ইমাম মুহাম্মাদ আমান বিন ‘আলী আল-জামী (রাহিমাহুল্লাহ) বিংশ শতাব্দীর একজন প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ‘আলিম ছিলেন। তিনি ১৩৪৯ হিজরীতে ইথিওপিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি অনেক বড়ো বড়ো ‘আলিমের সান্নিধ্যে থেকে ‘ইলম অর্জন করেছেন। তাঁর অন্যতম কয়েকজন শিক্ষক হলেন—ইমাম ইবনু বায, ইমাম মুহাম্মাদ আল-আমীন আশ-শানক্বীত্বী, ইমাম ‘আব্দুর রহমান আল-আফরীক্বী, ইমাম হাম্মাদ আল-আনসারী, ইমাম মুহাম্মাদ খালীল হাররাস প্রমুখ (রাহিমাহুমুল্লাহ)। তিনি কর্মজীবনে মাদীনাহ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদীস অনুষদের ডিন এবং ‘আক্বীদাহ শাখার প্রধান ছিলেন। তাঁর কয়েকজন উল্লেখযোগ্য ছাত্র হলেন—ইমাম রাবী‘ আল-মাদখালী, ‘আল্লামাহ যাইদ আল-মাদখালী, ‘আল্লামাহ ‘আলী বিন নাসির আল-ফাক্বীহী, ‘আল্লামাহ বাকার আবূ যাইদ, ‘আল্লামাহ সালিহ বিন সা‘দ আস-সুহাইমী, ‘আল্লামাহ ফালাহ বিন ইসমা‘ঈল আল-মুনদাকার প্রমুখ।
ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] শাইখ জামী সম্পর্কে বলেছেন, “তিনি আমার কাছে ‘ইলম, ফজল, ভালো ‘আক্বীদাহ, আল্লাহ’র দিকে আহ্বানের ক্ষেত্রে উদ্যমতা এবং বিদ‘আত ও কুসংস্কার থেকে সতর্কীকরণের মাধ্যমে সুপরিচিত। আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করুন এবং স্বীয় প্রশস্ত জান্নাতে তাঁর আবাস নির্ধারণ করুন।” [ইমাম জামী (রাহিমাহুল্লাহ), আল-‘আক্বীদাতুল ইসলামিয়্যাহ ওয়া তারীখুহা; পৃষ্ঠা: ৮; দারুল মিনহাজ, কায়রো কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪২৫ হি./২০০৪ খ্রি.]
ইমাম মুহাম্মাদ বিন ‘আব্দুল ওয়াহহাব বিন মারযূক্ব আল-বান্না (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪৩০ হি./২০০৯ খ্রি.] শাইখ জামী সম্পর্কে বলেছেন, “নিশ্চয় তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) কল্যাণের উপর ছিলেন, যা আমরা পছন্দ করতাম। তথা সচ্চরিত্রতা, বিশুদ্ধ ‘আক্বীদাহ এবং উত্তম ঘনিষ্ঠতার উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন।” [প্রাগুক্ত]
ইমাম ‘উমার বিন মুহাম্মাদ ফাল্লাতাহ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪১৯ হি.] বলেছেন, “মোটকথা, তিনি (রাহিমাহুল্লাহ) ছিলেন সত্যভাষী এবং প্রবলভাবে আহলুস সুন্নাহ’র আদর্শের সাথে সম্পৃক্ত।” [প্রাগুক্ত; পৃষ্ঠা: ৯]
ইমাম সালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] বলেছেন, “নিশ্চয় শিক্ষিত এবং বিভিন্ন সর্বোচ্চ সার্টিফিকেটধারী ব্যক্তি অনেক রয়েছে। কিন্তু তাদের খুব কম ব্যক্তিই স্বীয় ‘ইলম থেকে ফায়দা গ্রহণ করে এবং তাঁর থেকেও ফায়দা গ্রহণ করা হয়। শাইখ মুহাম্মাদ আমান আল-জামী সেই স্বল্পসংখ্যক বিরল ‘আলিমের অন্তর্ভুক্ত, যাঁরা তাঁদের ‘ইলম ও প্রচেষ্টাকে মুসলিমদের কল্যাণের জন্য এবং জাগ্রত জ্ঞান সহকারে আল্লাহ’র দিকে আহ্বানের মাধ্যমে তাদেরকে দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য ব্যয় করেছেন।” [প্রাগুক্ত; পৃষ্ঠা: ১০]
