সালাফী মানহাজের বৈশিষ্ট্যঃ পর্ব-০৬

                                                                        সালাফী মানহাজের বৈশিষ্ট্যঃ পর্ব-06
সালাফী মানহাজের বৈশিষ্ট্যঃ পর্ব-০৬  
সহীহ আকিদা RIGP

"আকল বা বুদ্ধি-বিবেক শরীয়তের অনুসারী হবে"।

মানুষের আকল বা বুদ্ধিবিবেচনা শক্তি একটি বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ বিষয়। কিন্তু এটি সর্বদা ইসলামী শরীয়তের অনুসারী হবে। শরীয়ত কখনো আকলের অনুসরণ করবে না। সালাফী মানহাজের অন্যতম বৈশিষ্ট হচ্ছে তাঁরা ওয়াহি অর্থাৎ আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা কুরআন ও সুন্নাহ থেকেই জ্ঞান আহরণ করেন। তাদের বুদ্ধি, বিবেচনা, বুঝ-ব্যবস্থা ও মতামতকে তাঁরা সর্বদা কুরআন ও সুন্নাহর সাথে মিলিয়ে দেখে। যদি সেগুলো কুরআন-সুন্নাহর সাথে মিলে যায় তাহলে তাঁরা তা গ্রহণ করে আর যদি বিপরীত হয় বা সাংঘর্ষিক হয় তাহলে তাঁরা তা বর্জন করে এবং তাঁর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।

যিনি শরীয়ত দিয়েছেন তাঁর কথাই মূল। মূল শরীয়তদাতা হলেন আল্লাহ তা’আলা। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে শরীয়ত প্রদান করেছেন। এই দুজন হচ্ছেন বিধানদাতা। তাদের কথার দিকেই নিজের মনযোগ দিতে হবে। তাদের কথার উপরেই নির্ভর করতে হবে। তাদের কথারই অনুসরণ করতে হবে। কোনো কারণেই এবং কোনো সময়েই তাদের কথাকে মানুষের বিবেক-বুদ্ধির অনুসারী বানানোর চেষ্টা করা যাবে না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
لا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يَكُونَ هَوَاهُ تَبَعًا لِمَا جِئْتُ بِهِ
“তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ আমি যা নিয়ে এসেছি (কুরআন ও সুন্নাহ) তাঁর প্রতি কেউ তার ইচ্ছা বা প্রবৃত্তিকে অনুসারী না বানাবে”। (অর্থাৎ নিজের ইচ্ছাকে বিসর্জন দিয়ে কুরআন-সুন্নাহকে অগ্রাধিকার না দিলে কেউ মুমিন হতে পারবে না।) (হাদীসটি ইবনু আবী আসী তাঁর ‘আস-সুন্নাহ’ কিতাবের ১৫ নম্বরে উল্লেখ করেছেন; তাবারানী তাঁর ‘আল-মু’জামুল কাবীর’-এ এবং আবূ নু’আইম তাঁর ‘আল-আরবাঈন’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। ইবনু রজব আল-হাম্বালী তাঁর ‘জামি’উল উলূম ওয়াল হিকাম’-এর ৪৮৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন। হাদিসটি হাসান সহীহ।)

ইসলামে মানুষের বুদ্ধি-বিবেকের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। কুরআন ও সুন্নাহতে আকল বা বুদ্ধি-বিবেকের মর্যাদা ও প্রয়োজনকে অস্বীকার করা হয়নি। আল্লাহ মানুষকে যতগুলো নিয়ামত দিয়েছেন সেগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান হচ্ছে আকল। এই আকলের কারণেই মানুষ অন্যান্য জন্তু - জানোয়ার থেকে আলাদা। এর মাধ্যমেই মানুষ শরীয়তের বিধিবিধান অনুধাবন করে। এটি থাকলে একজন ব্যক্তি শরীয়তের বিধান পালনে বাধ্য হয়। এর মাধ্যমেই মানুষ শরীয়ত নিয়ে গবেষণা করে এবং মাসআলা সাব্যস্ত করে। তাই এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা ইসলামে অপরিসীম।
সালাফগণ কুরআন ও সুন্নাহর মূলপাঠ দেখেই সিদ্ধান্ত নিতেন। যেখানে ব্যাখ্যার দরকার সেখানে ব্যাখ্যা করতেন। আয়াত-হাদীসের বাহ্যিক পাঠের অনুসরণে সাথে এর ব্যাখ্যার বৈপরীত্য থাকতো না। কুরআন ও হাদীসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তাঁরা এমন ব্যাখ্যা করতেন না যা মূল অর্থ থেকে অনেক দূরে নিয়ে যায় আবার সবসময় আক্ষরিক অনুবাদ বা ব্যাখ্যাও করতেন না যার কারণে মূল উদ্দেশ্য অর্জিত হয় না। ইমাম শাতিবী (রহ.) বলেন,
والعقل إذا لم يكن متبعا للشرع لم يبق إلا الهوى والشهوة
“আকল যদি শরীয়তের অনুসারী না হয় তাহলে প্রবৃত্তি ও মনোবাসনা ছাড়া আর কিছুই বাকী থাকে না”। (আল-ই’তিসাম। পৃষ্ঠা- ৩৫)

মোট কথা হচ্ছে, সালাফগণ আয়াত-হাদীসের থেকে মাসয়ালা সাব্যস্ত করতে গিয়ে নিজের বিবেক-বুদ্ধিকে অগ্রাধিকার দিতেন না। ইসলামী গবেষণায় আকলের প্রয়োজনীয় ব্যবহার করতে কোনো বাধা তো নেই-ই বরং আদেশ আছে। কিন্তু সালাফদের বুঝ ও নীতিমালা অনুসরণ না করে নিজের বুঝ অনুযায়ী কেউ যদি আকলকে অগ্রাধিকার দিয়ে কুরআন ও হাদীস বুঝতে যায় তাহলে সে নিশ্চিত পথভ্রষ্ট হবে। কেউ যদি কুরআন বুঝতে হাদীসকে অগ্রাধিকার না দিয়ে আকলকে অগ্রাধিকার দেয় তাহলে আয়াতের অর্থ ও উদ্দেশ্য বুঝতে মারাত্মক ভুল করবে। আবার কেউ যদি হাদীসের গ্রহনযোগ্যতা নির্ধারণে রিজালশাস্ত্র ও জারাহ-তা’দীলের নীতিমালাকে অগ্রাহ্য করে নিজের বুঝ মত নীতিমালা বানিয়ে হাদীস গ্রহণ করে এবং বর্জন করে তাহলেও তারা পথভ্রষ্ট হবে।
.
বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমনকি বাংলাদেশেও কেউ কেউ কুরআন ও সুন্নাহ বোঝার ক্ষেত্রে সালাফদের মানহাজকে বাদ দিয়ে আকলকে অগ্রাধিকার দেয়ার কারণে অনেক আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে এবং সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের হাদীসসহ অনেক মুতাওয়াতির ও সহীহ হাদীসকে অস্বীকার করছে। এগুলো সব সালাফদের মানহাজকে পরিত্যাগ করার পরিণতি।

সালাফদের মানহাজ হচ্ছে আকলকে কুরআন ও সুন্নাহর অনুগামী বানানো; কুরআন ও সুন্নাহকে আকলের অনুগামী বানানো নয়।

Post a Comment

0 Comments