সালাফী মানহাজের বৈশিষ্ট্য! (৭ম পর্ব)

সালাফী মানহাজের বৈশিষ্ট্য! (৭ম পর্ব)
সহীহ আকিদা RIGP

❒ সালাফী মানহাজের বৈশিষ্ট্য!
শুধু হকের পক্ষে পক্ষপাতিত্ব করা (৭ম পর্ব)

-------------------------------------------------------------
সালাফী মানহাজের অন্যতম মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো শুধু হকের পক্ষে পক্ষপাতিত্ব করা অর্থাৎ হক ছাড়া অন্য কিছুর প্রতি পক্ষপাতিত্ব না করা। এখানে হক বলতে চূড়ান্ত হককে বুঝানো হয়েছে। আর চূড়ান্ত হক হচ্ছে আল্লাহর কিতাব কুরআন ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাহ। নিরঙ্কুশ পক্ষপাতিত্ব শুধু এই দুটি জিনিসের প্রতি পোষণ করাই সালাফী মানহাজের বৈশিষ্ট্য। সালাফগণ এই দুটো জিনিস ছাড়া অন্য কোনো কিছু বা কারো কথা কিংবা কারো আমলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করতেন না। তিনি যে-ই হোন না কেনো।
.
কোনো সাহাবী, তাবিঈ, তাবে তাবিঈ, মুজতাহিদ ইমামগণ, ফকীহ, মুফাসসির, মুহাদ্দিস, আলিম; যে-ই হোন না কেনো তাঁর কথা বা কাজের প্রতি নিরঙ্কুশ আনুগত্য ও পক্ষপাতিত্ব বৈধ নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-ই হলেন একমাত্র মানুষ যার অন্ধ আনুগত্য করা যায় এবং করা শুধু বৈধই নয়, আবশ্যকও। তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে যা পেয়েছেন এবং তাবলীগ করেছেন তারই শুধু পক্ষপাতিত্ব চলবে। কারণ ওয়াহিই শুধু চূড়ান্ত হক। অন্য কিছু নয়।
ইসলামে সাহাবীদের কথা, তাবিঈ-তাবে তাবিঈ, মুজতাহিদ ইমামগণ, ফকীহ, মুফাসসির, মুহাদ্দিস, আলিম, শাইখদের কথার মূল্য আছে। এই মূল্য ততক্ষণ যতক্ষণ তাঁরা কুরআন ও সুন্নাহ-এর অনুকূলে কথা বলবেন, মতামত দিবেন। তাঁরা কেউই নিষ্পাপ নয়। তাঁরা কেউই ভুলের উর্ধে নন। তাদের কথা গ্রহণযোগ্যও হতে পারে আবার অগ্রহণযোগ্যও হতে পারে। গ্রহণযোগ্য কিনা তা যাচাই করতে হবে কুরআন ও সুন্নাহ দিয়ে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাড়া কারও কথাই নিরঙ্কুশভাবে, নির্দ্বিধায় গ্রহণ করা যাবে না।

ইমাম মালিক রহিমাহুল্লাহ চমৎকার কথা বলেছেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কবরের দিকে ইশারা করে বলেন,

“এই কবরবাসী ছাড়া বাকী প্রত্যেকের কথা গ্রহণও করা যেতে পারে আবার বর্জনও করা যেতে পারে”। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাড়া প্রত্যেকের কথাই গ্রহণ করাও যেতে পারে আবার বর্জন করাও যেতে পারে। তবে গ্রহণ ও বর্জনের এই সিদ্ধান্ত হতে হবে সালফগণের মানহাজ অনুযায়ী কুরআন ও সুন্নাহর মাপকাঠিতে; নিজের খেয়ালখুশি অনুযায়ী নয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাড়া সাহাবী ও পরবর্তী সকল ইমাম, ফকীহ, আলিম; সবারই ভুল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু তাঁরা সবসময় ভুল বলেন না। বেশিরভাগই সঠিক বলেন। কখনো কখনো তাদেরও ভুল হয়ে যেতে পারে, গিয়েছেও।

কুরআন ও সুন্নাহ সঠিকভাবে বোঝার জন্য এবং কল্যাণ ও অকল্যাণ নির্ধারণের জন্য এবং ইসলামী শরীয়াতের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য যে সকল ক্ষেত্রে মতভিন্নতার সুযোগ আছে সেসব ক্ষেত্রে ভিন্নমত পোষণ করকে সালাফগণ নিষিদ্ধ মনে করতেন না। তবে এই ভিন্নমত পোষণের ক্ষেত্রে ইজতিহাদের অযোগ্য ব্যক্তির পক্ষ থেকে প্রকাশিত কিংবা কারো পক্ষ থেকে কোনো ইজতিহাদ বা গবেষণা ছাড়াই প্রকাশিত মতামত গ্রহণযোগ্য নয়। যখন ইজতিহাদের যোগ্যতাসম্পন্ন কোনো মুজতাহিদের পক্ষ থকে ইজতিহাদযোগ্য বিষয়ে কোনো মতামত প্রকাশিত হবে তখন তা ইসলামে প্রাপ্য গুরুত্ব পাবে। তবে সেই মুজতাহিদের ইজতিহাদের বিপরীতে যদি কুরআন বা গ্রহণযোগ্য সুন্নাহর কোনো নাস বা উদ্ধৃতি পাওয়া যায় তাহলে সেই ইজতিহাদ বাতিল হয়ে যাবে।
.
সালাফগণ ইসলামের বিভিন্ন মাসয়ালায় ভিন্নমত (ইখতিলাফ) করেছেন। একই মাসয়ালায় সাহাবীগণের মাঝে, তাবিঈ-তাবে তাবেঈগণে মাঝে, মুজতাহিদ ইমামগণের মাঝে একাধিক মতামত পাওয়া যায়। সেসব ক্ষেত্রে কোনো মতামতদাতার মতামত ভুল প্রমাণ হলে তাঁর জন্য তাকে অপরাধী সাব্যস্ত করা যাবে না। বরং তাঁর পক্ষে ওযর (গ্রহণযোগ্য কারণ) তালাশ করতে হবে। তাঁর পক্ষে কোনো ওযর খুঁজে না পেলেও ধরে নিতে হবে যে, হয়তো কোনো ওযর ছিলো যার কারণে তাঁর মতামতটি কুরআন বা সুন্নাহ বিরোধী হয়েছে। এই ভুলের জন্য তাকে অপমান করা, নিন্দা করা, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা, গালিগালাজ করা সালাফগণের মানহাজ নয়। বরং একে অপরের ভুলের জন্য ওযর খোঁজা এবং ওযর না পেলেও সুধারণা রাখা সালফদের মানহাজ। 

Post a Comment

0 Comments