ইমাম রাবী‘ আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ) আরও বলেছেন, “শাইখ মুহাম্মাদ আমানকে আমি একজন মু’মিন, তাওহীদবাদী, সালাফী, দ্বীনের ফাক্বীহ এবং ‘আক্বীদাহশাস্ত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত বিদ্বান হিসেবে জানি। ‘আক্বীদাহ উপস্থাপনে তাঁর চেয়ে ভালো আমি আর কাউকে দেখিনি।” [প্রাগুক্ত]
ইমাম ‘আব্দুল মুহসিন আল-‘আব্বাদ (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৩ হি./১৯৩৪ খ্রি.] বলেছেন, “আমি তাঁর ব্যাপারে জানি যে, তাঁর ভালো ‘আক্বীদাহ এবং সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। এছাড়াও সালাফদের আদর্শ অনুযায়ী ‘আক্বীদাহ বর্ণনা করা এবং বিদ‘আত থেকে সতর্ক করার ক্ষেত্রে তাঁর যত্ন ও আগ্রহ রয়েছে। আর এগুলো রয়েছে তাঁর দারস, লেকচারস এবং লিখনে। আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করুন, তাঁর উপর রহম করুন এবং তাঁকে অশেষ সাওয়াব দান করুন।” [আল-‘আক্বীদাতুল ইসলামিয়্যাহ ওয়া তারীখুহা; পৃষ্ঠা: ১০]
এই মহান ‘আলিম ১৪১৬ হিজরী সনে মারা যান। আল্লাহ তাঁর উপর রহম করুন এবং তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউসে দাখিল করুন। আমীন। সংগৃহীত: আল-‘আক্বীদাতুল ইসলামিয়্যাহ ওয়া তারীখুহা; পৃষ্ঠা: ৫-২২।
جماعة التبليغ والإخوان المسلمون والسروريون وحزب التحرير ومن يعطف عليهم كلها فتن عرضت عليكم، امتحان واختبار، أنتم أمام الإمتحان والإختبار، أنتم على الخط، والجماعات هذه تريد أن تخرجكم من الخط إلى بنيات الطريق ومن خرج من الخط إلى بنيات الطريق ضاع.
“তাবলীগ জামা‘আত, মুসলিম ব্রাদারহুড, সুরূরিয়্যাহ, হিযবুত তাহরীর এবং অনুরূপ দলগুলোর সবই ফিতনাহ, যা তোমাদের উপর আরোপিত হয়েছে। এগুলো পরীক্ষা। তোমরা পরীক্ষার সম্মুখে রয়েছ। তোমরা সঠিক রেখার (সোজা রাস্তার) উপর রয়েছে। আর এই দলগুলো তোমাদেরকে সোজা রাস্তা থেকে বিচ্যুত করে শাখা রাস্তাগুলোতে নিয়ে যেতে চায়। যে ব্যক্তিই সোজা রাস্তা থেকে বিচ্যুত হয়ে শাখা রাস্তাগুলোতে যায়, সেই পথভ্রষ্ট হয়।” [দ্র.: http://ar.alnahj.net/audio/2658]
·
২য় বক্তব্য:
ইমাম মুহাম্মাদ আমান বিন ‘আলী আল-জামী (রাহিমাহুল্লাহ) আরও বলেছেন,
سائل يسأل عن عقيدة الإخوان المسلمين، ليس للإخوان المسلمين عقيدة غير العقيدة الأشعرية، افهموا هذا تمامًا، الإخوان المسلمون حزب سياسي طموح، يسعى بجميع الوسائل المتاهات لهم المباحة وغير المباحة، يسعون للوصول إلى كرسي الحكم، ولا إهتمام لهم بدراسة العقيدة، عقيدتهم هي العقيدة العامة، التي عند عوام المسلمين في كثير من الأقطار، هي العقيدة الأشعرية، هي عقيدة الإخوان المسلمين، وقد بين ذلك الشيخ حسن البنا رحمه الله في بعض ما كتب، ليس لهم عقيدة جديدة، ولكن لهم فكر سياسي طموح، يسعون لتحقيقه ولكنهم لم يوفقوا، لأن هذه طلب الإمارة، وطلب الإمارة لا يتم إلا بالإيمان الصحيح والعلم النافع والصبر على الأذى في سبيل الله، بهذا تحصل الإمامة في الدين، وأما بمحاولة الفتن والتفريق بين الناس والمظاهرات وبالأناشيد وبأساليب جديدة لا يمكن الوصول إلى الإمامة بهذه الطريقة أبدًا.
