বিদ‘আতীদের ‘আলামাত সমূহ---
দ্বীনের মধ্যে ‘ইবাদাতের নামে নবসৃষ্ট
কাজ (বিদ‘আত) থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকা অত্যাবশ্যক। বিদ‘আত পরিহার করা
দ্বীনে ইছলামের অন্যতম একটি মৌলনীতি।
কেননা, ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ سبحانه وتعالى ইরশাদ করেছেন:-
اتَّبِعُوا مَا أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ مِنْ رَبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ. (سورة الأعراف- ٣)
অর্থাৎ- তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে
যা তোমাদের জন্য অবতারিত হয়েছে, তোমরা তাঁর অনুসরণ করো এবং তাঁকে (আল্লাহ)
ব্যতীত অন্য কোন সাথীদের অনুসরণ করো না। (ছূরা আল-আ’রাফ- ৩)…
বিদ‘আত পরিহার করা দ্বীনে ইছলামের অন্যতম একটি মৌলনীতি
দ্বীনের মধ্যে ‘ইবাদাতের নামে নবসৃষ্ট কাজ (বিদ‘আত) থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকা অত্যাবশ্যক। বিদ‘আত পরিহার করা দ্বীনে ইছলামের অন্যতম একটি মৌলনীতি।
কেননা, ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন:-
اتَّبِعُوا مَا أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ مِنْ رَبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ.১
অর্থাৎ- তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা তোমাদের জন্য অবতারিত হয়েছে, তোমরা তাঁর অনুসরণ করো এবং তাঁকে (আল্লাহ) ব্যতীত অন্য কোন সাথীদের অনুসরণ করো না।২
রাছূলুল্লাহ 1 ইরশাদ করেছেন:-
إِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ.৩
অর্থ- তোমরা সাবধান থেকো নব-উদ্ভাবিত বিষয়সমূহ থেকে, কেননা ধর্মের মধ্যে প্রতিটি নবসৃষ্ট বিষয়ই হচ্ছে বিদ‘আত”।৪
অন্য হাদীছে ‘আয়িশা f থেকে বর্ণিত, রাছূলুল্লাহ 1 ইরশাদ করেছেন:-
مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ، فَهُوَ رَدٌّ.৫
অর্থ- যে আমাদের ধর্ম বিষয়ে (ইছলামী শারী‘য়াতে) এমন কিছু নতুন সৃষ্টি করবে যা আমাদের ধর্মে (ইছলামে) নেই, তবে তা হবে বর্জনীয়।৬
‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাছ‘ঊদ e থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন-
إِيَّاكُمْ وَالتَّبَدُّعَ، وَإِيَّاكُمْ وَالتَّنَطُّعَ، وَإِيَّاكُمْ وَالتَّعَمُّقَ، وَعَلَيْكُمْ بِالْعَتِيقِ.৭
অর্থ- সাবধান থেকো তোমরা বিদ‘আত সৃষ্টি থেকে, সাবধান থেকো তোমরা কুৎসা রটনা থেকে, সাবধান থেকো তোমরা অযথা চিন্তা-ভাবনা থেকে এবং তোমরা সহজ সরল স্পষ্ট উম্মুক্ত পন্থা অবলম্বন করো।৮
ছা‘য়ীদ ইবনুল মুছাইয়্যিব o থেকে বর্ণিত-
أَنَّهُ رَأَى رَجُلًا يُصَلِّي بَعْدَ طُلُوعِ الْفَجْرِ أَكْثَرَ مِنْ رَكْعَتَيْنِ يُكْثِرُ فِيهَا الرُّكُوعَ، وَالسُّجُودَ فَنَهَاهُ، فَقَالَ: يَا أَبَا مُحَمَّدٍ يُعَذِّبُنِي اللهُ عَلَى الصَّلَاةِ؟ قَالَ: لَا وَلَكِنْ يُعَذِّبُكَ عَلَى خِلَافِ السُّنَّةِ.৯
অর্থ- একদা তিনি দেখলেন যে, একজন লোক সুবহে সাদিক্ব হওয়ার পরে অতিরিক্ত রুকু‘ সহকারে দু’ রাক‘আতের চেয়ে বেশি সালাত আদায় করছে, তখন তিনি তাকে নিষেধ করলেন। লোকটি তাঁকে বললো যে, হে আবু মুহাম্মাদ! আল্লাহ তা‘আলা কি আমাকে (এই) নামাযের জন্য শাস্তি দেবেন। উত্তরে তিনি বললেন- না, তবে তোমাকে শাস্তি প্রদান করা হবে ছুন্নাতের ব্যতিক্রম করার জন্য।১০
