবে সঊদী রাজতন্ত্র শরী‘আতবিরোধী গণ্য করার কোন সুযোগ নেই।
পক্ষান্তরে পশ্চিমা গণতন্ত্রের মৌলিক ভিত্তিই হ’ল ধর্মনিরপেক্ষতা। যেখানে মানুষ হ’ল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। আর আইন রচনার ভিত্তি হ’ল, মানুষের মনগড়া সিদ্ধান্ত। এভাবে ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ প্রথমে মুসলমানকে ঈমানের গন্ডীমুক্ত করে। অতঃপর গণতন্ত্র তাকে মানুষের গোলাম বানায়। অতঃপর সে আল্লাহর সন্তুষ্টি বাদ দিয়ে ভোটারের মনস্ত্তষ্টিকে অগ্রাধিকার দেয়। যা তাকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ ব্যতীত কারু বিধান দেবার ক্ষমতা নেই’ (ইউসুফ ১২/৪০) । তিনি বলেন, যদি তুমি জনপদের অধিকাংশ লোকের কথা মেনে চল, তাহ’লে ওরা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। তারা তো কেবল ধারণার অনুসরণ করে এবং তারা তো কেবল অনুমান ভিত্তিক কথা বলে’ (আন‘আম ৬/১১৬) ।
একইভাবে গণতন্ত্র সমাজের প্রত্যেককে ক্ষমতালোভী করে তোলে। অথচ ক্ষমতা চেয়ে নেওয়া শরী‘আতে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৩৬৮০, ৩৬৮৩) ।
অনেকে রাজতন্ত্র হারাম, ইসলাম বিরোধী বলে ফতোয়া দিচ্ছেন। এই ধরণের মানুষেরা কয়েকভাগে বিভক্তঃ
=> ভ্রান্ত মতবাদে বিশ্বাসী শিয়া, যারা অনেক সাহাবিকে কাফের মনে করে (নাউযুবিল্লাহ)!
=> শিয়াপ্রেমী জামাতে ইসলামী, ইখোয়ানুল মুসলিমিন এইরকম ইসলামী আন্দোলনের লোকেরা যারা ইসলামের নামে গণতান্ত্রিক শিরকি মতবাদের মাধ্যমে ক্ষমতা পেতে চায়, হিকমতের নামে নারী নেতৃত্ব জায়েজ ফতোয়া দেয়।
=> জেএমবি বা সমমনা খারেজী মনোভাবের লোকেরা যাদের মেইন কাজ হচ্ছে মানুষ্কে পাইকারি হারে কাফের ফতোয়া দিয়ে বোমাবাজি করা, নিজে ঘরে বসে থেকে অন্যদেরক জিহাদ নিয়ে গালি দেওয়া। এই মূর্খ ফতোয়াবাজরা ৯/১১ এর মতো টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী আক্রমনকেও জিহাদ মনে করে, আত্মঘাতী বোমা হামলা নামের বর্বর আত্মহত্যা করে নিজেকে ধ্বংস করা ও নির্বিচঁারে মানুষ হত্যা ও সম্পদ নষ্ট করার সিস্টেমকে অনেক ফযীলতের কাজ বলে মনে করে।
যাই হোক, রাসুল সাঃ সহীহ হাদীসে বলেছেন - তোমাদের মাঝে খিলাফত থাকবে ৩০ বছর, এর পর হবে রাজত্বের যুগ। যেই সাহাবী এই হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেনঃ আমীরে মুয়াবিয়া রাঃ রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন (ইয়াজীদকে তার পরবর্তি খলিফা নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে)।
লক্ষ্য করে দেখুন, রাসুল সাঃ কে আল্লাহ আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, মুসলমদের মাঝে রাজতন্ত্র চালু হবে - তবুও কোন একটি সহীহ হাদিস পাওয়া যায়না যেখানে রাসুল সাঃ রাজতন্ত্রকে হারাম ফতোয়া দিয়েছেন, রাজাদের কাছে বায়াত করতে, তাদের আনুগত্য করতে নিষেধ করেছেন। বরং এটা পাওয়া যায়, নেতা যতই অত্যাচারি জুলুমবাজ হোক, যতদিন পর্যন্ত তারা নামায কায়েম করে, ভালো কাজে তাদের আনুগত্য করা ফরয। এ সম্পর্কে অনেক হাদিস আছে যার কিছু পাবেন সহীহ মুসলিমের কিতাবুল ইমারাতে।
এছাড়াও, সোলায়মান আঃ সহ অনেক নবীকে আল্লাহ রাজত্ব দান করেছিলেন যা অনেক ক্ষেত্রে বংশ পরম্পরায় চালু ছিলো।