“একজন প্রশ্নকারী মুসলিম ব্রাদারহুডের ‘আক্বীদাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছেন। আশ‘আরী ‘আক্বীদাহ ব্যতীত মুসলিম ব্রাদারহুডের অন্য কোনো ‘আক্বীদাহ নেই। তোমরা এটা পূর্ণরূপে উপলব্ধি করো। মুসলিম ব্রাদারহুড একটি উচ্চাভিলাষী রাজনৈতিক দল। তারা বৈধ-অবৈধ সকল পদ্ধতি ব্যবহার করে নিজেদের জন্য জায়গা নির্ধারণের চেষ্টা করে। তারা শামনক্ষমতায় পৌঁছার জন্য চেষ্টাপ্রচেষ্টা করে। ‘আক্বীদাহ অধ্যয়নের ব্যাপারে তাদের কোনো গুরুত্ব নেই। তাদের ‘আক্বীদাহ হলো ব্যাপক ‘আক্বীদাহ, যে ‘আক্বীদাহ পোষণ করে অসংখ্য এলাকার মুসলিম জনসাধারণ। আর তা হলো আশ‘আরী ‘আক্বীদাহ। এটাই মুসলিম ব্রাদারহুডের ‘আক্বীদাহ। শাইখ হাসান আল-বান্না (রাহিমাহুল্লাহ) এটা তাঁর গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।
তাদের কোনো নতুন ‘আক্বীদাহ নেই। কিন্তু তাদের উচ্চাভিলাষী রাজনৈতিক মতবাদ আছে। তারা এই মতবাদ বাস্তবায়নের চেষ্টা করে, কিন্তু তাদেরকে সেই তাওফীক্ব দেওয়া হয়নি। কেননা এটা ক্ষমতার অন্বেষণ। আর ক্ষমতা অন্বেষণ কখনো বিশুদ্ধ ঈমান, উপকারী জ্ঞান এবং আল্লাহ’র পথে কষ্টের উপর ধৈর্যধারণ ছাড়া পূর্ণতা পায় না। এভাবেই দ্বীনের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব অর্জিত হবে। পক্ষান্তরে ফিতনাহ সৃষ্টি করা, মানুষের মধ্যে বিভক্তি তৈরি করা, বিক্ষোভ-আন্দোলন, নাশীদ (সঙ্গীত) এবং বিভিন্ন নব্য পদ্ধতির মাধ্যমে নেতৃত্বে পৌঁছার প্রচেষ্টার ব্যাপারে বলতে হয়, এই পন্থায় কখনো নেতৃত্বে পৌঁছা যাবে না।” [দ্র.: http://ar.alnahj.net/audio/2482]
السؤال: يقول السائل: ذكرت دعوة الإخوان المسلمين ضمن الدعوات التي فشلت منذ قيامها، وأنَّ دعوة الإخوان لها أكثر من نصف قرن وهي فاشلة، ولكنِّي استمعت إلى أشرطة بعنوان: (لقاء مع مجلة المجتمع)، أجري لقاء مع رئيس المجلة مع طالب علم، فجاء في التحقيق أو في المقابلة السؤال عن دعوة الإخوان المسلمين. وقال طالب العلم الذي يناقش مع هذا الذي سئل عن دعوة الإخوان، قال عن دعوة الإخوان وعن مؤسِّسها: (...لو لم يكن للشيخ حسن البنَّا-رحمه الله-من الفضل على الشباب المسلم سوى أنَّه أخرجهم من دور الملاهي والسينما ونحو ذلك كالمقاهي، وكتَّلهم وجمَّعهم على دعوة واحدة-ألا وهي دعوة الإسلام-، لو لم يكن من الفضل إلَّا هذا لكفاه فضلًا وشرفًا...). هذا ما صرَّح به طالب علم كبير لمجلَّة المجتمع.