ইমাম হাছান ইবনু ‘আলী আল বারবাহারী o বলেছেন- “ধর্মের নামে ছোট-খাটো নবসৃষ্ট বিষয়াদি থেকে সাবধান ও দূরে থাকো। কেননা ছোট-খাটো বিদ‘আতের পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকলে তা শেষ পর্যন্ত অনেক বড় ও মারাত্মক হয়ে যায়। মুছলমান সমাজে যত সব বিদ‘আত আবিষ্কৃত হয়েছে সেগুলো প্রথমদিকে নিতান্তই ছোট-খাঁটো ছিল যা অনেকটা সত্যের অনুরূপ বলেই মনে হতো। তাই অনেকেই প্রতারিত হয়ে ঐ সকল বিদ‘আত অনুসরণ করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তাঁরা আর সেই বিভ্রান্তির বেড়াজাল থেকে মুক্ত হতে পারেনি। একপর্যায়ে ঐসব বিদ‘আতকে তারা শারী‘য়াতের তথা দ্বীনে ইছলামের অংশ বলে বিশ্বাস করে রীতিমত তা অনুসরণ ও পালন করতে শুরু করে। এভাবেই ছুন্নাতের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সত্য-সঠিক পথ থেকে দূরে সরে যায় এবং ইছলামের গন্ডি বহির্ভূত হয়ে পড়ে।
অতএব যখনই আপনি কারো কাছ থেকে বিশেষ করে আপনার সম-সাময়িক কোন লোকের কাছ থেকে (শারী‘য়াত সম্পর্কে) কিছু শুনবেন, তখন তাড়াহুড়ো না করে এবং তার কথায় সাঁড়া দেয়ার পূর্বে ভালো করে চিন্তা-ভাবনা করুন (আল্লাহ ছুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আপনাকে রহম করুন) এবং আহলে ‘ইলমদেরকে (‘উলামায়ে কিরামকে) জিজ্ঞাসা করে সে কথা বা বিষয়ের সত্যতা যাচাই করুন এবং ভালো করে জেনে নিন যে, এতদ্বিষয়ে সাহাবায়ে কিরাম 4 অথবা আয়িম্যা ও ‘উলামায়ে কিরামের কেউ কিছু বলেছেন কি-না। যদি বিষয়টির স্বপক্ষে তাদের কোন (সাহাবী অথবা কোন ইমাম বা সত্যিকার ‘আলিমে দ্বীনের) অভিমত কিংবা বর্ণনা সঠিকভাবে পাওয়া যায়, তাহলে তা গ্রহণ ও অনুসরণ করুন এবং তা বর্জন না করুন। কেননা এক্ষেত্রে সে বিষয়টিকে লঙ্ঘন বা উপেক্ষা করলে কিংবা তাঁর পরিবর্তে অন্য কিছুকে গ্রহণ করলে দোযখের ভয়াবহ অগ্নিকুন্ডে নিপতিত হতে হবে”।১১
‘উমার ইবনু ‘আব্দিল ‘আযীয o বলেছেন যে, “‘রাছূলুল্লাহ 1 এর নির্দেশিত সত্য-সঠিক পন্থাকে (ছুন্নাতকে) বাদ দিয়ে যদি কেউ কোন ভ্রান্ত পথকে সঠিক মনে করে অবলম্বন করে বিভ্রান্ত হয়ে থাকে, তাহলে এ বিষয়ে তার কোন ‘উয্র-অজুহাত গ্রহণযোগ্য হবে না”।১২
হিজরাতের আবাসভূমি মাদীনাহ মুনাওয়ারাহ-র প্রখ্যাত ইমাম মালিক ইবনু আনাছ o বলেছেন:- যে ব্যক্তি এই উম্মাতের (মুছলমানদের) মধ্যে এমন কোন (ধর্মীয়) বিষয় উদ্ভাবন করলো যা ছালফে সালিহীনের (p) পন্থা বহির্ভূত, তাহলে সে যেন মনে করলো যে, রাছূলুল্লাহ 1 রিছালাতের তথা আল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্ব বা আমানাতের খিয়ানাত করেছেন কিম্বা তা অসম্পন্ন রেখে গেছেন, অথচ আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন:-
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا.১৩
অর্থাৎ- আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নি‘মাত সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইছলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম।১৪