রাজত্ব ইসলামে সর্বোত্তম পদ্ধতি নয়, সর্বোত্তম হচ্ছে শুরার মাধ্যমে খলিফা নির্বাচন করা, তবে পূর্বের খলিফা যদি পরবর্তী খলিফা নির্বাচন করে দিয়ে যান, সেটাও জায়েজ যা আবু বকর রাঃ করেছিলেন। এ সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ইমাম ইবনে কাসীর সুরা বাক্বারার তাফসীরে।
ক্বুরান ও হাদিসের সুস্পষ্ট বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে বড় বড় সাহাবী যেমন হাসান রাঃ, আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাঃ, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ সহ সমস্ত সাহাবি, সমস্ত তাবেয়ী, তাবে তাবেয়ী, ইমাম আবু হানীফাহ, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ি, ইমাম আহমাদ রাজতন্ত্রের রাজাদের আনুগত্য করেছেন, এবং আমাদের জন্য ভালো কাজে রাজার আনুগত্য করা ফরয বলে ফতোয়া দিয়েছেন। এমনকি সুন্নতের কঠোর পাবন্দী বিজ্ঞ সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাঃ যারা ইয়াজিদের বাইয়াত ভংগ করেছিল তাদের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই বলে ঘোষণা করেছিলেন এবং তাদেরকে তোওবা করে ইয়াজীদের বাইয়াত করতে উপদেশ দেন।
এছাড়া আরো বহু ঘটনা দ্বারা প্রমানিত, রাজা বাদশাহ অত্যাচারি হলেও সাহাবাদের আদর্শ হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করা, নেকের কাজে তাদের আনুগত্য করা, মানুষের সামনে তাদের দোষ ত্রুটি বর্ণনা করে তাদের বিরুদ্ধে মানুষকে খেপিয়ে না তোলা। বরং তাদেরকে প্রাইভেটলি উপদেশ দেওয়া, নসিহত করা, বোঝানো। আর সাহাবীদের তরিকাই হচ্ছে প্রকৃত ইসলাম, এর বিরোধীতা যারা করে তারা হচ্ছে শিয়া বা খারেজী।
সর্বশেষ, রাজা যদি ক্বুরান ও সুন্নাহ দিয়ে দেশ পরিচালনা করে, নামায কায়েম রাখে, তাহলে ভালো কাজে তার আনুগত্য করা ফরয। আর কেউ যদি অন্যায়ভাবে সেই রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, চাই সে ভালো হোক বা অত্যাচারি হোক, তাহলে সে খারেজী বলে গণ্য হবে। হানাফি মাযহাবের বড় আলেম ইমাম তাহাবী তার বিখ্যাত আকীদাহ তাহাভিয়াতে এই কথাগুলো উল্লেখ করেছেন।
দুঃখের বিষয় হচ্ছে মাওলানা মওদুদি, সাইয়েদ কুতুব, হাসান আল বান্নার মত বিংশ শতাব্দীর দার্শনিক চিন্তাভেদেরা এইগুলো বিশ্বাস করতোনা, কারণ তারা শিয়াপ্রেমী ছিলো। আর বর্তমানে তাদের অন্ধ ভক্তরা সাহাবিদের তরিকার বিরোধীতা করে ও সুন্নাহ নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করে। আল্লাহু মুস্তাআন।
● কুরআনে আল্লাহ্ বলছেন:
মূসার পরে তুমি কি বনী ইসরাঈলের একটি দলকে দেখনি, যখন তারা বলেছে নিজেদের নবীর কাছে যে, আমাদের জন্য একজন বাদশাহ (রাজা) নির্ধারিত করে দিন যাতে আমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে পারি। নবী বললেন, তোমাদের প্রতিও কি এমন ধারণা করা যায় যে, লড়াইর হুকুম যদি হয়, তাহলে তখন তোমরা লড়বে না? তারা বলল, আমাদের কি হয়েছে যে, আমরা আল্লাহর পথে লড়াই করব না। অথচ আমরা বিতাড়িত হয়েছি নিজেদের ঘর-বাড়ী ও সন্তান-সন্ততি থেকে।