الجواب: وهذا الشخص عشت معه فترة من الزمن –متجاورين ومتزاملين في العمل–، الذي أعرفه منه خلاف ما ذكر الآن نتركه هو، فكلُّنا يعلم دعوة حسن البنَّا، صحيح إنَّه أخرج الشباب التائهين من المقاهي ومن دور السينما هذا شيء لا ينكر يذكره كل من يعرف.
لكن بعد أن أخرجهم من تلك الأماكن ماذا فعل معهم؟
هل دعاهم بأسلوب وبدعوة الأنبياء؟ أم نقلهم فجمَّعهم فتفرَّقوا على الطرق الصوفية؟
كأنَّهم نقلهم من جاهلية إلى جاهلية، لم ينقلهم إلى المفهوم الصحيح للإسلام، وكان الشيخ نفسه له طريقة-طريقة صوفية-، هؤلاء الذين نقلهم من دور السينما إمَّا اعتنقوا طريقته أو طرق أخرى.
وهل دعوة الشيخ حسن البنَّا قضت على عبادة غير الله علنًا في بلده؟ وهل أخرج الناس من الطواف بالأضرحة لضريح الحسين وزينب والبدوي؟ وهل أخرج الناس من الحكم الديمقراطي إلى حكم الله؟
هذا هو الشرع، لو كانت الدعوة جاءت هكذا تكون الدعوة الإسلامية صحيحة، أمَّا التجمُّع السياسي والحركات المنافسة للحركات الأخرى والأحزاب الأخرى، ويكتب على الغلاف الإسلام وليس في داخل هذا الكتاب الإسلام شيء آخر، حركة سياسية مزركشة ليست هذه دعوة إلى الإسلام.
يعلم كل طالب علم درس مذكِّرته وما تحدَّث به عن نفسه من تجوُّله من ضريح إلى ضريح هو نفسه يحدِّث عن نفسه تردده إلى بعض الأضرحة.
إذا كان هو نفسه لم يصل من العلم ومعرفة المفهوم الشرعي للإسلام إلى مقاطعة الأضرحة ومحاربة من يطوف بها ودعوتهم وإرشادهم، بل ونفسه يفعل كما يفعل العوام. ماذا فعل بأفهام الملاهي؟
هذا يذكِّرني ما تدَّعي الصوفية أنَّهم هم الذين أدخلوا الإسلام في القارة الإفريقية، ولي رد في بعض محاضراتي على هذا السؤال. الجواب: إنَّهم نقلوا بعض الوثنيين من الأفارقة من عبادة الأشجار والحجار إلى عبادة البشر، أخرجوهم من عبادة الجمادات إلى عبادة مشايخ الطرق، لا فرق بين أن يكون المعبود حجرًا أو شجرًا أو إنسانًا أو جنِّيًا أو ملكًا، لأن العبادة لا تكون إلَّا لله.