অতএব যা কিছু সেদিন আল্লাহ্র (0) এই পবিত্র ঘোষণার প্রাক্কালে দ্বীনের (ইছলামের) অন্তর্ভুক্ত ছিল না, তা আজকের দিনেও ধর্মের অন্তর্ভুক্ত (বা দ্বীন) বলে গণ্য হবে না। পূর্বেকার যুগের মুছলমানরা যে পথ অবলম্বন ও অনুসরণ করে হিদায়াতপ্রাপ্ত ও সফলকাম হয়েছিলেন, সেই পথ অবলম্বন ও অনুসরণ ব্যতীত শেষ যুগের মুছলমানরাও হিদায়াতপ্রাপ্ত ও সফলকাম হতে পারবে না।
একদা ইমাম মালিক-কে (o) এক ব্যক্তি জিজ্ঞেসা করেছিল যে, হে আবূ ‘আব্দিল্লাহ! (ইমাম মালিক o এর উপনাম ছিল আবূ ‘আব্দিল্লাহ) আমি কোথা থেকে ইহরাম বাঁধবো? তিনি উত্তরে বললন- “যুলহুলাইফা থেকে; যেখান থেকে রাছূলুল্লাহ 1 ইহরাম বেঁধেছেন। লোকটি বললো যে, “আমি মাছজিদে নাবাওয়ী তথা রাছূলুল্লাহ 1 এর পবিত্র ক্বাব্রের নিকট থেকে ইহরাম বাঁধতে চাই”। তখন তিনি তাকে বললেন যে, “তুমি কখনো তা করো না, কেননা আমি তোমার বিভ্রান্ত হয়ে যাওয়ার আশংকা করছি”। লোকটি বললো যে, “তাতে আবার বিভ্রান্তির কি আছে? আমি তো শুধুমাত্র কয়েক মাইল বেশি দূরে থেকে ইহরাম বাঁধতে চাইছি”। তখন ইমাম মালিক o লোকটিকে বললেন:- “এর থেকে মারাত্মক ভ্রষ্টতা-বিভ্রান্তি আর কি হতে পারে যে, তুমি মনে করছো রাছূলুল্লাহ 1 তোমার থেকে কম পূণ্য বা মর্যাদা লাভ করেছেন, আর তুমি রাছূলুল্লাহ 1 থেকেও বেশি পূণ্য বা মর্যাদা লাভ করতে চাইছো। আমি আল্লাহ্র (0) এ বাণী শুনেছি –
فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ.১৫
অর্থাৎ- যারা তাঁর আদেশের বিরোধিতা করে তারা যেন কঠিন মুসীবত অথবা ভয়ংকর শাস্তিকে ভয় করে”।১৬১৭
হাফিজ ইছমা‘য়িলি o বলেছেন যে, হাদীছ বিশেষজ্ঞ ‘উলামায়ে কিরামের দৃষ্টিতে বিদ‘আত ও পাপ কাজ থেকে সম্পূর্ণ রূপে দূরে থাকা, অন্যকে কষ্টদান থেকে বিরত থাকা এবং পরনিন্দা (গীবত) পরিহার করা অত্যাবশ্যক। হ্যাঁ, তবে যদি কেউ কোন প্রকার বিদ‘আত এবং মনগড়া মতবাদ কিম্বা মনগড়া কোন কাজ আবিষ্কার বা প্রকাশ করে সেগুলোর প্রতি মানুষকে আহবান করে থাকে, তাহলে তাঁর সমালোচনা করা যাবে এবং তা গীবতের পর্যায়ভুক্ত হবে না।১৮
সূত্র:- ইমাম আহ্মাদ ইবনু হাম্বাল রচিত এবং আল অলীদ ইবনু মুহাম্মাদ নুবাইহ ইবনে ছাইফুন্ নাস্র এর ব্যাখ্যা সম্বলিত “উসূলুছ্ ছুন্নাহ”।
- ১. سورة الأعراف- ٣ ↩
- ২. ছূরা আল-আ’রাফ- ৩ ↩
- ৩. رواه أبو داؤد و أحمد و الحاكم ↩
- ৪. ছুনানু আবী দাউদ, মুছনাদে ইমাম আহ্মাদ, মুছতাদরাকে হাকিম ↩
- ৫. رواه البخاري و مسلم ↩
- ৬. সাহীহ্ বুখারী ও সাহীহ্ মুছলিম ↩
- ৭. رواه الدارمى وابن بطة بسند صحيح ↩
- ৮. দারিমী ও ইবনু বাত্ত্বা উপরোক্ত বর্ণনাটিকে বিশুদ্ধ ছনদে বর্ণনা করেছেন। ↩
- ৯. رواه البيهقي ↩
- ১০. উপরোক্ত বর্ণনাটি ইমাম বায়হাক্বী o বর্ণনা করেছেন ↩
- ১১. দেখুন! ইমাম বারবাহারী রচিত “শারহুছ্ ছুন্নাহ”- পৃষ্ঠা নং- ৬৮ ↩
- ১২. ‘আল্লামা মারুযী রচিত “আছছুন্নাহ”- পৃষ্ঠা নং- ৯৫ ↩
- ১৩. سورة المائدة- ٣ ↩
- ১৪. ছূরা আল মা-য়িদাহ- ৩ ↩
- ১৫. سورة النور- ٦٣ ↩
- ১৬. ছূরা আন নূর- ৬৩ ↩
- ১৭. এই বর্ণনাটি ইবনু ‘আব্দিল বার্ “জামে’ বয়ানুল ‘ইলম” গ্রন্থে এবং ইবনু বাত্তাহ “আল ইবানাতুল কুবরা” গ্রন্থে গ্রহণযোগ্য ছনদে বর্ণনা করেছেন ↩
- ১৮. ই‘তিক্বাদু আয়িম্যাতিল হাদীছ, পৃষ্ঠা নং- ৭৮ ↩
- https://rasikulindia.blogspot.com/