অতঃপর যখন লড়াইয়ের নির্দেশ হলো, তখন সামান্য কয়েকজন ছাড়া তাদের সবাই ঘুরে দাঁড়ালো। আর আল্লাহ তা’আলা জালেমদের ভাল করেই জানেন। আর তাদেরকে তাদের নবী বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তালূতকে তোমাদের জন্য বাদশাহ (রাজা) সাব্যস্ত করেছেন। তারা বলতে লাগল, তা কেমন করে হয় যে, তার শাসন চলবে আমাদের উপর। অথচ রাষ্ট্রক্ষমতা (রাজতন্ত্র) পাওয়ার ক্ষেত্রে তার চেয়ে আমাদেরই অধিকার বেশী। আর সে সম্পদের দিক দিয়েও সচ্ছল নয়। নবী বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর তাকে পছন্দ করেছেন এবং স্বাস্থ্য ও জ্ঞানের দিক দিয়ে প্রাচুর্য দান করেছেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তাকেই রাজ্য (রাজতন্ত্র) দান করেন, যাকে ইচ্ছা। আর আল্লাহ হলেন অনুগ্রহ দানকারী এবং সব বিষয়ে অবগত…[সূরা বাকারাহ্, আয়াত: ২৪৬-২৪৭]
যখন মূসা স্বীয় সম্প্রদায়কে বললেনঃ হে আমার সম্প্রদায়, তোমাদের প্রতি আল্লাহর নেয়ামত স্মরণ কর, যখন তিনি তোমাদের মধ্যে পয়গম্বর সৃষ্টি করেছেন, তোমাদেরকে রাজ্যাধিপতি (রাজা) করেছেন এবং তোমাদেরকে এমন জিনিস দিয়েছেন, যা বিশ্বজগতের কাউকে দেননি…[সূরা আল-মাইদা, আয়াত-২০]
নাকি যাকিছু আল্লাহ তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহে দান করেছেন সে বিষয়ের জন্য মানুষকে হিংসা করে। অবশ্যই আমি ইব্রাহীমের বংশধরদেরকে কিতাব ও হেকমত দান করেছিলাম আর তাদেরকে দান করেছিলাম বিশাল রাজ্য (রাজতন্ত্র)…[সূরা আন-নিসা, আয়াত-৫৪]
● উপরের এই আয়াত গুলি থেকে স্পষ্ট হয় যে, রাজতন্ত্র ইসলামে বৈধ, কারন কুরআনে আল্লাহ্ বলছেন: “আল্লাহ তালূতকে তোমাদের জন্য বাদশাহ (রাজা) সাব্যস্ত করেছেন”… [সূরা বাকারাহ্, আয়াত: ২৪৭]
রাসুল (সাঃ) এর জীবনী তত্কালীন ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, ( সুত্রঃ আর রাহিকুল মাখতুম)
কাফেররা রাসুল (সাঃ) কে তাদের রাজা বানানোর প্রস্তাব দিয়েছিল। বিনিময়ে দ্বীন প্রচার বন্ধ করতে হবে। রাসুল (সাঃ) , আমার এক হাতে সূর্য অন্য হাতে চন্দ্র এনে দিলেও কোনো কিছুর বিনিময়ে তিনি দ্বীন প্রচার থেকে পিছু হটবেন না। এখানে রাসুল (সাঃ) বলেন নি রাজা হওয়া বা রাজ্য ব্যবস্থা আলাহ নিষেধ করেছেন।
রাসুল (সাঃ) বিভিন্ন রাষ্ট্রনায়কদের কাছে পত্র প্রেরণ করেছেন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে।
রাসূল (সাঃ)সারা বিশ্বের রাসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছিলেন। সুতরাং পৃথিবীর সব জায়গায় ইসলামের আহ্বান পৌঁছ দেয়া তাঁর দায়িত্ব ছিল। হুদায়বিয়ার সন্ধির পর কুরাইশ ও অন্যান্য আরব গোত্রগুলো থেকে আশ্বস্ত হয়ে এ কাজে মননিবেশ করেন। সেসময়ে পৃথিবীর প্রধান রাজশক্তিগুলো ছিল ইউরোপের রোম সাম্রাজ্য (the holy roman empire),এশিয়ার পারস্য সাম্রাজ্য এবং আফ্রিকার হাবশা সাম্রাজ্য। এছাড়াও মিশরের 'আযীয মুকাউকিস',ইয়ামামার সর্দার এবং সিরিয়ার গাসসানী শাসনকর্তাও বেশ প্রতাপশালী ছিল। তাই ষষ্ঠ হিজরীর জিলহজ্জ মাসের শেষদিকে একইদিনে এদেঁর কাছে ইসলামের আহ্বানপত্রসহ ছয়জন দূত প্রেরণ করেন।
প্রেরিত দূতগণের তালিকা
দাহিয়া ক্বালবী (রাঃ) কে রোমসম্রাট কায়সারের কাছে।
আবদুল্লাহ বিন হুযাফা (রাঃ) কে পারস্যসম্রাট পারভেজের কাছে।
হাতিব বিন আবূ বুলতা'আ (রাঃ) কে মিশরৈর শাসনকর্তার কাছে।
আমর বিন উমাইয়া (রাঃ) কে হাবশার রাজা নাজ্জাশীর কাছে।
সলীত বিন উমর বিন আবদে শামস (রাঃ) কে ইয়ামামার সর্দারের কাছে।
শুজাইবনে ওয়াহাব আসাদী (রাঃ) কে গাসসানী শাসক হারিসের কাছে।
শাসকদের মধ্য হতে শুধুমাত্র বাদশাহ নাজ্জাসী ছাড়া আর কেউ ইসলাম গ্রহণ করেননি। বাদশাহ নাজ্জাসী ছিলেন বাদশাহ বাদশাহ বাদশাহ!!!