প্রশ্ন: “প্রশ্নকারী বলছেন, আপনি বলেছেন, মুসলিম ব্রাদারহুডের দা‘ওয়াত সেসমস্ত দা‘ওয়াতের অন্তর্ভুক্ত, যেগুলো তাদের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ব্যর্থ হয়েছে। ব্রাদারহুডের দা‘ওয়াত অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ব্যর্থ হিসেবে রয়েছে। কিন্তু আমি “আল-মুজতামা‘ ম্যাগাজিনের সাথে সাক্ষাৎকার” শিরোনামে কিছু অডিয়ো ক্লিপস শুনেছি। সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়েছে ম্যাগাজিনের প্রধান এবং একজন ত্বালিবুল ‘ইলমের মধ্যে। সাক্ষাৎকারে মুসলিম ব্রাদারহুডের দা‘ওয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন আসে। তখন ওই ত্বালিবুল ‘ইলম, যিনি ব্রাদারহুডের দা‘ওয়াত প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা ব্যক্তিটির সাথে কথা বলছিলেন, তিনি ব্রাদারহুডের দা‘ওয়াত এবং এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, “...শাইখ হাসান আল-বান্না (রাহিমাহুল্লাহ)’র যদি আর কোনো ভালো গুণ না থাকত, শুধু এটা ছাড়া যে, তিনি মুসলিম যুবকদেরকে বিনোদনকেন্দ্র এবং সিনেমা থেকে বের করে একটি দা‘ওয়াতের আওতায় একত্রিত করেছেন –আর এই দা‘ওয়াত হলো ইসলামের দা‘ওয়াত– তবে এই একটি গুণই তাঁর মর্যাদা ও সম্মানের জন্য যথেষ্ট হতো।...” আল-মুজতামা‘ ম্যাগাজিনকে এই সিনিয়র ত্বালিবুল ‘ইলম এটা সুস্পষ্টভাবে বলেছেন।
উত্তর: “এই ব্যক্তির সাথে আমি কিছুদিন একসাথে সহকর্মী হিসেবে ছিলাম। এখন যে কথা উল্লিখিত হলো, আমি তাঁর সম্পর্কে এর বিপরীতটা জানতাম। আমরা এখন তাকে পরিত্যাগ করব। আমরা প্রত্যেকেই হাসান আল-বান্না’র দা‘ওয়াত সম্পর্কে জানি। এই কথা ঠিক যে, তিনি বিপথগামী যুবকদেরকে ক্যাফে এবং সিনেমাহল থেকে বের করে এনেছেন। এই বিষয়ের বিরোধিতা করা যায় না। যারা জানে, তাদের প্রত্যেকেই এই বিষয় উল্লেখ করেন। কিন্তু এসব জায়গা থেকে যুবকদেরকে বের করার পর তিনি তাদের সাথে কী করেছেন?
তিনি কি নাবীদের দা‘ওয়াতী নীতি অনুযায়ী তাদেরকে আহ্বান করেছেন? নাকি তিনি তাদেরকে স্রেফ স্থানান্তর এবং জমা করেছেন, আর তারা সূফী তরিকায় বিভক্ত হয়ে গেছে? যেন তিনি তাদেরকে এক জাহিলিয়াত থেকে আরেক জাহিলিয়াতে স্থানান্তর করেছেন। তিনি তাদেরকে ইসলামের সঠিক বুঝের দিকে স্থানান্তর করেননি। আর শাইখের নিজেরই তো একটি তরিকা আছে, সূফী তরিকা! যাদেরকে তিনি সিনেমাহল থেকে বের করে এনেছেন, তারা হয় তাঁর তরিকা আঁকড়ে ধরেছে, আর না হয় অন্যান্য তরিকা আঁকড়ে ধরেছে।
শাইখ হাসান আল-বান্না’র দা‘ওয়াত কি তাঁর শহরে গাইরুল্লাহ’র ইবাদত করার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে রায় দিয়েছে? তিনি কি মানুষকে মাজারে প্রদক্ষিণ করা থেকে বের করেছেন? হুসাইন, যাইনাব, বাদাউয়ী—এদের মাজার থেকে বের করেছেন? তিনি কি মানুষকে গণতান্ত্রিক বিধান থেকে বের করে আল্লাহ’র বিধানের দিকে নিয়ে এসেছেন? এটাই শরিয়ত। দা‘ওয়াত যদি এভাবে হতো, তাহলে তা বিশুদ্ধ ইসলামী দা‘ওয়াত হতো। পক্ষান্তরে রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন জামা‘আতের প্রতিদ্বন্দ্বী আন্দোলন ও অন্যান্য দলসমূহ (বইয়ের) প্রচ্ছদের উপর লিখে ‘আল-ইসলাম’। যদিও বইয়ের অভ্যন্তরে তা নেই, বরং এই ইসলাম অন্য কিছু! এটা সুসজ্জিত রাজনৈতিক আন্দোলন, এটা ইসলামের দিকে আহ্বান করার দা‘ওয়াত নয়।
প্রত্যেক ত্বালিবুল ‘ইলম, যে তাঁর পাঠ পড়েছে, সে এক মাজার থেকে আরেক মাজারে নিজের ভ্রমণ সম্পর্কে যা বলে—সে সম্পর্কে জানে। সে নিজেই তার বিভিন্ন মাজার ভ্রমণ করার ব্যাপারে কথা বলে।
কথায় আছে, “গৃহকর্তা নিজেই যদি ঢোল বাজায়, তাহলে বাড়ির লোকদের অবস্থা তো ড্যান্স দেওয়ার মতোই হবে!”
ত্বালিবুল ‘ইলমই যদি ইসলামের বিশুদ্ধ মর্মার্থের জ্ঞান থেকে মাজারকে বর্জন করা, মাজারে যারা প্রদক্ষিণ করে তাদের বিরোধিতা করা এবং তাদেরকে দা‘ওয়াত দেওয়ার স্তরে পৌঁছতে না পারে, বরং সে নিজেই ‘আম্মী (লেইম্যান) ব্যক্তিদের মতো কাজ করে, তাহলে সে বিনোদনকারীদের নিয়ে কী করবে?! এটা আমাকে সূফীদের একটা দাবির কথা স্মরণ করিয়ে দিল। তারা বলে যে, কেবল তারাই আফ্রিকা মহাদেশে ইসলাম প্রবেশ করিয়েছে। আমার এক লেকচারে এই সংশয়ের জবাব আছে।
জবাব হলো: তারা আফ্রিকার পৌত্তলিকদেরকে গাছ ও পাথর পূজা থেকে বের করে মানুষ পূজার দিকে স্থানান্তরিত করেছে। তারা তাদেরকে জড়পদার্থের পূজা থেকে বের করে বিভিন্ন তরিকার শাইখদের (পীরদের) পূজা করার দিকে নিয়ে গেছে। মা‘বূদ তথা উপাস্য—পাথর, গাছ, মানুষ, জিন, বা ফেরেশতা হওয়ার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। কেননা ইবাদত হতে হবে কেবল আল্লাহ’র।” [দ্র.: www.ajurry(এখানে একটি ডট বসিয়ে লিংকটি ব্যবহার করুন)com/vb/showthread.php?t=29095 (টেক্সট-সহ অডিয়ো ক্লিপ)]
سأل آخر يسأل: ما الفرق بين العقيدة وبين المنهج؟ المنهج الطريق والعقيدة ما تعتقده في نفسك نحو ربك ودينك ونبيك، منهج أهل السنة والجماعة في العقيدة الطريق إلى العقيدة، والطريق التي عليه تلك العقيدة، لا فرق بينهما، هما متلازمان، والقول بأن فلانًا سلفي العقيدة منهجي الإخوان فلسفة لا معنى لها.
“আরেকজন প্রশ্নকারী প্রশ্ন করেছেন, ‘আক্বীদাহ এবং মানহাজের পার্থক্য কী? মানহাজ হলো রাস্তা। আর আপনি আপনার অন্তরে আপনার প্রভু, আপনার দ্বীন এবং নাবীর ব্যাপারে যে বিশ্বাস পোষণ করেন সে বিশ্বাসই হলো ‘আক্বীদাহ। ‘আক্বীদাহর ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মানহাজ—মানে হলো ‘আক্বীদাহর রাস্তা। সেই রাস্তা, যার উপর সেই ‘আক্বীদাহ রয়েছে। এই দু’য়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এই দুটি বিষয়ের একটি আরেকটির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আর একথা বলা যে, “অমুক ব্যক্তি ‘আক্বীদাহয় সালাফী, আর মানহাজে ইখওয়ানী”– এটা এমন একটা দর্শন, যার কোনো অর্থ নেই।” [দ্র.: http://ar.alnahj.net/audio/953]
·
৫ম বক্তব্য:
ইমাম মুহাম্মাদ আমান বিন ‘আলী আল-জামী (রাহিমাহুল্লাহ) আরও বলেছেন,
حزب سياسي أنشأه حسن البنا منافسًا للأحزاب السياسية المعاصرة له وغلبهم، لأنه حشد في جماعته السلفيين والخلفيين والصوفية وجميع الطوائف ليذنب الآخرين، لأنه منافٍ للأحزاب الحزبية والقائمة في ذلك الوقت، حزب سياسي طموح غلف بإسم الإسلام.