এদের রাসুল (সাঃ) বলেন নি ক্ষমতা ত্যাগ করে খিলাফত গ্রহণ করার কথা বরং তিনি ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন এবং ইসলাম গ্রহণ করলে রাজত্ব আল্লাহ আরো বাড়িয়ে দিবেন ইহকালে ও পরকালে কল্যান দান করবেন এমনটাই নির্দেশ করেন।
তাই এ নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারে না যে রাজতন্ত্র ইসলামে বৈধ কিনা। যেহেতু কুরআনে স্বয়ং আল্লাহ্ একজনকে রাজা বানিয়েছেন, বলে উল্লেখ করেছেন। তাই অবশ্যই আমাদের বিশ্বাস করা ফরয যে ইসলামে রাজতন্ত্র বৈধ।
রাজতন্ত্র ইসলামে হারাম এই প্রচার কেন?
মূলত গণতন্ত্র নামক কুফরী প্রথার প্রচলনের পর থেকেই পাশ্চাত্যের অনুসারী কিছু বিভ্রান্ত লোক ইসলামের নাম এই বিষয়টা প্রচার করে থাকে। হারাম সাব্যস্ত করতে হলে সুস্পষ্ট দলিল প্রয়োজন। কুফরী গণতন্ত্রের বৈধতা খুজতে গিয়ে বর্তমান আরব ইসলামিক রাষ্ট্রগুলো থেকে অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে পৃথক বা দুরত্ব বজায়ের লক্ষে এই প্রোপাগান্ডা চালানো হয়।
সমগ্র দুনিয়ার মানব ইতিহাসে রাজা ব্যবস্থা আদি কাল থেকেই প্রচলিত যা পবিত্র কুরআন দ্বারা প্রমাণিত।
রাসুল (সাঃ) খিলাফত প্রতিষ্ঠা করেন এবং এই খিলাফতের মেয়াদ ৩০ বছর বলে উল্লেখ করেন, অতঃপর রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাবে, তারপর জালেম শাসক ক্ষমতা দখল করবে বলে উল্লেখ করেন। (আহমাদ)
খিলাফত বা রাজতন্ত্র:
খলিফার ছেলেই খলিফা হতে হবে এটা যেমন খিলাফত নয় তেমনি রাজার ছেলেই রাজা হতে হবে এটাও রাজতন্ত্র নয়। যোগ্যতা থাকে খলিফার ছেলেও খলিফা হতে পারে তেমনি রাজার ছেলেও রাজা হতে পারে।
এই বিষয়টা নির্ভর করে যিনি রাজা তার উপর। রাজা যদি ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকেন সত নিষ্ঠাবান হন তবে তিনি অবশ্যই যোগ্য উত্তরসুরীর নির্দেশনা দিয়ে যাবেন।
আমাদের সবার মনে যে ধারণা বদ্ধমূল যে রাজার ছেলে রাজা হবে এটাই রাজতন্ত্র তাই রাজতন্ত্র হারাম! আমরা হারাম ফতোয়া বিলি করে বেড়াচ্ছি!!! অথচ এই হারামের কোনো দলিল কি আছে? রাসুল (সাঃ) খিলাফত দিয়েছেন ঠিক আছে রাজা ব্যবস্থাকে হারাম তো করেন নাই বা কুরআনের কোনো আয়াত বা হাদিস দ্বারা তা হারাম সাব্যস্তও হয় নাই!
রাজা তার অপকর্মের কারণে নিজে দায়ী হবেন।
এখানে যে বিষয়টি হচ্ছে শাসক নিজেকে খলিফা ঘোষণা করলে তার উপাধি হবে খলিফা। শাসক নিজেকে রাজা উপাধি ঘোষণা করলে তিনি হবেন রাজা! এবং খলিফা বা রাজা কি ইসলামী অনুশাসন অনুযায়ী রাজ্য পরিচালনা করছেন কিনা তা !
মূলতঃ শাসক ইসলামী আইন মেনে চলছেন কিনা সেটাই গুরুত্ব পুর্ণ! গণতন্ত্র নামক কুফরী প্রথার প্রসারের লক্ষেই আরব রাষ্ট্রগুলোকে আক্রমন করার এবং মুসলিম বিশ্বে আরব বিদ্বেষীতা চড়ানোর জন্যই এই প্রোপাগান্ডা চরানো হয়।
বর্তমান সৌদি রাজাদের অনেক কু কর্ম থাকতে পারে যা ইসলাম সমর্থন করেনা। রাজা তার কর্মের জন্য দায়ী থাকবেন। দেখতে হবে রাজা ইসলামের বিধি বিধানে কোনো বাঁধা প্রদান করছেন কিনা! এই রকম রাজা তো আজকে থেকে নয় বরং সেই ১৫০ হিজরী থেকেই চলছে !!!
ইমাম আবু হানিফা (রাঃ) কে তত্কালীন খলিফা বা রাজা বা শাসক জেলে বন্দী করে রাখেন এবং বিষ প্রয়োগে হত্যা করেন !
ইমাম মালেক (রাঃ) কে তত্কালীন খলিফা বা রাজা বা শাসক গাধার পিঠে উল্টো করে বসিয়ে মুখে কালী মাখিয়ে এলাকা ঘুরিয়েছেন একটা ফতোয়ার কারণে!
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রাঃ) কে তত্কালীন খলিফা বা রাজা বা শাসক জেলে বন্দী করে বেত্রাঘাত করেছেন বছরের পর বছর!
অতএব খলিফা হলেও হলো না ! মূলত ইসলামের বিধান অনুযায়ী শাসনটা হচ্ছে মূল কথা ।
গণতন্ত্রের মূল শিকড় হচ্ছে, জনগণ সকল ক্ষমতার উত্স এবং জনগনই আইন প্রনেতা যা সরাসরি কুরআন এর বিরোধী। এটাকে ইসলামাইজড করে ইসলামিক গণতন্ত্র করার চেষ্টা চলছে !!!
উল্লেখ গণতন্ত্র চালু হয়েছে মাত্র এই দেড়শ বছর! খিলাফত ছিল ৩০ বছর। খিলাফতের পূর্বেও রাজতন্ত্র দুনিয়াতে ছিল। এবং পরেও ছিল। বর্তমানেও আছে । কেয়ামতের পূর্বে ইমাম মাহদী এর সময় আবার খেলাফত শুরু হবে ইসা (আঃ) এর মাধ্যমে তা সমাপ্তি ঘটবে ! অতঃপর কেয়ামত সংঘটিত হবে।
রাজতন্ত্র হারাম এরকম সুস্পষ্ট কথার বিপরীতে কোনো দলিল থাকলে দয়া করে তা উপস্থাপন করার অনুরোধ রইলো। নতুবা রাজতন্ত্র অপছন্দনিয় হলেও ''হারাম হারাম'' প্রচার করা বা বিষেদাগার করা বন্ধ করা উচিত। ইসলামে গণতন্ত্রের মত শাসক পরিবর্তনের বিধান নেই শাসকের সংশোধনের বিধান রয়েছে।
প্রচারেঃ-সৌদি আরব-The Land of Tawheed🇸🇦♥
👉👉শেয়ার করে সবাইকে জানিয়ে দিন।
সৌদি আরবে কেন রাজতন্ত্র চলছে?রাজতন্ত্র কি শরিয়তে জায়েজ?
শাইখ আব্দুর রাকীক বুখারী। (হাফিয্বাহুল্লাহ)
⇩ Download SD ⇩ Download HD
Or Download From Here --> https://www.fb.com/2233555829989385
Overview