“হাসান আল-বান্না তাঁর সমসাময়িক রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে একটি দল প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং তাদেরকে পরাজিত করেছেন। যেহেতু তিনি অন্যদেরকে পরাভূত করার জন্য তাঁর দলে সালাফী, খালাফী, সূফী এবং সমস্ত দলকে সমবেত করেছেন। কেননা তিনি সেই সময়ের প্রতিষ্ঠিত দলগুলোর বিরোধী ছিলেন। তাঁর দল একটি উচ্চাভিলাষী রাজনৈতিক দল, যার ওপর ইসলামের চাদর পরানো হয়েছে।” [দ্র.: http://ar.alnahj.net/audio/4269.]
·
৬ষ্ঠ বক্তব্য:
ইমাম মুহাম্মাদ আমান বিন ‘আলী আল-জামী (রাহিমাহুল্লাহ) আরও বলেছেন,
“যখন রাফিদ্বী শী‘আদের উদ্ভব ঘটল এবং তাদের একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলো, তখন ব্রাদারহুডের নেতারা কী করল? এই দেশ বাদে সকল দেশ থেকে তারা সফর করল। তারা সেখানে গেল, তাদেরকে মুবারকবাদ জানাল, রাফিদ্বী শী‘আর কপাল ও মাথায় চুমা দিল। তারপর তারা একটি উপদেশ গ্রহণ করল—‘তোমরা সবাই খোমেনী হও, তোমাদের প্রত্যেকেই যেন নিজ দেশে একেকজন খোমেনী হয়!’ অর্থাৎ, ব্রাদারহুড খোমেনীদের সাথে ছিল, যখন খোমেনীরা মাসজিদুল হারামের ধ্বংস সাধন করা, দুই হারামের অধিবাসীদের উপর চড়াও হওয়া এবং বাইতুল্লাহ’র হাজ্বীদের সাথে দুর্ব্যবহার করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত ছিল।
তখন ব্রাদারহুড তাদের বন্ধু ছিল। এর প্রমাণ রয়েছে ওই সমস্ত ফটোতে, যে ফটোগুলো তোলা হয়েছে ওই লোকের (খোমেনীর) সাথে এবং যখন তারা তাদের নিহত ব্যক্তিদের জানাযাহ’র সালাত পড়ছিল, আর তাদেরকে ‘শহীদ’ বলে আখ্যা দিচ্ছিল। তারা রাফিদ্বী শী‘আদের মধ্যে যারা নিহত হয়েছিল, তাদেরকে ‘শহীদ’ আখ্যা দিয়েছে এবং তাদের জানাযাহ’র সালাত পড়েছে। তারা তাদের সাথে কিছুকাল ছিল।
তারপর রাজনীতি তার রীতি অনুযায়ী পরিবর্তিত হলো এবং বাগদাদবাসীর (সাদ্দাম) অভ্যুদয় ঘটল। তারা তখন তেহরানবাসীকে (খোমেনী) কাফির বলল এবং বাগদাদে স্থানান্তরিত হলো। তারা সাদ্দামের ভূমিতে অবস্থান করল এবং তাকে ‘সালাহুদ্দীন আল-আউয়্যূবী’, ‘বড়ো মুজাহিদ’, ‘বড়ো সংস্কারক’ প্রভৃতি উপাধী দিল। আর সাদ্দাম কর্তৃক কুয়েতকে ধ্বংস করার এবং উপসাগরীয় দেশসমূহ ও সৌদি আরবকে ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত গ্রহণকে তারা ‘সংস্কার’ এবং ‘বাইতুল মাক্বদিসের বিজয়’ বলে ঘোষণা দিল!” [দ্র.: www.ajurry(এখানে একটি ডট বসিয়ে লিংকটি ব্যবহার করুন)com/vb/showthread.php?t=41436]
·৭ম বক্তব্য:
ইমাম মুহাম্মাদ আমান আল-জামী (রাহিমাহুল্লাহ) আরও বলেছেন,
أنَّا لا أعرف من حسن البنا كُتُباً إلا الرسائل التي تتحدَّثُ عن سياسته وعن حركته السياسية، أما كُتُبٌ علمية لا أعلم له كُتُبْ، ذكرُ هذه الرسائل التي تتحدثُ عن حركته وسياسته وتجميعه للناس، ومنافسته للأحزاب الأخرى؛ لأن هذا حزبٌ سياسي نشأ منافساً للأحزاب السياسية التي كانت قائمةً في مصر، لذلك من ذكاءه حاول حسن البنا أن يكسب الصوفية والأشعرية والسلفية إلى صفِّهِ ليُنافس فيهم الأحزاب السياسية الأخرى من القوميين والعلمانيين وأمثالهم، لذلك حاول أن يجمع في حزبه المتناقضات.
“আমি হাসান আল-বান্না থেকে তাঁর চিঠিপত্র ছাড়া বইপুস্তকের ব্যাপারে জানিনা, যে চিঠিগুলো তাঁর রাজনীতি এবং তাঁর রাজনৈতিক আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করে। পক্ষান্তরে ‘ইলমী বইপুস্তক; আমি জানিনা যে তাঁর এমন বইপুস্তক আছে। শুধু চিঠিপত্র ছাড়া, যেগুলো তাঁর দল, রাজনীতি, লোকদেরকে একত্রীকরণ এবং তাঁর সাথে অন্যান্য দলের বিরোধিতা প্রসঙ্গে আলোচনা করেছে। কেননা এটি একটি রাজনৈতিক দল, যা মিশরের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একারণে তাঁর চতুরতার অন্তর্ভুক্ত হলো, তিনি (হাসান আল-বান্না) অন্যান্য রাজনৈতিক দলের তথা ন্যাশনালিস্ট, সেক্যুলার প্রমুখের বিরোধিতা করার জন্য সূফী, আশ‘আরী এবং সালাফীদেরকে তাঁর দলে নিয়ে আসেন। তিনি তাঁর দলে পরস্পর বিরোধপূর্ণ বিষয় জমা করেন।” [দ্র.: http://ar.alnahj.net/audio/954 (টেক্সট-সহ অডিয়ো ক্লিপ)]
·
৮ম বক্তব্য:
ইমাম মুহাম্মাদ আমান বিন ‘আলী আল-জামী (রাহিমাহুল্লাহ) আরও বলেছেন,
عندما حج حسن البنا رحمه الله في عهد الملك عبد العزيز –قيل– إن حسن البنا طلب من الملك عبد العزيز أن ينشأ له جماعته هنا في المملكة، قال: [كلام غير واضح] كلهم مسلمون وكلهم جماعة واحدة، أين تضع جماعتك؟ كلهم جماعة وكلهم مسلمون، ما معنى الإخوان المسلمين في جماعة مسلمة، لا معنى لذلك، جواب المليك، أنا أقول لا معنى أبدًا لوجود جماعة في هذا المجتمع الذي منّ الله عليه بالوحدة والتوحيد معًا، احمدوا ربكم على الوحدة، الوحدة نعمة عظيمة.
“কথিত আছে, যখন হাসান আল-বান্না (রাহিমাহুল্লাহ) বাদশাহ ‘আব্দুল ‘আযীযের যুগে হাজ্ব করতে আসেন, তখন তিনি বাদশাহ ‘আব্দুল ‘আযীযের নিকট সৌদি আরবে তাঁর জামা‘আত (দল) প্রতিষ্ঠা করার আবেদন করেন। বাদশাহ বলেন, ‘তারা সবাই মুসলিম, তারা সবাই একটাই দল। আপনি আপনার দলকে কোথায় রাখবেন? তারা সবাই একটাই দল, তারা সবাই মুসলিম। সুতরাং একটি মুসলিম জামা‘আতের মধ্যে মুসলিম ব্রাদারহুডের অর্থ কী? এর কোনো অর্থ নেই।’ এটা বাদশাহর উত্তর। আমিও বলছি, এর কোনো অর্থ নেই। যেহেতু এই সমাজে একটি জামা‘আত রয়েছে, যেই সমাজের উপর আল্লাহ একতা এবং তাওহীদ দিয়ে অনুগ্রহ করেছেন। তোমরা এই একতার জন্য তোমাদের প্রতিপালকের প্রশংসা করো। একতা অনেক বড়ো একটি অনুগ্রহ।” [দ্র.: http://ar.alnahj.net/audio/2680]
0 Comments